প্রকাশিত ফতওয়াসমূহ:
[সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীনের জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। আল্লাহ্ পাক-এর অশেষ রহ্মতে “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব-এর অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীল ভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা) ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যায়) এবং ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা) পেশ করার পর-
২৭তম ফতওয়া হিসেবে
“ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় আল্লাহ পাক-এর দরবারে বেশুমার শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
উল্লেখ্য, হিজরী পঞ্চদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ও ইমাম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর প্রতিষ্ঠিত ও পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশিত যামানার তাজদীদী মুখপত্র ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত। এ পত্রিকায় এ যাবৎ যত লিখা বা ফতওয়া প্রকাশ বা পত্রস্থ করা হয়েছে, হচ্ছে ও হবে তার একমাত্র উদ্দেশ্য মানুষের ঈমান-আক্বীদা ও আমল পরিশুদ্ধ করা। এ জন্যেই মূলতঃ যুগে যুগে প্রেরিত হয়েছেন এক লক্ষ চব্বিশ হাজার মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম। এবং সর্বশেষ নবী-রসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অতঃপর প্রত্যেক শতাব্দীর মাঝে প্রেরিত হয়ে আসছেন তাঁর খাছ নায়িব বা ওয়ারিছ তথা যামানার মুজাদ্দিদগণ।
কাজেই, বান্দা ও উম্মত যদি দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দীদার ও সন্তুষ্টি লাভ করতে চায়, রহমত ও নাজাত পেতে চায়, হাক্বীক্বী বান্দা ও হাক্বীক্বী উম্মত হতে চায়, প্রকৃত মু’মিন, মুসলমান ও মুত্তাক্বী হতে চায় তাহলে তার জন্য যামানার মুজাদ্দিদের অনুসারী হওয়া ব্যতীত বিকল্প কোন পথ নেই। সেটা কাছে থেকে হোক কিংবা দূরে থেকে হোক। কারণ আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,
واتبع سبيل من اناب الى.
অর্থঃ- “ঐ ব্যক্তির পথ অনুসরণ করে চলো যিনি আমার দিকে রুজু রয়েছেন।” (সূরা লুক্বমান-১৫)
স্মরণীয় যে, আজকে মুসলমানরা তাদের আদর্শ-ঐতিহ্য ভুলে গিয়ে বিধর্মী-বিজাতীয়দের তর্জ-তরীক্বা, আচার-আচরণ গ্রহণে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাদের এই নাজুক অবস্থা কাটিয়ে ইসলামী আদর্শে আদর্শবান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আহবান করছেন যামানার মহান মুজাদ্দিদ মুদ্দা জিল্লুহুল আলী। সুতরাং তাঁর মুবারক আহবানে সাড়া দেয়ার সময় এখনই। এ লক্ষ্যে ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ পত্রিকার পাঠক, গ্রাহক, শুভাকাঙ্খী ও শুভানুধ্যায়ীগণ ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এর আকর্ষণীয় ও উল্লেখযোগ্য বিভাগ “সুওয়াল-জাওয়াব” ও “ফতওয়া” বিভাগে ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে শরীয়তের সঠিক ফায়ছালা জানার জন্য অসংখ্য সুওয়াল প্রেরণ করেন। যেহেতু আল্লাহ পাক রাব্বুল আ’লামীন কালামে পাকে ইরশাদ করেন,
فسئلوا اه الذكر ان كنتم لا تعلمون.
অর্থঃ- “যদি তোমরা না জান, তবে আহ্লে যিকির বা আল্লাহওয়ালাগণকে জিজ্ঞেস করে জেনে নাও।” (সূরা নহল-৪৩ ও সূরা আম্বিয়া-৭)
তাই প্রেরিত সুওয়ালসমূহের প্রেক্ষিতে “ইসলামের নামে গণতন্ত্র, নির্বাচন, ভোট ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” ইসলামের দলীল- কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে পেশ করা হলো।
প্রকৃত বন্ধুর পরিচয়
মূলতঃ আমাদের সাথে কারো যেরূপ বন্ধুত্ব নেই, তদ্রুপ নেই বিদ্বেষ। অর্থাৎ যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তসম্মত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বিদ্বেষ নেই। আর যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তের খিলাফ বা বিপরীত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বন্ধুত্ব নেই। কারণ মুসলমানের বন্ধুত্ব বা বিদ্বেষ একমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর জন্যেই হতে হবে।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে,
عن ابى هريرة رضى اله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من احب ليه وابغض لله واعطى لله واعطى لله ومنع لله فقد استكمل الايمان.
অর্থঃ- “হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক-এর (সন্তুষ্টি লাভের) জন্যে মহব্বত বা বন্ধুত্ব করে, বিদ্বেষ পোষণ করে, আদেশ করে, নিষেধ করে, তার ঈমান পরিপূর্ণ।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী)
বস্তুতঃ মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার প্রতিটি লিখা, বক্তব্য, সুওয়াল-জাওয়াব, ফতওয়া, প্রতিবাদ, প্রতিবেদন, মতামত ইত্যাদি উপরোক্ত হাদীছ শরীফের মূলনীতির ভিত্তিতেই প্রকাশিত হয়ে থাকে।
কাজেই “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় “ইসলামের নামে গণতন্ত্র, নির্বাচন, ভোট ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” দেয়ার মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হলো সত্যান্বেষী বা হক্ব তালাশী মুসলমানগণের নিকট সঠিক বা হক্ব বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা। যার মাধ্যমে প্রত্যেকেই তাদের ঈমান-আক্বীদা ও আমল হিফাযতের মাধ্যমে ইহ্লৌকিক ও পারলৌকিক ইত্মিনান ও নাযাত লাভ করতে পারে।
মূলতঃ মানুষ মাত্রই ভুল হওয়া স্বাভাবিক, তাই এক মু’মিন অপর মু’মিনের ভুল ধরিয়ে বা শুধরিয়ে দেয়া ঈমানী দায়িত্ব। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে,
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم المؤمن مرأة المؤمن اذا رأى فيه عيبا اصلحه.
অর্থঃ- “হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, এক মু’মিন অপর মু’মিনের জন্যে আয়না। যখন সে তার মধ্যে কোন দোষত্রুটি দেখবে তখন সে তাকে সংশোধন করে দিবে।” (বুখারী, আবূ দাউদ, মিশকাত)
উপরোক্ত হাদীছ শরীফের আলোকে অসংখ্য, অগণিত পাঠকগণের পূণঃপূণঃ অনুরোধের প্রেক্ষিতে মুসলমানদের আক্বীদা ও আমল হিফাযতের লক্ষ্যে ইসলামের নামে গণতন্ত্র, নির্বাচন, ভোট ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া প্রদান করা হলো। যাতে করে সত্যান্বেষী, মুসলমানগণ এ সম্পর্কে আপত্তিকর বক্তব্যসমূহের সঠিক শরয়ী ফায়সালা অবগত হন, যার ফলশ্রুতিতে সকলেই উক্ত আপত্তিকর আক্বীদা ও বক্তব্যসমূহ থেকে নিজেদের ঈমান ও আমলের হিফাযত করে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করতে পারেন।
সুওয়ালকারীদের নাম-ঠিকানা
সাইয়্যিদ মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন, ঢাকা
মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন, মুহম্মদপুর, ঢাকা
মুহম্মদ ছিদ্দীকুল আলম, চান্দিনা, কুমিল্লা
মুহম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, শালিখা, মাগুরা
মুহম্মদ আফতাবুদ্দীন, কোনাবাড়ী, গাজিপুর
মুহম্মদ মুহসিনুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
মুহম্মদ হারুনূর রশীদ, মাহিগঞ্জ, রংপুর
শাফিয়ী আহমদ, রাজারহাট, কুড়িগ্রাম
মুহম্মদ সদরুল আমীন গোলাপগঞ্জ, সিলেট
মুহম্মদ আশাদুজ্জামান, পলাশবাড়ী, গাইবান্ধা
মুহম্মদ আশফাকুর রহমান, সিংড়া, নাটোর
মুহম্মদ ইছহাকুর রহমান, কসবা, বি.বাড়িয়া
মুহম্মদ শফিকুছ্ ছালেহীন, মতলব, চাঁদপুর
মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান, প্রভাকরদী, এন.গঞ্জ
মুহম্মদ হারিছুর রহমান, রাজপাড়া, রাজশাহী
মুহম্মদ কাওছার হুসাইন, বানারীপাড়া, বরিশাল
মুহম্মদ হাদীউল ইসলাম, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম
মুহম্মদ কামরুজ্জামান, কুটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ
মুহম্মদ আবুল কাশেম, আক্কেলপুর, জয়পুরহাট
মুহম্মদ হাবীবুল্লাহ, কালীহাতি, টাঙ্গাইল
সুওয়াল:
বর্তমান সময় যে সমস্ত “সংসদ নির্বাচন” অনুষ্ঠিত হয়। তাতে অন্যান্য দলগুলোর মতো নামধারী ইসলামী দলগুলোও সক্রিয়ভাবে উক্ত নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে তথা প্রার্থী দেয়। ইসলামের নামে যারা নির্বাচনে অংশ নেয় তারা সাধারণতঃ প্রচার করে থাকে যে, গণতন্ত্র আর ইসলাম একই বিষয় এবং তারা যে গণতন্ত্র করছে, সেটা হচ্ছে ইসলামী গণতন্ত্র। তারা গণতন্ত্রের ভিত্তি ভোটকে আমানত, শুপারিশ, উকিল নিয়োগ, স্বাক্ষ্য ইত্যাদি বলে প্রচার করে থাকে।
কেউ কেউ আবার ইসলামী দলকে ভোট দেয়া ফরয-ওয়াজিব বলে থাকে। আরো বলে থাকে যে, ইসলামী দলের প্রার্থীকে ভোট দিলে জান্নাতের টিকেট পাওয়া যাবে। যেমন জামাত নেতারা কিছুদিন পূর্বে একটি দৈনিক পত্রিকার সাক্ষাতকারে বলেছে, ইসলাম ও গণতন্ত্র একই বিষয়।
বায়তুল মুকাররমের খতীব ওবায়দুল হক বলেছে, “ভোট দেয়া আল্লাহ পাক-এর নির্দেশ অর্থাৎ ফরয। আল্লাহ পাক বলেন, ভোট একটি আমানত। আল্লাহ পাক-এর হাবীব বলেছেন, সৎ লোককে ভোট দিতে হবে।” (দৈনিক সংগ্রাম ১লা জুলাই-২০০৬)
মাহিউদ্দিন খান তার মাসিক মদীনা ডিসেম্বর/৯৯ সংখ্যায় নির্বাচন ভিত্তিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোট দান সম্পর্কিত একটি প্রশ্নের উত্তরে লিখেছে, (ক) ছহীহ্ অর্থে মুসলমানদের প্রকৃত শাসক হচ্ছে পবিত্র কুরআন এবং রসূলের সুন্নাহ্। (খ) প্রচলিত যে কোন শাসন ব্যবস্থায় যদি কুরআন-সুন্নাহ্র প্রাধান্য মেনে নেয়া হয় তবে তা মুসলিম জনগণ বিনা দ্বিধায় মেনে নিতে পারেন। (গ) ভোটের মাধ্যমে নেতা বা শাসক নির্বাচনের বর্তমান যে পদ্ধতি এটা অংকুরিত হয়েছে, ইসলামী শুরা পদ্ধতির মধ্য থেকে। সুতরাং এই পদ্ধতিতে ভোটের রাজনীতি ইসলামে বৈধ নয় এ কথা বলা যাবে না। (ঘ) এ যুগের ভোট প্রদান বাইয়াতের বিকল্প বিবেচিত হতে পারে।
অনুরূপ হাটহাজারী খারেজী মাদ্রাসার মুখপত্র মাসিক মুহীনুল ইসলামের সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর’ ০৬ সংখ্যায়ও ভোট-নির্বাচন সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছে, (ক) গণতন্ত্র বা নির্বাচন দুই প্রকার। (১) পাশ্চত্য গণতন্ত্র বা নির্বাচন। (২) ইসলামী গণতন্ত্র বা নির্বাচন। (খ) খুলাফায়ে রাশেদীন ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছিলেন (গ) পদপ্রার্থী হওয়া জায়িয। (ঘ) কুরআন সুন্নাহয় ভোটকে স্বাক্ষী, আমানত, সুপারিশ ও প্রতিনিধি নিয়োগ বলে উল্লেখ করা হয়েছে ইত্যাদি অনেক ভুল তথ্য তারা উল্লেখ্য করেছে। পটিয়া খারেজী মাদ্রাসার মুখপত্র “আত্ তাওহীদ” ডিসেম্বর/৯৬, জানুয়ারী/৯৭, জুলাই-আগস্ট/৯৭
সংখ্যায় ভোট-নির্বাচন এমনকি ভোট বেচা-কেনা করাকেও জায়িয ফতওয়া দিয়েছে।
আর উল্লিখিত বিষয়ে তাদের নিকট দলীল তলব করলে তারা সাধারণতঃ মুফতী শফীর মা’য়ারিফুল কুরআন ও ভোটের ইসলামী শরয়ী বিধান এবং শামসুল হক ফরীদপুরী ছাহেবের বক্তব্য তুলে ধরে বলে থাকে যে, তারা ভোটকে জায়িয বলেছেন। এখন আমাদের জানার বিষয় হলোঃ
১। ইসলাম আর গণতন্ত্র কি একই বিষয়? উভয়ের মধ্যে কি কোন পার্থক্য নেই? এ সম্পর্কে জামাত নেতার এ বক্তব্য কতটুকু শরীয়তসম্মত?
২। নির্বাচন ও ভোট প্রথার উৎপত্তি কোথায় এবং কবে? কোন নবী-রসূল, ছাহাবী, তাবিয়ী, তাবে তাবিয়ীন ভোট ও নির্বাচন করেছেন কি?
৩। ইসলাম বা শরীয়তের দৃষ্টিতে পদপ্রার্থী হওয়া বা ভোট চাওয়া জায়িয কিনা?
৪। ভোট একটি আমানত, স্বাক্ষ্য ও উকিল নিয়োগ মুফতী শফী ও শামছুল হক ফরীদপুরী ছাহেব ও তার অনুসারীদের উক্ত বক্তব্য কতটুকু সঠিক ও দলীল ভিত্তিক।
৫। ভোট দেয়া আল্লাহর নির্দেশ তথা ফরয-ওয়াজিব। আল্লাহ বলেন, ‘ভোট একটি আমানত’। আল্লাহ পাক-এর হাবীব বলেছেন, ‘সৎ লোককে ভোট দিতে হবে।’ বায়তুল মুকাররম মসজিদের খতীবের একথা কতটুকু শরীয়ত ও দলীল সম্মত?
৬। (ক) ছহীহ্ অর্থে মুসলমানদের প্রকৃত শাসক হচ্ছে পবিত্র কুরআন এবং রসূলের সুন্নাহ্। (খ) প্রচলিত যে কোন শাসন ব্যবস্থায় যদি কুরআন-সুন্নাহ্র প্রাধান্য মেনে নেয়া হয় তবে তা মুসলিম জনগণ বিনা দ্বিধায় মেনে নিতে পারেন। (গ) ভোটের মাধ্যমে নেতা বা শাসক নির্বাচনের বর্তমান যে পদ্ধতি এটা অংকুরিত হয়েছে- ইসলামী শুরা পদ্ধতির মধ্য থেকে। সুতরাং এই পদ্ধতিতে ভোটের রাজনীতি ইসলামে বৈধ নয় এ কথা বলা যাবে না। (ঘ) এ যুগের ভোট প্রদান বাইয়াতের বিকল্প বিবেচিত হতে পারে।
মাহিউদ্দীনের উপরোক্ত বক্তব্য কতটুকু সত্য ও দলীলসম্মত?
৭। খুলাফায়ে রাশিদীন কি পদপ্রার্থী হয়েছিলেন?
৮। একটি পদের জন্য কি একাধিক প্রার্থী ছিলেন? এবং তাঁদের কি কোন মার্কা ছিল?
৯। খলীফাগণ রাষ্ট্র পরিচালনা করেছিলেন, না খিলাফত?
১০। খলীফাগণ মানবরচিত বিধানে, না শরয়ী বিধানে খিলাফত পরিচালনা করেছেন?
১১। খলীফা নিয়োগদান পদ্ধতি নির্বাচন, না মনোনয়ন?
১২। গণতান্ত্রিক বহুদলীয় নির্বাচনে প্রার্থীকে ভোট দেয়া ওয়াজিব কিনা?
১৩। (ক) গণতন্ত্র বা নির্বাচন দু’প্রকার পাশ্চত্য গণতন্ত্র, বা নির্বাচন ও ইসলামী গণতন্ত্র বা নির্বাচন। (খ) খুলাফায়ে রাশেদীন ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছেন। (গ) পদপ্রার্থী হওয়া জায়িয। ((ঘ) কুরআন-সুন্নাহয় ভোটকে স্বাক্ষী, আমানত সুপারিশ ও প্রতিনিধি নিয়োগ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
হাট হাজারী খারেজী মৌলবী ছাহেবদের উপরোক্ত বক্তব্য কতটুকু সত্য ও দলীলসম্মত?
১৪। পটিয়া খারিজী মাদ্রাসার মুখপত্র আত তাওহীদ-এর ডিসেম্বর/৯৬, জানুয়ারী/৯৭ এবং জুলাই আগস্ট/৯৭ সংখ্যা সমূহে ভোট নির্বাচন সম্পর্কিত কয়েকটি প্রশ্নের জবাবে লিখেছে,
(ক) শরীয়তের দৃষ্টিতে ভোট হচ্ছে শাহাদাত বা সাক্ষ্য।
(খ) বর্তমান পদ্ধতিতে নির্বাচন করা ইসলামপন্থিদের জন্য একান্ত কর্তব্য।
(গ) ভোট নাগরিক অধিকার, এ অধিকার অর্জনে মা’জুর বশতঃ মহিলাদের জন্যও ছবি তোলা জায়িয রয়েছে।
(ঘ) দ্বীন ইসলাম রক্ষার্থে ভোট বেচা-কেনা করাও জায়িয রয়েছে।
পটিয়া-খারিজী মাদ্রাসার মৌলবী ছাহেবদের উপরোক্ত বক্তব্য কতটুকু দলীলভিত্তিক ও শরীয়ত সম্মত।
১৫। আজকাল নামধারী প্রতিটি ইসলামী দলকেই দেখা যায় বিভিন্ন দলের সাথে জোট বা চুক্তি করে থাকে। তাদেরকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তারা এটাকে হুদায়বিয়ার সন্ধির সাথে তুলনা করে থাকে। হুদায়বিয়ার সন্ধির সাথে তাদের উক্ত জোট বা চুক্তিকে তুলনা করা সঠিক ও শরীয়তসম্মত কিনা?
১৬। যে সকল কথিত মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিছ, শাইখুল হাদীছ, খতীব, পীর, আমীর ইসলামের নামে গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন করছে, ভোটকে আমানত, স্বাক্ষ্য ফরয-ওয়াজিব বলছে এবং ক্ষমতার লোভে বাতিলের সাথে আতাত করছে তারা হক্কানী আলিম কিনা? তাদের পিছনে নামায পড়া জায়িয কিনা? তাদের ব্যাপারে শরীয়তের ফায়ছালা কি?
১৭। যদি ইসলামের দৃষ্টিতে গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন নাজায়িয হয় তবে রাষ্ট্র পরিচালিত হবে কিভাবে? এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠিত হবে কিভাবে? আমরা জানি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠা করা ফরযে আইন। তবে কি সশস্ত্র বিপ্লব বা বোমাবাজি, জিহাদ বা জঙ্গী কার্যকলাপের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা যাবে?
উপরোক্ত প্রতিটি বিষয় দলীলভিত্তিক বিস্তারিত জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান-আক্বীদা ও আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদি।
জাওয়াবঃ
ইসলামের নামে বা ইসলামের দোহাই দিয়ে গণতন্ত্র, ভোট, নিবার্চন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া, নিজ দলকে ভোট দেয়া ওয়াজিব ও জান্নাতের টিকেট লাভের কারণ বলা এবং ভোটকে আমানত, সুপারিশ, স্বাক্ষ্য ইত্যাদি বলা সম্পূর্ণ হারাম ও কুফরী। এটাই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস তথা শরীয়তের চুড়ান্ত, ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া।
অতএব, বলার অপেক্ষা রাখে না যে, গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন ও পদপ্রার্থী হওয়া সম্পর্কিত তথাকথিত খতীব উবায়দুল হক, নিজামী, আহমদ শফী, মাহিউদ্দীন, আমিনী ও আযীযূল হক- ওহাবী, দেওবন্দী ও জামাতীগংদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের খিলাফ বিধায় তা ভুল, অশুদ্ধ, জিহালতপূর্ণ দলীলবিহীন ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
নিম্নে পর্যায়ক্রমে সুওয়ালে উল্লেখিত তাদের প্রতিটি বক্তব্যের খ-নমূলক জাওয়াব প্রদান করা হলো।
(১৩)
হাটহাজারী খারেজী মাদ্রাসার অখ্যাত
মুখপত্র ‘মাসিক মুহীনুল ইসলাম’ সেপ্টেম্বর ডিসেম্বর-০৬ সংখ্যাসমূহে গণতন্ত্র বা ভোট নির্বাচন সম্পর্কে প্রদত্ত বক্তব্যসমূহের খ-নমূলক জবাব
হাটহাজারী খারিজী মাদ্রসার মুখপত্র মাসিক মুহীনুল ইসলাম সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর/০৬ সংখ্যায় ভোট নির্বাচন সম্পর্কিত আলোচনা দ্বারা হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবরা যা বুঝাতে চেয়েছে তা হলো-
(ধারাবাহিক)
(গ)
‘পদপ্রার্থী হওয়া জায়িয’
তাদের এ বক্তব্য কুফরীর শামিল
হাটহাজারী খারেজী মৌলবী ছাহেবরা যে লিখেছে, “পদপ্রার্থী হওয়া জায়িয” তাদের এ বক্তব্য হারামকে জায়িয ফতওয়া দেয়ার কারণে সুস্পষ্ট কুফরীর শামিল হয়েছে। কারণ ভোট দেয়া, চাওয়া যেরূপ হারাম তদ্রুপ পদপ্রার্থী হওয়াও শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম। কারণ,আল্লাহ পাক-এর রাসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে পদপ্রার্থী হয় আমরা তাকে পদ দেইনা।”
উল্লেখ্য, যারা পদপার্থী হয়, এমনকি যারা পদের আকাংখা করে, তাদেরকে আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পদ দেননি। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে,
عن ابى موس رضى الله تعالى عنه قال دخلت على النبى صلى الله عليه وسلم انا ورجلان من بنى عمى فقال احدهما يا رسول الله امرنا على بعض ما ولاك الله و قال الاخر مثل ذلك فقال انا والله لا نولى على هذا العمل احدا ساله ولا احدا حرص عليه وفى رواية قال لانستعمل على عملنا من اراده.
অর্থঃ- হযরত আবূ মুসা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি ও আমার দু’জন চাচাত ভাই হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট গেলাম। সে দু’জনের একজন বললো, হে আল্লাহ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আল্লাহ পাক আপনাকে যে সকল কাজের দায়িত্ব দিয়েছেন, আপনি আমাদেরকে ওটার মধ্য হতে কোন একটির শাসক নিযুক্ত করুন এবং দ্বিতীয়জনও অনুরূপই বললো। উত্তরে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “আল্লাহ পাক-এর কসম! আমরা এ কাজে (শাসক পদে) এমন কোন ব্যক্তিকে নিয়োগ করিনা, যে ওটার প্রার্থী হয় এবং ঐ ব্যক্তিকেও নিয়োগ করিনা, যে ওটার লোভ বা আকাঙ্খা করে।” (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ)
عن عبد الرحمن بن سمرة رضى الله تعالى عنه قال قال لى رسول اله صلى الله عليه وسلم لاتسال الامارة فانك ان اعطيتها عن مسئلة وكلت اليها وان اعطيتها عن غي مسئلة اعنت عليها.
অর্থঃ- হযরত আব্দুর রহ্মান বিন সামুরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, “(হে সামুরা!) তুমি নেতৃত্ব বা পদ চেওনা। কেননা, যদি তোমাকে ওটা চাওয়ার কারণে দেয়া হয়, তবে ওটা তোমার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। আর যদি ওটা তোমাকে চাওয়া ব্যতীত দেয়া হয়, তাহলে এ ব্যাপারে তোমাকে সাহায্য করা হবে।” (মুয়াত্তা শরীফ)
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم تجدون من خير الناس اشدهم كراهية لهذا الامر حتى يقع فيه.
অর্থঃ- “হযরত আবূ হুরায়রা রদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “এই শাসনভারকে যারা কঠোরভাবে ঘৃণা করে, তাদেরকে তোমরা উত্তম লোক হিসেবে পাবে, যে পর্যন্ত তারা তাতে লিপ্ত না হয়।” (মুয়াত্তা)
অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক ব্যক্তিকে পদপ্রার্থী হতে নিষেধ করেছেন।
তাই শরীয়তে পদপ্রার্থী হওয়া বা পদ তালাশ করা সম্পূর্ণই হারাম ও নাজায়িয। কাজেই হাদীছ শরীফ দ্বারা যেখানে পদপ্রার্থী হওয়া হারাম প্রমাণিত। হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবরা তা কি করে জায়িয ফতওয়া দিল?
মূলতঃ যারা চরম গোমরাহীর মধ্যে নিমজ্জিত তাদের পক্ষেই এরূপ কুফরীমূলক ফতওয়া প্রদান করা সম্ভব। এদের প্রসঙ্গেই আল্লাহ পাক বলেন,
كيف يهدى الله قوما كفروا بعد ايمانهم وشهدوا ان الرسول حق وجائهم البينت والله لايهدى القوم الظلمين اولئك جزاؤهم ان عليهم لعنة الله والملئكة والناس اجمعين خلدين فيها لا يخفف عنهم العذاب ولاهم ينظرون.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক কি করে ঐ সম্প্রদায়কে হিদায়েত দান করবেন যারা ঈমান আনার পর কুফরী করে অর্থাৎ হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম করে, ইসলাম বাদ দিয়ে বেদ্বীন-বদদ্বীনদের নিয়ম-নীতি পছন্দ ও অনুসরণ করে এবং তা ইসলামের সাথে মিশ্রিত করে অথচ তারা সাক্ষী দিয়েছে যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্য এবং তাদের নিকট কুরআন-সুন্নাহর দলীলও এসেছে। আল্লাহ পাক যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়েত দান করেন না। ঐ সমস্ত লোকদের শাস্তি হলো, তাদের প্রতি আল্লাহ পাক-এর, ফেরেশতাগণের এবং সমস্ত মানুষের লা’নত। অনন্তকাল ধরে সেই লা’নতের মধ্যে তারা থাকবে। তাদের উপর শাস্তি লাঘব করা হবেনা এবং তাদেরকে অবসরও দেয়া হবেনা।” (সূরা আলে ইমরান-৮৬, ৮৭, ৮৮)
আর যারা শরীয়তের সুস্পষ্ট হারামগুলোকে হারাম বলে স্বীকার করেনা বরং হালাল বা জায়িয বলে ফতওয়া দেয় তাদের সম্পর্কে ফায়ছালা দিয়ে আল্লাহ পাক বলেন,
قاتلوا الذين لايؤمنون بالله ولاباليوم الاخر ولا يحرمون ما حرم الله ورسوله ولا يدينون دين الحق.
অর্থঃ- “তোমরা জিহাদ কর ঐ সমস্ত লোকদের সাথে যারা আল্লাহ পাক এবং পরকালের প্রতি ঈমান রাখেনা, আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল যা হারাম করেছেন তা হারাম মানেনা এবং দ্বীন ইসলামকে হক্ব, পরিপূর্ণ, মনোনীত দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করে না।” (সূরা তওবা-২৯)
অর্থাৎ যারা শরীয়ত নির্বারিত হারাম সমূহকে হারাম স্বীকার করেনা এবং হালাল সমূহকে হালাল মানেনা বরং হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দেয় শরীয়তের দৃষ্টিতে তারা কাট্টা কাফির। ইসলামী খিলাফত থাকলে তাদেরকে তওবার জন্য তিন দিন সময় দেয়া হতো তিন দিনের মধ্যে তওবা না করলে তাদের একমাত্র শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদ-।
অতএব, বলার অপেক্ষাই রাখে না যে, হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবরা শরীয়ত নির্ধারিত হারামকে অর্থাৎ পদপ্রার্থী হওয়াকে জায়িয ফতওয়া দিয়ে সুস্পষ্ট কুফরী করেছে। তারা যদি এর থেকে খালিছ তওবা না করে তবে তাদের উপরও উপরোক্ত হুকুম বর্তাবে।
(ঘ)
‘কুরআন-সুন্নায় ভোটকে আমানত, স্বাক্ষী, সুপারিশ ও উকিল বা প্রতিনিধি নিয়োগ বলে উল্লেখ করা হয়েছে’ তাদের এ বক্তব্য ডাহা মিথ্যা
হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের বক্তব্য হলো আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ও তাঁর হাবীব হাদীছ শরীফে ভোটকে আমানত, স্বাক্ষ্য, শুপারিশ ও উকিল নিয়োগ বলে উল্লেখ করেছেন। (নাঊযুবিল্লাহ) হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণরূপেই মিথ্যা, মনগড়া, দলীলবিহীন ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
মুলতঃ কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে ভোটকে আমানত, স্বাক্ষ্য ইত্যাদি বলা তো দূরের কথাই বরং কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে ভোটের কোন অস্তিত্বই নাই। তারা যেসকল আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফের অপব্যাখ্যা করে ভোটকে আমানত, স্বাক্ষ্য শুপারিশ ইত্যাদি সাব্যস্ত করার অপচেষ্টা করে নিম্নে সেসকল বিষয়ে দলীলভিত্তিক আলোচনা করা হলো-
কুরআন সুন্নাহর কোথাও ভোটকে আমানত বলা হয় নাই
যারা ভোটকে আমানত বলে উল্লেখ করে থাকে তারা নিম্নের আয়াত শরীফকে দলীল হিসেবে উল্লেখ করে থাকে। অথচ নিম্নের আয়াত শরীফের সাথে ভোটের কোনই সম্পর্ক নেই।
ان الله يأمركم ان تؤدوا الامنت الى اهلها واذا حكمتم بين الناس ان تحكموا بالعدل ان الله نعما يعظكم به ان الله كان سميعا بصيرا.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক তোমাদেরকে আদেশ করেন যে, তোমরা আদায় করে দাও আমানতসমূহকে তার হকদারদেরকে এবং যখন তোমরা মানুষের মধ্যে ফায়সালা বা বিচার করবে, তখন ন্যায়ের সাথে বিচার করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তোমাদেরকে উত্তম উপদেশ দান করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।” (সূরা নিসা-৫৮)
আমানত সংক্রান্ত আয়াত শরীফের
শানে নুযূল ও সঠিক ব্যাখ্যা
শানে নুযুলঃ হিজরতের পূর্বে জাহিলিয়াতের যুগে, সপ্তাহে দু’দিন সোমবার ও বৃহস্পতিবার কা’বা শরীফের দরজা খোলা হতো। যাতে যারা কা’বা শরীফে প্রবেশ করতে ইচ্ছুক, তাঁরা যেন প্রবেশ করতে পারে। এবং উক্ত ঘরের চাবির জিম্মাদার ছিলেন উসমান বিন তাল্হা।
একদা কা’বা শরীফের দরজা খোলার পর আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছু সংখ্যক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে নিয়ে প্রবেশ করতে আসলে, তখন সে বাঁধা প্রদান করে এবং কিছু কটু কথা বলে। এ সকল অশালীন ও অশোভনীয় আচরণ লক্ষ্য করে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “হে উসমান! এমন একদিন আসবে, যেদিন তুমি এ কা’বা ঘরের চাবি আমার হাতে দেখতে পাবে এবং এ চাবি যাকে ইচ্ছা তাকে দেয়ার অধিকারও আমার থাকবে।” ইত্যাদি আরো কিছু কথা বলে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যিয়ারত করে চলে গেলেন। পরবর্তীতে যখন মক্কা শরীফ বিজয় হলো, তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা শরীফে কা’বা ঘরের চাবি উসমান বিন তালহার কাছ থেকে নিয়ে কা’বা শরীফ খুলে তার মধ্যে প্রবেশ করে দু’রাকায়াত নামায পড়লেন। অতঃপর যখন বের হলেন, তখন হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ইয়া রসুলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা তো পানি পান করানোর জিম্মাদারীতে আছি, সুতরাং আমাদেরকে কা’বা ঘরের চাবিরও জিম্মাদার করে দিন।
এখন কাকে চাবি দেয়া হবে, তা উক্ত আয়াত শরীফ নাযিল করে তার মাধ্যমে আল্লাহ্ পাক জানিয়ে দিলেন, তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উসমান বিন তালহাকে ডেকে বললেন, “তোমার কি সেই কথা স্মরণ আছে যে, আমি বলেছিলাম কা’বা ঘরের চাবি আমার হাতে আসবে এবং যাকে ইচ্ছা তাকে দেয়ার অধিকার আমার থাকবে।” অতঃপর তার নিকট চাবি অর্পণ করলেন এবং বলেলন, এ চাবি ক্বিয়ামত পর্যন্ত তোমার বংশধরগণের নিকট থাকবে, যে এটি নিবে সে জালিমের অন্তর্ভুক্ত হবে।
আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উক্ত ভবিষ্যৎবাণী সত্যে বাস্তবায়িত হওয়া দেখে তাঁর ইসলাম গ্রহণের পূর্ব সূক্ষ্ম আকাংখা প্রবল হয়ে উঠল এবং তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন।
আয়াত শরীফের সঠিক ব্যাখ্যা
উপরোক্ত আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক আমানতসমূহের হকদার কে, তার প্রতিই তার প্রাপ্ত আমানত আদায় করার জন্য আদেশ করেছেন। এখন আমানত কাকে বলে এবং তা কি কি? এ প্রশ্নের জবাবে হযরত মুফাস্সিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণ উল্লেখ করেন, আমানতসমূহ প্রধানতঃ তিন প্রকার-
(১) الامانة فى عبادة الله
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক- এর ইবাদত সম্পর্কিত আমানত।”
(২) الامانة مع النفس
অর্থঃ- “নফ্স সম্পর্কিত আমানত।”
(৩) امانة العبد مع سائر عباد الله
অর্থঃ- “বান্দার উপর অন্যান্য সকল আমানতসমূহ।”
অর্থাৎ (১) আল্লাহ পাক-এর আদেশ ও নিষেধ সমূহ, যেমন- ওযু, গোসল, জানাবাত, নামায, রোযা, যাকাত ইত্যাদি ইবাদতসমূহ আদায় করা এবং এর থেকে বিরত না হওয়া।
(২) আল্লাহ পাক বান্দাদেরকে যে সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করেছেন, যেমন- জিহ¡াকে হিফাযত করা, মিথ্যা, গীবত, চোগলখুরী থেকে, চক্ষুকে হারাম দৃষ্টি থেকে, কানকে গান-বাজনা, অশ্লীল বা ফাহেশা কথা-বার্তা শোনা থেকে বিরত রাখা।
(৩) আল্লাহ্ পাক বান্দাদের পরস্পর পরস্পরের মধ্যে যে হক্ব দিয়েছেন। যেমন- মুয়ামেলাত, মুয়াশেরাত ইত্যাদি যথাযথভাবে আদায় করা।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে,
عن انس رضى الله تعالى عنه قال قلما خطبنا رسول الله صلى الله عليه وسلم الا قال لا ايمان لمن لا امانة له ولا دين لمن لا عهد له.
অর্থঃ- “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে এরূপ উপদেশ খুব কমই দিয়েছেন যাতে এ কথাগুলো বলেননি যে, যার আমানত নেই, তার ঈমানও নেই এবং যার ওয়াদা ঠিক নেই, তার দ্বীনও নেই।” (বাইহাক্বী, মিশকাত)
অর্থাৎ যে আমানত খেয়ানত করবে, সে খালিছ ঈমানদার হতে পারবেনা। আর যে ওয়াদা খেলাফ করবে, সে খালিছ দ্বীনদার হতে পারবেনা।
এ ছাড়াও কুরআন শরীফে “সূরা বাক্বারার” ২৮৩ নং আয়াত শরীফে লেন-দেন প্রসঙ্গে আমানতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। “সূরা আনফালের’’২৭নং আয়াত শরীফে জিহাদ প্রসঙ্গে, “সূরা আহযাবের” ৭২ নং আয়াত শরীফে কুরআন শরীফ ও ইসলাম সম্পর্কে, “সূরা মু’মিনুন” ৮নং আয়াত শরীফে, “সূরা মায়ারিজের” ৩২ নং আয়াত শরীফে, মু’মিনের চরিত্র প্রসঙ্গে আমানতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অতএব, প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে, সে যেন কোন অবস্থায়ই আমানতের খিয়ানত না করে।
উল্লেখ্য, কুরআন শরীফের কোথাও ভোটকে আমানত বলে উল্লেখ করা হয়নি। শুধু তাই নয়, হাদীছ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের কোথাও আমানত বলে উল্লেখ করা হয়নি। কারণ ভোট প্রথা ইসলামের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়। অর্থাৎ ইসলামের নামে করা সম্পূর্ণই হারাম।
যা ইসলামের নামে করা জায়িয নেই তা কি করে ঈমানদারদের জন্য আমানত বলে সাব্যস্ত হতে পারে? ভোটকে ইসলামের দৃষ্টিতে ও ইসলামের নামে আমানত বলা সম্পূর্ণ কুফরী। যে কুফরী করে সে কাফির হয়। আর যে কাফির হয় সে চির জাহান্নামী হয়।
ভোট স্বাক্ষ্য নয়, ভোটকে স্বাক্ষ্য বলা কুফরী
সাক্ষী প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফে উল্লেখ করেন,
يا يها الذين امنوا كونوا قومين بالقسط شهداء لله ولو على انفسكم او الوالدين والاقربين ان يكن غنيا او فقيرا فالله اولى بهما فلا تتبعوا الهوى ان تعد لوا وان تلوا او تعرضوا فان الله كان بما تعملون خبيرا.
অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইনছাফের উপর কায়িম থাক, আল্লাহ্ পাক-এর জন্য স্বাক্ষ্য দেয়ার ব্যাপারে। যদি তা তোমাদের নিজেদের, পিতা-মাতার ও নিকট আত্মীয়দের বিরুদ্ধেও হয়। চাই সে ধনী হোক বা দরিদ্র হোক। অতঃপর আল্লাহ্ পাকই তাদের প্রতি অধিক কল্যাণকামী। তোমরা ইনছাফ করতে গিয়ে নফ্সের অনুসরণ করোনা। আর যদি তোমরা বর্ণনায় বক্রতা অবলম্বন কর অথবা সঠিক স্বাক্ষ্য দেয়া হতে বিরত থাক, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তায়ালা তোমাদের কাজ সম্পর্কে সমধিক জ্ঞাত।” (সূরা নিসা-১৩৫)
আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন,
يايها الذين امنوا. كونوا قومين لله شهداء بالقسط ولا يجر منكم شنان قوم على الا تعد لوا اعدلوا هواقرب للتقوى واتقوا الله ان الله خبير بما تعملون.
অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ পাক-এর জন্য সঠিক স্বাক্ষ্য দেয়ার ব্যাপারে ইন্ছাফের উপর কায়িম থাক এবং কোন সম্প্রদায়ের শত্রুতা যেন তোমাদেরকে ন্যায় বিচার করা হতে বিরত না রাখে, তোমরা ন্যায় বিচার কর। এটি তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতির অধিক নিকটবর্তী এবং তোমরা আল্লাহ্ পাককে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক তোমাদের কাজ সম্পর্কে সমধিক অবহিত।” (সূরা মায়িদা-৮)
শানে নুযুলঃ একদা একজন ধনী ও একজন গরীব লোক আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে পরস্পর পরস্পরকে অপরাধের জন্য দোষারোপ করতে লাগলো। অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গরীবকে হক্বের উপর দেখে তার পক্ষে রায় দিলেন। তখন আল্লাহ্ পাক উপরোক্ত আয়াত শরীফ নাযিল করলেন।
কারো মতে ত্ব’মা ইবনে আবরাক্ব নামক এক ব্যক্তির পক্ষে তার সম্প্রদায়ের লোকেরা তার বিরুদ্ধবাদীদের বিপক্ষে মিথ্যা ও বাতিল সাক্ষী দিয়েছিল। তাদের সম্পর্কে উপরোক্ত আয়াত শরীফ নাযিল হয়।
স্বাক্ষ্য সম্পর্কিত আয়াত শরীফের
সঠিক ব্যাখ্যা
উপরোক্ত আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক প্রতি ক্ষেত্রে, সর্বাবস্থায়, সকলের জন্যই, চাই সে আত্মীয় বা অনাত্মীয়, শত্রু বা মিত্র, নিকটবর্তী বা দূরবর্তী যে কেউ হোক না কেন, এমন কি নিজের বিরুদ্ধে হলেও ইন্ছাফের সাথে স্বাক্ষ্য প্রদান করার জন্য আদেশ করেছেন। অনুরূপ “সূরা মায়িদার” ৮নং আয়াত শরীফেও সঠিক বা ইন্ছাফের সাথে স্বাক্ষ্য প্রদান করার জন্য আল্লাহ্ পাক নির্দেশ করেছেন।
সংজ্ঞাঃ আর সাধারণ স্বাক্ষ্য হলো, অতীতের কোন সুনির্দিষ্ট কার্যাবলীর উপর বিবরণ পেশ করা। যার সাথে ভোট প্রথার মিল নেই। ভোটকে স্বাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করলে কুরআন শরীফকে অস্বীকার করা হয়। আল্লাহ্ পাক “সূরা বাক্বারার” ২৮২ নং আয়াত শরীফে বলেন,
واستشهدوا شهيدين من رجالكم فان لم يكونا رجلين فرجل وامراتن.
অর্থঃ- “তোমাদের পুরুষদের মধ্য হতে দু’জন সাক্ষী দাঁড় করাও। যদি দু’জন পুরুষ না পাওয়া যায় তাহলে একজন পুরুষ ও দু’জন মহিলার স্বাক্ষ্য গ্রহণ কর।”
অর্থাৎ ইসলামে দু’জন মহিলার স্বাক্ষ্য একজন পুরুষের সমান।
আর ভোট প্রথায় একজন মহিলা একজন পুরুষের সমান যা কুরআন শরীফের আয়াতের খিলাফ। তাহলে ভোট প্রথা কি করে ইসলামের নামে বা দৃষ্টিতে স্বাক্ষ্য বলে গণ্য হতে পারে? ভোট প্রথাকে স্বাক্ষ্য হিসেবে হুকুম দেয়া বা বলা সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম।
এখানে গণতন্ত্রীরা ভোটকে স্বাক্ষ্য বলে মুসলমানদেরকে কুরআন শরীফের খিলাফ বিশ্বাস স্থাপন ও আমল করায়ে সরাসরি কাফির বানাতে চায়। অর্থাৎ আল্লাহ পাক বলেন, ১ জন পূরুষ ২ জন মহিলার সমান স্বাক্ষ্য হিসেবে, আর গণতন্ত্রীরা বলে, ১ জন পূরুষ ১ জন মহিলা স্বাক্ষ্য হিসেবে সমান।
এখন যদি কোন মুসলমান আল্লাহ পাক-এর আদেশ মান্য না করে গনতন্ত্রীদের মত মেনে নেয় তাহলে সে কি করে ঈমানদার থাকতে পারে অর্থাৎ সে কাট্টা কাফির হবে। আর যে কাফির হয় সে চির জাহান্নামী হবে। অতএব ইসলামের নামে ভোটকে স্বাক্ষ্য বলা কাট্টা হারাম ও কুফরী। শরীয়তে হারামকে হালাল বলা কুফরী। আর যে কুফরী করে সে চির জাহান্নামী হয়।
ভোটকে সুপারিশ বলে হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবরা কুফরী করেছে
সুপারিশ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক বলেন-
من يشفع شفاعة حسنة يكن له نصيب منها ومن يشفع شفاعة سيئة يكن له كفل منها وكان الله على كل شىء مقيتا.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি সুপারিশ করবে কোন নেক কাজের জন্য, সে এর দরুন (ছওয়াবের) একটা অংশ পাবে। আর যে ব্যক্তি সুপারিশ করবে কোন পাপ কাজের জন্য, সে এর দরুন (গুণাহ্র) একটা অংশ পাবে এবং আল্লাহ্ তায়ালা সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল।” (সূরা নিসা-৮৫)
শানে নুযুলঃ উল্লিখিত আয়াত শরীফ পরস্পর পরস্পরের মাঝে সুুপারিশ করার প্রসঙ্গে নাযিল হয়েছে। আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, কেউ যদি শরীয়তসম্মত কোন নেক কাজের সুপারিশ করে, সে নেক কাজ সংঘটিত হোক বা না হোক সে নেকী লাভ করবে। তদ্রুপ কেউ যদি কোন পাপ কাজের সুপারিশ করে, তাহলে এর জন্য যা গুণাহ্ হবে, তার একটা অংশ তার উপর বর্তাবে।
উল্লেখ্য, শুপারিশ করালে তো অবশ্যই। বরং যদি কেউ কোন নেক কাজের সমর্থন করে তাতেই সে নেকী লাভ করে থাকে। আর যে পাপ কাজের সমর্থন করবে তাতেও তার উপর গুণাহ্ বর্তাবে।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে উল্লেখ রয়েছে,
عن العرس بن عميرة رضى الله تعالى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال اذا عملت الخطيئة فى الارض من شهدها فكر هها كان كمن غاب عنها ومن غاب فرضيها كان كمن شهدها.
অর্থঃ- হযরত উরস্ বিন উমাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যখন পৃথিবীতে কোথাও কোন পাপ কাজ সঙ্ঘটিত হয়, তখন যে ব্যক্তি উক্ত স্থানে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও উহাকে ঘৃণা করে, সে ব্যক্তি এরূপ যেন উহা হতে দূরে ছিল। আর যে ব্যক্তি দূরে থেকেও উক্ত পাপের প্রতি সন্তুষ্ট থাকে, সে এরূপ যেন তথায় উপস্থিত ছিল।” (আবূ দাউদ, মিশকাত)
অতএব, ভোট প্রথাই যেখানে ইসলামের নামে জায়িয নেই বা হারাম সেখানে ইসলামের নামে ভোট প্রথা কি করে শুপারিশ হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে? মূলতঃ ইসলামের নামে ভোট প্রথাকে শুপারিশ বলা জায়িয নেই। কারণ হারাম কাজে শুপারিশ করাও হারাম। আর কেউ যদি কোন হারাম কাজে সুপারিশ করে তাহলে হারাম আমলকারীর যত গুণাহ হবে শুপারিশকারীরও সম পরিমাণ গুণাহ হবে।
ভোট উকিল বা প্রতিনিধি নিয়োগ হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের এ বক্তব্য কুরআন-সুন্নার সুস্পষ্ট অপব্যাখ্যা
উকিল বা প্রতিনিধি নিয়োগ করা প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেন,
ارءيت من اتخذ الهه هوه افا نت تكون عليه وكيلا.
অর্থঃ- “আপনি কি লক্ষ্য করেননি? যে ব্যক্তি তার নফ্স বা প্রবৃত্তিকে ইলাহ্ (উপাস্য) হিসেবে গ্রহণ করে, এরপরও কি আপনি তার উকিল হবেন?” (সূরা ফুরক্বান-৪৩)
শানে নুযূলঃ নজর বিন হারিছ ও তার সঙ্গী-সাথীরা নফ্সের চাহিদা মুতাবেক কোন বড় ও সুন্দর ধরণের পাথর বা অন্য কিছু দেখতো, তখন সেটিকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করে নিত। আবার পরবর্তীতে তার চাইতে আরো বড় ও সুন্দর ইত্যাদি আকৃতির কোন কিছু দেখলে প্রথমটি বাদ দিয়ে পরবর্তীটিকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করতো। তাদের প্রসঙ্গে উক্ত আয়াত শরীফ নাযিল হয়।
ব্যাখ্যাঃ যারা নফ্স বা প্রবৃত্তিকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করে, কিংবা নফ্সের অনুসরণে শরীয়তের তথা কুরআন-সুন্নাহ্র খিলাফ কাজ করে বা তাতে অংশ গ্রহণ করে, শরীয়তের দৃষ্টিতে তাদের উকিল হওয়া সম্পূর্ণভাবে নাজায়িয ও হারাম। কেননা নফ্সের অনুসরণকারী ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক-এর নাফরমানীতে লিপ্ত। অর্থাৎ তারা সর্বদা কুফরী, শেরেকী, হারাম ও নাজায়িয কাজে মশগুল। সে কারণেই আল্লাহ্ পাক নফ্সের অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন।
ইরশাদ হয়েছে,
ولئن اتبعت اهواءهم بعد الذى جاءك من العلم مالك من الله من ولى ولا نصير.
অর্থাৎ- কারো নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণাদি আসার পর সে যদি তাদের (কাফিরদের) প্রবৃত্তির অনুসরণ করে তাহলে আল্লাহ্ পাক-এর পক্ষ হতে তার জন্য কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী থাকবে না।” (সূরা বাক্বারা-১২০)
উল্লেখ্য, উকিল বা প্রতিনিধি নির্ধারণ করতে হলে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। আর ইসলামের নামে নির্বাচন হারাম। নির্বাচন যে ইসলামের নামে বা দৃষ্টিতে কখনোই গ্রহণযোগ্য নয় সে প্রসঙ্গে স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
والله لانولى على هذا العمل احدا ساله ولا احدا حرص عليه.
অর্থঃ- “এই কাজে (শাসক পদে) যারা পদপ্রার্থী হয় বা পদের আকাঙ্খা করে আমরা তাদেরকে পদ দেই না।” (বুখারী, মুসলিম)
কাজেই সে হারাম কাজের জন্য উকিল মনোনীত হতে চাওয়া অথবা মনোনীত করা কোনটিই জায়িয নেই। বরং প্রত্যেকটাই হারাম ও কুফরী।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই সাব্যস্ত হলো যে, ইসলামের নামে ভোট দেয়া ওয়াজিব বলা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। আরো সাব্যস্ত হলো, ভোটকে ইসলামের নামে আমানত, স্বাক্ষ্য, শুপারিশ এবং উকিল বা প্রতিনিধি নিয়োগের মাধ্যম বলাও সম্পূর্ণ কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কেন না কুরআন-সুন্নাহর কোথাও ভোটকে আমানত, সাক্ষ্য শুপারিশ ও উকিল নিয়োগ বলে উল্লেখ করা হয় নাই।
কাজেই, ‘আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফে ভোটকে আমানত, স্বাক্ষ্য, সুপারিশ, উকিল নিয়োগ বলে উল্লেখ করেছেন, “হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের এ বক্তব্য প্রথমত: আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি চরম মিথ্যারোপের শামিল। দ্বিতীয়ত: তাদের উক্ত বক্তব্য কুরআন ও সুন্নাহর সুস্পষ্ট অপব্যাখ্যার অন্তর্ভূক্ত। আর শরীয়তে দৃষ্টিতে উভয়টি কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত।
আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি
মিথ্যারোপ করার পরিণাম
আল্লাহ পাক এ সম্পর্কে ইরশাদ করেন,
فمن اظلم ممن افترى على الله كذبا ليضل الناس بغير علم ان الله لا يهدى القوم الظلمين.
অর্থঃ- “অতএব, সে ব্যক্তি অপেক্ষা বড় যালিম আর কে হবে, যে ব্যক্তি বিনা প্রমাণে আল্লাহ পাক-এর প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে, মানুষদেরকে বিভ্রান্ত বা পথভ্রষ্ট করার উদ্দেশ্যে; নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়েত দান করেননা।” (সূরা আনয়াম-১৪৪)
অর্থাৎ যারা আল্লাহ পাক-এর নামে মিথ্যা বলে তারা যালিম, তারা গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট। সেজন্য তারা আল্লাহ পাক-এর নামে মিথ্যা বলে মানুষদেরকে বিনা দলীলে গোমরাহ করতে চায়।
আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন,
ومن اظلم ممن افترى على الله الكذب وهو يدعى الى الاسلام والله لايهدى القوم الظلمين.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি ইসলামের প্রতি আহুত হয়েও আল্লাহ পাক সম্পর্কে মিথ্যা বলে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে? আর আল্লাহ পাক যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়েত দান করেননা।” (সূরা ছফ-৭)
অর্থাৎ আল্লাহ পাক সম্পর্কে মিথ্যা বলা হচ্ছে সবচাইতে বড় যুলূম। কাজেই, যে বা যারা মুসলমান হওয়ার পরও আল্লাহ পাক-এর নামে মিথ্যা বলে সে বা তারা চরম ও বড় যালিম এবং যালিম হওয়ার কারণে তারা হিদায়েত থেকে মাহরূম হয়ে থাকে। অর্থাৎ তারা চরম গোমরাহ। তাই এদের ফতওয়া শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়।
আল্লাহ পাক এ সম্পর্কে আরো ইরশাদ করেন,
ولاتقولوا لما تصف السنتكم الكذب هذا حللا وهذا حرام لتفتروا على الله الكذب ان الذين يفتسرون على الله الكذب لايفلحون.
অর্থঃ- “তোমাদের মুখ থেকে সাধারণতঃ যেসব মিথ্যা বের হয়ে আসে, তেমনি করে তোমরা আল্লাহ পাক-এর প্রতি মিথ্যারোপ করে বলোনা যে, (আল্লাহ পাক) এটা হালাল এবং ওটা হারাম (করেছেন), নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ পাক-এর প্রতি মিথ্যারোপ করে, তাদের জন্য কামিয়াবী নেই।” (সূরা নহল-১১৬) অর্থাৎ যারা আল্লাহ পাক-এর নামে মিথ্যা বলে তাদের জন্য কামিয়াবী তো নেই। শুধু তাই নয়, বরং তাদের জন্য কঠিন শাস্তি মৃত্যুদ- রয়েছে।
আল্লাহ পাক এ সম্পর্কে কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ করেন,
لو تقول علينا بعض الاقاويل لاخذنا منه باليمين. ثم لقطعنا منه الوتين. فمامنكم من احد عنه حجزين.
অর্থঃ- কেউ যদি আমার নামে বানিয়ে কোন কথা বলে, তবে আমি তাঁর দক্ষিণ হস্ত ধরে তার গ্রীবা বা প্রাণ রগ কেটে দিব, তোমাদের কেউই এতে বাধা দিতে পারবে না।” (সূরা হাক্কা- ৪৪, ৪৫, ৪৬)
উপরোক্ত আয়াত শরীফের শানে নুযূল সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে যে, কাফির, মুশরিকরা বলতো, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাকি আল্লাহ পাক-এর নাম মুবারকে বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলেন। (নাউযুবিল্লাহ) এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ পাক এ আয়াত শরীফ নাযিল করে জানিয়ে দিলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনই আল্লাহ পাক-এর নাম মুবারকে মিথ্যা বলেন না। শুধু এতটুকুই নয় আরো জানিয়ে দিলেন, যারা আল্লাহ পাক-এর নাম মুবারকে মিথ্যা বলবে তাদের শাস্তি হলো মৃত্যুদ-।
কারণ আল্লাহ পাক সম্পর্কে যে মিথ্যা বলে সে কুফরী করে, আর যে কুফরী করে সে মুরতাদ হয়ে যায়। আর শরীয়তের ফতওয়া হলো, যে সমস্ত মুসলমান কুফরী করে তারা মুরতাদ হয়ে যায়। আর যারা মুরতাদ হয়ে যায় তাদের একমাত্র শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদ-। শরীয়তে তাদের তওবা করার জন্য তিনদিন সময় দেয়া হয়েছে অন্যথায় শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদ-।
অতএব, “যারা আল্লাহ পাক ও আল্লাহ পাক-এর কালাম কুরআন শরীফ সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলে। অর্থাৎ আল্লাহ পাক যা বলেননি তা বলেছেন বলে এবং কুরআন শরীফে যা উল্লেখ নেই তা আছে বলে”- তারা চরম যালিম, মুরতাদ ও কাফির।
কাজেই, “আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ভোটকে আমানত, স্বাক্ষ্য, শুপারিশ, উকিল নিয়োগ বলে উল্লেখ করেছেন” হাটহাজারী খারিজী মৌলবী ছাহেবদের এ বক্তব্য আল্লাহ পাক ও কুরআন শরীফের নামে সুস্পষ্ট মিথ্যারোপ ও কাট্টা কুফরী। কারণ, কুরআন শরীফের কোথাও আল্লাহ পাক অনুরূপ কথা বলেননি।
অনুরূপ কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের অসংখ্য স্থানে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি মিথ্যারোপ করার ভয়াবহ পরিণতি ও কঠিন আযাবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নামে মিথ্যা কথা বলে বা বানিয়ে বানিয়ে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করে সে অবশ্যই কুফরী করে কঠিন আযাবের উপযুক্ত হয় আর যে আযাবের উপযুক্ত হয় সেই চির জাহান্নামী হয়।
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক সূরা নহলের ১১৩নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,
لقد جاءهم رسول منهم فكذبوه فاخذهم العذاب وهم ظلمون.
অর্থঃ “তাদের নিকট তাদের মধ্য থেকেই একজন রসূল আগমন করেছিলেন, অনন্তর তারা (কাফিরেরা) তাঁর প্রতি মিথ্যারোপ করলো। তখন আযাব এসে তাদেরকে পাকড়াও করলো এবং নিশ্চিত তারাই ছিল যালিম।”
এ আয়াত শরীফ এটাই প্রমাণ করে যে, যারা কাফির ও যালিম তারা রসূলের প্রতি মিথ্যারোপ করে অর্থাৎ রসূল যা বলেন নাই তা বলেছেন বলে ও রসূল যা বলেছেন তা বলেন নাই বলে, মূলতঃ এদের জন্যই রয়েছে কঠিন আযাব বা শাস্তি। আর যারা আযাবের উপযুক্ত তারাই জাহান্নামী। তাই আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফে উম্মতদেরকে এ ব্যাপারে কঠোরভাবে সতর্ক করে দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اتقوا الحديث عنى الا ماعلمتم فمن كذب على متعمدا فليتبوا مقعده من النار.
অর্থঃ “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার পক্ষ হতে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করার ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। যে পর্যন্ত না তা তোমরা আমার বলে নিশ্চিত হবে। কেননা যে ব্যক্তি আমার প্রতি মিথ্যারোপ করবে, সে যেন (দুনিয়ায় থাকতেই) তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নিল।” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن عبد الله بن عمرو رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم بلغوا عنى ولو اية وحدثوا عن بنى اسرأئيل ولا حرج ومن كذب على متعمدا فليتبوأ مقعده من النار.
অর্থঃ “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার পক্ষ হতে মানুষের নিকট পৌঁছে দাও যদি একটি আয়াত শরীফও হয়। বণী ইসরাঈলের নিকট হতে শুনা কথা বলতে কোন আপত্তি নেই। তবে যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় আমার নামে মিথ্যা বললো, সে যেন তার স্থান জাহান্নামেই নির্ধারণ করে নিলো।” (বুখারী, মিশকাত)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن سمرة بن جندب والمغيرةبن شعبة رضى اله تعالى عنهماقالا قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من حدث عنى بحديث يرى انه كذب فهو احد الكاذبين.
অর্থঃ “হযরত সামুরা ইবনে জুনদুব ও মুগীরা ইবনে শু’বাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আমার নামে এমন কথা বললো যা সে মিথ্যা মনে করে তবে সেও মিথ্যুকদের একজন।” (মুসলিম, মিশকাত)
আর মিথ্যাবাদীদের সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন,
لعنت الله على الكذبين.
অর্থঃ- “মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহ পাক-এর লা’নত।” (সূরা আলে ইমরান-৬১)
والله يشهد ان المنفقين لكذبون.
অর্থঃ “আল্লাহ পাকই সাক্ষী যে, নিশ্চয়ই মুনাফিকরা মিথ্যাবাদী।” (সূরা মুনাফিকুন-১)
উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফসমূহ দ্বারা অকাট্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, যারা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নামে মিথ্যা কথা বলে বা বানিয়ে বানিয়ে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করে অর্থাৎ আল্লাহ পাক-এর হাবীব যা বলেন নাই তা বলেছেন বলে ও যা বলেছেন তা বলেন নাই বলে তারা চরম যালিম, মিথ্যাবাদী, মুনাফিক ও কাট্টা কাফির। তাদের স্থান হচ্ছে জাহান্নাম। কারণ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে যে মিথ্যা বলে সে কুফরী করে, আর যে কুফরী করে সে মুরতাদ হয়ে যায়।
আর শরীয়তের ফতওয়া হলো, যে সমস্ত মুসলমান কুফরী করে তারা মুরতাদ হয়ে যায়। আর যারা মুরতাদ হয়ে যায় তাদের একমাত্র শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদ-। শরীয়তে তাদের তওবা করার জন্য তিনদিন সময় দেয়া হয়েছে অন্যথায় তাদের শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদ-।
কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের অপব্যাখ্যাকারীরা জাহান্নামী
উল্লেখ্য, কুরআন শরীফের তাহরীফ, তাবদীল অর্থাৎ পরিবর্তন, পরিবর্ধন যেমন নাজায়িয ও কুফরী তেমনি তাফসীর বির রায় তথা মনগড়া তাফসীর বা ব্যাখ্যা করাও নাজায়িয ও কুফরী।
এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول اله صلى الله عليه وسلم من قال فى القران ررايه فليتبوأ مقعده من النار. وفى رواية من قال فى القران بغير علم فلبتبوأ مقعده من النار.
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ সম্পর্কে মনগড়া কথা বলে, সে যেন (দুনিয়ায় থাকতেই) তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেয়। অপর রেওয়ায়েতে বর্ণিত রয়েছে, যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ সম্পর্কে ইলম্ ব্যতীত অর্থাৎ বিনা প্রমাণে মনগড়া কোন কথা বলে, সে যেন (দুনিয়ায় থাকতেই) তার স্থান দোযখে করে নেয়।” (তিরমিযী, মিশকাত, মিরকাত)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
من فسر القران رايه فقد كفر.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি কুরআন শরীফের মনগড়া ব্যাখ্যা করলো, সে কুফরী করলো।” (ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন)
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اتقوا الحديث عنى الا ما علمتم فمن كذب على متعمدا فليتبوأ مقعده من النار.
অর্থঃ “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার পক্ষ হতে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করার ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। যে পর্যন্ত না তা তোমরা আমার বলে নিশ্চিত হবে। কেননা যে ব্যক্তি আমার প্রতি মিথ্যারোপ করবে, সে যেন (দুনিয়ায় থাকতেই) তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নিল।” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত)
মুলকথা হলো উপরোক্ত বিস্তারিত ও দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো যে, কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের কোথাও ভোটকে আমানত, স্বাক্ষ্য, শুপারিশ, উকিল নিয়োগ বলে উল্লেখ করা হয় নাই। হাটহাজারী খারিজী মাদ্রাসার মৌলবী ছাহেবরা “কুরআন সুন্নায় ভোটকে আমানত স্বাক্ষ্য, ইত্যাদি বলে উল্লেখ করা হয়েছে” একথা বলে একদিক থেকে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব-এর প্রতি মিথ্যারোপ করেছে, অপর দিক থেকে কুরআন সুন্নাহর সুস্পষ্ট অপব্যাখ্যা করেছে। যার প্রত্যেকটাই কাট্টা কুফরী ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ।
কাজেই এধরনের কুফরী আক্বীদায় যারা বিশ্বাসী তাদেরকে অনুসরণ করা, তাদের থেকে ইলম অর্জন করা, তাদের মাদ্রাসায় পড়া, তাদের পিছনে নামায পড়া, তাদেরকে ইমাম হিসেবে নিয়োগ দেয়া প্রত্যেকটাই হারাম ও নাজায়িয।
(অসমাপ্ত)
পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন