প্রকাশিত ফতওয়াসমূহ
[সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীনের জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। আল্লাহ্ পাক-এর অশেষ রহ্মতে “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব-এর অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীল ভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা) ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যায়) এবং ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা) পেশ করার পর-
২৭তম ফতওয়া হিসেবে
“ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় আল্লাহ পাক-এর দরবারে বেশুমার শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
উল্লেখ্য, হিজরী পঞ্চদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ও ইমাম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর প্রতিষ্ঠিত ও পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশিত যামানার তাজদীদী মুখপত্র ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত। এ পত্রিকায় এ যাবৎ যত লিখা বা ফতওয়া প্রকাশ বা পত্রস্থ করা হয়েছে, হচ্ছে ও হবে তার একমাত্র উদ্দেশ্য মানুষের ঈমান-আক্বীদা ও আমল পরিশুদ্ধ করা। এ জন্যেই মূলতঃ যুগে যুগে প্রেরিত হয়েছেন এক লক্ষ চব্বিশ হাজার মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম। এবং সর্বশেষ নবী-রসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অতঃপর প্রত্যেক শতাব্দীর মাঝে প্রেরিত হয়ে আসছেন তাঁর খাছ নায়িব বা ওয়ারিছ তথা যামানার মুজাদ্দিদগণ।
কাজেই, বান্দা ও উম্মত যদি দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দীদার ও সন্তুষ্টি লাভ করতে চায়, রহমত ও নাজাত পেতে চায়, হাক্বীক্বী বান্দা ও হাক্বীক্বী উম্মত হতে চায়, প্রকৃত মু’মিন, মুসলমান ও মুত্তাক্বী হতে চায় তাহলে তার জন্য যামানার মুজাদ্দিদের অনুসারী হওয়া ব্যতীত বিকল্প কোন পথ নেই। সেটা কাছে থেকে হোক কিংবা দূরে থেকে হোক। কারণ আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,
واتبع سبيل من ا ناب الى.
অর্থঃ- “ঐ ব্যীক্তর পথ অনুসরণ করে চলো যিনি আমার দিকে রুজু রয়েছেন।” (সূরা লুক্বমান-১৫)
স্মরণীয় যে, আজকে মুসলমানরা তাদের আদর্শ-ঐতিহ্য ভুলে গিয়ে বিধর্মী-বিজাতীয়দের তর্জ-তরীক্বা, আচার-আচরণ গ্রহণে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাদের এই নাজুক অবস্থা কাটিয়ে ইসলামী আদর্শে আদর্শবান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আহবান করছেন যামানার মহান মুজাদ্দিদ মুদ্দা জিল্লুহুল আলী। সুতরাং তাঁর মুবারক আহবানে সাড়া দেয়ার সময় এখনই। এ লক্ষ্যে ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ পত্রিকার পাঠক, গ্রাহক, শুভাকাঙ্খী ও শুভানুধ্যায়ীগণ ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এর আকর্ষণীয় ও উল্লেখযোগ্য বিভাগ “সুওয়াল-জাওয়াব” ও “ফতওয়া” বিভাগে ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে শরীয়তের সঠিক ফায়ছালা জানার জন্য অসংখ্য সুওয়াল প্রেরণ করেন। যেহেতু আল্লাহ পাক রাব্বুল আ’লামীন কালামে পাকে ইরশাদ করেন,
فسئلوا اهل الذ كر ان كنتم لا تعلمون.
অর্থঃ- “যদি তোমরা না জান, তবে আহ্লে যিকির বা আল্লাহওয়ালাগণকে জিজ্ঞেস করে জেনে নাও।” (সূরা নহল-৪৩ ও সূরা আম্বিয়া-৭)
তাই প্রেরিত সুওয়ালসমূহের প্রেক্ষিতে “ইসলামের নামে গণতন্ত্র, নির্বাচন, ভোট ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” ইসলামের দলীল- কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে পেশ করা হলো।
প্রকৃত বন্ধুর পরিচয়
মূলতঃ আমাদের সাথে কারো যেরূপ বন্ধুত্ব নেই, তদ্রুপ নেই বিদ্বেষ। অর্থাৎ যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তসম্মত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বিদ্বেষ নেই। আর যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তের খিলাফ বা বিপরীত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বন্ধুত্ব নেই। কারণ মুসলমানের বন্ধুত্ব বা বিদ্বেষ একমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর জন্যেই হতে হবে।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে,
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من احب لله وابغض لله واعطى لله ومنع لله فقد استكمل الايمان.
অর্থঃ- “হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক-এর (সন্তুষ্টি লাভের) জন্যে মহব্বত বা বন্ধুত্ব করে, বিদ্বেষ পোষণ করে, আদেশ করে, নিষেধ করে, তার ঈমান পরিপূর্ণ।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী)
বস্তুতঃ মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার প্রতিটি লিখা, বক্তব্য, সুওয়াল-জাওয়াব, ফতওয়া, প্রতিবাদ, প্রতিবেদন, মতামত ইত্যাদি উপরোক্ত হাদীছ শরীফের মূলনীতির ভিত্তিতেই প্রকাশিত হয়ে থাকে।
কাজেই “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় “ইসলামের নামে গণতন্ত্র, নির্বাচন, ভোট ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” দেয়ার মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হলো সত্যান্বেষী বা হক্ব তালাশী মুসলমানগণের নিকট সঠিক বা হক্ব বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা। যার মাধ্যমে প্রত্যেকেই তাদের ঈমান-আক্বীদা ও আমল হিফাযতের মাধ্যমে ইহ্লৌকিক ও পারলৌকিক ইত্মিনান ও নাযাত লাভ করতে পারে।
মূলতঃ মানুষ মাত্রই ভুল হওয়া স্বাভাবিক, তাই এক মু’মিন অপর মু’মিনের ভুল ধরিয়ে বা শুধরিয়ে দেয়া ঈমানী দায়িত্ব। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে,
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم المؤمن مرأة المؤمن اذا رأى فيه عيبا اصلحه.
অর্থঃ- “হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, এক মু’মিন অপর মু’মিনের জন্যে আয়না। যখন সে তার মধ্যে কোন দোষত্রুটি দেখবে তখন সে তাকে সংশোধন করে দিবে।” (বুখারী, আবূ দাউদ, মিশকাত)
উপরোক্ত হাদীছ শরীফের আলোকে অসংখ্য, অগণিত পাঠকগণের পূণঃপূণঃ অনুরোধের প্রেক্ষিতে মুসলমানদের আক্বীদা ও আমল হিফাযতের লক্ষ্যে ইসলামের নামে গণতন্ত্র, নির্বাচন, ভোট ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া প্রদান করা হলো। যাতে করে সত্যান্বেষী, মুসলমানগণ এ সম্পর্কে আপত্তিকর বক্তব্যসমূহের সঠিক শরয়ী ফায়সালা অবগত হন, যার ফলশ্রুতিতে সকলেই উক্ত আপত্তিকর আক্বীদা ও বক্তব্যসমূহ থেকে নিজেদের ঈমান ও আমলের হিফাযত করে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করতে পারেন।
সুওয়ালকারীদের নাম-ঠিকানা
সাইয়্যিদ মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন, ঢাকা
মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন, মুহম্মদপুর, ঢাকা
মুহম্মদ ছিদ্দীকুল আলম, চান্দিনা, কুমিল্লা
মুহম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, শালিখা, মাগুরা
মুহম্মদ আফতাবুদ্দীন, কোনাবাড়ী, গাজিপুর
মুহম্মদ মুহসিনুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
মুহম্মদ হারুনূর রশীদ, মাহিগঞ্জ, রংপুর
শাফিয়ী আহমদ, রাজারহাট, কুড়িগ্রাম
মুহম্মদ সদরুল আমীন গোলাপগঞ্জ, সিলেট
মুহম্মদ আশাদুজ্জামান, পলাশবাড়ী, গাইবান্ধা
মুহম্মদ আশফাকুর রহমান, সিংড়া, নাটোর
মুহম্মদ ইছহাকুর রহমান, কসবা, বি.বাড়িয়া
মুহম্মদ শফিকুছ্ ছালেহীন, মতলব, চাঁদপুর
মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান, প্রভাকরদী, এন.গঞ্জ
মুহম্মদ হারিছুর রহমান, রাজপাড়া, রাজশাহী
মুহম্মদ কাওছার হুসাইন, বানারীপাড়া, বরিশাল
মুহম্মদ হাদীউল ইসলাম, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম
মুহম্মদ কামরুজ্জামান, কুটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ
মুহম্মদ আবুল কাশেম, আক্কেলপুর, জয়পুরহাট
মুহম্মদ হাবীবুল্লাহ, কালীহাতি, টাঙ্গাইল
সুওয়াল
বর্তমান ২০০৭ সালে পুনরায় “সংসদ নির্বাচন” অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যাতে অন্যান্য দলগুলোর মতো নামধারী ইসলামী দলগুলোও সক্রিয়ভাবে উক্ত নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবে তথা প্রার্থী দিবে। ইসলামের নামে যারা নির্বাচনে অংশ নেয় তারা সাধারণতঃ প্রচার করে থাকে যে, গণতন্ত্র আর ইসলাম একই বিষয় এবং তারা যে গণতন্ত্র করছে, সেটা হচ্ছে ইসলামী গণতন্ত্র। তারা গণতন্ত্রের ভিত্তি ভোটকে আমানত, শুপারিশ, উকিল নিয়োগ, স্বাক্ষ্য ইত্যাদি বলে প্রচার করে থাকে।
কেউ কেউ আবার ইসলামী দলকে ভোট দেয়া ফরয-ওয়াজিব বলে থাকে। আরো বলে থাকে যে, ইসলামী দলের প্রার্থীকে ভোট দিলে জান্নাতের টিকেট পাওয়া যাবে। যেমন জামাত নেতারা কিছুদিন পূর্বে একটি দৈনিক পত্রিকার সাক্ষাতকারে বলেছে, ইসলাম ও গণতন্ত্র একই বিষয়।
বায়তুল মুকাররমের খতীব ওবায়দুল হক বলেছে, “ভোট দেয়া আল্লাহ পাক-এর নির্দেশ অর্থাৎ ফরয। আল্লাহ পাক বলেন, ভোট একটি আমানত। আল্লাহ পাক-এর হাবীব বলেছেন, সৎ লোককে ভোট দিতে হবে।” (দৈনিক সংগ্রাম ১লা জুলাই-২০০৬)
মাহিউদ্দিন খান তার মাসিক মদীনা ডিসেম্বর/৯৯ সংখ্যায় নির্বাচন ভিত্তিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোট দান সম্পর্কিত একটি প্রশ্নের উত্তরে লিখেছে, (ক) ছহীহ্ অর্থে মুসলমানদের প্রকৃত শাসক হচ্ছে পবিত্র কুরআন এবং রসূলের সুন্নাহ্। (খ) প্রচলিত যে কোন শাসন ব্যবস্থায় যদি কুরআন-সুন্নাহ্র প্রাধান্য মেনে নেয়া হয় তবে তা মুসলিম জনগণ বিনা দ্বিধায় মেনে নিতে পারেন। (গ) ভোটের মাধ্যমে নেতা বা শাসক নির্বাচনের বর্তমান যে পদ্ধতি এটা অংকুরিত হয়েছে, ইসলামী শুরা পদ্ধতির মধ্য থেকে। সুতরাং এই পদ্ধতিতে ভোটের রাজনীতি ইসলামে বৈধ নয় এ কথা বলা যাবে না। (ঘ) এ যুগের ভোট প্রদান বাইয়াতের বিকল্প বিবেচিত হতে পারে।
অনুরূপ হাটহাজারী খারেজী মাদ্রাসার মুখপত্র মাসিক মুহীনুল ইসলামের সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর’ ০৬ সংখ্যায়ও ভোট-নির্বাচন সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছে, (ক) গণতন্ত্র বা নির্বাচন দুই প্রকার। (১) পাশ্চত্য গণতন্ত্র বা নির্বাচন। (২) ইসলামী গণতন্ত্র বা নির্বাচন। (খ) খুলাফায়ে রাশেদীন ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছিলেন (গ) পদপ্রার্থী হওয়া জায়িয। (ঘ) কুরআন সুন্নাহয় ভোটকে স্বাক্ষী, আমানত, সুপারিশ ও প্রতিনিধি নিয়োগ বলে উল্লেখ করা হয়েছে ইত্যাদি অনেক ভুল তথ্য তারা উল্লেখ্য করেছে। পটিয়া খারেজী মাদ্রাসার মুখপত্র “আত্ তাওহীদ” …… সংখ্যায় ভোট বেচা-কেনা করাকেও জায়িয ফতওয়া দিয়েছে।
আর উল্লিখিত বিষয়ে তাদের নিকট দলীল তলব করলে তারা সাধারণতঃ মুফতী শফীর মা’য়ারিফুল কুরআন ও ভোটের ইসলামী শরয়ী বিধান এবং শামসুল হক ফরীদপুরী ছাহেবের বক্তব্য তুলে ধরে বলে থাকে যে, তারা ভোটকে জায়িয বলেছেন।
এখন আমাদের জানার বিষয় হলোঃ
১। ইসলাম আর গণতন্ত্র কি একই বিষয়? উভয়ের মধ্যে কি কোন পার্থক্য নেই? এ সম্পর্কে জামাত নেতার এ বক্তব্য কতটুকু শরীয়তসম্মত?
২। নির্বাচন ও ভোট প্রথার উৎপত্তি কোথায় এবং কবে? কোন নবী-রসূল, ছাহাবী, তাবিয়ী, তাবে তাবিয়ীন ভোট ও নির্বাচন করেছেন কি?
৩। ইসলাম বা শরীয়তের দৃষ্টিতে পদপ্রার্থী হওয়া বা ভোট চাওয়া জায়িয কিনা?
৪। ভোট একটি আমানত, স্বাক্ষ্য ও উকিল নিয়োগ মুফতী শফী ও শামছুল হক ফরীদপুরী ছাহেব ও তার অনুসারীদের উক্ত বক্তব্য কতটুকু সঠিক ও দলীল ভিত্তিক।
৫। ভোট দেয়া আল্লাহর নির্দেশ তথা ফরয-ওয়াজিব। আল্লাহ বলেন, ‘ভোট একটি আমানত’। আল্লাহ পাক-এর হাবীব বলেছেন, ‘সৎ লোককে ভোট দিতে হবে।’ বায়তুল মুকাররম মসজিদের খতীবের একথা কতটুকু শরীয়ত ও দলীল সম্মত?
৬। (ক) ছহীহ্ অর্থে মুসলমানদের প্রকৃত শাসক হচ্ছে পবিত্র কুরআন এবং রসূলের সুন্নাহ্। (খ) প্রচলিত যে কোন শাসন ব্যবস্থায় যদি কুরআন-সুন্নাহ্র প্রাধান্য মেনে নেয়া হয় তবে তা মুসলিম জনগণ বিনা দ্বিধায় মেনে নিতে পারেন। (গ) ভোটের মাধ্যমে নেতা বা শাসক নির্বাচনের বর্তমান যে পদ্ধতি এটা অংকুরিত হয়েছে- ইসলামী শুরা পদ্ধতির মধ্য থেকে। সুতরাং এই পদ্ধতিতে ভোটের রাজনীতি ইসলামে বৈধ নয় এ কথা বলা যাবে না। (ঘ) এ যুগের ভোট প্রদান বাইয়াতের বিকল্প বিবেচিত হতে পারে।
মাহিউদ্দীনের উপরোক্ত বক্তব্য কতটুকু সত্য ও দলীলসম্মত?
৭। খুলাফায়ে রাশিদীন কি পদপ্রার্থী হয়েছিলেন এবং নির্বাচনের মাধ্যমে খলীফা নির্বাচিত হয়েছেন?
৮। একটি পদের জন্য কি একাধিক প্রার্থী ছিলেন? এবং তাঁদের কি কোন মার্কা ছিল?
৯। খলীফাগণ রাষ্ট্র পরিচালনা করেছিলেন, না খিলাফত?
১০। খলীফাগণ মানবরচিত বিধানে, না শরয়ী বিধানে খিলাফত পরিচালনা করেছেন?
১১। খলীফা নিয়োগদান পদ্ধতি নির্বাচন, না মনোনয়ন?
১২। গণতান্ত্রিক বহুদলীয় নির্বাচনে প্রার্থীকে ভোট দেয়া ওয়াজিব কিনা?
১৩। (ক) গণতন্ত্র বা নির্বাচন দু’প্রকার পাশ্চত্য গণতন্ত্র, বা নির্বাচন ও ইসলাম গণতন্ত্র বা নির্বাচন। (খ) খুলাফায়ে রাশেদীন ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছে। (গ) পদপ্রার্থী হওয়া জায়িয। ((ঘ) কুরআন-সুন্নাহয় ভোটকে স্বাক্ষী, আমানত সুপারিশ ও প্রতিনিধি নিয়োগ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
হাট হাজারী খারেজী মৌলবী ছাহেবদের উপরোক্ত বক্তব্য কতটুকু সত্য ও দলীলসম্মত?
ভোট বেচাকেনাকে জায়িয ও তাওহীদ পত্রিকার এ বক্তব্য কতটুকু কুরআন-সুন্নাহ সম্মত?
১৫। যদি ইসলামের দৃষ্টিতে গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন নাজায়িয হয় তবে রাষ্ট্র পরিচালিত হবে কিভাবে? এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠিত হবে কিভাবে? আমরা জানি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠা করা ফরযে আইন। তবে কি সশস্ত্র বিপ্লব বা বোমাবাজি, জিহাদ বা জঙ্গী কার্যকলাপের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা যাবে?
১৬। আজকাল নামধারী প্রতিটি ইসলামী দলকেই দেখা যায় বিভিন্ন দলের সাথে ভোট বা চুক্তি করে থাকে। তাদেরকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তারা এটাকে হুদায়বিয়ার সন্ধির সাথে তুলনা করে থাকে। হুদায়বিয়ার সন্ধির সাথে তাদের উক্ত জোট বা চুক্তিকে তুলনা করা সঠিক ও শরীয়তসম্মত কিনা?
১৭। যে সকল কথিত মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিছ, শাইখুল হাদীছ, খতীব, পীর, আমীর ইসলামের নামে গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন করছে, ভোটকে আমানত, স্বাক্ষ্য ফরয-ওয়াজিব বলছে এবং ক্ষমতার লোভে বাতিলের সাথে আতাত করছে তারা হক্কানী আলিম কিনা?
তাদের পিছনে নামায পড়া জায়িয কিনা? তাদের ব্যাপারে শরীয়তের ফায়ছালা কি?
উপরোক্ত প্রতিটি বিষয় দলীলভিত্তিক বিস্তারিত জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান-আক্বীদা ও আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদি।
জাওয়াবঃ
ইসলামের নামে বা ইসলামের দোহাই দিয়ে গণতন্ত্র, ভোট, নিবার্চন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া, নিজ দলকে ভোট দেয়া ওয়াজিব ও জান্নাতের টিকেট লাভের কারণ বলা এবং ভোটকে আমানত, সুপারিশ, স্বাক্ষ্য ইত্যাদি বলা সম্পূর্ণ হারাম ও কুফরী। এটাই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস তথা শরীয়তের চুড়ান্ত, ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া।
অতএব, বলার অপেক্ষা রাখে না যে, গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন ও পদপ্রাথী হওয়া সম্পর্কিত তথাকথিত খতীব উবায়দুল হক্ব, নিজামী, আহমদ শফী, মাহিউদ্দীন, আমিনী ও আযীযূল হক্ব- ওহাবী, দেওবন্দী ও জামাতীগংদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের খিলাফ বিধায় তা ভুল, অশুদ্ধ, জিহালতপূর্ণ দলীলবিহীন ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। নিম্নে সুওয়ালে উল্লেখিত তাদের প্রতিটি বক্তব্যের খণ্ডনমূলক জাওয়াব প্রদান করা হলো।
(ধারাবাহিক)
(৬)
“গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন সম্পর্কে মাসিক মদীনায়
প্রদত্ত বিভ্রান্তিকর, মনগড়া ও কুফরীমূলক
বক্তব্যসমূহের খণ্ডনমূলক জবাব”
মাহিউদ্দিন খান তার মাসিক মদীনা ডিসেম্বর/৯৯ সংখ্যায় নির্বাচন ভিত্তিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোট দান সম্পর্কিত একটি প্রশ্নের উত্তরে লিখেছে,
(ক)
ছহীহ্ অর্থে মুসলমানদের প্রকৃত শাসক হচ্ছে পবিত্র কুরআন এবং রসূলের সুন্নাহ্
এর জবাবে বলতে হয় যে, মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য শুধু ভুলই নয়। বরং সুস্পষ্ট কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কেননা প্রথমতঃ শাসক হচ্ছে ‘মাখলূক’ আর কুরআন ও সুন্নাহ হচ্ছে পবিত্র ওহী অথাৎ মহান আল্লাহ পাক-এর ‘কালাম’ যা গায়রে মাখলুকের অন্তর্ভুক্ত।
যেমন কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ সম্পর্কে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ‘আক্বাইদের কিতাব’ সমূহে উল্লেখ আছে, আল ইমামুল আ’যম, আল মুজতাহিদুল আ’যম, ইমামুল আক্বাইদে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত, হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর লিখিত বিশ্বখ্যাত শ্রেষ্ঠ কিতাব ‘আল ফিক্বহুল আকবর’ এ বর্ণিত আছে,
القران كلام الله تعالى فى المصا حف مكتوب وفى القلوب محفوظ وعلى الا لسن مقروء وعلى النبى عليه الصلاة والسلام منزل.
অর্থাৎ, “আল কুরআনুল করীম” আল্লাহ তায়ালার কালাম বা বাণী যা গ্রন্থে লিপিবদ্ধ, ক্বলব সমূহে সংরক্ষিত, জবান দ্বারা পঠিত এবং হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি অবতীর্ণ।”
ولفظنا بالقران مخلوق، وكتا بتنا له مخلو قة، وقراءتنا له مخلوقة، والقران غير مخلوق.
অর্থাৎ কুরআন শরীফে আমাদের উচ্চারণ সৃষ্ট, তাতে আমাদের লিখন ও তেলাওয়াত সৃষ্ট। কিন্তু কুরআন শরীফ (আল্লাহ পাক-এর বাণী) সৃষ্ট নয়।
وماذكر الله تعالى فى القران حكاية عن موسى وغيره من الانبياء عليهم الصلوة والسلام، وعن فرعون وابليس فان ذلك كله كلام الله تعالى اخبارا عنهم، وكلام الله تعالى غير مخلوق وكلام موسى وغيره من المخلو قين مخلوق والقران كام الله تعالى فهو قديم لاكلامهم.
অর্থাৎ মহান আল্লাহ তায়ালা কুরআন শরীফে হযরত মুসা আলাইহিস সালাম ও অন্যান্য নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম সম্পর্কে এবং অভিশপ্ত ফিরাউন ও ইবলিস সম্পর্কে যে সমস্ত হিকায়াত (ঘটনা) বর্ণনা করেছেন, তা সবই তাদের সংবাদ সম্বলিত মহান আল্লাহ তায়ালার বাণী। আল্লাহ তায়ালার কালাম (বাণী) মাখলূক নয় তথা সৃষ্ট নয়। কিন্তু হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম ও অন্যান্য মাখলূকাতের কথা সৃষ্ট। কুরআন শরীফ আল্লাহ তায়ালার বাণী- যা চিরন্তন, অবিনশ্বর। কিন্তু তাদের (মানুষের) কথা চিরন্তন নয়।
والله تعالى يتكلم بلا الة ولاحروف. والحروف مخلو فة وكلام الله تعالى غير مخلوق.
অর্থাৎ আল্লাহ পাক কথা বলেন উপকরণ ও কোন বর্ণ (অক্ষর) ছাড়াই। বর্ণসমূহ মাখলূক (বা সৃষ্টি) আর আল্লাহ তায়ালার বাণী মাখলূক (সৃষ্টি) নয়।
আল্লামা ইমাম মুল্লা আলী ক্বারী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “শরহে কিতাবুল ফিক্বহিল আকবার” এর মধ্যে বর্ণনা করেছেন,
(والكلام) اى من الصفات الذاتية فانه سبحانه متكلم بكلامه الذى هو صفته الازلية.
অর্থাৎ (কালাম) অর্থাৎ এটি আল্লাহ পাক-এর ছিফাতে জাতিয়া। কেননা আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বাক্যালাপ করেন, এটা তাঁর আযালী ছিফত। (অনুরূপ ‘শরহে ফিক্বহুল আকবর লিশ্ শাইখ আবুল মুনতাহা আহমদ বিন মুহম্মদ আল মুগনীসাবী হানাফী’ কিতাবে ও আকাইদে নাসাফীতে উল্লেখ আছে)
ইমাম আবূ জা’ফর তাহাবী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ‘আক্বীদাতুত্ ত্বাহাবী’ কিতাবে লিখেছেন,
وان القران كلام الله تعالى منه بدا بلا كيفية قولا.
অর্থাৎ নিশ্চয়ই কুরআন শরীফ আল্লাহ তায়ালার কালাম (বাণী)। এ কুরআন শরীফ আল্লাহ তায়ালার সত্তা থেকে সাধারণ কথাবার্তার পদ্ধতি ছাড়া বাণী হিসেবে প্রকাশ হয়েছে।
وانزله على نبيه وحيا، وصدقه المؤ منون على ذلك حقا. وايقنوا انه. كلام الله تعالى با لحقيقة ليس بمخلوق ككلام البرية.
অর্থাৎ আল্লাহ পাক কুরআন শরীফকে ওহী হিসেবে তাঁর নবী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি অবতীর্ণ করেছেন। মু’মিন -মুসলমানগণ তাকে এ ব্যাপারে সত্য বলে বিশ্বাস করেছেন। আর তাঁরা দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করেছেন যে, ইহা প্রকৃতপক্ষেই আল্লাহ তায়ালার কালাম, মানুষের কথার ন্যায় কোন সৃষ্ট কথা নয়।
فمن سمعه فزعم انه كلام البشر فقد كفر.
যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ শ্রবণ করার পর এ ধারণা পোষণ করে যে, এটি মানুষের কালাম নিশ্চয়ই সে কাফির হয়ে যাবে।
হযরত আল্লামা উমর বিন আহমদ বিন ইসমাঈল বিন মুহম্মদ বিন লুকমান নাসাফী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ‘আল আক্বাইদুন্ নাসাফিয়্যাহ’ কিতাবে লিখেছেন,
والقر ان كلام الله تعالى غير مخلوق وهو مكتوب فى مصا حفنا محفوظ فى قلو بنا مقروء بالسنتنا مسموع باذاننا غير حال فيها.
অর্থাৎ কুরআন শরীফ আল্লাহ তায়ালার কালাম, যা সৃষ্ট নয়। যা আমাদের মাছহাফে (মাছহাফে উছমানীতে) লিখিত। আমাদের অন্তরে সংরক্ষিত। আমাদের জবানে পঠিতহয়। আমাদের কানে শ্রুত হওয়া সত্ত্বেও এগুলোর মধ্যে কুরআন প্রবিষ্ট নয়।
غير حال فيها এর ব্যাখ্যায় আল্লামা তাফতাযানী শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর শরহে আক্বাঈদে নাসাফী’ কিতাবে বলেন,
(غير حال فيها) اىمع ذلك ليس حالافى المصا حف ولا فى القلوب ولا فى الالسنة ولا فى الاذان بل هو معنى قديم قائم بذات الله تعالى.
অর্থাৎ (তা সত্ত্বেও এগুলোর মধ্যে কুরআন শরীফ প্রবিদ্ধ নয়) অর্থাৎ এসব সত্ত্বেও কুরআন শরীফ মাছহাফের মধ্যে প্রবিষ্ট নয়, না অন্তরের মধ্যে, না জবানে, না কানে। বরং এটি একটি অবিনশ্বর-শ্বাশ্বত অর্থ যা আল্লাহ তায়ালার জাতে পাকের সাথে প্রতিষ্ঠিত।
অনুরূপ হাদীছ শরীফ বা সুন্নাহ শরীফও ওহীর অন্তুর্ভক্ত। কারণ ওহী হচ্ছে, দু’প্রকার। (১) ওহীহে মাতলূ অর্থাৎ কুরআন শরীফ। যা তিলাওয়াত করা হয়। (২) ওহীয়ে গায়রে মাতলূ অর্থাৎ হাদীছ শরীফ বা সুন্নাহ শরীফ যা তিলাওয়াত হয়না। সুতরাং ওহী বা কালামুল্লাহ হিসেবে সুন্নাহ বা হাদীছ শরীফও আলাদা মর্যাদা রাখে।
কাজেই কুরআন ও সুন্নাকে শাসক বলার অর্থ হলো ‘ওহী বা কালামুল্লাহ’ শরীফকে ‘মাখলুক’ বা সৃষ্ট বস্তু হিসেবে সাব্যস্ত করা যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
বস্তুতঃ কুরআন-সুন্নাহ্ মুসলমানদের শাসক নয়। বরং তা মুসলমানদের জন্য যেমন পরিপূর্ণ জীবন বিধান বা ব্যবস্থা তদ্রুপ শাসন বা প্রশাসনের ক্ষেত্রেও। আর যিনি উক্ত কুরআন-সুন্নাহ্ তথা শরয়ী বিধান মোতাবেক শাসন বা বিচারকার্য্য তথা খিলাফত পরিচালনা করেন, সহীহ্ অর্থে তিনিই হলেন মুসলমানদের শাসক তথা খলীফা।
মূলতঃ ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও গোটা বিশ্বের মানব-জ্বিন জাতির ইহলৌকিক ও পরলৌকিক শান্তিকামী, সুষ্ঠ বিধানাবলীর নাম হচ্ছে- কুরআন ও সুন্নাহ্।
যা ইত্তেবা বা অনুসরণ করতে কঠোরভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেননা একমাত্র কুরআন-সুন্নাহ পরিপূর্ণরূপে অনুসরণ করার মধ্যেই হিদায়েত ও নাজাত রয়ে গেছে।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক ‘সূরা বাক্বারার’ প্রথম আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,
الم ذلك الكتاب لاريب فيه هدى للمتقين.
অর্থঃ “কুরআন শরীফ এমন একখানা কিতাব যার মধ্যে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। যা মুত্তাক্বীদেরকে হিদায়েত দান করবে।” অর্থাৎ যারা কুরআন শরীফকে অনুসরণ করবে তারা অবশ্যই হিদায়েত লাভ করবে। এ প্রসঙ্গে কুরআন শরীফের অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে,
يضل به كثيرا ويهدى به كثيرا وما يضل به الا الفا سقين.
অর্থঃ কুরআন শরীফের ইত্তেবা করার কারণে বহু লোক হিদায়েতপ্রাপ্ত হয়েছে। আর ইত্তেবা না করার কারণে তথা অস্বীকার করার কারণে বহু লোক বিভ্রান্ত হয়েছে। ফাসেক ব্যতীত কেউ বিভ্রান্ত হয়নি।” (সূরা বাক্বারা-২৫)
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن عمر بن الخطاب رضى الله تعالى عنه ان الله يرفع بهذا الكتاب اقوا ما ويضع به اخرين.
অর্থঃ “হযরত ওমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক এ কিতাবকে (কুরআন শরীফ) অনুসরণ করার কারণে অনেক ক্বওমকে সম্মানিত বা হিদায়েত দান করেছেন। আর অনেকে তা অস্বীকার ও অবজ্ঞা ভরে অনুসরণ না করার কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে।” (মিশকাত শরীফ, মুসলিম শরীফ)
মহান আল্লাহ পাক এ প্রসঙ্গে আরো ইরশাদ করেন,
فا ما ياتينكم منى هدى فمن تبع هدى فلاخوف عليهم ولاهم يحز نون.
অর্থঃ “যখন তোমাদের নিকট আমার পক্ষ থেকে হিদায়েত তথা কুরআন-সুন্নাহ আসবে। আর এ কুরআন-সুন্নাহকে যারা অনুসরণ করবে তাদের কোন ভয় ও চিন্তা থাকবে না।” (সূরা বাক্বারা-৩৮)
তাই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
عن مالك بن انس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم تر كت فيكم امر ين لن تضلوا ما تمسكتم بهما كتاب الله وسنتى.
অর্থঃ- “হযরত মালিক ইবনে আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি তোমাদের মাঝে দু’টি বিধান রেখে যাচ্ছি যতদিন তোমরা সে দু’টিকে আকঁড়ে থাকবে, কখনোই গোমরাহ্ হবে না তা হলো কুরআন শরীফ ও আমার সুন্নাহ শরীফ।” (মুয়াত্তায়ে ইমাম মালিক, মিশকাত)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআন ও সুন্নাহকে পরিপূর্ণরূপে অনুসরণ করার জন্যে কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। যারা কুরআন ও সুন্নাহকে পরিপূর্ণ অনুসরণ করবে তারাই মূলতঃ হিদায়েতে ও নাজাত লাভ করবে। ইহকাল ও পরকালে তাঁদের কোন ভয় ও চিন্তা থাকবে না। আর মহান আল্লাহ পাক এরূপ লোকদেরকেই খিলাফত দান করার অঙ্গিকার করেছেন। যেমন আল্লাহু পাক ইরশাদ করেন,
وعد الله الذ ين امنوا منكم وعملوا الصا لحات ليستخلفنهم فى الا رض كما استخلف الذ ين من قبلهم وليمكنن لهم دينهم الذى ار تضى لهم وليبد لنهم من م بعد خو فهم امنا يعبدو ننى لا يشر كون بى شيأ ومن كفر بعد ذلك فاولئك هم الفا سقون. واقيموا الصلوة واتوا الز كوة واطيعوا الرسول لعلكم تر حمون. لاتحسبن الذ ين كفرو ا معجزين فى الارض ومأ واهم النار ولبئس المصير.
অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক ওয়াদা দিয়েছেন যে, তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছেন এবং আমলে ছলেহ করেছেন, তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে খিলাফত (শাসন কর্তৃত্ব) দান করবেন। যেমন তিনি তাদের পূর্ববর্তীদেরকে খিলাফত দিয়েছিলেন এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের জন্য তাদের দ্বীনকে, যে দ্বীন তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং নিশ্চয়ই তিনি তাদের ভয়ভীতির পরিবর্তে আমান (নিরাপত্তা) দান করবেন এ শর্তে যে, তারা আমার ইবাদত বন্দেগী করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না। আর এর পর যারা অস্বীকার করবে, তারাই ফাসেক। তোমরা নামাজ কায়েম কর এবং যাকাত আদায় কর এবং রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইতায়াত, অনুসরণ ও আনুগত্যতা প্রকাশ কর। অবশ্যই তোমরা (পূর্ণ) রহ্মতপ্রাপ্ত হবে। তোমরা কাফিরদের সম্পর্কে এটা ধারণা করোনা যে, তারা জমিনে পরাক্রমশীল, তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম, আর নিশ্চয়ই তাদের প্রত্যাবর্তন স্থল অত্যন্ত নিকৃষ্ট।” (সূরা নূর/ ৫৫-৫৭)
মূলকথা হলো, যিনি পরিপূর্ণরূপে কুরআন ও সুন্নাহকে অনুসরণ করেন এবং কুরআন ও সুন্নাহ মুতাবিক শাসন বা বিচার কার্য তথা খিলাফত পরিচালনা করেন ছহীহ অর্থে তিনিই মুসলমানদের প্রকৃত শাসক বা খলীফা।
কাজেই, “কুরআন-সুন্নাহ’ মুসলমানদের প্রকৃত শাসক” মাহিউদ্দীনের এ বক্তব্য সম্পূর্ণ ভুল, মনগড়া, দলীল বিহীন ও কুফরীমূলক বলে প্রমাণিত হলো।
মাহিউদ্দিন তার মাসিক মদীনা ডিসেম্বর/৯৯ সংখ্যায় নির্বাচন ভিত্তিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোট দান সম্পর্কিত উক্ত প্রশ্নোত্তরে আরো লিখেছেঃ
(খ)
প্রচলিত যে কোন শাসন ব্যবস্থায় যদি কুরআন-সুন্নাহ্র প্রাধান্য মেনে নেয়া হয় তাহলে তা মুসলিম জনগণ বিনা দ্বিধায় মেনে নিতে পারেন।
মাসিক মদীনার এ বক্তব্যটিও শুদ্ধ হয়নি। বরং কুফরীমূলক হয়েছে। কারণ মাসিক মদীনার বক্তব্য অনুযায়ী বোঝা যায় যে, প্রচলিত শাসন ব্যবস্থায় শরীয়ত বিরোধী নিয়ম-কানুনও বজায় থাকবে আর তার পাশাপাশি কুরআন-সুন্নাহ্র আইনও বজায় থাকেব। তবে বেশী থাকবে কুরআন-সুন্নাহ্র আইন। আর এটাকেই সে বলতে চেয়েছে কুরআন-সুন্নাহ্র প্রাধান্য।
মূলতঃ তার বিবৃত “প্রচলিত ব্যবস্থায় কুরআন-সুন্নাহ্র প্রাধান্য” এটা একটা স্ব-বিরোধী ও জিহালতপূর্ণ কথা। কারণ কুরআন-সুন্নাহ্র প্রাধান্য তখনই স্বীকৃত হবে যখন সবক্ষেত্রে, সব বিষয়ে সর্বোতরূপে কুরআন-সুন্নাহ্র বাস্তবায়ন ঘটানো হবে। নচেৎ নয়। আল্লাহ্ পাক বলেন,
افتؤ منون ببعض الكتاب وتكفرون ببعض فما جزاء من يفعل ذلك منكم الا خزى فى الحيوة الد نيا ويوم القيمة يردون الى اشد العذاب وما الله بغافل عما نعملون.
অর্থঃ- “তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশ মানবে আর কিছু অংশ মানবে না? তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ করবে পার্থিব জীবনে তাদের লাঞ্ছনা ছাড়া কিছুই থাকবে না এবং পরকালে তাদেরকে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে। আল্লাহ পাক তোমাদের আমল সম্পর্কে বেখবর নন।” (সূরা বাক্বারা/৮৫)
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য বর্তমানে প্রচলিত যে শাসন ব্যবস্থা রয়েছে তা হচ্ছে- সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ইত্যাদি। এ সব শাসন ব্যবস্থায় যদি কুরআন-সুন্নাহ্কে প্রাধান্য দেয়া হয় আর তা যদি পরিপূর্ণভাবে হয় তাহলে তো সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র, বা গণতন্ত্র থাকবে না। বরং তা খিলাফত পদ্ধতির রূপ ধারণ করবে। অর্থাৎ খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াত বা ইসলামী খিলাফত হিসেবে সাব্যস্ত হবে। যে শাসন ব্যবস্থার জন্য শরীয়ত নির্দেশ করেছে।
আর যদি সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রের মধ্যে কোন কোন ক্ষেত্রে কুরআন-সুন্নাহ্কে প্রাধান্য দেয়া হয় এবং কোন কোন ক্ষেত্রে উল্লিখিত মতবাদের আইন-কানুন জারি থাকে তাহলে তা ইসলামের দৃষ্টিতে কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না এবং মুসলমানদের পক্ষে সেটা মেনে নেয়াও শরীয়তসম্মত হবে না। কারণ আল্লাহ্ পাক বলেন,
افحكم الجا هليه يبغون ومن احسن من الله حكما لقوم يو قنون.
অর্থঃ- “তোমরা কি জাহেলিয়াতের আইন-কানুন তালাশ কর বা চাও। অথচ আল্লাহ্ পাক হতে ঈমানদারদের জন্য উত্তম হুকুমদাতা বা আইন প্রণেতা কে রয়েছেন?” (সূরা মায়েদা/৫০)
এ প্রসঙ্গে আল্লহ পাক আরো বলেন,
قا تلوا الذين لا يؤ منون بالله ولا باليوم الاخسر ولا يحر مون ما حرم الله ورسوله ولايدينون دين الحق.
অর্থঃ- “তোমরা জিহাদ কর ঐ সমস্ত লোকদের সাথে যারা আল্লাহ পাক এবং পরকালের প্রতি ঈমান রাখেনা, আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল যা হারাম করেছেন তা হারাম মানেনা এবং দ্বীন ইসলামকে হক্ব, পরিপূর্ণ, মনোনীত দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করে না।” (সূরা তওবা-২৯)
অর্থাৎ প্রত্যেক ঈমানদার বা মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরজ-ওয়াজিব হলো একমাত্র আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রণীত বিধান তথা নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীক্বা মুতাবিক নিজেকে পরিচালিত করা।
কারণ যারা আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীবের বিধান বা নিয়ম-নীতি বাদ দিয়ে বেদ্বীন-বদদ্বীনদের নিয়ম-নীতি তালাশ ও অনুসরণ করবে বা ইসলামের সাথে অন্য কোন নিয়ম-নীতি মিশ্রিত করবে। ইসলামকে হক্ব ও পরিপূর্ণ দ্বীন হিসেবে স্বীকার করবেন, হারামকে হারাম ও হালালকে হালাল মানবেনা নিঃসন্দেহে তারা মুরতাদের অন্তর্ভুক্ত। তাদের একমাত্র শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড। যা উপরোক্ত আয়াত শরীফে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত রয়েছে। কেননা ইসলাম আসার সাথে সাথে পূর্ববর্তী সকল দ্বীন ও পূর্ববর্তী-পরবর্তী সকল মানব রচিত মতবাদ বাতিল হয়ে গেছে।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেন,
هو الذى ارسل رسوله بالهدى ودين الحق ليظهره على الد ين كله وكفى بالله شهيدا. محمد رسول الله.
অর্থঃ- “তিনি (আল্লাহ্ পাক) তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হিদায়েত এবং সত্য দ্বীন সহকারে পাঠিয়েছেন সকল দ্বীনের উপর প্রাধান্য দিয়ে (সমস্ত দ্বীনকে বাতিল ঘোষণা করে তা ওহী দ্বারা নাযিলকৃত হোক অথবা মানব রচিত হোক আর তা পূর্বে হোক অথবা পরে হোক) এবং এ বিষয়ে আল্লাহ্ পাক-এর স্বাক্ষ্যই যথেষ্ট। (যার সাক্ষী আল্লাহ্ পাক) আর রসূল হচ্ছেন হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” (সূরা ফাতহ্-২৮, ২৯)
অর্থাৎ অন্যান্য সমস্ত ধর্ম অর্থাৎ পূর্বের সমস্ত আসমানী কিতাব যা ওহী দ্বারা নাযিলকৃত ১০০ খানা ছহীফা ও ৩ খানা কিতাব তাওরাত শরীফ, যাবুর শরীফ ও ইনজিল শরীফ এবং পূর্বের ও পরের মানব রচিত সমস্ত মতবাদ যেমন- গণতন্ত্র, সমাজতন্দ্র, রাজতন্ত্র ইত্যাদি বাতিল করে দিয়ে একমাত্র দ্বীন ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তাঁর হাবীবকে পাঠিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে,
عن جابر قال حين اتاه عمربن الخطاب قال انا نسمع احاد يث من يهود تعجبنا افترى ان نكتب بعضها فقال امتهو كون انتم كما تهوكت اليهود والنصارى لقد جئتكم بها بيضاء نقية ولو كان موسى حيا ما وسعه الا اتباعى.
অর্থঃ- “হযরত জাবির রদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একদিন হযরত ওমর ফারুক রদিয়াল্লাহু আনহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহ্ পাক-এর রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা ইহুদীদের নিকট থেকে কিছু কথা শুনি যাতে আশ্চর্য্যবোধ করি। তা থেকে কিছু কি আমরা লিখে রাখব। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুম! তোমরা ইহুদী-নাসারাদের মত ইসলাম সম্পর্কে দ্বিধাগ্রস্থ রয়েছো? নিশ্চয়ই আমি তোমাদের জন্য পরিপূর্ণ, উজ্বল দ্বীন নিয়ে এসেছি। এমনকি যদি ইহুদীদের নবী হযরত মূসা আলাইহিস্ সালামও জীবিত থাকতেন তবে তাঁর উপরও আমার দ্বীন মানা ওয়াজিব হতো।” (আহমদ, বায়হাক্বী)
অর্থাৎ ঈমানদাররা ইসলামের কিছু মানবে তার সাথে ইহুদী, নাছারা, হিন্দু, বৌদ্ধ, মজুসী, বেদ্বীন-বদদ্বীন, কাফের ও মুশরিকদের কিছু গ্রহণ করবে বা মানবে তা হবেনা কারণ তা কঠিন নিষেধ রয়েছে। তাহলে কি করে ঈমানদারের পক্ষে ইসলামের সাথে মিশ্রিত করে অন্য ধর্মীয় নিয়ম-কানুন বা মতবাদ মেনে নেয়া সম্ভব? এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেন,
ولا تلبسوا الحق بالنا طل.
অর্থঃ- “হক্বকে না হক্বের সাথে মিশ্রিত করনা(ঈমানের সাথে কুফরীকে মিশ্রিত করনা)।” (সূরা বাক্বারা/৪২)
এরপরও যদি কেউ অন্য কোন ধর্মীয় নিয়ম-কানুন বা মতবাদ ইসলামের সাথে মিশ্রিত করে গ্রহণ করে তার কঠিন পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক এরশাদ করেন,
ومن يبتغ غير الاسلام دينا فلن يقبل منه وهو فى الاخرة من الخاسرين.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে বা চায় তা কখনোই তার থেকে গ্রহণ করা হবেনা।
বরং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (সূরা আলে ইমরান/৮৫)
আল্লাহ পাক আরো বলেন,
كيف يهدى الله قوما كفر وا بعد ايما نهم وشهدوا ان الرسول حق وجا ئهم البينت والله لايهدى القوم الظلمين. او لئك جزاؤهم ان عليهم لعنة الله والملئكة والناس اجمعين. خلد ين فيها لايخفف عنهم العذ اب ولاهم ينظرون.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক কি করে ঐ সম্প্রদায়কে হিদায়েত দান করবেন যারা ঈমান আনার পর কুফরী করে অর্থাৎ হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম করে, ইসলাম বাদ দিয়ে বেদ্বীন-বদদ্বীনদের নিয়ম-নীতি পছন্দ ও অনুসরণ করে এবং তা ইসলামের সাথে মিশ্রিত করে অথচ তারা সাক্ষী দিয়েছে যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্য এবং তাদের নিকট কুরআন-সুন্নাহর দলীলও এসেছে। আল্লাহ পাক যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়েত দান করেন না। ঐ সমস্ত লোকদের শাস্তি হলো, তাদের প্রতি আল্লাহ পাক-এর, ফেরেশতাগণের এবং সমস্ত মানুষের লা’নত। অনন্তকাল ধরে সেই লা’নতের মধ্যে তারা থাকবে। তাদের উপর শাস্তি লাঘব করা হবেনা এবং তাদেরকে অবসরও দেয়া হবেনা।” (সূরা আলে ইমরান-৮৬, ৮৭, ৮৮)
আর এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফে আরো সুস্পষ্টভাবে ইরশাদ হয়েছে,
عن جابر رضى الله تعالى عنه ان عمر بن الخطاب رضى الله تعالى عنه اتى رسول الله صلى الله عليه وسلم بنسخة من التورة فقال يا رسول الله صلى الله عليه وسلم هذه نسخة من التورة فسكت فجعل يقرأ ووجه رسول الله صلى الله عليه وسلم يتغير فقال ابو بكر ثكلتك الثواكل ما ترى ما بوجه رسول الله صلى الله عليه وسلم فنظر عمر الى وجه رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال اعوذ بالله من غضب الله وغضب رسوله رضينا بالله ربا وبالاسلام دينا وبمحمد نبيا فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم والذى نفس محمد صلى الله عليه وسلم بيده لو بدا لكم موسى عليه السلام فا تبعتموه وتر كتمونى لضللتم عن سواء السبيل ولو كان حيا وادرك نبوتى لاتبعنى.
অর্থঃ- “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, একদিন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট তাওরাত শরীফের একটি কপি এনে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এটি তাওরাত শরীফের একটি কপি। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চুপ রইলেন। হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তা পড়তে আরম্ভ করলেন। আর এদিকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চেহারা মুবারক লাল হতে লাগলো। অর্থাৎ অসন্তুষ্টির ভাব ফুটে উঠলো। এটা দেখে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, হে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনার জন্য আফসুস! আপনি কি দেখছেন না যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চেহারা মুবারক কি রূপ ধারণ করছে। তখন হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চেহারা মুবারকের দিকে তাকালেন এবং অসন্তুষ্টির ভাব লক্ষ্য করে বললেন, আমি আল্লাহ পাক-এর অসন্তুষ্টি থেকে এবং তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অসন্তুষ্টি থেকে আল্লাহ পাক-এর নিকট পানাহ চাচ্ছি। এবং আমরা আল্লাহ পাককে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে ও আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবী হিসেবে পেয়ে খুশী হয়েছি। তখন রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সেই আল্লাহ পাক-এর কছম! যার অধিকারে আমার প্রাণ মুবারক রয়েছে, এ সময় যদি তোমাদের নিকট হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম (যার উপর তাওরাত শরীফ নাযিল হয়েছে) জাহির বা প্রকাশ হতেন আর তোমরা আমাকে ছেড়ে তাঁর অনুসরণ করতে তবুও তোমরা সরল পথ থেকে অবশ্যই বিচ্যুত অর্থাৎ গোমরাহ হয়ে যেতো। এমনকি তিনি যদি এখন হায়াতে থাকতেন আর আমাকে পেতেন তাহলে তিনিও নিশ্চয়ই আমার অনুসরণ করতেন।” (দারিমী, মিশকাত, মিরকাত)
অর্থাৎ কোন ঈমানদার ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম বা আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি গ্রহণ করতে পারে না বা মেনেও নিতে পারেনা। যদি সে তা করে তাহলে সে ঈমানদার থাকতে পারবেনা বরং কাট্টা গোমরাহ হবে।
এখানে ফিকিরের বিষয় যে, যার সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
لو كان بعدى نبى لكان عمر بن الخطاب رضى الله تعالى عنه.
অর্থাৎ “আমার পর যদি কেউ নবী হতো তবে নবী হতেন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।”
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
الحق ينطق على لسان عمر بن الخطاب رضى الله نعالى عنه.
অর্থঃ স্বয়ং আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর যবানে কথা বলেন।”
এছাড়াও যাঁর আরো অনেক ফাযায়িল-ফয়ীলত, শান-শওক্বত ও বুযূর্গী কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে সেই হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ওহী দ্বারা নাযিলকৃত আসমানী কিতাব ‘তাওরাত শরীফের’ একখানা নসখা যা নাযিল হয়েছে জলীলূল ক্বদর নবী ও রসূল, কালিমুল্লাহ হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম-এর উপর- তা নিয়ে উপস্থিত হওয়ার পরও আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কঠিন অসন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন এবং বললেন, তাওরাত কিতাব যাঁর উপর নাযিল হয়েছে সেই হযরত মুসা আলাইহিস্ সালামও যদি এখন থাকতেন তবে তাঁর জন্যও তাওরাত কিতাব বাদ দিয়ে আমাকে অনুসরণ করা ফরজ ওয়াজিব হয়ে যেত। এর বাস্তব প্রমাণ হচ্ছেন হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম যিনি আখিরী যামানায় আসবেন এবং নিজের উপর নাযিলকৃত ইনজিল শরীফ বাদ দিয়ে আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেই অনুসরণ করবেন অর্থাৎ কুরআন-সুন্নাহ মুতাবিক চলবেন।
অতএব, হযরত মুসা আলাইহিস সালাম-এর মত জলীলূল ক্বদর রসূলের প্রতি নাযিল কৃত তাওরাত শরীফ হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মত ছাহাবী নিয়ে আসার পরও যদি তা গ্রহণযোগ্য নাহয় এবং আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীবের অসুন্তুষ্টির কারণ হয় তবে কাফির-মুশরিক বেদ্বীন-বদদ্বীন তথা মানব রচিত পূর্ববর্তী ও পরবর্তী মতবাদ বা তন্ত্র-মন্ত্র কি করে গ্রহণযোগ্য হতে পারে? আর তা গ্রহণ করা বা অনুসরণ করা কতটুকু আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীবের অসন্তুষ্টির কারণ হবে? তা সহজেই অনুমেয়।
মুলতঃ তা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয় বরং তা আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীবের কঠিন অসন্তুষ্টি তথা জাহান্নামী হওয়ার কারণ। সুতরাং ইসলামের সাথে অন্য কোন নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীক্বা-মিশ্রিত করার প্রশ্নই উঠেনা। কেননা আল্লাহ্ পাক তো স্পষ্টই বলে দিয়েছেন যে,
ولا تلبسوا الحق بالباطل.
অর্থঃ- “ তোমরা হক্বকে না হক্বের সাথে মিশ্রিত করনা (ঈমানের সাথে কুফরীকে মিশ্রিত করনা, ইসলামের সাথে বেদ্বীন-বদদ্বীনদের নিয়ম-নীতিকে মিশ্রিত করনা)।” (সূরা বাক্বারা/৪২)
উল্লেখ্য, দ্বীনকে বেদ্বীনের সাথে মিশ্রিত করার প্রশ্নই হয় না বরং কোন ঈমানদার যদি তার দ্বীনকে ঠিক রেখে সে নিজেকে কোন বেদ্বীনের সাথে মিশ্রিত করে বা উঠা বসা করে তাও কঠিন গযবের কারণ হবে। এ সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ্ পাক একবার হযরত ইউশা বিন নুন আলাইহিস্ সালামকে জানালেন যে, তাঁর এক লক্ষ উম্মতকে ধ্বংস করে দেয়া হবে। তার মধ্যে ষাট হাজার সরাসরি পাপে লিপ্ত। তখন হযরত ইউশা বিন নুন আলাইহিস্ সালাম আল্লাহ্ পাক-এর নিকট জানতে চাইলেন, তাহলে বাকি ৪০ হাজার উম্মতকে কোন কারণে ধ্বংস করা হবে? জবাবে আল্লাহ্ পাক জানালেন, তারা পাপীদের সাথে মেলামেশা করে ও পাপীদেরকে পাপ থেকে ফিরে থাকার জন্য নিষেধ করে না।”
সে প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لما وقعت بنو اسرا ئيل فى المعا صى نهتهم علماؤ هم فلم ينتهوا فجالسوهم فى مجالسهم واكلو هم وشاربوهم فضرب الله قلوب بعضهم نبعض فلعنهم على لسان داود وعيى ابن مريم دلك بما عصوا وكانوا يعتدون قال فجلس رسول الله صلى الله عليه وسلم وكان متكئا فقال لا والذى نفسى بيده حتى تأ طرو هم اطرا.
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন বণী ইসরাইল পাপাচারে লিপ্ত হলো তখন তাদের আলিমগণ (প্রথম প্রথম) তাদেরকে এই কাজে বাঁধা দিলো কিন্তু তারা বিরত হলোনা। অতঃপর ঐ সমস্ত আলিমগণ তাদের সাথে উঠাবসা ও খানাপিনায় শরিক হয়ে পড়লো। ফলে আল্লাহ তায়ালা তাদের পরস্পরের অন্তরকে পাপাচারে কুলষিত করে দিলেন।
তখন আল্লাহ তায়ালা হযরত দাউদ আলাইহিস্ সালাম ও হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম আলাইহিস্ সালাম-এর মাধ্যমে তাদের উপর লা’নত করলেন। আর এটা এই কারণে যে, তারা আল্লাহ পাক-এর নাফরমানিতে লিপ্ত হয় এবং সীমালংঘন করে। বর্ণনাকারী বলেন, এই সময় আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হেলান দিয়ে বসেছিলেন; অতঃপর তিনি সোজা হয়ে বসে বললেন, ‘সেই পবিত্র সত্তার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ, তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ পাক-এর শাস্তি হতে রেহাই পাবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা যালিম ও পাপীদেরকে তাদের পাপকার্যে বাধা প্রদান না করবে।” (তিরমিযী, আবু দাউদ)
উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, কোন মুসলমান জাহেরী বা বাহ্যিকভাবে বেদ্বীন-বদদ্বীনদের অনুসরণ করা বা বেদ্বীন-বদদ্বীনদের আমল-আখলাকে নিজেকে মিশ্রিত করাও আল্লাহ পাক-এর গযবপ্রাপ্তি ও ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কারণ। শুধু তাই নয়, জাহিরীভাবে বেদ্বীনদের সাথে মিশ্রিত হওয়া তো অবশ্যই গযবের কারণ। উপরন্ত সে যদি দূর দূরান্ত থেকে তার অন্তরটাকেও বেদ্বীনের সাথে মিশ্রিত করে দেয় অর্থাৎ বেদ্বীনের বেদ্বীনিকে অন্তরে অন্তরে সমর্থন করে তাহলে সেটাও কঠিন গযবের কারণ হবে। সে প্রসঙ্গে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
عن العرس بن عميرة رضى الله نعالى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال اذا عملت الخطيئة فى الارض من شهدها فكر هها كان كمن غاب عنها ومن غابا فرضيها كان كمن شهد ها.
অর্থঃ- হযরত উরস্ বিন উমাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যখন পৃথিবীতে কোথাও কোন পাপ কাজ অর্থাৎ কুফরী, শেরেকী, বেদ্বীনি কাজ সংঘটিত হয়, তখন যে ব্যক্তি উক্ত স্থানে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও উহাকে ঘৃণা করে, সে ব্যক্তি এরূপ যেন উহা হতে দূরে ছিল। আর যে ব্যক্তি দূরে থেকেও উক্ত পাপের প্রতি সন্তুষ্ট থাকে অর্থাৎ অন্তরে সমর্থন করে সে এরূপ যেন তথায় উপস্থিত ছিল।” (আবূ দাউদ, মিশকাত)
স্মর্তব্য, মাহিউদ্দীনের মতে যদি কুরআন-সুন্নাহর সাথে বেদ্বীন-বদদ্বীনদের নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীক্বা পালন করাও জায়িয হয় তবে ‘সূরা কাফিরুনের’ কি গুরুত্ব রয়েছে। ‘সূরা কাফিরুন’ কেন নাযিল হলো। ‘সূরা কাফিরুন’-এর শানে নুযূল সম্পর্কে বলা হয় কাফেরেরা আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললো, আপনি কিছুদিন আমাদের প্রভুর ইবাদত করুন আর কিছুদিন আপনার রবের ইবাদত করুন। আমরাও কিছুদিন আপনার রবের ইবাদত করবো আর কিছু দিন আমাদের প্রভূর পূজা করবো। আর তখনই আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
قل يايها الكفرون. لا اعبد ما تعبدون. ولا انتم عابدون ما اعبد. ولا انا عا بد ما عبدتم ولا انتم عابد ون ما اعبد. لكم دينكم ولى دين.
অর্থঃ- “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলুন, হে কাফিরের দল, তোমরা যার পূজা কর আমি তার ইবাদত করিনা আর আমি যাঁর ইবাদত করি তোমরা তাঁর ইবাদত করনা। আর তোমরা যার পূজা কর আমি তার ইবাদত করিনা আর আমি যাঁর ইবাদত করি তোমরা তাঁর ইবাদত করনা। তোমাদের নিয়ম-নীতি তর্জ-তরীক্বা তোমাদের আর আমার দ্বীন আমার। (সূরা কাফিরূন)
অর্থাৎ মুসলমান ইসলাম তথা কুরআন-সুন্নাহও পালন করবে আবার সাথে সাথে বেদ্বীন-বদদ্বীনদের নিয়ম-নীতিও পালন করবে তা হবেনা। মুসলমানকে শুধুমাত্র কুরআন-সুন্নাহকেই পরিপূর্ণ অনুসরণ করতে হবে। এর সাথে অন্য কোন নিয়ম নীতি যে মিশ্রিত, তলব বা অনুসরণ করবে সে গোমরাহ ও ক্ষতিগ্রস্থের অন্তর্ভুক্ত হবে।
উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ দ্বারা এটাই সাব্যস্ত হলো যে, মাহিউদ্দীন খান যে বলেছে, “প্রচলিত যে কোন শাসন ব্যবস্থায় যদি কুরআন-সুন্নাহ এর প্রাধান্য মেনে নেয়া হয় তা গ্রহণযোগ্য” এটা কাট্টা কুফরী আক্বীদা ও আমলের অন্তর্ভুক্ত। কারণ কোন ঈমানদারের পক্ষে আল্লাহ্ পাক-এর আইন-কানুন, নিয়ম-নীতির খেলাফ অন্য কোন নিয়ম-নীতি ও মতবাদ মেনে নেয়া যেমন নাজায়েয, ঠিক অন্য কোন নিয়ম-নীতি ও মতবাদকে ইসলামের সাথে মিশ্রিত করাও হারাম ও নাজায়িয। শুধু তাই নয় বরং তা সমর্থন করা বেদ্বীনদের সাথে জাহেরীভাবে মিলামিশা করা এমন কি অন্তরে সর্মথন করাও নাজায়িয এবং হারাম।
মাহিউদ্দীন তার মাসিক মদীনা ডিসেম্বর/৯৯ সংখ্যায় নির্বাচন ভিত্তিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোট দান সম্পর্কিত উক্ত প্রশ্নোত্তরে আরো লিখেছেঃ
(গ)
ভোটের মাধ্যমে নেতা বা শাসক নির্বাচনের
বর্তমান যে পদ্ধতি এটা অংকুরিত হয়েছে
ইসলামের শুরা পদ্ধতির মধ্য থেকে।
সুতরাং ভোটের রাজনীতি ইসলামে বৈধ নয়
এ কথা বলা যাবে না
ভোট তথা নির্বাচনভিত্তিক গণতন্ত্রের উৎপত্তি হয় আখেরী রাসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জমিনে আগমণের অনেক পূর্বে। যার প্রবর্তক হচ্ছে ইহুদী ও নাছারা। কাজেই ইসলামী শুরা পদ্ধতি থেকে নির্বাচন পদ্ধতির উদ্ভব ঘটেছে এ কথা বলা নেহায়েতই মূর্খতা ও অজ্ঞতাসূচক এবং কূফরীমূলক। তাই ইসলামের নামে ভোটের রাজনীতি বৈধ বলাও কুফরী।
মূলতঃ নির্বাচন সম্পর্কিত অজ্ঞতাই তাকে এরূপ কুফরীমূলক বক্তব্য প্রদানে উৎসাহিত করেছে। নির্বাচনের ইতিহাস ও সংজ্ঞা সম্পর্কে যদি তার সামান্যতম ইল্মও থাকতো তবে সে কখনো এতবড় কুফরীমূলক বক্তব্য প্রদান করতে পারতো না।
ইসলামের নামে নির্বাচনও সম্পূর্ণ হারাম। কারণ নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি। কেননা নির্বাচনের মাধ্যমেই গণতন্ত্র বাস্তবায়িত হয়। আর নির্বাচনের প্রয়োজন তখনই হয় যখন কোন পদে একাধিক ব্যক্তি প্রার্থী হয়। একাধিক প্রার্থীর মধ্যে উক্ত পদ একজনকে দেয়ার লক্ষ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর উক্ত নির্বাচন ভোট প্রয়োগের মাধ্যমেই বাস্তবায়িত হয়। তাই সংক্ষেপে প্রমাণসহ নির্বাচনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস নিম্নে তুলে ধরা হলো-
নির্বাচনের প্রাচীন ইতিহাস
প্রাচীন গ্রীসে খ্রীষ্টপূর্ব পঞ্চম এবং ষষ্ঠ শতাব্দীতে নির্বাচন প্রথা চালু ছিল। এছাড়া রোমান সিনেটেও এ পদ্ধতি চালু ছিল।
তবে Election সম্পর্কে ধর্ম, মিথলজি বিষয়ক Encyclopedia Man, Myth’s Magic বলা হয়েছে- Election, the world is derived from the Greek word eloge (choice). The idea is basic to the traditional structure of Christian theology. অর্থাৎ ইলেকশন বা নির্বাচন শব্দটি উৎসরিত হয়েছে বা উৎপত্তি লাভ করেছে গ্রীক শব্দ eloge হতে যার অর্থ ছিল পছন্দ। নির্বাচনের ধারণা প্রাচীন খ্রীষ্টীয় ধর্মতত্ত্বের ব্যাখ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত।
এ ব্যাখ্যাটি এরূপ যে, তাদের God নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তিবর্গ অথবা জাতিকে বিশেষ কোন দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে তার বিধান চালাতেন। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে, The diea that God specially choses certain individuals or nations for some peculiar role in the scheme of his providence is known as election.
উল্লেখ্য, খ্রীষ্টান ধর্মতত্ত্বে নির্বাচনের ধারণাটি অদৃষ্টবাদ থেকে এসেছে। এ সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ In Christian theology the idea of election became associated with predestination, খ্রীষ্টানদের আরো ধারণা যে, তাদের খোদার পছন্দনীয় বা elected অবশ্যই স্বল্প হবে। Many are called buf few are chosen (Mathew- 22-14)
মূলকথা হচ্ছে, নির্বাচন খ্রীষ্টীয় ধর্মতত্ত্বের সাথে বিশেষভাবে সম্পৃক্ত একটি বিষয়। এ বিষয়ে Man, Myth & Encyclopedia Magic, আরো বলা হয়েছে, “However that the doctrine of election found its most notable expression in Christianity.
আধুনিক কালের ইতিহাস
তবে আধুনিক ভোটদান ব্যবস্থার সূত্রপাত ঘটে ইংল্যান্ডে ১৬৮৮ সালে। ইংল্যান্ডে ১৬৮৮ সালে বিপ্লবের পর রাজনৈতিক ক্ষমতা পার্লামেন্টের হাতে চলে যায়। পার্লামেন্ট ১৮৩২ সালে প্রথম সংস্কার আইনে সমস্ত মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে ভোটাধিকার দেয়। এরপর পর্যায়ক্রমে ১৮৬৭ সালে কারখানার শ্রমিকদের, ১৮৮৪ সালে কৃষি মজুরদের, ১৯১৮ সালে সীমিত সংখ্যক নারীদের এবং ১৯২৮ সালে সকল নারীদের ভোটাধিকার দেয়া হয়।
১৯১৮ সালের পূর্বে বৃটেনে বিশ্ব বিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটরা সাধারণ কেন্দ্র ও বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র এ দু’টি কেন্দ্রের ভোটাধিকারী ছিল। পরবর্তীতে অর্থাৎ ১৯৪৮ সালে এ সকল পদ্ধতির সমাপ্তি ঘটিয়ে একুশ বছর বা তদুর্ধ বয়সের সকল সম্প্রদায়ের জন্য সার্বজনিন ভোটাধিকার দেয়া হয়।
অপরদিকে আমেরিকায় ১৮৭০ খৃষ্টাব্দে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে বলা হয় যে, কোন ব্যক্তিকে তার জাতি, ধর্ম অথবা পূর্ব দাসত্বের জন্য ভোটদানের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবেনা। ১৯৩৩ সালে সপ্তদশ সংশোধনীতে সিনেট সদস্যদের, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। ১৯২০ সালে মহিলা ভোটাধিকার স্বীকৃত হয়। ১৯৭১ সালে ভোটারদের বয়স সীমা কমিয়ে ১৮ বছরে আনা হয়।
ভোটের প্রকারভেদ ও ব্যালট প্রথা
ইসলামের নামে ভোট প্রধাও সম্পূর্ণ হারাম। কারণ ভোট হচ্ছে এমন একটি সিদ্ধান্ত নেয়ার পদ্ধতি যাতে প্রত্যেক ব্যক্তি পারে তার পছন্দনীয়কে চিহ্নিত করতে বা প্রকাশ করতে এবং যে পছন্দের সংখ্যা বেশী হয়, তাই গ্রহণযোগ্য হয়।
উল্লেখ্য, সংবিধানে ভোটদানের জন্য কিছু শর্ত-শারায়েত করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- দু’টি। (১) বাংলাদেশের নাগরিক হওয়া, (২) ভোটদাতার বয়স আঠারো বছরের কম নয়।
আর এক্ষেত্রে যে অযোগ্যতা, তা হলো- (১) কোন যোগ্য আদালত তাকে অপ্রকৃতিস্থ বলে ঘোষণা করেনি। (২) ১৯৭২ সালের বাংলাদেশে যোগসাজসকারী (বিশেষ ন্যায় পীঠ) আদেশের অধীন কোন অপরাধের জন্য দন্ডিত হননি।
উল্লেখ্য, ভোট হলো দু’প্রকার- (১) প্রকাশ্য ভোটদান, (২) গোপনে ভোটদান।
প্রকাশ্য ভোটদান ব্যবস্থায় ভোটদানকারীরা বিপরীত পক্ষীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাই এটি সর্বত্রই পরিত্যক্ত হয়েছে।
আর গোপনে ভোটদান ব্যবস্থায় ভোটদানকারীরা কারো দ্বারা কোন প্রকার ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা, তারা তাদের ভাষায় নির্ভয়ে ও স্বাধীনভাবে সার্বভৌমত্ত্ব বজায় রেখে ভোট প্রদান করতে পারে। তাই ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোট প্রথা প্রায় সর্বত্রই চালু রয়েছে।
ব্যালট
ব্যালট হচ্ছে একটি কাগজের শীট, যার দ্বারা গোপন ভোট প্রদান করা হয়। Ballot শব্দটি এসেছে ইটালী ব্যালোটা Ballotia হতে। যার অর্থ হচ্ছে- ছোট বল। এটি এভাবে উৎপত্তি হয়েছে যে, প্রাচীনকালে এর দ্বারা ভোট গ্রহণ করা হতো এবং গ্রীসে এই পদ্ধতির প্রচলন ছিল। জনতার দরবারে অথবা আইন সভায় খ্রীষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে এবং কখনো কখনো রোমান সিনেটে এই পদ্ধতি চালু ছিল। সাধারণতঃ সাদা এবং কালো বল হ্যাঁ এবং না বোধক ভোটে ব্যবহৃত হতো। অপরদিকে আমেরিকায় উপনিবেশিক কালের শুরুতে সীম শস্যকণা ব্যালট হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
উল্লেখ্য, কোন কোন সংগঠন এখনো নতুন সদস্য গ্রহণে ভোটাভুটিতে সাদা এবং কালো বলের ব্যবহার করে থাকে। বর্তমানে গণতান্ত্রিক দেশসমূহে কাগজের ব্যালট বা ব্যালট পেপার নির্বাচনে ভোটারদের ছদ্মনাম হিসেবে কাজ করে এবং এভাবেই অধিকাংশ ভোটারের ইচ্ছা প্রকাশ পায়।
গোপন ভোটদানের পদ্ধতি হিসেবে ব্যালট পেপার ব্যবহারের প্রথম প্রামাণিক ঘটনা ঘটে ১৬২৯ সালে আমেরিকার চার্চে। অতঃপর আমেরিকান ঔপনিবেশে এই ব্যালট পেপারের প্রচলন ছড়িয়ে পড়ে। এরপরে ধীরে ধীরে ব্যালট পেপারের অনেক সংস্কার হয় এবং পরবর্তীতে একই কলামে বিভিন্ন দলের প্রতীক সংযুক্ত হয়, যা সাধারণতঃ বর্ণমালা অনুযায়ী সংযুক্ত হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৫০ সালের মধ্যে এই ব্যালট প্রথা প্রায় সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। অতএব, প্রমাণিত হলো ভোটের মাধ্যমে নেতা বা শাসক নির্বাচনের বর্তমান যে পদ্ধতি রয়েছে তা ইসলামের শুরা পদ্ধতি থেকে অংকুরিত হয়নি। বরং ইহুদী থেকে উৎপত্তি ঘটেছে এবং ইহুদী ও নাছারাদের দ্বারা প্রবর্তিত ও প্রচারিত এবং প্রসারিত হয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। সুতরাং ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন পদ্ধতি ইসলামের শুরা পদ্ধতি থেকে উদ্ভব ঘটেছে একথা বলা কাট্টা হারাম ও কুফরী। আরো উল্লেখ্য ইসলামে ভোটের রাজনীতি বৈধ বলাও কাট্টা হারাম ও কুফরী।
স্মরণীয় ইসলামের নামে গণতন্ত্র, নির্বাচন, ভোট ইত্যাদি হারাম ও কুফরী হওয়ার আরো একটি বড় কারণ হলো, গণতন্ত্রের মূল বিষয় বা ভিত্তিসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো সার্বভৌমত্ব জনগণের। অর্থাৎ জনগণই হচ্ছে গণতন্ত্রের বা সার্বভৌমত্ত্বের মূল। অথচ আল্লাহ্ পাক বলেন, “সর্বভৌমত্ব স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর”। এ প্রসঙ্গে “সূরা মায়েদার” ১২০নং আয়াত শরীফে বলেন,
لله ملك السموت والارض وما فيهن وهو على كل شىء قدير.
অর্থঃ- “আসমান ও জমিন এবং এর মধ্যে যা কিছু রয়েছে, সমস্ত কিছুরই মালিক আল্লাহ্ পাক। আর তিনিই সমস্ত কিছুর উপর ক্ষমতাবান।”
পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফে এরশাদ হয়েছে,
هو الله الخالق البارئ المصور له الاسماء الحسنى يسبح له مافى السموت والارض وهو العزيز الخكيم.
অর্থঃ- “তিনিই আল্লাহ্ তায়ালা, স্রষ্টা, উদ্ভাবক, রূপদাতা, উত্তম নামসমূহ তারই। আসমান ও জমিন যা কিছু আছে সবই তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময়।” (সূরা হাশর/২৪)
অন্যত্র এরশাদ হয়েছে,
قل اللهم ملك الملك تؤ تى الملك من تشاء وتنزع الماك ممن تشاء وتعز من تشاء وتذل من تشاء بيد ك الخير انك على كل شىء قدير.
অর্থঃ- “বলুন, {হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম} আয় আল্লাহ্ পাক! সমগ্র রাজ্যের মালিক আপনি। আপনি রাজ্য যাকে ইচ্ছা প্রদাণ করেন এবং যার হতে ইচ্ছা করেন রাজ্য ছিনিয়ে নেন। আর যাকে ইচ্ছা সম্মান দান করেন আর যাকে ইচ্ছা অপমানে পতিত করেন। আপনারই হাতে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ। নিশ্চয়ই আপনি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল।” (সূরা আল ইমরান/২৬)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে,
ولله ما فى السموت وما فى الارض يغفر لمن يشاء ويعذب من يشاء والله غفور رحيم.
অর্থঃ- “আর যা কিছু আসমান ও জমিনে রয়েছে, সে সবই মহান আল্লাহ্ পাক-এর। তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন, যাকে ইচ্ছা আযাব দান করবেন। আর আল্লাহ্ পাক হচ্ছেন, ক্ষমাকারী, করুণাময়। (সূরা আলে ইমরান/১২৯)
এছাড়া অনুরূপ আয়াত “সূরা আনয়াম/১৭,৫৭, সূরা ফাতির/১০, সূরা বাক্বারা/১১৭, সূরা শুরা/৭৩, সূরা আনয়াম/৯৫, সূরা মু’মিন/৬৮, সূরা আল ফোরকান/২, সূরা হাদীদ/৩, সূরা আস্সাফফাত/১৮০-১৮২, সূরা জাছিয়াত/৩৬-৩৭ সহ আরো অনেক আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ্ পাক-এর সার্বভৌমত্বের কথা লিপিবদ্ধ রয়েছে।
কাজেই “সার্বভৌমত্ব জনগণের” একথা বলা ও মানা কুফরী। অবশ্য যদিও কেউ কেউ বলে থাকে যে, “সার্বভৌমত্ব জনগণের” এটা আমরা মানিনা, অথচ তারা পূর্ণরূপেই ইসলামের নামে গণতন্ত্র মানে ও করে। তাদের জন্য আফসোস, তারা এত অজ্ঞ যে, তারা গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্বের সাথে যে কি সম্পর্ক এবং সার্বভৌমত্বই বা কাকে বলে সে বিষয়ে তাদের বিন্দুতম জ্ঞান নেই বললেই চলে।
কারণ গণতন্ত্রে জনগণকে যে সার্বভৌমত্বের অধিকারী বলা হয়েছে, সে সার্বভৌমত্বের বহিঃপ্রকাশই ঘটে ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে। অর্থাৎ গণতন্ত্রে জনগণ ভোট দেয়ার ব্যাপারে কারো মুখাপেক্ষী নয় এবং সে ভোট কাকে দেবে বা দেবেনা, সে বিষয়েও কারো কাছে তাকে জবাবদিহী করতে হয়না।
মূলত, যারা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে বা তা সমর্থন করে, তারা সার্বভৌমত্ব যে জনগণের, আল্লাহ্ পাক-এর নয়, তা ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায়ই হোক মেনে নেয় এবং ভোট দানের মাধ্যমে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।
তাই এই ভোটের রাজনীতি ইসলামের নামে শুধু অবৈধই নয় বরং একে ইসলামের নামে বৈধ বলাও কুফরীর অন্তর্ভুুক্ত।
আরো উল্লেখ্য যে, মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীনের এ জেহালতপূর্ণ বক্তব্যের জবাবে বলতে হয় যে, যদি ভোটের মাধ্যমে নেতা বা শাসক নির্বাচনের পদ্ধতি ইসলামী শুরা পদ্ধতির মধ্য থেকে হয়ে থাকে তাহলে ইউরোপ, আমেরিকা, ভারত অর্থাৎ ইহুদী, খ্রীষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ ইত্যাদি অপরাপর বিধর্মী গণতান্ত্রিক দেশের শাসকরাও কি ইসলামী শুরা তথা খিলাফত পদ্ধতিতে খলীফা নির্বাচিত হয়ে থাকে? (নাঊযুবিল্লাহ) তাহলে কি তারা খলীফা? (নাঊযুবিল্লাহ) এবং তারা সেখানে কি কুরআন-সুন্নাহ্র বিধান চালু করে থাকে? (নাঊযুবিল্লাহ) প্রকৃতপক্ষে ইহা সম্পূর্ণ কুফরী কথা।
মাহিউদ্দীন তার মাসিক মদীনা ডিসেম্বর/৯৯ সংখ্যায় নির্বাচন ভিত্তিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোট দান সম্পর্কিত উক্ত প্রশ্নোত্তরে আরো লিখেছে:
(ঘ)
এ যুগের ভোট প্রদান বাইয়াতের
বিকল্প বিবেচিত হতে পারে।
তার এ বক্তব্যও সম্পূর্ণ কুফরীমূলক হয়েছে। কারণ ভোট পদ্ধতি বেদ্বীন, বদ্দ্বীন, ইহুদী ও নাছারাদের মাধ্যমে প্রবর্তিত বা উদ্ভাবিত হয়েছে। আর বাইয়াত প্রথা বা এর নিয়ম-কানুন জারি করেছেন স্বয়ং আখেরী রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
উল্লেখ্য, ভোট প্রথা কুরআন শরীফ নাযিল হওয়ার পূর্ব থেকেই ছিল অর্থাৎ প্রাচীনকাল থেকৈ ভোট প্রথা চলে আসছে। উল্লেখ্য খ্রীস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীরও পূর্ব থেকে ভোট প্রথা চলে আসছে। তা সত্ত্বেও সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইহা গ্রহণ করেননি বা ইহাকে বাইয়াতের বিকল্প হিসেবেও ঘোষণা দেননি। কারণ এই ভোট প্রদান পদ্ধতি আল্লাহ্ পাক-এর কাছে পছন্দনীয় নয়। তাহলে মাহিউদ্দীন খান কি করে ভোট প্রদান পদ্ধতিকে বাইয়াতের বিকল্প বলে উল্লেখ করতে পারে?
এতে কি এই সাব্যস্ত হয়না যে, মাহিউদ্দীন গং দ্বীন-ই এলাহীর মত কোন নুতন দ্বীন প্রবর্তন করতে চায় অথবা কাদিয়ানীদের মত নুতন কোন কিছুর দাবীদার।
উল্লেখ্য, গণতন্ত্র ও তা বাস্তবায়িত করার মাধ্যম হচ্ছে নির্বাচন। আর নির্বাচনের মূল হচ্ছে ভোট প্রদান। যার প্রত্যেকটি ইহুদী-নাছারাদের দ্বারা উদ্ভাবিত ও প্রবর্তিত।
আর আল্লাহ পাক ইহুদী ও নাছারাদের সাথে সম্পর্ক রাখতে নিষেধ করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
يا يها الذين امنوا لاتتخذ وا اليهود. والنصرى اولياء بعضهم اولياء بعض ومن يتولهم منكم فا نه منهم.
অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করোনা। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে।” (সূরা মায়িদা-৫১)
শুধু তাই নয় রবং কোন প্রকার অনুসরণ ও অনুকরণ করতেও শক্ত নিষেধ করেছেন। বিশেষভাবে “সূরা ফাতিহাতে” বলা হয়েছে, “তোমরা দুয়া কর।” যা আমরা প্রতিদিন কম পক্ষে ৩২ বার- ১৭ রাকাত ফরজে ১৭ বার, ৩ বার বিতির নামাযে, ১২ বার সুন্নত নামাযে সর্বমোট ৩২ বার পড়ে থাকি, বলে থাকি ও দুয়া করে থাকি অর্থাৎ নামাযের প্রতি রাকায়াতেই বলে থাকি যে,
اهد نا الصراط المستقيم.
অর্থঃ- “(আল্লাহ্ পাক) আমাদের সরলপথ প্রদর্শন করুন।” (সূরা ফাতিহা-৫)
কোন সরল পথ? বলা হয়েছে-
صراط الذين انعمت عليهم.
অর্থঃ- “যাদেরকে নিয়ামত দেয়া হয়েছে তাঁদের পথ।” (সূরা ফাতিহা-৬)
কাদেরকে নিয়ামত দেয়া হয়েছে? এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক অন্যত্র বলেন,
انعم الله عليهم من النبين و الصد يقين والشهداء و الصلحين وحسن اولئك رفيقا.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক নিয়ামত দিয়েছেন যাঁরা নবী, ছিদ্দীক, শহীদ ও ছালেহ্ তাঁদেরকে এবং তাঁরাই উত্তম বন্ধু বা সঙ্গী।” (সূরা নিসা-৬৯)
অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক বান্দাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন তারা যেন নবী, ছিদ্দীক, শহীদ ও ছালেহ্গণের পথ তলব করে এবং তাঁরাই সকলের জন্য উত্তম সঙ্গী বা বন্ধু।
এরপর আল্লাহ পাক বলেন, তোমরা আরো বলো-
غير المغضوب عليهم ولا الضالين.
অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক আমাদেরকে তাদের পথ দিবেন না, যারা গযবপ্রাপ্ত ও পথহারা।” (সূরা ফাতিহা-৭)
অর্থাৎ বিশেষভাবে ইহুদী ও নাছারা, আর সাধারণভাবে হিন্দু, বৌদ্ধ, মজুসী (অগ্নী উপাসক) কাফির, মুশরিক, বেদ্বীন, বদ্ দ্বীন, বিদ্য়াতী, বেশরা, গোমরাহ্ ইত্যাদি সকল প্রকার পথহারা গযবপ্রাপ্ত লোকদের পথ আমাদের দান করবেন না।
উল্লেখ্য, উপরোক্ত আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক শুধু মাত্র নবী, ছিদ্দীক, শহীদ, ছালেহ্গণের পথই তলব করতে বলেছেন এবং তাঁদেরকেই অনুসরণ-অনুকরণ করে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে বলেছেন।
আর যারা ইহুদী, নাছারা, হিন্দু, বৌদ্ধ, মজুসী, কাফির, মুশরিক বেদ্বীন, বদদ্বীন, বিদয়াতী, বেশরা, গোমরাহ ইত্যাদি পথহারা ও গযবপ্রাপ্ত তাদের পথ থেকে পানাহ্ তলব করতে বলেছেন। এবং তাদের সঙ্গী না হওয়ার জন্য আদেশ করেছেন। যদি তাই হয়ে থাকে তবে ইহুদী-নাছারাদের প্রবর্তিত উদ্ভাবিত ও প্রসারিত ভোট-নির্বাচনকে বিনা দলীলে মনগড়াভাবে বাইয়াতের বিকল্প বলে তা অনুসরণ করে ইহুদী-নাছারাদের সাথে মিল রাখা কি করে জায়িয ও শরীয়তসম্মত হতে পারে?
উল্লেখ্য যে, মাসিক মদীনার সম্পাদকের সীমাহীন মুর্খতাসূচক বক্তব্যের জবাবে আরো বলতে হয় যে, যদি এ যুগের ভোট প্রদান বাইয়াতের বিকল্প বিবেচিত হয় তাহলে যেসব গণতান্ত্রিক দেশে ভোটের মাধ্যমে ইহুদী, খৃষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও মহিলা শাসক নির্বাচিত হয়, তাহলে কি তারা বাইয়াত করিয়ে থাকে? তবে তার মাসয়ালা কি হবে? মুসলমান ব্যক্তির জন্য কোন বিধর্মী, বিজাতীয় কিংবা মহিলার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করা শরীয়তে জায়েয রয়েছে কি? কখনোই নয়। বরং ইহা সম্পূর্ণ হারাম ও কুফরীর অন্তর্ভূক্ত।
অতএব, ইসলামের নামে গণতন্ত্র, নির্বাচন ও ভোট সম্পূর্ণরূপে হারাম ও কুফরী। তাহলে এ যুগের ভোট প্রথাকে বাইয়াতের বিকল্প কি করে বলা যেতে পারে? বরং এ ফতওয়াই দিতে হবে যে, এ যুগের ভোট প্রদান পদ্ধতি বাইয়াতের বিকল্পবলা হারাম ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
(অসমাপ্ত)
পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন