প্রকাশিত ফতওয়াসমূহ
[সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ রব্বুল আলামীনের জন্যে এবং অসংখ্য দরূদ ও সালাম আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, আখিরী রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। মহান আল্লাহ্ পাক-এর অশেষ রহ্মতে গবেষণা কেন্দ্র “মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে, বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব-এর অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীল ভিত্তিক মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা) ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যায়) এবং ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যায়) পেশ করার পর-
২৫ তম ফতওয়া হিসেবে
“হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” শুরু করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।
হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার
সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার উদ্দেশ্য
সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ খালিছ হক্ব মত-পথ তালাশ করা বা ছহীহ ও সুন্নতী আমলের মাধ্যমে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রেজামন্দি বা সন্তুষ্টি হাছিল করা। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” এমন সব লেখাই পত্রস্থ হয়, যা মানুষের ছহীহ আক্বীদা লাভ ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক।
প্রসঙ্গতঃ ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাতে’ “হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” দেয়ার মাকছুদ এবং উদ্দেশ্যও ঠিক তাই।
স্মর্তব্য যে, মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাকে ‘সূরা মায়িদা’র’ ৮২নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,
لتجدن اشد الناس عد اوذ لنذ ين امنوا اليهود والذين اشر كوا.
অর্থঃ-“তোমরা তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে পাবে ইহুদীদেরকে। অতঃপর যারা মুশরিক তাদেরকে।”
বিশেষতঃ বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো- উলামায়ে ‘ছু’। উল্লেখ্য, ইহুদীদের এজেন্ট বাতিল মতাবলম্বী উলামায়ে ‘ছূ’রা হারাম টিভি চ্যানেল, পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদি ও বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে একের পর এক হারামকে হালাল, হালালকে হারাম, জায়িযকে নাজায়িয, নাজায়িযকে জায়িয বলে প্রচার করছে।
যেমন, তারা প্রচার করছে- ফরয নামাযের পর মুনাজাত করা বিদয়াত ও হারাম, নিয়ত করে রওযা শরীফ ও মাযার শরীফ যিয়ারত করা শিরক, কদমবুছী করা নাজায়িয ও শিরক, মাযহাব মানার কোন প্রয়োজন নেই, পীর-মুরীদী শরীয়ত বিরোধী প্রথা, ঈদে মীলাদুন্ নবী পালন করা বিদ্য়াত, মীলাদ ক্বিয়াম করা র্শিক-বিদ্য়াত। শবে বরাত পালন করা বিদ্য়াত। তারাবীহ নামায জরুরী কোন নামায নয়, আট রাকায়াত তারাবীহ পড়লেই চলে ইত্যাদি ইত্যাদি। (নাঊযুবিল্লাহ)
অথচ উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ই কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ তথা শরীয়তসম্মত এবং তন্মধ্যে কোনটা সুন্নত আবার কোনটা ফরয।
পক্ষান্তরে উলামায়ে ‘ছূ’ তথা দুনিয়াদার মাওলানারা ইসলামের নামে ছবি, টেলিভিশন, সিনেমা, নাটক, নোবেল, হরতাল, বেপর্দা হওয়া, নারী নেতৃত্ব মানা, ভোট দেয়া, রোযা অবস্থায় ইনজেকশন নেয়া, মহিলাদের জামায়াতের জন্যে মসজিদে যাওয়া, মহিলাদের বাইরে বের হওয়ার সময় হাত ও মুখ খোলা রাখা, হরতাল করা, লংমার্চ করা, গণতন্ত্র ও ভোট-নির্বাচন করা, ব্লাসফেমী আইন চাওয়া, মৌলবাদী দাবী করা, কুশপুত্তলিকা দাহ করা, টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম বা অনুষ্ঠান করা ইত্যাদি নাজায়িয কাজগুলোকে জায়িয বলে প্রচার করছে। (নাঊযুবিল্লাহ) অর্থাৎ তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, মুসলমানদেরকে ইসলাম থেকে সরিয়ে, ইবাদত থেকে সরিয়ে অনৈসলামিক ও হারাম কাজে মশগুল করে দিয়ে বেঈমান করে দেয়া।
উল্লেখ্য, ইহুদীদের এজেন্ট, বাতিল মতাবলম্বী দাজ্জালে কায্যাব তথা উলামায়ে ‘ছূ’রা উল্লিখিত বিষয়গুলোর ন্যায় ‘লাল রংয়ের পোশাক বা রুমাল’ সম্পর্কেও সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
তারা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদী ও বক্তব্যের মাধ্যমে প্রচার করে বেড়াচ্ছে যে, ‘পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক পরিধান বা ব্যবহার করা জায়িয।’ (নাউযুবিল্লাহ)
অথচ অসংখ্য, নির্ভরযোগ্য ও অকাট্য দলীলের দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, হানাফী মাযহাবের মুখতার বা গ্রহণযোগ্য ও ফতওয়াগ্রাহ্য মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম তথা নিষিদ্ধ। অর্থাৎ সম্পূর্ণটা লাল হলে হারাম, অধিকাংশ লাল হলে মাকরূহ তাহরীমী ও কম লাল হলে মাকরূহ তানযীহী। আর যেহেতু হানাফী মাযহাব মতে লাল রংয়ের পোশাক পরিধান করা পুরুষের জন্য হারাম। তাই এখন যারা তা পরিধান করবে তারা দায়িমীভাবেই হারাম কাজে লিপ্ত থাকবে। অর্থাৎ তারা হারাম কাজ করার গুণাহে গুণাহ্গার হবে। সাথে সাথে ‘সাদা রংয়ের রুমাল ব্যবহার করা খাছ সুন্নত” এ মহান সুন্নতের আমল থেকে সম্পূর্ণ মাহরূম হয়ে যাবে। অথচ সুন্নতের ইত্তিবাই হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রেযামন্দী বা সন্তুষ্টি লাভের একমাত্র মাধ্যম।
