প্রকাশিত ফতওয়াসমূহ
[সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীনের জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। আল্লাহ্ পাক-এর অশেষ রহ্মতে “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব-এর অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীল ভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা) ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যায়) এবং ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা) পেশ করার পর-
২৭তম ফতওয়া হিসেবে
“ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় আল্লাহ পাক-এর দরবারে বেশুমার শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
উল্লেখ্য হিজরী পঞ্চদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ও ইমাম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর প্রতিষ্ঠিত ও পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশিত যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত। এ পত্রিকায় এ যাবৎ যত লিখা বা ফতওয়া প্রকাশ বা পত্রস্থ করা হয়েছে, হচ্ছে ও হবে তার একমাত্র উদ্দেশ্য মানুষের ঈমান-আক্বীদা ও আমল পরিশুদ্ধ করা। এ জন্যেই মূলতঃ যুগে যুগে প্রেরিত হয়েছেন এক লক্ষ চব্বিশ হাজার মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম। এবং সর্বশেষ নবী-রসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অতঃপর প্রত্যেক শতাব্দীর মাঝে প্রেরিত হয়ে আসছেন তাঁর খাছ নায়িব বা ওয়ারিছ তথা যামানার মুজাদ্দিদগণ।
কাজেই, বান্দা ও উম্মত যদি দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দীদার ও সন্তুষ্টি লাভ করতে চায়, রহমত ও নাজাত পেতে চায়, হাক্বীক্বী বান্দা ও হাক্বীক্বী উম্মত হতে চায়, প্রকৃত মু’মিন, মুসলমান ও মুত্তাক্বী হতে চায় তাহলে তার জন্য যামানার মুজাদ্দিদের অনুসারী হওয়া ব্যতীত বিকল্প কোন পথ নেই। সেটা কাছে থেকে হোক কিংবা দূরে থেকে হোক। কারণ আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,
واتبع سبیل من اناب الی.
অর্থঃ- “ঐ ব্যক্তির পথ অনুসরণ করে চলো যিনি আমার দিকে রুজু রয়েছেন” (সূরা লুক্বমান-১৫)
স্মরণীয় যে, আজকে মুসলমানরা তাদের আদর্শ-ঐতিহ্য ভুলে গিয়ে বিধর্মী-বিজাতীয়দের তর্জ-তরীক্বা, আচার-আচরণ গ্রহণে অভ্যস্থ হয়ে পড়েছে। তাদের এই নাজুক অবস্থা কাটিয়ে ইসলামী আদর্শে আদর্শবান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আহবান করছেন যামানার মহান মুজাদ্দিদ মুদ্দা জিল্লুহুল আলী। সুতরাং তাঁর মুবারক আহবানে সাড়া দেয়ার সময় এখনই। এ লক্ষ্যে ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ পত্রিকাার পাঠক, গ্রাহক, শুভাকাঙ্খী ও শুভানুধ্যায়ীগণ ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’-এর আকর্ষণীয় ও উল্লেখযোগ্য বিভাগ ‘সুওয়াল-জাওয়াব’ ও ‘ফতওয়া’ বিভাগে ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্র্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে শরীয়তের সঠিক ফায়ছালা জানার জন্য অসংখ্য সুওয়াল প্রেরণ করেন। যেহেতু আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন কালামে পাকে ইরশাদ করেন,
فسئلوا اهل الذکر ان کنتم لاتعلمون.
অর্থঃ- ‘যদি তোমরা না জান, তবে আহ্লে যিকির বা আল্লাহওয়ালাগণকে জিءেস করে জেনে নাও।’ (সূরা নহল-৪৩ ও সূরা আম্বিয়া-৭)
তাই প্রেরিত সুওয়ালসমূহের প্রেক্ষিতে ‘ইসলামের নামে গণতন্ত্র নির্বাচন, ভোট ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া’ ইসলামের দলীল- কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে পেশ করা হলো।
প্রকৃত বন্ধুর পরিচয়
মূলতঃ আমাদের সাথে কারো যেরূপ বন্ধুত্ব নেই, তদ্রুপ নেই বিদ্বেষ। অর্থাৎ যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তসম্মত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বিদ্বেষ নেই। আর যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তের খিলাফ বা বিপরীত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বন্ধুত্ব নেই। কারণ মুসলমানের বন্ধুত বা বিদ্বেষ একমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর জন্যেই হতে হবে।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে,
عن ابی هریرة رضی الله تعالی عنه قال قال رسول الله صلی الله علیه وسلم من احب لله وابغض لله واعطی لله ومنع لله فقد استکمل الایمان
অর্থঃ ‘হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক-এর (সন্তুষ্টি লাভের) জন্যে মহব্বত বা বন্ধুত্ব করে, বিদ্বেষ পোষণ করে, আদেশ করে, নিষেধ করে, তার ঈমান পরিপূর্ণ।’ (আবূ দাউদ, তিরমিযী)
বস্তুতঃ মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার প্রতিটি লিখা, বক্তব্য, সুওয়াল-জাওয়াব, ফতওয়া, প্রতিবাদ, প্রতিবেদন, মতামত ইত্যাদি উপরোক্ত হাদীছ শরীফের মূলনীতির ভিত্তিতই প্রকাশিত হয়ে থাকে।
কাজেই ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ পত্রিকায় ‘ইসলামের নামে গণতন্ত্র নির্বাচন, ভোট ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া’ দেয়ার মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হলো সত্যান্বেষী বা হক্ব তালাশী মুসলমানগণের নিকট সঠিক বা হক্ব বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা। যার মাধ্যমে প্রত্যেকেই তাদের ঈমান-আক্বীদা ও আমল হিফাযতের মাধ্যমে ইহ্লৌকিক ও পারলৌকিক ইত্মিনান ও নাযাত লাভ করতে পারে।
মূলতঃ মানুষ মাত্রই ভুল হওয়া স্বাভাবিক, তাই এক মু’মিন অপর মু’মিনের ভুল ধরিয়ে বা শুধরিয়ে দেয়া ঈমানী দায়িত্ব। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে,
عن ابی هریرة رضی الله تعالی عنه قال قال رسول الله صلی الله علیه وسلم المؤمن مرأة المؤمن اذا رأی فیه عیبا اصلحه.
অর্থঃ- ‘হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, এক মু’মিন অপর মু’মিনের জন্যে আয়না। যখন সে তার মধ্যে কোন দোষত্রুটি দেখবে তখন সে তাকে সংশোধন করে দিবে।’ (বুখারী, আবূ দাউদ, মিশকাত)
উপরোক্ত হাদীছ শরীফের আলোকে অসংখ্য, অগণিত পাঠকগণের পূণঃপূণঃ অনুরোধের প্রেক্ষিতে মুসলমানদের আক্বীদা ও আমল হিফাযতের লক্ষ্যে ইসলামের নামে গণতৗনির্বাচন, ভোট ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া প্রদান করা হলো। যাতে করে সত্যান্বেষী, মুসলমানগণ এ সম্পর্কে আপত্তিকর বক্তব্যসমূহের সঠিক শরয়ী ফায়সালা অবগত হন, যার ফলশ্রুতিতে সকলেই উক্ত আপত্তিকর আক্বীদা ও বক্তব্যসমূহ থেকে নিজেদের ঈমান ও আমলের হিফাযত করে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করতে পারেন।
সুওয়ালকারীদের নাম-ঠিকানা
সাইয়্যিদ মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন, ঢাকা
মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন, মুহম্মদপুর, ঢাকা
মুহম্মদ ছিদ্দীকুল আলম, চান্দিনা, কুমিল্লা
মুহম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, শালিখা, মাগুরা
মুহম্মদ আফতাবুদ্দীন, কোনাবাড়ী, গাজিপুর
মুহম্মদ মুহসিনুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
মুহম্মদ হারুনূর রশীদ, মাহিগঞ্জ, রংপুর
শাফিয়ী আহমদ, রাজারহাট, কুড়িগ্রাম
মুহম্মদ সদরুল আমীন গোলাপগঞ্জ, সিলেট
মুহম্মদ আশাদুজ্জামান, পলাশবাড়ী, গাইবান্দা
মুহম্মদ আশফাকুর রহমান, সিংড়া, নাটোর
মুহম্মদ ইছহাকুর রহমান, কসবা, বি.বাড়িয়া
মুহম্মদ শফিকুছ্ ছালেহীন, মতলব, চাঁদপুর
মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান, প্রভাকরদী, এন. গজ্ঞ
মুহম্মদ হারিছুর রহমান, রাজপাড়া, রাজশাহী
মুহম্মদ কাওছার হুসাইন, বানারীপাড়া, বরিশাল
মুহম্মদ হাদীউল ইসলাম, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম
মুহম্মদ কামরুজ্জামান, কুটিয়াদী, কিশোরগজ্ঞ
মুহম্মদ আবুল কাশেম, আক্কেলপুর, জয়পুরহাট
মুহম্মদ হাবীবুল্লাহ, কালীহাতি, টাঙ্গাইল
বর্তমান সময় যে সমস্ত ‘সংসদ নির্বাচন’ অনুষ্ঠিত হয়। তাতে অন্যান্য দলগুলোর মতো নামধারী ইসলামী দলগুলোও সক্রিয়ভাবে উক্ত নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে তথা প্রার্থী দেয়। ইসলামের নামে যারা নির্বাচনে অংশ নেয় তারা সাধারণতঃ প্রচার করে থাকে যে, গণতন্ত্র আর ইসলাম একই বিষয় এবং তারা যে গণতন্ত্র করছে, সেটা হচ্ছে ইসলামী গণতন্ত্র। তারা গণতন্ত্রের ভিত্তি ভোটকে আমানত, শুপারিশ, উকিল নিয়োগ, স্বাক্ষ্য ইত্যাদি বলে প্রচার করে থাকে।
কেউ কেউ আবার ইসলামী দলকে ভোট দেয়া ফরয-ওয়াজিব বলে থাকে। আরো বলে থাকে যে, ইসলামী দলের প্রার্থীকে ভোট দিলে জান্নাতের টিকেট পাওয়া যাবে। যেমন জামাত নেতারা কিছুদিন পূর্বে একটি দৈনিক পত্রিকার সাক্ষাতকারে বলেছে, ইসলাম ও গণতন্ত্র একই বিষয়।
বায়তুল মুকাররমের খতীব ওবায়দুল হক বলেছে, ‘ভোট দেয়া আল্লাহ পাক-এর নির্দেশ অর্থাৎ ফরয। আল্লাহ পাক বলেন, ভোট একটি আমানত। আল্লাহ পাক-এর হাবীব বলেছেন, সৎ লোককে ভোট দিতে হবে।’ (দৈনিক সংগ্রাম ১লা জুলাই-২০০৬)
মাহিউদ্দিন খান তার মাসিক মদীনা ডিসেম্বর/৯৯ সংখ্যায় নির্বাচন ভিত্তিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোট দান সম্পর্কিত একটি প্রশ্নের উত্তরে লিখেছে, (ক) ছহীহ্ অর্থে মুসলমানদের প্রকৃত শাসক হচ্ছে পবিخ কুরআন এবং রসূলের সুন্নাহ্। (খ) প্রচলিত যে কোন শাসন ব্যবস্থায় যদি কুরআন-সুন্নাহ্র প্রাধান্য মেনে নেয়া হয় তবে তা মুসলিম জনগণ বিনা طিধায় মেনে নিতে পারেন। (গ) ভোটের মাধ্যমে নেতা বা শাসক নির্বাচনের বর্তমান যে পদ্ধতি এটা অংকুরিত হয়েছে, ইসলামী শুরা পদ্ধতির মধ্য থেকে। সুতরাং এই পদ্ধতিতে ভোটের রাজনীতি ইসলামে বৈধ নয় এ কথা বলা যাবে না। (ঘ) এ যুগের ভোট প্রদান বাইয়াতের বিকল্প বিবেচিত হতে পারে।
অনুরূপ হাটহাজারী খারেজী মাদ্রাসার মুখপ মাসিক মুহীনুল ইসলামের সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর- ০৬ সংখ্যায়ও ভোট-নির্বাচন সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছে, (ক) গণতন্ত্র করে নির্বাচন দুই প্রকার। (১) গণতন্ত্র বা নির্বাচন। (২) ইসলামী গণতন্ত্র বা নির্বাচন। (খ) খুলাফায়ে রাশেদীন ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছিলেন (গ) পদপ্রার্থী হওয়া জায়িয। (ঘ) কুরআন সুন্নাহয় ভোটকে স্বাক্ষী আমানত, সুপারিশ ও প্রতিনিধি নিয়োগ বলে উল্লেখ করা হয়েছে ইত্যাদি অনেক ভুল তথ্য তারা উল্লেখ করেছে। পটিয়া খারেজী মাদ্রাসার মুখপত্র আত্ তাওহীদ- ডিসেম্বর/৯৬, জানুয়ারী/৯৭, জুলাই-আগস্ট/৯৭
সংখ্যায় ভোট-নির্বাচন এমনকি ভোট বেচা-কেনা করাকেও জায়িয ফতওয়া দিয়েছে।
আর উল্লেখিত বিষয়ে তাদের নিকট দলীল তলব করলে তারা সাধারণতঃ মুফতী শফীর মায়ারিফুল কুরআন ও ভোটের ইসলামী শরয়ী বিধান এবং শামসুল হক ফরীদপুরী ছাহেবের বক্তব্য তুলে ধরে বলে থাকে যে, তারা ভোটকে জায়িয বলেছেন।
এখন আমাদের জানার বিষয় হলোঃ
১। ইসলাম আর গণতন্ত্র একই বিষয়? উভয়ের মধ্যে কি কোন পার্থক্য নেই? এ সম্পর্কে জামাত নেতার এ বক্তব্য কতটুকু শরীয়তসম্মত?
২। নির্বাচন ও ভোট প্রথার উৎপত্তি কোথায় এবং কবে? কোন নবী-রসূল, ছাহাবী, তাবিয়ী, তাবে তাবিয়ীন ভোট ও নির্বাচন করেছেন কি?
৩। ইসলাম বা শরীয়তের দৃষ্টিতে পদপ্রার্র্থী হওয়া বা ভোট চাওয়া জায়িয কিনা?
৪। ভোট একটি আমানত, স্বাক্ষ্য ও উকিল নিয়োগ মুফতী শফী ও শামছুল হক ফরীদপুরী ছাহেব ও তার অনুসারীদের উক্ত বক্তব্য কতটুকু সঠিক ও দলীল ভিত্তিক।
৫। ভোট দেয়া আল্লাহর নির্দেশ তথা ফরয-ওয়াজিব। আল্লাহ বলেন, ‘ভোট একটি আমানত’। আল্লাহ পাক-এর হাবীব বলেছেন, ‘সৎ লোককে ভোট দিতে হবে।’ বায়তুল মুকাররম মসজিদের খতীবের একথা কতটুকু শরীয়ত ও দলীল সম্মত?
৬। (ক) ছহীহ্ অর্থে মুসলমানদের প্রকৃত শাসক হচ্ছে পবিত্র কুরআন এবং রসূলের সুন্নাহ্। (খ) প্রচলিত যে কোন শাসন ব্যবস্থায় যদি কুরআন-সুন্নাহ্র প্রাধান্য মেনে নেয়া হয় তবে তা মুসলিম জনগণ বিনা দ্বিধায় মেনে নিতে পারেন। (গ) ভোটের মাধ্যমে নেতা বা শাসক নির্বাচনের বর্তমান যে পদ্ধতি এটা অংকুরিত হয়েছে- ইসলামী শুরা পদ্ধতির মধ্য থেকে। সুতরাং এই পদ্ধতিতে ভোটের রাজনীতি ইসলামে বৈধ নয় এ কথা বলা যাবে না। (ঘ) এ যুগের ভোট প্রদান বাইয়াতের বিকল্প বিবেচিত হতে পারে।
মাহিউদ্দীনের উপরোক্ত বক্তব্য কতটুকু সত্য ও দলীলসম্মত?
৭। খুলাফায়ে রাশিদীন কি পদপ্রার্র্থী হয়েছিলেন?
৮। একটি পদের জন্য কি একাধিক প্রার্থী ছিলেন? এবং তাঁদের কি কোন মার্কা ছিল?
৯। খলীফাগণ রাষ্ট্র পরিচালনা করেছিলেন, না খিলাফত?
১০। খলীফাগণ মানবরচিত বিধানে, না শরয়ী বিধানে খিলাফত পরিচালনা করেছেন?
১১। খলীফা নিয়োগদান পদ্ধতি নির্বাচন, না মনোনয়ন?
১২। গণতান্ত্রিক বহুদলীয় নির্বাচনে প্রার্থীকে ভোট দেয়া ওয়াজিব কিনা?
১৩। (ক) গণতন্ত্র বা নির্বাচন দু’প্রকার পাশ্চাত্য গণতন্ত্র বা নির্বাচন ও ইসলামী গণতন্ত্র বা নির্বাচন। (খ) খুলাফায়ে রাশেদীন ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছেন। (গ) পদপ্রার্র্থী হওয়া জায়িয। ((ঘ) কুরআন-সুন্নাহয় ভোটকে স্বাক্ষী, আমানত সুপারিশ ও প্রতিনিধি নিয়োগ বলে উলেّখ করা হয়েছে।
হাটহাজারী খারেজী মৌলবী ছাহেবদের উপরোক্ত বক্তব্য কতটুকু সত্য ও দলীলসম্মত?
১৪। পটিয়া খারিজী মাদ্রাসার মুখপত্র আত তাওহীদ-এর ডিসেম্বর/৯৬, জানুয়ারী/৯৭ এবং জুলাই আগস্ট/৯৭ সংখ্যাসমূহে ভোট নির্বাচন সম্পর্কিত কয়েকটি প্রশ্নের জবাবে লিখেছে,
(ক) শরীয়তের দৃষ্টিতে ভোট হচ্ছে শাহাদাত বা স্বাক্ষ্য।
(খ) বর্তমান পদ্ধতিতে নির্বাচন করা ইসলামপন্থিদের জন্য একান্ত কর্তব্য।
(গ) ভোট নাগরিক অধিকার, এ অধিকার অর্জনে মা’জুর বশতঃ মহিলাদের জন্যও ছবি তোলা জায়িয রয়েছে।
(ঘ) দ্বীন ইসলাম রক্ষার্থে ভোট বেচা-কেনা করাও জায়িয রয়েছে।
পটিয়া-খারিজী মাদ্রাসার মৌলবী ছাহেবদের উপরোক্ত বক্তব্য কতটুকু দলীলভিত্তিক ও শরীয়ত সম্মত।
১৫। আজকাল নামধারী প্রতিটি ইসলামী দলকেই দেখা যায় বিভিন্ন দলের সাথে জোট বা চুক্তি করে থাকে। তাদেরকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তারা এটাকে হুদায়বিয়ার সন্ধির সাথে তুলনা করে থাকে। হুদায়বিয়ার সন্ধির সাথে তাদের উক্ত জোট বা চুক্তিকে তুলনা করা সঠিক ও শরীয়তসম্মত কিনা?
১৬। যে সকল কথিত মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিছ শাইখুল হাদীছ, খতীব, পীর, আমীর ইসলামের নামে গণনতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন করছে, ভোটকে আমানত, স্বাক্ষ্য ফরয-ওয়াজিব বলছে এবং ক্ষমতার লোভে বাতিলের সাথে আতাত করছে তারা হক্কানী আলিম কিনা? তাদের পিছনে নামায পড়া জায়িয কিনা? তাদের ব্যাপারে শরীয়তের ফায়ছালা কি?
১৭। যদি ইসলামের দৃষ্টিতে গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন নাজায়িয হয় তবে রাষ্ট্র পরিচালিত হবে কিভাবে? এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠিত হবে কিভাবে? আমরা জানি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠা করা ফরযে আইন। তবে কি সশস্ত্র বিপ্লব বা বোমাবাজি, জিহাদ বা জঙ্গী কার্যকলাপের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠার করা যাবে?
উপরোক্ত প্রতিটি বিষয় দলীলভিত্তিক বিস্তারিত জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান-আক্বীদা ও আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদি।
জাওয়াবঃ
ইসলামের নামে বা ইসলামের দোহাই দিয়ে গণতন্ত্র, ভোট, নিবার্চন করা, পদপ্রার্র্থী হওয়া, ভোট চাওয়া, নিজ দলকে ভোট দেয়া ওয়াজিব ও জান্নাতের টিকেট লাভের কারণ বলা এবং ভোটকে আমানত, সুপারিশ, স্বাক্ষ্য ইত্যাদি বলা সম্পূর্র্ণ হারাম ও কুফরী। এটাই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস তথা শরীয়তের চুড়ান্ত, ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া।
অতএব, বলার অপেক্ষা রাখে না যে, গণতন্ত্র ভোট, নির্বাচন ও পদপ্রার্র্থী হওয়া সম্পর্কিত তথাকথিত খতীব উবায়দুল হক, নিজামী, আহমদ শফী, মাহিউদ্দীন, আমিনী ও আযীযূল হক- ওহাবী, দেওবন্দী ও জামাতীগংদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্র্ণ কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের খিলাফ বিধায় তা ভুল, অশুদ্ধ, জিহালতপূর্ণ দলীলবিহীন ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
নিম্নে পর্যায়ক্রমে সুওয়ালে উল্লেখিত তাদের প্রতিটি বক্তব্যের খ-মূলক জাওয়াব প্রদান করা হলো।
(১৪)
পটিয়া খারিজী মাদরাসার অখ্যাত মুখপত্র “মাসিক আত্্ তাওহীদ” ডিসেম্বর-৯৬, জানুয়ারী, জুলাই ও আগস্ট-৯৭ সংখ্যাসমূহে ভোট-নির্বাচন সম্পর্কে প্রদত্ত বক্তব্যসমূহের খন্ডনমূলক জবাব
পটিয়া খারিজী মাদ্্রাসার অখ্যাত মুখপত্র “আত্্তাওহীদ” হিসেম্বর-৯৬, জুলাই, জানুয়ালী ও আগস্ট-৯৭ সংখ্যাসমূহে ভোট-বিনর্বাচন সম্পর্কে যা লিখেছে তা হলো-
(ধারাবাহিক)
“শরীয়তের দৃষ্টিতে ভোট হচ্ছে শাহাদত বা স্বাক্ষ্য” তাদের এবক্তব্য সম্পূর্ণরূপে কুফরী
এর জবাবে বলতে হয় যে, ‘শরীয়তের দৃষ্টিতে ভোট হচ্ছে শাহাদত বা সাক্ষী” একথার অর্থ হলো তাদের মতে ভোট-বির্নাচন এবং ভোট-নির্বাচন যার অবিচ্ছেদ্য অংশ তথা গণতন্ত্র শরীয়ত ও ইসলাম সম্মত (নাউযুবিল্লাহ)।
মূলত পটিয়া খারিজী মাদরাসার মৌলভী ছাহেবদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে মূর্খতাসূচক ও কুফরীমূলক হয়েছে। তবে এই সমস্ত মৌলভী ছাহেবদের জন্য এটাই স্বাভাবিক যে, এরা ভোট-নির্বাচন তথা গণতন্ত্র সম্পর্কে ভুল ফতওয়া দিবে। কারণ, এরা ভোট-নির্বাচন তথা গণতন্ত্র সম্পর্কে পর্যাপ্ত পরিমাণ পড়াশুনা করে নাই। তবে আরো অধিক আশ্চর্য্যরে বিষয় এই যে, এরা জীবনভর ইসলাম সম্পর্কে পড়াশুনা করলো এবং করালো তারপরও তারা ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ইল্্ম অর্জন করতে পারে নাই। তাই তাদের পক্ষে এ ধরনের ভুল, মনগড়া, বিভ্রান্তিকর, দলীলবিহীন ও কুফরীমূলক বক্তব্য দেয়া সম্ভব হয়েছে।
মূলতঃ গণতন্ত্র বা ভোট নির্বাচন সম্পূর্ণরূপেই পাশ্চাতের অর্থাৎ তা ইহুদীদের দ্বারা উদ্ভাবিত ও প্রবর্তিত আর নাছারাদের দ্বারা সংস্কারকৃত ও সংশোধিত হয়ে ব্যাপক প্রচার-প্রসার লাভ করে। আর তা পরবর্তীতে অর্থাৎ ইদানিংকালে অর্ধেক ইহুদী, অর্ধেক নাছারা আব্রাহাম লিংকন কর্তৃক আরো পরিশোধিত হয়ে আধুনিক গণতন্ত্র নামে ব্যাপক বিস্তার লাভ করে। যা সম্পূর্ণরূপেই মানবরচিত মতবাদ।
সুতরাং ভোট-নির্বাচন তথা গণতন্ত্র বিশ্বাস বা স্বীকার করলে সাথে সাথে এটাও বিশ্বাস করতে হয় যে, অর্ধেক আল্লাহ পাক-এর তরফ থেকে নাযিলকৃত আইন আর অর্ধেক মানবরচিত নিয়ম-কানুন পালন করতে হবে যা সম্পূর্ণরূপে কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। অথচ আল্লাহ পাক অনেক আয়াত শরীফ নাযিল করে বিষয়টা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। যেমন “সূরা কাফিরূন” -এর মধ্যে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
قل یایها الکفرون لا اعبد ما تعبدون ولا انتم عا بدون ما اعبد ولا انا عابد ما عبتم ولا انتم عا بدون ما اعبد لکم دینکم ولی دین.
অর্থঃ- “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলুন, হে কাফিরের দল, তোমরা যার পূজা কর আমি তার ইবাদত করিনা আর আমি যাঁর ইবাদত করি তোমরা তাঁর ইবাদত করনা। আর তোমরা যার পূজা কর আমি তার ইবাদত করিনা আর আমি যাঁর ইবাদত করি তোমরা তাঁর ইবাদত করনা। তোমাদের নিয়ম-নীতি তর্জ-তরীক্বা তোমাদের আর আমার দ্বীন আমার।”
অর্থাৎ মুসলমান ইসলাম তথা কুরআন-সুন্নাহও পালন করবে আবার সাথে সাথে বেদ্বীন-বদদ্বীনদের নিয়ম-নীতিও পালন করবে তা হবেনা। মুসলমানকে শুধুমাত্র কুরআন-সুন্নাহকেই পরিপূর্ণ অনুসরণ করতে হবে। এর সাথে অন্য কোন ধর্ম বা নিযম-নীতি মিশ্রিত করতে পারবে না। করলে তা আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অসন্তুষ্টির কারণ হবে। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن جابر رضی الله تعالی عنه ان عمر بن الخطاب رضی الله تعالی عنه اتی رسول الله صلی الله علیه وسلم بنسخة من التورة فقال یا رسول الله صلی الله علیه وسلم هذه نسخة من التورة فسکت فجعل یقرأ ووجه رسول الله صلی الله علیه وسلم یتغیر فقال ابو بکر ثکلتک الثواکل ما تری ما بوجه رسول الله صلی الله علیه وسلم فنظر عمر الی وجه رسول الله صلی الله علیه وسلم فقال اعوذ بالله من غضب الله وغضب رسوله رضینا بالله ربا وبالاسلام دینا وبمحمد نبیا فقال رسول الله صلی الله علیه وسلم والذی نفس محمد صلی الله علیه وسلم بیده لو بدا لکم موسی علیه السلام فاتبعتموه وتر کتمونی لضللتم عن سواء السبیل ولو کان حیا وادرک نبوتی لاتبعنی
অর্থঃ- “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, একদিন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট তাওরাত শরীফের একটি কপি এনে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এটি তাওরাত শরীফের একটি কপি। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চুপ রইলেন। হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তা পড়তে আরম্ভ করলেন। আর এদিকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চেহারা মুবারক লাল হতে লাগলো। অর্থাৎ অসন্তুষ্টির ভাব ফুটে উঠলো। এটা দেখে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, হে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনার জন্য আফসুস! আপনি কি দেখছেন না যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চেহারা মুবারক কি রূপ ধারণ করছে। তখন হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চেহারা মুবারকের দিকে তাকালেন এবং অসন্তুষ্টির ভাব লক্ষ্য করে বললেন, আমি আল্লাহ পাক-এর অসুন্তুষ্টি থেকে এবং তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অসন্তুষ্টি থেকে আল্লাহ পাক-এর নিকট পানাহ চাচ্ছি। এবং আমরা আল্লাহ পাককে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে ও আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবি হিসেবে পেয়ে খুশী হয়েছি। তখন রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সেই আল্লাহ পাক-এর কছম! যার অধিকারে আমার প্রাণ মুবারক রয়েছে, এ সময় যদি তোমাদের নিকট হযরত মুছা আলাইহিস্্ সালাম (যার উপর তাওরাত কিতাব নাযিল হয়েছে) জাহির বা প্রকাশ হতেন আর তোমরা আমাকে ছেড়ে তাঁর অনুসরণ করতে তবুও তোমরা সরল পথ থেকে অবশ্যই বিচ্যুত অর্থাৎ গোমরাহ হয়ে যেতে। এমনকি তিনি যদি এখন হায়াতে থাকতেন আর আমাকে পেতেন তাহলে তিনিও নিশ্চয়ই আমার অনুসরণ করতেন।” (দায়িমী, মিশকাত, মিরকাত)
এখানে ফিকিরের বিষয় এই যে, আল্লাহ পাক-এর তরফ থেকে ওহী দ্বারা নাযিলকৃত আসমানী কিতাব ‘তাওরাত শরীফের’ একখানা নসখা যা নাযিল হয়েছে জলীলুল ক্বদর নবী ও রসূল, কালিমুল্লাহ হযরত মুসা আলাইহিস্্ সালাম-এর উপর তা নিয়ে উপস্থিত হলেন এমন এক ব্যক্তিত্ব যার সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن عقبة بن عامر قال قال رسول الله صلی الله علیه وسلم لو کان بعدی نبی لکان عمر بن الخطاب رضی الله تعالی عنه.
অর্থঃ- “হযরত উক্ববা ইবনে আমির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, বর্ণনা করেন, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার পর যদি কেউ নবী হতো তবে নবী হতেন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।” (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
عن ابن عمر قال قال رسول الله صلی الله علیه وسلم ان الله جعل الحق علی لسان عمر وقلبه.
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর জবান ও অন্তরে হক্ব রেখেছেন।” (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
এছাড়াও যাঁর অনেক ফাযায়িল-ফযীলত, শান-শওক্বত ও বুযুর্গী কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে সেই হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। তারপরও আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাস্্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কঠিন অসন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন এবং বললেন, তাওরাত কিতাব যাঁর উপর নাযিল হয়েছে সেই হযরত মুসা আলাইহিস্্ সালামও যদি এখন থাকতেন তবে তাঁর জন্যও তাওরাত কিতাব বাদ দিয়ে আমাকে অনুসরণ করা ফরজ ওয়াজিব হয়ে যেত। অর্থাৎ ইসলামের সাথে মিলিয়ে কিছু ইসলাম কিছু কিছু তাওরাত শরীফ কস্মিনকালেও জায়িয নেই। এর বাস্তব প্রমাণ হচ্ছেন হযরত ঈসা আলাইহিস্্ সালাম যিনি আখিরী যামানায় আসবেন এবং নিজের উপর নাযিলকৃত ইনজিল শরীফ বাদ দিয়ে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাস্্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেই অনুসরণ করবেন অর্থাৎ কুরআন-সুন্নাহ মুতাবিক চলবেন।
এ প্রসঙ্গে কালামে পাকে ইরশাদ হয়েছে,
هو الذی ارسل رسوله بالهدی ودین الحق لیظهره علی الدین کله وکفی بالله شهیدا محمد رسول الله.
অর্থঃ- ‘তিনি (আল্লাহ পাক) তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হিদায়েত এবং সত্য দ্বীন সহকারে পাঠিয়েছেন সকল দ্বীনের উপর প্রাধান্য দিয়ে। (সমস্ত দ্বীনকে বাতিল ঘোষণা করে তা ওহী দ্বারা নাযিলকৃত হোক অথবা মানব রচিত হোক আর তা পূর্বে হোক অথবা পরে হোক) এবং এ বিষয়ে আল্লাহ পাক-এর স্বাক্ষ্যই যথেষ্ট। (যার সাক্ষী আল্লাহ পাক) আর রসূল হচ্ছেন হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” (সূরা ফাতহ্্-২৮,২৯)
অর্থাঃ আল্লাহ পাক দ্বীন ইসলামকে শুধুমাত্র পরিপূর্ণ সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত ও নিয়ামতপূর্ণ করেই নাযিল করেননি সাথে সাথে দ্বীন ইসলামকে মনোনীতও করেছেন। তাই দ্বীন ইসলাম ব্যতীত অন্য সমস্ত ধর্ম যা পূর্বে ওহী দ্বারা নাযিল করা হয়েছিল যেমন, তাওরাত শরীফ, যাবুর শরীফ, ইনজীল শরীফ ও ১০০ খান ছহীফা এবং পূর্বের ও পরের মানব রচিত মতবাদ যেমন গণতন্ত্র ইত্যাদি যা পূর্বে ছিল এবং বর্তমানে যা রয়েছে, যেমন- রাজতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, মার্কসবাদ, লেলিনবাদ, মাওবাদ ইত্যাদি ও ভবিষ্যতে যা হবে সেগগুলোকে তিনি বাতিল ঘোষণা করেছেন।
আমরা যদি ইসলাম কাকে বলে বা ইসলামের পরিচয় কি তা উল্লেখ করার পাশাপাশি গণতন্ত্রের বা নির্বাচনের অর্থ সংজ্ঞা ও ইতিহাস পর্যালোচনা করি তাতেই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে যে গণতন্ত্র বা ভোট-নির্বাচন সম্পর্কিত পটিয়ার মৌলভী ছাহেবদের উপরোক্ত বক্তব্য মোটেও শুদ্ধ হয়নি বরং কুফরীমূলক হয়েছে। তাই নিম্নে ইসলাম ও গণতন্ত্র বা নির্বাচন সম্পর্কে দলীলভিত্তিক বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
পটিয়া খারিজী মাদরাসার মৌলবী ছাহেবরা “ইসলাম কাকে বলে“ তাও জানেনা
ইসলাম হচ্ছে আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ওহীর মাধ্যমে নাযিলকৃত, একমাত্র পরিপূর্ণ, সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত, নিয়ামতপূর্ণ ও মনোনীত দ্বীন। যা ক্বিয়ামত পর্যন্ত বলবত থাকবে। যে প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক “সূরা আলে ইমরানের” ১৮ নং আয়াত শরীফে বলেন,
ان الدین عند الله الاسلام.
অর্থঃ- ‘নিশ্চয়ই ইসলামই আল্লাহ পাক-এর কাছে একমাত্র দ্বীন।’
আর আল্লাহ্্ পাক “সূরা মায়িদার” ৩নং আয়াত শরীফে ঘোষণা করেন,
الیوم اکملت لکم دینکم واتممت علیکم نعمتی ورضیت لکم الاسلام دینا.
অর্থঃ- ‘আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে (দ্বীন ইসলামকে) কামিল বা পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত তামাম বা পূর্ণ করে দিলাম এবং আমি তোমাদের দ্বীন ইসলামের প্রতি সন্তুষ্ট রইলাম।”
তাই আল্লাহ পাক সূরা বাক্বারার ২০৮ নং আয়াত শরীফে ঈমানদারদেরকে আদেশ করেন,
یایها الذین امنوا ادخلوا فی السلم کافة ولا تتبعوا خطوات الشیطان انه لکم عدو مبین.
অর্থঃ- হে ঈমানদারগণ তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ কর। শয়তানকে অনুসরণ করনা। নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।”
কাজেই ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন বা মতবাদ অর্থাৎ তা ওহী দ্বারা নাযিলকৃত হোক বা মানব দ্বারা রচিত হোক কোনটাই আল্লাহ পাক গ্রহণ করবেন না। বরং তা জাহান্নামী হওয়ার কারণ হবে।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক বলেন,
من یبتغ غیر الاسلام دینا فلن یقبل منه وهو فی الا خرة من الخسرین
অর্থঃ- ‘যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্মের নিয়ম-নীতি তালাশ করে তার থেকে সেটা কবুল করা হবেনা এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সূরা আর ইমরান- ৮৫)
অতএব, যারা ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন নিয়মনীতি ইসলামের নামে বা ইসলামের সাথে মিশ্রিত করে করতে চায়। যেমন ইসলামী গণতন্ত্র, ইসলামী সমাজতন্ত্র, ইসলামী রাজতন্ত্র ইত্যাদি তা কি করে জায়িয হতে পারে?
না, ইসলামের সাথে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র ইত্যাদি মিশ্রিত করে ইসলামী গণতন্ত্র, ইসলামী সমাজতন্ত্র, ইসলামী রাজতন্ত্র ইত্যাদি করা শরীয়তে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও হারাম যা করলে কেউ ঈমানদার থাকতে পারবে না।
আল্লাহ পাক দ্বীন ইসলাম তথা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ ওহীর মাধ্যমে নাযিল করেছেন।
আর ওহী সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন,
وما ینطق عن الهوی ان هو الا وعی یوحی.
অর্থঃ- ‘তিনি ওহী ব্যতীত নিজ থেকে কোন কথা বলেন না।’ (সূরা নজম-৩, ৪)
ওহী হচ্ছে দু’প্রকার- (১) ওহীয়ে মাতলু (২) ওহীয়ে গায়রে মাতলু।
ওহীয়ে তাত্লু হচ্ছে- যা হুবহু তিলাওয়াত বা পাঠ করতে হয়। যার তাহরীফ ও তাবদীল সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম। ওহীয়ে মাতলুর সমষ্টি হচ্ছে কুরআন শরীফ, যা আল্লাহ পাক “সূরা ইউসুফের” ৩নং আয়াত শরীফে উল্লেখ করেন,
اوحینا الیک هذا القران.
অর্থঃ- ‘আমি এই কুরআন শরীফকে আপনার প্রতি ওহী করেছি বা নাযিল করেছি।’
আর ওহীয়ে গায়রে মাতলু হচ্ছে হাদীছ শরীফ। যা আল্লাহ পাক-এর তরফ থেকে নাযিল হয়েছে কিন্তু তার ভাষা হচ্ছে স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর। যা কুরআন শরীফের ব্যাখ্যা স্বরূপ।
উল্লেখ্য, ওহীয়ে মাত্্লু বা কুরআন শরীফের তাহরীম তাবদীল যেমন নাজায়েয ও কুফরী, তেমনি তাফসীর র্ব্ রিায় বা মনগড়া তাফসীর বা ব্যাখ্যা করাও নাজায়িয ও কুফরী।
এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابن عباس رضی الله تعالی عنه قال قال رسول الله صلی الله علیه وسلم من قال فی القران برایه فلیتبوأ مقعده من النار وفی روایة من قال فی القران بغیر علم فلیتبوأ مقعده من النار.
অর্থঃ- ‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ সম্পর্কে মনগড়া কথা বলে, সে যেন (দুনিয়ায় থাকতেই) তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেয়। অপর রেওয়ায়েতে বর্ণিত রয়েছে, যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ সম্পর্কে ইল্্ম ব্যতীত অর্থাৎ বিনা প্রমাণে মনগড়া কোন কথা বলে, সে যেন (দুনিয়ায় থাকতেই) তার স্থান দোযখে করে নেয়।” (তিরমিযী, মিশকাত, মিরকাত)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
من فسر القران برایه فقد کفر.
অর্থঃ- ‘যে ব্যক্তি কুরআন শরীফের মনগড়া ব্যাখ্যা করলো, সে কুফরী করলো।’ (ইহউ উলূমিদ্দীন উলূমিদ্দীন)
আর ওহীয়ে গায়েরে মাতলু সম্পর্কে হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে,
عن ابن عباس رضی الله تعالی عنه قال قال رسول الله صلی الله علیه وسلم اتقوا الحدیث عنی الا ما علمتم فمن کذب علی متعمدا فلیتبوأ مقعده من النار.
অর্থঃ- ‘হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার পক্ষ হতে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করার ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। যে পর্যন্ত না তা তোমরা আমার বলে নিশ্চিত হবে। কেননা যে ব্যক্তি আমার প্রতি মিথ্যারোপ করবে, সে যেন (দুনিয়ায় থাকতেই) তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নিল।” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ্্, মিশকাত)
মূলতঃ ইসলাম হচ্ছে আল্লাহ পাক-এর তরফ থেকে আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ওহীর মাধ্যমে নাযিলকৃত দ্বীন, যা বাড়ানো-কমানো বা ইফরাত-তাফরীত যেমন কুফরী তেমনি তার মনগড়া তাফসীর বা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারকে মিথ্যারোপ করাও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
আর মেছাল বা উদাহরণ হচ্ছে কাদিয়ানী সম্প্রদায়। কাদিয়ানীরা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্্মা ও ক্বিয়াস সবই মানে এবং তা স্বীকারও করে থাকে। এমনকি কাদিয়ানীরা خاتم النبیین (খতামুন্্ নাবিয়্যীন) এ রহ্্মতপূর্ণ ও বরকতপূর্ণ বাক্যাংশটিও তারা শব্দগতভাবে অস্বীকার করে না কিন্তু নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী মনগড়া অর্থ করে। আহ্লে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা মুতাবিক খতামুন্্ নাবিয়্যীন-এর অর্থ হচ্ছে শেষ নবী।
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ثوبان رضی الله تعالی عنه قال قال رسول الله صلی الله علیه وسلم انا خاتم النبین لا نبی بعدی.
