প্রকাশিত ফতওয়াসমূহ:
[সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীনের জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। আল্লাহ্ পাক-এর অশেষ রহ্মতে “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব-এর অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীল ভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা) ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যায়) এবং ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা) পেশ করার পর-
২৭তম ফতওয়া হিসেবে
“ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় আল্লাহ পাক-এর দরবারে বেশুমার শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
উল্লেখ্য, হিজরী পঞ্চদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ও ইমাম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর প্রতিষ্ঠিত ও পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশিত যামানার তাজদীদী মুখপত্র ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত। এ পত্রিকায় এ যাবৎ যত লিখা বা ফতওয়া প্রকাশ বা পত্রস্থ করা হয়েছে, হচ্ছে ও হবে তার একমাত্র উদ্দেশ্য মানুষের ঈমান-আক্বীদা ও আমল পরিশুদ্ধ করা। এ জন্যেই মূলতঃ যুগে যুগে প্রেরিত হয়েছেন এক লক্ষ চব্বিশ হাজার মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম। এবং সর্বশেষ নবী-রসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অতঃপর প্রত্যেক শতাব্দীর মাঝে প্রেরিত হয়ে আসছেন তাঁর খাছ নায়িব বা ওয়ারিছ তথা যামানার মুজাদ্দিদগণ।
কাজেই, বান্দা ও উম্মত যদি দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দীদার ও সন্তুষ্টি লাভ করতে চায়, রহমত ও নাজাত পেতে চায়, হাক্বীক্বী বান্দা ও হাক্বীক্বী উম্মত হতে চায়, প্রকৃত মু’মিন, মুসলমান ও মুত্তাক্বী হতে চায় তাহলে তার জন্য যামানার মুজাদ্দিদের অনুসারী হওয়া ব্যতীত বিকল্প কোন পথ নেই। সেটা কাছে থেকে হোক কিংবা দূরে থেকে হোক। কারণ আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,
واتبع سبيل من اناب الى.
অর্থঃ- “ঐ ব্যক্তির পথ অনুসরণ করে চলো যিনি আমার দিকে রুজু রয়েছেন।” (সূরা লুক্বমান-১৫)
স্মরণীয় যে, আজকে মুসলমানরা তাদের আদর্শ-ঐতিহ্য ভুলে গিয়ে বিধর্মী-বিজাতীয়দের তর্জ-তরীক্বা, আচার-আচরণ গ্রহণে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাদের এই নাজুক অবস্থা কাটিয়ে ইসলামী আদর্শে আদর্শবান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আহবান করছেন যামানার মহান মুজাদ্দিদ মুদ্দা জিল্লুহুল আলী। সুতরাং তাঁর মুবারক আহবানে সাড়া দেয়ার সময় এখনই। এ লক্ষ্যে ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ পত্রিকার পাঠক, গ্রাহক, শুভাকাঙ্খী ও শুভানুধ্যায়ীগণ ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এর আকর্ষণীয় ও উল্লেখযোগ্য বিভাগ “সুওয়াল-জাওয়াব” ও “ফতওয়া” বিভাগে ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে শরীয়তের সঠিক ফায়ছালা জানার জন্য অসংখ্য সুওয়াল প্রেরণ করেন। যেহেতু আল্লাহ পাক রাব্বুল আ’লামীন কালামে পাকে ইরশাদ করেন,
فسئلوا اه الذكر ان كنتم لا تعلمون.
অর্থঃ- “যদি তোমরা না জান, তবে আহ্লে যিকির বা আল্লাহওয়ালাগণকে জিজ্ঞেস করে জেনে নাও।” (সূরা নহল-৪৩ ও সূরা আম্বিয়া-৭)
তাই প্রেরিত সুওয়ালসমূহের প্রেক্ষিতে “ইসলামের নামে গণতন্ত্র, নির্বাচন, ভোট ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” ইসলামের দলীল- কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে পেশ করা হলো।
মূলতঃ আমাদের সাথে কারো যেরূপ বন্ধুত্ব নেই, তদ্রুপ নেই বিদ্বেষ। অর্থাৎ যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তসম্মত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বিদ্বেষ নেই। আর যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তের খিলাফ বা বিপরীত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বন্ধুত্ব নেই। কারণ মুসলমানের বন্ধুত্ব বা বিদ্বেষ একমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর জন্যেই হতে হবে।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে,
عن ابى هريرة رضى اله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من احب ليه وابغض لله واعطى لله واعطى لله ومنع لله فقد استكمل الايمان.
অর্থঃ- “হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক-এর (সন্তুষ্টি লাভের) জন্যে মহব্বত বা বন্ধুত্ব করে, বিদ্বেষ পোষণ করে, আদেশ করে, নিষেধ করে, তার ঈমান পরিপূর্ণ।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী)
বস্তুতঃ মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার প্রতিটি লিখা, বক্তব্য, সুওয়াল-জাওয়াব, ফতওয়া, প্রতিবাদ, প্রতিবেদন, মতামত ইত্যাদি উপরোক্ত হাদীছ শরীফের মূলনীতির ভিত্তিতেই প্রকাশিত হয়ে থাকে।
কাজেই “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় “ইসলামের নামে গণতন্ত্র, নির্বাচন, ভোট ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” দেয়ার মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হলো সত্যান্বেষী বা হক্ব তালাশী মুসলমানগণের নিকট সঠিক বা হক্ব বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা। যার মাধ্যমে প্রত্যেকেই তাদের ঈমান-আক্বীদা ও আমল হিফাযতের মাধ্যমে ইহ্লৌকিক ও পারলৌকিক ইত্মিনান ও নাযাত লাভ করতে পারে।
মূলতঃ মানুষ মাত্রই ভুল হওয়া স্বাভাবিক, তাই এক মু’মিন অপর মু’মিনের ভুল ধরিয়ে বা শুধরিয়ে দেয়া ঈমানী দায়িত্ব। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে,
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم المؤمن مرأة المؤمن اذا رأى فيه عيبا اصلحه.
অর্থঃ- “হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, এক মু’মিন অপর মু’মিনের জন্যে আয়না। যখন সে তার মধ্যে কোন দোষত্রুটি দেখবে তখন সে তাকে সংশোধন করে দিবে।” (বুখারী, আবূ দাউদ, মিশকাত)
উপরোক্ত হাদীছ শরীফের আলোকে অসংখ্য, অগণিত পাঠকগণের পূণঃপূণঃ অনুরোধের প্রেক্ষিতে মুসলমানদের আক্বীদা ও আমল হিফাযতের লক্ষ্যে ইসলামের নামে গণতন্ত্র, নির্বাচন, ভোট ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া প্রদান করা হলো। যাতে করে সত্যান্বেষী, মুসলমানগণ এ সম্পর্কে আপত্তিকর বক্তব্যসমূহের সঠিক শরয়ী ফায়সালা অবগত হন, যার ফলশ্রুতিতে সকলেই উক্ত আপত্তিকর আক্বীদা ও বক্তব্যসমূহ থেকে নিজেদের ঈমান ও আমলের হিফাযত করে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করতে পারেন।
সুওয়ালকারীদের নাম-ঠিকানা
সাইয়্যিদ মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন, ঢাকা
মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন, মুহম্মদপুর, ঢাকা
মুহম্মদ ছিদ্দীকুল আলম, চান্দিনা, কুমিল্লা
মুহম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, শালিখা, মাগুরা
মুহম্মদ আফতাবুদ্দীন, কোনাবাড়ী, গাজিপুর
মুহম্মদ মুহসিনুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
মুহম্মদ হারুনূর রশীদ, মাহিগঞ্জ, রংপুর
শাফিয়ী আহমদ, রাজারহাট, কুড়িগ্রাম
মুহম্মদ সদরুল আমীন গোলাপগঞ্জ, সিলেট
মুহম্মদ আশাদুজ্জামান, পলাশবাড়ী, গাইবান্ধা
মুহম্মদ আশফাকুর রহমান, সিংড়া, নাটোর
মুহম্মদ ইছহাকুর রহমান, কসবা, বি.বাড়িয়া
মুহম্মদ শফিকুছ্ ছালেহীন, মতলব, চাঁদপুর
মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান, প্রভাকরদী, এন.গঞ্জ
মুহম্মদ হারিছুর রহমান, রাজপাড়া, রাজশাহী
মুহম্মদ কাওছার হুসাইন, বানারীপাড়া, বরিশাল
মুহম্মদ হাদীউল ইসলাম, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম
মুহম্মদ কামরুজ্জামান, কুটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ
মুহম্মদ আবুল কাশেম, আক্কেলপুর, জয়পুরহাট
মুহম্মদ হাবীবুল্লাহ, কালীহাতি, টাঙ্গাইল
সুওয়াল:
বর্তমান সময় যে সমস্ত “সংসদ নির্বাচন” অনুষ্ঠিত হয়। তাতে অন্যান্য দলগুলোর মতো নামধারী ইসলামী দলগুলোও সক্রিয়ভাবে উক্ত নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে তথা প্রার্থী দেয়। ইসলামের নামে যারা নির্বাচনে অংশ নেয় তারা সাধারণতঃ প্রচার করে থাকে যে, গণতন্ত্র আর ইসলাম একই বিষয় এবং তারা যে গণতন্ত্র করছে, সেটা হচ্ছে ইসলামী গণতন্ত্র। তারা গণতন্ত্রের ভিত্তি ভোটকে আমানত, শুপারিশ, উকিল নিয়োগ, স্বাক্ষ্য ইত্যাদি বলে প্রচার করে থাকে।
কেউ কেউ আবার ইসলামী দলকে ভোট দেয়া ফরয-ওয়াজিব বলে থাকে। আরো বলে থাকে যে, ইসলামী দলের প্রার্থীকে ভোট দিলে জান্নাতের টিকেট পাওয়া যাবে। যেমন জামাত নেতারা কিছুদিন পূর্বে একটি দৈনিক পত্রিকার সাক্ষাতকারে বলেছে, ইসলাম ও গণতন্ত্র একই বিষয়।
বায়তুল মুকাররমের খতীব ওবায়দুল হক বলেছে, “ভোট দেয়া আল্লাহ পাক-এর নির্দেশ অর্থাৎ ফরয। আল্লাহ পাক বলেন, ভোট একটি আমানত। আল্লাহ পাক-এর হাবীব বলেছেন, সৎ লোককে ভোট দিতে হবে।” (দৈনিক সংগ্রাম ১লা জুলাই-২০০৬)
মাহিউদ্দিন খান তার মাসিক মদীনা ডিসেম্বর/৯৯ সংখ্যায় নির্বাচন ভিত্তিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোট দান সম্পর্কিত একটি প্রশ্নের উত্তরে লিখেছে, (ক) ছহীহ্ অর্থে মুসলমানদের প্রকৃত শাসক হচ্ছে পবিত্র কুরআন এবং রসূলের সুন্নাহ্। (খ) প্রচলিত যে কোন শাসন ব্যবস্থায় যদি কুরআন-সুন্নাহ্র প্রাধান্য মেনে নেয়া হয় তবে তা মুসলিম জনগণ বিনা দ্বিধায় মেনে নিতে পারেন। (গ) ভোটের মাধ্যমে নেতা বা শাসক নির্বাচনের বর্তমান যে পদ্ধতি এটা অংকুরিত হয়েছে, ইসলামী শুরা পদ্ধতির মধ্য থেকে। সুতরাং এই পদ্ধতিতে ভোটের রাজনীতি ইসলামে বৈধ নয় এ কথা বলা যাবে না। (ঘ) এ যুগের ভোট প্রদান বাইয়াতের বিকল্প বিবেচিত হতে পারে।
অনুরূপ হাটহাজারী খারেজী মাদ্রাসার মুখপত্র মাসিক মুহীনুল ইসলামের সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর’ ০৬ সংখ্যায়ও ভোট-নির্বাচন সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছে, (ক) গণতন্ত্র বা নির্বাচন দুই প্রকার। (১) পাশ্চত্য গণতন্ত্র বা নির্বাচন। (২) ইসলামী গণতন্ত্র বা নির্বাচন। (খ) খুলাফায়ে রাশেদীন ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছিলেন (গ) পদপ্রার্থী হওয়া জায়িয। (ঘ) কুরআন সুন্নাহয় ভোটকে স্বাক্ষী, আমানত, সুপারিশ ও প্রতিনিধি নিয়োগ বলে উল্লেখ করা হয়েছে ইত্যাদি অনেক ভুল তথ্য তারা উল্লেখ্য করেছে। পটিয়া খারেজী মাদ্রাসার মুখপত্র “আত্ তাওহীদ” ডিসেম্বর/৯৬, জানুয়ারী/৯৭, জুলাই-আগস্ট/৯৭
সংখ্যায় ভোট-নির্বাচন এমনকি ভোট বেচা-কেনা করাকেও জায়িয ফতওয়া দিয়েছে।
আর উল্লিখিত বিষয়ে তাদের নিকট দলীল তলব করলে তারা সাধারণতঃ মুফতী শফীর মা’য়ারিফুল কুরআন ও ভোটের ইসলামী শরয়ী বিধান এবং শামসুল হক ফরীদপুরী ছাহেবের বক্তব্য তুলে ধরে বলে থাকে যে, তারা ভোটকে জায়িয বলেছেন। এখন আমাদের জানার বিষয় হলোঃ
১। ইসলাম আর গণতন্ত্র কি একই বিষয়? উভয়ের মধ্যে কি কোন পার্থক্য নেই? এ সম্পর্কে জামাত নেতার এ বক্তব্য কতটুকু শরীয়তসম্মত?
২। নির্বাচন ও ভোট প্রথার উৎপত্তি কোথায় এবং কবে? কোন নবী-রসূল, ছাহাবী, তাবিয়ী, তাবে তাবিয়ীন ভোট ও নির্বাচন করেছেন কি?
৩। ইসলাম বা শরীয়তের দৃষ্টিতে পদপ্রার্থী হওয়া বা ভোট চাওয়া জায়িয কিনা?
৪। ভোট একটি আমানত, স্বাক্ষ্য ও উকিল নিয়োগ মুফতী শফী ও শামছুল হক ফরীদপুরী ছাহেব ও তার অনুসারীদের উক্ত বক্তব্য কতটুকু সঠিক ও দলীল ভিত্তিক।
৫। ভোট দেয়া আল্লাহর নির্দেশ তথা ফরয-ওয়াজিব। আল্লাহ বলেন, ‘ভোট একটি আমানত’। আল্লাহ পাক-এর হাবীব বলেছেন, ‘সৎ লোককে ভোট দিতে হবে।’ বায়তুল মুকাররম মসজিদের খতীবের একথা কতটুকু শরীয়ত ও দলীল সম্মত?
৬। (ক) ছহীহ্ অর্থে মুসলমানদের প্রকৃত শাসক হচ্ছে পবিত্র কুরআন এবং রসূলের সুন্নাহ্। (খ) প্রচলিত যে কোন শাসন ব্যবস্থায় যদি কুরআন-সুন্নাহ্র প্রাধান্য মেনে নেয়া হয় তবে তা মুসলিম জনগণ বিনা দ্বিধায় মেনে নিতে পারেন। (গ) ভোটের মাধ্যমে নেতা বা শাসক নির্বাচনের বর্তমান যে পদ্ধতি এটা অংকুরিত হয়েছে- ইসলামী শুরা পদ্ধতির মধ্য থেকে। সুতরাং এই পদ্ধতিতে ভোটের রাজনীতি ইসলামে বৈধ নয় এ কথা বলা যাবে না। (ঘ) এ যুগের ভোট প্রদান বাইয়াতের বিকল্প বিবেচিত হতে পারে।
মাহিউদ্দীনের উপরোক্ত বক্তব্য কতটুকু সত্য ও দলীলসম্মত?
৭। খুলাফায়ে রাশিদীন কি পদপ্রার্থী হয়েছিলেন?
৮। একটি পদের জন্য কি একাধিক প্রার্থী ছিলেন? এবং তাঁদের কি কোন মার্কা ছিল?
৯। খলীফাগণ রাষ্ট্র পরিচালনা করেছিলেন, না খিলাফত?
১০। খলীফাগণ মানবরচিত বিধানে, না শরয়ী বিধানে খিলাফত পরিচালনা করেছেন?
১১। খলীফা নিয়োগদান পদ্ধতি নির্বাচন, না মনোনয়ন?
১২। গণতান্ত্রিক বহুদলীয় নির্বাচনে প্রার্থীকে ভোট দেয়া ওয়াজিব কিনা?
১৩। (ক) গণতন্ত্র বা নির্বাচন দু’প্রকার পাশ্চত্য গণতন্ত্র, বা নির্বাচন ও ইসলামী গণতন্ত্র বা নির্বাচন। (খ) খুলাফায়ে রাশেদীন ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছেন। (গ) পদপ্রার্থী হওয়া জায়িয। ((ঘ) কুরআন-সুন্নাহয় ভোটকে স্বাক্ষী, আমানত সুপারিশ ও প্রতিনিধি নিয়োগ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
হাট হাজারী খারেজী মৌলবী ছাহেবদের উপরোক্ত বক্তব্য কতটুকু সত্য ও দলীলসম্মত?
১৪। পটিয়া খারিজী মাদ্রাসার মুখপত্র আত তাওহীদ-এর ডিসেম্বর/৯৬, জানুয়ারী/৯৭ এবং জুলাই আগস্ট/৯৭ সংখ্যা সমূহে ভোট নির্বাচন সম্পর্কিত কয়েকটি প্রশ্নের জবাবে লিখেছে,
(ক) শরীয়তের দৃষ্টিতে ভোট হচ্ছে শাহাদাত বা সাক্ষ্য।
(খ) বর্তমান পদ্ধতিতে নির্বাচন করা ইসলামপন্থিদের জন্য একান্ত কর্তব্য।
(গ) ভোট নাগরিক অধিকার, এ অধিকার অর্জনে মা’জুর বশতঃ মহিলাদের জন্যও ছবি তোলা জায়িয রয়েছে।
(ঘ) দ্বীন ইসলাম রক্ষার্থে ভোট বেচা-কেনা করাও জায়িয রয়েছে।
পটিয়া-খারিজী মাদ্রাসার মৌলবী ছাহেবদের উপরোক্ত বক্তব্য কতটুকু দলীলভিত্তিক ও শরীয়ত সম্মত।
১৫। আজকাল নামধারী প্রতিটি ইসলামী দলকেই দেখা যায় বিভিন্ন দলের সাথে জোট বা চুক্তি করে থাকে। তাদেরকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তারা এটাকে হুদায়বিয়ার সন্ধির সাথে তুলনা করে থাকে। হুদায়বিয়ার সন্ধির সাথে তাদের উক্ত জোট বা চুক্তিকে তুলনা করা সঠিক ও শরীয়তসম্মত কিনা?
১৬। যে সকল কথিত মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিছ, শাইখুল হাদীছ, খতীব, পীর, আমীর ইসলামের নামে গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন করছে, ভোটকে আমানত, স্বাক্ষ্য ফরয-ওয়াজিব বলছে এবং ক্ষমতার লোভে বাতিলের সাথে আতাত করছে তারা হক্কানী আলিম কিনা? তাদের পিছনে নামায পড়া জায়িয কিনা? তাদের ব্যাপারে শরীয়তের ফায়ছালা কি?
১৭। যদি ইসলামের দৃষ্টিতে গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন নাজায়িয হয় তবে রাষ্ট্র পরিচালিত হবে কিভাবে? এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠিত হবে কিভাবে? আমরা জানি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠা করা ফরযে আইন। তবে কি সশস্ত্র বিপ্লব বা বোমাবাজি, জিহাদ বা জঙ্গী কার্যকলাপের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা যাবে?
উপরোক্ত প্রতিটি বিষয় দলীলভিত্তিক বিস্তারিত জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান-আক্বীদা ও আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদি।
জাওয়াবঃ
ইসলামের নামে বা ইসলামের দোহাই দিয়ে গণতন্ত্র, ভোট, নিবার্চন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া, নিজ দলকে ভোট দেয়া ওয়াজিব ও জান্নাতের টিকেট লাভের কারণ বলা এবং ভোটকে আমানত, সুপারিশ, স্বাক্ষ্য ইত্যাদি বলা সম্পূর্ণ হারাম ও কুফরী। এটাই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস তথা শরীয়তের চুড়ান্ত, ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া।
অতএব, বলার অপেক্ষা রাখে না যে, গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন ও পদপ্রার্থী হওয়া সম্পর্কিত তথাকথিত খতীব উবায়দুল হক, নিজামী, আহমদ শফী, মাহিউদ্দীন, আমিনী ও আযীযূল হক- ওহাবী, দেওবন্দী ও জামাতীগংদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের খিলাফ বিধায় তা ভুল, অশুদ্ধ, জিহালতপূর্ণ দলীলবিহীন ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
নিম্নে পর্যায়ক্রমে সুওয়ালে উল্লেখিত তাদের প্রতিটি বক্তব্যের খ-নমূলক জাওয়াব প্রদান করা হলো।
(১৪)
পটিয়া খারিজী মাদ্রাসার অখ্যাত মুখপত্র “মাসিক আত্ তাওহীদ” ডিসেম্বর-৯৬, জানুয়ারী, জুলাই ও আগষ্ট-৯৭ সংখ্যাসমূহে ভোট-নির্বাচন সম্পর্কে প্রদত্ত বক্তব্যসমূহের খ-ণমূলক জবাব
পটিয়া খারিজী মাদ্রাসার অখ্যাত মূখপত্র “আত্তাওহীদ” ডিসেম্বর-৯৬, জুলাই, জানুয়ারী ও আগস্ট-৯৭ সংখ্যাসমূহে ভোট-নির্বাচন সম্পর্কে যা লিখেছে তা হলো-
(ধারাবাহিক)
(খ)
“বর্তমান পদ্ধতিতে নির্বাচন করা ইসলামপন্থিদের জন্য একান্ত কর্তব্য” পটিয়া খারিজী মৌলবী ছাহেবদের এ বক্তব্য কুফরীর শামিল
তাদের উক্ত কুফরীমুলক বক্তব্যের জবাবে প্রথমত বলতে হয় যে, ইসলামের নামে বর্তমান গণতান্ত্রিক নির্বাচনে অংশ গ্রহন করার অর্থ হলো ইহুদী-খ্রিষ্টান তথা বিধর্মীদের দ্বারা উদ্ভাবিত তথা মানব রচিত কুফরী মতবাদ গণতন্ত্রকে স্বীকৃতি দেয়া এবং ইহুদী-খিস্টান তথা বেদ্বীন-বদদ্বীনদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করা। আর মানব রচিত মতবাদ গণতন্ত্রকে স্বীকৃতি দেয়া ও বেদ্বীন-বদদ্বীনদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করার অর্থই হলো ওহী দ্বারা নাযিলকৃত কুরআন শরীফ বা দ্বীন ইসলামকে অস্বীকার করা ও এর বিরোধিতা করা। অথচ মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফে এবং তাঁর হাবীব পবিত্র হাদীছ শরীফে ‘ইসলাম’ ব্যতীত অন্য কোন নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীকা বা মানব রচিত কোন মতবাদ, তন্ত্র-মন্ত্রকে গ্রহণ করতে বা স্বীকৃতি দিতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।
যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক “সূরা আলে ইমরান”-এর ৮৫ নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,
ومن يبتغ غير الاسلام دينا فلن يقبل منه وهو فى الاخرة من الخسرين.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন (নিয়মনীতি, অন্য ধর্ম) তালাশ করে, তা কখনোই তার থেকে গ্রহণ করা হবেনা এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।”
অর্থাৎ মুসলমানকে কোন আমল করতে হলে, বিধর্মী ও বিজাতীয় কোন পন্থা অনুসরণ করা যাবে না বা তাদের থেকে কোন নিয়মনীতি গ্রহণ করা যাবেনা। শুধুমাত্র দ্বীন ইসলামের দলীল- কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস অনুযায়ী আমল করতে হবে।
আর এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن جابر رضى اله تعالى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم حين اتاه عمر فقال انا نسمع احاديث من يهود تعجبنا افترى ان نكتب بعضها فقال امتهوكون انتم كما تهوكت اليهود والنصرى لقد جئتكم بها بيضاء نقية ولو كان موسى حيا ماوسعه الا اتباعى.
অর্থঃ- “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেন যে, একদিন হযরত ওমর ইবনে খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা ইহুদীদের থেকে তাদের কিছু ধর্মীয় কথা শুনে থাকি, যাতে আমরা আশ্চর্যবোধ করি, ওটার কিছু আমরা লিখে রাখবো কি? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরাও কি দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছো? যে রকম ইহুদী নাছারারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে? অবশ্যই আমি তোমাদের নিকট পরিপূর্ণ, উজ্জ্বল ও পরিষ্কার দ্বীন নিয়ে এসেছি। হযরত মুসা আলাইহিস্ সালামও যদি দুনিয়ায় থাকতেন, তাহলে তাঁকেও আমার অনুসরণ করতে হতো।” (মুসনাদে আহমদ, বায়হাক্বী, মিশকাত)
উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ হতে বুঝা গেল যে, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস ছাড়া অন্য কোন বিজাতীয় পন্থার অনুসরণ করা হারাম। যেহেতু দ্বীন ইসলাম ব্যতীত অন্য সমস্ত ধর্ম যা পূর্বে ওহী দ্বারা নাযিল করা হয়েছিল যেমন, তাওরাত শরীফ, যাবূর শরীফ, ইনজীল শরীফ ও ১০০ খানা ছহীফা এবং পূর্বের ও পরের মানব রচিত মতবাদ যেমন গণতন্ত্র ইত্যাদি যা পূর্বে ছিল এবং বর্তমানে যা রয়েছে, অর্থাৎ রাজতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, মার্কসবাদ, লেলিনবাদ, মাওবাদ ইত্যাদি ও ভবিষ্যতে যা হবে সেগুলোকে তিনি বাতিল ঘোষণা করেছেন।
মহান আল্লাহ পাক ‘সূরা ফাতহ’-এর ২৮, ২৯ নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,
هو الذى ارسل رسوله بالهدى ودين احق ليظهره على الدين كله وكفى بالله شهيدا. محمد رسول الله.
অর্থঃ- “তিনি (আল্লাহ্ পাক) তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হিদায়েত এবং সত্য দ্বীন সহকারে পাঠিয়েছেন সকল দ্বীন ও মতবাদের উপর প্রাধান্য দিয়ে (সমস্ত দ্বীনকে বাতিল ঘোষণা করে যা পূর্বে ওহী দ্বারা নাযিলকৃত আর যা মানব রচিত তা পূর্বে হোক অথবা পরে হোক) এবং এ বিষয়ে আল্লাহ্ পাক-এর স্বাক্ষ্যই যথেষ্ট। (যার সাক্ষী আল্লাহ্ পাক) আর রসূল হচ্ছেন হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।”
উপরোক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, মুসলমানদের জন্য ইসলামের নামে মানব রচিত মতবাদ গণতন্ত্রকে স্বীকৃতি দেয়া বা ইসলামের নামে গণতন্ত্র করা সম্পূর্ণ হারাম ও কুফরী। কারণ মানব রচিত মতবাদ গণতন্ত্রকে স্বীকৃতি দেয়া বা ইসলামের নামে গণতন্ত্র করার অর্থ হলো উক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফকে অস্বীকার করা। এ বিষয়টাই আল্লাহ পাক কুরআন শরীফ-এর শুরুতেই সূরা ফাতিহা শরীফে ষ্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন। যা আমরা প্রতিদিন কম পক্ষে ৩২ বার অর্থাৎ ১৭ রাকাত ফরজে ১৭ বার, ৩ বার বিতির নামাযে, ১২ বার সুন্নত নামাযে সর্বমোট ৩২ বার পড়ে থাকি, বলে থাকি ও দুয়া করে থাকি অর্থাৎ নামাযের প্রতি রাকায়াতেই বলে থাকি যে,
اهدنا الصراط المستقيم.
অর্থঃ- “(আল্লাহ্ পাক) আমাদের সরলপথ প্রদর্শন করুন।” (সূরা ফাতিহা-৫)
কোন সরল পথ? বলা হয়েছে-
صراط الذين انعمت عليهم.
অর্থঃ- “যাদেরকে নিয়ামত দেয়া হয়েছে তাঁদের পথ।” (সূরা ফাতিহা-৬)
কাদেরকে নিয়ামত দেয়া হয়েছে? এ প্রসঙ্গে অর্থাৎ এর ব্যাখ্যায় আল্লাহ্ পাক অন্যত্র বলেন,
انعم الله عليهم من النبين والصديقين والشهداء والصلحين وحسن اولئك رفيقا.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক নিয়ামত দিয়েছেন যাঁরা নবী, ছিদ্দীক, শহীদ ও ছালেহ্ তাঁদেরকে এবং তাঁরাই উত্তম বন্ধু বা সঙ্গী।” (সূরা নিসা-৬৯)
অর্থাৎ বান্দারা যেন নবী, ছিদ্দীক, শহীদ ও ছালেহ্গণের মনোনীত পথ তলব করে কারণ তাঁরাই সকলের জন্য উত্তম সঙ্গী বা বন্ধু। শুধু মনোনীত পথ তলব করলেই চলবে না। সাথে সাথে অসন্তুষ্টিজনক পথ থেকেও পানাহ তলব করতে হবে। সে প্রসঙ্গে পরবর্তী আয়াত শরীফে আল্লাহ পাক বলেন, তোমরা আরো বলো-
غير المغضوب عليهم ولا الضالين.
অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক আমাদেরকে তাদের পথ দিবেন না, যারা গযবপ্রাপ্ত ও পথহারা।” (সূরা ফাতিহা-৭)
উক্ত আয়াত শরীফে আল্লাহ পাক প্রত্যেক মুসলমানকে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এবং মাথার তালু থেকে পায়ের তলা পর্যন্ত দায়িমীভাবে ও প্রতিক্ষেত্রে নবী, ছিদ্দীক, শহীদ, ছলেহ অর্থাৎ নবী-রসূল ও আওলিয়ায়ে কিরামগণের মত পথে ইস্তিক্বামাত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। আর এর মুখালিফ যারা রয়েছে অর্থাৎ গোমরাহ ও গযবপ্রাপ্ত বিশেষ করে ইহুদী-নাছারা, হিন্দু-বৌদ্ধ, মজুসী-মুশরিকদেরকে যে কোন ক্ষেত্রে এবং যেকোন অবস্থাতেই অনুসরণ-অনুকরণ করতে নিষেধ করেছেন। অথচ পটিয়া খারিজী মৌলবী ছাহেবরা তাদের উক্ত বক্তব্য দ্বারা এটাই বুঝাতে চাচ্ছে যে, নামায, রোযা, হজ্ব যাকাতের ক্ষেত্রে ইসলামকে অনুসরণ করবে। আর প্রশাসনিক ক্ষেত্রে ইহুদী-নাছারাদেরকে অনুসরণ করবে, অথচ এটা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। কারণ মুসলমান কিছু ইসলাম তথা কুরআন-সুন্নাহও পালন করবে আবার সাথে সাথে কিছু বেদ্বীন-বদদ্বীনদের নিয়ম-নীতিও পালন করবে তা হবেনা।
কেননা মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ করেন,
افتؤمنون ببعض الكتاب وتكفرون ببعض فما جزاء من يفعل ذلك منكم الا حزى فى الحيوة الدنيا ويوم القيمة يردون الى اشد العذاب وما الله بغافل عما تعملون. اولئك الذين اشتروا الحيوة الدنيا بالاخرة فلا يصفف عنهم العذاب ولاهم ينصرون.
অর্থঃ- “তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশ মানবে আর কিছু অংশ মানবে না? তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ করবে পার্থিব জীবনে তাদের লাঞ্ছনা ছাড়া কিছুই থাকবে না এবং পরকালে তাদেরকে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে। আল্লাহ পাক তোমাদের আমল সম্পর্কে বেখবর নন। তারা ঐ সকল লোক যারা আখিরাতের বিনিময়ে দুনিয়াকে খরিদ করে, তাদের থেকে আযাব লাঘব করা হবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না।” (সূরা বাক্বারা/৮৫)
অর্থাৎ আল্লাহ পাক বলেন, তোমরা ইসলামের কিছু মানবে আর কিছু অস্বীকার করবে বা মানবে না তা হবে না। যদি কেউ তাই করে তাহলে তার জন্য রয়েছে ইহকালে লাঞ্ছনা ও পরকালে কঠিন শাস্তি। আর এরাই হচ্ছে আসলে দ্বীন বিক্রি করে দুনিয়া হাছিলের চেষ্টাকারী। আর যারা দ্বীন বিক্রি করে দুনিয়া হাছিলের চেষ্টা করে তারাই হলো প্রকৃতপক্ষে উলামায়ে “ছূ”। কাজেই পটিয়া মাদ্রাসার মৌলভী ছাহেবরা প্রকৃতপক্ষেই উলামায়ে “ছূ”দের অন্তর্ভূক্ত। সেজন্যই তারা এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছে। আর আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উলামায়ে “ছূ”দের সম্পর্কে ইরশাদ করেন,
وعن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم تعوذوا بالله من حب الحزن قالوا يارسول اله وما جب الحزن قال واد فى جهنم يتعوذ منه جهنم كل يوم اربع مائة مرة قيل يا رسول الله صلى اله عليه وسلم ومن يدخلها قال القراء المراؤن باعمالهم. رواه الترمذى وكذا ابن ماجة وزاده فيه وان من ابغض القراء الى الله تعالى الذين يزورون الامراء قال المحاربى يعنى الجورة.
অর্থঃ “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, একদা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা ‘জুব্বুল হুযন’ হতে আল্লাহ পাক-এর নিকট পানাহ চাও। ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ‘জুব্বুল হুযন কি? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, জাহান্নামের মধ্যে একটি গর্ত, যা হতে (জাহান্নামবাসী তো অবশ্যই) বরং স্বয়ং জাহান্নামও দৈনিক ৪ শতবার পানাহ চেয়ে থাকে। ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ পূনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এতে কারা প্রবেশ করবে? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সেসকল কুরআন শরীফ তিলাওয়াতকারী, যারা অন্যকে দেখানোর জন্য আমল করে থাকে। (তিরমিযী শরীফ) ‘ইবনে মাযাহ’ শরীফেও অনুরূপ উল্লেখ আছে। তবে তাতে এ বর্ণনাও রয়েছে যে, “নিশ্চয়ই কুরআন শরীফ তিলাওয়াতকারী বা আলিম উলামাদের মধ্যে তারাই আল্লাহ পাক-এর নিকট সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট যারা আমীর-ওমরাদের সাথে সাক্ষাত বা মেলামেশা করে।” অর্থাৎ যে সমস্ত হাফেজ, ক্বারী, মাওলানা, ছূফী, দরবেশ লোক প্রদর্শন বা রিয়ার উদ্দেশ্যে আমল করে তারা। এরপর নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ পাক-এর নিকট ঐ সমস্ত হাফেজ, ক্বারী, মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিছ, মুফাচ্ছির, ছূফী, দরবেশ সবচাইতে অপছন্দনীয় ও নিকৃষ্ট যারা রাজা-বাদশাহ আমীর উমরাহ, উজির-নাজির, মন্ত্রি-মিনিস্টার ও ধন-সম্পদওয়ালাদের দরবারে ঘুরাঘুরি বা যাতায়াত করে।
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن انس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ويل لامتى من علماء السوء يتخذون هذا العلم تجارة يبيعونها من امراء زمانهم ربحا لانفسهم لااربح الله تجارتهم.
অর্থঃ- “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, উলামায়ে ‘ছূ’দের কারণে আমার উম্মতের ক্ষতিসাধন হবে অর্থাৎ জাহান্নামী হবে। তারা ইল্মকে ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করতঃ তাদের যুগের শাসকদের নিকট থেকে অর্থ ও পদ লাভের প্রচেষ্টা চালাবে। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সকল উলামায়ে ছূ’দের বিরুদ্ধে এই বলে বদ্দোয়া করেন যে, “আয় আল্লাহ পাক! যারা নিজেদের ইল্ম দ্বারা দুনিয়াবী সরকারের সাথে ব্যবসা করতে চায় তাদের ব্যবসায় বরকত দিবেন না।” (কানযুল উম্মাল)
আশ্চর্য্যরে বিষয় হলো কুরআন শরীফে ও হাদীছ শরীফে এত কঠোরভাবে বেদ্বীন-বদদ্বীনদের অনুসরণ অনুকরণ ও ছোহবত ইখতিয়ার নিষেধ করার পরও পটিয়া ও তাদের সমমনা মৌলভী ছাহেবরা কি করে এ ধরনের বক্তব্য দিতে পারে। প্রকৃতপক্ষে পটিয়ার মৌলভী ছাহেবরা উলামায়ে “ছূ” হওয়ার কারণেই তারা বলেছে- “ইসলামের নামে নির্বাচনে অংশ নেয়া বা পদপ্রার্থী হওয়া একান্ত কর্তব্য” অথচ শরীয়ত অনুযায়ী এ বক্তব্য কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। কারণ স্বয়ং আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফে পদপ্রার্থী হতে নিষেধ করেছেন। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে,
عن ابى موسى رضى الله تعالى عنه قال دخلت على النبى صلى اله عليه وسلم انا ورجلان من بنى عمى فقال احدهما يا رسول اله امرنا على بعض ما ولاك اله و قال الاخر مثل ذلك فقال انا والله لا نولى على هذا العمل احدا ساله ولا احدا حرص عليه وفى رواية قال لانستعمل على عملنا من اراده.
অর্থঃ- হযরত আবূ মুসা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি ও আমার দু’জন চাচাত ভাই হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট গেলাম। সে দু’জনের একজন বললো, হে আল্লাহ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আল্লাহ পাক আপনাকে যে সকল কাজের দায়িত্ব দিয়েছেন, আপনি আমাদেরকে ওটার মধ্য হতে কোন একটির শাসক নিযুক্ত করুন এবং দ্বিতীয়জনও অনুরূপই বললো। উত্তরে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “আল্লাহ পাক-এর কসম! আমরা এ কাজে (শাসক পদে) এমন কোন ব্যক্তিকে নিয়োগ করিনা, যে ওটার প্রার্থী হয় এবং ঐ ব্যক্তিকেও নিয়োগ করিনা, যে ওটার লোভ বা আকাঙ্খা করে।” (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ)
শুধু তাই নয়, আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফে পদপ্রার্থী হতে বা পদের আকাঙ্খা করতে সরাসরি নিষেধ করেছেন। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ ইরশাদ হয়েছে,
عن عبد الرحمن بن سمرة رضى الله تعالى عنه قال قال لى رسول الله صلى الله عليه وسلم لاتسال الامارة فانك ان اعطيتها عن مسئلة وكلت اليها وان اعطياعل غت فير نسئلى لغتا غليها.
অর্থঃ- হযরত আব্দুর রহ্মান বিন সামুরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, “(হে সামুরা!) তুমি নেতৃত্ব বা পদ চেওনা। কেননা, যদি তোমাকে ওটা চাওয়ার কারণে দেয়া হয়, তবে ওটা তোমার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। আর যদি ওটা তোমাকে চাওয়া ব্যতীত দেয়া হয়, তাহলে এ ব্যাপারে তোমাকে সাহায্য করা হবে।” (মুয়াত্তা শরীফ)
মূলতঃ যারা দুনিয়ালোভী বা নিকৃষ্ট তারাই পদপ্রার্থী হয় বা পদের আকাঙ্খা করে। উত্তম বা নেক্কার লোক কখনোই পদপ্রার্থী হয় না। তাই হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى اله عيه وسلم تجدون من خير الناس اشدهم كراهية لهذا الامر حتى يقع فيه.
অর্থঃ- “হযরত আবূ হুরায়রা রদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “এই শাসনভারকে যারা কঠোরভাবে ঘৃণা করে, তাদেরকে তোমরা উত্তম লোক হিসেবে পাবে, যে পর্যন্ত তারা তাতে লিপ্ত না হয়।” (মুয়াত্তা শরীফ)
উপরোক্ত ছহীহ বর্ণনাসমূহ দ্বারা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, স্বয়ং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পদপ্রার্থী হতে বা পদের আকাঙ্ঘা করতে নিষেধ করেছেন এবং যারা পদপ্রার্থী হয় বা পদের আকাঙ্খা করে তাদেরকে তিরষ্কার করেছেন। তাই ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে পদপ্রার্থী হওয়া বা পদের আকাঙ্খা করা সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়িয। যদি তাই হয়ে থাকে তবে ইসলামের নামে বর্তমান পদ্ধতির নির্বাচনে অংশ গ্রহন করা কি করে জায়িয হতে পারে? এবং কি করে পদপ্রার্থী হওয়ার জন্য ও নির্বাচনে অংশগ্রহন করার জন্য উৎসাহিত করা শরীয়ত সম্মত হতে পারে?
মূল কথা হলো উপরোক্ত বিস্তারিত দলীল ভিত্তিক আলাচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, পঢিয়া খারিজী মাদ্রাসার মৌলবী ছাহেবরা যে বলেছে, “বর্তমান পদ্ধতিতে নির্বাচন করা ইসলাম পন্থিদের জন্য একান্ত কর্তব্য” তাদের এ বক্তব্য কাট্টা কুফরীর শামিল।
অসমাপ্ত
পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন