[সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীনের জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। আল্লাহ্ পাক-এর অশেষ রহ্মতে “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব-এর অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীল ভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা) ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যায়) এবং ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা) পেশ করার পর-
“ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় আল্লাহ পাক-এর দরবারে বেশুমার শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
উল্লেখ্য, হিজরী পঞ্চদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ও ইমাম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর প্রতিষ্ঠিত ও পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশিত যামানার তাজদীদী মুখপত্র ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত। এ পত্রিকায় এ যাবৎ যত লিখা বা ফতওয়া প্রকাশ বা পত্রস্থ করা হয়েছে, হচ্ছে ও হবে তার একমাত্র উদ্দেশ্য মানুষের ঈমান-আক্বীদা ও আমল পরিশুদ্ধ করা। এ জন্যেই মূলতঃ যুগে যুগে প্রেরিত হয়েছেন এক লক্ষ চব্বিশ হাজার মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম। এবং সর্বশেষ নবী-রসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অতঃপর প্রত্যেক শতাব্দীর মাঝে প্রেরিত হয়ে আসছেন তাঁর খাছ নায়িব বা ওয়ারিছ তথা যামানার মুজাদ্দিদগণ।
কাজেই, বান্দা ও উম্মত যদি দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দীদার ও সন্তুষ্টি লাভ করতে চায়, রহমত ও নাজাত পেতে চায়, হাক্বীক্বী বান্দা ও হাক্বীক্বী উম্মত হতে চায়, প্রকৃত মু’মিন, মুসলমান ও মুত্তাক্বী হতে চায় তাহলে তার জন্য যামানার মুজাদ্দিদের অনুসারী হওয়া ব্যতীত বিকল্প কোন পথ নেই। সেটা কাছে থেকে হোক কিংবা দূরে থেকে হোক। কারণ আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,
واتبع سبيل من اناب الى.
অর্থঃ- “ঐ ব্যক্তির পথ অনুসরণ করে চলো যিনি আমার দিকে রুজু রয়েছেন।” (সূরা লুক্বমান-১৫)
স্মরণীয় যে, আজকে মুসলমানরা তাদের আদর্শ-ঐতিহ্য ভুলে গিয়ে বিধর্মী-বিজাতীয়দের তর্জ-তরীক্বা, আচার-আচরণ গ্রহণে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাদের এই নাজুক অবস্থা কাটিয়ে ইসলামী আদর্শে আদর্শবান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আহবান করছেন যামানার মহান মুজাদ্দিদ মুদ্দা জিল্লুহুল আলী। সুতরাং তাঁর মুবারক আহবানে সাড়া দেয়ার সময় এখনই। এ লক্ষ্যে ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ পত্রিকার পাঠক, গ্রাহক, শুভাকাঙ্খী ও শুভানুধ্যায়ীগণ ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এর আকর্ষণীয় ও উল্লেখযোগ্য বিভাগ “সুওয়াল-জাওয়াব” ও “ফতওয়া” বিভাগে ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে শরীয়তের সঠিক ফায়ছালা জানার জন্য অসংখ্য সুওয়াল প্রেরণ করেন। যেহেতু আল্লাহ পাক রাব্বুল আ’লামীন কালামে পাকে ইরশাদ করেন,
فسئلوا اه الذكر ان كنتم لا تعلمون.
অর্থঃ- “যদি তোমরা না জান, তবে আহ্লে যিকির বা আল্লাহওয়ালাগণকে জিজ্ঞেস করে জেনে নাও।” (সূরা নহল-৪৩ ও সূরা আম্বিয়া-৭)
তাই প্রেরিত সুওয়ালসমূহের প্রেক্ষিতে “ইসলামের নামে গণতন্ত্র, নির্বাচন, ভোট ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” ইসলামের দলীল- কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে পেশ করা হলো।
মূলতঃ আমাদের সাথে কারো যেরূপ বন্ধুত্ব নেই, তদ্রুপ নেই বিদ্বেষ। অর্থাৎ যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তসম্মত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বিদ্বেষ নেই। আর যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তের খিলাফ বা বিপরীত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বন্ধুত্ব নেই। কারণ মুসলমানের বন্ধুত্ব বা বিদ্বেষ একমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর জন্যেই হতে হবে।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে,
عن ابى هريرة رضى اله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من احب ليه وابغض لله واعطى لله واعطى لله ومنع لله فقد استكمل الايمان.
অর্থঃ- “হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক-এর (সন্তুষ্টি লাভের) জন্যে মহব্বত বা বন্ধুত্ব করে, বিদ্বেষ পোষণ করে, আদেশ করে, নিষেধ করে, তার ঈমান পরিপূর্ণ।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী)
বস্তুতঃ মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার প্রতিটি লিখা, বক্তব্য, সুওয়াল-জাওয়াব, ফতওয়া, প্রতিবাদ, প্রতিবেদন, মতামত ইত্যাদি উপরোক্ত হাদীছ শরীফের মূলনীতির ভিত্তিতেই প্রকাশিত হয়ে থাকে।
কাজেই “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় “ইসলামের নামে গণতন্ত্র, নির্বাচন, ভোট ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” দেয়ার মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হলো সত্যান্বেষী বা হক্ব তালাশী মুসলমানগণের নিকট সঠিক বা হক্ব বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা। যার মাধ্যমে প্রত্যেকেই তাদের ঈমান-আক্বীদা ও আমল হিফাযতের মাধ্যমে ইহ্লৌকিক ও পারলৌকিক ইত্মিনান ও নাযাত লাভ করতে পারে।
মূলতঃ মানুষ মাত্রই ভুল হওয়া স্বাভাবিক, তাই এক মু’মিন অপর মু’মিনের ভুল ধরিয়ে বা শুধরিয়ে দেয়া ঈমানী দায়িত্ব। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে,
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم المؤمن مرأة المؤمن اذا رأى فيه عيبا اصلحه.
অর্থঃ- “হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, এক মু’মিন অপর মু’মিনের জন্যে আয়না। যখন সে তার মধ্যে কোন দোষত্রুটি দেখবে তখন সে তাকে সংশোধন করে দিবে।” (বুখারী, আবূ দাউদ, মিশকাত)
উপরোক্ত হাদীছ শরীফের আলোকে অসংখ্য, অগণিত পাঠকগণের পূণঃপূণঃ অনুরোধের প্রেক্ষিতে মুসলমানদের আক্বীদা ও আমল হিফাযতের লক্ষ্যে ইসলামের নামে গণতন্ত্র, নির্বাচন, ভোট ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া প্রদান করা হলো। যাতে করে সত্যান্বেষী, মুসলমানগণ এ সম্পর্কে আপত্তিকর বক্তব্যসমূহের সঠিক শরয়ী ফায়সালা অবগত হন, যার ফলশ্রুতিতে সকলেই উক্ত আপত্তিকর আক্বীদা ও বক্তব্যসমূহ থেকে নিজেদের ঈমান ও আমলের হিফাযত করে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করতে পারেন।
সাইয়্যিদ মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন, ঢাকা
মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন, মুহম্মদপুর, ঢাকা
মুহম্মদ ছিদ্দীকুল আলম, চান্দিনা, কুমিল্লা
মুহম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, শালিখা, মাগুরা
মুহম্মদ আফতাবুদ্দীন, কোনাবাড়ী, গাজিপুর
মুহম্মদ মুহসিনুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
মুহম্মদ হারুনূর রশীদ, মাহিগঞ্জ, রংপুর
শাফিয়ী আহমদ, রাজারহাট, কুড়িগ্রাম
মুহম্মদ সদরুল আমীন গোলাপগঞ্জ, সিলেট
মুহম্মদ আশাদুজ্জামান, পলাশবাড়ী, গাইবান্ধা
মুহম্মদ আশফাকুর রহমান, সিংড়া, নাটোর
মুহম্মদ ইছহাকুর রহমান, কসবা, বি.বাড়িয়া
মুহম্মদ শফিকুছ্ ছালেহীন, মতলব, চাঁদপুর
মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান, প্রভাকরদী, এন.গঞ্জ
মুহম্মদ হারিছুর রহমান, রাজপাড়া, রাজশাহী
মুহম্মদ কাওছার হুসাইন, বানারীপাড়া, বরিশাল
মুহম্মদ হাদীউল ইসলাম, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম
মুহম্মদ কামরুজ্জামান, কুটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ
মুহম্মদ আবুল কাশেম, আক্কেলপুর, জয়পুরহাট
মুহম্মদ হাবীবুল্লাহ, কালীহাতি, টাঙ্গাইল
সুওয়াল:
বর্তমান সময় যে সমস্ত “সংসদ নির্বাচন” অনুষ্ঠিত হয়। তাতে অন্যান্য দলগুলোর মতো নামধারী ইসলামী দলগুলোও সক্রিয়ভাবে উক্ত নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে তথা প্রার্থী দেয়। ইসলামের নামে যারা নির্বাচনে অংশ নেয় তারা সাধারণতঃ প্রচার করে থাকে যে, গণতন্ত্র আর ইসলাম একই বিষয় এবং তারা যে গণতন্ত্র করছে, সেটা হচ্ছে ইসলামী গণতন্ত্র। তারা গণতন্ত্রের ভিত্তি ভোটকে আমানত, শুপারিশ, উকিল নিয়োগ, স্বাক্ষ্য ইত্যাদি বলে প্রচার করে থাকে।
কেউ কেউ আবার ইসলামী দলকে ভোট দেয়া ফরয-ওয়াজিব বলে থাকে। আরো বলে থাকে যে, ইসলামী দলের প্রার্থীকে ভোট দিলে জান্নাতের টিকেট পাওয়া যাবে। যেমন জামাত নেতারা কিছুদিন পূর্বে একটি দৈনিক পত্রিকার সাক্ষাতকারে বলেছে, ইসলাম ও গণতন্ত্র একই বিষয়।
বায়তুল মুকাররমের খতীব ওবায়দুল হক বলেছে, “ভোট দেয়া আল্লাহ পাক-এর নির্দেশ অর্থাৎ ফরয। আল্লাহ পাক বলেন, ভোট একটি আমানত। আল্লাহ পাক-এর হাবীব বলেছেন, সৎ লোককে ভোট দিতে হবে।” (দৈনিক সংগ্রাম ১লা জুলাই-২০০৬)
মাহিউদ্দিন খান তার মাসিক মদীনা ডিসেম্বর/৯৯ সংখ্যায় নির্বাচন ভিত্তিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোট দান সম্পর্কিত একটি প্রশ্নের উত্তরে লিখেছে, (ক) ছহীহ্ অর্থে মুসলমানদের প্রকৃত শাসক হচ্ছে পবিত্র কুরআন এবং রসূলের সুন্নাহ্। (খ) প্রচলিত যে কোন শাসন ব্যবস্থায় যদি কুরআন-সুন্নাহ্র প্রাধান্য মেনে নেয়া হয় তবে তা মুসলিম জনগণ বিনা দ্বিধায় মেনে নিতে পারেন। (গ) ভোটের মাধ্যমে নেতা বা শাসক নির্বাচনের বর্তমান যে পদ্ধতি এটা অংকুরিত হয়েছে, ইসলামী শুরা পদ্ধতির মধ্য থেকে। সুতরাং এই পদ্ধতিতে ভোটের রাজনীতি ইসলামে বৈধ নয় এ কথা বলা যাবে না। (ঘ) এ যুগের ভোট প্রদান বাইয়াতের বিকল্প বিবেচিত হতে পারে।
অনুরূপ হাটহাজারী খারেজী মাদ্রাসার মুখপত্র মাসিক মুহীনুল ইসলামের সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর’ ০৬ সংখ্যায়ও ভোট-নির্বাচন সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছে, (ক) গণতন্ত্র বা নির্বাচন দুই প্রকার। (১) পাশ্চত্য গণতন্ত্র বা নির্বাচন। (২) ইসলামী গণতন্ত্র বা নির্বাচন। (খ) খুলাফায়ে রাশেদীন ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছিলেন (গ) পদপ্রার্থী হওয়া জায়িয। (ঘ) কুরআন সুন্নাহয় ভোটকে স্বাক্ষী, আমানত, সুপারিশ ও প্রতিনিধি নিয়োগ বলে উল্লেখ করা হয়েছে ইত্যাদি অনেক ভুল তথ্য তারা উল্লেখ্য করেছে। পটিয়া খারেজী মাদ্রাসার মুখপত্র “আত্ তাওহীদ” ডিসেম্বর/৯৬, জানুয়ারী/৯৭, জুলাই-আগস্ট/৯৭
সংখ্যায় ভোট-নির্বাচন এমনকি ভোট বেচা-কেনা করাকেও জায়িয ফতওয়া দিয়েছে।
আর উল্লিখিত বিষয়ে তাদের নিকট দলীল তলব করলে তারা সাধারণতঃ মুফতী শফীর মা’য়ারিফুল কুরআন ও ভোটের ইসলামী শরয়ী বিধান এবং শামসুল হক ফরীদপুরী ছাহেবের বক্তব্য তুলে ধরে বলে থাকে যে, তারা ভোটকে জায়িয বলেছেন। এখন আমাদের জানার বিষয় হলোঃ
১৭। যে সকল কথিত মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিছ, মুফাচ্ছির, শাইখুল হাদীছ, খতীব, পীর, আমীর ইসলামের নামে গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন করছে, ভোটকে আমানত, স্বাক্ষ্য ফরয-ওয়াজিব বলছে এবং ক্ষমতার লোভে বাতিলের সাথে আতাত করছে তারা হক্কানী আলিম কিনা? তাদের পিছনে নামায পড়া জায়িয কিনা? তাদের ব্যাপারে শরীয়তের ফায়ছালা কি?
উপরোক্ত প্রতিটি বিষয় দলীলভিত্তিক বিস্তারিত জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান-আক্বীদা ও আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদি।
জাওয়াবঃ
ইসলামের নামে বা ইসলামের দোহাই দিয়ে গণতন্ত্র, ভোট, নিবার্চন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া, নিজ দলকে ভোট দেয়া ওয়াজিব ও জান্নাতের টিকেট লাভের কারণ বলা এবং ভোটকে আমানত, সুপারিশ, স্বাক্ষ্য ইত্যাদি বলা সম্পূর্ণ হারাম ও কুফরী। এটাই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস তথা শরীয়তের চুড়ান্ত, ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া।
অতএব, বলার অপেক্ষা রাখে না যে, গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন ও পদপ্রার্থী হওয়া সম্পর্কিত তথাকথিত খতীব উবায়দুল হক, নিজামী, আহমদ শফী, মাহিউদ্দীন, আমিনী ও আযীযূল হক- ওহাবী, দেওবন্দী ও জামাতীগংদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের খিলাফ বিধায় তা ভুল, অশুদ্ধ, জিহালতপূর্ণ দলীলবিহীন ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
নিম্নে পর্যায়ক্রমে সুওয়ালে উল্লেখিত তাদের প্রতিটি বক্তব্যের খ-নমূলক জাওয়াব প্রদান করা হলো।
(১৭)
যে সকল মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিছ, মুফাচ্ছির, শাইখুল হাদীছ, খতীব, পীর, আমীর ইসলামের নামে গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন করছে, ভোটকে আমানত, স্বাক্ষ্য ফরয-ওয়াজিব বলছে তাদের ব্যাপারে শরীয়তের ফায়ছালা কি?
এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, যেহেতু কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের অকাট্য ও অসংখ্য নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে প্রমাণিত হয়েছে যে, ইসলামের নামে গণতন্ত্র, ভোট-নির্বাচন করা ও ভোটকে আমানত, স্বাক্ষ্য, ওয়াজিব বলা হারাম ও কুফরী। তাই যে সকল মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিছ, মুফাচ্ছির, শাইখুল হাদীছ, খতীব, পীর, আমীর ইসলামের নামে গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন করছে, ভোটকে আমানত, স্বাক্ষ্য ফরয-ওয়াজিব বলছে তারা কস্মিনকালেও হক্কানী আলিম নয় বরং উলামায়ে ‘ছূ’ বা দুনিয়াদার আলিম।
কারণ, আলিম হওয়ার জন্য প্রথমত: শর্ত হলো ঈমান দ্বিতীয়ত: শর্ত হলো তাক্বওয়া। তৃতীয়ত: শর্ত হলো অর্জিত ইলম্ অনুযায়ী আমল।
যেমন এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
الا ان اولياء الله لاخوف عليهم ولا هم يحزنون. الذين امنوا وكانوا يتقون.
অর্থঃ সাবধান! তোমরা জেনে রাখ, “নিশ্চয়ই ওলীআল্লাহ তথা আলিমগণের কোন ভয় নেই এবং তাঁদের কোন চিন্তাও নেই। তাঁদের পরিচয় হচ্ছে যারা ঈমান এনেছেন এবং তাক্বওয়া অবলম্বন করেছেন।” (সূরা ইউনুস-৬২, ৬৩)
অর্থাৎ এখানে ওলীআল্লাহ বা আলিম হওয়ার জন্য ঈমান আনাকে প্রথম শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
দ্বিতীয়ত: আলিম ঐ ব্যক্তিই যার অন্তরে তাক্বওয়া বা খোদাভীতি রয়েছে। অর্থাৎ যিনি আল্লাহ পাক-এর ভয়ে হারাম, নাজায়িয কাজ থেকে বিরত থাকেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন,
انما يخشى الله من عباده العلماء.
অর্থঃ “নিশ্চয় আল্লাহ পাক-এর বান্দাদের মধ্য হতে শুধুমাত্র আলিমগণই আল্লাহ পাককে ভয় করেন।” (সূরা ফাতির-২৮)
তৃতীয়তঃ ঐ ব্যক্তিই হাক্বীক্বী আলিম যিনি অর্জিত ইলম্ অনুযায়ী পরিপূর্ণ আমল করেন। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن سفيان ان عمر بن الخطاب رضى الله تعالى عنه قال لكعب من ارباب العلم قال الذين يعملون بما يعلمون قال فما اخرج العلم من قلوب العلماء قال الطمع.
অর্থঃ “হযরত সুফইয়ান ছওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত কা’ব ইবনুল আহ্বার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞাসা করলেন, আলিম কে? তিনি উত্তরে বললেন, যাঁরা ইল্ম অনুযায়ী আমল করেন। হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পুণরায় জিজ্ঞাসা করলেন, কোন্ জিনিস আলিমদের অন্তর থেকে ইল্ম্কে বের করে দেয়? তিনি উত্তরে বললেন, লোভ অর্থাৎ দুনিয়ার সম্পদ, সম্মান ইত্যাদি হাছিলের আকাঙ্খা।” (দারিমী, মিশকাত)
বিশিষ্ট তাবিয়ী, ইমামুশ্ শরীয়ত ওয়াত্ তরীক্বত ইমাম হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে জিজ্ঞাসা করা হলো- আলিম কে? তিনি জবাবে বলেন,
انما الفقيه الزاهد فى الدنيا والراغب الى الاخرة والبصير بذنبه والمداوم على عبادة ربه والورع والكاف عن اعراض المسلمين والعفيف عن اموالهم والناصح لجماعتهم.
অর্থঃ “ফক্বীহ্ বা আলিম হলো ঐ ব্যক্তি, যে দুনিয়া হতে বিরাগ, পরকালের প্রতি ঝুঁকে আছেন, গুণাহের প্রতি সতর্ক, সর্বদা মহান আল্লাহ্ পাক-এর ইবাদতে মশগুল, পরহিযগার বা সুন্নতের পাবন্দ, মুসলমানের মান-সম্মান নষ্ট করেন না, তাদের সম্পদের প্রতি লোভ করেন না এবং তাঁর অধীনস্থদেরকে নছীহত করেন।” (হিল্ইয়াতুল আওলিয়া)
উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝা গেলো, আলিম হওয়ার জন্য প্রথমত: শর্ত হলো ঈমান আনা অর্থাৎ আক্বীদা শুদ্ধ রাখা। দ্বিতীয়ত: শর্ত হলো তাক্বওয়া অবলম্বন করা। অর্থাৎ সুন্নতের অনুসরণ করা। তৃতীয়ত: শর্ত হলো অর্জিত ইলম্ অনুযায়ী আমল করা।
অথচ উল্লিখিত মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিছ, শাইখূল হাদীছ, খতীব, পীর, আমীর যারা ইসলামের নামে গণতন্ত্র, ভোট-নির্বাচন করে তাদের কারো ঈমান বা আক্বীদা শুদ্ধ নয়, সুন্নতের আমল বা তাক্বওয়াও তাদের মধ্যে নেই এবং তারা অর্জিত ইলম অনুযায়ী আমলও করে না। বরং যা বলে তার বিপরীত কাজ করে। যেমন- আজকে যারা ইসলামের নামে গণতন্ত্র, ভোট-নির্বাচন করছে, ছবি তুলছে, নারী নেতৃত্ব মানছে তারাই পূর্বে তাদের কিতাব ও পত্র-পত্রিকায় এগুলোকে হারাম বলে ফতওয়া দিয়েছে। নিম্নে এর কিছু প্রমাণ পেশ করা হলো-
ধারাবাহিক
ইসলামের নামে গণতন্ত্র, ভোট-নির্বাচনকে হালাল বা জায়িয আখ্যাদানকারীরা মালউন ইবলীস ও কাট্টা কাফির কাদিয়ানীর ক্বায়িম-মক্বাম
মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ করেন,
وما اتا كم الرسول فخذوه وما نها كم عنه فانتهوا واتقوا الله ان الله شديد العقاب.
অর্থঃ “রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদেরকে যা (পালন করার আদেশ) দান করেন তা যথাযথ পালন কর এবং যা থেকে বিরত থাকার আদেশ দান করেন তা থেকে বিরত থাক। এ বিষয়ে আল্লাহ পাককে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তিদাতা।” (সূরা হাশর-৭)
এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয় যে, হাম্বলী মাযহাবের ইমাম, ইমামুল মুহাদ্দিছীন হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি একবার ফতওয়া দিলেন যে, “সমস্ত সুন্নত পালন করা ফরয।” তিনি যখন এ ফতওয়া দিলেন, তখন তাঁর সমসাময়িক উলামায়ে কিরাম তাঁর দরবার শরীফে আসলেন। এসে বললেন, হে হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি! আমরাতো আপনাকে বড় আলিম, ফক্বীহ ও মুহাদ্দিছ হিসেবেই জানি, কিন্তু আপনি এটা কেমন ফতওয়া দিলেন? আপনি যে বলেছেন, “সমস্ত সুন্নত পালন করা ফরয” আপনার এ ফতওয়ার পিছনে কোন দলীল আছে কি? হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, অবশ্যই আমার দলীল রয়েছে বরং কেৎয়ী বা অকাট্য দলীল রয়েছে। তখন তিনি তিলাওয়াত করলেন,
وما اتا كم الرسول فخذوه وما نهاكم عنه فانتهوا واتقوا الله ان الله شديد العقاب.
অর্থঃ “রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদেরকে যা (পালন করার আদেশ) দান করেন তা যথাযথ পালন কর এবং যা থেকে বিরত থাকার আদেশ দান করেন তা থেকে বিরত থাক। এ বিষয়ে আল্লাহ পাককে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তিদাতা।” (সূরা হাশর-৭ )
এ আয়াত শরীফ শুনে উপস্থিত সকল উলামায়ে কিরাম লা জাওয়াব হয়ে গেলেন এবং বললেন যে আমরা দলীল পেয়েছি। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক-এর প্রতিটি আদেশ নিষেধ মানা বা পালন করা যেরূপ বান্দার জন্য ফরয। তদ্রুপ নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতিটি আদশে নিষেধ মানা বা পালন করাও উম্মতের জন্য ফরয। শুধু যাহেরান মানলে চলবে না বরং জিসমানী, রূহানী বা জাহিরী-বাতিনী প্রত্যেক অবস্থাতে তা মেনে নিতে হবে। কোন একটি বিষয়েও যদি সামান্যতম চুচেরা, ক্বিল-ক্বাল অন্তরে থাকে তবে সে কস্মিনকালেও ঈমানদার থাকতে পারবে না। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ করেন,
وما كان لمؤمن ولا مؤمنة اذا قضى الله ورسوله امرا ان يكون لهم الخيرة من امرهم ومن يعص الله ورسوله فقد ضل ضللا مبينا.
অর্থঃ “কোন মু’মিন নর-নারীর জন্য জায়িয হবেনা, আল্লাহ্ পাক এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ফায়ছালা করেছেন, সেই ফায়ছালার মধ্যে চু-চেরা, ক্বিল ও ক্বাল করা বা নিজস্ব মত পেশ করা। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূলের নাফরমানী করবে সে প্রকাশ্য গুমরাহে গুমরাহ হবে।” (সূরা আহযাব-৩৬)
এ আয়াত শরীফের শানে নুযূল সম্পর্কে বলা হয়, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর এক ফুফাতো বোন ছিলেন, হযরত যয়নাব বিনতে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা । উনাকে বিয়ে দিতে হবে। উনার জন্য একটা ছেলে খুঁজতেছিলেন। এদিকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চিন্তা করলেন, হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বিয়ে করাতে হবে, আর হযরত যয়নাব বিনতে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে বিয়ে দিতে হবে। এখন একজন ছেলে দরকার, একজন মেয়ে দরকার। আর যদি এই ছেলে-মেয়েকে বিয়ে করায়ে দেয়া হয়, তাহলে তো আর ছেলে-মেয়ের দরকার হয়না। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মনে মনে চিন্তা করলেন, হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর কাছে হযরত যয়নাব বিনতে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে বিয়ে দিয়ে দেয়া হবে। উনি এটা চিন্তা করলেন। এ সংবাদ গিয়ে পৌঁছলো হযরত যয়নাব বিনতে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর কাছে এবং উনার ভাই হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর কাছে। উনাদের কাছে গিয়ে যখন সংবাদ পৌঁছলো, পৌঁছার পর উনারা মনে মনে চিন্তা করলেন, বিয়ে শাদীর মধ্যে কুফু একটা শর্ত আছে, অর্থাৎ ‘সমকক্ষতা’। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনি শুধু মনে মনে চিন্তা করলেন, আমরা কোরাইশ বংশীয়। আর হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তো কোরাইশ বংশীয় নন তাহলে কুফুর কি হবে। উনি এটা চিন্তা করলেন মাত্র, এই চিন্তা করার সাথে সাথেই আল্লাহ্ পাক আয়াত শরীফ নাযিল করে দিলেন,
وما كان لمؤمن ولا مؤمنة اذا قضى الله ورسوله امرا ان يكون لهم الخيرة من امرهم ومن يعص الله ورسوله فقد ضل ضللا مبينا.
অর্থঃ “কোন মু’মিন নর-নারীর জন্য জায়িয হবেনা, আল্লাহ্ পাক এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ফায়ছালা করেছেন, সেই ফায়ছালার মধ্যে চু-চেরা, ক্বিল ও ক্বাল করা বা নিজস্ব মত পেশ করা। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূলের নাফরমানী করবে সে প্রকাশ্য গুমরাহে গুমরাহ হবে।” (সূরা আহযাব-৩৬)
হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত যয়নাব বিনতে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাদের কাছে গিয়ে যখন আয়াত শরীফ পৌঁছলো, উনারা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা কখনো দ্বিমত পোষণ করি নাই। তবে চিন্তা করেছিলাম ‘কুফু’ হবে কিনা?
অতএব প্রমাণিত হলো যে, আল্লাহ পাক-এর রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ফায়ছালা করেছেন, তার মধ্যে যারা চু-চেরা, ক্বিল ও ক্বাল করবে তারা মু’মিন থাকতে পারবে না।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক অন্য আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,
فلا وربك لا يؤمنون حتى يحكموكى فيما شجربينهم هم لا يجدوا فى انفسهم حرجا مما قضيت ويسلموا تسليما.
অর্থঃ “আল্লাহ পাক-এর কসম! তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের জাহেরী এবং বাতেনী প্রত্যেক বিষয়ে আল্লাহ্র রাসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ফায়ছালাকারী-কাজী হিসেবে মেনে না নিবে। এবং যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের অন্তরে সে বিষয়ে চু চেরা, ক্বীল ক্বাল থাকবে। বরং (বাহ্যিক-আভ্যান্তরীন) উভয় দিক থেকে তা আনুগত্যতার সাথে মেনে নিতে হবে।” (সূরা নিসা-৬৫)
এ আয়াত শরীফ-এর শানে নুযূল সম্পর্কে বলা হয়, এক ব্যক্তি ছিল, তার নাম ছিল বিশর। সে মুসলমান দাবী করতো, হাক্বীক্বত সে ছিল মুনাফিক। এই মুনাফিক বিশরের সাথে এক ইহুদীর সাথে গন্ডগোল হয়ে যায়। যখন গন্ডগোল হয়ে গেল, তখন মুনাফিক বিশরকে ইহুদী বললো, হে বিশর এটার বিচার বা ফায়ছালা করতে হবে। কে বিচার করবেন? ইহুদী বললো, তোমাদের যিনি নবী ও রসূল, যিনি আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিচার করবেন। মুনাফিক বিশর মনে মনে চিন্তা করলো, আল্লাহ্র রাসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি বিচার করেন, উনি তো হক্ব বিচার করবেন, যেহেতু ইহুদী হক্ব, ইহুদীর পক্ষে রায় চলে যাবে। তখন মুনাফিক বিশর বললো যে, না তুমি এক কাজ কর, তোমাদের যে বিচারক, কাব ইবনে আশরাফ অথবা আবু রফে ইহুদী রয়েছে তারা বিচার করবে। কিন্তু ইহুদী ব্যক্তি জানতো যে, কাব ইবনে আশরাফ অথবা আবু রফে যদি বিচার করে, তাহলে তারা মুনাফিকী করবে। হেরফের করবে, তারা ঘুষ খেয়ে পক্ষপাতিত্ব করবে। কারণ পূর্বেও তারা এমন অনেক করেছে যার নযীর রয়েছে। তখন সেই ইহুদী বললো না, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিচার করবেন। এই কথা বলে মুনাফিক বিশরকে বুঝিয়ে নিয়ে গেল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে। বিচার হয়ে গেল, আল্লাহ পাক-এর রাসূল বিচার করলেন। মুনাফিক বিশরের বিরুদ্ধে ইহুদীর পক্ষে রায় পড়লো, ইহুদী জিতে গেল। মুনাাফিক বিশর সেখানে তা বাহ্যিকভাবে মেনে নিলেও দরবার শরীফ থেকে বের হয়ে বললো, বিচারটা আমার মনপুতঃ হচ্ছে না। নাউজুবিল্লাহ। ইহুদী বললো, হে বিশর তুমি বল কি? তোমাদের যিনি রসূল, যিনি আল আমীন তাঁর বিচার তোমার মনপুতঃ হয়নি? তবে তুমি কার বিচার মানবে? সেই যামানায় হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বিচার করতেন। মুনাফিক বিশর সে মনে করলো যে, হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর খুব জালালী তবিয়ত। উনার প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেন,
اشداء على الكفار.
অর্থাৎ “হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কাফেরদের প্রতি কঠোর।” (সূরা ফাত্হ-২৯)
তিনি হয়তো আমার পক্ষেই রায় দিবেন এবং ইহুদী কাফির তার বিপক্ষে রায় দিবেন। মুনাফিক বিশর সে ইহুদীকে নিয়ে গেল হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর কাছে বিচারের জন্য। ইহুদী খুব চালাক ছিল, তাই সে বিষয়টা বুঝতে পেরে বললো, হে উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! এই বিশর আমাকে নিয়ে এসেছে আপনার কাছে বিচারের জন্য, অথচ আমরা এই মাত্র আল্লাহ পাক-এর রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবারে নববী শরীফ থেকে আসলাম তিনি নিজে বিচার করে দিয়েছেন। রায় আমার পক্ষে দেয়া হয়েছে। কিন্তু বিশর সে বিচার মানতে নারাজ সেজন্য সে আমাকে আপনার কাছে নিয়ে এসেছে পুনরায় বিচার করার জন্য। হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু একথা শুনে বললেন, ঠিক আছে তোমরা বস, আমি তোমাদের বিচার করব। উনি ঘরে প্রবেশ করলেন, ঘরে প্রবেশ করে একটা তরবারী নিয়ে আসলেন। তরবারী এনে মুনাফিক বিশরকে এক কোপে দু’ভাগ করে দিলেন এবং বললেন, এটাই তোমার বিচার। কারণ, আল্লাহ পাক-এর রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে বিচার করেছেন, সেটা তুমি মান নাই। তোমার একমাত্র শাস্তি ও বিচার মৃত্যুদন্ড। যখন উনি তাকে হত্যা করে ফেললেন, তখন মুনাফিক বিশরের আত্মীয়-স্বজন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে গিয়ে বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্! হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে আপনি বিচারের দায়িত্ব দিয়েছেন। উনি আমাদের একজন আত্মীয়কে হত্যা করে ফেলেছেন। আল্লাহ পাক-এর রাসূল বললেন, দেখ এটা কি করে সম্ভব? হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনি তো খাছ লোক-
لوكان بعدى نبى لكان عمربن الخطاب رضى الله تعالى عنه.
“আমার পরে যদি কেউ নবী হতো, তাহলে হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নবী হতেন।” কাজেই উনার পক্ষে এটা সম্ভব নয়, ঠিক আছে উনাকে ডাকা হোক। হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে আনা হলো। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “হে উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনি নাকি একজনকে হত্যা করেছেন?” হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মূলতঃ আমি তাকে হত্যা করার কারণ হচ্ছে- সে মুনাফিকী করেছে। আপনি যে বিচার করেছিলেন, সে বিচার সে মানেনি, সেজন্য আমি তাকে হত্যা করেছি। আল্লাহ পাক-এর রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “হে উমর ইবনুল খাত্তাব! আপনি যে তাকে হত্যা করেছেন, সে যে মুনাফিকী করেছে, তার প্রমাণ কি? কোথায় আপনার দলীল, আপনার সাক্ষী কোথায়?” যেহেতু ইসলামে সাক্ষী ছাড়া কোন কথা গ্রহণযোগ্য নয়। হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু চুপ করে রইলেন। সাথে সাথে আল্লাহ্ পাক স্বয়ং নিজে সাক্ষী হয়ে গেলেন। আল্লাহ্ পাক আয়াত শরীফ নাযিল করে দিলেন-
فلاوربك لايؤمنون حتى يحكموك فيما شجربينهم ثم لا يجدوا فى انفسهم حرجا مما قضيت وسلموا تسليما.
অর্থঃ “আল্লাহ পাক-এর কসম! তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের জাহেরী এবং বাতেনী প্রত্যেক বিষয়ে আল্লাহ্র রাসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ফায়ছালাকারী-কাজী হিসেবে মেনে না নিবে। এবং যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের অন্তরে সে বিষয়ে চু চেরা, ক্বীল ক্বাল থাকবে। বরং (বাহ্যিক-আভ্যান্তরীন) উভয় দিক থেকে তা আনুগত্যতার সাথে মেনে নিতে হবে।” (সূরা নিসা-৬৫)
আল্লাহ্ পাক উক্ত আয়াত শরীফ নাযিল করে জানিয়ে দিলেন- “(ইয়া রাসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্, আমিই সাক্ষী) আল্লাহ্ পাক-এর কসম, কোন ব্যক্তি মু’মিনে কামিল হতে পারবে না ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ পর্যন্ত সে ব্যক্তি আপনাকে সীরতান-ছূরতান, জাহিরী-বাতিনী, বাহ্যিক-আভ্যন্তরীণ প্রত্যেক দিক দিয়ে কাজী বা ফায়ছালাকারী হিসেবে মেনে না নিবে। আপনার হুকুম-আহ্কাম না মেনে নিবে।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রামণিত হলো যে, মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ফায়ছালা দিয়েছেন তার প্রত্যেকটিই বিনা চু-চেরা ও ক্বিল-ক্বালে মেনে নিতে হবে। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা হালাল করেছেন তা হালাল জানতে ও মানতে হবে। আর যা হারাম করেছেন তা হারাম জানতে ও মানতে হবে বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীন উভয় দিক দিয়ে। এর খিলাফ যে করবে সে কস্মিনকালেও মুসলমান থাকতে পারবে না।
তাই যারা শরীয়তের সুস্পষ্ট হারামগুলোকে হারাম বলে স্বীকার করেনা বরং হালাল বা জায়িয বলে ফতওয়া দেয় তাদের ব্যাপারে ফায়ছালা দিয়ে আল্লাহ পাক বলেন,
قاتلوا الذين لايؤمنون بالله ولا بايوم الاخر ولايحرمون ما حرم الله ورسوله ولا يدينون دين الحق.
অর্থঃ “তোমরা জিহাদ কর ঐ সমস্ত লোকদের সাথে যারা আল্লাহ পাক এবং পরকালের প্রতি ঈমান রাখেনা, আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল যা হারাম করেছেন তা হারাম মানেনা এবং দ্বীন ইসলামকে হক্ব, পরিপূর্ণ, মনোনীত দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করে না।” (সূরা তওবা-২৯)
অর্থাৎ যারা শরীয়ত নির্বারিত হারাম সমূহকে হারাম স্বীকার করেনা এবং হালাল সমূহকে হালাল মানেনা বরং হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দেয় শরীয়তের দৃষ্টিতে তারা কাট্টা কাফির। ইসলামী খিলাফত থাকলে তাদেরকে তওবার জন্য তিন দিন সময় দেয়া হতো তিন দিনের মধ্যে তওবা না করলে তাদের একমাত্র শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদ-।
শুধু তাই নয়, যারা সুস্পষ্ট দলীল দ্বারা প্রমাণিত হারামগুলোকে হারাম স্বীকার করবে না এবং হালালগুলোকেও হালাল স্বীকার করবে না বরং মনগড়া মত পেশ করবে বা কুফরীর মধ্যে দৃঢ় থাকবে কস্মিনকালেও তারা হিদায়েতের উপর থাকতে পারবে না। বরং তারা গোমরাহ ও বিভ্রান্ত হয়ে যাবে এবং তাদের উপর অনন্তকাল ধরে লা’নত বর্ষিত হতে থাকবে।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক বলেন,
كيف يهدى الله قوما كفروا بعد ايمانهم وشهدوا ان الرسول حق وجائهم البينت والله لايهدى القوم الظلمين اولئك جزاؤهم ان عليهم لعنة الله والملئكة الناس اجمعين خلدين فيها لايخفف عنهم العذاب ولاهم ينظرون.
অর্থঃ “আল্লাহ পাক কি করে ঐ সম্প্রদায়কে হিদায়েত দান করবেন যারা ঈমান আনার পর কুফরী করে এবং তারা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্য এবং তাদের নিকট কুরআন-সুন্নাহর দলীল আসার পর। আল্লাহ পাক যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়েত দান করেন না। ঐ সমস্ত লোকদের শাস্তি হলো, তাদের প্রতি আল্লাহ পাক-এর, ফেরেশতাগণের এবং সমস্ত মানুষের লা’নত। অনন্তকাল ধরে সেই লা’নতের মধ্যে তারা থাকবে। তাদের উপর শাস্তি লাঘব করা হবেনা এবং তাদেরকে অবসরও দেয়া হবেনা।” (সূরা আলে ইমরান-৮৬, ৮৭, ৮৮)
উপরোক্ত আয়াত শরীফে আল্লাহ পাক নিজেই বলেন, যারা ঈমান আনার পর এবং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবী-রসূল হিসেবে স্বাক্ষ্য দেয়ার পর আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রদত্ত বিধান কুরআন-সুন্নাহ পাওয়ার পরও যারা ইসলামের বিপরীত নিজের মনগড়া, নিয়মনীতি বা আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে থাকে তাদেরকে আল্লাহ পাক জালিম ও মালউন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। যেমন, ইবলিস ও কাফিরদেরকে আল্লাহ পাক মালউন ও জালিম হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন।
এক্ষেত্রে প্রথমতঃ মালউন ইবলীসের উদাহরণ পেশ করা যায়।
ইবলীস এমন এক ব্যক্তি যে ছয় লক্ষ বৎসর আল্লাহ পাক-এর ইবাদত-বন্দেগী করেছিল। এমনকি সে শেষ পর্যন্ত “মুয়াল্লিমুল মালাকুত” বা ফেরেশ্তাদের উস্তাদ হয়ে তাঁদেরকে তা’লীম-তালক্বীন দেয়। এত কিছুর পরও ইবলীস মালউন, কাফির ও চির জাহান্নামী হয়ে গেল, তার আকৃতি-বিকৃতি ঘটলো কি কারণে?
এ প্রসঙ্গে বলা হয়, মহান আল্লাহপাক যখন হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে সৃষ্টি করেন, সৃষ্টি করার পর আল্লাহ পাক ইবলীসসহ সকল ফেরেশ্তাদেরকে আদেশ করলেন যে,
واذ قلنا للملئكة اسجدوا لادم.
অর্থাৎ, “মহান আল্লাহ পাক বলেন, ইবলীসসহ সকল ফেরেশ্তারা আমার নবী হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে সিজদা কর।” (সূরা বাক্বারা-৩৪)
فسجدوا الا ابليس.
অর্থাৎ, তখন সকল ফেরেশ্তাগণই সিজদা করলেন। কিন্তু ইবলীস সিজাদ করলো না। (সূরা বাক্বারা-৩৪)
তখন আল্লাহ পাক ইবলীসকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে ইবলীস
ما منعكى الاتسجد اذ امرتكى.
অর্থাৎ, আমি আদেশ করার পরও কোন জিনিষ তোকে সিজদা করার থেকে বিরত রাখলো? (সূরা আ’রাফ-১২)
ইবলীস তখন মনগড়া যুক্তি দাড় করালো। সে বললো,
انا خبر منه خلقتنى من نار وخلقته من طين.
অর্থাৎ, আমি হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম থেকে শ্রেষ্ঠ। কারণ তাকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। আর আমাকে আগুণ দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে।” (সূরা ছোয়াদ-৭৬)
তাই আমি তাঁকে সিজদা করিনি।
আল্লাহ পাক বলেন,
ابى واستكبر وكان من الكافرين.
অর্থাৎ, ইবলীস সিজদা করতে অস্বীকার করলো বা আল্লাহ পাক-এর আদেশ অমান্য করলো এবং তাকাব্বুরী বা অহংকার করলো। ফলে সে কাফিরদের অন্তর্ভূক্ত হলো। (সূরা বাক্বারা-৩৪)
অন্য আয়াত শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক বলেন,
فاخرج منها فانكى رجيم
“হে ইবলীস! তুই জান্নাত থেকে বের হয়ে যা। কারণ তুই বিতারিত।” (সূরা ছোয়াদ-৭৭)
অন্যত্র আরো ইরশাদ করেন,
ان عليكى لعنتى الى يوم الدين.
“অনন্তকাল ধরে তোর প্রতি আমার লা’নত বর্ষিত হতেই থাকবে।” (সূরা ছোয়াদ-৭৮)
এখানে ফিকিরের বিষয় হলো- ইবলীস ছয়লক্ষ বৎসর আল্লাহ পাক-এর ইবাদত করার পরও, ফেরেশ্তাদের লক্ষ লক্ষ বৎসর তা’লীম দেয়ার পরও আল্লাহ পাক-এর একটি মাত্র আদেশ অমান্য বা অস্বীকার করার কারণে সে কাট্টা কাফির হয়ে গেল। তার ছয় লক্ষ বৎসরের ইবাদত বিফলে গেল। সে জান্নাত থেকে বিতাড়িত হলো, চীর জাহান্নামী হলো এবং অনন্তকাল তার উপর মহান আল্লাহ পাক-এর লা’নত বর্ষিত হতেই থাকবে।
তাহলে যারা মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অসংখ্য আদেশ-নিষেধ যেমন ইসলামের নামে গণতন্ত্র, ভোট-নির্বাচন হারাম, পর্দা করা ফরয, ছবি তোলা হারাম ইত্যাদি। এগুলোকে যারা অমান্য ও অস্বীকার করবে তাদের কি ফায়ছালা হবে? মূলতঃ তারাও ইবলীসেরই কায়িম-মক্বাম হবে। অর্থাৎ তাদের অবস্থা ইবলীসের মতই হবে।
দ্বিতীয়তঃ কাট্টা কাফির কাদিয়ানীর উদাহরণ পেশ কারা যায়-
আমাদের আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের সকলের ঐক্যমতে মির্জা গোলাম কাদিয়ানী ও তার অনুসারীরা কাট্টা কাফির। তবে প্রশ্ন হলো তারা কেন কাফির? তারা কি আল্লাহ পাককে মানতোনা? রসূলকে মানতো না? নামায পড়তো না? রোযা রাখতোনা?
মূলতঃ তারা আল্লাহ পাক ও তাঁর রসুলকে মানতো, নামাযও পড়তো এবং রোযাও রাখতো। এর পরও তারা কাট্টা কাফির ও চীর জাহান্নামী হলো কেন?
শরীয়তের একটিমাত্র বিষয়কে অস্বীকার ও অমান্য করার কারণেই তারা কাট্টা কাফির ও চীর জাহান্নামী হয়েছে। মহান আল্লাহ পাক কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ করেন,
ما كان محمد ابا احدمن رجالكم ولكن رسول الله وخاتم النبين.
অর্থঃ “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদের মধ্যস্থিত কোন পুরুষের পিতা নন। বরং তিনি আল্লাহ পাক-এর রসূল এবং শেষ নবী।” (সূরা আহযাব-৪০)
আর হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
انا خاتم النبين لا نبى بعدى.
অর্থাৎ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমিই শেষ নবী। আমার পর কোন নবী আগমণ করবেনা।”
মির্জা গোলাম কাদিয়ানী মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপরোক্ত ফায়ছালা অমান্য ও অস্বীকার করে, উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফের মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে নবী দাবী করার কারণে কাট্টা কাফির ও চীর জাহান্নামী হয়েছে।
যদি তাই হয়ে থাকে, তবে আজকে যারা গণতন্ত্র, ভোট-নির্বাচন, ছবি ও পর্দাসহ মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীবের অসংখ্য ফায়ছালা বা আদেশ-নিষেধ অমান্য বা অস্বীকার করছে এবং মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে হালালকে হারাম ও হারামকে হালাল বলে ফতওয়া দিচ্ছে ও প্রচারনা চালাচ্ছে তাদের কি ফায়ছালা?
মূলতঃ নিঃসন্দেহে তারাও কাদিয়ানীর ন্যয় কাট্টা কাফির ও চীর জাহান্নামী হবে। অর্থাৎ তারা কাদিয়ানীরই কায়িম-মক্বাম। কাদিয়ানী হলো- স্বঘোষিত নবী। আর যারা হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম বলে তারা হচ্ছে অঘোষিত নবীর দাবিদার। কারণ ইসলামকে পরিপূর্ণ করে দেয়া হয়েছে। যা হালাল তা হালাল সাব্যস্ত হয়ে গেছে এবং যা হারাম তাও হারাম সাব্যস্ত হয়ে গেছে। ওহীর দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন করে আর ওহী নাযিল হবে না। এবং নতুন কোন বিধানও আর নাযিল হবে না। সুতরাং হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম বলার অর্থ হলো ওহী ও নতুন বিধান নাযিল হওয়ার দাবী করা যা মূলত নবী দাবী করারই নামান্তর।
এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত মুফাস্সির ও আলিমে হক্ব হযরত আবু সাঈদ মুল্লাজিউন রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর একটি ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
কিতাবে উল্লেখ আছে যে, বাদশা শাহ্জাহান একবার তার দরবারী আলেমদের নিকট ফতওয়া তলব করে বললেন- আমি অসুস্থ, অসুস্থতার কারণে আমার জন্যে রেশমী কাপড় পরিধান করা জায়েয হবে কি? দরবারী আলেমরা বাদশার মনতুষ্টির জন্যেই হোক বা দুনিয়াবী ফায়দা লাভের জন্যেই হোক, তারা ফতওয়া দিল, বাদশা নামদার যেহেতু আপনি অসুস্থ আর আপনি অসুস্থ হয়ে পড়লে রাজ্য অচল হয়ে পড়বে, কাজেই রাজ্য ও প্রজাদের বৃহত্তর স্বার্থে আপনার জন্যে এ অবস্থায় রেশমী কাপড় পরিধান করা জায়েয হবে। বাদশা তার দরবারী আলেমদের মৌখিক ফতওয়ায় আশ্বস্ত না হতে পেরে লিখিত ফতওয়ার নির্দেশ দিলেন। দরবারী আলেমরা বাদশাহ্কে এ ব্যাপারে লিখিত ফতওয়া দিল। বাদশা তাতেও নিশ্চিন্ত হতে পারলেন না, তাই তিনি বললেন, এ ফতওয়াতে অন্যান্য আরো আলেমের দস্তখত লাগবে। দরবারী আলেমরা তখন তাদের সমগোত্রীয় তিনশত আলেমের দস্তখত সংগ্রহ করে ফতওয়াটি বাদশাহ্র নিকট পেশ করলো। বাদশাহ্ ফতওয়াটি আদ্যপান্ত ভালরূপে পাঠ করে দেখলেন এবং বললেন যে, সেখানে তার শাহী মসজিদের যিনি খতীব, নূরুল আনোয়ার ও তাফসীরে আহ্মদীর ন্যায় বিশ্ববিখ্যাত কিতাবের মুছান্নিফ, তৎকালীন যামানার শ্রেষ্ঠতম আলেম, হযরতুল আল্লামা, মোল্লা যিয়ূন রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দস্তখত ব্যতীত এ ফতওয়া গ্রহণযোগ্য হবেনা। তখন দরবারী আলেমরা উক্ত ফতওয়াটি হযরত মোল্লা যিয়ূন রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দরবারে নিয়ে যায় দস্তখত নেয়ার জন্য। হযরত মোল্লা যিয়ূন রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, আমি আজ এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করবোনা, বরং বাদশা আমার মসজিদে জুময়ার নামাজ পড়তে আসেন, তাই আমি বাদশা ও মুছল্লীগণের সম্মুখে এ ব্যাপারে ফতওয়া দিব। অতঃপর জুময়ার দিন বাদশা তাঁর উজীর-নাজীরসহ জুময়ার নামাজ পড়ার জন্যে মসজিদে গেলেন। অনেক মুছল্লীও উপস্থিত হলেন এবং দরবারী আলেমরাও উপস্থিত। সকলেই অপেক্ষা করছে হযরত মোল্লা যিয়ূন রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ফতওয়া শোনার জন্যে। ইতিমধ্যে হযরত মোল্লা যিয়ূন রহমতুল্লাহি আলাইহি মিম্বরে উঠে বসলেন এবং বললেন, মুছল্লী ভাইয়েরা আমার নিকট তিনশত আলেমের দস্তখত সম্বলিত একটি ফতওয়া এসেছে। যাতে বলা হয়েছে যে, বৃহত্তর স্বার্থে, বাদশাহ্র অসুস্থতার কারণে, বাদশার জন্যে রেশমী কাপড় পরিধান করা জায়েয। এ ব্যাপারে আমার ফতওয়া হলো-
উদূ লেখা ঢুকবে………………………………………….
অর্থঃ “যারা এ ফতওয়া দিয়েছে এবং যে চেয়েছে উভয়েই কাফের হয়ে গেছে।”
কারণ, ওহীর দরজা বন্ধ হয়ে গেছে,হারাম হারাম হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে গেছে এবং হালাল হালাল হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে গেছে। তাই শরীয়তের দৃষ্টিতে হারামকে হালাল আর হালালকে হারাম বলা কাট্টা কুফরী। যারা বলবে তারা কাট্টা কাফির হবে।
মূলকথা হলো “ইসলামের নামে গণতন্ত্র, ভোট-নির্বাচন হারাম।” এটা যেহেতু মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ থেকে ওহী দ্বারা সাব্যস্ত হয়ে গেছে। সেহেতু যারা এটাকে মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে হালাল বা জায়িয বলবে তারা আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল-এর ফায়ছালা অস্বীকার ও অমান্য করার এবং নতুন ওহী ও বিধান নাযিলের দাবী করার কারণে মালউন ইবলীস ও কাট্টা কাফির কাদিয়ানীর ক্বায়িম-মক্বাম হিসেবে সাব্যস্ত হবে। অর্থাৎ তারা কাট্টা কাফির ও মুরতাদ হবে। তাদের সমস্ত আমল বরবাদ হবে, তারা জান্নাত থেকে মাহরূম হবে, তাদের আকৃতি বিকৃতি হবে এবং অনন্তকাল আল্লাহ পাক-এর লা’নত তাদের প্রতি বর্ষিত হতেই থাকবে। যেরূপ ইবলীস ও কাদিয়ানীদের উপর হচ্ছে। অবশ্য বর্তমানেও এর কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে। যেমন চর্মনাইয়ের পীর, দারুস সালামের পীর, খতীব উবাই, খতীব আমীনুলসহ আরো অনেকেরই মৃত্যুর সাথে সাথে আকৃতি-বিকৃতি ঘটে। চেহারা কালো কুৎসিত হয়ে যায়। লাশে পচন ধরে। দুর্গন্ধ বের হয়। এর একটিই কারণ- আর তা হচ্ছে তারা ইসলামের নামে গণতন্ত্র, ভোট-নির্বাচনকে জায়িয ও ভোটকে আমানত বলতো। এছাড়াও অসংখ্য হারাম বিষয়কে হালাল ও হালাল বিষয়কে হারাম ফতওয়া দিত। অর্থাৎ তারা অসংখ্য কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ছিল।
যে সকল মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিছ, মুফাচ্ছির, শাইখুল হাদীছ, খতীব, পীর, আমীর ইসলামের নামে গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন করছে, ভোটকে আমানত, স্বাক্ষ্য ফরয-ওয়াজিব বলছে তাদের ব্যাপারে শরীয়তের ফায়ছালা
অতএব, যে সকল মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিছ, মুফাচ্ছির, শাইখুল হাদীছ, খতীব, পীর, আমীর ইসলামের নামে গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন করছে, ভোটকে আমানত, স্বাক্ষ্য ফরয-ওয়াজিব বলছে শরীয়তের দৃষ্টিতে তারা মুরতাদ এর অন্তর্ভূক্ত। আর শরীয়তে মুরতাদের ফায়সালা হলো, তার স্ত্রী তালাক হবে যদি বিয়ে করে থাকে এবং এক্ষেত্রে পূনরায় তওবা না করে ও বিয়ে না দোহরানো ব্যতীত তার স্ত্রীর সাথে বসবাস করা বৈধ হবেনা। আর এ অবস্থায় সন্তান হলে সে সন্তানও বৈধ হবে না। হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে যদি হজ্জ করে থাকে, সমস্ত নেক আমল বরবাদ হয়ে যাবে, তার ওয়ারিশসত্ব বাতিল হবে। তাকে তিন দিন সময় দেয়া হবে তওবা করার জন্য যদি তওবা করে, তবে ক্ষমা করা হবে। অন্যথায় তার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদ-। কেননা হাদীছ শরীফে রয়েছে, তিন কারণে মৃত্যুদ- দেয়া জায়িয। যথা- ১. ঈমান আনার পর কুফরী করলে অর্থাৎ মুরতাদ হলে। ২. ঐ ব্যভিচারী বা ব্যভিচারিনী, যারা বিবাহিত বা বিবাহিতা। ৩. যে অন্যায়ভাবে কাউকে ক্বতল করে, তাকে।
আর মুরতাদ মারা যাবার পর যারা জানাযার নামায পড়ে বা পড়ায় বা জানাযার নামাযে সাহায্য-সহযোগীতা করে, তাদের সকলের উপরই মুরতাদের হুকুম বর্তাবে এবং এ সকল মুরতাদ মরলে বা নিহত হলে তাকে মুসলমানগণের কবরস্থানে দাফন করা যাবে না। এমনকি মুসলমানের ন্যায়ও দাফন করা যাবেনা। বরং তাকে কুকুরের ন্যায় একটি গর্তের মধ্যে পুঁতে রাখতে হবে।
উল্লেখ্য, যে সমস্ত ইমাম ইসলামের নামে গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচনকে জায়িয এবং ভোটকে আমানত ও ভোট দেয়াকে ওয়াজিব বলে কুফরী করেছে তারা যদি খালিছ ইস্তিগফার-তওবা করে কুফরী থেকে ফিরে আসে তাহলে তাদের পিছনে নামায আদায় করলে নামায জায়িয হবে। অন্যথায় এ সমস্ত ইমামদের অব্যহতি দিয়ে নেক্কার, পরহিজগার ও আল্লাহওয়ালা ইমাম ছাহেব নিয়োগ করা কমিটি ও মুছল্লীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। কারণ উক্ত ইমামের পিছনে যারাই নামায পড়বে তাদের কারো নামাযই হবে না।
কাজেই কমিটি ও মুছল্লী সকলেই হারাম ও কুফরী গুণাহে গুণাহ্গার হবে।
পরিশিষ্ট
ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও ভোট-নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়াখানা শেষ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবার শরীফে লক্ষ্য-কোটি শুকরিয়া।
মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ১৬১তম সংখ্যা থেকে ১৭৫তম সংখ্যায় প্রদত্ত নির্ভরযোগ্য ও দলীলভিত্তিক বিস্তারিত আলোচনা দ্বারা যে বিষয়গুলো অকাট্য ও সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে তাহলো-
১. ইসলাম হচ্ছে আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ওহীর মাধ্যমে নাযিলকৃত, একমাত্র পরিপূর্ণ, সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত, নিয়ামতপূর্ণ ও মনোনীত দ্বীন। যা ক্বিয়ামত পর্যন্ত বলবত থাকবে।
২. গণতন্ত্র হচ্ছে- মানব রচিত শাসন ব্যবস্থা। যার আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীক্বা মানুষের দ্বারা রচিত। মূলতঃ গণতন্ত্র শুধু মানব দ্বারাই রচিত নয় বরং তা বিধর্মীদের দ্বারা বিশেষ করে ইহুদীদের দ্বারা উদ্ভাবিত ও প্রবর্তিত। আর খ্রিস্টানদের দ্বারা সংস্কারকৃত শাসন পদ্ধতি। যা আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে ওহীর দ্বারা নাযিলকৃত নয়। বরং পূর্ববর্তী যামানায় আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে নাযিলকৃত আসমানী কিতাব বিকৃত হওয়ায় অর্থাৎ নফসানিয়াতের দরুন উক্ত কিতাব বিকৃতি বা পরিত্যাগ করার পর বিধর্মীরা তাদের দেশ পরিচালনা করার জন্য, খোদায়ী বিধানের পরিবর্তে নিজেরা যে সব আইন প্রণয়ন করেছিল, পরবর্তী সময় সেগুলো বিভিন্ন নামে পরিচিতি লাভ করে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গণতন্ত্র, যা খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে গ্রীসে উৎপত্তি লাভ করেছে এবং বর্তমান বিশ্বে ব্যাপক প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।
৩. কোন নবী-রসূল, ছাহাবী, তাবিয়ী, তাবে তাবিয়ীন ও ইমাম-মুজতাহিদ ভোট ও নির্বাচন করেননি। আরো উল্লেখ্য যে, তাঁরা ভোট ও নির্বাচন করেছেন এমন কোন প্রমাণও কেউ পেশ করতে পারবে না। প্রমাণ করার জন্য ক্বিয়ামত পর্যন্ত সময় দেয়া হলো। কারণ, ভোট প্রথার উৎপত্তিই হয়েছে ইহুদী-খ্রিষ্টান তথা বিধর্মীদের দ্বারা এবং তা ইদানিংকালে আধুনিক গণতন্ত্রের নামে ব্যাপক প্রচার ও প্রসার লাভ করেছে।
৪. ভোট দেয়া, চাওয়া যেরূপ হারাম তদ্রুপ পদপ্রার্থী হওয়াও শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম। কারণ,আল্লাহ পাক-এর রাসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে পদপ্রার্থী হয় আমরা তাকে পদ দেইনা।”
৫. ভোট একটি আমানত, স্বাক্ষ্য, শুপারিশ, উকিল নিয়োগ ইত্যাদি মুফতী শফী ও শামছুল হক্ব ফরীদপূরী ছাহেব ও তার অনুসারীদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণই মনগড়া বিভ্রান্তিকর, দলীলবিহীন ও তাফসীর বির রায়ের অন্তর্ভুক্ত।
৬. “আল্লাহ পাক বলেন, ভোট একটি আমানত। আর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৎ লোককে ভোট দিতে বলেছেন” তথাকথিত খতীব ছাহেবের উপরোক্ত বক্তব্য মোটেও সঠিক ও শরীয়তসম্মত হয়নি। বরং সম্পূর্ণ মনগড়া, বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর, দলীলবিহীন ও কুফরীমূলক হয়েছে।”
৭. যিনি পরিপূর্ণরূপে কুরআন ও সুন্নাহকে অনুসরণ করেন এবং কুরআন ও সুন্নাহ মুতাবিক শাসন বা বিচার কার্য তথা খিলাফত পরিচালনা করেন ছহীহ অর্থে তিনিই মুসলমানদের প্রকৃত শাসক বা খলীফা। কাজেই, “কুরআন-সুন্নাহ মুসলমানদের প্রকৃত শাসক” মাহিউদ্দীনের এ বক্তব্য সম্পূর্ণ ভুল, মনগড়া, দলীল বিহীন ও কুফরীমূলক।
৮. মুসলমান ইসলাম তথা কুরআন-সুন্নাহও পালন করবে আবার সাথে সাথে বেদ্বীন-বদদ্বীনদের নিয়ম-নীতিও পালন করবে তা হবেনা। মুসলমানকে শুধুমাত্র কুরআন-সুন্নাহকেই পরিপূর্ণ অনুসরণ করতে হবে। এর সাথে অন্য কোন নিয়ম নীতি যে মিশ্রিত, তলব বা অনুসরণ করবে সে গোমরাহ ও ক্ষতিগ্রস্থের অন্তর্ভুক্ত হবে। কারণ কোন ঈমানদারের পক্ষে আল্লাহ্ পাক-এর আদেশ-নির্দেশ, নিয়ম-নীতির খেলাফ অন্য কোন নিয়ম-নীতি ও মতবাদ মেনে নেয়া যেমন নাজায়েয, ঠিক অন্য কোন নিয়ম-নীতি ও মতবাদকে ইসলামের সাথে মিশ্রিত করাও হারাম ও নাজায়িয। শুধু তাই নয় বরং তা সমর্থন করা বেদ্বীনদের সাথে জাহেরীভাবে মিলামিশা করা এমন কি অন্তরে সর্মথন করাও নাজায়িয এবং হারাম।
৯. ভোট তথা নির্বাচনভিত্তিক গণতন্ত্রের উৎপত্তি হয় আখেরী রাসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জমিনে আগমণের অনেক পূর্বে। যার প্রবর্তক হচ্ছে ইহুদী ও নাছারা। কাজেই ইসলামী শুরা পদ্ধতি থেকে নির্বাচন পদ্ধতির উদ্ভব ঘটেছে এ কথা বলা নেহায়েতই মূর্খতা ও অজ্ঞতাসূচক এবং কূফরীমূলক। তাই ইসলামের নামে ভোটের রাজনীতি বৈধ বলাও কুফরী।
১০. এ যুগের ভোট প্রদান বাইয়াতের বিকল্প বিবেচিত হতে পারে। মাহিউদ্দীনের এ বক্তব্যও সম্পূর্ণ কুফরীমূলক হয়েছে। কারণ ভোট পদ্ধতি বেদ্বীন, বদ্দ্বীন, ইহুদী ও নাছারাদের মাধ্যমে প্রবর্তিত বা উদ্ভাবিত হয়েছে। আর বাইয়াত প্রথা বা এর নিয়ম-কানুন জারি করেছেন স্বয়ং আখেরী রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
১১. ছহীহ এবং গ্রহণযোগ্য ফতওয়া হলো, হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন কস্মিনকালেও পদপ্রার্থী হন নাই। “খূলাফায়ে রাশিদীন পদপ্রার্থী ছিলেন” একথা বলার অর্থ হলো, উনাদের প্রতি মিথ্যারোপ করা ও তোহমত দেয়া যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কারণ ইসলামী শরীয়তে পদপ্রার্থী হওয়া বা পদের আকাঙ্খা করা সম্পূর্ণ হারাম।
১২. একটি পদের জন্য একাধিক ছাহাবী প্রার্থী হয়েছিলেন, একথা বলা ও বিশ্বাস করাও কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কারণ হাদীছ শরীফ দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, পদপ্রার্থী হওয়া বা পদ তালাশ করা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয। যদি তাই হয়ে থাকে তবে একথা বলা কি করে জায়িয হতে পারে যে, “একটি পদের জন্য একাধিক ছাহাবী প্রার্থী হয়েছিলেন।”
১৩. খলীফাগণ খলীফা হওয়ার পর খিলাফত পরিচালনা না করে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন একথা বলা সুস্পষ্ট কুফরী। কারণ “খলীফাগণ রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন” এ কথার দ্বারা সুক্ষ্মভাবে এটাই বুঝানো হচ্ছে যে, খুলাফায়ে রাশিদীন অর্থাৎ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাফরমানী করেছেন। (নাঊযুবিল্লাহ) এর দ্বারা ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি তিরস্কার ও কুফরী তোহমত দেয়া হয়েছে যা উনাদের মানহানী ও কষ্টের কারণ।
১৪. খলীফাগণ শরয়ী বিধানে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে খিলাফত পরিচালনা করেছেন। মানব রচিত কোন আইনের দ্বারা খলীফাগণ খিলাফত পরিচালনা করেননি। তাঁরা মানব রচিত আইনে পরিচালনা করেছেন এ চিন্তা করাটাও কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। কোন ব্যক্তি যদি মানব রচিত কোন আইনে শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করে তাহলে সেটা খিলাফত হবে না। বরং সেটা রাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ইত্যাদি তন্ত্রের মত একটি তন্ত্রেরই অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে। যা করা মুসলমানদের জন্য কস্মিন কালেও জায়িয নেই।
১৫. খলীফা নিয়োগ মনোনয়ন পদ্ধতিতে হতে পারে তবে তা কস্মিনকালেও নির্বাচন নয়। কারণ সাধারণভাবে নির্বাচন বলতে বুঝায়, একাধিক পদপ্রার্থী থেকে ভোটদানের মাধ্যমে একজনকে নির্বাচিত করা। অথচ ইসলামের নামে ভোট চাওয়া বা পদপ্রার্থী হওয়া সম্পূর্ণ হারাম।
১৬. গণতান্ত্রিক বহুদলীয় নির্বাচন পদ্ধতিতে প্রার্থীকে ভোট দেয়া শরীয়তের দৃষ্টিতে ওয়াজিব নয় বরং হারাম। ভোটকে ওয়াজিব বলা শরীয়তের দৃষ্টিতে কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। তবে গণতন্ত্র ভিত্তিক বহুদলীয় রাজনীতিতে প্রার্থীকে নির্বাচনে ভোট দেয়া গণতন্ত্রের দৃষ্টিতে অবশ্য কর্তব্য বলা হয়েছে। কারণ নির্দিষ্ট পরিমাণ ভোট না দিলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। আর নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হলে গণতন্ত্রও প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারবে না।
১৭. মাসিক মদীনার সম্পাদক হযরত শাহ্ ওয়ালীউল্লাহ্ মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর লিখিত “হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগা ও ইযালাতুল খফা” কিতাবদ্বয়ের উদ্বৃতি এনে একটা জঘণ্য প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। তাহলো এই যে, খিলাফত পরিচালনা ও খলীফা মনোনয়নকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, নির্বাচন ও ভোট প্রদানের দ্বারা রাষ্ট্রপ্রধান নির্ধারিত হওয়ার সাথে মিলিয়ে দিয়েছে। অথচ এ দু’টি বিষয় সম্পূর্ণই আলাদা।
মাসিক মদীনার সম্পাদক শুধু এ উত্তর প্রদানের ক্ষেত্রেই নয় বরং পূর্বের প্রায় সংখ্যায়ই সে দলীলবিহীন, মনগড়া ও ভুল উত্তর দিয়ে মানুষের সাথে চরম প্রতারণা করেছে যা মানুষের ঈমান, আক্বীদা ও আমলের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক।
১৮. গণতন্ত্র বা নির্বাচন দুই প্রকার- ১. পাশ্চাত্য গণতন্ত্র বা নির্বাচন, ২. ইসলামী গণতন্ত্র বা নির্বাচন। হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে অজ্ঞতামূলক ও মূর্খতাসূচক হয়েছে। তবে এই সমস্ত মৌলভী ছাহেবদের জন্য এটাই স্বাভাবিক যে, এরা গণতন্ত্র সম্পর্কে ভুল ফতওয়া দিবে। কারণ, এরা গণতন্ত্র সম্পর্কে পর্যাপ্ত পরিমাণ পড়াশুনা করে নাই। তবে আরো অধিক আশ্চর্য্যরে বিষয় এই যে, এরা জীবনভর ইসলাম সম্পর্কে পড়াশুনা করলো এবং করালো তারপরও তারা ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ইলম অর্জন করতে পারে নাই। তাই তাদের পক্ষে এ ধরনের ভুল, মনগড়া, বিভ্রান্তিকর, দলীলবিহীন ও কুফরীমূলক বক্তব্য দেয়া সম্ভব হয়েছে।
১৯. গণতন্ত্রে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক বা সকল ক্ষমতার উৎস হচ্ছে একমাত্র জনগণ। আর এই সার্বভৌম ক্ষমতা বা সমস্ত ক্ষমতার মালিক হওয়ার কারণেই গণতন্ত্রীরা নিজেরাই নিজেদের জন্য আইন-কানুন, তর্জ-তরীকা, নিয়ম-নীতি ইত্যাদি প্রণয়ন করে থাকে। অর্থাৎ গণতন্ত্রে জনপ্রতিনিধিরা একমাত্র আইন প্রণেতা। তাই গণতান্ত্রিক আইন সভায় যদি কোন কুরআন-সুন্নাহ্র অর্থাৎ শরয়ী কোন আইন পেশ করা হয় আর যদি সেটা তাদের গণতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণার খেলাফ হয় বা মনোপুত না হয় তাহলে সে সব শরয়ী আইন সেখানে উপেক্ষিত হয় বা আদৌ গৃহীত হয়না। কারণ গণতান্ত্রিক বিধি অনুযায়ী তাদের অধিকাংশ আইন প্রণেতা যে বিষয় একমত পোষণ করবে সেটাই আইন হিসেবে গৃহীত হবে।
২০. “হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছেন,” হাটহাজারী খারেজী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত মাসিক মুহীনুল ইসলামে প্রদত্ত এ বক্তব্য কাট্টাকুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কারণ এ কথা বলার অর্থই হলো-
ক. হযরত খুলাফায়ে রাশেদীনগণ আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীবের আদেশ-নিষেধ অমান্য করেছেন,
খ. ইহুদী-নাছারা তথা বেদ্বীন-বদদ্বীনদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করেছেন,
গ. তারা পদলোভী বা ক্ষমতার লোভী ছিলেন বলে সাব্যস্ত করা। যা সর্বসম্মতিক্রমে কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। এ ধরনের বক্তব্য প্রদান থেকে বিরত থাকা সকলের জন্যই ফরজ ওয়াজিব।
২১. হাটহাজারী খারেজী মৌলবী ছাহেবরা যে লিখেছে, “পদপ্রার্থী হওয়া জায়িয” তাদের এ বক্তব্য হারামকে জায়িয ফতওয়া দেয়ার কারণে সুস্পষ্ট কুফরীর শামিল হয়েছে। কারণ ভোট দেয়া, চাওয়া যেরূপ হারাম তদ্রুপ পদপ্রার্থী হওয়াও শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম। কারণ,আল্লাহ পাক-এর রাসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে পদপ্রার্থী হয় আমরা তাকে পদ দেইনা।”
২২. হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের বক্তব্য হলো আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ও তাঁর হাবীব হাদীছ শরীফে ভোটকে আমানত, স্বাক্ষ্য, শুপারিশ ও উকিল নিয়োগ বলে উল্লেখ করেছেন। (নাঊযুবিল্লাহ) হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণরূপেই মিথ্যা, মনগড়া, দলীলবিহীন ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। মুলতঃ কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে ভোটকে আমানত, স্বাক্ষ্য ইত্যাদি বলা তো দূরের কথাই বরং কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে ভোটের কোন অস্তিত্বই নাই। হাটহাজারী খারিজী মাদ্রাসার মৌলবী ছাহেবরা “কুরআন সুন্নায় ভোটকে আমানত স্বাক্ষ্য, ইত্যাদি বলে উল্লেখ করা হয়েছে” একথা বলে একদিক থেকে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি মিথ্যারোপ করেছে, অপর দিক থেকে কুরআন সুন্নাহর সুস্পষ্ট অপব্যাখ্যা করেছে। যার প্রত্যেকটাই কাট্টা কুফরী ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ।
২৩. কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের কোথাও ভোটকে শাহাদত বা স্বাক্ষ্য বলে উল্লেখ করা হয় নাই। পটিয়া খারিজী মাদ্রাসার মৌলবী ছাহেবরা “শরীয়তে ভোটকে শাহাদত বা স্বাক্ষ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে” একথা বলে একদিক থেকে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি মিথ্যারোপ করেছে, অপর দিক থেকে কুরআন সুন্নাহর সুস্পষ্ট অপব্যাখ্যা করেছে। যার প্রত্যেকটাই কাট্টা কুফরী ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ।
২৪. স্বয়ং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পদপ্রার্থী হতে বা পদের আকাঙ্ঘা করতে নিষেধ করেছেন এবং যারা পদপ্রার্থী হয় বা পদের আকাঙ্খা করে তাদেরকে তিরষ্কার করেছেন। তাই ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে পদপ্রার্থী হওয়া বা পদের আকাঙ্খা করা সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়িয। যদি তাই হয়ে থাকে তবে ইসলামের নামে বর্তমান পদ্ধতির নির্বাচনে অংশ গ্রহন করা কি করে জায়িয হতে পারে? এবং কি করে পদপ্রার্থী হওয়ার জন্য ও নির্বাচনে অংশগ্রহন করার জন্য উৎসাহিত করা শরীয়ত সম্মত হতে পারে? মূল কথা হলো উপরোক্ত বিস্তারিত দলীল ভিত্তিক আলাচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, পঢিয়া খারিজী মাদ্রাসার মৌলবী ছাহেবরা যে বলেছে, “বর্তমান পদ্ধতিতে নির্বাচন করা ইসলাম পন্থিদের জন্য একান্ত কর্তব্য” তাদের এ বক্তব্য কাট্টা কুফরীর শামিল।
২৫. পটিয়া খারিজী মাদ্রাসার মৌলবী ছাহেবরা যে বলেছে “ভোট নাগরিক অধিকার, এ অধিকার অর্জনে মা’জুরবশঃত মহিলাদের জন্যও ছবি তোলা জায়িয রয়েছে” তাদের এ বক্তব্য শুধু অশুদ্ধই নয় বরং কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের সম্পূর্ণই খিলাফ ও কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। কেননা মহিলারা ছবি তুললে, দ্বিগুণ গুণাহ হবে। এক. ছবি তোলার গুণাহ, দুই. বেপর্দা হওয়ার গুণাহ। প্রত্যেকটাই হারাম ও কবীরা গুণাহের অন্তর্ভূক্ত। অর্থাৎ শুধু ভোটের জন্য কেন কোন অবস্থাতেই ছবি তোলা ও বেপর্দা হওয়া জায়িয নেই। কাজেই, পটিয়া খারিজী মাদ্রাসার মৌলবী ছাহেবরা যে বলেছে, “ভোট নাগরিক অধিকার, এ অধিকার অর্জনে মা’জুরবশতঃ মহিলাদের জন্যও ছবি তোলা জায়িয” তাদের এ বক্তব্য অশুদ্ধ, জিহালতপুর্ণ, মনগড়া, শরীয়ত বিরোধী ও কাট্টা কুফরীমুলক বলে প্রমাণিত হলো।
২৬. পটিয়া খারিজী মৌলবী ছাহেবরা যে বলেছে, “দ্বীন ইসলাম রক্ষার্থে ভোট বেচা-কেনা করাও জায়িয।” তাদের এ বক্তব্য সবদিক থেকেই কুফরীমূলক বলে সাব্যস্ত হয়েছে। তাদেরকে এর থেকে খালিছ তওবা করতে হবে। মূলকথা হলো-ইসলামের দৃষ্টিতে ভোট চাওয়া, দেয়া, ভোট বেচা-কেনা করা সম্পূর্ণই হারাম। এটাকে হালাল বলা কাট্টা কুফরী।
২৭. তাদের গণতন্ত্রভিত্তিক রাজনৈতিক জোটকে হুদায়বিয়ার সন্ধির সাথে তুলনা করা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। কারণ তারা যদিও ইসলামী নাম ব্যবহার করে থাকে, হাক্বীক্বত তারা গণতন্ত্রভিত্তিক রাজনৈতিক দল। কারণ তাদের মধ্যে আর অন্যান্য দলের মধ্যে তেমন কোনই পার্থক্য নেই। তাদের নীতি ও আদর্শ আর অন্য দলগুলোর নীতি ও আদর্শ একই।
২৮. তারা ইসলাম সম্পর্কে চরম পর্যায়ের জাহিল বা অজ্ঞ হওয়ার কারণেই ‘হুদায়বিয়ার সন্ধির’ মূল বিষয় বস্তু বা হাক্বীক্বত উপলব্ধি করতে পারেনি। ‘হুদায়বিয়ার সন্ধির’ মূল হাক্বীক্বত সম্পর্কে যদি তাদের সামন্যতমও ইলম থাকতো তবে তারা কস্মিনকালেও তাদের কুফরী কর্মকা- বা জোটকে ‘হুদায়বিয়ার সন্ধির’ সাথে তুলনা করার দুঃসাহস দেখাতে পারতোনা।
২৯. ইসলামের নামে গণতন্ত্রভিত্তিক আন্দোলনকাীরা যে বলে, রাষ্ট্রিয় পর্যায়ে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠা করা ফরযে আইন। তাদের একথা মোটেও শুদ্ধ নয়। বরং সম্পূর্ণই মনগড়া, দলীলবিহীন ও অজ্ঞতাপ্রসূত। কারণ প্রথমতঃ ইসলাম কোন রাষ্ট্রই স্বীকার করে না। কেননা রাষ্ট্র হচ্ছে একটি সুনির্দিষ্ট ভূ-খ-ের নাম। অথচ ইসলাম বা খিলাফত সুনির্দিষ্ট কোন ভূখ-ের জন্যে নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের জন্য। কাজেই, ইসলাম বা খিলাফত প্রতিষ্ঠার কোশেশ করতে হবে সমগ্র বিশ্বব্যাপী, নির্দিষ্ট কোন ভূখ-ের জন্যে নয়। দ্বিতীয়তঃ “ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠা করা ফরজে আইন” ইসলামের নামে গণতন্ত্রভিত্তিক আন্দোলনকারীদের একথাও ডাহা মিথ্যা, ভুল ও কুরআন সুন্নাহর খিলাফ। ছহীহ, গ্রহণযোগ্য ও কুরআন-সুন্নাহসম্মত ফতওয়া হলো, যমীনে খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্যে কোশেশ করা ফরযে কিফায়া।
৩০. আল্লাহর যমীনে খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হোক এটা যদি কেউ চায় তবে তাকে অবশ্যই খালিছ ঈমানদার তথা প্রতিটি ক্ষেত্রে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী হতে হবে। নেককার পরহিযগার তথা প্রতিক্ষেত্রে শরীয়তের পাবন্দ হতে হবে এবং শরীয়তের দৃষ্টিতে শরয়ী পদ্ধতিতে শরীয়তের গন্ডির ভিতরে থেকেই অর্থাৎ খিলাফত আলা- মিনহাযিন নুবুওওয়াহ” বা নুবুওওয়াতের দৃষ্টিতে খিলাফতের জন্য কোশেশ করতে হবে। কোন অবস্থাতেই বেদ্বনী-বদদ্বীনী, হারাম, নাজায়িয পন্থায় কোশেশ করা যাবে না। কারণ, ইসলামে বোমাবাজি ও জঙ্গী তৎপরতা চালানো হারাম। বোমাবাজি, সন্ত্রাসী ও বেদ্বীনী পন্থায় কখনো ইসলাম আসেনি এবং আসবেনা।” অর্থাৎ গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন, হরতাল, লংমার্চ, বোমাবাজী, সন্ত্রাসী এ সকল বেদ্বীনী ও শরীয়ত বিরোধী পন্থায় কখনো ইসলাম আসে নাই। এবং আসবেও না। বরং এগুলো সবই ইসলামের ক্ষতির কারণ।
৩১. যেহেতু কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের অকাট্য ও অসংখ্য নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে প্রমাণিত হয়েছে যে, ইসলামের নামে গণতন্ত্র, ভোট-নির্বাচন করা ও ভোটকে আমানত, স্বাক্ষ্য, ওয়াজিব বলা হারাম ও কুফরী। তাই যে সকল মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিছ, মুফাস্সির, শাইখুল হাদীছ, খতীব, পীর, আমীর ইসলামের নামে গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন করছে, ভোটকে আমানত, স্বাক্ষ্য ফরয-ওয়াজিব বলছে তারা কস্মিনকালেও হক্কানী আলিম নয় বরং উলামায়ে ‘ছূ’ বা দুনিয়াদার আলিম। কারণ, আলিম হওয়ার জন্য প্রথমত: শর্ত হলো ঈমান দ্বিতীয়ত: শর্ত হলো তাক্বওয়া। তৃতীয়ত: শর্ত হলো অর্জিত ইলম্ অনুযায়ী আমল। তাছাড়া তারা সুস্পষ্ট হারামগুলোকে হালাল বলে থাকে বা হারাম কাজগুলো নির্দিধায় করে থাকে। যেমন- মওদুদী ও দেওবন্দীদের কিতাবেই রয়েছে গণতন্ত্র, ভোট-নির্বাচন করা, ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া হারাম অথচ তারাই তা করে থাকে।
৩২. যে সকল মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিছ, মুফাস্সির, শাইখুল হাদীছ, খতীব, পীর, আমীর ইসলামের নামে গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন করছে, ভোটকে আমানত, স্বাক্ষ্য ফরয-ওয়াজিব বলছে শরীয়তের দৃষ্টিতে তারা মুরতাদ এর অন্তর্ভূক্ত। কারণ শরীয়তে হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম বলা কুফরী আর যে কুফরী করে শরীয়তের দৃষ্টিতে সেই মুরতাদ। আর শরীয়তে মুরতাদের ফায়সালা হলো, তার স্ত্রী তালাক হবে যদি বিয়ে করে থাকে এবং এক্ষেত্রে পূনরায় তওবা না করে, বিয়ে না দোহরানো ব্যতীত তার স্ত্রীর সাথে বসবাস করা বৈধ হবেনা। আর এ অবস্থায় সন্তান হলে সে সন্তানও বৈধ হবে না। হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে যদি হজ্জ করে থাকে, সমস্ত নেক আমল বরবাদ হয়ে যাবে, তার ওয়ারিশসত্ব বাতিল হবে। তাকে তিন দিন সময় দেয়া হবে তওবা করার জন্য এবং যদি তওবা করে, তবে ক্ষমা করা হবে। অন্যথায় তার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড
আয় আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে প্রদত্ত ফতওয়া মোতাবেক আমল করে মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রেযামন্দী হাছিল করার তাওফিক দান করুন। (আমীন)
বিঃদ্রঃ- ফতওয়ার কলেবর অত্যাধিক বৃদ্ধি হওয়ার আশঙ্কায় সংক্ষিপ্ত করা হলো। প্রয়োজনে আরো বিস্তারিত ও আরো অধিক দলীলের ভিত্তিতে ফতওয়া দেয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।
প্রকাশ্য বাহাছের চ্যালেঞ্জ
যারা “ইসলামের নামে গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচনকে জায়িয ও ভোটকে আমানত ও ভোট দেয়াকে ওয়াজিব বলছে তাদের প্রতি প্রকাশ্য বাহাছের চ্যালেঞ্জ রইল। যদি তারা সত্যবাদী হয়ে থাকে তবে যেন “বাহাছের চ্যালেঞ্জ” গ্রহন করে প্রকাশ্যে জনগণের সম্মুখে তাদের বক্তব্য ও আমলের পক্ষে দলীল-প্রমাণ পেশ করে।
– সমাপ্ত –