অতএব, যারা লাল রংয়ের পোশাক বা রুমাল সম্পর্কে ভুল, মনগড়া ও বিভ্রান্তিকর ফতওয়া দিয়ে মুসলমানদের ঈমান-আমল ধ্বংস করছে তাদের সেই ঈমান-আমল বিধ্বংসী ফতওয়া থেকে সাধারন মুসলমানদের ঈমান-আমল হিফাজতের লক্ষে ও লাল রুমাল সম্পর্কিত সঠিক ও দলীলভিত্তিক ফায়ছালা তুলে ধরার উদ্দেশ্যেই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে “হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” দেয়া হলো। যাতে করে লাল রংয়ের পোশাক বা রুমাল সম্পর্কিত সঠিক ও দলীলভিত্তিক ফায়ছালা অবগত হয়ে সে অনুযায়ী আমল করে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে। সাথে সাথে যারা লাল রংয়ের পোশাক বা রুমাল নিয়ে বিভ্রান্তিতে রয়েছে তারা বিভ্রান্তি থেকে বেঁচে হক্বের উপর দায়িম-ক্বায়িম থাকতে পারে।
হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক নিষিদ্ধ হওয়ার প্রমাণ ও সিলেট খারিজী মাদ্রাসার ‘তথাকথিত মুফতী!’ ছাহেবের মনগড়া বক্তব্যের খন্ডনমূলক জাওয়াব
“আমাদের হানাফী মাযহাব মতে, পুরুষের জন্য সম্পূর্ণ বা অধিকাংশ লাল রংয়ের রুমাল বা কাপড় পরিধান করা হারাম ও মাকরূহ তাহরীমী, আর লালের ভাগ কম হলে মাকরূহ তানযীহী”- বাতিলের আতঙ্ক, যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর এ ফতওয়াই ছহীহ, গ্রহণযোগ্য, দলীলভিত্তিক ও কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসসম্মত।
বলার অপেক্ষাই রাখে না যে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত থেকে সংকলিত ফতওয়াটিই ছহীহ যা গ্রহণযোগ্য, দলীলভিত্তিক। অর্থাৎ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসসম্মত। কারণ উক্ত ফতওয়ায় নিজস্ব কোন মত পেশ করা হয়নি। বরং মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর বক্তব্যই হুবহু সংকলন করা হয়েছে মাত্র।
পক্ষান্তরে সিলেট কাসেমুল উলূম খারিজী মাদ্রাসার তথাকথিত মুফতী (!) ‘লাল রং’ সম্পর্কিত উক্ত ফতওয়াটি খণ্ডন করতে গিয়ে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা সম্পূর্ণরূপে অশুদ্ধ, বিভ্রান্তিকর, দলীলবিহীন ও জিহালতপূর্ণ হয়েছে।
কথিত মুফতী ছাহেব ক্ষেত্র বিশেষে নিজের মনগড়া মতকে ছাবেত করার লক্ষ্যে কোন কোন হাদীছ শরীফ ও কিতাবের ইবারতের মনগড়া ও ভুল তরজমা ও ব্যাখ্যা দিয়েছে। অর্থাৎ তথাকথিত উক্ত মুফতী ছাহেব তার উক্ত ফতওয়ার মাধ্যমে ধোকা ও প্রতারণার চরম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
মূলত: তথাকথিত উক্ত খারিজী মুফতী (!) ছাহেব লাল রং সম্পর্কিত আরবী শব্দের সঠিক অর্থ ও তাহক্বীক্ব সম্পর্কে অবগত না হওয়ার কারণে এবং হাদীছ শরীফ ও কিতাবের ইবারতসমূহের সঠিক ব্যাখ্যা ও মর্ম অনুধাবনে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই লাল রং সম্পর্কে এরূপ অশুদ্ধ ও বিভ্রান্তিকর ফতওয়া প্রদান করেছে এবং আল বাইয়্যিনাতে প্রদত্ত লাল রং সম্পর্কিত ছহীহ ও দলীলভিত্তিক ফতওয়াটি হৃদয়ঙ্গম করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেবের ৩য় বক্তব্য
সিলেট খারেজী মাদ্রাসার তথাকথিত মুফতী (1) ছাহেব লাল কাপড়কে জায়িয করতে গিয়ে “আবূ দাউদ শরীফের” ব্যাখ্যা গ্রন্থ “বযলুল মাজহুদ”-এর নিম্নোক্ত ইবারতখানা উল্লেখ করেছে।
وقع في هذا الحديث الاحمران مطلقا من غير قيد المعصفر، فيحمل على القيد بالمعصفر، لأنه ما صبغ بالحمرة غير المعصفر فلا باس به لما سیاتی بذل المجهود: ۴۹/۵
অর্থাৎ (আব্দুল্লাহ বিন আমর রাঃ) এর অত্র হাদীসে কেবল احمران শব্দ এসেছে। উছফুর দ্বারা রঞ্জিত বলা হয় নাই। তবে অত্র احمران দ্বারা উছফুর দ্বারা রঞ্জিতই উদ্দেশ্য। কেননা উছফুর ব্যতীত অন্য লাল দ্বারা রঞ্জিত কাপড় পরিধান করতে কোন আপত্তি নেই। যার কারণ সামনে আসছে। (বুষলুল মাজহুদ ৫/৪৯)
তথাকথিত মুফতী (1) ছাহেবের
৩য় বক্তব্যের খণ্ডনমুলক জবাব
সিলেট খারেজী মাদ্রাসার তথাকথিত মুফতী (1) ছাহেব নিজ বাতিল মতকে ছাবেত করার লক্ষে অর্থাৎ লাল কাপড়কে জায়িয করার উদ্দেশ্যে মৌলভী খলীল আহমদ সাহারানপুরীর “ব্যলুল মাজহুদ” থেকে যে ইবারতখানা উল্লেখ করেছে তা দলীল হিসেবে মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ উক্ত ইবারতের প্রথম অংশ-
[২৩২]
وقع في هذا الحديث الاحمران مطلقا من غير قيد المعصفر.
অর্থাৎ “এ হাদীছ শরীফে দু’টি লাল কাপড় পরিধানের নিষেধাজ্ঞা মুয়াছফার তথা উছফুর রং মিশানোর শর্ত ছাড়াই এসেছে।”
এ অংশটুকু সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হলেও দ্বিতীয় অংশ-
[২৩৩]
فيحمل على القيد بالمعصفر، لأنه ما صبغ بالحمرة غير المعصفر فلا باس به لما سیاتی، بذل المجهود: ۴۹/۵
লক্ষ্য করুন। ইবারতগুলোতে উহুফুর হিশানোর শর্ত ছাড়াই লাল রংকে নিষেধের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাই ইলম ও আকুলের অভাবে মুফতী হাহেব বষলুল মাজহুদের ইবারত তুলে ধরে যে বিষয়টি প্রমাণ করতে চেয়েছিল তা ভুল বলে প্রমাণিত হলো। আর দু’একটা চটি রেসালা ও নিজ সিলসিলার কিতাব পড়ে ফতওয়া দিলে ভুল হওয়াটাই স্বাভাবিক।
আরো লক্ষ করুনা تُوْبَانِ احْمَرَانِ’ সম্পর্কিত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় সমস্ত ইমাম মুজতাহিদ উছফুরের শর্ত ছাড়াই আমভাবে সকল প্রকার লাল রংকে অর্থাৎ পুরা লাল রংকে হারাম বলেছেন। নীচের ইবারত গুলো লক্ষ্য করুন এবং বুঝুন।
যেমন এ প্রসঙ্গে ‘আবূ দাউদ শরীফ’-এর ২য় জিঃ ২০৮ পৃষ্ঠার ২নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
[২৩৪-২৩৫)
قوله ثوبان احمران الخ قد وقع في هذا الحديث الأحمران مطلقاً من غير قيد المعصفر.
অর্থঃ- ‘দু’টি লাল কাপড়’ এ হাদীছ শরীফে দু’টি লাল কাপড়’ পরিধানের নিষেধাজ্ঞা ‘মুয়াছফার’ তথা উৎফুর রং মিশানোর শর্ত ছাড়াই ‘মৃতলাকান’ এসেছে। (অনুরূপ ‘আশয়াতুল লুময়াত’ কিতাবে আছে) উক্ত কিতাবের উক্ত স্থানে আরো উল্লেখ আছে,
[২৩৬-২৩৭]
والمختار من المذهب أن الكراهة انما هي لاجل اللون لا لمعصفر بخصوصه. كذا حققه الشيخ قاسم الحنفى احد اعاظم علماء مصر من المتاخرين معاصر الشيخ ابن حجر العسقلاني ۱۲ لمعات.
অর্থঃ- আমাদের হানাফী মাযহাবের ‘মুখতার’ তথ্য গ্রহণযোগ্য মতে; লাল পোশাক মাকরূহ তাহরীমী, ইহা লাল রংয়ের কারণে, খাছভাবে উছফুর রং মিশানোর সাথে শর্তযুক্ত নয়। অনুরূপ তাহক্বীক্ করে ফয়সালা দিয়েছেন আল্লামা শাইখ কাসিম আল হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি। যিনি উলামায়ে মুতায়াখিরীনগণের মধ্যে মিশর এলাকার একজন উচ্চ দরজার আলিম ছিলেন। যিনি আল্লামা শাইখ ইবনে হাজার আসক্বালানী (শাফিয়ী) রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সমসাময়িক ছিলেন। ‘লুময়াত’ কিতাবে ইহা বর্ণিত আছে।
সিলেটের তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেব যেই ‘বযলুল মাজহুদকে” পুঁজি করে লাল কাপড়কে জায়িয প্রমাণ করার অপচেষ্টা করেছে সেই ‘বযলুল মাজহুদ’-এরই ৬ষ্ঠ জিঃ ৪৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[২৩৮]
وعند الآخرين مطلق الحمرة سواء كان من العصفر او غيره مكروه.
অর্থঃ- “অপরাপর সকল উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমপণের মতে, মুতলাক বা সাধারণভাবে সকল প্রকার লাল পোশাক পরিধান করা মাকরূহ তাহরীমী চাই তা উছফুর মিশানো ছাড়া বা ব্যতীত লাল হোক।
মিশকাত শরীফের শরাহ ‘আশয়াতুল সুময়াত’ ৩য় জিঃ ৫৪৯ পষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[২৩৯]
احمر درین حدیث مطلق واقع شده مقيد بمعصفر ته
অর্থঃ ‘দু’টি লাল কাপড়’ এ হাদীছ শরীফে ‘দুটি লাল কাপড়’ পরিধানের নিষেধাজ্ঞা মুহাহুফার তথা উছফুর রং মিশানোর শর্ত ছাড়াই মুতলাকান এসেছে।
মিশকাত শরীফের শরাহ ‘আশয়াতুল্ লুময়াত’ ৩য় জিঃ ৫৪২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[২৪০]
ومختار در مذهب حنفی کرامت تحریمی است و نماز گزاردن یان مکروه و در رنگ سرخ از غیر معصفر نیز خلاف است و شيخ قاسم حنفی که از اعاظم علمانی مناخرین مصر و اسناد قسطلانی است تحقیق نموده وفتوی داده که حرمت از بهت لون است که صبغ پس هر سرخ حرام و مکروه باشد.
অর্থঃ হানাফী মাযহাবের মুখতার তথা অধিক গ্রহণযোগ্য মতে লাল কাপড় পরিধান করা মাকরূহ তাহরীমী। নামাযেও পরিধান করা মাকরূহ তাহরীমী। লাল রং উছফুর মিশানোর শর্ত ছাড়াই হারাম। আল্লামা শাইখ ক্বাসিম হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি। যিনি উলামায়ে মুতায়াখখিরীনগণের মধ্যে মিশর এলাকার একজন উচ্চ দরজার আলিম ছিলেন এবং কুস্তালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উত্তায ছিলেন তিনি তাহক্বীকু করে ফতওয়া দিয়েছেন যে, লাল কাপড় পুরুষের জন্য হারাম বা নিষিদ্ধ। তা লাল রংয়ের কারণেই উহুফুর মিশানোর কারণে নয়। সুতরাং প্রত্যেক লাল রংই হারাম ও মাকরুহ তারীমীর অন্তর্ভুক্ত।
‘আবু দাউদ শরীফ’-এর ২য় জিঃ ২০৮ পৃষ্ঠার ২নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
[২৪১]
وقال على القارى في المرقاة فهذا اى قوله صلى الله عليه وسلم فلم يرد عليه دليل صريح على تحريم لبس الثوب الاحمر للرجال. وعلى أن مرتكب المنهي حال التسليم لا يستحق الجواب والتسليم. وروى الطَّبَرَانِي عَنْ عِمْرَانَ ابْنِ حُصَيْنٍ مَرْفُوعًا إِيَّاكُمْ وَالْعُمْرَةَ فَإِنَّهَا أَحَبُّ الزِّينَةِ إِلَى الشَّيْطَانِ.
অর্থঃ হযরত আল্লামা মুল্লা আলী কারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর লিখা মিশকাত শরীফের শরাহ ‘মিরকাত শরীফে’ বলেছেন, “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাণীঃ তিনি লাল পোশাক পরিহিত ব্যক্তির সালামের জাওয়াব দেননি।” এই হাদীছ শরীফখানা এই মাসয়ালার স্পষ্ট নির্ভরযোগ্য দলীল। মাসয়ালা হচ্ছে, পুরুষদের জন্য লাল কাপড় পরিধান করা হারাম। নিশ্চয়ই সালামের সময় হারাম কাজে মশগুল ব্যক্তি সালামের জাওয়াব পাওয়ার ও সালাম পাওয়ার হক্কদার নয়। হযরত ইমাম ত্ববারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইমরান ইবনে হুছাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে ‘মারফু’ সনদে বর্ণনা করেছেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা লাল রং থেকে বেঁচে থাক। কেননা নিশ্চয়ই ইহা শয়তানের কাছে অধিক পছন্দনীয় পোশাক।
‘তুহফাতুল আহওয়াযী’ ৮ম জিঃ ৯১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[২৪২-২৪৩]
احتج بهذا الحديث القائلون بكراهة لبس الأحمر.
অর্থঃ- এই হাদীছ শরীফকে ভিত্তি করে উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ ফতওয়া দিয়েছেন যে, লাল কাপড় পরিধান করা মাকরূহে তাহরীমী। (অনুরূপ ‘নাইলুল আওতার’-এ আছে)
আবূ দাউদ শরীফের শরাহ ‘আউনুল মা’বুদ’-এর ৪র্থ জিঃ ৯২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[২৪৪]
احتج بهذا الحديث القائلون بكراهة لبس الأحمر.
অর্থঃ- “এই হাদীছ শরীফকে ভিত্তি করে উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ ফতওয়া দিয়েছেন যে, লাল কাপড় পরিধান করা মাকরূহ। তাহরীমী।
আবূ দাউদ শরীফের শরাহ ‘বষলুল মাজহুদ’ ৬ষ্ঠ জিঃ ৪৯ পৃষ্ঠায়
[২৪৫]
وعلى ان للرجال ليس الاحمر على تحريم صريح وهذا دليل.
অর্থঃ- আর এরই উপর ফতওয়া যে, নিশ্চয়ই পুরুষদের জন্য লাল পোশাক পরিধান করা স্পষ্ট হারাম। অত্র হাদীছ শরীফখানাই তার
মিশকাত শরীফের শরাহ ‘আত্ তা’লীকুছ ছবীহ’ ৪র্থ জিঃ ৩৯১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
২৪৬
هذا الحديث دليل صريح على تحريم لبس الثوب الأحمر للرجال.
অর্থঃ এ হাদীছ শরীফখানা এ মাসয়ালার স্পষ্ট দলীল যে, পুরুষের জন্য লাল কাপড় পরিধান করা হারাম।
মিশকাত শরীফের শরাহ ‘মিরকাত শরীফ’ ৮ম জিঃ ২৫৭, ২৫৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[২৪৭]
فهذا دليل صريح على تحريم لبس الثوب الأحمر للرجال.
এ অংশটুকু সঠিক বা গ্রহনযোগ্য নয়। কেননা এটা সম্পূর্ণরূপেই খলীল আহমদ সাহারানপুরীর ব্যক্তিগত মত। যা হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য ও গ্রহনযোগ্য মতের খিলাফ। অর্থাৎ হানাফী মাযহাবের গ্রহনযোগ্য বা মুখতার মত হলো উছফুরের শর্ত ছাড়াই মুতলাকান লাল রংয়ের কাপড় পুরুষের জন্য মাকরুহ তাহরীমী, যা অসংখ্য নির্ভরযোগ্য কিতাবে উল্লেখ রয়েছে।
অর্থঃ এ হাদীছ শরীফখানা-এ মাসয়ালার স্পষ্ট দলীল যে, পুরুষের জন্য লাল পোশাক (কাপড়) হারাম।
মুসলিম শরীফের শরাহ ‘শরহুল্ উবাই ওয়াস্ সিনুসী’ ৭ম জিঃ ২২৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[২৪৮]
وكره بعضهم جميع الوان الحمرة.
অর্থঃ উলামায়ে কিরামগণের অনেকেই সকল প্রকার লাল রংকে মাকরহ তাহরীমী বলেছেন।
মুসিলম শরীফের শরাহ ‘আল মুফহিম’ ৫ম জিঃ ৩৯৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[২৪৯]
وكره بعض أهل العلم جميع الوان الحمرة.
অর্থঃ অধিকাংশ উলামায়ে কিরামগণ সকল প্রকার লাল রংকে মাকরূহ তাহরীমী বলেছেন।
উপরোল্লিখিত ইবারতগুলোতে উহফুর মিশানোর শর্ত ছাড়াই আমভাবে সকল প্রকার حمر। তথা লাল রংকে হারাম ও মাকরুহ তাহরীমী ফওতয়া দেয়া হয়েছে। চাই তা শুধু লাল রং হোক অথবা উছফুর মিশানো লাল রং হোক, শুধু উছফুর লাল রং বা কুসুম লাল রং হোক, গোলাপী লাল রং হোক, যাফরানী লাল রং হোক, ওয়ারস্ লাল রং হোক তথা যে কোন লাল রং হলেই তা হারাম। অর্থাৎ কাপড়টি নিরেট লাল রং হলে হারাম, কাপড়টির অধিকাংশ লাল রং হলে মাকরূহ তাহরীমী এবং অল্প লাল রং মিশানো হলে মাকরূহ তানযীহী।
অতএব, তথাকথিত মুফতী ছাহেব যে “বযলুল মাজহুদের” বরাতে শুধু উছফুর মিশানো লাল রং নিষেধ আর অন্যান্য লালকে জায়িয বলেছে, তা মিথ্যা ও ভুল প্রমাণিত হল। প্রকৃতপক্ষে সে তার স্বগোত্রীয়দের দোষ ঢাকার জন্য ধোঁকা দিয়েছে ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। কুরআন শরীফে রয়েছে মিথ্যাবাদী মালউন অর্থাৎ লা’নতপ্রাপ্ত যা শয়তানের বৈশিষ্ট্য।
“তথাকথিত মুফতী (1) ছাহেবের ৪র্থ বক্তব্য”
সিলেট খারেজী মাদ্রাসার তথাকথিত মুফতী (৫) ছাহেব নিজের বাতিল মতের স্বপক্ষে অতঃপর যে দলীল পেশ করেছে তা হলো হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘ফতহুল বারী’-এর নিম্নোক্ত ইবারত।
বুখারী শরীফের শরাহ ‘ফতহুল বারী’ কিতাবুল লিবাস বাবুহু
ছাওবিল আহমার’ ১০ম জিঃ ৩০৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
تخصيص المنع بالثوب الذي يصبغ كله، واما ما فيه لون اخر غير الأحمر من بياض وسواد وغيرها فلا، وعلى ذلك تحمل الاحاديث الواردة في الحلة الحمراء فان الحلل اليمانية غالبا تكون ذات خطوط حمر وغيرها .
তথাকথিত মুফতী (1) ছাহেবের ৪র্থ বক্তব্যের খণ্ডনমূলক জবাবঃ
তথাকথিত মুফতী (1) ছাহেব “ফতহুল বারীর” যে ইবারতখানা নিজ মতের স্বপক্ষে দলীল হিসেবে উল্লেখ করেছে তা দ্বারা মূলত লাল কাপড় কখনোই জায়িয প্রমাণিত হয় না। বরং উক্ত ইবারত দ্বারাই প্রমাণিত হয় যে, লাল রংয়ের কাপড় পরিধান করা নিষেধ বা হারাম। তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেব উক্ত ইবারতের মর্মার্থ সঠিকভাবে বুঝতে না পারার কারণেই এ ব্যাপারে বিভ্রান্তিতে পড়েছে। তাই নিম্নে উক্ত ইবারতের সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা তুলে ধরা হলো।
বুখারী শরীফের শরাহ ‘ফতহুল বারী’ কিতাবুল লিবাস বাবুছ হাওৰিল আহমার’ ১০ম জিঃ ৩০৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[২৫০।
تخصيص المنع بالثوب الذي يصبغ كله، وأما ما فيه لون اخر غير الأحمر من بياض وسواد وغيرها فلا، وعلى ذلك تحمل الاحاديث الواردة في الحلة الحمراء فان الحلل اليمانية غالبا تكون ذات خطوط حمر وغيرها.
অর্থঃ বিশেষ করে নিষেধ কেবল ঐ কাপড়, যার পুরিেটই লাল রংয়ে রঙ্গি ত। অতঃপর যে কাপড়ে আহমার ছাড়া সাদা, কালো ও অন্যান্য রং থাকে তা নিষেধ নয়। হাদীছ শরীফে বর্ণিত (হুল্লাতুন হামরা) দ্বারা এটাই উদ্দেশ্য। কেননা ইয়ামানী চাদরগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আহমার ও অন্যান্য রংয়ের রেখাবিশিষ্ট হয়ে থাকে।
স্মর্তব্য যে (হল্লাতুন হামরা) যে লাল রংয়ের নয়, তা ফতহুল বারীর নিম্নোক্ত ইবারত দ্বারাও সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।
[২৫১]
قال ابن القيم: كان بعض العلماء يلبس ثوبا مشبعا بالحمرة يزعم انه يتبع السنة، وهو غلظ، فان الحلة الحمراء من برود اليمن والبرد لا يصبغ احمر صرفاً.
অর্থঃ আল্লামা ইবনুল কাইয়্যুম বলেন, অনেক (দুনিয়াদার) আলিম সম্পূর্ণ লাল রংয়ের পোশাক পরিধান করে ধারণা করে থাকে যে, ইহা সুন্নাতের অনুসরণ, আসলে এ ধারণা গলন্দ বা অশুদ্ধ। কেননা, হল্লাতুন্ হামরা হচ্ছে ইয়ামানী পোশাক। আর ইয়ামানী পোশাক কখনো সম্পূর্ণ লাল রংয়ের হয়না। অর্থাৎ তা গন্ধম রংয়ের পোশাক। যাতে আহমার ও অন্যান্য রংয়ের রেখা থাকে মাত্র।
[২৫২]
وحملوا الاحاديث التي تدل على ليس النبي صلى الله عليه وسلم الثوب الأحمر على انه كان مخططا بخطوط حمر، ولم يكن أحمر بحتا.
অর্থঃ যে সকল হাদীছ শরীফ দ্বারা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম الثوب الاحمر পরিধানের বিষয়টি প্রমাণীত হয়, ইহা দ্বারা গন্ধম বা সোনালী রংয়ের রেখা বিশিষ্ট পোশাক উদ্দেশ্য। ইহা দ্বারা খাঁটি লালকে বুঝানো হয়নি। (অনুরূপ ফতহুল মুলহিম লিশ শিব্বীর আহমদ উছমানী কিতাবেও বর্ণিত আছে)
উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় তিরমিযী শরীফের শরাহ ‘তুহফাতুল আহওয়াযী’ ৫ম জিঃ ৩৯০, ৩৯১, ৩৯২, ৩৯৩, ৩৯৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[২৫৩]
قال ابن همام: الحلة الحمراء عبارة ثوبين من اليمن فيها خطوط حمر وخضر لا انه احمر بحث
অর্থঃ হযরত ইবনু হুমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, حلة حمراء বলে ইয়ামানী দুটি কাপড় (ইযার ও চাদর) কে যাতে গন্ধম রং ও সবুজ রংয়ের ডোরাকাটা থাকে। যা খাঁটি লাল নয়।
উপরোক্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা প্রথমতঃ প্রমাণিত হলো যে, তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেব তার বক্তব্যের স্বপক্ষে দলীল হিসেবে “ফতহুল বারীর” যে ইবারত উল্লেখ করেছে, তা দ্বারা কখনোই লাল রংয়ের কাপড় পরিধান জায়িয প্রমাণিত হয়না, বরং তার উল্লিখিত ইবারতেই সুস্পষ্টভাবেই উল্লেখ আছে যে, “يَصْبَعُ كله” অর্থাৎ
পরিপূর্ণ লাল রংয়ের কাপড় পরিধান করা নিষেধ বা হারাম। আরো প্রমাণিত হলো যে, “হুল্লাতুন হামরা” লাল রংয়ের ছিল না। বরং গন্ধম রংয়ের ছিল। যাতে আহমার বা সোনালী ও অন্যান্য রংয়ের রেখা ছিল। দ্বিতীয়তঃ তথাকথিত মুফতী ছাহেব, “ফতহুল বারীর” উক্ত ইবারত is on a fan on Ear R রংয়ের কাপড় পরিধান করা নিষেধ বা হারাম। কেননা উক্ত ইবারতে উছফুর মিশানো ছাড়াই লাল রংকে নিষেধ করা হয়েছে। আর তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেবও তা দলীল হিসেবে মেনে নিয়েছে।
মূলতঃ তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেব ইলম ও আকূলের অভাবে কিতাবের ইবারতের সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা বুঝতে না পেরে ভুল, মনগড়া ও বিভ্রান্তিকর ফতওয়া দিয়েছে।
“তথাকথিত মুফতী (1) ছাহেবের ৫ম বক্তব্য”
সিলেট খারিজী মাদ্রাসার তথাকথিত মুফতী (1) ছাহেব তার l হয়ে গেছে। তাই সে একবার বলছে সব লাল হারাম নয় বরং উছফুর মিশানো লাল হারাম। আবার বলছে পরিপূর্ণ লাল হলে হারাম অন্য রং মিশ্রিত থাকলে হারাম নয়। আর এবার বলছে “যে কাপড়টি বুনার পর লাল রং করা হয়েছে সেই লাল রংয়ের কাপড় পুরুষের জন্য
নিষেধ। আর যে কাপড় বুনার পূর্বে লাল রং করা হয়েছে তা নিষেধ নয়।” সে তার এমতের স্বপক্ষে দলীল হিসেবে খাত্তাবীর “মায়ালিমুস সুনান” কিতাবের নিম্নোক্ত ইবারাত উল্লেখ করেছে।
كانه ذلك متصرفا الى ما صبغ منه الشياب بعد النسج قاما ما صبغ غزله ثم نسج فغير داخل في النهي (معالم السنن: (۱۹۳/۴)
في a a ce – উদ্দেশ্য যে কাপড়টি বুনার পর (উসফুর দ্বারা) রঙানো হয়েছে। আর যে কাপড় বুনার পূর্বে সুতায় রং লাগানো হয় তারপর কাপড় বুনা হয়, ঐ লাল কাপড় নিষেধের আওতাধীন নয়। মায়ালিমুস্ সুনানঃ ৪/১৯৩।
তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেবের ৫ম বক্তব্যের খণ্ডনমূলক জবাব
তথাকথিত মুফতী (1) ছাহেবের এলোমেলো বক্তব্য এটাই প্রমাণ করে যে, আসলে তার ফতওয়া বা বক্তব্যের মূলে কোনই ভিত্তি নেই। আর তাই সে নিজের মতের স্বপক্ষে অনির্ভরযোগ্য কিতাব থেকে অনির্ভরযোগ্য ব্যক্তিদের মনগড়া দলীলবিহীন সমালোচিত ও পরিত্যাজ্য বক্তব্য দলীল হিসেবে দাড় করাতে চেয়েছে। তার একটি উজ্জ্বল প্রমাণ হচ্ছে “খত্তাবীর” উপরোক্ত বক্তব্যকে দলীল হিসেবে পেশ করা।
খাত্তাবীর উপরোক্ত বক্তব্য একাধিক কারণে দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। প্রথমতঃ খাত্তাবীর উপরোক্ত বক্তব্যের পিছনে নির্ভরযোগ্য কোন দলীল পাওয়া যায়না। এটা একান্তই খাত্তাবীর ব্যক্তিগত অভিমত। এটা গ্রহনযোগ্য বা মুখতার মত নয়। সুতরাং এরূপ একটি মতকে দলীল হিসেবে পেশ করা জিহালতের বহিঃপ্রকাশ বৈ কিছুই নয়।
দ্বিতীয়তঃ অনুস্মরনীয় ইমাম মুজতাহিদ তথা উলামায়ে কিরামগণ খাত্তাবীর উক্ত বক্তব্যের সমালোচনা করে তাদের লিখিত নির্ভরযোগ্য কিতাবে খাত্তাবীর উপরোক্ত বক্তব্যকে বাতিল ফিরক্বা খারেজীদের মত বলে তা প্রত্যাখান করেন। যেমন এ প্রসঙ্গে সর্বজন মান্য ও অনুসরণীয় বিখ্যাত মুহাদ্দিছ ও ফক্বীহ ইমাম মুল্লা আলী ক্বারী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর নির্ভরযোগ্র কিতাব ‘মিরকাত শরীফের’ ৮ম জিঃ ২৪০ পৃষ্ঠায় লিখেন,
[২৫৪]
وقال الخطابي النهى يتصرف إلى ما صبغ بعد النسج فاما ما صبغ غزله ثم نسج فليس بداخل في النهي. قلت وهذا يحتاج الى دليل خارجي.
অর্থঃ খাত্তাবী বলেন, কাপড় বুনানোর পর লাল রং করলে তা পরিধান করা নিষেধ। কিন্তু যদি আগে সুতায় রং লাগিয়ে এরপর বুনানো হয় তাহলে তা পরিধান করা নিষেধ নয়। হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি বলিঃ খাত্তাবীর এ উক্তিটি বাতিল ফিরক্বা খারিজীদের স্বপক্ষে দলীল।
তারই লিখিত শামায়িলুত্ তিরমিযী শরীফের শরাহ ‘জামউস্ ওয়াসায়িল’ ১ম জিঃ ১৪১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[২৫৫]
وحمله البيهقي على ما صبغ بعد النسيج واما صبغ غزله ثم نسج فلا كراهة فيه، والظاهر أنه لا فرق بينهما لأنه زينة الشيطان.
অর্থঃ- ইমাম বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি ব্যাখ্যা করেছেন, কাপড় বুনানোর পর যদি লাল রং লাগানো হয় তাহলে মাকরূহ তাহরীমী। আর যদি আগে সুতায় লাল রং লাগিয়ে এরপর বুনানো হয়, তাহলে ডা
মাকরূহ তাহরীমী নয়। প্রকাশ্য গ্রহণযোগ্য কথা হল, লাল রং বুনানোর আগে ও পরে লাগানোর ব্যাপারে হুকুমের কোন পার্থক্য নেই। অর্থাৎ সর্বাবস্থায়ই লাল রং হারাম ও মাকরূহ তাহরীমী। কেননা লাল রং শয়তানের সাজসজ্জা।
ইমাম বাইহাক্বী ও মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহিমা-এর উপরোক্ত বক্তব্য বা লিখনী দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, খাত্তাবীর উল্লিখিত মতটি বাতিল বা পরিত্যাজ্য। কারণ এটা খারেজী ফিরক্বার মত। কাপড় বুনার আগে বা পরে যে কোন অবস্থায় লাল রং মিশ্রিত করুক না কেন সর্বাবস্থায়ই লাল রংয়ের কাপড় পুরুষের জন্য নিষিদ্ধ বা হারাম ও মাকরূহ তাহরীমী। সুতরাং তথাকথিত মুফতী (1) ছাহেবের ৫ম বক্তব্যও ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন প্রমাণিত হলো।
তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেবের ৬ষ্ঠ বক্তব্য
সিলেট খারেজী মাদরাসার তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেবের আরেকটি মনগড়া, উদ্ভট, কাল্পনিক ও জিহালতপূর্ণ বক্তব্য হলো পরস্পর বিরোধী হাদীসের মধ্যকার সংঘর্ষ নিরসনের আরেকটি পন্থা হল ترجیح তথা একটিকে প্রাধান্য দেয়া। লাল পোষাক সংক্রান্ত হাদীসগুলির মধ্যে جেتر এর পন্থা গ্রহণ করলে লাল রং-এর পোষাক পরিধান করার হাদীস গুলি প্রাধান্য পাবে। কেননা বিপক্ষের হাদীসটি সনদের দিক থেকে দূর্বল।” তথাকথিত মুফতী (1) ছাহেব তার উক্ত উদ্ভট ও কাল্পনিক বক্তব্যের স্বপক্ষে অবশ্য “সুনানে আবি দাউদ”, ফাতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী ও আওনুল মা’বুদ থেকে কতিপয় ইবারত উল্লেখ করেছে।
তথাকথিত মুফতী (!) ছাহেবের ৬ষ্ঠ বক্তব্যের খণ্ডনমূলক জবাব
সিলেট খারিজী মাদরাসার তথাকথিত মুফতী (1) ছাহেব “ডারজীহ” এর প্রসঙ্গ টেনে এটাই বুঝাতে চেয়েছে যে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত বারা ইবনে আযিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণিত হাদীছের মধ্যে সংঘর্ষ বা দ্বন্দ্ব রয়েছে। অথচ সত্যিকার অর্থে উক্ত হাদীছ শরীফ দ্বয়ের মধ্যে কোনই দ্বন্দ্ব বা সংঘর্ষ নেই। মাযহাবী ফায়ছালা সম্পর্কে অজ্ঞ হওয়ার কারণেই তথাকথিত মুফতী (1) ছাহেব এ ব্যাপারে মনগড়া ও কাল্পনিক বক্তব্য পেশ করেছে।
আমাদের হানাফী মাযহাবে লাল রং পুরুষের জন্য হারাম তা যে ধরনের লালই হোকনা কেন। হানাফী ইমামগণ লাল রং হারাম হওয়ার ক্ষেত্রে হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর হাদীছ
শরীফকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। আর হয়রত বারা ইবনে আষিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণিত সংক্রান্ত হাদীছ শরীফকে তা’বীলী অর্থে গ্রহণ করেছেন। যেমন, মিশকাত শরীফের শরাহ মিরকাত শরীফ ৮ম জিঃ ২৪৩ পৃষ্ঠায় হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেন,
[২৫৬]
قلت: هو مؤول عند أبي حنيفة واصحابه بانها منسوجة بخطوط حمر كما هو شان البرود اليمانية.
অর্থঃ আমি বলিঃ ইমামে আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ২ তাঁর অনুসারীগণের মতে, حر সংক্রান্ত হাদীছ শরীফ খানা ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। কেননা তা গন্ধম রংয়ের নকশী করা হয়ে থাকে। ইহাই ইয়ামানী পোশাকের বিশেষ বৈশিষ্ট।
উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় ‘বুখারী শরীফ’ ১ম জিঃ ৫৪ পৃষ্ঠার ১০নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
[২৫৭]
قال في الفتح يشير ذلك الى الجواز والخلاف في ذلك مع الحنفية فانهم قالوا يكره وتاولوا حديث الباب.
অর্থঃ হযরত ইবনে হাজার আসক্বালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ‘ফতহুল বারী’ কিভাবে লিখেন, এই হাদীছ শরীফ ইঙ্গিত করে লাল পোশাক জায়িযের ব্যাপারে (ইহা শাফিয়ী মাযহাবের মত)। এতে হানাফীগণের বিপরীত মত রয়েছে, তাঁরা বলেন, লাল পোশাক পুরুষদের জন্য মাকরূহ তাহরীমী। হানাফীগণ অত্র বাবের শরীফখানার ব্যাখ্যামূলক অর্থ করেন। অর্থাৎ গন্ধম বা সোনালী রংয়ের একজোড়া পোশাক। হাদীছ অর্থ হল
উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় বুখারী শরীফের শরাহ ফতহুল বারী’ ১ম জিঃ ৪৮৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[২৫৮-২৫৯]
يشير إلى الجواز، والخلاف في ذلك مع الحنفية فانهم قالوا يكره وتاولوا حديث الباب بانهم كانت حلة من برود فيها خطوط حمر، وَمِنْ أَدِلَّتِهِمْ مَا أَخْرَجَهُ أَبُودًا وَدَ مِنْ حَدِيثِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ مَرَّ بِالنَّبِيِّ
صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلٌ وَعَلَيْهِ تَوْبَانِ أَحْمَرَانِ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيْهِ
অর্থঃ- এই হাদীছ শরীফ লাল পোশাক জায়িষের ব্যাপারে ইঙ্গিত করে (এটা শাফিয়ী মাযহাবের মত) এতে হানাফীগণের বিপরীত মত রয়েছে, কেননা তাঁরা বলেন, লাল পোশাক পুরুষদের জন্য মাকরূহ
তাহরীমী। তাঁরা অত্র হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যা করেন যে, al ‘হল্লাহ’ এমন পোশাক যাতে গন্ধম বা সোনালী রংয়ের নকশা থাকে।
তাঁদের (হানাফীগণের) দলীল হচ্ছে; যা হযরত ইমাম আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আব্দুল্লাহ ইবেন আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহু-এর হাদীছ। শরীফ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, একদা দু’টি লাল পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তি হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁকে সালাম দেয় কিন্তু হয়ূব পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সালামের জাওয়াব দেননি। (অনুরূপ উমদাতুল ক্বারী, ফতহুল মুলহিম লিখ্ শিল্পীর আহমদ উছমানী কিতাবে বর্ণিত রয়েছে।)
[২৬০]
وحملوا الاحاديث التي تدل على لبس النبي صلى الله عليه وسلم الثوب الاحمر على انه كان مخططا بخطوط حمر، ولم يكن أحمر بحثا.
অর্থঃ যে সকল হাদীছ শরীফ দ্বারা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম الثوب الاحمر পরিধানের বিষয়টি প্রমাণীত হয়, ইহা দ্বারা গন্ধম বা সোনালী রংয়ের নকশী করা পোশাক উদ্দেশ্য। ইহা দ্বারা খাঁটি লালকে বুঝানো হয়নি। (অনুরূপ ফতহুল মুলহিম লিম্ শিল্পীর আহমদ উছমানী কিতাবেও বর্ণিত আছে)
উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় তিরমিযী শরীফের শরাহ ‘তুহফাতুল আহওয়াযী’ ৫ম জিঃ ৩৯০, ৩৯১, ৩৯২, ৩৯৩, ৩৯৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[২৬১]
قال ابن همام: الحلة الحمراء عبارة توبين من اليمن فيها خطوط حمر وخضر لا انه احمر بحت.
অর্থঃ হযরত ইবনু হুমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, حلة حمراء বলে ইয়ামানী দুটি (ইযার ও চাদর) কাপড়কে, যাতে গন্ধম রং ও সবুজ রংয়ের ডোরাকাটা থাকে। যা খাঁটি লাল নয়।
অর্থাৎ হানাফীদের মতে যে সকল বর্ণনা দ্বারা حم। আহমার বৈধ বুঝা যায় সেস্থানে حمر। শব্দকে তা’বীলী অর্থে গ্রহন করতে হবে। তথা লাল ব্যতীত গন্ধম, সোনালী বা অন্যান্য যে অর্থ রয়েছে সে অর্থে গ্রহণ করতে হবে।
পক্ষান্তরে শাফিয়ী মাযহাবে যেহেতু লাল রং জায়িয তাই ইমাম শাফিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত বারা ইবনে আষিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সংক্রান্ত হাদীছ শরীফকেই দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং حراً শব্দের সরাসরি অর্থ লাল রং গ্রহণ করেছেন। যেমন এ প্রসঙ্গে উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় মুসলিম শরীফের শরাহ ‘ফতহুল মুলহিম লিত্তক্বী উছমানী’ ৪র্থ জিঃ ৫৫৩, ৫৫৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[২৬২-২৬৫]
وقد استدل به من ذهب الى جواز لبس الاحمر للرجال وهو قول الشافعية والمالكية وجماعة من الحنفية، والمشهور عند الحنفية انهم يكرهون ليس الاحمر الخالص للمرجال، وذلك لما اخرجه ابو داؤد والترمذى وحسنه
অর্থঃ- উক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারা ফতওয়া দেয়া হয় যে, পুরুষদের জন্য লাল পোশাক জায়িয। ইহা শাফিয়ী, মালিকী ও হানাফী মাযহাবের একটি দলের অভিমত। কিন্তু মাশহুর মতে, হানাফীগণের নিকট পুরুষদের জন্য খালিছ লাল রংয়ের পোশাক মাকরূহ তাহরীমী। যেমনটি হাসান সনদে আবু দাউদ শরীফ ও তিরমিযী শরীফে বর্ণিত আছে। (অনুরূপ আউনুল মা’বুদ কিতাবেও বর্ণিত আছে)
[২৬৬-২৬৮]
قال الشوكاني في النيل: قد احتج بهذه الاحاديث من قال بجواز لبس الاحمر وهم الشافعية والمالكية وذهبت الحنفية الى الكراهة وغيرهم واحتجوا بِحَدِيثِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ مَرَّ بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَكَ وَسَلَّمَ رَجُلٌ وَعَلَيْهِ تَوْبَانِ أَحْمَرَانٍ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيْهِ أَخْرَجَهُ التَّرْمِذِى وَأَبُو دَاوُدَ.
অর্থঃ- হযরত শাওকানী তাঁর ‘নাইলুল আওতার’ কিতাবে বলেছেন,
যারা পুরুষদের জন্য লাল পোশাক জায়িষ বলেন, তাঁরা হচ্ছেন শাফিয়ী, মালিকী ও অন্যান্যগণ। সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ তাঁদেরই দলীল। কিন্তু হানাফী মাযহাবে পুরুষদের জন্য লাল পোশাক পরিধান করা মাকরূহ তাহরীমী। তারা দলীল হিসেবে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর হাদীছ শরীফকে পেশ করে থাকে। তিনি বলেছেন, একদা এক ব্যক্তি দুটি লাল কাপড় পরিহিত অবস্থায় হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁকে সালাম দেয়, কিন্তু তিনি তার সালামের জাওয়াব দেননি। হাদীছ শরীফখানা তিরমিযী শরীফ ও আবূ দাউদ শরীফে বর্ণিত আছে।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, হানাফী মাযহাবে যেহেতু লাল রং পুরুষের জন্য, হারাম সেহেতু হানাফীগণ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর হাদীছ শরীফকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। আর বারা ইবনে আযিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর হাদীছকে তা’বীলী অর্থে অর্থাৎ লাল ব্যতীত অন্যান্য যে অর্থ রয়েছে যেমন, গন্ধম সোনালী ইত্যাদি অর্থে গ্রহণ করেছেন। আর শাফিয়ী মাযহাবে যেহেতু লাল রং জায়িয তাই শাফিয়ীগণ حمراء ء শব্দের সরাসরি অর্থ লাল রং গ্রহন করেছেন। সুতরাং উক্ত হাদীছ শরীফদ্বয়ের মধ্যে সংঘর্ষ বা দ্বন্দ্ব কোথায়? মূলতঃ উক্ত হাদীছ শরীফ দ্বয়ের মধ্যে সংঘর্ষ বা দ্বন্দের প্রশ্ন তোলা তথাকথিত মুফতী (1) ছাহেবের প্রতারণা, অজ্ঞতা ও দুরভী সন্ধি বৈ কিছুই নয়। অর্থাৎ সে কুটকৌশলে লাল কাপড়কে জায়িষ করার কুট উদ্দ্যেশ্যেই এরূপ দ্বন্দ্বের অবতারণা করেছে। যা তার গোমরাহী ও জিহালতীরই বহিঃ প্রকাশ মাত্র।
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু-এর হাদীছ শরীফখানা
জঈফ নয় বরং ছহীহ
সিলেট খারেজী মাদরাসার তথাকথিত মুফতী (1) ছাহেবের মতে, “বিপক্ষের হাদীছগুলো সনদের দিক থেকে দূর্বল।”
মূলতঃ তথাকথিত মুফতী (1) ছাহেবের এ বক্তব্যটিও সঠিক ও ইমামগণ লাল রংকে পুরুষের জন্য হারাম ও মাকরূহ তাহরীমী ফতওয়া দিলেন, সে হাদীছ শরীফ কখনোই যঈফ বা দূর্বল হতে পারেনা। যঈফ বা দূর্বল হলে এ হাদীছ শরীফ দ্বারা লাল রং হারাম ছাবিত হতনা। সুতরাং লাল রং হারাম সম্পর্কিত তিরমিযী শরীফ ও আবূ দাউদ
শরীফে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদীছ শরীফ খানা ছহীহ তথা বিশুদ্ধ। ইহা যঈফ বা দূর্বল নয়। কারণ ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি হাদীছ শরীফ খানা বর্ণনা করার পর বলেছেন,
[২৬৯]
قال ابو عيسى هذا حديث حسن غريب من هذا الوجه.
“অর্থঃ- হযরত আবূ ঈসা তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এ হাদীছ শরীফ খানা হাসান এবং উপরোক্ত সুত্রে গরীব।”
স্মর্তব্য যে, যেখানে স্বয়ং বর্ণনাকারী লাল রং হারাম সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ খানা হাসান ও গরীব বলে উল্লেখ করলেন। সেখানে অন্য কারো পক্ষে হাদীছ শরীফখানাকে যঈফ বা দুর্বল বলার অধিকার নেই। যদিও কেউ বলে, তাহলে তা গ্রহণযোগ্য হবেনা। কেননা এটা তার নিজস্ব মত।
আবূ দাউদ শরীফেও হাদীছ শরীফ খানা ছহীহ হিসেবেই বর্ণনা করা হয়েছে। যেমনঃ ইমাম আবু দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উক্তি আবূ দাউদ শরীফের ‘মুক্বাদ্দামায়’ উল্লেখ আছে,
[২৭০]
وليس في كتاب السنن الذي صنفته عن رجل متروک الحدیث شيء. واذا كان فيه حدیث منكر بينته انه منكر
অর্থঃ- “হযরত আবু দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি যে সুনানে আবু দাউদ লিখেছি তাতে মাতরূক বর্ণনাকারীর কোন হাদীছ স্থান পায়নি। যখন এতে কোন মুনকার হাদীছ এসেছে, তখন আমি সেখানে বর্ণনা করেছি যে, ইহা মুনকার।”
লক্ষ্যনীয় যে, আবু দাউদ শরীফে কোন মাতত্ত্বক বা পরিত্যাজ্য কোন হাদীছ শরীফ নেই। যদিও কোন মুনকার হাদীছ শরীফ এসেছে, তা মুনকার’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। সুতরাং লাল রং হারাম সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ খানা ছহীহ বা বিশুদ্ধ। স্বয়ং গ্রন্থকারের মত অনুযায়ী। তাই ইহা দ্বারা হুকুম সাব্যস্ত করা সঠিক হয়েছে।
[১৭১]
وما كان في كتابي من حديث فيه وهن شديد فقد بينته ومنه مالا يصح سنده
ومالم اذكر فيه شيئا فهو صالح وبعضها اصح من بعض.
অর্থঃ যখন আমার কিতাব আবু দাউদ শরীফে কোন দুর্বল হাদীছ এসেছে, তখন আমি তা এভাবে উল্লেখ করেছি যে, এর সনদ ছহীহ বা বিশুদ্ধ নয়। আর যে হাদীছ শরীফের মধ্যে এরকম কিছুই উল্লেখ করিনি, তা ছালেহ বা বিশুদ্ধ। আর ছহীহ হাদীছ শরীফসমূহও একটির চেয়ে অন্যটি অধিক ছহীহ।
সুতরাং আবূ দাউদ শরীফে বর্ণিত যে হাদীছ শরীফে لا يصح “এর সনদ ছহীহ নয়’ উল্লেখ নেই, সেগুলো ছহীহ হাদীছ শরীফ। তাই প্রমাণিত হল, লাল রং পুরুষদের জন্য হারাম সম্পর্কিত হাদীছ শরীফখানা অবশ্যই হুছহীহ বা বিশুদ্ধ। কারণ এতে কোন প্রকার দুর্বলতার নিদর্শন নেই। ব্যাখ্যাকারদের কেউ কেউ যদিও যঈফ বলেছেন, তা গ্রহণীয় নয়।
[১৭২]
ولا اعلم شيئا بعد القرآن الزم للناس ان يتعلموا من هذا الكتاب.
অর্থঃ হযরত ইমাম আবু দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেনঃ কুরআন শরীফের পরে মানুষের ইলম শিক্ষার জন্য এই আবু দাউদ শরীফের মত অবধারিত কোন কিতাব সম্পর্কে তামি দ্বাানিনা। যেন এ ভিতার থেকে হালম অর্জন করা হয়। উপরোক্ত ইবারতগুলো থেকে প্রমাণিত হল যে, লাল রং নিষেধের
ব্যাপারে বর্ণিত হাদীছ শরীফ নিঃসন্দেহে ছহীহ তথা বিশুদ্ধ, হাসান তথা উত্তম এবং গরীব। যা হুকুম ছাবিতের জন্য যথেষ্ট। যারা যঈফ হওয়ার বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করেছেন, তাঁদের এ মতটি বিশুদ্ধ নয়। কারণ তারা নিজেরাই লাল রং হারাম সম্পর্কিত এ হাদীছ শরীফ দ্বারা পুরা লাল রংকে হারাম বলেছেন। তাহলে তাদের এ মতটি বিশুদ্ধ ও দলীল হিসেবে কি করে গ্রহণযোগ্য হতে পারে। অর্থাৎ গ্রহণযোগ্য নয়।
সুতরাং তথাকথিত মুফতী ছাহেব যে চারটি দলীল পেশ করেছে, তা বর্ণিত ইবারত দ্বারা চূড়ান্তভাবে খণ্ডিত হল যে, লাল রং হারাম সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ ছহীহ বা বিশুদ্ধ। যঈফ বা দুর্বল নয়
(অসমাপ্ত)
পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন