প্রকাশিত ফতওয়াসমূহ:
[সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীনের জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। আল্লাহ্ পাক-এর অশেষ রহ্মতে “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব-এর অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীল ভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা) ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যায়) এবং ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা) পেশ করার পর-
২৭তম ফতওয়া হিসেবে
“ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় আল্লাহ পাক-এর দরবারে বেশুমার শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
উল্লেখ্য, হিজরী পঞ্চদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ও ইমাম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর প্রতিষ্ঠিত ও পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশিত যামানার তাজদীদী মুখপত্র ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত। এ পত্রিকায় এ যাবৎ যত লিখা বা ফতওয়া প্রকাশ বা পত্রস্থ করা হয়েছে, হচ্ছে ও হবে তার একমাত্র উদ্দেশ্য মানুষের ঈমান-আক্বীদা ও আমল পরিশুদ্ধ করা। এ জন্যেই মূলতঃ যুগে যুগে প্রেরিত হয়েছেন এক লক্ষ চব্বিশ হাজার মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম। এবং সর্বশেষ নবী-রসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অতঃপর প্রত্যেক শতাব্দীর মাঝে প্রেরিত হয়ে আসছেন তাঁর খাছ নায়িব বা ওয়ারিছ তথা যামানার মুজাদ্দিদগণ।
কাজেই, বান্দা ও উম্মত যদি দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দীদার ও সন্তুষ্টি লাভ করতে চায়, রহমত ও নাজাত পেতে চায়, হাক্বীক্বী বান্দা ও হাক্বীক্বী উম্মত হতে চায়, প্রকৃত মু’মিন, মুসলমান ও মুত্তাক্বী হতে চায় তাহলে তার জন্য যামানার মুজাদ্দিদের অনুসারী হওয়া ব্যতীত বিকল্প কোন পথ নেই। সেটা কাছে থেকে হোক কিংবা দূরে থেকে হোক। কারণ আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,
واتبع سبيل من اناب الى.
অর্থঃ- “ঐ ব্যক্তির পথ অনুসরণ করে চলো যিনি আমার দিকে রুজু রয়েছেন।” (সূরা লুক্বমান-১৫)
স্মরণীয় যে, আজকে মুসলমানরা তাদের আদর্শ-ঐতিহ্য ভুলে গিয়ে বিধর্মী-বিজাতীয়দের তর্জ-তরীক্বা, আচার-আচরণ গ্রহণে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাদের এই নাজুক অবস্থা কাটিয়ে ইসলামী আদর্শে আদর্শবান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আহবান করছেন যামানার মহান মুজাদ্দিদ মুদ্দা জিল্লুহুল আলী। সুতরাং তাঁর মুবারক আহবানে সাড়া দেয়ার সময় এখনই। এ লক্ষ্যে ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ পত্রিকার পাঠক, গ্রাহক, শুভাকাঙ্খী ও শুভানুধ্যায়ীগণ ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এর আকর্ষণীয় ও উল্লেখযোগ্য বিভাগ “সুওয়াল-জাওয়াব” ও “ফতওয়া” বিভাগে ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে শরীয়তের সঠিক ফায়ছালা জানার জন্য অসংখ্য সুওয়াল প্রেরণ করেন। যেহেতু আল্লাহ পাক রাব্বুল আ’লামীন কালামে পাকে ইরশাদ করেন,
فسئلوا اه الذكر ان كنتم لا تعلمون.
অর্থঃ- “যদি তোমরা না জান, তবে আহ্লে যিকির বা আল্লাহওয়ালাগণকে জিজ্ঞেস করে জেনে নাও।” (সূরা নহল-৪৩ ও সূরা আম্বিয়া-৭)
তাই প্রেরিত সুওয়ালসমূহের প্রেক্ষিতে “ইসলামের নামে গণতন্ত্র, নির্বাচন, ভোট ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” ইসলামের দলীল- কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে পেশ করা হলো।
মূলতঃ আমাদের সাথে কারো যেরূপ বন্ধুত্ব নেই, তদ্রুপ নেই বিদ্বেষ। অর্থাৎ যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তসম্মত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বিদ্বেষ নেই। আর যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তের খিলাফ বা বিপরীত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বন্ধুত্ব নেই। কারণ মুসলমানের বন্ধুত্ব বা বিদ্বেষ একমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর জন্যেই হতে হবে।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে,
عن ابى هريرة رضى اله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من احب ليه وابغض لله واعطى لله واعطى لله ومنع لله فقد استكمل الايمان.
অর্থঃ- “হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক-এর (সন্তুষ্টি লাভের) জন্যে মহব্বত বা বন্ধুত্ব করে, বিদ্বেষ পোষণ করে, আদেশ করে, নিষেধ করে, তার ঈমান পরিপূর্ণ।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী)
বস্তুতঃ মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার প্রতিটি লিখা, বক্তব্য, সুওয়াল-জাওয়াব, ফতওয়া, প্রতিবাদ, প্রতিবেদন, মতামত ইত্যাদি উপরোক্ত হাদীছ শরীফের মূলনীতির ভিত্তিতেই প্রকাশিত হয়ে থাকে।
কাজেই “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় “ইসলামের নামে গণতন্ত্র, নির্বাচন, ভোট ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” দেয়ার মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হলো সত্যান্বেষী বা হক্ব তালাশী মুসলমানগণের নিকট সঠিক বা হক্ব বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা। যার মাধ্যমে প্রত্যেকেই তাদের ঈমান-আক্বীদা ও আমল হিফাযতের মাধ্যমে ইহ্লৌকিক ও পারলৌকিক ইত্মিনান ও নাযাত লাভ করতে পারে।
মূলতঃ মানুষ মাত্রই ভুল হওয়া স্বাভাবিক, তাই এক মু’মিন অপর মু’মিনের ভুল ধরিয়ে বা শুধরিয়ে দেয়া ঈমানী দায়িত্ব। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে,
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم المؤمن مرأة المؤمن اذا رأى فيه عيبا اصلحه.
অর্থঃ- “হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, এক মু’মিন অপর মু’মিনের জন্যে আয়না। যখন সে তার মধ্যে কোন দোষত্রুটি দেখবে তখন সে তাকে সংশোধন করে দিবে।” (বুখারী, আবূ দাউদ, মিশকাত)
উপরোক্ত হাদীছ শরীফের আলোকে অসংখ্য, অগণিত পাঠকগণের পূণঃপূণঃ অনুরোধের প্রেক্ষিতে মুসলমানদের আক্বীদা ও আমল হিফাযতের লক্ষ্যে ইসলামের নামে গণতন্ত্র, নির্বাচন, ভোট ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া প্রদান করা হলো। যাতে করে সত্যান্বেষী, মুসলমানগণ এ সম্পর্কে আপত্তিকর বক্তব্যসমূহের সঠিক শরয়ী ফায়সালা অবগত হন, যার ফলশ্রুতিতে সকলেই উক্ত আপত্তিকর আক্বীদা ও বক্তব্যসমূহ থেকে নিজেদের ঈমান ও আমলের হিফাযত করে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করতে পারেন।
সুওয়ালকারীদের নাম-ঠিকানা
সাইয়্যিদ মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন, ঢাকা
মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন, মুহম্মদপুর, ঢাকা
মুহম্মদ ছিদ্দীকুল আলম, চান্দিনা, কুমিল্লা
মুহম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, শালিখা, মাগুরা
মুহম্মদ আফতাবুদ্দীন, কোনাবাড়ী, গাজিপুর
মুহম্মদ মুহসিনুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
মুহম্মদ হারুনূর রশীদ, মাহিগঞ্জ, রংপুর
শাফিয়ী আহমদ, রাজারহাট, কুড়িগ্রাম
মুহম্মদ সদরুল আমীন গোলাপগঞ্জ, সিলেট
মুহম্মদ আশাদুজ্জামান, পলাশবাড়ী, গাইবান্ধা
মুহম্মদ আশফাকুর রহমান, সিংড়া, নাটোর
মুহম্মদ ইছহাকুর রহমান, কসবা, বি.বাড়িয়া
মুহম্মদ শফিকুছ্ ছালেহীন, মতলব, চাঁদপুর
মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান, প্রভাকরদী, এন.গঞ্জ
মুহম্মদ হারিছুর রহমান, রাজপাড়া, রাজশাহী
মুহম্মদ কাওছার হুসাইন, বানারীপাড়া, বরিশাল
মুহম্মদ হাদীউল ইসলাম, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম
মুহম্মদ কামরুজ্জামান, কুটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ
মুহম্মদ আবুল কাশেম, আক্কেলপুর, জয়পুরহাট
মুহম্মদ হাবীবুল্লাহ, কালীহাতি, টাঙ্গাইল
সুওয়াল:
বর্তমান সময় যে সমস্ত “সংসদ নির্বাচন” অনুষ্ঠিত হয়। তাতে অন্যান্য দলগুলোর মতো নামধারী ইসলামী দলগুলোও সক্রিয়ভাবে উক্ত নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে তথা প্রার্থী দেয়। ইসলামের নামে যারা নির্বাচনে অংশ নেয় তারা সাধারণতঃ প্রচার করে থাকে যে, গণতন্ত্র আর ইসলাম একই বিষয় এবং তারা যে গণতন্ত্র করছে, সেটা হচ্ছে ইসলামী গণতন্ত্র। তারা গণতন্ত্রের ভিত্তি ভোটকে আমানত, শুপারিশ, উকিল নিয়োগ, স্বাক্ষ্য ইত্যাদি বলে প্রচার করে থাকে।
কেউ কেউ আবার ইসলামী দলকে ভোট দেয়া ফরয-ওয়াজিব বলে থাকে। আরো বলে থাকে যে, ইসলামী দলের প্রার্থীকে ভোট দিলে জান্নাতের টিকেট পাওয়া যাবে। যেমন জামাত নেতারা কিছুদিন পূর্বে একটি দৈনিক পত্রিকার সাক্ষাতকারে বলেছে, ইসলাম ও গণতন্ত্র একই বিষয়।
বায়তুল মুকাররমের খতীব ওবায়দুল হক বলেছে, “ভোট দেয়া আল্লাহ পাক-এর নির্দেশ অর্থাৎ ফরয। আল্লাহ পাক বলেন, ভোট একটি আমানত। আল্লাহ পাক-এর হাবীব বলেছেন, সৎ লোককে ভোট দিতে হবে।” (দৈনিক সংগ্রাম ১লা জুলাই-২০০৬)
মাহিউদ্দিন খান তার মাসিক মদীনা ডিসেম্বর/৯৯ সংখ্যায় নির্বাচন ভিত্তিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোট দান সম্পর্কিত একটি প্রশ্নের উত্তরে লিখেছে, (ক) ছহীহ্ অর্থে মুসলমানদের প্রকৃত শাসক হচ্ছে পবিত্র কুরআন এবং রসূলের সুন্নাহ্। (খ) প্রচলিত যে কোন শাসন ব্যবস্থায় যদি কুরআন-সুন্নাহ্র প্রাধান্য মেনে নেয়া হয় তবে তা মুসলিম জনগণ বিনা দ্বিধায় মেনে নিতে পারেন। (গ) ভোটের মাধ্যমে নেতা বা শাসক নির্বাচনের বর্তমান যে পদ্ধতি এটা অংকুরিত হয়েছে, ইসলামী শুরা পদ্ধতির মধ্য থেকে। সুতরাং এই পদ্ধতিতে ভোটের রাজনীতি ইসলামে বৈধ নয় এ কথা বলা যাবে না। (ঘ) এ যুগের ভোট প্রদান বাইয়াতের বিকল্প বিবেচিত হতে পারে।
অনুরূপ হাটহাজারী খারেজী মাদ্রাসার মুখপত্র মাসিক মুহীনুল ইসলামের সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর’ ০৬ সংখ্যায়ও ভোট-নির্বাচন সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছে, (ক) গণতন্ত্র বা নির্বাচন দুই প্রকার। (১) পাশ্চত্য গণতন্ত্র বা নির্বাচন। (২) ইসলামী গণতন্ত্র বা নির্বাচন। (খ) খুলাফায়ে রাশেদীন ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছিলেন (গ) পদপ্রার্থী হওয়া জায়িয। (ঘ) কুরআন সুন্নাহয় ভোটকে স্বাক্ষী, আমানত, সুপারিশ ও প্রতিনিধি নিয়োগ বলে উল্লেখ করা হয়েছে ইত্যাদি অনেক ভুল তথ্য তারা উল্লেখ্য করেছে। পটিয়া খারেজী মাদ্রাসার মুখপত্র “আত্ তাওহীদ” ডিসেম্বর/৯৬, জানুয়ারী/৯৭, জুলাই-আগস্ট/৯৭
সংখ্যায় ভোট-নির্বাচন এমনকি ভোট বেচা-কেনা করাকেও জায়িয ফতওয়া দিয়েছে।
আর উল্লিখিত বিষয়ে তাদের নিকট দলীল তলব করলে তারা সাধারণতঃ মুফতী শফীর মা’য়ারিফুল কুরআন ও ভোটের ইসলামী শরয়ী বিধান এবং শামসুল হক ফরীদপুরী ছাহেবের বক্তব্য তুলে ধরে বলে থাকে যে, তারা ভোটকে জায়িয বলেছেন। এখন আমাদের জানার বিষয় হলোঃ
…..১৪। পটিয়া খারিজী মাদ্রাসার মুখপত্র আত তাওহীদ-এর ডিসেম্বর/৯৬, জানুয়ারী/৯৭ এবং জুলাই আগস্ট/৯৭ সংখ্যা সমূহে ভোট নির্বাচন সম্পর্কিত কয়েকটি প্রশ্নের জবাবে যা লিখেছে:
(ক) শরীয়তের দৃষ্টিতে ভোট হচ্ছে শাহাদাত বা সাক্ষ্য।
(খ) বর্তমান পদ্ধতিতে নির্বাচন করা ইসলামপন্থিদের জন্য একান্ত কর্তব্য।
(গ) ভোট নাগরিক অধিকার, এ অধিকার অর্জনে মা’জুর বশতঃ মহিলাদের জন্যও ছবি তোলা জায়িয রয়েছে।
(ঘ) দ্বীন ইসলাম রক্ষার্থে ভোট বেচা-কেনা করাও জায়িয রয়েছে।
পটিয়া-খারিজী মাদ্রাসার মৌলবী ছাহেবদের উপরোক্ত বক্তব্য কতটুকু দলীলভিত্তিক ও শরীয়ত সম্মত।
১৫। আজকাল নামধারী প্রতিটি ইসলামী দলকেই দেখা যায় বিভিন্ন দলের সাথে জোট বা চুক্তি করে থাকে। তাদেরকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তারা এটাকে হুদায়বিয়ার সন্ধির সাথে তুলনা করে থাকে। হুদায়বিয়ার সন্ধির সাথে তাদের উক্ত জোট বা চুক্তিকে তুলনা করা সঠিক ও শরীয়তসম্মত কিনা?
১৬। যে সকল কথিত মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিছ, শাইখুল হাদীছ, খতীব, পীর, আমীর ইসলামের নামে গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন করছে, ভোটকে আমানত, স্বাক্ষ্য ফরয-ওয়াজিব বলছে এবং ক্ষমতার লোভে বাতিলের সাথে আতাত করছে তারা হক্কানী আলিম কিনা? তাদের পিছনে নামায পড়া জায়িয কিনা? তাদের ব্যাপারে শরীয়তের ফায়ছালা কি?
১৭। যদি ইসলামের দৃষ্টিতে গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন নাজায়িয হয় তবে রাষ্ট্র পরিচালিত হবে কিভাবে? এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠিত হবে কিভাবে? রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠা করা কি ফরযে আইন? আর এজন্য কি সশস্ত্র বিপ্লব বা বোমাবাজি, জিহাদ বা জঙ্গী কার্যকলাপের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা যাবে?
উপরোক্ত প্রতিটি বিষয় দলীলভিত্তিক বিস্তারিত জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান-আক্বীদা ও আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদি।
জাওয়াবঃ
ইসলামের নামে বা ইসলামের দোহাই দিয়ে গণতন্ত্র, ভোট, নিবার্চন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া, নিজ দলকে ভোট দেয়া ওয়াজিব ও জান্নাতের টিকেট লাভের কারণ বলা এবং ভোটকে আমানত, সুপারিশ, স্বাক্ষ্য ইত্যাদি বলা সম্পূর্ণ হারাম ও কুফরী। এটাই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস তথা শরীয়তের চুড়ান্ত, ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া।
অতএব, বলার অপেক্ষা রাখে না যে, গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন ও পদপ্রার্থী হওয়া সম্পর্কিত তথাকথিত খতীব উবায়দুল হক, নিজামী, আহমদ শফী, মাহিউদ্দীন, আমিনী ও আযীযূল হক- ওহাবী, দেওবন্দী ও জামাতীগংদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের খিলাফ বিধায় তা ভুল, অশুদ্ধ, জিহালতপূর্ণ দলীলবিহীন ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
নিম্নে পর্যায়ক্রমে সুওয়ালে উল্লেখিত তাদের প্রতিটি বক্তব্যের খ-নমূলক জাওয়াব প্রদান করা হলো।
(১৪)
পটিয়া খারিজী মাদ্রাসার অখ্যাত মুখপত্র “মাসিক আত্ তাওহীদ” ডিসেম্বর-৯৬, জানুয়ারী, জুলাই ও আগষ্ট-৯৭ সংখ্যাসমূহে ভোট-নির্বাচন সম্পর্কে প্রদত্ত বক্তব্যসমূহের খ-ণমূলক জবাব
পটিয়া খারিজী মাদ্রাসার অখ্যাত মূখপত্র “আত্তাওহীদ” ডিসেম্বর-৯৬, জুলাই, জানুয়ারী ও আগস্ট-৯৭ সংখ্যাসমূহে ভোট-নির্বাচন সম্পর্কে যা লিখেছে তা হলো-
ধারাবাহিক
(গ)
“ভোট নাগরিক অধিকার, এ অধিকার অর্জনে মা’জূরবশতঃ মহিলাদের জন্যও ছবি তোলা জায়িয রয়েছে”
পটিয়া খারিজী মৌলবী ছাহেবদের এ বক্তব্য কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত
পটিয়া খারিজী মাদ্রাসার মৌলবী ছাহেবরা যে বলেছে “ভোট নাগরিক অধিকার, এ অধিকার অর্জনে মা’জুরবশঃত মহিলাদের জন্যও ছবি তোলা জায়িয রয়েছে” তাদের এ বক্তব্য শুধু অশুদ্ধই নয় বরং কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের সম্পূর্ণই খিলাফ ও কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত।
তাদের উক্ত বক্তব্যের জবাবে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, “ভোট নাগরিক অধিকার” এটা আল্লাহ পাক, আল্লাহ পাক-এর রসূল তথা কুরআন সুন্নাহর কথা নয়। অর্থাৎ কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের কোথাও উল্লেখ নাই যে, ভোট নাগরিক অধিকার। বরং কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে অর্র্থাৎ ইসলামের নামে ভোট- নির্বাচন ইত্যাদি সবই হারাম ও নাজায়িয। কারণ ভোট-নির্বাচন গণতন্ত্রেরই একটি অংশ। আর গণতন্ত্র হচ্ছে ইহুদী-নাছারা তথা বেদ্বীন-বদদ্বীন কাফির-মুশরিকদের দ্বারা রচিত একটি মানব রচিত কুফরী মতবাদ। তাহলে মুসলমানদের জন্য বা ইসলামের নামে তা পালন করা বা আমল করা কি করে জায়িয হতে পারে? আল্লাহ পাক তো স্পষ্ট বলেই দিয়েছেন-
ومن يبتغ غير الاسلام دينا فلن يقبل منه وهو فى الاخرة من الخسرين.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন (নিয়ম-নীতি, অন্য ধর্ম) তালাশ করে, তা কখনোই তার থেকে গ্রহণ করা হবেনা এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (সূরা আলে ইমরান-৮৫)
তাছাড়া আমরা যদি গণতন্ত্রের দিকে তাকাই তাহলেও দেখতে পাই যে, গণতন্ত্রেও নাগরিক হওয়ার জন্য ভোটকে শর্ত করা হয় নাই। অর্থাৎ ভোট না দিলে নাগরিক হওয়া যাবে না বা হতে পারবে না এরূপ কোন শর্ত গণতন্ত্রেও নেই। বরং গণতন্ত্রের কথা হলো ভোট দিতে হলে বা ভোটার হতে হলে দেশের নাগরিক হওয়া শর্ত। দেশের নাগরিক ব্যতীত কেউ ভোটার হতে পারবে না বা ভোট দিতে পারবে না। শুধু তাই নয়, কোন গণতান্ত্রিক দেশেই এরূপ কোন বাধ্যবাধকতা নেই যে, সকলকে অবশ্যই ভোট দিতে হবে বা কেউ ভোট না দিলে তাকে শাস্তি দেয়া হবে।! যদি তাই হয়ে থাকে তবে ইসলামের নামে ভোট নাগরিক অধিকার হয় কিভাবে? আর এ ক্ষেত্রে মা’জুরই বা হয় কি করে?
মূলত দুনিয়ার মোহ তাদেরকে এতটাই জাহিল বানিয়ে দিয়েছে যে, তারা না জানে ইসলাম, না জানে গণতন্ত্র আর না জানে সাধরণ মা’জুরের মাসয়ালা। অর্থাৎ মা’জুর কাকে বলে, কোন কোন ক্ষেত্রে মানুষ মা’জুর হতে পারে এ সম্পর্কে তাদের সামন্যতমও ইলম নেই। আর তাই তারা এসম্পর্কে বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক বক্তব্য প্রদান করেছে। কাজেই ইসলামে বা ইসলামের নামে যেহেতু ভোটই হারাম, তাই এক্ষেত্রে মা’জুর হওয়ার প্রশ্নই উঠে না। সুতরাং ভোট দেয়ার জন্য ছবি তোলাকে জায়িয বলা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। কারণ এক্ষেত্রে ছবি তোলাকে জাযিয় বলার অর্থ হলো ১। ইহুদী-নাছারাদের রচিত কুফরী মতবাদ গণতন্ত্রকে জায়িয বলা, ২। আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ছবি তোলাকে হারাম ঘোষণা করেছেন তাঁদের বিরোধিতা করে সে ছবিকে জায়িয বলা। ৩। আর ইসলামের একটি অন্যতম ফরয পর্দা তরক করাকে জায়িয সাব্যস্ত করা। অর্থাৎ মহিলার ছবি তোলা বা ভোটার তালিকায় ছবি দেয়ার অর্থ হলো- বেপর্দা হওয়া।
স্মর্তব্য যে, গণতন্ত্র ভোট-নির্বাচন ইত্যাদি যে, হারাম ও কুফরী মতবাদ এ সম্পর্কে বিগত সংখ্যাগুলোতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে,
এখানে ছবি ও পর্দা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো-
শরীয়তের দৃষ্টিতে ছবির ফায়ছালা
ছিহাহ সিত্তাহসহ সকল হাদীছ শরীফের শরাহ, ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে “ছবি তোলা শক্ত হারাম” বলে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন “ছহীহ বুখারী শরীফে” ইরশাদ হয়েছে,
عن عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول ان اشد الناس عذابا عند الله المصورون.
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি শুনেছি, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয় মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তি দিবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।”
ছহীহ নাসায়ী শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابن عمر رضى اله تعالى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم قال ان اصحاب هذه الصور الذين يصنعونها يعدبون يوم الفيمة ويقال لهم احيوا ما خلقتم.
অর্থঃ “হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয় প্রাণীর ছবি তৈরীকারীদের ক্বিয়ামতের দিন শাস্তি দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, তোমরা যে ছবিগুলো তৈরী করেছ তার মধ্যে প্রাণ দাও (কিন্তু তারা প্রাণ দিতে সক্ষম হবেনা)।”
“ছহীহ বুখারী শরীফ” ২য় জিঃ পৃঃ৮৮০, মিশকাত শরীফ ৩৮৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
عن عائشة رضى الله تعالى عنها حدنته ان النبى صلى الله عليه وسلم لم يكن يترك فى بيته شيئا فيه تصاليب الا نقضه.
অর্থঃ হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ পাক-এর রসুল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরে প্রাণীর ছবি বা ছবিযুক্ত সকল জিনিস (থাকলে) ধ্বংস করে ফেলতেন।
“ছহীহ বুখারী শরীফ” ২য় জিঃ, পৃঃ ৮৮০, “ছহীহ মুসলিম শরীফ” ২য় জিঃ, ২০১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
عن عائشة رضى الله تعالى عنها قالت قدم رسول الله صلى اله عليه وسلم من سغر وقد سترت بقرام لى على شهوة لى فيه تماثيل فلم راه رسول اله صلى اله عليه وسلم هتكه وقال اضد الناس عذابا يوم القيامة الذين يصاهون بخلق الله قالت فجعلناه وسادة او وسادتين. وفى رواية اخرى قالت قدم النبى صلى الله عليه وسلم من سغر وعلقت درنوكا فيه تماثيل فامرنى ان انزعه فنزعته.
অর্থঃ হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন এক সফর থেকে ঘরে তাশরীফ আনলেন, আমি ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবিযুক্ত একখানা পর্দা লাগিয়েছিলাম। আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওটা দেখে ছিড়ে ফেললেন এবং বললেন, “ক্বিয়ামতের দিন ঐ সমস্ত মানুষের কঠিন আযাব হবে যারা আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টির সাদৃশ্য কোন প্রাণীর ছুরত সৃষ্টি করে।” অতঃপর আমি ওটা দ্বারা একটা অথবা দুইটা বালিশ বানালাম। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফর থেকে ঘরে ফিরলেন আমি ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবিযুক্ত একখানা পর্দা ঝুলিয়েছিলাম, আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে ওটা সরিয়ে ফেলার আদেশ দিলেন, অতঃপর আমি ওটা সরিয়ে ফেললাম।
“ছহীহ মুসলিম শরীফ” ২য় জিঃ ২০০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
عن عائشة رضى اله تعالى عنها قالت دخل على رسول اله صلى الله عليه وسلم وانا مسترة بقرام فيه صورة فتلون وجهه هم تنا ول الستر فهتكه ثم قال ان من اشد الناس عذابا يوم القيمة الذين يشبهون بخلق الله تعالى.
অর্থঃ হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার নিকট আসলেন। প্রাণীর ছবিযুক্ত একখানা চাদর গায়ে দেওয়া ছিলাম। এটা দেখে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চেহারা মোবারক রঙ্গিন হয়ে গেল। অতঃপর তিনি চাদর খানা নিয়ে ছিঁড়ে ফেললেন এবং বললেন “ক্বিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তির কঠিন শাস্তি হবে, যে ব্যক্তি আল্লাহর সৃষ্টির সাদৃশ্য (কোন প্রাণীর ছুরত) সৃষ্টি করে”
“ছহীহ মুসলিম শরীফ” ২য় জিঃ ২০১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
عن ابى معاوية ان من اشد اهل النار يوم القيمة عذابا المصورون.
অর্থঃ হযরত আবূ মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, “নিশ্চয় ক্বিয়ামতের দিন দোযখবাসীদের মধ্যে ঐ ব্যক্তির কঠিন আযাব হবে, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি আঁকে বা তোলে।”
উল্লিখিত ছহীহ হাদীছ শরীফসমূহের ব্যাখ্যায় ছহীহ বুখারী শরীফের বিথ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ উম্দাতুল ক্বারীতে উল্লেখ আছে,
وان كان ورد فى حق عاص فيكون اشد عذابا من غيره من العصاة ويكون ذلك ذالا على المعصية المذ كورة. وفى التوضيح قال اصحابنا وغيرهم صورة الحيوان حرام اشد التحريم وهم من الكبائر سواء صنعه لما يمتهن او لغيره فحرام بكل حال لان فيه مضاهاة لخلق الله وسواء كان فى ثوب او بشاط اودينار اودرهم اوفلس او اناء او حائط.
অর্থঃ॥ যদিও অন্যান্য গুরুতর পাপের জন্য হাদীছ শরীফে কঠিন শাস্তির কথা বলা হয়েছে, কিন্তু ছবি বা প্রতিমূর্তি ণির্মাণকারীর শাস্তি সর্বাপেক্ষা কঠিন হবে এবং কঠোর শাস্তিই পাপের গুরুত্ব প্রমান করছে। তাওজীহ্ কিতাবে উল্লেখ আছে যে, জীব জন্তুর ছবি বা প্রতিমূর্তি ণির্মাণ করা নিষেধ, বরং কঠোর নিষিদ্ধ কাজ (অর্থাৎ হারাম) এটা কবীরাহ্ গুনাহ্। চাই ওটাকে যত বা সম্মান প্রদর্শন করুক কিংবা অন্য যে কোন উদ্দেশ্যেই বানিয়ে থাকুক। কেননা এরূপ কাজে আল্লাহ পাক-এর সৃষ্টির অনুকরণ করা হয়। ওটা বস্ত্রে, বিছানায় মোহরে মুদ্রায় পয়সায়, পাত্রে কিংবা প্রাচীর গাত্রে যে কোন স্থানে আঁকা বা ণির্মাণ করা হারাম। অনুরূপ ফতওয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়া ও আযযাওয়ায়ির নাম কিতাবে উল্লেখ আছে।
ছহীহ মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ শরহে নববীতে উল্লেখ আছে,
وهذه الاحاديث صريحة فى تحربم تصوير الحيوان وانه غليظة التحر يم ايضافيه وما من لم يقصد بها العبادة ولمضاهاة فهو فاسق صاحب ذنب كبير.
অর্থঃ “উক্ত হাদীছ শরীফসমূহে প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা মূর্তি ণির্মাণ করা হারাম হওয়া সম্বন্ধে প্রকাশ্যেই বলা হয়েছে। এটা তৈরী বা ণির্মাণ করা জঘন্যতম পাপের কাজ ও হারামও বটে। উক্ত কিতাবে আরও আছে, যদি কেউ মূর্তি বা প্রাণীর ছবি পূজা বা সৃষ্টির অনুকরণের জন্য নাও বানিয়ে থাকে তবুও সে ফাসিক হবে এবং কবীরাহ্ গুনাহে গুনাহ্গার হবে।”
মিশকাত শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ মিরকাত শরীফ ও নাইলুল আওতার ২য় জিঃ, ১০৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
قال اصحابنا وغيرهم من العلماء تصوير صورة للحيوان حرام شديدالتحريم وهو من الكبائر لانه متوعد عليه بهذا الوعيد الشديد المذكور فى الاحاديث سواء صنعه فى ثوب او بساط او دينار او درهم.
অর্থঃ “আমাদের মাশায়েখগণ ও ওলামাগণ বলেছেন যে, প্রাণীর ছবি তৈরী করা হারাম, এমনকি গুরুতর হারাম। এটা কবীরাহ্ গুনাহ্। কেননা এরূপ কাজের জন্য বিশেষ ভীতিপ্রদ অবস্থা হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে। ওটা কাপড়ে, বিছানায়, মোহরে কি টাকা-পয়সায় কিংবা যে কোনও স্থানে আঁকা থাকনা কেন তা সমান কথা। ”
শরহে মেরকাত, ফতওয়ায়ে ছিদ্দিকিয়াহ পৃঃ৩৮৩, নাইলুল আওতার ২য় জিঃ, ১০৫ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
واما اتخاذ المصور بحيوان فان كان معلقا على حائط سواء كان له ظل اولا- اوثوبا ملبوسا او عمامة او نحو ذلك فهو حرام.
অর্থঃ প্রাণীর ছবি চাই ওটা প্রাচীর গাত্রে ঝুলানো থাকুক, চাই ওটা দেহ বিশিষ্ট হোক কিংবা আঁকা হোক অথবা পরিধেয় বস্ত্র অথবা পাগড়িতে আঁকা থাকুক সর্বাবস্থায় ব্যবহার করা হারাম।
ফিকহুস সুন্নাহ ৩য় জিঃ, ৪৯৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
جاءت الا حاديث الصحيحة الصريحت بالنهى عن صناعة التما ثيل وعن تصوير ما فيه روح سواء أكان انسانا ام حيوا نا ام طيرا.
অর্থঃ সহীহ্ হাদীছ শরীফ সমূহে প্রাণীর ছবি বা মূর্তি তৈরী করা সম্বন্ধেই প্রকাশ্যেই নিষেধ করা হয়েছে। ওটা মানুষের হোক বা জানোয়ারের কি পাখীর হোক সমান কথা অর্থাৎ হারাম।
মাশারিফুল আন্ওয়ার ৪৪৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
উদূ লেখা ঢুকবে………………………………………
অর্থঃ প্রাণীর ছবি তৈরী করা হারাম। এবং প্রত্যেক প্রাণীর ছবি তৈরীকারীই জাহান্নামে যাবে।
কিতাবুল ফিক্হ আলা মাযাহিবিল আরবাহ্, ২য় জিঃ, ৪১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
واما تصويرالحيوان ان كانت كاملة الاعضاء فانها لا تحل يعنى حرام.
অর্থঃ॥ প্রাণীর ছবি তৈরী করা হারাম, যদি তা পূর্ণ দেহ বিশিষ্ট হয়।
কিফায়াতুল মুফ্তী ৯ম জিঃ, ২২২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
واما فعل التصوير فهو غير جائز مطلقا لان فيه مضاهاة لخلق الله تعالى وسواء كان فى ثوب اوبساط او درهم او اناء او حائط وغيرها.
অর্থঃ প্রাণীর ছবি তৈরী করা নাজায়িয॥হারাম। কেননা এটাতে আল্লাহ পাক-এর সৃষ্টির অনুকরণ করা হয়। প্রাণীর ছবি বস্ত্রে, বিছানায়, মুদ্রায়, পাত্রে এবং প্রাচীর গাত্রে কিংবা অন্য কোন স্থানে থাকা একই কথা অর্থাৎ হারাম।
হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ ২য় জিঃ ১৩০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
الصور يحرم صنعها ويحرم استعمال الثوب.
অর্থঃ প্রাণীর ছবি তৈরী করা হারাম এবং (প্রাণীর ছবি) কাপড়ে ব্যবহার করাও হারাম।
ফতওয়ায়ে নঈমিয়াহ্ ১০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
উদূ লেখা ঢুকবে………………………………………
অর্থঃ প্রাণীর ছবি তৈরী করা শরীয়তে হারাম। (কেননা) প্রাণীর ছবি হারাম হওয়ার ব্যাপারে সকলেই একমত, সুতরাং ওটা তৈরী করা সর্বাবস্থায় হারাম। ইরশাদুত তালিবীন পৃঃ২০, ইখতেলাফে উম্মত আওর সিরাতে মুস্তাক্বীম ৬৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
سول كريم صلى الله عليه وسلم على رضى الله عنه رافرستاد كه هرجا كه تصوير بينند او رامحو كنند.
অর্থঃ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে (এই বলে) পাঠালেন যে, যেখানেই প্রাণীর ছবি দেখতে পাবে ওটা ধ্বংস করে ফেলবে।
তোহ্ফায়ে খাওয়াতীন ৯১২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
উদূ লেখা ঢুকবে………………………………………
অর্থঃ কিছু লোকের ধারণা, হাদীছ শরীফে হাত দ্বারা প্রাণীর ছবি তৈরী করা হারাম করা হয়েছে ক্যামেরার দ্বারা নয়। এটা তাদের ভুল এবং ভ্রান্ত ধারণা। মূলতঃ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রাণীর ছবি হারাম হওয়ার মূল উদ্দেশ্য ওটা যে পদ্ধতিতেই তৈরী করা হোক না কেন।
এমদাদুল ফতওয়া ২য় জিঃ ১৫১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
উদূ লেখা ঢুকবে………………………………………
অর্থঃ বর্তমান আধুনিক যুগে যাকে ছবি বলা হয়, সহীহ্ হাদীছ শরীফ সমূহের আলোকে ওটা আঁকা বা তৈরী করা এবং ঘরে রাখা সম্পূর্ণ হারাম। (প্রাণীর ছবি) ওটা নিঃচিহ্ন করে ফেলা ওয়াজিব।
ফতওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ ১ম জিঃ ৭৪২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
উদূ লেখা ঢুকবে………………………………………
অর্থঃ আধুনিক যে কোন পদ্ধতিতে প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা তৈরী করানো, হাতে তৈরী করা বা তৈরী করানোর মতোই হারাম ও নাজায়িয এবং প্রাণীর ছবি রাখাও তদ্রুপ হারাম।
উক্ত আমলকারী ব্যক্তি ফাসেক এবং তাকে ইমাম নিযুক্ত করা হারাম। এবং তার পিছনে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রিমী।
শরীয়তের দৃষ্টিতে পর্দার ফায়ছালা
কুরআন শরীফে “সূরা নিসা, সূরা নূর ও সূরা আহযাব” ইত্যাদি সূরাসমূহে পর্দা করার ব্যাপারে কঠোর আদেশ-নির্দেশ করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
قل للمؤمنين يغضوا من ابصارهم ويحفظوا فروجهم ذلك ازكى لهم ان الله خبير بما يصنعون. وقل للمؤمنت يغضضن من ابصارهن ويحفظن فروجهن ولا يبدين زينتهن.
অর্থঃ- “(হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি মু’মিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের ইজ্জত-আবরু হিফাযত করে। এটা তাদের জন্য পবিত্রতার কারণ। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তারা যা করে তার খবর রাখেন। আর আপনি মু’মিনাদেরকে বলুন, তারাও যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং তাদের ইজ্জত-আবরু হিফাযত করে ও তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।” (সূরা নূর-৩০,৩১)
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن بريدة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى اله عليه وسلم لعلى يا على لا تتبع النظرة فان لك الاولى وليست لك الاخرة.
অর্থঃ- “হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, হে আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, দৃষ্টিকে অনুসরণ করবেন না। প্রথম দৃষ্টি (যা অনিচ্ছা সত্ত্বে পতিত হয় তা) ক্ষমা করা হবে; কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে না।” অর্থাৎ প্রতি দৃষ্টিতে একটি কবীরা গুণাহ্ লেখা হবে। (আহমদ, তিরমিযী, আবু দাউদ, দারিমী, মিশকাত)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن الحسن مرسلا قال بلغنى ان رسول الله صلى اله عليه وسلم قال لعن الله الناظر وامنظور اليه.
অর্থঃ- “হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি মুরসাল সূত্রে বর্ণনা করেন, আমার নিকট এই হাদীছ শরীফ পৌছেছে, যে দেখে এবং দেখায় তার প্রতি আল্লাহ পাক-এর লা’নত।” (বায়হাক্বী, মিশকাত)
অর্থাৎ আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাক এবং আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর হাদীছ শরীফ দ্বারা সরাসরি পর্দাকে ফরয করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয় বরং চোখের দৃষ্টিসহ সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে হিফাযত করে পর্দা করতে বলেছেন।
গবেষণা করে দেখা গেছে যে, “প্রত্যেক মানুষ পুরুষ কিংবা মহিলা হোক, সে প্রতি দু’সেকেন্ডে পাঁচটি করে চোখের পলক বা দৃষ্টি ফেলে থাকে। সে হিসেবে প্রতি মিনিটে ১৫০টি পলক বা দৃষ্টি করে থাকে। আর ঘণ্টা হিসেবে প্রতি ঘণ্টায় ৯০০০ (নয় হাজার) পলক বা দৃষ্টি করে থাকে। সে হিসেবে বেগানা পুরুষ ও মহিলা পরস্পর পরস্পরের প্রতি দৃষ্টি দেয়ার কারণে তাদের উভয়ের প্রতি এক মিনিটে তিনশ’টি এবং এক ঘণ্টায় আঠারো হাজার কবীর্ াগুনাহ্ লিখা হয়। এ হিসাব একজন পুরুষ ও একজন মহিলার ক্ষেত্রে। আর যদি কোন মিটিং মিছিলে উপস্থিত মহিলা-পুরুষের পরস্পর পরষ্পরের দৃষ্টির হিসাব করা হয় তাহলে গুনাহর পরিমাণ আরো বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। ধরা যাক, কমপক্ষে মিটিং-মিছিলের সময় ৩ ঘণ্টা আর পুরুষ ও মহিলার সংখ্যা ১০০+ ১০০= ২০০ জন। এখন একজন পুরুষ ও একজন মহিলা পরস্পর পরস্পরের প্রতি দৃষ্টি করার কারণে এক ঘণ্টায় আঠারো হাজার কবীরাহ গুনাহ হয় তাহলে একশ জন পুরুষ ও একশ জন মহিলা পরস্পর পরস্পরের প্রতি দৃষ্টি দেয়ার কারণে কবীরা গুনাহর পরিমাণ হবে ৩৬ লক্ষ এবং তিন ঘণ্টায় হবে ১ কোটি ৮ লক্ষ কবীরা গুনাহ।
অথচ একজন মানুষ যদি একশ বছর হায়াত পায়। আল্লাহ পাক না করুন সে যদি নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত (ফরয হওয়া সত্ত্বেও) কিছুই না করে তারপরও ১ কোটি ৮ লক্ষ কবীরা গুনাহ হবেনা। যেমন, একশ বছরে অর্থাৎ জীবনে একবার হজ্জ করা ফরয তা না করার কারণে ১টা কবীরা গুনাহ। যাকাত একশ বছরে একশটা ফরয তা না দেয়ার কারণে ১০০টা কবীরা গুনাহ। রোযা ২৯ বা ৩০ টা। হিসাবের সুবিধার্থে যদি ৩০টা ধরে নেয়া হয় তা না রাখার কারণে একশ বছরে ৩,০০০ কবীরা গুনাহ। এরপর নামায দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত ফরয ৫টা, এক ওয়াক্ত ওয়াজিব ১টা, সুন্নতে মুয়াক্কাদা- ফজরের ফরযের পূর্বে ১টা, যুহরের ফরযের আগে-পরে ২টা, মাগরিবের ফরযের পর ১টা, ইশার ফরযের পর ১টা মোট ৫টা তা আদায় না করার কারণে সবমিলে দৈনিক ১১টা কবীরা গুনাহ। বছরে ত্রিশ তারাবীহ (সুন্নতে মুয়াক্কাদা) তা আদায় না করার কারণে ৩০টা এবং দু’ঈদ (ওয়াজিব) তা আদায় না করার কারণে ২টা মোট ৩২টা কবীরা গুনাহ। এক বছরে নামায- ৪৪৭০০, যাকাত- ১০০, রোযা- ৩০০০, হজ্জ- ১টা, সর্বমোট ৪,৭৮,০০১টা।
অর্থাৎ একশ বছর কোন ব্যক্তি নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত না করলে তার সর্বোচ্চ কবীরা গুনাহর পরিমাণ হলো মাত্র চার লাখ সাত হাজার আটশ’ একটা।
আর একজন পুরুষ কিংবা মহিলা যদি কোন মিটিং-মিছিলে যোগ দেয় যে মিটিং-মিছিলে পুরুষ বা মহিলার সংখ্যা কমপক্ষে একশ’ জন এবং সেখানে একঘণ্টা অবস্থান করে তাহলে শুধু চোখের দৃষ্টির কারণে তার কবীরা গুনাহর পরিমাণ হবে আঠারো লক্ষ। আর লোক সংখ্যা বেশী হলে এবং বেশী সময় অবস্থান করলে কত লক্ষ-কোটি কবীরা গুনাহ হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাহলে পর্দার কত গুরুত্ব রয়েছে তা চিন্তা-ফিকিরের বিষয়।
কাজেই যেসমস্ত মাওলানারা ইসলামের নামে গণতন্ত্র করতে গিয়ে বেপর্দা হচ্ছে, তারা দৈনিক যে কত কোটি কোটি কবীরা গুনাহ্ করে থাকে তা আল্লাহ পাকই বেহ্তর জানেন।”
এটা তো শুধু চোখের গুণাহর কথা বলা হলো। এমনিভাবে প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা গুনাহ হয়ে থাকে।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم العينان زناهما النظر والاذنان رناهما الاستماع واللسان زناه الكلام وايذزناهاالبطش والرجل زناها الخلى والقلب يهوى ويتمنى ويصدق ذلك الفرج ويكذبه.
অর্থঃ- “হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “চোখের ব্যভিচার হলো দৃষ্টি করা, কানের ব্যভিচার হলো শ্রবণ করা, মুখের ব্যভিচার হলো কথা বলা, হাতের ব্যভিচার হলো স্পর্শ করা, পায়ের ব্যভিচার হলো ধাবিত হওয়া, অন্তর চায় ও আকাঙ্খা করে এবং লজ্জাস্থান সেটাকে সত্য অথবা মিথ্যায় প্রতিপন্ন করে।” (বুখারী, মুসলিম, কানযুল উম্মাল)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
الديوث لايدخل الجنة.
অর্থঃ- “দাইয়্যূছ বেহেশ্তে প্রবেশ করতে পারবেনা।” দাইয়্যূছ ঐ ব্যক্তি যে নিজে পর্দা করেনা এবং তার অধীনস্ত মহিলাদেরও পর্দা করায়না।” (মুসনাদে আহমদ)
অর্থাৎ যারা বেপর্দা হয়ে থাকে হাদীছ শরীফের বর্ণনা মুতাবিক তারা সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা অবৈধ কাজ তথা ব্যভিচারে মশগুল বা লিপ্ত।
পর্দার গুরুত্ব সম্পর্কে আরো উল্লেখ্য যে, আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন,
انبى اولى بالمؤمنين من انفسهم وازواجه امهتهم.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মু’মিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা অধিক ঘনিষ্ট এবং তাঁর আহলিয়াগণ তাদের মাতা।” (সূরা আহযাব-৬)
ما كان لكم ان تؤذوا رسول الله ولا ان تنكحوا ازواجه من بعده ابدا ان ذلكم كان عند الله عظيما.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দেয়া এবং তাঁর বেছাল শরীফের পর তাঁর আহলিয়াগণকে আক্বদ করা তোমাদের জন্য বৈধ নয়। আল্লাহ পাক-এর কাছে এটা গুরুতর অপরাধ।” (সূরা আহযাব-৫৩)
স্মরণীয় যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আহলিয়াগণ হচ্ছেন মু’মিনগণের মাতা। যাদেরকে আক্বদ করা বা আক্বদের চিন্তা করাটাও উম্মতের জন্য হারাম ও কুফরী এবং সেটা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দেয়ার শামীল এবং স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর কাছে গুরুতর অপরাধ অর্থাৎ কুফরী। তারপরও উম্মুল মু’মিনীনগণ যে কিরূপ পর্দা করেছেন তা নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফ থেকে অনুধাবন করা যায়।
যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ام سلمة رضى الله تعالى عنها انها كانت عند رسول اله صلى الله عليه وسلم وميمونة رضى الله عنهما اذ اقبل ابن ام مكتوم فدخل عليه فقال رسول الله صلى الله عليه وسم احتجبا منه فقلت يارسول الله صلى الله عليه وسلم اليس هو اعمى لايبصرنا فقال رسول الله صلى اله عليه وسم افعميا وان انتما الستما تبصرانه.
অর্থঃ- “হযরত উম্মু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত, একবার তিনি এবং হযরত মাইমূনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে বসা ছিলেন। এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলেন অন্ধ ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মুল মু’মিনীনগণকে বললেন, আপনারা দু’জন তাঁর থেকে পর্দা করুন। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তিনি কি অন্ধ নন? তিনি তো আমাদেরকে দেখতে পাচ্ছেন না। উত্তরে হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আপনারাও কি অন্ধ? আপনারাও কি তাঁকে দেখতে পাচ্ছেন না?” (মুসনাদে আহমদ, আবূ দাঊদত্ম
এখানে ফিকিরের বিষয় যে, কুরআন শরীফে যাদেরকে ‘মু’মিনগণের মা’ বলা হয়েছে, যাদের ব্যাপারে অন্তরে কোন প্রকার খারাপ চিন্তাও উদয় হওয়া সম্ভব নয়। তাদেরকেও পর্যন্ত আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্দা করার জন্য কঠোর তাকিদ দিয়েছেন। তাহলে সাধারণ লোকের জন্য পর্দার কতটুকু গুরুত্ব রয়েছে তা চিন্তা-ফিকিরের বিষয়। অর্থাৎ ইসলামে পর্দা করা ফরয। বেপর্দা হওয়া শক্ত হারাম ও কবীরা গুনাহ। যদি তাই হয়ে থাকে তবে ভোটসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য ছবি তোলা কি করে জায়িয হতে পারে? কাজেই মহিলারা ছবি তুললে, দ্বিগুণ গুণাহ হবে। এক. ছবি তোলার গুণাহ, দুই. বেপর্দা হওয়ার গুণাহ। প্রত্যেকটাই হারাম ও কবীরা গুণাহের অন্তর্ভূক্ত।
উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ইসলামে পুরুষ-মহিলা সকলের জন্যই সর্বাবস্থায় ছবি তোলা ও বেপর্দা হওয়া হারাম ও কবীরা গুণাহের অন্তর্ভূক্ত। অর্থাৎ শুধু ভোটের জন্য কেন কোন অবস্থাতেই ছবি তোলা ও বেপর্দা হওয়া জায়িয নেই।
কাজেই, পটিয়া খারিজী মাদ্রাসার মৌলবী ছাহেবরা যে বলেছে, “ভোট নাগরিক অধিকার, এ অধিকার অর্জনে মা’জুরবশতঃ মহিলাদের জন্যও ছবি তোলা জায়িয” তাদের এ বক্তব্য অশুদ্ধ, জিহালতপুর্ণ, মনগড়া, শরীয়ত বিরোধী ও কাট্টা কুফরীমুলক প্রমাণিত হলো।
অসমাপ্ত
পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন