ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ  কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মুর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২

সংখ্যা: ১৬৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

প্রকাশিত ফতওয়াসমূহ

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীনের জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। আল্লাহ্ পাক-এর অশেষ রহ্মতে “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব-এর অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীল ভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা)  ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যায়) এবং  ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা) ২৭.  এবং ১৬১তম সংখ্যা থেকে ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া পেশ করার পাশাপাশি ১৬৮তম সংখ্যা থেকে-

২৮তম ফতওয়া হিসেবে

“কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মুর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্ট প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করে আসতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবারে বেশুমার শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মুর্তি তৈরী করা, করানো ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরিকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” এমন সব লেখাই পত্রস্থ  হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ ও হিফাযতকরণে বিশেষ সহায়ক।   তদ্রুপ ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাতে’ “কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মুর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” দেয়ার মাকছুদ এবং উদ্দেশ্যও ঠিক তাই। অর্থাৎ ঈমান-আমল হিফাযতে সহায়তা করাই এ ফতওয়া দেয়ার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো- ‘ওহাবী সম্প্রদায়’। ইহুদীদের এজেন্ট ওহাবী মতাবলম্বী উলামায়ে ‘ছূ’রা হারাম টিভি চ্যানেল, পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদি ও বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে একের পর এক হারামকে হালাল, হালালকে হারাম, জায়িযকে নাজায়িয, নাজায়িযকে জায়িয বলে প্রচার করছে।  স্মরনীয় যে, ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী দাজ্জালে কায্যাব তথা উলামায়ে ‘ছূ’রা প্রচার করছে “ছবি তোলার ব্যাপারে ধর্মীয় কোন নিষেধাজ্ঞা নেই” (নাউযুবিল্লাহ)। সম্প্রতি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, “নির্বাচন কমিশনার বলেছে, ছবি তোলার বিরুদ্ধে বললে জেল-জরিমানা হবে, নির্বাচন কমিশনার ভোটার আই. ডি কার্ডের জন্য ছবিকে বাধ্যতামূলক করেছে এবং ছবির পক্ষে মসজিদে মসজিদে প্রচারণা চালাবে বলেও মন্তব্য করেছে।  আর উলামায়ে ‘ছূ’রা তার এ বক্তব্যকে সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছে যে, “রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে পুরুষ-মহিলা সকলের জন্যই ছবি তোলা জায়িয।” (নাউযুবিল্লাহ) শুধু তাই নয় তারা নিজেরাও অহরহ ছবি তুলে বা তোলায়।

অথচ তাদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, চরম বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক। তাদের এ বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তেক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আ’মালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুক্ষীণ হচ্ছে।

ই’তেক্বাদী বা আক্বীদাগত ক্ষতি

তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ এটাই মনে করবে যে, সত্যিই বুঝি রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে ছবি তোলা জায়িয!  (নাউযুবিল্লাহ)

কাজেই তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যারা এ আক্বীদা পোষণ করবে যে, “রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে ছবি তোলা জায়িয” তারা ঈমান হারা হয়ে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে। কারণ শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম বা নাজায়িযকে হালাল বা জায়িয বলা কুফরী। কেননা আক্বাইদের কিতাবে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে,

استحلالالمعصية كفر.

অর্থাৎ, “গুণাহের কাজ বা হারামকে হালাল করা কুফরী।”

          অতএব বলার আর অপেক্ষাই রাখেনা যে, উলামায়ে “ছূ”দের উক্ত বক্তব্য সাধারণ মুসলমানদের আক্বীদা বা ঈমানের জন্য বিশেষভাবে হুমকীস্বরূপ। অথচ বান্দার ইবাদত-বন্দেগী বা নেক আমল কবুলযোগ্য হওয়ার জন্যে প্রধানতম শর্ত হচ্ছে- আক্বীদা শুদ্ধ থাকা অর্থাৎ আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করা। কারণ বিশুদ্ধ আক্বীদা আমল কবুল হওয়ার পূর্ব শর্ত। অর্থাৎ ইসলামের  যেকোন আমলই করা হোক না কেন এবং যে কেউই করুক না কেন, তা যদি আক্বীদা শুদ্ধ রেখে শরীয়ত সম্মতভাবে করা হয়, তবে তা গ্রহণযোগ্য। আর যদি আক্বীদার মধ্যে কোন ত্রুটি থাকে, তবে তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। যেমন- খারেজী, রাফেজী, কাদিয়ানী ইত্যাদি সম্প্রদায় পরিত্যাজ্য ও বাতিল। সুতরাং ইসলামে হারামকৃত প্রাণীর মূর্তি বা ছবিকে যারা জায়িয বলবে তারাও কুফরী আক্বীদার কারণে বাতিল ও পরিত্যাজ্য বলে গণ্য হবে।

আ’মালী বা আমলগত ক্ষতি

“ছবি তোলার ব্যাপারে ধর্মীয় কোন নিষেধ নেই বা রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে সকলের জন্য ছবি তোলা জায়িয” উলামায়ে “ছূ”দর এ কুফরীমূলক বক্তব্য সাধারণ মুসলমানদের আমলের ক্ষেত্রেও বিশেষ ক্ষতির কারণ। কেননা যারা তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে ছবি তুলবে (যদিও হারাম জেনেই তুলুক না কেন) তারা আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব কর্তৃক নিষিদ্ধকৃত কাজে তথা হারাম কাজে মশগুল হবে যা শক্ত আযাব বা কঠিন গুণাহের কারণ। যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

قال حدثنا الاعمش عن مسلم قال كنا مع مشروق فى دار يساربن نمير فراى فى صغته تماثيل فقال سمعت عبد اله قال سمعت النبى صلى اله عليه وسلم يقول ان اشد الناس عذابا عند الله المصورون.

অর্থঃ হযরত আ’মাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মুসলিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি মাসরুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর সঙ্গে ইয়াসার ইবনে নুমাইরের ঘরে ছিলাম, তিনি তাঁর ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি দেখতে পেলেন, অতঃপর বললেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ্র নিকট শুনেছি, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয় মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ্ পাক কঠিন শাস্তি দেবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ৮৮০)

উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় “উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারীতে” উল্লেখ আছে,

وان كان وردفى حق عاص فيكون اشد عذابا من غيره من العصاة ويكون ذلك ذالا على المعصية المذكورة. وفى التوضيح قال اصحابنا وغير هم صورة الحيوان حرام اشدالتحريم وهم من الكبائر سواء صنعه لما يمتهن او لغيره فحرام بكل حال لان فيه مضاهاة لخلق الله وسواء كان فى ثوب او بساط او دينار اودرهم او فلس او اناء او حائط.

অর্থঃ যদিও অন্যান্য গুরুতর পাপের জন্য হাদীছ শরীফে কঠিন শাস্তির কথা বলা হয়েছে, কিন্তু ছবি বা প্রতিমূর্তি ণির্মাণকারীর শাস্তি সর্বাপেক্ষা কঠিন হবে এবং কঠোর শাস্তিই পাপের গুরুত্ব প্রমান করছে। “তাওজীহ্” নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, জীব জন্তুর ছবি বা প্রতিমূর্তি ণির্মাণ করা নিষেধ, বরং কঠোর নিষিদ্ধ কাজ (অর্থাৎ হারাম) এটা কবীরাহ্ গুনাহ্। চাই ওটাকে যত¦ বা সম্মান প্রদর্শন করুক কিংবা অন্য যে কোন উদ্দেশ্যেই বানিয়ে থাকুক। কেননা এরূপ কাজে আল্লাহ পাক-এর সৃষ্টির অনুকরণ করা হয়। ওটা বস্ত্রে, বিছানায় মোহরে মুদ্রায় পয়সায়, পাত্রে কিংবা প্রাচীর গাত্রে যে কোন স্থানে আঁকা বা ণির্মাণ করা হারাম। অনুরূপ “ফতওয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়া ও আযযাওয়াযির” নামক কিতাবে উল্লেখ আছে।

এধরনের আরো অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে, যা দ্বারা প্রাণীর মূর্তি তৈরী করা, ছবি আঁকা, আঁকানো, তোলা, তোলানো ও রাখা, রাখানোর ব্যাপারে কঠিন শাস্তির কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ যারা এগুলো করবে তারা আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীবের কঠিন অসন্তুষ্টির পাত্র হবে।

অতএব নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, উলমায়ে “ছূ”দের উক্ত বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ছবি তুলে প্রকাশ্য হারাম কাজে মশগুল হয়ে কঠিন আযাবের পাত্র হবে যা আমলের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ক্ষতিকর।

কাজেই যারা এ ধরণের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী, তারা ও হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণ ঈমান ও আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে। অর্থাৎ মূর্তি বা ছবিসহ সকল বিষয়ে আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজাম, ইজমা ও ক্বিয়াস মোতাবেক আমল করে আল্লাহ্ পাক-এর রেজামন্দী হাছিল করতে পারে। সে জন্যই “কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মুর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্ট প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়াটি” পুণরায় প্রকাশ করা হলো।

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, বাতিলের আতঙ্ক, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের একমাত্র দলীল ভিত্তিক মুখপত্র- মাসিক আল বাইয়্যিনাতের ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম সংখ্যায় ছবি সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক ফতওয়া প্রদান করা হয়েছিল। যাতে প্রায় ৩৫৩টিরও অধিক নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে মূর্তি বা প্রাণীর ছবি সম্পর্কে বিস্তারিত ফতওয়া দেয়া হয়েছিল।

মূর্তি বা প্রাণীর ছবির উক্ত ফতওয়াটি সত্বান্বেষী মুসলমানগণের নিকট এতই সমাদৃত ও গ্রহণযোগ্য হয় যে, অল্প কিছু দিনের মধ্যেই মূর্তি বা প্রাণীর ছবির ফতওয়া সম্বলিত কপিখানার মজুদ সংখ্যাগুলিও ফুরিয়ে যায়। যার ফলে মাসিক আল বাইয়্যিনাতের অগণিত পাঠক, মূর্তি বা প্রাণীর ছবি সম্পর্কিত মুল্যবান ফতওয়াটি সংগ্রহে রাখতে ব্যর্থ হয়। তাই তারা মাসিক আল বাইয়্যিনাতের অন্যতম বিভাগ- “ফতওয়া বিভাগে” মূর্তি বা প্রাণীর ছবি সম্পর্কিত ফতওয়াটি পুণরায় প্রকাশ করার জন্য পুনঃ পুনঃ আবেদন জানায়।

এতদ্বপ্রেক্ষিতে অর্থাৎ মাসিক আল বাইয়্যিনাতের অগনিত পাঠকের পুনঃ পুনঃ অনুরোধের প্রেক্ষিতে এবং হক্ব তালাশী মুসলমানগণের ঈমান ও আমল হিফাযতের লক্ষ্যে সর্বপোরি মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রিযামন্দী হাছিলের উদ্যেশ্যে মূর্তি বা প্রাণীর ছবি সম্পর্কিত ফতওয়াটি আরো বর্ধিত ও বিস্তারিত আকারে এবং আরো অধিক দলীল-আদিল্লার ভিত্তিতে প্রকাশ করা হলো।

ইহুদী-নাছারাসহ সকল বিধর্মীরা মুসলমানদের শত্রু, তাদের ষড়যন্ত্র থেকে সাবধান!

মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফের “সূরা মায়িদা-এর ৮২নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,

لتجدن اشد الناس عذاوة للذين امنوا اليهود والذين اشركوا.

অর্থঃ “তোমরা তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে পাবে ইহুদীদেরকে। অতঃপর যারা মুশরিক তাদেরকে।”

অর্থাৎ, ইসলাম ও মুসলমানের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো প্রথমতঃ ইহুদীরা, দ্বিতীয়তঃ মুশিরকরা, আর তৃতীয়তঃ হচ্ছে নাছারারা। এক কথায় সকল বিধর্মীরাই ইসলাম ও মুসলমানের শত্রু। তাই বলা হয়,

الكفر ملة واحدة.

অর্থঃ “সমস্ত কাফিরেরা মিলে এক ধর্ম।” অর্থাৎ, কোন কোন বিষয়ে তাদের নিজেদের মধ্যে মতভেদ থাকলেও ইসলাম ও মুসলমানের ক্ষতিসাধনে তারা সবাই একজোট। ইহুদী-খ্রিস্টান, হিন্দু-বৌদ্ধ, মজূসী ও মুশরিক তারা সবাই মিলে সর্বদাই চেষ্টা করে থাকে কি করে মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা যায় এবং তাদের ঈমান আমল নষ্ট করে কাফিরে পরিণত করা যায়।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক “সূরা বাক্বারার-১০৯ নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,

ود كشير من اهل الكتب لو يردونك من بعد ايمانكم كفارا حسدامن عند انفسهم.

অর্থঃ “ইহুদী-নাছারা তথা আহলে কিতাবদের মধ্যে অনেকেই প্রতিহিংসাবশত চায় যে, মুসলমান হওয়ার পর তোমাদেরকে কোন রকমে কাফির বানিয়ে দিতে।”

কাজেই বিধর্মীরা যেহেতু ইসলাম ও মুসলমানদের চরম পরম শত্রু তাই তারা হিংসার বশবর্তী হয়েই মুসলমানদের ঈমান-আমল নষ্ট করে কাফির বানানোর লক্ষ্যেই ইসলাম ও মুসলমানের নামে বা ছূরতে প্রথমতঃ বাতিল ফিরক্বাগুলো আবিষ্কার করে।  যে বাতিল ফিরক্বা সম্পর্কে ছাহিবে ইলমে গাইব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহু, নূরে মুজাস্ সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  ইরশাদ করেন,

ستفترق امتى على ثلاث وسبعين ملة كلهم فى النار الا ملة واحدة قاوا من هى يا رسو اله قال ما انا عليه واصحابى رواه الترمذى وفى رواية احمد وابى داود عن معاوية ثنتان وسبعون فى النار و واحدة فى الجنة وهى الجماعة.

অর্থঃ- “অতি শীঘ্রই আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, একটি দল ব্যতীত বাহাত্তরটি দলই জাহান্নামে যাবে। তখন ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যে একটি দল নাযাত প্রাপ্ত, সে দলটি কোন দল? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি এবং আমার ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মত ও পথের উপর যারা কায়েম থাকবে, (তারাই নাযাত প্রাপ্ত দল)।” ইমাম তিরমিযী ইহা বর্ণনা করেন। আর মুসনাদে আহ্মদ ও আবূ দাউদের বর্ণনায় “হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, ৭২টি দল জাহান্নামে যাবে, আর একটি দল জান্নাতে যাবে। মূলতঃ সে দলটিই হচ্ছে আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াত।”

 উল্লেখিত হাদীছ শরীফ দ্বারা মূলতঃ এটাই বুঝানো হয়েছে যে, “কলেমা গো মুসলমানই” ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, তন্মধ্যে ৭২টি দলই জাহান্নামী, গোমরাহ্ ও বাতিল, অর্থাৎ তারা মুসলমানের অন্তর্ভূক্ত নয়। আর একটি মাত্র দল জান্নাতী, সেটা হচ্ছে আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াত।

এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত মুহাদ্দিছ, রঈসুল মুহাদ্দিছীন, ইমাম মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত কিতাব মিশকাত শরীফের শরাহ্ “মিরকাত শরীফ”-এর ১ম জিঃ ২৪৮নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন যে,

ونقل الابهرى ان المراد باامة امة الاجابة عند الاكثر (كلهم فى النار)……. (الاملة) بالنصب اى الا اهل ملة (واحدة قالوا من هى) اى تلك الملة اى اهلها الناجية… (قال ما انا عليه واصحابى) …. فكذا هنا المراد هم المهتدون المتمسكون بنتى وسنة الخلفاء الراشدين من بعدى فلا شك ولا ريب انهم هم اهل اسنة واجماعة وقيل التقدير اهلها من كان على ما انا عيه واصحابى من الاعتقاد والقول والفعل فان ذالك يعرف بالاجماع فما اجمع عيه علماء الاسلام فهو حق وما عداه باطل.

অর্থঃ- আবহুরী বর্ণনা করেন, নিশ্চয় (হাদীছ শরীফে বর্ণিত) উম্মত শব্দ দ্বারা উম্মতে ইজাবত তথা “কলেমাগো”দেরকেই বুঝানো হয়েছে। অধিকাংশ আলেমগণের এটাই অভিমত। (উম্মতে ইজাবতের) প্রত্যেক দল জাহান্নামী ….. একদল ব্যতীত। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ বললেন, সে দল কোনটি অর্থাৎ নাযাত প্রাপ্ত দল কোনটি? …… হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি ও আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মত ও পথে যারা কায়েম থাকবে (তারাই নাযাত প্রাপ্ত দল) … মূলতঃ উহার দ্বারা এটাই বুঝিয়েছেন যে, তারা হেদায়েতপ্রাপ্ত। আমার এবং আমার পর খোলাফায়ে রাশেদীনগণের সুন্নত ধারণকারী। অতএব, এতে কোন প্রকার সন্দেহ নেই যে, তারাই আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াত। আর বলা হয়েছে যে, আক্বীদা, ক্বওল ও ফে’লের দিক থেকে তারা আমি ও ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের অনুসারী হবে। এটা মূলতঃ ইজ্মা দ্বারা প্রমাণিত, ওলামায়ে ইসলাম যার উপর ইজ্মা করেছেন, সেটাই হক্ব। এছাড়া (অর্থাৎ আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াত ছাড়া) যা রয়েছে, সবই বাতিল।”

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, উম্মতে ইজাবত তথা “কলেমাগো” বা কলেমা পাঠকারীদের মধ্যেই আক্বীদা, ক্বওল ও ফে’লের ভিত্তিতে ৭৩টি দল হবে, তন্মধ্যে একটি মাত্র দল নাযাতপ্রাপ্ত, জান্নাতী ও হক্ব। আর ৭২টি দল জাহান্নামী, গোমরাহ্ ও বাতিল। এ ব্যাপারে আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অনুসরণীয় সকল ইমাম, মুজ্তাহিদ, মুহাক্কিক, মুদাক্কিক, মুহাদ্দিছ, মুফাস্সির, ফক্বীহ্ ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ একমত।

উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় মিরকাত শরীফের উক্ত স্থানে আরো উল্লেখ আছে যে,

واعلم اصول البدع كما نق فى المواقف ثمانية.

(১) المعتزله …… وهم عشرون فرقة.

(২) والشيعة …. وهم اثنان وعشرون فرقة.

(৩) الخوارج …… وهم عشرون فرقة.

(৪) والمرجئة …. وهى خمس فرق.

(৫) والنجارية ….. وهم ثلاث فرق.

(৬) والجبرية …….. فرقة واحدة.

(৭) والمشبهة …… فرقة ايضا.

فتلك اثنان وسبعون فرقة كلهم فى النار.

(৮) والفرقة الناجبة هم اهل السنة البيضاء المحمدية والطريقة النقية الاحمدية.

অর্থ ঃ- “জেনে রাখ! (উক্ত ৭৩টি দল) প্রধাণতঃ ৮টি দলে বিভক্ত, যা “মাওয়াক্বিফ” কিতাবে বর্ণিত রয়েছে –

১। মু’তাজিলাহ্ …. এরা বিশ (২০) দলে বিভক্ত,

২। শিয়া …. এরা বাইশ (২২) দলে বিভক্ত,

৩। খারেজী  ….. এরা বিশ (২০) দলে বিভক্ত,

৪। মরজিয়্যাহ্ ……. এরা পাঁচ (৫) দলে বিভক্ত,

৫। নাজ্জারিয়্যাহ্ …… এরা তিন (৩) দলে বিভক্ত,

৬। জাবারিয়্যাহ্ …….. এরা এক (১) দলেই রয়েছে,

৭। মুশাব্বেহা …… এরাও  এক (১) দলেই রয়েছে।

সুতরাং উল্লেখিত ৭২টি দল, তারা প্রত্যেকেই জাহান্নামী।

৮। আর (ناجية) নাজিয়াহ্ বা নাযাত প্রাপ্ত দল, তারা হলো- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্পষ্ট সুন্নত ও উজ্জ্বল তরীক্বতের অনুসারী। অর্থাৎ আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াত।”

অতএব, বিখ্যাত মুহাদ্দিছ, ইমাম মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, উল্লেখিত ৭২টি দল “কলেমাগো” হওয়া সত্ত্বেও জাহান্নামী, গোমরাহ্ ও বাতিল তথা অমুসলিম কারণ তাদের আক্বীদা, ক্বওল ও ফে’ল কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের সম্পূর্ণ খিলাফ। আর যাদের আক্বীদা ও আমল আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াত তথা কোরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াস ভিত্তিক, একমাত্র তারাই নাযাতপ্রাপ্ত।

এছাড়াও মিশকাত শরীফের শরাহ্- শরহুত্ ত্বীবী, আশয়াতুল ুময়াত, তানযীমুল আশতাত, মুযাহিরে হক্ব, তা’লীকুছ ছবীহ্, মিরআতুল মানাজীহ্ ও রদ্দে রাওয়াফেজ, তোহ্ফায়ে ইছ্না আশারীয়া, গুনিয়াতুত তালিবীন, তালবীসুল ইবলীস ইত্যাদি আরো অনেক কিতাবেই উল্লেখিত ৭২টি দলকে

(كلهم فى النار الا ملة واحدة)

এ হাদীছ শরীফের ভিত্তিতে গোমরাহ্, বাতিল ও  জাহান্নামী বলা হয়েছে। যেহেতু তারা ইহুদী-নাছারাদের দ্বারা সৃষ্ট ও অসংখ্য কুরআন সুন্নাহ বিরোধী আক্বীদায় বিশ্বাসী। অর্থাৎ বাহাত্তরটি বাতিল ফিরক্বা সৃষ্টি করে তারা অসংখ্য মুসলমানকে ছহীহ আক্বীদা ও আমল থেকে ফিরায়ে কুফরী আক্বীদা ও শরীয়ত বিরোধী আমলে মশুগুল করে জাহান্নামী করে দেয়। (নাউযুবিল্লাহ)

স্মর্তব্য, ইহুদী-নাছারা তথা বিধর্মীদের ষড়যন্ত্র এখানেই থেমে যায়নি। এর পর তারা সৃষ্টি করলো বাহাঈ ও কাদিয়ানী ফিরক্বা যার মাধ্যম দিয়ে অসংখ্য মুসলমানকে “খতমে নুবুওওয়াতের” মত একটি গুরুত্বপূর্ণ আক্বীদা থেকে সরিয়ে কাফির ও চির জাহান্নামী বানিয়ে দিয়েছে। কারণ ইসলামী শরীয়তের ফায়ছালা মোতাবেক যারাই খতমে নুবুওওয়াতকে অস্বীকার করবে তারাই কাফির ও চির জাহান্নামী হবে।

উল্লেখ্য, মুসলমানদের ঈমান-আমল বিনষ্ট করে চিরজাহান্নামী করার বিধর্মীয় ষড়যন্ত্র এখনও অব্যাহত আছে। ইহুদী-নাছারা তথা বিধর্মীরা এখন কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ নিয়ে পড়া-শুনা করে, ইউরোপ আমেরিকায় অনেক ইহুদী-নাছারা রয়েছে যারা কুরআনে হাফিয ও হাফিযে হাদীছ। প্রশ্ন হচ্ছে তারা ইহুদী-নাছারা হয়ে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ পড়ছে কেন? আর এর উপর গবেষণাই বা করছে কেন? কি তাদের উদ্ধেশ্য?

মূলত এর মধ্যেও রয়েছে তাদের গভীর ষড়যন্ত্র! তারা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ গবেষণা করে এমন বিষয়গুলো বের করে যে বিষয়গুলো দিয়ে মুসলমানদের ঈমান-আমল নষ্ট করে কাফির ও জাহান্নামী করা যায়। একটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টি সকলের নিকট স্পটষ্ট হয়ে উঠবে। যেমন হাদীছ শরীফে রয়েছে,

الديوث لا يد خل الجنة.

অর্থাৎ, দাইয়ূছ কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবেনা।” (নাসায়ী, মুসনাদে আহমদ)

ইহুদী-নাছারারা উক্ত হাদীছ শরীফ গবেষণা করে সিদ্ধান্ত নিল যে, যে কোন মূল্যে মুসলমানদেরকে দাইয়ূছ বানিয়ে দিতে হবে। অর্থাৎ বেপর্দা করে দিতে হবে। এলক্ষে তারা কাজ শুরু করেছে এবং অনেকটা সফলও হয়েছে। আজ সারা বিশ্বের অধিকাংশ মহিলাই চরম বেপর্দা। তারা আজ পুরুষের সাথে একই অফিসে চাকুরী করছে, লেখা-পড়া করছে, সিনেমা করছে, গান গাইছে, রাজনীতি করছে, খেলা-ধূলা করছে। অর্থাৎ নানানভাবে আজকে মহিলাদেরকে বেপর্দা করা হচ্ছে।

আর এক্ষেত্রে ইহুদী-নাছারারা রয়েছে পরোক্ষভাবে আর প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছে, ইহুদীদের আরেক এজেন্ট ‘ওহাবী সম্প্রদায়’। ইহুদীদের এজেন্ট ওহাবী মতাবলম্বী উলামায়ে ‘ছূ’রা ইহুদীদের পরিকল্পনা অনুযায়ী মুসলমানদের ঈমান-আমল ধ্বংস করার লক্ষে হারাম টিভি চ্যানেল, পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদি ও বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে একের পর এক হারামকে হালাল, হালালকে হারাম, জায়িযকে নাজায়িয, নাজায়িযকে জায়িয বলে প্রচার করছে। যেমন, তারা প্রচার করছে- ফরয নামাযের পর মুনাজাত করা বিদয়াত ও হারাম। নিয়ত করে রওযা শরীফ ও মাযার শরীফ যিয়ারত করা শিরক, কদমবুছী করা নাজায়িয ও শিরক, মাযহাব মানার কোন প্রয়োজন নেই, পীর-মুরীদী শরীয়ত বিরোধী প্রথা, মীলাদ ক্বিয়াম করা র্শিক-বিদ্য়াত, শবে বরাত পালন করা বিদ্য়াত, তারাবীহ নামায জরুরী কোন নামায নয়, আট রাকায়াত তারাবীহ পড়লেই চলে ইত্যাদি ইত্যাদি। (নাঊযুবিল্লাহ) অথচ উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ই কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ তথা শরীয়তসম্মত এবং তন্মধ্যে কোনটা সুন্নত আবার কোনটা  ফরয।

পক্ষান্তরে উলামায়ে ‘ছূ’ তথা দুনিয়াদার মাওলানারা টেলিভিশন, সিনেমা, নাটক, নোবেল, বেপর্দা হওয়া, নারী নেতৃত্ব মানা, ভোট দেয়া, রোযা অবস্থায় ইনজেকশন নেয়া, মহিলাদের  জামায়াতের জন্যে মসজিদে যাওয়া, মহিলাদের বাইরে বের হওয়ার সময় হাত ও মুখ খোলা রাখা, হরতাল করা, লংমার্চ করা, গণতন্ত্র করা, ব্লাসফেমী আইন চাওয়া, মৌলবাদী দাবী করা, কুশপুত্তলিকা দাহ করা, টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম বা অনুষ্ঠান করা ইত্যাদি নাজায়িয কাজগুলোকে জায়িয বলে প্রচার করছে।  (নাঊযুবিল্লাহ)

অর্থাৎ তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, মুসলমানদেরকে ইসলাম থেকে সরিয়ে, ইবাদত থেকে সরিয়ে অনৈসলামিক ও হারাম কাজে মশগুল করে দিয়ে বেঈমান করে দেয়া।

ঠিক এরূপ আরেকটি সুক্ষ্ম ষড়যন্ত্র হচ্ছে ছবির বিষয়টি। কারণ তারা হাদীছ শরীফে পেয়েছে,

عن عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول ان اشد الناس عذا عند الله المصورون.

অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি শুনেছি, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয় মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তি দিবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।” (বুখারী শরীফ)

عن ابى طلحة رضى الله تعالى عنه قال قال النبى صلى الله عليه وسلم لا تدخل الملئكة بيتا فيه كلب ولا تصاوير.

অর্থঃ হযরত আবু তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “ঐ ঘরে রহমতের ফেরেস্তা প্রবেশ করে না, যে ঘরে প্রাণীর ছবি বা কুকুর থাকে।” (বুখারী, কিতাবুললিবাছ, বাবুত তাছাবীর, ২য় জিঃ ৮৮০ পৃষ্ঠা)

অর্থাৎ ছবির আমলটা যদি মুসলমানদের মধ্যে জারী করে দেয়া যায় তবে সহজেই তাদেরকে আল্লাহ পাক-এর রহমত থেকে দূরে সরিয়ে লা’নতগ্রস্থ করে জাহান্নামী করে দেয়া সম্ভব। তাই তারা আজ মুসলমানদের মাঝে ছবির ব্যাপক প্রচলন করার ও প্রতি ক্ষেত্রে ছবিকে বাধ্যতামূলক করার জন্য উঠে পরে লেগেছে।

তাদের দালাল ও গোলাম রাজা-বাদশা ও ধর্মব্যবসায়ী উলামায়ে “ছূ”দের মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছে ও ফতওয়া দেয়াচ্ছে যে, “ছবি তোলার ব্যাপারে ধর্মীয় কোন নিষেধাজ্ঞা নেই এবং পুরুষ-মহিলা সকলের জন্য ছবি তোলা জায়িয।” (নাউযূবিল্লাহ)

অতএব, বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এটা মূলতঃ ইহুদী-নাছারাদেরই একটি সুক্ষ্ম ষড়যন্ত্র। তাই প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উচিত ইহুদী নাছারাদের প্রতিটি ষড়যন্ত্র থেকে সাবধান বা সতর্ক থাকা।

অসমাপ্ত

পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন।

ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা লুঙ্গি চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৭

ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৮

ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া— (১)

ফতওয়া বিভাগ-গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া- (২)

ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-(৩)