অর্থঃ- “হযরত ছাওবান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমিই শেষ নবী। আমার পর কোন নবী নেই।” (মুসলিম, আবূ দাউদ, তিরমিযী, আহমদ, ইবনে মাজাহ্, কানযুল উম্মাল)
কাদিয়ানীরা আল্লাহ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবীও স্বীকার করে এবং মানেও। কিন্তু খতামুন্্ নাবিয়্যীন-এর অর্থ করে, তিনি নবী সত্য তবে শেষ নয়, নবীদের মোহর। (নাউযুবিল্লাহ্্) অর্থাৎ কাদিয়ানী সম্প্রদায় ইসলামের সমস্ত কিছু মানা সত্ত্বেও এমনকি কুরআন শরীফের রহ্্মত ও বরকতপূর্ণ বাক্যাংশ খতামুন্ নাবিয়্যীন শব্দগতভাবে মানা সত্ত্বেও অর্থের দিক থেকে শুধু মাত্র “খতম” শব্দের অর্থ শেষ না করে মোহর করার কারণে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হয়েছে।
তাহলে বুঝা যাচ্ছে আল্লাহ পাক-এর তরফ থেকে আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ওহীর মাধ্যমে নাযিলকৃত দ্বীন, ইসলামের কোন বিষয় বাড়ানো-কমানো বা ইফরাত-তাফরীত অর্থাৎ কোন মতবাদ বা অন্য কোন ধর্মের সাথে মিশ্রিত করা বা কুরআন শরীফের কোন শব্দের তাহ্্রীফ-তাবদীল করা অথবা মনগড়া তাফসীর ইত্যাদি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ বা নাজায়িয, হারাম ও কুফরী। যারা বাড়াবে ও কমাবে বা তাহ্্রীফ-তাবদীল বা কোন মতবাদ বা অন্য কোন ধর্মের সাথে মিশ্রিত করবে অথবা মনগড়া তাফসীর ইত্যাদি করবে তারাও কাফির হয়ে যাবে। যেমন কাদিয়ানী সম্প্রদায় কাফির হয়ে গেছে।
উপরোক্ত আয়াত শরীফ এবং হাদীছ শরীফের মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ্্ পাক দ্বীন ইসলামকে মনোনীত ও পরিপূর্ণ করে নাযিল করেছেন। আর পূর্ববর্তী ওহী দ্বারা নাযিলকৃত এবং পূর্বর্বর্তী ও পরবর্তী মানব রচিত সমস্ত ধর্ম, নিয়ম-নীতি, আইন-কানুন, তর্জ-তরীক্বা বাতিল ঘোষণা করে ইসলাম নাযিল করেছেন। যাতে আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীক্বা ইত্যাদি নতুন করে দেয়া হয়েছে যা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ইত্যাদি প্রতিক্ষেত্রেই পালনীয়। যা ক্বিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। যার কারণে মুসলমানগণকে অন্য কোন ধর্ম বা সম্প্রদায় থেকে কোন নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীক্বা, আইন-কানুন কর্জ করতে হবেনা। অর্থাৎ ইসলামের জন্য গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র ইত্যাদি থেকে করজ নিয়ে ইসলামী গণতন্ত্র, ইসলামী সমাজতন্ত্র, ইসলামী রাজতন্ত্র ইত্যাদি করার কোন প্রয়োজন নেই। বরং ইসলাম থেকেই সকলকে কর্জ করতে হবে।
গণতন্ত্র তথা ভোট- নির্বাচন সম্পর্কে পটিয়া খারিজী মাদরাসার মৌলবী ছাহেবদের বিন্দুমাত্রও ইলম নেই
গণতন্ত্র হচ্ছে- মানব রচিত শাসন ব্যবস্থা। যার আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীক্বা মানুষের দ্বারা রচিত। মূলতঃ গণতন্ত্র শুধু মানব দ্বারাই রচিত নয় বরং তা বিধর্মীদের দ্বারা বিশেষ করে ইহুদীদের দ্বারা উদ্ভাবিত ও প্রবর্তিত। আর খ্রিস্টানদের দ্বারা সংস্কারকৃত শাসন পদ্ধতি। যা আল্লাহ্্ পাক-এর তরফ থেকে নাযিলকৃত আসমানী কিতাব বিকৃত হওয়ায় অর্থাৎ নফসানিয়াতের দরুন উক্ত কিতাব বিকৃতি বা পরিত্যাগ করার পর বিধর্মীরা তাদের দেশ পরিচালনা করার জন্য, খোদায়ী আইনের পরিবর্তে নিজেরা যে সব আইন প্রণয়ন করেছিল, পরবর্তী সময় সেগুলো বিভিন্ন নামে পরিচিতি লাভ করে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গণতন্ত্র, যা খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে গ্রীসে উৎপত্তি লাভ করেচে এবং বর্তমান বিশ্বে ব্যাপক প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।
গণতন্ত্রের ইংরেজী হচ্ছে- উবসড়পৎধপু যা এসেছে গ্রীক ‘উবসড়ং’ এবং ‘কৎধঃড়ং’ থেকে। ‘উবসড়ং’ অর্থ জনগণ এবং ‘কৎধঃড়ং’ অর্থ শাসন। পলিটিক্যাল সাইন্স বা রাষ্ট্র বিজ্ঞানের বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে, গণতন্ত্র শব্দের অর্থ হচ্ছে- ‘গণ’ অর্থ জনগণ, আর ‘তন্ত্র’ অর্থ নিয়ম-নীতি বা পদ্ধতি। অর্থাৎ গণতন্ত্রে জনগণের নিয়ম-কানুন বা পদ্ধতি অনুযায়ী শাসন ব্যবস্থা বা সরকার পরিচালনা করা হয়। এক্ষেত্রে আধুনিক গণতন্ত্রের প্রবক্তা আব্রাহাম লিঙ্কনের উক্তি উল্লেখ্য। তর ভাষায়- ‘উবসড়পৎধপু রং ধ এড়াবৎহসবহঃ ড়ভ ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষব, নু ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষব ধহফ ভড়ৎ ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষব’ যার অর্থ হলো- গণতান্ত্রিক সরকার জনগণের, জনগণের দ্বারা ও জনগণের জন্য।
নির্বাচনের প্রাচীন ইতিহাস
প্রাচীন গ্রীসে খ্রীষ্টপূর্ব পঞ্চম এবং ষষ্ঠ শতাব্দীতে নির্বাচন প্রথা চালু ছিল। এছাড়া রোমান সিনেটেরও এ পদ্ধতি চালু ছিল।
ঊষবপঃরড়হ সম্পর্কে ধর্ম, মিথলজি বিষয়ক ঊহপুপষড়ঢ়বফরধ গধহ, গুঃয’ং গধমরপ-এ বলা হয়েছে, ঊষবপঃরড়হ, ঃযব ড়িৎষফ রং ফবৎরাবফ ভৎড়স ঃযব এৎববশ ড়িৎফ বষড়ময (পযড়রপব). ঞযব রফবধ রং নধংরপ ঃড় ঃযব ঃৎধফরঃরড়হধষ ংঃৎঁপঃঁৎব ড়ভ ঈযৎরংঃরধহ ঃযবড়ষড়মু. অর্থাৎ ইলেকশন বা নির্বাচন শব্দটি উৎসারিত হয়েছে বা উৎপত্তি লাভ করেছে গ্রীক শব্দ ……… হতে যার অর্থ ছিল পছন্দ। নির্বাচনের ধারণা প্রাচীন খ্রীষ্টীয় ধর্মতত্ত্বের ব্যাখ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত।
এ ব্যাখ্যাটি এরূপ যে, তাদের ঐমচ নির্দিষ্ট কিছু ব্যাক্তিবর্গ অথবা জাতিকে বিশেষভাবে পছন্দ করতেন তার রাজত্বে বিশেষ কিছু ভূমিকা পালনের জন্য, যাকে বলা হত নির্বাচন। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ রা হয়েছে, ঞযব রফবধ ঃযধঃ এড়ফ ংঢ়বপরধষষু পযড়ংবং পবৎঃধরহ রহফরারফঁধষং ড়ৎ হধঃরড়হং ভড়ৎ ংড়সব ঢ়বপঁষরধৎ ৎড়ষব রহ ঃযব ংপযবসব ড়ভ যরং ঢ়ৎড়ারফবহপব রং শযড়হি ধং বষবপঃরড়হ.
উল্লেখ্য, খ্রীষ্টান ধর্মতত্ত্বে নির্বাচনের ধারণাটি অদৃষ্টবাদ থেকে এসেছে। এ সম্পর্কে বলা হয়েছে; ওহ ঈযৎরংঃরধহ ঃযবড়ষড়মু ঃযব রফবধ ড়ভ বষবপঃরড়হ নবপধসব ধংংড়পরধঃবফ রিঃয ঢ়ৎবফবংঃরহধঃরড়হ, খ্রীষ্টানদের আরো ধারণা যে, তাদের খোদার পছন্দনীয় বা বষবপঃবফ অবশ্যই স্বল্প হবে। গধহু ধৎব পধষষবফ নঁভ ভবি ধৎব পযড়ংবহ (গধঃযব-ি ২২-১৪)
মুলকথা হচ্ছে, নির্বাচন খ্রীষ্টীয় ধর্মতত্ত্বের সাথে বিশেষভাবে সম্পৃক্ত একটি বিষয়। এ বিষয়ে গধহ, গুঃয ্ ঊহপুপষড়ঢ়বফরধ গধমরপ-এ আরো বলা হয়েছে, ঐড়বিাবৎ ঃযধঃ ঃযব ফড়পঃৎরহব ড়ভ বষবপঃরড়হ ভড়ঁহফ রঃং সড়ংঃ হড়ঃধনষব বীঢ়ৎবংংরড়হ রহ ঈযৎরংঃরধহরঃু.
আধুনিক কালের ইতিহাস
তবে আধুনিক ভোটদান ব্যবস্থার সূত্রপাত ঘটে ইংল্যান্ডে ১৬৮৮ সালে। ইংল্যান্ডে ১৬৮৮ সালে বিপ্লবের পর রাজনৈতিক ক্ষমতা পার্লমেন্টের হাতে চলে যায়। পার্লামেন্ট ১৮৩২ সালে প্রথম সংস্কার আইনে সমস্ত মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে ভোটাধিকার দেয়। এরপর পর্যায়ক্রমে ১৮৬৭ সালে কারখানার শ্রমিকদের, ১৮৮৪ সালে কৃষি মজুরদের, ১৯১৮ সালে সীমিত সংখ্যক নারীদের এবং ১৯২৮ সালে সকল নারীদের ভোটাধিকার দেয়া হয়। ১৯১৮ সালের পূর্বে ব্রিটেনে বিশ্ব বিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটরা সাধারণ কেন্দ্র ও বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র এ দু’টি কেন্দ্রের ভোটাধিকারী ছিল। পরবর্তীতে অর্থাৎ ১৯৪৮ সালে এ সকল পদ্ধতির সমাপ্তি ঘটিয়ে একুশ বছর বা তদুর্ধ বয়সের সকল সম্প্রদায়ের জন্য সার্বজনীন ভোটাধিকার দেয়া হয়।
অপরদিকে আমেরিকায় ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে বলা হয় যে, কোন ব্যক্তিকে তার জাতি, ধর্ম অথবা পূর্ব দাসত্ত্বের জন্য ভোটদানের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। ১৯৩৩ সালে সপ্তদশ সংশোধনীতে সিনেট সদস্যদের জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। ১৯২০ সালে মহিলা ভোটাধিকার স্বীকৃত হয়। ১৯৭১ সালে ভোটারদের বয়স সীমা কমিয়ে ১৮ বছরে আনা হয়।
ভোটের প্রকারভেদ ও ব্যালট প্রথা
উল্লেখ্য, ভোট হলো দু’প্রকার- (১) ভোটদান (২) গোপনে ভোটদান।
প্রকাশ্য ভোটদান ব্যবস্থায় ভোটদানকারীরা বিপরীত পক্ষীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাই এটি সর্বত্রই পরিত্যক্ত হয়েছে।
্আর গোপনে ভোটদান ব্যবস্থায় ভোটদানকারীরা কারো দ্বারা কোন প্রকার ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা, তারা তাদের ভাষায় নির্ভয়ে ও স্বাধীনভাবে ভোট প্রদান করতে পারে। তাই ব্যালট পেপারের মাধ্যমে এ ব্যবস্থা প্রায় সর্বত্রই চালু হয়েছে।
ব্যালট
ব্যালট হচ্ছে একটি কাগজের শীট, যার দ্বারা গোপন ভোট প্রদান করা হয়। ইধষষড়ঃ শব্দটি এসেছে ইটালী ব্যালোটা ইধষষড়ঃরধ হতে। যার অর্থ হচ্ছে- ছোট বল। এটি এভাবে উৎপত্তি হয়েছে যে, প্রাচীনকালে এর দ্বারা ভোট গ্রহণ করা হতো এবং গ্রীসে এই পদ্ধতির প্রচলন ছিল। জনতার দরবারে অথবা আইন সভায় খ্রীষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে এবং কখনো কখনো রোমান সিনেটে এই পদ্ধতি চালু ছিল। সাধারণতৎ সাদা এবংকালো বল হ্যাঁ এবং না বোধক ভোটে ব্যবহৃত হতো।
উল্লেখ্য, কোন কোন সংগঠন এখনো নতুন সস্য গ্রহণে ভোটাভুটিতে সাদা এবং কালো বলের ব্যবহার করে থাকে।
বর্তমানে গণতান্ত্রিক দেশসমূহে কাগজের ব্যালট বা ব্যালট পেপার নির্বাচনে ভোটারদের ছদ্মনাম হিসেবে কাজ করে এবং এভাবেই অধিকাংশ ভোটারের ইচ্ছ প্রকাশ পায়।
গোপন ভোটদানের পদ্ধতি হিসেবে ব্যালট পেপার ব্যবহারের প্রথম প্রামাণিক ঘটনা ঘটে ১৬২৯ সালে আমেরিকার চার্চে। অতঃপর আমেরিকান ঔপনিবেশে এই ব্যালট পেপারের প্রচলন ছড়িয়ে পড়ে। এরপরে ধীরে ধীরে ব্যালট পেপারের অনেক সংস্কার হয় এবং পরবর্তীতে একই কলামে বিভিন্ন দলের প্রতীক সংযুক্ত হয়, যা সাধারণতঃ বর্ণমালা অনুযায়ী সংযুক্ত হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৫০ সালের মধ্যে এই ব্যালট প্রথা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।
সাধারণভাবে নির্বাচন বলতে বুঝায়, ‘একাধিক পদপ্রার্থী থেকে ভোটদানের মাধ্যমে একজনকে নির্বাচিত করা।’ যে বা যারা পদের মুখাপেক্ষী তারা তাদের পদের জন্য মানুষের নিকট তাদের মুখাপেক্ষীতা প্রকাশ করে থাকে তখন মানুষ তাদের বিবেচনায় যাকে উপযুক্ত মনে করে তাকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে। উল্লেখ্য, নির্বাচিত ব্যাক্তি পদের মুখাপেক্ষী, পদ নির্বাচিত ব্যক্তির মুখাপেক্ষী নয়।
আর ভোট হচ্ছে এমন একটি সিদ্ধান্ত নেয়ার পদ্ধতি যাতে প্রত্যেক ব্যক্তি পারে তার পছন্দনীয়কে চিিহত করতে বা প্রকাশ করতে এবং যে পছন্দের সংখ্যা বেশী হয়, তাই গ্রহণযোগ্য হয়।
উল্লেখ্য, সংবিধানে ভোটদানের জন্য কিছু শর্ত-শারায়েত করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- দু’টি (১) বাংলাদেশের নাগরিক হওয়া, (২) ভোটদাতার বয়স আঠারো বছরের কম নয়।
আর এক্ষেত্রে যে অযোগ্যতা, তা হলো- (১) কোন যোগ্য আদালত তাকে অপ্রকৃতিস্থ বলে ঘোষণা করেনি। (২) ১৯৭২ সালের বাংলাদেশে যোগসাজসকারী (বিশেষ ন্যায় পীঠ) আদেশের অধীন কোন অপরাধের জন্য দ-িত হননি। বলার অপেক্ষা রাখে না, এসব শর্ত দ্বারা ইসলাম পালিত হয় না।
প্রকৃতপক্ষে ভোট-নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি। কেননা ভোট-নির্বাচনের মাধ্যমেই গণতন্ত্র বাস্তবায়িত হয়। আর ভোট-নির্বাচনের প্রয়োজন তখনই হয় যখন কোন পদে একাধিক ব্যাক্তি প্রার্থী হয়। একাধিক প্রার্থীর মধ্যে উক্ত পদ একজনকে দেয়ার লক্ষেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর উক্ত নির্বাচন ভোট প্রয়োগের মাধ্যমেই বাস্তবায়িত হয়।
উল্লেখ্য, গণতন্ত্রের মূল বিষয় বা ভিত সমূহের মধ্যে অন্যতম হলো সার্বভৌমত্ব জনগণের। অর্থাৎ জনগণই হচ্ছে গণতন্ত্রের মূল অথবা গণতন্ত্রে জনগণই সকল সার্বভৌমত্বের মালিক।
স্মরণীয়, আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র যেহেতু বিশাল এলাকা ও জনগোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত সেহেতু জনসাধারণের পক্ষে সরকার পরিচালনায় প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ সম্ভব নয়। তাই জনগণ ভোটদানের মাধ্যমে তাদের সার্বভৌম ক্ষমতা ব্যবহার করে প্রতিনিধি নির্বাচন করে পরোক্ষভাবে সরকার পরিচালনায় অংশগ্রহণ করে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এ কথাই স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে, ‘নির্বাচন’ যার ইংরেজী হচ্ছে ‘ইলেকশন’ (ঊষবপঃরড়হ) যা গ্রীক ‘এ্যালোজি’ (ঊষড়মব) শব্দ থেকে উৎসারিত বা উৎপত্তি লাভ করেছে। যা পরবর্তীতে খ্রীষ্ট ধর্মের সাথে বিশেষভাবে সম্পৃক্ত খ্রীষ্ট ধর্মের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। যার সাথে ইসলামের কোন দিক থেকে কোন প্রকার সম্পর্ক নেই। বরং যা জনগণকে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক বলে প্রতিপন্ন করে।
অতএব, যারা ভোট-নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে বা তা সমর্থন করে, তারা সার্বভৌমত্ব যে জনগণের, আল্লাহ পাক-এর নয়, তা ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায়ই হোক মেনে নেয় এবং ভোট দানের মাধ্যমে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। তাহলে এরূপ ভোটকে স্বাক্ষ্য বা শরীয়ত সম্মত বলে বিশ্বাস করা কুফরী নয় কি?
উপরোক্ত বিস্তারিত ও দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ইসলাম হচ্ছে- মহান আল্লাহ পাক-এর পক্ষ হতে তাঁর পিয়ারা হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ওহীর মাধ্যমে নাযিলকৃত একমাত্র, সনতুষ্টিপ্রাপ্ত, মনোনীত ও পরিপূর্ণ দ্বীন। যা ক্বিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। আর গণতন্ত্র তথা ভোট-নির্বাচন হচ্ছে- ইহুদী-খ্রিস্টান তথা বিধর্মীদের দ্বারা রচিত তথা মানবরচিত একটি অপূর্ণ শাসন ব্যবস্থা মাত্র। যার সাথে ইসলামের ও ওহীর অর্থাৎ আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কোনই সম্পর্ক নেই। ভোট-নির্বাচন সেই গণতন্ত্রেরই একটি প্রক্রিয়া। যদি তাই হয়ে থাকে তবে ভোট-নির্বাচন কি করে শাহাদত বা স্বাক্ষ্য তথা ইসলাম সম্মত বলা যেতে পারে?
মূলতঃ গণতন্ত্র তথা ভোট-নির্বাচনকে শাহাদত বা স্বাক্ষ্য তথা ইসলাম সম্মত বলার অর্থ হলো ইসলামকে মানব রচিত মতবাদ হিসেবে আর বিধর্মীদের মতবাদ গণতন্ত্রকে ওহী হিসেবে সাব্যস্ত করা; যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
অতএব, পটিয়া খারিজী মাদ্্রসার মৌলভী ছাহেবরা যে লিখেছে- “শরীয়তের দৃষ্টিতে ভোট হচ্ছে শাহাদাত বা স্বাক্ষ্য” তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণই কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের খিলাফ ও কুফরীমূলক প্রমাণিত হলো। ছহীহ্্ ফতওয়া হলো শরীয়তের দৃষ্টিতে ভোট শাহাদত বা স্বাক্ষ্য নয়, শরীয়তের দৃষ্টিতে ভোটকে শাহাদত বা স্বাক্ষ্য বলা কাট্টা কুফরী।
ভোট শাহাদত বা স্বাক্ষ্য নয়, ভোটকে শাহাদত বা স্বাক্ষ্য বলে তারা কুফরী করেছে
সাক্ষী প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে উল্লেখ করেন,
یایها الذین امنوا کوتوا قومین بالقسا شهداء لله ولو علی انفسکم او الوالدین والاقربین ان یکن غنیا او فقیرا فالله اولی بهما فلا تتبعوا الهوی ان
অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইনছাফের উপর কায়িম থাক, আল্লাহ পাক-এর জন্য স্বাক্ষ্য দেয়ার ব্যাপারে। যদি তা তোমাদের নিজেদের, পিতা-মাতার ও নিকট আত্মীয়দের বিরুদ্ধেও হয়। চাই সে ধনী হোক বা দরিদ্র হোক। অতঃপর আল্লাহ্্ পাকই তাদের প্রতি অধিক কল্যাণকামী। তোমরা ইনছাফ করতে গিয়ে নফ্সের অনুসরণ করোনা। আর যদি তোমরা বর্ণনায় বক্রতা অবলম্বন কর অথবা সঠিক স্বাক্ষ্য দেয়া হতে বিরত থাক, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ্্ তায়ালা তোমাদের কাজ সম্পর্কে সমধিক জ্ঞাত।” (সূরা নিসা-১৩৫)
আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন,
یایها الذین امنوا کونوا فومین لله شهداء بالقسط ولایجر منکم شنان قوم علی الا تعد لوا اعدلوا هو اقرب للتقوی واتقوا الله ان الله خبیر بما تعملون.
অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ পাক-এর জন্য সঠিক স্বাক্ষ্য দেয়ার ব্যাপারে ইন্্ছাফের উপর কায়িম থাক এবং কোন সম্প্রদায়ের শত্রুতা যেন তোমাদেরকে ন্যায় বিচার করা হতে বিরত না রাখে, তোমরা ন্যায় বিচার কর। এটি তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতির অধিক নিকটবর্তী এবং তোমরা আল্লাহ্্ পাককে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তোমাদের কাজ সম্পর্কে সমধিক অবহিত।” (সূরা মায়িদা-৮)
শানে নুযুল: একদা একজন ধনী ও একজন গরীব লোক আল্লাহ্্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে পরস্পর পরস্পরকে অপরাধের জন্য দোষারোপ করতে লাগলো। অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গরীবকে হক্বের উপর দেখে তার পক্ষে রায় দিলেন। তখন আল্লাহ্্ পাক উপরোক্ত আয়ত শরীফ নাযিল করলেন।
কারো মতে ত্ব’মা ইবনে আবরাক্ব নামক এক ব্যক্তির পক্ষে তার সম্প্রদায়ের লোকেরা তার বিরুদ্ধবাদীদের বিপক্ষে মিথ্যা ও বাতিল সাক্ষী দিয়েছিল। তাদের সম্পর্কে উপরোক্ত আয়াত শরীফ নাযিল হয়।
শাহাদাত বা স্বাক্ষ্য সম্পর্কিত আয়াত শরীফের সঠিক ব্যাখ্যা
উপরোক্ত আয়াত শরীফে আল্লাহ পাক প্রতি ক্ষেত্রে, সর্বাবস্থায়, সকলের জন্যই, চাই সে আত্মীয় বা অনাত্মীয়, শত্রু বা মিত্র, নিকটবর্তী বা দূরবর্তী যে কেউ হোক না কেন, এমন কি নিজের বিরুদ্ধে হলেও ইন্্ছাফের সাথে স্বাক্ষ্য প্রদান করার জন্য আদেশ করেছেন। অনুরূপ “সূরা মায়িদার” ৮নং আয়াত শরীফেও সঠিক বা ইন্ছাফের সাথে স্বাক্ষ্য প্রদান করার জন্য আল্লাহ পাক নির্দেশ করেছেন।
সংজ্ঞা: আর সাধারণ স্বাক্ষ্য হলো, অতীতের কোন সুনির্দিষ্ট কার্যাবলীর উপর বিবরণ পেশ করা। যার সাথে ভোট প্রথার মিল নেই।
ভোটকে শাহাদত বা স্বাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করলে কুরআন শরীফকে অস্বীকার করা হয়
আল্লাহ্্ পাক ‘সূরা বাক্বারার’ ২৮২ নং আয়াত শরীফে বলেন,
واستثهدوا شهیدین من رجالکم فان لم یکونا رجلین فرجل وامراتن.
অর্থঃ- “তোমাদের পুরুষদের মধ্য হতে দু’জন সাক্ষী দাঁড় করাও। যদি দু’জন পুরুষ না পাওয়া যায় তাহলে একজন পুরুষ ও দু’জন মহিলার স্বাক্ষ্য গ্রহণ কর।”
অর্থাৎ ইসলামে দু’জন মহিলার স্বাক্ষ্য একজন পুরুষের সমান।
আর ভোট প্রথায় একজন মহিলা একজন পুরুষের সমান যা কুরআন শরীফের আয়াতের খিলাফ। তাহলে ভোট প্রথা কি করে ইসলামের নামে বা দৃষ্টিতে স্বাক্ষ্য বলে গণ্য হতে পারে? ভোট প্রথাকে স্বাক্ষ্য হিসেবে হুকুম দেয়া বা বলা সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম।
এখানে গণতন্ত্রীরা ভোটকে স্বাক্ষ্য বলে মুসলমানদেরকে কুরআন শরীফের খিলাফ বিশ্বাস স্থাপন ও আমল করায়ে সরাসরি কাফির বানাতে চায়। অর্থাৎ আল্লাহ্্ পাক বলেন, ১ জন পুরুষ ২ জন মহিলার সমান স্বাক্ষ্য হিসেবে, আর গণতন্ত্রীরা বলে, ১ জন পুরুষ ১ জন মহিলা স্বাক্ষ্য হিসেবে সমান।
এখন যদি কোন মুসলমান আল্লাহ পাক-এর আদেশ মান্য না করে গণতন্ত্রীদের মত মেনে নেয় তাহলে সে কি কে ঈমানদার থাকতে পারে অর্থাৎ সে কাট্টা কাফির হবে। আর যে কাফির হয় সে চির জাহান্নামী হবে।
অতএব, ইসলামের নামে ভোটকে শাহাদত বা স্বাক্ষ্য বলা কাট্টা হারাম ও কুফরী। শরীয়তে হারামকে হালাল বলা কুফরী। আর যে কুফরী করে সে চির জাহান্নামী হয়।
শুধু তাই নয়, পটিয়া-খারিজী মাদ্্রাসার মৌলভী ছাহেবদের উপরোক্ত বক্তব্য সরাসরি মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীবের প্রতি সুস্পষ্ট মিথ্যারোপের শামিল কারন “শরীয়তের দৃষ্টিতে ভোট হচ্ছে শাহাদত বা স্বাক্ষ্য” তাদের একথার অর্থ হলো “মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব, কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে ভোটকে শাহাদত বা স্বাক্ষ্য বলে উল্লেখ করেছেন।” নাউযুবিল্লাহ। অথচ কুরআন-সুন্নাহর কোথাও ভোটকে স্বাক্ষ্য বলা তো দুরের কথা, ভোটের কোন আলোচনাই কুরআন-সুন্নাহয় নেই।
আল্লাহ্্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি মিথ্যারোপ করার পরিণাম
আল্লাহ পাক এ সম্পর্কে ইরশাদ করেন,
فمن اظلم ممن افتری علی الله کذبا لیضل الناس بغیر علم ان لله لا یهدی القوم الظلمین.
অর্থঃ- “অতএব, সে ব্যক্তি অপেক্ষা বড় যালিম আর কে হবে, যে ব্যাক্তি বিনা প্রমাণে আল্লাহ্্ পাক-এর প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে, মানুষদেরকে বিভ্রান্ত বা পথভ্রষ্ট করার উদ্দেশ্যে; নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়েত দান করেন না।” (সূরা আনয়াম-১৪৪)
অর্থাৎ যারা আল্লাহ পাক-এর নামে মিথ্যা বলে তারা যালিম, তারা গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট। সেজন্য তারা আল্লাহ পাক-এর নামে মিথ্যা বলে মানুষদেরকে বিনা দলীলে গোমরাহ করতে চায়।
আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন,
ومن اظلم ممن افتری علی الله الکذب وهو یدعی الی الاسلام والله لایهدی القوم الظلمین.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি ইসলামের প্রতি আহুত হয়েও আল্লাহ পাক সম্পর্কে মিথ্যা বলে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে? আর আল্লাহ পাক যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়েত দান করেননা।” (সূরা ছফ-৭)
অর্থাৎ আল্লাহ পাক সম্পর্কে মিথ্যা বলা হচ্ছে সবচাইতে বড় যুলূম। কাজেই, যে বা যারা মুসলমান হওয়ার পরও আল্লাহ পাক-এর নামে মিথ্যা বলে সে বা তারা চরম ও বড় যালিম এবং যালিম হওয়ার কারণে তারা হিদায়েত থেকে মাহরূম হয়ে থাকে। অর্থাৎ তারা চরম গোমরাহ। তাই এদের ফতওয়া শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়।
আল্লাহ পাক এ সম্পর্কে আরো ইরশাদ করেন,
ولاتقولوا لما تصف السنتکم الکذب هذا حال وهذا حرام لتفتروا علی الله الکذب ان الذین یفترون علی الله الکذت لایفلحون.
অর্থঃ- “তোমরাদের মুখ থেকে সাধারণতঃ যেসব মিথ্যা বের হয়ে আসে, তেমনি করে তোমরা আল্লাহ পাক-এর প্রতি মিথ্যারোপ করে বলোনা যে, (আল্লাহ পাক) এটা হালাল এবং ওটা হারাম (করেছেন), নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ পাক-এর প্রতি মিথ্যারোপ করে, তাদের জন্য কামিয়াবী নেই।” (সূরা নহল-১১৬) অর্থাৎ যারা আল্লাহ পাক-এর নামে মিথ্যা বলে তাদের জন্য কামিয়াবী তো নেই। শুধু তাই নয়, বরং তাদের জন্য কঠিন শাস্তি মৃত্যুদ- রয়েছে।
আল্লাহ পাক এ সম্পর্কে কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ করেন,
لو تقول علینا بعض الاقاویل لاخذنا منه بالیمین. ثم لقطعنا منه الوتین. فما منکم من احد عنه حجزین.
অর্থঃ- “কেউ যদি আমার নামে বানিয়ে কোন কথা বলে, তবে আমি তাঁর দক্ষিণ হস্ত ধরে তার গ্রীবা বা প্রাণ রগ কেটে দিব, তোমাদের কেউই এতে বাধা দিতে পারবে না।” (সুরা হাক্কা-৪৪, ৪৫, ৪৬)
উপরোক্ত আয়াত শরীফের শানে নুযূল সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে যে, কাফির, মুশরিকরা বলতো, নূরে মুজাস্্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাকি আল্লাহ পাক-এর নাম মুবারকে বানিয়ে বানিয়ে তিশ্যা বলেন। (নাউযুবিল্লাহ) এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ পাক এ আয়ত শরীফ নাযিল করে জানিয়ে দিলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনই আল্লাহ পাক-এর নাম মুবারকে মিথ্যা বলেন না। শুধু এতটুকুই না আরো জানিয়ে দিলেন, যারা আল্লাহ পাক-এর নাম মুবারকে মিথ্যা বলবে তাদের শাস্তি হলো মৃত্যুদ-।
অতএব, “যারা আল্লাহ পাক ও আল্লাহ পাক-এর কালাম কুরআন শরীফ সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলে। অর্থাৎ আল্লাহ পাক যা বলেননি তা বলেছেন বলে এবং কুরআন শরীফে যা উল্লেখ নেই তা আচে বলে”- তারা চরম যালিম, মুরতাদ ও কাফির।
কাজেই, “আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ভোটকে স্বাক্ষ্য বলে উল্লেখ করেছেন” পটিয়ার খারিজী মৌলভী ছাহেবদের এ বক্তব্য আল্লাহ্্ পাক ও কুরআন শরীফের নামে সুস্পষ্ট মিথ্যারোপ ও কাট্টা কুফরী। কারণ, কুরআন শরীফের কোথাও আল্লাহ পাক অনুরূপ কথা বলেননি।
অনুরূপ কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের অসংখ্য স্থানে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি মিথ্যারোপ করার ভয়াবহ পরিণতি ও কঠিন আযাবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নামে মিথ্যা কথা বলে বা বানিয়ে বানিয়ে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করে সে অবশ্যই কুফরী করে কঠিন আযাবের উপযুক্ত হয় আর যে আযাবের উপযুক্ত হয় সেই চির জাহান্নামী হয়।
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক সূরা নহলের ১১৩ নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,
لقد جاءهم رسول منهم فکذ بوه فاخذهم العذاب وهم ظلمون.
অর্থঃ- “তাদের নিকট তাদের মধ্য থেকেই একজন রসূল আগমন করেছিলেন, অনন্তর তারা (কাফিরেরা) তাঁর প্রতি মিথ্যারোপ করলো। তখন আযাব এসে তাদেরকে পাকড়াও করলো এবং নিশ্চিত তারাই ছিল যালিম।”
এ আয়াত শরীফ এটাই প্রমাণ করে যে, যারা কাফির ও যালিম তারা রসূলের প্রতি মিথ্যারোপ করে অর্থাৎ রসূল যা বলেন নাই তা বলেছেন বলে ও রসূল যা বলেছেন তা কলেন নাই বলে, মুলতঃ এদের জন্যই রয়েছে কঠিন আযাব বা শাস্তি। আর যারা আযাবের উপযুক্ত তারাই জাহান্নামী। তাই আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফে উম্মতদেরকে এ ব্যাপারে কঠোরভাবে সতর্ক করে দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابن عباس رضی الله تعالی عنه قال قال رسول الله صلی الله علیه وسلم اتقوا الحدیث عنی الا ما علمتم فمن کذب علی متعمدا فلیتبوأ مقعده من النار.
অর্থঃ- “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার পক্ষ হতে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করার ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। যে পর্যন্ত না তা তোমরা আমার বলে নিশ্চিত হবে। কেননা যে ব্যক্তি আমার প্রতি মিথ্যারোপ করবে, সে যেন (দুনিয়ায় থাকতেই) তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নিল।” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ্, মিশকাত)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن عبد الله بن عمرو رضی الله تعالی عنه قال قال رسول الله صلی الله علیه وسلم بلغوا عنی ولو ایة وحدثوا عن بنی اسرائیل ولاحرج ومن کذب علی متعمدا فلیتبوأ مقعده من النار.
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার পক্ষ হতে মানুষের নিকট পৌঁছে দাও যদি একটি আয়াত শরীফও হয়। বণী ইসরাঈলের নিকট হতে শুনা কথা বলতে কোন আপত্তি নেই। তবে যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় আমার নামে মিথ্যা বললো, সে যেন তার স্থান জাহান্নামেই নির্ধারণ করে নিলো।” (বুখারী, মিশকাত)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن سمرة بن جندب والمغیرة بن شعبة رضی الله تعالی عنهما قال قال رسول الله صلی الله علیه وسلم من حدث عنی بحدیث یری انه کذب فهو احد الکاذبین.
অর্থঃ- “হযরত সামুরা ইবনে জুনদুব ও মুগীরা ইবনে শু’বাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আমার নামে এমন কথা বলে বললো যা সে মিথ্যা মনে করে তবে সেও মিথ্যুকদের একজন।” (মুসলিম, মিশকাত)
আর মিথ্যাবাদীদের সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন,
لعنت الله علی الکذبین.
অর্থঃ- “মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহ পাক-এর লা’নত।” (সূরা আলে ইমরান-৬১)
والله یشهد ان المنفقین لکذبون.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাকই সাক্ষী যে, নিশ্চয়ই মুনাফিকরা মিথ্যাবাদী।” (সূরা মুনাফিকুন-১)
উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফসমূহ দ্বারা অকাট্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, যারা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নামে মিথ্যা কথা বলে বা বানিয়ে বানিয়ে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করে অর্থাৎ আল্লাহ পাক-এর হাবীব যা বলেন নাই তা বলেছেন বলে ও যা বলেছেন তা বলেন নাই বলে তারা চরম যালিম, মিথ্যাবাদী, মুনাফিক ও কাট্টা কাফির। তাদের স্থান হচ্ছে জাহান্নাম। কারন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে যে মিথ্যা বলে সে কুফরী করে, আর যে কুফরী করে সে মুরতাদ হয়ে যায়।
আর শরীয়তের ফতওয়া হলো, যে সমস্ত মুসলমান কুফরী করে তারা মুরতাদ হয়ে যায়। আর যারা মুরতাদ হয়ে যায় তাদের একমাত্র শাস্তি হচ্ছে মৃত্যদ-। শরীয়তে তাদের তওবা করার জন্য তিনদিন সময় দেয়া হয়েছে অন্যথায় তাদের শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদ-।
কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের অপব্যাখ্যাকরীরা জাহান্নামী
উল্লেখ্য, কুরআন শরীফের তাহ্্রীফ, তাবদীল অর্থাৎ পরিবর্তন, পরিবর্ধন যেমন নাজায়িয ও কুফরী তেমনি তাফসীর বির রায় তথা মনগড়া তাফসীর বা ব্যাখ্যা করাও নাজায়িয ও কুফরী।
এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابن عباس رضی الله تعالی عنه قال قال رسول الله صلی الله علیه وسلم من قال فی القران برایه فلیتبوأ مقعده من النار. وفی روایة من قال فی القران بغیر علم فلیتبوأ مقعده من النار.
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ সম্পর্কে মনগড়া কথা বলে, যে যেন (দুনিয়ায় থাকতেই) তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেয়। অপর রেওয়ায়েতে বর্ণিত রয়েছে, যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ সম্পর্কে ইল্্ম ব্যতীত অর্থাৎ বিনা প্রমাণে মনগড়া কোন কথা বলে, সে যেন (দুনিয়ায় থাকতেই) তার স্থান দোযখে করে নেয়।” (তিরমিযী, মিশকাত, মিরকাত)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
من فسر القر ان برایه فقد کفر.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি কুরআন শরীফের মনগড়া ব্যাখ্যা করলো, সে কুফরী করলো।” ইহ্্ইয়াউ উলূমিদ্দীন)
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابن عباس رضی الله تعالی عنه قال قال رسول الله صلی الله علیه وسلم اتقوا الحدیث عنی الا ماعلمتم فمن کذب علی متعمدا فلیتبوأ
مقعده من النار.
অর্থঃ- “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার পক্ষ হতে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করার ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। যে পর্যন্ত না তা তোমরা আমার বলে নিশ্চিত হবে। কেননা যে ব্যক্তি আমার প্রতি মিথ্যারোপ করবে, সে যেন (দুনিয়ায় থাকতেই) তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নিল।” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত)
মূলকথা হলো উপরোক্ত বিস্তারিত ও দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবে প্রমাণিত হরো যে, কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের কোথাও ভোটকে শাহাদত বা স্বাক্ষ্য বলে উল্লেখ করা হয় নাই। পটিয়া খারিজী মাদ্্রাসার মৌলভী ছাহেবরা শরীয়তের দৃষ্টিতে “ভোটকে শাহাদত বা স্বাক্ষ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে” একথা বলে একদিক থেকে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব-এর প্রতি মিথ্যরোপ করেছে, অপর দিক থেকে কুরআন সুন্নাহর সুস্পষ্ট অপব্যাখ্যা করেছে। যার প্রত্যেকটাই কাট্টা কুফরী ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ।
(অসমাপ্ত)