[সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ রব্বুল আলামীনের জন্যে এবং অসংখ্য দরূদ ও সালাম আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, আখিরী রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। মহান আল্লাহ্ পাক-এর অশেষ রহ্মতে গবেষণা কেন্দ্র “মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে, বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব-এর অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীল ভিত্তিক মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১.তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫.আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা) এবং ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যায়) পেশ করার পর-
২২তম ফতওয়া হিসেবে
“হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করে আসতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।
হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন
হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয়
সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ
সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরিকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লিখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” এমন সব লিখাই পত্রস্থ হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক।
তদ্রুপ “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার মাকছূদ বা উদ্দেশ্যও ঠিক তাই। কেননা, প্রথমতঃ কিছু লোক “কিল্লতে ইল্ম ও কিল্লতে ফাহ্ম” অর্থাৎ কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে বক্তব্য ও লিখনীর মাধ্যমে পর্দা সম্পর্কে সমাজে নানাবিধ বিভ্রান্তি ছড়িয়ে থাকে। যেমন কিছুদিন পূর্বে একটি দৈনিক পত্রিকায় পর্দা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছে যে, “……. মহিলারা মুখ বা চেহারা, হাত ও পা খোলা রেখে বাহিরে বের হতে পারবে।” (নাঊযুবিল্লাহি মিন যালিক) পাশাপাশি কিছু বাতিল ফিরকাভূক্ত অখ্যাত নামধারী ইসলামী মাসিকেও অনুরূপ মন্তব্য করা হয়। এছাড়া অনেক নামধারী ওয়ায়েযও এরূপ বলে থাকে।
অথচ তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণরূপেই কুরআন শরীফ, সুন্নাহ্ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের খিলাফ। তারা মূলতঃ কুরআন শরীফের একখানা আয়াত শরীফের সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা না বুঝার কারণেই এরূপ বিভ্রান্তিকর বক্তব্য পেশ করেছে।
খাছ শরয়ী হিজাব বা পর্দা
মূলতঃ শরীয়তের দৃষ্টিতে মহিলাদের খাছ পর্দা হলো-
১. মহিলারা সর্বদাই ঘরে অবস্থান করবে। ২. ঘরে অবস্থানকালে হোক অথবা বাইরে হোক কোন অবস্থাতেই গায়রে মাহ্রামদের সাথে দেখা দিতে পারবেনা। ৩. প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে হলে বোরকা, হাত মোজা, পা মোজা পরিধান করতঃ চেহারা ও সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে বের হবে। ৪. বোরকা কালো রংয়ের হওয়াই আফযল ও অধিক পর্দার কারণ। ৫. সর্বদা দৃষ্টিকে নিম্নগামী রাখবে। ৬. বিনা প্রয়োজনে গায়রে মাহ্রাম পুরুষদের সাথে কথা বলবে না। ৭. প্রয়োজনে গায়রে মাহ্রাম পুরুষদের সাথে কথা বলতে হলে পর্দার আড়াল থেকে শক্ত স্বরে কথা বলবে, নরম সূরে কথা বলবে না। এটাই খাছ শরয়ী হিজাব বা পর্দা। আর এটাই শরীয়তের নির্দেশ।
অতএব, তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যে অনেকেই পর্দা তরক করে কবীরা গুনাহে গুনাহ্গার হবে তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, কতিপয় নামধারী পীর, আমীর, খতীব, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও মাওলানারা প্রকাশ্যে বেগানা মহিলাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করে, ইফতার করে, ঘরোয়া বৈঠক করে, মিটিং-মিছিল করে। আর এটাকে তারা ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থের দোহাই দিয়ে জায়িয বলে প্রচার করছে। (নাঊযুবিল্লাহ)
মূলতঃ যুগে যুগে দুনিয়া লোভী উলামায়ে ‘ছূ’রা দুনিয়াবী ফায়দা লুটার উদ্দেশ্যে হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়ে আসছে। যেমন, ক্বাইয়্যূমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর যামানায় উলামায়ে ‘ছূ’ আবুল ফযল, ফৈজী ও মোল্লা মুবারক নাগোরী গংরা বাদশা আকবরকে সন্তুষ্ট করে দুনিয়াবী কিছু ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে কুরআন-সুন্নাহর মনগড়া অপব্যাখ্যা করে বহু হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়েছিল।
বর্তমান যামানার উলামায়ে ‘ছূ’ তথাকথিত পীর, আমীর, খতীব, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও তার অনুসারী গংরা যেন আবুল ফযল গংদেরই পূর্ণ মিছদাক।
দুনিয়াবী ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে এবং খানিকটা পদ লাভের প্রত্যাশায় তারা হারাম কাজগুলো নির্দ্বিধায় করে যাচ্ছে। সাথে সাথে হারাম কাজগুলোকে হালাল বলে ফতওয়া দিচ্ছে। বস্তুতঃ এরাই হচ্ছে হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালের চেলা।
যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول اله صلى الله عيه وسلم يكون فى اخر الزعان دجالون كذابون يأتونكم من الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا اباؤيكم فاياكم واياهم ايضلونكم ولا يفتنونكم.
অর্থঃ- “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
স্মর্তব্য যে, ঐ সকল দাজ্জালের চেলা নামক তথাকথিত পীর, আমীর, খতীব, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও মৌলভীদের প্রকাশ্যে বেপর্দা হওয়ার কারণে আজ সাধারণ লোক বিভ্রান্তিতে পড়ছে। সাধারণ লোক মনে করছে পর্দার কোন প্রয়োজন নেই। যদি থাকতোই তবে নামধারী মৌলভীরা বেপর্দা হয় কি করে? উল্লিখিত উলামায়ে ‘ছূ’দের বেপর্দা হওয়ার কারণে যে সাধারণ লোকেরা পর্দা সম্পর্কীয় বিষয়ে ঈমান-আমলের ক্ষেত্রে বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা।
অতএব, সকলেই যেন পর্দা সম্পর্কে সঠিক আক্বীদা পোষণ করতে পারে বা হিজাব তথা পর্দার ছহীহ্ আহকাম অবগত হতে পারে এবং যারা অজ্ঞতাহেতু ও নফ্সের তাড়নায় পর্দা সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এবং বেপর্দা হচ্ছে তারাও যেন বিভ্রান্তি ও বেপর্দা হতে হিদায়েত ও পর্দার ভিতর আসতে পারে, তাই “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” “হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” দেয়া হলো।
আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে প্রদত্ত ফতওয়া মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রেযামন্দি হাছিল করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)
কুরআন শরীফ, সুন্নাহ্ শরীফ, ইজ্মা ও
ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে পর্দা করা ফরযে আইন
ইসলামের ভিত্তি বা প্রধানতম ফরয হচ্ছে পাঁচটি (১) ঈমান বা আক্বীদা, (২) নামায, (৩) যাকাত, (৪) হজ্জ (৫) রমযানের রোযা। অতঃপর পুরুষদের জন্যে হালাল কামাই করা ফরয। আর মহিলাদের জন্যে হিজাব বা পর্দা করা ফরয। অর্থাৎ ফরযে আইন।
কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের বহু স্থানেই হিজাব বা পর্দার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, পাশাপাশি বেপর্দা হওয়ার কারণে কঠিন আযাব ও অসন্তুষ্টির কথাও বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে হিজাব বা পর্দা সম্পর্কিত উল্লিখিত বিষয়ে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, তাফসীর, শরাহ, ফিক্বাহ, ফতওয়া, ইতিহাস ও লুগাতের কিতাবসমূহ থেকে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ্ পর্যায়ক্রমে উল্লেখ করা হলো-
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
মহিলাদের জিহাদ বা আন্দোলনের
জন্য বাহিরে বের হওয়া হারাম
যদি দেশে সশস্ত্রহিনী থাকে তাহলে তারাই যুদ্ধ করবে। আর সৈন্যের অনুপস্থিতিতে খলীফার আহবানে পুরুষরা জিহাদে অংশগ্রহণ করবে। শুধু পুরুষ দিয়েই যদি মুকাবিলা করা সম্ভব না হয় তবে মহিলারাও প্রয়োজনে জিহাদে অংশগ্রহণ করবে। প্রয়োজন ছাড়া মহিলাদের জিহাদে যোগ দেয়া হারাম।
আমাদের বাংলাদেশসহ অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতে জিহাদের নামে হরতাল, লংমার্চ, মিটিং-মিছিল, জনসভায় পুরুষদের সাথে যে মহিলারা বাইরে বের হচ্ছে তা শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম।
নিম্নে মহিলাদের জিহাদের অংশগ্রহণ সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ উল্লেখ করা হলো-
[২০২৯-২০৪৬]
عن عائشة قالت استأذنت انبى صلى الله عليه وسلم فى الجهاد فقال جها دكم الحج. (مشكوة شريف كتاب المنا سخ الفصل الاول، مرقاة، شرح الطيبى، التعليق الصبيح، معات، اشعة اللعات، مظاهرحق، مرأة المناجيح، بخارى شريف، فتح البارى، عمدة القارى، ارشاد السارى، تيسير البارى، مسلم شريف، شرح النبوى، شرح الابى والسنوسى، المفهم، فتح الملهم)
অর্থঃ- “হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট জিহাদে যাওয়ার অনুমতি চাইলাম। উত্তরে তিনি বললেন,তোমাদের জিহাদ হচ্ছে হজ্ব।” (মিশকাত শরীফ কিতাবুল মানাসিখ আল ফাছলুল্ আউয়াল, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, আত্ তা’লীকুছ ছবীহ, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল্ মানাজীহ, বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, তাইসীরুল বারী, মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী, শরহুল্ উবাই ওয়াস্ সিনূসী, আল্ মুফহিম, ফতহুল মুুলহিম)
[২০৪৭-২০৫৫]
عن عائشة رضى الله عنها قالت قلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم على النساء جهاد؟ قال نعم عليهن جهادلا قتال فيه الحج والعمرة. (مشكوة شريف كتاب المناسخ الفص الثالث، مرقاة، شرح الطيبى، اتعليق الصبيح، لمعات، اشعة اللمعات، مظاهرحق، مرأة امناجيح، ابن ماجة شريف)
অর্থঃ- “হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আরজ করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! স্ত্রীলোকের উপর কি জিহাদ ফরয? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাঁদের উপর জিহাদ ফরয। তবে সেখানে কাটাকাটি নেই, তাহচ্ছে হজ্ব ও উমরাহ। অর্থাৎ হজ্ব ও উমরা-ই মহিলাদের জন্য ফরয কিন্তু জিহাদ ফরয নয়।” (মিশকাত শরীফ কিতাবুল মানাসিখ আল ফাছলুছ ছালিছ, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, আত্ তা’লীকছু ছবীহ, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল্ মানাজীহ, ইবনু মাজাহ শরীফ)
[২০৫৬]
عن انس رضى الله عنه قال جئن النساء الى رسول الله صى الله عليه وسلم فقلن يا رسول الله ذهب الرجال بالفضل والجهاد فى سبيل اله تعاى، فمانا عمل ندرك به عمل المجاهدين فى سبيل الله تعالى، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم من قعدت او كلمة نحوها منكن فى بيتها فانها تدرك عم المجاهدين فى سبيل الله تعالى. (تفسير ابن كثير ج ২ ص ৭৬৮)
অর্থঃ- হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদা মহিলারা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! পুরুষ লোকেরা আল্লাহ পাক-এর পথে জিহাদে অংশ গ্রহণ করে তার ফযীলত লাভ করছেন। আমাদের জন্য কি এমন আমল আছে যার দ্বারা আমরা মুজাহিদগণের মত ফযীলত, মর্যাদা-মর্তবা লাভ করতে পারি? উত্তরে হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “যারা নিজেদের ঘরে পর্দার সাথে বসে থাকবে তারা আল্লাহ পাক-এর পথে জিহাদকারী মুজাহিদগণের সমমর্যাদা-ফযীলত লাভ করবে।” (তাফসীরে ইবনে কাছীর ২য় জিঃ ৭৬৮ পৃষ্ঠা)
[২০৫৭]
(وقرن فى بيوتكن) ….. لان سودة رضى الله عنها قيل لها لما لاتخر جين فقالت امرنا الله بان نقرفى بيتنا، وكانت عائشة اذا قرات هذه الاية تبكى على خروجها ايام الجمل. (التسهيل لعلوم التنزيل ج ২ ص ১৮৮)
অর্থঃ- “(আপনারা ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করুন) ….. হযরত সাওদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আপনারা কেন ঘর থেকে বের হননা। তিনি বলেছিলেন, আল্লাহ পাক আমাদেরকে ঘরের কোণে- প্রকোষ্ঠে অবস্থান করতে নির্দেশ দিয়েছেন এ জন্যই। হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা যখন এ আয়াত শরীফ পাঠ করতেন, তখন জঙ্গে জামাল তথা উষ্ট্রের যুদ্ধে বের হওয়ার কথা স্মরণ করে কাঁদতেন।” (আত্ তাসহীল লিউলূমিত্ তানযীল ২য় জিঃ ১৮৮ পৃষ্ঠা)
উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, মহিলাদের জন্য কোন জিহাদ বা আন্দোলন নেই। মহিলাদের জিহাদ বা আন্দোলনের জন্য ঘর থেকে বের হওয়া সম্পূর্ণই হারাম। বরং তাদের সর্বাবস্থায়ই ঘরে অবস্থান করা বা পর্দায় থাকা ফরযে আইন।
মহিলাদের জন্যে মাহরাম ব্যতীত হজ্ব
বা ছফর করা জায়িয নেই, বরং হারাম
মহিলাদের জন্য ছফরে তথা ৪৮ মাইল বা ৭৮ কিলোমিটার পথে গেলে বা হজ্বে গেলে মাহরাম তথা স্বামী, ভাই, পিতা, পুত্র ইত্যাদি কাউকে সঙ্গে নেয়া ফরয। মাহরাম ছাড়া হজ্বে যাওয়া বা ছফর করা জায়িয নেই, বরং নাজায়িয ও হারাম। কেননা এতে ফিত্না-ফাসাদের বা বেপর্দা হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে।
মাহ্রাম ছাড়া ছফর করা এবং হজ্বে যাওয়া নাজায়িয সম্পর্কিত হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
[২০৫৮-২০৭৪]
عن ابن عباس رضى الله عنهما قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لايخلون رجل بامرأة ولا تسافرن امرأة الا ومعها محرم فقال رجل يا رسول الله صلى اله عيه وسلم اكتتبت فى غزوة كذا وكذا وخرجت امراتى حاجة قا اذهب فاج حجج مع امرأتك. (مشكوة شريف كتاب المناسخ الفصل الاول، بخارى شريف، فتح البارى، عمدة القارى، ارشاد اسارى، مسلم شريف، شرح النووى، فتح المهم، شرح الابى والسنوسى، المفهم، مرقاة، شر الطيبى، التعليق الصبيح، لمعات، اشعة اللمعات، مظاهرحق، مرأة المتاجيح)
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘কোন পুরুষ যেন কখনো কোন বেগানা স্ত্রীলোকের সাথে এক জায়গায় না হয় এবং কোন স্ত্রীলোক যেন কখনো কোন মাহরাম ব্যতীত একাকি ছফরে বের না হয়। তখন এক ব্যক্তি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ওমুক যুদ্ধে আমি নাম লিখিয়াছি, আর আমার স্ত্রী একাকি হজ্বে রওয়ানা হয়েছে। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যাও তুমি তোমার স্ত্রীর সাথে হজ্ব কর।” (মিশকাত শরীফ কিতাবুল্ মানাসিখ আল ফাছলুল আউয়াল, বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী, ফতহুল মুলহিম, শরহুল উবাই উয়াস্ সিনূসী, আল মুফহিম, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, আত্ তা’লীকুছ ছবীহ, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল মানাজীহ)
[২০৭৫-২০৯১]
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صى الله عليه وسلم لاتسافر امرأة مسيرة يوم وليلة الا ومعها ذومحرم. (مشكوة شريف كتاب المناسخ الفصل الاول، مرقاة، شرح الصطيبى، التعليق الصبيح، لمعات، اشعة اللمعات، مظاهر حق، مرأة المناجيح، بخارى شريف، فتح البارى، عمدة القارى، ارشاد السارى، تسيراليارى، مسلم شريف، شرح النبوى، شرج الابى والسنوسى، المفهم، فتح الملهم)
অর্থঃ- “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কোন স্ত্রীলোক যেন একদিন এক রাত্রির পথ ছফর না করে কোন মাহরাম ব্যতীত।” (মিশকাত শরীফ কিতাবুল মানাসিখ আল ফাছলুল্ আউয়াল, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, আত্ তা’লীকুছ ছবীহ, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত,মুযাহিরে হক্বু, মিরয়াতুল মানাজীহ, বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, তাইসীরুল বারী, মুসলিম শরীফ, শরহুল্ উবাই ওয়াস্ সিনূসী, আল মুফহিম, ফতহুল মুলহিম)
এ সম্পর্কে ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাব সমূহে উল্লেখ আছে যে,
[২০৯২-২০৯৪]
ويعتبر فى حق المراة ان يكون لها محرم يحج بها او زوج ولا يجوز لها ان تحج بغير هما اذا كان بينها وبين مكة مسيرة ثاثة ايام. (قدورى ص ৫৬، التنقيح الضرورى، الجوهرة النيرة)
অর্থঃ- “মহিলাদের ব্যাপারে গ্রহণযোগ্য বিধান হলো, তার সাথে তার কোন মাহ্রাম যেমন পিতা, ভাই, ছেলে ইত্যাদি অথবা তার স্বামী হজ্ব করবে। মহিলার জন্য তার মাহ্রাম ছাড়া হজ্ব করা জায়িয হবে না। যখন তাদের বাড়ী এবং মক্কা শরীফের মধ্যে তিন দিনের (৪৮ মাইল) বা তার বেশী সময়ের দূরত্ব হয়।” (কুদূরী ৫৮ পৃষ্ঠা, আত্ তানকীহুয্ যরূরী, আল্ জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ্)
[২০৯৫-২০৯৮]
قال (ويعتبر فى المراة ان يكون لها محرم تحج به اوزوج ولايجوز لنا ان تحج بغيرهما اذا كان بينها وبين مكة ثلاثة ايام) …….. ولنا قوله عليه السلام لا تحجن امرأة الا ومعها محرم، ولانها بدون المحرم يخباف عليها الفتنة ……(واذا وجدت محرما لم يكن للزوج منعها) ……….. ونا ان حق الزوج لا يظهر فى حق القرائض والحج منها حتى لوكان الج نفلا له ان يمنعها ولو كان المحرم فاسقا. قالوا لا يجب عليها لان امقصود لا يحصل به ….. ولا عيرة بالصبى والمجنون لانه لاتتاتى منهما الصيانة واصبية التى بلغت حد الشهوة بمنزله البالغة حتى لايسافر بها من غير محرم. (الهداية مع الدراية ج ১ ص ২৩৩، فتح القدير، كفاية، شرح العناية، حاشية ….)
অর্থঃ- “ইমাম কুদূরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, (মহিলাদের ব্যাপারে গ্রহণযোগ্য বিধান হলো, তার সাথে তার কোন মাহরাম যেমন পিতা, ভাই ছেলে ইত্যাদি অথবা তার স্বামী হজ্ব করবে। মহিলার জন্য তার মাহরাম ছাড়া হজ্ব করা জায়িয হবে না। যখন তার বাড়ী এবং মক্কা শরীফের মধ্যে তিন দিনের (৪৮ মাইল) বা তার বেশী সময়ের দুরত্ব হয়) …. আমাদের হানাফীদের দলীল হলো, আখিরী রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
لاتحجن امرأة الا ومعها محرم.
অর্থাৎ- ‘কোন স্ত্রীলোক যেন মাহ্রাম ছাড়া হজ্ব করতে না যায়। কেননা এতে ফিতনা-ফাসাদের আশঙ্কা রয়েছে। …. (মহিলা যদি মাহরাম পেয়ে যায়, তবে স্বামীর পক্ষ থেকে তাকে বাধা দেয়ার অধিকার থাকবে না।) …. আমাদের হানাফীগণের দলীল হলো, স্বামীর অধিকার ফরয সমূহ পালনের ক্ষেত্রে প্রকাশ পাবে না। আর হজ্ব ফরয সমূহের অন্তর্ভুক্ত। তবে নফল হজ্বের ক্ষেত্রে স্বামীর বাধা প্রদানের অধিকার রয়েছে। মাহরাম যদি ফাসিক হয় সেক্ষেত্রে ফক্বীহগণ বলেছেন, মহিলার উপর হজ্ব ফরয হবে না। কেননা সফর সঙ্গী হওয়ার উদ্দেশ্য এমন ফাসিক মাহরামের দ্বারা হাছিল হবে না। …… শিশু, বালক এবং পাগল মাহরাম গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা, তার পক্ষ থেকে হিফাযত হাছিল হবে না। যে বালিকা প্রাপ্ত বয়ষ্কার সীমায় উপনীত হয়েছে, সে প্রাপ্ত বয়ষ্কার সমতুল্য। কাজেই মাহরাম ছাড়া তাকে নিয়ে সফর করা জায়িয নেই।” (আল হিদায়া মায়াদ দিরায়া ১ম জিঃ ২৩৩ পৃষ্ঠা, ফতহুল ক্বদীর, কিফায়া, শরহুল ইনায়া)
উল্লিখিত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্য ভাবেই প্রমাণিত হলো যে, মহিলাদের জন্য মাহরাম ব্যতীত হজ্ব বা শরয়ী ছফরে যাওয়া জায়িয নেই; বরং হারাম। কারণ, এতে বেপর্দা হওয়ার বা ফিৎনা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
মহিলাদের লিবাস বা পোশাকও
হিজাব বা পর্দার অন্তর্ভুক্ত
মহিলাদের লিবাস বা পোশাক যেমন, মাথার ওড়না, ক্বামীছ, কাপড়, সেলওয়ার ইত্যাদিও পরপুরুষের দৃষ্টির আড়ালে রাখতে হবে। কেননা, মহিলাদের লিবাস বা পোশাককেও ঢেকে রাখা বা পুরুষের চোখের আড়ালে রাখা ফরয, ওয়াজিব। এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে,
[২০৯৯]
الحجاب مفروض على جميع نساء المؤمنين وهو واجب شرعى محتم …. الجلباب اشرعى يجب ان يكون ساترا للزينة والثياب ولجميع البدن. (تفسير ايات الاحكام للصابونى ج ২ ص ৩৮৬، ৩৮৭)
অর্থঃ- “সকল মু’মিনগণের স্ত্রীগণের অর্থাৎ মহিলাগণের জন্য পর্দা করা ফরযে আইন। এটা শরীয়তের স্থির সিদ্ধান্তে ওয়াজিব। ….. ‘শরয়ী জিলবাব’ বা আবরণ বাইরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে প্রত্যেক মহিলার জন্য ওয়াজিব। যা মহিলার সৌন্দর্য, পোশাক-পরিচ্ছদ এবং সম্পূর্ণ শরীর আবৃত করে বা ঢেকে রাখে। (তাফসীরে আয়াতুল্ আহকাম লিছ্ ছাবূনী ২য় জিঃ ৩৮৬, ৩৮৭ পৃষ্ঠা)
[২১০০-২১০১]
وان كان على المرأة بيان فلا بأس بان يتأمل جسدها وهذا اذا لم تكن ثيابها ملتزمة بها بحيث تصف ما تحتها ولم يكن دقيقها بحيث تصف ما تحته فان كانت بخلاف ذلك فينبغى له ان يغض بصره. (فتاوى شامى بيان النظر ومس ج ه ২৪১)
অর্থঃ- “যে মহিলার শরীরে মোটা কাপড় এরূপ ঢিলা থাকে যে, তার শরীরের বাধন দেখা যায় না। তার প্রতি অনিচ্ছাকৃত দৃষ্টি জায়িয় আছে। (বোরকার উপর ইচ্ছাকৃত দৃষ্টি দেয়াও জায়িয নেই) কিন্তু যদি কাপড় মোটা না হয় বরং পাতলা হয় যাতে ভিতরের শরীর প্রকাশ পায় অথবা কাপড় যদি পাতলা না হয় বরং কাপড় মোটা কিন্তু কাপড় এমন আটো-সাটো বা চিপানো যে যাতে শরীরের গঠন প্রকাশ পায়, এমতাবস্থায় চক্ষুর দৃষ্টিকে নিম্নগামী করা বা ফিরায়ে নেয়া ওয়াজিব। অর্থাৎ এমন কাপড়ের উপর দৃষ্টি দেয়া জায়িয নেই, বরং হারাম ও নাজায়িয।” (ফতওয়ায়ে শামী বয়ানুন্ নযর ওয়া মাস্ ৫ম জিঃ ২৪১ পৃষ্ঠা, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৫৭ পৃষ্ঠা)
[২১০২-২১০৩]
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من تامل خلف امرأة وراء ثيابها حتى تبين له حجم عظامها لم يرح رأئحة اجنة. (فتاوى شامى بيان النظر ومس ج ه)
অর্থঃ- “হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি মহিলার প্রতি দৃষ্টি করতঃ তার কাপড়ের উপর দিয়ে শরীরের গঠন অনুভব করল। সে জান্নাতের সুবাস পর্যন্ত পাবেনা। (ফতওয়ায়ে শামী বয়ানুন্ নযর ওয়া মাস্ ৫ম জিঃ, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৫৮ পৃষ্ঠা)
[২১০৪-২১০৫]
اقول مفاده ان روية الثوب بحيث يصف حجم العضو لممنوء ولو كشفعا لاتروا بشرة منه. (شامى ج ه)
অর্থঃ- “পূর্ব উল্লেখিত হাদীছ শরীফ অবলম্বনে ফতওয়ায়ে শামীর মুছান্নিফ লিখেছেন যে, মোটা কাপড়ের উপর দিয়ে যদি স্ত্রী লোকের শরীরের গঠন ও রূপ-সৌন্দর্য্য প্রকাশ পায়, তাহলে তার উপর দৃষ্টি দেয়া জায়িয নেই। বরং হারাম ও নাজায়িয।” (ফতওয়ায়ে শামী বয়ানুন্ নযর ওয়া মাস্ ৫ম জিঃ, ফওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৫৮ পৃষ্ঠা)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে,মহিলাদের লিবাস বা পোশাকও হিজাব বা পর্দার অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং কোন মহিলার জন্যে তার লিবাস বা পোষাক পরপুরুষকে দেখানো যেরূপ নিষিদ্ধ; তদ্রুপ পুরুষদের জন্য বেগানা মহিলাদের লিবাস বা পোশাকের দিকে দৃষ্টি দেয়াও হারাম বা নিষিদ্ধ।
মহিলাদের কণ্ঠস্বরও
হিজাব বা পর্দার অন্তর্ভুক্ত
মহিলাদের গলার আওয়াজ বা কক্তস্বরও হিজাব বা পর্দার অন্তর্ভুক্ত। কণ্ঠস্বরকে নিচু করা এবং পরপুরুষের থেকে হিফাযত করা ফরয। তবে যদি বিশেষ প্রয়োজনে কথা বলতেই হয় তবে কর্কষকণ্ঠে, শক্তভাবে কথা বলতে হবে।
নিম্নে এ সম্পর্কে আল্লাহ পাক-এর নির্দেশ এবং অন্যান্য দলীল-আদিল্লাহ পেশ করা হলো-
[২১০৬]
ينساء النبى لستن كاحسد من النساء ان اتقيتن فلا تخضعن بالقول فيطمع الذى فى قلبه مرض وقلن قولا معروفا.
অর্থঃ- “হে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রী অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণ! আপনারা অন্য নারীদের মত নন। যদি আল্লাহ পাককে ভয় করেন, তবে পুরুষগণের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলবেন না, ফলে যার অন্তরে ব্যাধি বা রোগ রয়েছে সে ব্যক্তি কু-বাসনা করবে। আপনারা শক্ত স্বরে কথা-বার্তা বলবেন।” (সূরা আহযাব/৩২)
মহিলাদের গলার আওয়াজ বা কক্তস্বর পর্দার অন্তর্ভুক্ত। তবে বিশেষ জরুরতে বেগানা বা পরপুরুষের সাথে কথা বলতে হলে কঠোর বা শক্তস্বরে কথা বলতে হবে, কোমল ও আকর্ষণীয় স্বরে কথা বলা জায়িয নেই। অত্র আয়াতে কারীমায় ‘বিশেষ প্রয়োজনে পর পুরুষের সাথে যদি কথা বলতেই হয়, তাহলে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা না বলার; বরং কঠোরভাবে, শক্তভাবে কথা বলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।” উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণ উক্ত আয়াত শরীফের হুকুম পালনের জন্য জরুরতে কথা বলার সময় নিজ হাত মুবারক মুখে রেখে কথা বলতেন, যেন কক্তস্বর কোমল ও আকর্ষণীয় না হয়ে কঠোর ও শক্ত হয়।
এ হুকুম বা নির্দেশ শুধু উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণের জন্যই খাছ নয়। বরং আমভাবে সকল মু’মিন-মুসলমান মহিলাগণের জন্য এ হুকুম প্রযোজ্য। যা পালন করা ফরযে আইন। কুরআন শরীফের আয়াত শরীফের নুযূল তথা যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে বা যাকে উপলক্ষ করে অবতীর্ণ হয়েছে তা খাছ। কিন্তু এর হুকুম আমভাবে সকলের জন্যই প্রযোজ্য। আলোচ্য আয়াত শরীফটিও সে পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত।
অনুসরণীয় মুফাস্সিরীনে কিরাম তথা ইমাম, মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যা যেভাবে করেছেন, তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
[২১০৭]
اى لا تخاطب المراة الاجانب كما تخاطب زوجها. (تفسير ابن كثير ج ৩ ص ৭৬৮)
অর্থঃ- “মহিলারা নিজ স্বামীর সাথে যেভাবে আকর্ষণীয় সূরে কথা বলে তেমনি অন্য পুরুষের সাথে কথা বলবে না।” (তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩য় জিঃ ৭৬৮ পৃষ্ঠা)
[২১০৮]
والمرأة مندوبة الى الغلظة فى المقالة اذا خاطبت الاجانب لقطع الاطماع (وقلن قولا معروفا) مايوجبه الدين والاسلام بتصريح وبيان من غير خضوع. (تفسير البغوى ج ه ص ২৫৭-২৫৮)
অর্থঃ- “মহিলাদের জন্য অবশ্য কর্তব্য যে, বিশেষ প্রয়োজনে পরপুরুষের সাথে কথা বলার সময় কর্কশ কণ্ঠে, শক্তভাবে কথা বলবে। যাতে পুরুষের আকর্ষণ বিকর্ষণে পরিণত হয়। (আপনারা শক্ত করে কথা-বার্তা বলবেন।) দ্বীন ইসলামের কোন প্রয়োজনীয় বয়ান করতে হলে কোমলতা ত্যাগ করে তথা কঠোরভাবে করুন। (তাফসীরুল বাগবী ৫ম জিঃ ২৫৭, ২৫৮ পৃষ্ঠা)
[২১০৯-২১৩০]
قال البيضاوى وهو ابلغ من النهى عن ابداء الزينة وادل على المنع من رفع الصوت ها ولذا صرح فى النوازل بان نغمة المرءة عورة وبنى عليها ان تعمها القران من المرءة احب الى لان نغمتها عورة ولذا قال عليه السلام التسبيح للرجال والتصفيق للنساء. متفق عليه من حديث سهل بن سعد فلايحسن ان يسمعها الرجل قال ابن همام وعلى هذا لوقيل اذا جهرت المرءة بالقراءة فى الصلوة فسدت كان متجها. (التفسير المظهرى ج ৬ ص ৫০২. بخارى شريف. فتح البارى. عمدة القارى. ار شاد السارى. شرح اكر مانى، تيسير البارى، مسلم شيرف، شرح النووى، فتح الملهم للشبير احمد عثمانى، فتح الملهم للتقى عثمانى، شرح الابى والسنوسى، المفهم، مشكوة شريف، شرح الطيبى، مر قاة، التعليق الصبيح، لمعات، اشعة اللمعات، مظاهرحق، تنظيم الاشتات، مراة المناجيح، تفسير البغوى، تفسير البيضاوى)
অর্থঃ- “হযরত বাইযাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, সৌন্দর্য, সাজ-সজ্জা প্রকাশ করতে কঠোর ভাবে নিষেধ করা হয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞা উচ্চ আওয়াজ-এর ব্যাপারেও দলীলসম্মত। এজন্য বাইযাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর, ‘আন্ নাওয়াযিল’ নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন, নিশ্চয়ই নারীদের কণ্ঠস্বর পর্দার অন্তর্ভুক্ত। এর উপর ভিত্তি করে ফতওয়া দেয়া হয়েছে যে, নারীদের কুরআন শরীফ শিক্ষা করা নারীদের নিকট থেকেই উত্তম। কেননা, মহিলার কণ্ঠস্বরও পর্দার অন্তর্ভুক্ত। এ কারণে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, পুরুষেরা তাছবীহ্ (আল্লাহু আকবার) পাঠ করবে এবং মহিলারা হাতের উপর হাত মারবে। বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ। হাদীছে সাহ্ল ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, পুরুষের জন্য মহিলার কণ্ঠস্বর শোনা শোভনীয় নয় বা জায়িয নয়। হযরত ইবনে হুমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যদি মহিলা নামাযের কিরায়াত উচ্চস্বরে পাঠ করে তাহলে তার নামায ফাসিদ বা নষ্ট হয়ে যাবে।” (আত্ তাফসীরুল্ মাযহারী ৬ষ্ঠ জিঃ ৫০২ পৃষ্ঠা, বুখারী শরীফ, ফতহুল্ বারী, উমদাতুল্ কারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহুল্ কিরমানী, তাইসীরুল্ বারী, মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী, ফতহুল্ মুলহিম লিশ্ শিব্বীর আহমদ উছমানী, ফতহুল্ মুলহিম লিত্ তক্বী উছমানী, শরহুল্ উবাই ওয়াস্ সিনূসী, আল্ মুফহিম, মিশকাত শরীফ, শরহুত্ ত্বীবী, মিরকাত, আত্ তা’লীকুছ ছবীহ্, লুময়াত, আশয়াতুল্ লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, তানযীমুল্ আশতাত, মিরয়াতুল্ মানাজীহ)
[২১৩১-২১৩২]
هل صوت المرأة عورة؟ فاجاب: نعم، المرأة مامورة بتجنب الفتنة، فاذا كان يترتب على سماع صوتها افتتان الرجال بها فا نها تخفيه. ولذلك فانها لا ترفع صوتها باتلبية وانما تلبى سرا. (فتوى المرأة امسلمة ج ১ ص ৪৩১، المنتقى من فتاوى فضيلة الشيخ صالح بن فوزان ج ৩ ص ১৯৩، ১৯৪)
অর্থঃ- “মহিলাদের কণ্ঠস্বর কি পর্দার অন্তর্ভুক্ত?
জাওয়াবঃ হ্যাঁ, মহিলাদের কণ্ঠস্বর পর্দার অন্তর্ভুক্ত। মহিলারা ফিতনা-ফাসাদ থেকে বাঁচার ব্যাপারে নির্দেশিত বা আদিষ্টিত। যদি মহিলাদের গলার আওয়াজ শুনে তাতে পুরুষদের মধ্যে ফিতনা-ফাসাদের ভয় থাকে, তবে মহিলা আস্তে চুপে চুপে কথা বলবে। এজন্যই মহিলা হজ্বের সময় ‘তালবিয়া’ পাঠে আওয়াজ উচ্চ করবে না। বরং চুপে চুপে ‘তালবিয়া’ পাঠ করবে। (ফাতাওয়াল্ মারয়াতিল্ মুসলিমাহ্ ১ম জিঃ ৪৩১ পৃষ্ঠা, আল মুনতাক্বা মিন ফাতাওয়া ফাযীলাতিশ্ শাইখ ছালিহ্ বিন ফাওযান ৩য় জিঃ ১৯৩, ১৯৪ পৃষ্ঠা)
[২১৩৩]
المرأة لا يجوزلها مخاطبة الرجال الذين ليسوا محارم لها الا عند الحاجة ………….. اما الخضوع فى القول المنهى عنه فهو ترخيم الصوت وتحسينه بحيث يثير الفتنة فلايجوز للمرأة ان تكلم الرجل الاجنبى يصوت رخيم ولا ان تكلمه بمث ما تكلم به زوجها. (فتاوى المراة امسمة ج ১ ص ৪৩২)
অর্থঃ- যারা মাহরাম নয় এমন পুরুষদের সাথে মহিলাদের জন্য কথা-বার্তা বলা জায়িয নেই। তবে বিশেষ প্রয়োজনের সময় আলাদা কথা। ……. সূললিত ভাষায় কথা বলা নিষেধ। তা হচ্ছে ভাঙ্গা আওয়াজ এবং সুন্দর, মধুর কথা যা ফিতনার সৃষ্টি করে। মহিলাদের জন্য পরপুরুষদের সাথে আকর্ষণীয় মধুর কণ্ঠে আলাপ-আলোচনা করা জায়িয নেই। আর স্বামীর সাথে যেভাবে আকর্ষণীয় কথা বলে সেভাবে কথা বলাও জায়িয নেই। (ফাতাওয়াল্ মারয়াতিল মুসলিমাহ ১ম জিঃ ৪৩২ পৃষ্ঠা)
[২১৩৪]
صوت المرأة عورة عند الرجا الاجانب على الصحيح ولذلك لا تسبح فى الصلاة. (فتاوى المرأة امسلمة ج ১ ص ৪৩৪)
অর্থঃ- “ছহীহ বা বিশুদ্ধ মতে পরপুরুষের কাছে মহিলাদের গলার আওয়াজ পর্দার আওতাভুক্ত। এজন্য মহিলারা নামাযে জোড়ে তাসবীহ পড়বেনা। (ফাতাওয়াল্ মারয়াতিল্ মুসলিমাহ্ ১ম জিঃ ৪৩৪ পৃষ্ঠা)
উল্লিখিত বর্ণনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, মহিলাদের কণ্ঠস্বর বা গলার আওয়াজও হিজাব বা পর্দার অন্তর্ভুক্ত। তাই কোন মহিলা কোন বেগানা পুরুষের সাথে বিনা জরুরতে কথা বলা জায়িয নেই। জরুরতে কথা বলতে হলে মুখে আঙ্গুল রেখে শক্তভাবে বা কর্কশ ভাষায় কথা বলতে হবে। এ তরীক্বায় কথা বলা তাদের জন্য সুন্নতে উম্মুল মু’মিনীন।
বাইরে বের হওয়ার সময় মহিলাদের
জন্য আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার
করা জায়িয নেই
মহিলারা তাদের স্বামীর সামনে আতর, সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে বের হওয়ার সময় আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করা জায়িয নেই। কেননা এতে পরপুরুষরা আকৃষ্ট হয়ে ফিতনার, কু-চিন্তার সৃষ্টি হয়। এটাও এক প্রকার ব্যভিচার।
নিম্নে এ সম্পর্কে দলীলভিত্তিক আলোচনা করা হলো-
[২১৩৫-২১৪৭]
لقوله تعالى (ولا يضربن بارجلهن) الى اخره ومن ذلك انها تنهى عن التعطر والتطيب عند خروجها من بيتها فيشم الرجال طيبها. فقد قال ابو عيسى الترمذى: حدثنا محمد ابن بشنار حدثنا يحى بن سعيد القطان عن ثابت بن عمارة الحنفى عن غنيم بن قيس عن ابى موسى رضى الله عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم انه قال ّكل عين زانية والمرأة اذا استعطبت فمرت بالمجلس فهى كذا وكذا” يعنى زانية. وفى الباب عن ابى هريرة: وهذا حسن صحيح. رواه ابوداود والنسائى من حديث ثابت بن عمارةبه. وقال ابو داود حدثنا محمد بن كثير اخبرنا سفيان عن عاصم بن عبيد الله عن عبيد مولى ابى رهم عن ابى هريرة رضى الله عنه قال: لقيته امراة شم منها ريح الطيب ولذيلها اعصار، فقال: يا امية الجبار جئت من المسجد؟
قالت: نعم. قال لها: تطيت؟ قالت نعم قال: انى سمعت حبى ابا القاسم صلى الله عليه وسلم يقول: “لايقبل الله صاة امراة طيبت لهذا امسجد حتى ترجع فتغسل غسلها من الجنابة.” ورواه ابن ماجة عن ابى بكر بن ابى شيبة عن سفيان هوابن عيينة به. (تفسير ابن كثير ج ৩ ص ৪৫৭، ৪৫৮، ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشاذى، ابو داؤد شريف، بذل المجهود، عون المعبود، شرح بدر الدين العينى، نسائى شيريف، ذخيرة عقبى، حاشية السيوطى، ابن ماجة شريف)
অর্থঃ- “এ বিষয়টি আয়াত শরীফে নিষেধ করা হয়েছে যে, ‘(তারা যেন এমনভাবে পদচারণা না করে যাতে তাদের চুপানো সৌন্দর্য প্রকাশ হয়ে পড়ে।)’ আয়াত শরীফের শেষ পর্যন্ত। এ আয়াত শরীফের ভিত্তিতে মহিলাদের বাইরে বের হওয়ার সময় আতর, সুগন্ধি মেখে বের হওয়া নিষেধ তথা হারাম করা হয়েছে। যাতে পুরুষেরা ঘ্রান নিতে না পারে।
হযরত আবূ ঈসা তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন মুহম্মদ ইবনে বাশ্শার রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন ইয়াহ্ইয়া বিন সাঈদ ক্বত্তান রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ছাবিত বিন আম্মারাতাল্ হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি গানীম বিন কায়েছ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আবূ মুসা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে, তিনি হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “প্রত্যেক চোখ ব্যভিচারী, যখন মহিলা আতর, সুগন্ধি মেখে পুরুষদের কোন মজলিসের পাশ দিয়ে গমন করে তখন সে এরূপ এরূপ।” অর্থাৎ ব্যভিচারিনী। একই ভাবে হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে। এটি হাসান ছহীহ্। আবূ দাউদ এবং নাসায়ী হযরত ছাবিত বিন আম্মারা থেকে বর্ণনা করেছেন।
হযরত আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত মুহম্মদ বিন কাছীর। তিনি বলেন, আমাদের কাছে খবর দিয়েছেন হযরত সুফিয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আছিম বিন উবাইদুল্লাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি উবাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে যিনি আবূ রহম এর মনীব। তিনি হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে। তিনি বলেন, এমন একজন মহিলার সাথে আমার সাক্ষাৎ হলো যে সুগন্ধি ছড়িয়ে চলছিল। তিনি বললেন, হে প্রতাপশালী আল্লাহ পাক-এর দাসী! তুমি কি মসজিদ হতে আসছো? মহিলা বললো, হ্যাঁ। তিনি তাকে বললেন, তুমি কি সুগন্ধি মেখেছো? সে উত্তরে বললো, হ্যাঁ। এবার তিনি বললেন, আমি আমার প্রাণ প্রিয় আবুল্ কাসিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছ থেকে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন; “আল্লাহ পাক এমন মহিলার নামায কবুল করেন না যে এ মসজিদে আসার জন্য সুগন্ধি মেখেছে। যে পর্যন্ত না সে ফিরে গিয়ে অপবিত্রতার তথা ফরয গোসলের ন্যায় গোসল না করে।” ইবনু মাজাহ্ হাদীস শরীফটি হযরত আবূ বকর বিন আবী শাইবাহ্ থেকে, তিনি সুফিয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন। যিনি ইবনু উয়াইনা হিসেবে পরিচিত।” (তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩য় জিঃ ৪৫৭, ৪৫৮ পৃষ্ঠা, তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল্ আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল্ আহওয়াযী, উরফুশ্ শাযী, আবু দাউদ শরীফ, বযলুল্ মাজহুদ, আউনুল মা’বূদ, শরহু বদরিদ্দীন আইনী, নাসায়ী শরীফ, যখীরায়ে উক্ববা, হাশিয়াতুস্ সুয়ূতী, ইবনু মাজাহ্ শরীফ)
[২১৪৮-২১৪৯]
لايجوز للمراة ان تخرج من بيتها متزينة او متطيبة. (فتاوى المراة المسلمة ج ১ ص ৪৭০، المنتقى من فتاوى فضيلة الشيخ صالح بن فوزان ج ৩ ص ১৯৩)
অর্থঃ- “মহিলাদের জন্য রূপ সজ্জা করে এবং সুগন্ধি ব্যবহার করে বাড়ী থেকে বাইরে বের হওয়া জায়িয নেই।” (ফাতাওয়াল মারওয়াতিল মুসলিমাহ্ ১ম জিঃ ৪৭০, আল মুনতাক্বা মিন ফাযীলাতিশ্ শাইখ ছালিহ বিন ফাওযান ৩য় জিঃ ১৯৩)
[২১৫০]
يجوز لها الطيب اذا كان خروجها الى مجمع النساء ولا تمر فى الطريق على الرجال، اما خروجها باطيب الى ااسواق التى فيها الرجل فلايجوز …….. لقوله حل وعلا. (قرن فى بيوتكن ولا تبرجن تبرج الجاهية الاولى) الا حزاب: ৩৩ ومن اتبرج اظهار المفاتن وامحاسن كالوجة والرأس وغيرهما. (فتاوى امراة المسلمة ج ১ ص ৪৭১)
অর্থঃ- “মহিলা যখন মহিলাদের কাছে মহিলাদের মজলিসে যাবে তখন সুগন্ধি ব্যবহার করা জায়িয হবে। তবে রাস্তায় পুরুষদের পাশ দিয়ে যেতে পারবে না। মহিলা যদি সুগন্ধি মেখে বাজারের দিকে যায়, সেখানে পুরুষেরা থাকে, তবে সেক্ষেত্রে সুগন্ধি মাখা জায়িয নেই। … আল্লাহ জাল্লা ওয়া আল্লা এর বাণীঃ (তোমরা তোমাদের ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করো, প্রথম জাহিলিয়াত যুগের মত সৌন্দর্য প্রকাশ করে বের হয়ো না) সূরা আহযাব ৩৩ নং আয়াত শরীফ। আয়াত শরীফে تبرج ‘তাবাররুজ’ শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হলোঃ ফিতনা ও রূপ-সৌন্দর্যের প্রকাশ যেমন মুখমণ্ডল, মাথা খুলে এবং অন্যান্য তন্মধ্যে আতর বা সুগন্ধি মেখে বাইরে বের হওয়া যাবেনা। (ফাতাওয়াল মারয়াতিল মুসলিমাহ ১ম জিঃ ৪৭১ পৃষ্ঠা)
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, মহিলাদের জন্য আতর বা সুগন্থি মেখে বেগানা বা পরপুরুষের সামনে যাওয়া বাইরে বের হওয়া হারাম। তবে স্বামীর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ঘরের ভিতরে আতর বা সুগন্থি ব্যবহার করা জায়িয রয়েছে।
মহিলাদের চাকুরী বা
ব্যবসা করার হুকুম
আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন,
[২১৫১]
وقرن فى بيوتكن ولاتبرج الجاهلية الاولى. (سورة الاحزاب ৩৩ اية)
অর্থঃ- “তোমরা তোমাদের ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করবে। জাহিলিয়াত যুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না। (সূরাতুল আহযাব ৩৩নং আয়াত শরীফ)
এ আয়াত শরীফের তাফসীরে তাফসীরের কিতাবসমূহে উল্লেখ আছে যে, প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া নিষেধ তথা হারাম। বাইরে সৌন্দর্য প্রদর্শনকারীনী মহিলারাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট। এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে,
[২১৫২]
(وقرن فى بيوتكن) اى الزمن بيوتكن ولا تخرجن لغير جاجة. ولا تفعلن كما تفعل الغافلات، المتسكعات فى الطرقات لغير ضرورة. (ولاتبرجن تبرج الجاهلية الاولى) اى لا تظهرن زينتكن ومحاسنكن للاجانب مثل ماكان نساء الجاهلية يفعلن. (صفوة التفاسير للصابونى ج ২ ص ৪৮১)
অর্থঃ- “(আপনারা ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করুন) অর্থাৎ ঘরে অবস্থান করা আপনাদের জন্য ফরয। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বেড়াবেন না। গাফিল মহিলারা যেরকম করে সেরকম করবেন না। জরুরত ছাড়া রাস্তায় বেড়াবেন না। (জাহিলিয়াত যুগের নারীদের মত নিজেদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়াবেন না) অর্থাৎ নিজেদের রূপ, সৌন্দর্য পরপুরুষের সামনে প্রকাশ করবেন না, যেমনিভাবে জাহিলিয়াত যুগের মহিলারা করেছিল।” (ছাফওয়াতুত্ তাফাসীর লিছ্ ছাবূলী ২য় জিঃ ৪৮১ পৃষ্ঠা)
[২১৫৩]
وقد يحرم عليهن الخروج بل قد يكون كبيرة كخروجهن لزيارة القبور اذا عظمت مفسدته وخروجهن ولو الى المسجد وقد استعطرن وتزين اذا تحققت الفتهة اما اذا ظنت فهو حرام غير كبيرة، وما يجوز من الخروج كالخروج للحج وزيارة والوالدين وعيادة المرضى، وتعزية الاموات من الاقارب ونحو ذلك، فانما يجوز بشروط مذكورة فى محلها. (تفسيرروح المعانى ج ১২ ص ৬)
অর্থঃ- “মহিলাদের জন্য বাইরে বের হওয়া হারাম করা হয়েছে। কেননা এটা কবীরা গুণাহ্, যেমন অনেক ফিৎনার আশঙ্কা নিয়ে কবর যিয়ারত করতে যাওয়া, আতর মেখে সেজে-গুঁজে মসজিদে যাওয়া যাতে ফিৎনার সম্ভাবনা আছে, এগুলো সবই কবীরা গুণাহ্। হজ্বের উদ্দেশ্যে, পিতা-মাতার সাক্ষাতের জন্য, অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করতে এবং নিকটাত্মীয়ের ইন্তিকালে শোকপ্রকাশ করার জন্য পর্দার সাথে বাইরে বের হওয়া অনুরূপ অন্যান্য জরুরতে বাইরে বের হওয়া জায়িয রয়েছে। এগুলো স্থান-কাল পাত্রের শর্ত সাপেক্ষে জায়িয হবে।” (তাফসীরে রুহুল্ মায়ানী ১২ জিঃ ৬ পৃষ্ঠা)
[২১৫৪-২১৫৫]
قوله تعالى (ولاتبرجن تبرج الجاهلية الاولى) ……… واخرج البيهقى فى سنته عن ابى اذينة الصدفى رضى الله عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال شر النساء المتبرجات وهن المنافقات لاتدخل الجنة منهن الامثل الغراب الاعصم. (الدر المنثور ج ৪ ص ১৯৭، بيهقى)
অর্থঃ- “আল্লাহ তায়ালার বাণীঃ (জাহিলিয়াত যুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবেন না) ….. ইমাম বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ‘সুনানের’ মধ্যে হযরত আবু আযীনা ছদাফী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। নিশ্চয়ই হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, বাইরে সৌন্দর্য প্রদর্শনকারী মহিলারাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট, তারাই মুনাফিক মহিলা। তাদের থেকে কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। তবে যে মহিলার রং কাকের মত কালো সে ব্যতীত।” (তাফসীরে দুররুল্ মানছূর ৪র্থ জিঃ ১৯৭ পৃষ্ঠা, বাইহাক্বী শরীফ)
উল্লিখিত দলীল থেকে প্রমাণিত হলো, মহিলারা বিনা প্রয়োজনে বাইরে বের হতে পারবেনা। তাই মা’জুর না হওয়া পর্যন্ত চাকুরী ও ব্যবসার জন্য বের হওয়া যাবে না। কেননা আম বা সাধারণভাবে মেয়েদের চাকুরী করা জায়িয নেই। বরং সম্পূর্ণ হারাম।
মূলতঃ ছেলে হোক মেয়ে হোক সকলেই নাবালিগ বা নাবালিগা অবস্থায় পিতার অধীনে থাকে। তখন পিতার উপর ওয়াজিব উক্ত সন্তানদের লালন-পালন করা। আর মেয়ে যখন বালিগা হয়, তখন পিতার উপর ফরয হয়ে যায় মেয়েকে পাত্রস্থ করা তথা দ্বীনদার পরহিযগার, আল্লাহওয়ালা ছেলে দেখে বিবাহ দেয়া এবং মেয়েদের যখন বিবাহ হয়ে যায়, তখন মেয়েদের ভরণ-পোষণ, দেখাশুনা ইত্যাদির দায়িত্ব পিতার পরিবর্তে স্বামীর উপর বর্তাবে। কারণ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
[২১৫৬-২১৫৮]
الاكلكم راع وكلكم مسئول عن رعيته (بخارى شريف، مسلم شريف، مشكوة شريف)
অর্থঃ- “তোমরা প্রত্যেকেই রক্ষক। আর প্রত্যেকেই তার অধিনস্থদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
তাই, স্বামীর অবর্তমানে মেয়েদের দেখা-শুনা ভরণ-পোষণের জিম্মাদার হয় তাদের ছেলেরা। ছেলে যদি না থাকে, তাহলে উক্ত মহিলার ভাই, ভাতিজা বা অন্য কোন ঘনিষ্ঠ মাহরাম আত্মীয়-স্বজন দেখা শুনা, ভরণ-পোষণের জিম্মাদার হবে। আর যদি কোন মহিলা এমন হয় যে, তার উপরোল্লিখিত কোন প্রকার অভিভাবক বা আত্মীয়-স্বজন না থাকে। তবে উক্ত মহিলার বিবাহ বসার বয়স অর্থাৎ বিবাহের উপযুক্ততা থাকলে, তাকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে স্বামীর মাধ্যমে দেখা শুনা ও ভরণ-পোষণের কাজ সমাধা করতে হবে। আর যদি বিবাহের বয়স না থাকে, তাহলে খিলাফত থাকলে খলীফার তরফ থেকে উক্ত মহিলার ভরণ-পোষণ, দেখা শুনার দায়িত্ব পালিত হবে।
আর যদি অভিভাবক বা আত্মীয়-স্বজন, বিবাহের বয়স এবং খিলাফত ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে শর্ত সাপেক্ষে উক্ত মহিলার চাকুরী করা জায়িয রয়েছে। শর্তগুলো হলো, ১. অভাবগ্রস্থা হতে হবে। অর্থাৎ চাকুরী করা ব্যতীত স্বীয় ভরণ-পোষণের ব্যয় বহন করা কোন মতেই সম্ভব নয়। ২. তাকে শরয়ী পর্দা রক্ষা করে চাকুরী করতে হবে।
পুরুষ ও মহিলার পর্দা
ফরয হওয়ার বয়স
প্রত্যেক পুরুষ মহিলার উপর পর্দা করা ফরযে আইন। যা শরীয়তের বিধান। প্রাপ্ত বয়স্ক ও বয়স্কা তথা বালিগ ও বালিগা হওয়ার পূর্বে কারো উপর শরীয়তের বিধান আরোপিত হয়না। তাই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
[২১৫৯-২১৮০]
عن على رضى الله عنه ان رسول الله صلى اله عليه وسلم قال رفع القلم عن ثلاثة عن النائم حتى يستيقظ وعن الصبى حتى يشب وعن المعتوه حتى يعقل. (ترمذى شريف كتاب الحدود باب ما جاء فيمن لا يجب عليه الحد. تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشذى، بخارى شريف كتاب الحدود، فتح البارى، عمدة القارى، ارشاد السارى، تيسير البارى، ابو داؤد شريف كتاب الحدود، بذل المجهود، عون المعبود، مسند احمد بن حنبل، مشكوة شريف، شرح الطيبى، التعليق الصبيح، مرقاة، لمعات، اشعة اللمعات، مظاهرحق، مراة المناجيح، المعجم المغهرس ا لفاظ الحديث ج ৩ ص ২৪৬)
অর্থঃ- “হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, শরীয়তের বিধান তিন ব্যক্তির উপর থেকে তুলে নেয়া হয়েছে, ১. ঘুমন্ত ব্যক্তি, জাগ্রত হওয়া পর্যন্ত, ২. শিশু বা বালক-বালিকা, বালিগ বা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত এবং ৩. পাগল ব্যক্তি, আক্বল বা হুশ ফিরা পর্যন্ত। (তিরমিযী শরীফ কিতাবুল্ হুদূদ বাবু মা জায়া ফীমান লা ইয়াজিবু আলাইহিল হদ্দ, তুহফাতুল্ আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল আহওয়াযী, উরফুশ্ শাযী, বুখারী শরীফ কিতাবুল্ হুদূদ, ফতহুল্ বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, তাইসীরুল্ বারী, আবূ দাঊদ শরীফ কিতাবুল হুদূদ, বযলুল মাজহুদ, আউনুল মা’বূদ, মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল, মিশকাত শরীফ, শরহুত্ ত্বীবী, আত্ তা’লীকুছ্ ছবীহ, মিরক্বাত, লুময়াত, আশয়াতুল্ লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল মানাজীহ, আল মু’জামুল্ মুফাহ্রাস লিআলফাযিল হাদীছ ৩য় জিঃ ২৪৬ পৃষ্ঠা)
অত্র হাদীছ শরীফের দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কারো উপর পর্দা ফরযে আইন হওয়ার জন্য বালিগ বা বালিগা তথা প্রাপ্তবয়স্ক বা বয়স্কা হওয়া অপরিহার্য। আল্লাহ পাক কুরআন শরীফের সূরা নিসার ৬নং আয়াত শরীফে এবং এর তাফসীরে মুফাস্সিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ মতামত প্রদান করেছেন যে, “আমাদের হানাফী মাযহাব মতে, পুরুষ এবং মহিলা সাধারণতঃ ১৫ বছর বয়সে বালিগ ও বালিগা হয়ে থাকে। তবে মহিলা যদি তাড়াতাড়ি বড় হয় এবং অল্প বয়সেই শারীরিক উন্নতি সাধিত হয় তবে কোন কোন সময় ৯ (নয়) বছর বয়সেই বালিগা হয়ে থাকে। এছাড়াও কোন কোন পুরুষ, মহিলা স্বাভাবিকভাবে ১৫ (পনের) বছরের থেকে কম বয়সেও বালিগ বা বালিগা হতে পারে।
ফিক্বাহের কিতাবে উল্লেখ আছে যে,
[২১৮১-২১৮২]
وفى الاشباه: تد خل على النساء الى خمس عشر سنة حسب. (الدر امختارج ২ ص ৮১)
অর্থঃ- “আশবাহ’ নামক কিতাবে আছে, মহিলারা প্রাপ্ত বয়সে উপনিত হয় তথা বালিগা হয় ১৫ (পনের) বছর বয়সে। (আদ্ দুররুল মুখতার ২য় জিঃ ৮১ পৃষ্ঠা, আশবাহ)
[২১৮৩]
قوله: (الى خمسة عشر) صوابه خمس عشرة، لان المعدود مؤنث مذكور. (فتاوى شامى ج ২ ص ৯১)
অর্থঃ- “আদ্ দুরুল মুখতার’ গ্রন্থকারের উক্তিঃ (পনের (১৫) বছর বয়সে) সঠিক, নির্ভুল তথা বিশুদ্ধ মতে ১৫ (পনের) বছর বয়সে পুরুষ এবং মহিলা বালিগ ও বালিগা হয়ে থাকে।” (ফতওয়ায়ে শামী ২য় জিঃ ৮১ পৃষ্ঠা)
মনে রাখা প্রয়োজন যে, পুরুষ বা মহিলা যে বয়সেই বালিগ বা বালিগা তথা প্রাপ্ত বয়স্ক বা বয়স্কা হোক না কেন তখন থেকেই তাকে শরয়ী পর্দা করতে হবে। পর্দার খিলাফ করলে কবীরা গুনাহে গুনাহগার হতে হবে।
হিজাব বা পর্দার বিধান শুধু
মহিলাদের জন্যই নয়; বরং
পুরুষদেরও পর্দা করতে হবে
প্রত্যেক মু’মিনা, মুসলিমা নারীদের পর্দা করা হলো ফরযে আইন। পর্দার খিলাফ করা নাজায়িয ও হারাম। অনুরূপভাবে প্রত্যেক মু’মিন, মুসলমান পুরুষদের জন্যও পর্দা রক্ষা করা ফরযে আইন। তবে পুরুষদের পর্দা নারীদের পর্দার থেকে কিছুটা ব্যতিক্রম। পুরুষদের পর্দা বলতে বুঝায় হারাম কিছুর দিকে নযর না করা, পরনারী থেকে ইজ্জত-আবরুকে হিফাযত করা, পর নারীর সাথে নিরিবিলী সাক্ষাৎ না করা, কথা না বলা এবং বিনা অনুমতিতে কারো ঘর বা বাড়ীতে প্রবেশ না করা ইত্যাদি।
যেমন, পুরুষদের চক্ষুকে হিফাযত করা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
[২১৮৪]
قل للمؤمنين يغضوا من ابصارهم ويحفظوا فروجهم ذلك ازكى لهم ان الله خبير بما يصنعون. (سورة انور ৩০ اية)
অর্থঃ- “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি মু’মিন পুরুষগণকে বলুন, তারা যেন, তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের ইজ্জত-আবরুকে হিফাযত করে। এতে তাদের জন্য অনেক পবিত্রতা আছে। নিশ্চয়ই তারা যা করে, আল্লাহ পাক তা অবহিত আছেন।” (সূরাতুন্ নূর ৩০নং আয়াত শরীফ)
এ আয়াত শরীফের তাফসীরে পুরুষদের জন্য দৃষ্টি এবং শরমগাহকে হিফাযত করা যে ফরয, ওয়াজিব এবং খিলাফ করা যে হারাম, নাজায়িয নিম্নে সে সম্পর্কিত আলোচনা করা হলো ঃ
১. পুরুষদের দৃষ্টি সংযত করা সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ এবং হুকুম-আহকাম ঃ
[২১৮৫-২১৮৬]
عن الحسن مرسلا قال بلغنى ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لعن الله الناظر والمنظور اليها. (بيهقى فى شعب الايمان. تفسير المظهرى ج ৬ ص ৪৯১)
অর্থঃ- “হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে ‘মুরসাল’ সূত্রে বার্ণিত আছে। তিনি বলেছেন, আমার কাছে সংবাদ পৌছেছে যে, নিশ্চয়ই হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তায়ালার লা’নত (অভিসম্পাত) ঐ সকল পুরুষদের প্রতি যারা পর নারীকে দেখে এবং ঐ সকল নারীদের প্রতি যারা দেখা দেয়।” (বাইহাক্বী ফী শুয়াবিল ঈমান, তাফসীরুল্ মাযহারী ৬ষ্ঠ জিঃ ৪৯১ পৃষ্ঠা)
[২১৮৭-২২০১]
عن بريدة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى اله عليه وسلم لعلى يا على لاتتبع النظرة فان لك الاولى وليست لك الثانية (ابوداؤد شريف، بذل المجهود. عون المعبود. ترمذى شريف. تحفة الاحوذى. عارضة الاحوذى. عرف الشذى، مسند احمد بن حنبل، الفتح الربانى، سنن الدارمى، تفسير الخازن ج ه ص ৬৮، تفسير البغوى ج ه ص ৬৮، نفسير المظهرى ج ৬ ص ৪৯১، تفسير ابن كثير ج ৩ ص ৪৫১، تفسير ايات الاحكام للصابونى ج ২ ص ১৫১)
অর্থঃ- “হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে লক্ষ্য করে বলেছেন, “হে আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! প্রথম দৃষ্টির পর আবার দৃষ্টি দিবেনা। কেননা তোমার প্রথম দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে, কিন্তু দ্বিতীয় দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে না।” (আবূ দাঊদ শরীফ, বযলুল্ মাজহুদ, আউনুল মা’বূদ, তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল আহওয়াযী, উরফুশ শাযী, মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল, আল ফতহুর রব্বানী, সুনানুদ দারিমী, তাফসীরুল খাযিন ৫ম জিঃ ৬৮ পৃষ্ঠা, তাফসীরুল বাগবী ৫ম জিঃ ৬৮ পৃষ্ঠা, তাফীরুল মাযহারী ৬ষ্ঠ জিঃ ৪৯১ পৃষ্ঠা, তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩য় জিঃ ৪৫১ পৃষ্ঠা, তাফসীরে আয়াতুল্ আহকাম লিছ ছাবূনী ২য় জিঃ ১৫১ পৃষ্ঠা)
[২২০২-২২২৩]
عن جرير بن عبد الله البحلى رضى الله عنه قال سالت النبى صلى الله عليه وسلم عن نظرة الفجأة فامرنى ان اصرف بصرى. (مسلم شريف، شرح النووى، شرح الابى والسنوسى، المغهم، فتح المهم، مسند احمد بن حنبل، الفتح الربانى، ابو داود شريف، بذل المجهود، عون المعبود، ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشذى، نسائى شريف، سنن الكبرى للنسائى، نخير العقبى، تفسير اتن كثير ج ৩ ص ৪৫. التفسير المظهرى ج ৬ ص ৪৭১، تفسير الخازنج ৫ ص ৬৮، تفسير التغوى ج ৫ ص ৬৮، تفسير ايات الاحكام الصابونى ج ২ ص ১৫১ )
অর্থঃ- “হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ বাজালী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হঠাৎ পড়ে যাওয়া দৃষ্টি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি আমাকে নির্দেশ দিলেন আমি যেন আমার চোখের দৃষ্টি সঙ্গে সঙ্গে ফিরিয়ে নেই।” (মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী, শরহুল্ উবাই ওয়াস্ সিনূসী, আল মুফহিম, ফতহুল মুলহিম, মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল, আল ফতহুর রব্বানী, আবূ দাঊদ শরীফ, বযলুল্ মাজহুদ, আউনুল মা’বূদ, তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল আহওয়াযী, আরিদ্বতুল আহওয়াযী, উরফুশ্ শাযী, নাসায়ী শরীফ, সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী, যখীরাতুল উক্ববা, তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩য় জিঃ ৪৫০ পৃষ্ঠা, আত্ তাফসীরুল মাযহারী ৬ষ্ঠ জিঃ ৪৯১ পৃষ্ঠা, তাফসীরুল্ খাযিন ৫ম ৬৮ পৃষ্ঠা, তাফসীরুল বাগবী ৫ম জিঃ ৬৮, তাফসীরে আয়াতুল্ আহকাম লিছ ছাবূনী ২য় জিঃ ১৫১ পৃষ্ঠা)
[২২২৪-২২২৫]
عن ابى امامة رضى الله عنه عن النبى صلى الله عليه وسم قال ما من مسلم ينظر الى محاسن امرأة اول مرة ثم يغض بصره الا احدث اله له عبادة يجد حلاوتها. (مسند احمد بن حنبل، الفتح الربانى، التفسير المظهرى ج ৬ ص ৪৯১)
অর্থঃ- “হযরত আবূ উমামা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন; যখন কোন মুসলমান অন্য নারীর সৌন্দর্যের প্রতি প্রথম দৃষ্টি পড়ার সাথে সাথে চক্ষু ফিরিয়ে নিবে, আল্লাহ পাক তাঁর ইবাদতে আনন্দ সৃষ্টি করে দিবেন যাতে সে স্বাদ উপভোগ করবে।” (মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল, আত্ তাফসীরুল্ মাযহারী ৬ষ্ঠ জিঃ ৪৯১)
[২২২৬-২২৩৯]
عن ابى سعيد قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اياكم والجلوس على الطرقات قالوا يا رسول الله لابدلنا من مجالسنا نتحدث فيها فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان ابيتم فاعطوا الطريق حقه، قالوا وما حق الطريق يارسول الله فقال غض البصر وكف الاذى ورد السلام والامر بالمعروف والنهى عن المنكر. (بخارى شريف، فتح البارى، عمدة القارى، ارشاد السارى، تيسير البارى، مشكوة شريف، مرقاة، شرح الطيبى، التعليق الصبيح، معات، اشعة اللمعات، مظاهر حق، مرأة المناجيح، تفسير ابن كثير ج ৩ ص ৪৫১)
অর্থঃ- “হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা রাস্তায় বসা থেকে বেঁচে থাকো। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ আরোজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! রাস্তায় বসা ছাড়া আমাদের কোন গতি নেই, আমরা সেখানে বসে প্রয়োজনীয় কথা-বার্তা বলে থাকি। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন, যদি তোমাদের বসতেই হয়, তবে রাস্তার হক্ব আদায় করো। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ আরোজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! রাস্তার হক্ব কি? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “দৃষ্টি নিম্নগামী করা, কাউকে কষ্ট না দেয়া, সালামের উত্তর দেয়া, সৎ কাজের আদেশ করা এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখা।” (বুখারী শরীফ, ফতহুল্ বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, তাইসীরুল্ বারী, মিশকাত শরীফ, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, আত্ তা’লীকুছ ছবীহ, লুময়াত, আশয়াতুল্ লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল্ মানাজীহ, তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩য় জিঃ ৪৫১ পৃষ্ঠা)
[২২৪০-২২৪১]
عن عبد الله بن مسعود رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان النظر سهم من سهام ابليس مسموم، من تركه مخافتى ابدلته ايمانا يجد حلاوتها فى قلبه (طبرانى شريف، تفسير ابن كثير ج ৩ ص ৪৫২)
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই কুদৃষ্টি শয়তানী তীর সমূহের মধ্যে একটি তীর। (আল্লাহ পাক হাদীছে কুদসীতে বলেন), যে ব্যক্তি আমার ভয়ে নিজের দৃষ্টিকে সংযত রাখে, আমি তাঁর অন্তরে এমন ঈমানের নূর সৃষ্টি করে দেই। যার স্বাদ বা মজা সে অন্তরে উপভোগ করে থাকে।” (ত্ববারানী শরীফ, তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩য় জিঃ ৪৫২ পৃষ্ঠা)
[২২৪২-২২৫৩]
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه سلم كتب على ابن ادم حظه من الزنا ادرك ذلك لامحالة فزنا العينين النظر وزنا اللسان النطق وزنا الاذنين الاستماع وزنا اليدين البطش وزنا الرجلين الخطى والنفس تمنى وتشتهى والفرج يصدق ذلك او يكذيه. (بخارى شريف، فتح البارى، عمدة القارى، ارشاد السارى، تيسير البارى، مسلم شريف، شرح النووى، شرح الابى والسنوسى، المفهم، فتح الملهم، تفسير ابن كثير ج ৩ ص ৪৫২)
অর্থঃ- “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আদম সন্তানের জন্য ব্যভিচারের একটি অংশ লিখে দেয়া হয়েছে। সে অবশ্যই তা পাবে, অন্যথা হবে না। দু’টি চোখের ব্যাভিচার হলো দেখা, জিহবার ব্যভিচার কথা বলা, কানদ্বয়ের ব্যভিচার শ্রবণ করা, হাতের ব্যভিচার ধরা, পায়ের ব্যভিচার ধাবিত হওয়া বা চলা, অন্তর বা নফস আকাঙ্খা বা কামনা করে থাকে, আর লজ্জাস্থান এগুলোকে সত্যে পরিণত করে অথবা মিথ্যায় পরিণত করে।” (বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল কারী, ইরশাদুস্ সারী, তাইসীরুল বারী, মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী, শরহুল উবাই ওয়াস সিনূসী, আল্ মুফহিম, ফতহুল্ মুলহিম, তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩য় জিঃ ৪৫২ পৃষ্ঠা)
[২২৫৩]
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم كل عين باكية يوم القيامة الاعينا غضت عن محارم الله وعينا سهرت فى سبيل الله وعينا يخرج منها مثل رأس الذباب من خشية الله. (تفسير ابن كثير ج ৩ ص ৪৫২)
অর্থঃ- “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কিয়ামতের দিন প্রত্যেক চোখই কাঁদবে। শুধু ঐ চোখ কাঁদবে না, যে চোখ আল্লাহ তায়ালার হারামকৃত জিনিস দেখা থেকে সংযত থেকেছে। আর ঐ সমস্ত চোখ যা আল্লাহ তায়ালার পথে রাত্রি জেগেছে এবং ঐ সমস্ত চোখ যে আল্লাহ তায়ালার ভয়ে কেঁদে অশ্রু বের করেছে। যদিও চোখের অশ্রু মাছির মাথার সমান হয়।” (তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩য় জিঃ ৪৫২ পৃষ্ঠা)
[২২৫৪-২২৬০]
عن ابى سعيدن الخدرى ان رسول اله صلى الله عليه وسم قال لاينظر الرجل الى عورة الرجل ولا المرأة الى عورة المرأة ولا يفضى الرجل الى الرجل فى ثوب واحد ولا تفض المرأة الى المرأة فى ثوب واحد. (مسلم شريف، شرح النووى، شرح الابى والسنوسى، المفهم، فتح الملهم، تفسير الخازن ج ৫ ص ৬৯، التفسيرالمظهرى ج ৬ ص ৪৯৩)
অর্থঃ- “হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কোন পুরুষ অন্য কোন পুরুষের ছতরের দিকে তাকাবেনা, অনুরূপভাবে কোন মহিলা অন্য কোন মহিলার ছতরের দিকে তাকাবেনা। কোন পুরুষ অপর কোন পুরুষের সাথে একই চাদরের নিচে যেন না শোয়, অনুরূপভাবে একজন মহিলা অপর মহিলার সাথে যেন একই চাদরের নিচে না শোয়।” (মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী, শরহুল উবাই ওয়াস্ সিনূসী, আল মুফহিম, ফতহুল মুলহিম, তাফসীরুল খাযিন ৫ম জিঃ ৬৯ পৃষ্ঠা, আত্ তাফসীরুল মাযহারী ৬ষ্ঠ জিঃ ৪৯৩ পৃষ্ঠা)
[২২৬১]
وغضه واجب عن جميع المحرمات. وكل مايخشى الفتنة من اجله. (تفسير القرطبى ج ৬ ص ২২৩)
অর্থঃ- “সকল বেগানা মহিলা থেকে চক্ষুকে নিম্নগামী করা বা সংযত করা ওয়াজিব। আর প্রত্যেক সেই বিষয় থেকে যাতে ফিৎনা-ফাসাদের ভয় আছে।” (তাফসীরুল্ কুরতুবী ৬ষ্ঠ জিঃ ২২৩ পৃষ্ঠা)
[২২৬২]
ان غض الابضار مستعمل فى التحريم لان غضها عن الحلال لايلزم وانما يلزم غضها عن الحرام. (احكام القران لابن اعربى ج ৩ ص ১৩৬৫)
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই দৃষ্টি নিচু করণ, হারাম জিনিষের প্রতি ব্যবহৃত হবে। কেননা, হালালের থেকে নিম্নগামী করণ আবশ্যিক নয়। নিশ্চয়ই হারাম থেকে চক্ষু নিম্নগামী করণ ফরয, ওয়াজিব।” (আহকামুল কুরআন লিইবনিল্ আরাবী ৩য় জিঃ ১৩৬৫ পৃষ্ঠা)
[২২৬৩-২২৭৫]
ماهو حكم النظر الى الا جنبيات؟ حرمت الشريعة الاسلامية النظر الى الاجنبيات فلايحل لرجل ان ينظر الى امرأة غير زوجته او محارمه من النساء. اما نظرة الفجاة فا اثم فيها ولا موأخذة لا نها خارجة عن ارادة الانسان …. وقد قال النبى صلى الله عليه وسلم لعلى. يا على لا تتبع النظرة النظرة فانما لك الاولى وليست لك الثانية. وعن جرير بن عبد الله التجلى قال: سالت رسول الله صلى الله عليه وسلم عن نظرة الفجاة فامرنى ان أصرف بصرى. (تفسير ايات الاحكام ج ২ ص ১৫১، مسلم شريف، شرح النووى، شرح الابى والسنوسى، فتح الملهم للشبير احمد عثمانى، فتح الملهم للتقى عثمانى، المفهم مسند احمد بن حنبل، الفتح الربانى، ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشاذى)
অর্থঃ- “বেগানা নারীদের প্রতি দৃষ্টি দেয়ার হুকুম কি?
জাওয়াবঃ ইসলামী শরীয়ত বেগানা নারীদের প্রতি তাকানোকে হারাম করেছে। পুরুষের জন্য তার স্ত্রী এবং মাহ্রামা মহিলা (যাদেরকে দেখা জায়িয কিন্তু বিবাহ করা হারাম) ব্যতীত অন্যান্য সকল মহিলার প্রতি তাকানো হারাম। হঠাৎ প্রথম দৃষ্টিতে কোন গুনাহ নেই। আর এটা ধর্তব্য নয়। কেননা এটা মানুষের ইচ্ছার বাইরে। ….
হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে লক্ষ্য করে বলেছেন, “হে আলী! প্রথম দৃষ্টির পর পুনরায় দৃষ্টি দিবে না। কেননা তোমার প্রথম দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে, কিন্তু দ্বিতীয় দৃষ্টি ক্ষমা করা হবেনা।” হযরত জারীর বিন আব্দুল্লাহ বাজালী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হঠাৎ দৃষ্টি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি আমাকে নির্দেশ করলেন, আমি যেন আমার দৃষ্টিকে সঙ্গে সঙ্গে ফিরিয়ে নেই।” (তাফসীরে আয়াতুল্ আহকাম লিছ ছাবূনী ২য় জিঃ ১৫১ পৃষ্ঠা, মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী, শরহুল্ উবাই ওয়াস্ সিনূসী, ফতহুল্ মুলহিম লিশ্ শিব্বীর আহমদ উছমানী, ফতহুল্ মুলহিম্ লিত্ তক্বী উছমানী, আল্ মুফহিম, মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল, আল্ ফতর্হু রব্বানী, তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল্ আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল্ আহওয়াযী, উরফুশ্ শাযী)
[২২৭৬]
حرمة النظر الى النساء الاجانب، والتفصيل فيه. الاول ما قال الجصاص: انه امر بغض البصر عما حرم علينا النظر اليه فحذف ذكر ذلك اكتفاء بعلم المخاطبين بالمراد، وقد روى محمد بن اسحاق عن محمدبن ابراهيم عن سلمة بن ابى الطفيل عن على رضى الله تعالى عنه قال: قال رسول اله صلى الله عليه وسلم: ياعلى ان لك كنزا فى الحنة وانك ذو وفر منها فلاتتبع النظرة النظرة فان لك الاولى وليست لك الثانية وروى ابو زرعة عن جرير: انه سأل رسول الله صلى الله عليه وسلم عن نظرة الفجأة فامرنى ان اصرف بصرى”. (احكام القران للشفيح والتهانوى ج ২ ص ৪২০)
অর্থঃ- “বেগানা নারীদের দিকে দৃষ্টি দেয়া হারাম সম্পর্কে আলোচনা। ইমাম জাছ্ছাছ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, চক্ষু নিম্নগামী করার নির্দেশ আমাদের জন্য যাদেরকে দেখা হারাম তাদের সম্পর্কেই। হযরত মুহম্মদ বিন ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত মুহম্মদ বিন ইবরাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত সালামা ইবনে আবু তুফাইল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে, তিনি হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “হে আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু! নিশ্চয়ই আপনার জন্য জান্নাতে বিশেষ ধনভাণ্ডার রয়েছে, আর আপনিই সেই ধন ভান্ডারের মালিক। আপনি প্রথম দৃষ্টির পর পুনরায় দৃষ্টি দিবেন না। কেননা, আপনার প্রথম দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে, কিন্তু দ্বিতীয় দৃষ্টি ক্ষমা করা হবেনা।” হযরত আবূ যুরায়া রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত জারীর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হঠাৎ পড়ে যাওয়া দৃষ্টি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন, “তিনি আমাকে নির্দেশ দেন যে, আমি যেন সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেই।” (আহকামুল কুরআন লিশ্ শফী ওয়াত থানুবী ৩য় জিঃ ৪২০ পৃষ্ঠা)
[২২৭৭]
فامر الله سبحانه وتعالى المؤمنين والمؤمنات يغض الابصار عما لايحل، فلا يحل للرجل ان ينظر الى المرأة ولا المرأة الى الرجل. (تفسير القرطبى ج ৬ ص ২২৭)
অর্থঃ- “আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা মু’মিন পুরুষ ও মহিলাগণকে যা হালাল নয় এমন কিছু থেকে চক্ষুকে ফিরিয়ে রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। কোন পুরুষের জন্য বেগানা নারীর প্রতি তাকানো হালাল বা জায়িয নয়। আর কোন মহিলার জন্য পরপুরুষের দিকে তাকানোও জায়িয বা হালাল নয়।” (তাফসীরুল্ কুরতুবী ৬ষ্ঠ জিঃ ২২৭ পৃষ্ঠা)
উল্লিখিত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, পুরুষ কর্তৃক বেগানা নারীর প্রতি তাকানো হারাম ও নাজায়িয। তাই হারাম থেকে বাঁচার জন্য পুরুষেরও চোখের পর্দা করা ফরযে আইন।
২. পুরুষদের শরমগাহ, ইজ্জত-আবরু হিফাযত করা তথা পর্দা করা ফরযে আইন সম্পর্কিত হাদীছ শরীফের বর্ণনা এবং হুকুম-আহকামঃ
[২২৭৮-২২৯০]
عن بهزبن حكيم عن ابيه عن جده قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم احفظ عورتك الا من زوجتك او ما ملكت يمينك قلت يا رسول اله افرايت اذا كان الرجل خاليا قال فا لله احق ان يستحيى منه. (ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشذى، ابوداؤد شريف، بذل المجهود، عون المعبود، ابن ماجة شريف، مسند احمد بن حنبل، الفتح الربانى، التفسير المظهرى ج ৬ ص ৪৯১، احكام القران ابن المربى ج ৩ ص ১৩৬৫، احكام القران للقرطبى ج ২ ص ২২৩)
অর্থঃ- “হযরত বাহ্য বিন হাকীম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি তাঁর পিতা থেকে, তিনি তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তুমি তোমার স্ত্রী এবং দাসী ব্যতীত অন্যান্য নারীদের থেকে ইজ্জত-আবরু তথা সতরকে হিফাযত কর। আমি (রাবী) আরজ করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যদি কোন ব্যক্তি একাকী থাকে তাহলে তার হুকুম কি? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন, আল্লাহ পাক অধিক হক্বদার, যেন তাঁকে লজ্জা করা হয় এ বিষয়ে।” (তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল্ আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল্ আহওয়াযী, উরফুশ্ শাযী, আবূ দাঊদ শরীফ, বযলুল মাজহুদ, আউনুল মা’বুদ, ইবনু মাজাহ শরীফ, মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল, আল ফতহুর রব্বানী, আত্ তাফসীরুল মাযহারী ৬ষ্ঠ জিঃ ৪৯১ পৃষ্ঠা, আহকামুল কুরআন লি ইবনিল আরাবী ৩য় জিঃ ১৩৬৫ পৃষ্ঠা, আহকামুল্ কুরআন লিল কুরতুবী ৬ষ্ঠ জিঃ ২২৩ পৃষ্ঠা)
[২২৯১-২২৯৫]
عن ابن عمر رضى الله عنهما قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اياكم والتعرى فان معكم من لايفارقكم الا عند الغائط وحين يفضى الرجل الى اهله فاستحيوهم واكرموهم. (ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف اشذى، التفسير المظهرى ج ৬ ص ৪৯১)
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাুহ আনহুমা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা বস্ত্রহীনতা থেকে নিজেদের রক্ষা করো। কেননা, নিশ্চয়ই তোমাদের সাথে সর্বদাই ফেরেশ্তা বিদ্যমান থাকেন। তারা তোমাদের থেকে প্রাকৃতিক প্রয়োজন ও স্ত্রীর নিকটবর্তী হওয়ার সময় ছাড়া পৃথক হননা। তাই তোমরা তাঁদেরকে লজ্জা করো এবং তাঁদেরকে সম্মান দেখাও।”(তিরমিযী শরীফ, তুহাফাতুল্ আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল আহওয়াযী, উরফুশ্ শাযী, আত্ তাফসীরুল্ মাযহারী ৬ষ্ঠ জিঃ ৪৯১ পৃষ্ঠা)
[২২৯৬-২২৯৭]
وقد ذكرت عائشة رسول اله صلى الله عليه وسلم وحالها معه فقالت مارأيت ذلك منه ولا رأى ذلك منى، (احكم القران لابن العربى ج ৩ ص ১২৬৫، احكم القران للقرطبى ج ৬ ص ২২৪)
অর্থঃ- “হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে যখন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা একান্তে বাস করতেন তার বর্ণনা দিয়ে তিনি নিজেই বলেছেন, আমি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছতরের দিকে কোন দিন দৃষ্টি দেইনি এবং তিনিও আমার ছতরের দিকে কোন দিন নযর দেননি।” (আহকামুল কুরআন লি ইবনিল্ আরাবী ৩য় জিঃ ১৩৬৫ পৃষ্ঠা, আহকামুল কুরআন লিল্ কুরতুবী ৬ষ্ঠ জিঃ ২২৪ পৃষ্ঠা)
[২২৯৮-২৩০৬]
الخامسة: بهذه الاية حرم العلماء نصا دخول احمام بغير مئزر وقد روى عن ابن عمر انه قال: اطيب ما انفق الرجل درهم يعطيه للحمام فى خلوة …………
قلت: اما دخول الحمام فى هذه الازمان فحرام على اهل الفضل والدين لغلبة الجهل على الناس واستسهالهم. (احكام القران للقرطبى ج ৬ ص ২২৪، ابو داود شريف، بذل المجهوه، عون امعبود، شرح بدر الدين العينى، ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشذى)
অর্থ: “পঞ্চম মাসয়ালা: এ আয়াত শরীফকে দলীল গ্রহণ করে উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ ইযার ছাড়া হামমাম খানায় তথা গোসলখানায় প্রবেশ করাকে হারাম ফতওয়া দিয়েছেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি নির্জন গোসলের জন্য নির্জন গোসলখানা তৈরী করতে এক দিরহাম ব্যয় করে তা অধিক পবিত্র। …….. আমি বলি, এ যামানায় হামমাম খানায় ইয়ার ছাড়া প্রবেশ করা হারাম ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতে। মানুষের মধ্যে অধিক জিহালতী ও গাফলতী আসার কারণে।” (আহকামুল কুরআন লিল কুরতুবী ৬ষ্ঠ জি: ২২৪ পৃষ্ঠা, আবূ দাউদ শরীফ, বযলুল মাজহুদ, আুনুল মা’বুদ, শরহে বদরুদ্দীন আইনী, তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল আহওয়াযী, উরফুশ শাযী।)
(২৩০৭)
(ويحفظوا فروجهم) اى عما لايحل هم من الزنا واللواطة … (ذلك) اى ماذكر من الغض والحفظ (ازكى لهم) اى اطهر من دنس الريبة. (تفسير روح المعانى ج ১০ ص ১৩৯)
অর্থ:- “(তারা যেন তাদের ইজ্জত-আবরুকে হিফাযত করে) অর্থাৎ মহলার সাথে ব্যভিচার ও লাওয়াতাত তথা পুরুষের সাথে ব্যভিচার যা তাদের জন্য হালাল নয় তার থেকে।……. (এটাতে) অর্থাৎ উল্লেখিত চক্ষু নি¤œগামীকরণ ও উজ্জত-আবরু হিফাযত করণের মধ্যে (তাদের জন্য অনেক পবিত্রতা) অর্থাৎ এতে সন্দেহ-সংশয়মূলক অপবিত্রতা থেকেও পরিচ্ছন্নতা আছে।” (তাফসীরে রুহুল মায়ানী ১০ জি: ১৩৯ পৃষ্ঠা)
উপরোক্ত বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহর মাধ্যমে প্রমাণিত হলো যে, মহিলাদের যেমন পর্দা করা ফরয। তেমনিভাবে পুরুষদেরও দৃষ্টি হিফাযত করার মাধ্যমে পর্দা করা ফরয। তেমনিভাবে পুরুষদেরও দৃষ্টি হিফাযত করার মাধ্যমে পর্দা করা ফরয। যা প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ ও মহিলার জন্যই ফরয ও ওয়াজিব। তাই স্পষ্ট হলো যে, পর্দা শুধু মহিলাদের জন্যই ফরয নয়, বরং পুরুদেরও পর্দা রয়েছে। যা রক্ষা করে চলা ফরয, ওয়াজিব বা ফরযে আইন।
হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন অস্বীকারকারীদের সম্পর্কে শরয়ী বিধান বা ফয়সালা
হিজাব বা পর্দা করা ফরযে আইন। যা কুরআন শরীফ-এর অসংখ্য আয়াত শরীফ এবং অসংখ্য হাদীছ শরীফ দবারা ফরয হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছে। তাই পর্দা করার ফরযিয়াত অস্বীকারকারী ব্যক্তি কাফির হবে। কারণ, মহান আললাহ পাক স্বয়ং উনার বিধান বা হুকুম অমান্যকারী ব্যক্তিকে কাফির হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন।
যেমন, আল্লাহ পাক বলেন-
(২৩০৮)
ومن م يحكم بما انزل تللخ فاولئك هم الكفرون. (سورة المائدة ৪৪ اية)
অর্থ: “আল্লাহ পাক যা নাযিল করেছেন, সে অনুযায়ী যারা হুকুম-ফায়সালা করেনা, তারাই কাফির।” (সূরাতুল মায়িদা ৪৪ নং আয়াত শরীফ)
অর্থাৎ আল্লাহ পাক কুরআন শরীফ-এ যা নির্দেশ করেছেন এবং উনার ব্যাখ্যায় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা নির্দেশ করেছেন তথা কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ, উজমা ও ক্বিয়াসে যা সাব্যস্ত হয়েছে, সে সমস্ত শরয়ী হুকুমকে যারা অসবীকার বা অবজ্ঞা করে তারা কাফির। যাদের জন্য জাহান্নামই যথেষ্ট। তেমনিভাবে হিজাব বা পর্দাও কুরআন শরীফ এবং অসংখ্য হাদীছ শরীফ দ্বারা ফরয হয়েছে, তাই এর অস্বীকারকারীরাও কাফির।
যেমন, কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে,
(২৩০৯)
الحكم الاول: هل يجب الحجاب على جميع النساء؟ يدل ظاهر الاية الكريمة على ان الحجاب مفروض على جميع المؤمنات (المكلفات شرعا) وهن: (المسلمات الحرائر البالغات) لقوله تعالى: (يايها النبى قل لازواجك وبنا نك ونساء المؤمنين ………)
الاية. فلا يجب الحجاب على الكافرة اليها لانها لاتكلف بفروع الاسلام. وقد امرنا ان نتركهن وما يدينون، ولان (الحجاب) عبادة لما فيه من امتثال امر الله عزوجل، فهوبالنسبة للمسلمة كفريضة الصلاة والصيام، فاذا تركته المسلمة جحودا فهو(كافرة) مرتدة عن الاسلام، واذ تر كته- تقليدا للمجتمع الفاسد، مع اعتقادها بفرضيته فهى (عاصية) مخالفة لتعاليم القران (ولاتبرجن تبرج الجاهلية الاولى). تفسير ايات الاحكام للصابونى ج ২ ص ৩৮০)
অর্থ: “প্রথম হুকুম: হিজাব বা পর্দা করা কি সকল মহিলাদের জন্যই ফরয?
(জাওয়াব): কুরআন শরীফ-এর স্পষ্ট আয়াতে কারীমা থেকে প্রমাণিত যে, নিশ্চয়ই হিজাব বা পর্দা সকল মু’মিনা মহিলাদের জন্য ফরয (যারা শরীয়তের মুকাল্লিফা অর্থাৎ প্রাপ্ত বয়স্কা) আর তারা (মুসলিমা, স্বাধীনা, বালিগা মহিলা)। আল্লাহ তায়ালঅর বাণী, “হে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে এবং মু’মিনগণের স্ত্রীগণকে বলুন………।” সূরা আহযাব ৫৯ নং আয়াত শরীফ। কাফির মহিলার উপর হিজাব বা পর্দা ফরয নয়, কেননা, সে ইসলামের বিধানে আদিষ্ট নয়। আর আমাদের মুসলমানগণকে নির্দেশ করা হয়েছে যে, আমরা যেন তাদের ধর্মকে পরিত্যাগ করে চলি। অপর দিকে হিজাব বা পর্দা হচ্ছে একটি ইবাদত, যাতে আল্লাহ পাক উনার নির্দেশের আনুগত্য করা হয়। তা মুসলমান মহিলাদের জন্য ফরযে আইন, যেমনিভাবে নামায ও রোযা তাদের জন্য ফরযে আইন। যদি কোন মুসলমান মহিলা (পুরুষ) হিজাব বা পর্দাকে অস্বীকৃতির সাথে বা অবজ্ঞার সাথে ত্যাগ করে, তাহলে সে (কাফির হবে) ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে অর্থাৎ মুরতাদ হবে। আর যদি কেউ কোন ভ্রান্ত দলের অনুসরণে তরক করে, তবে তার বিশ্বাস রয়েছে এটা ফরয, তাহলে সে (গুনাহগার হবে, কাফির হবে না।) কুরআন শরীফ-এর নির্দেশের খিলাফকারী হবে। আল্লাহ তায়ালার বাণী: “তোমরা জাহিলিয়াত যুগের মহিলাদের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেরিওনা।” সূরা আযাব ৩৩নং আয়াত শরীফ।” (তাফসীরে আয়াতুল আহকাম লিছ ছবূনী ২য় জি: ৩৮০ পৃষ্ঠা)
উল্লেখিত দলীলের ভিত্তিতে অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো যে, হিজাব বা পর্দা রক্ষা করা প্রত্যেক পুরুষ ও মহিলাদের জন্য ফরযে আইন। এর অস্বীকারকারী কাফির। ইসলামী শরীয়তে যাকে ‘মুরতাদ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আর মুরতাদের শাস্তি হলো, তার জিন্দেগীর সমস্ত আমল বাতিল হবে, হজ্জ করে থাকলে হজ্জ বাতিল হবে, বিবাহিত হলে স্ত্রী তালাক হবে। ইসলামী খিলাফত থাকলে তাকে তওবা করার জন্য তিনদিন সময় দেয়া হবে। এর মধ্যে তওবা না করলে তার শাস্তি মৃত্যুদ-।
ইসলামী শরীয়তে নারী নেতৃত্ব হারাম এবং তার মূল কারণ
মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন নারী নেতৃত্বের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারী করেছেন। তেমনিভাবে উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও নারী নেতৃত্বের কুফলতার কথা ব্যক্ত করেছেন। তাই ইসলামী শরীয়তে নারী নেতৃত্বকে হারাম ও নাজায়িয ফতওয়া দেয়া হয়েছে। এর পিছনে কতগুলো কারণ বিদ্যমান রয়েছে।
নি¤েœ সে কারণগুলো দলীল-আদিল্লা ভিত্তিক আলোচনা করা হলো-
১. আল্লাহ পাক উনার নিষেধাজ্ঞা: আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন কুরাআন শরীফ-এ নারীদের উপরে যে পুরুষদের অভিভাবকত্য চলবে, তথা পুরুষদের উপরে নারীদের নেতৃত্ব হারাম এ বিষয়ে জানিয়ে দিয়ে বলেছেন,
(২৩১০)
الرجال قومون على النساء بما فضل الله بعضهم على بعض. (سورة النساء ৩৪ اية)
অর্থ: “পুরুষেরা নারীদের উপরে কর্তৃত্ব করবে। এজন্য যে, আল্লাহ পাক একের উপর অন্যের মর্যাদা দান করেছেন। (সূরাতুন নিসা ৩৪ নং আয়াত শরীফ)
এ আয়াত শরীফ-এর তাফসীরে উল্লেখ আছে,
(২৩১১)
(الرجال قومون) مسلطون (على النساء) يؤدبونهن وياخذون على ايديهن (بما فضل الله بعضهم على بعض) اى تتفضيلة لهم عليهن العلم والعقل والولاية وغير ذاك. (تفسير الجلالين)
অর্থ: “(পুরুষেরা কর্তৃত্ব করবে) নেতৃত্ব করবে বা সুলতান হবে (নারীদের উপর) তাদেরকে আদব শিক্ষা দিবে এবং তাদের সমস্ত দায়িত্ব নিবে। (এজন্য যে, আল্লাহ পাক উনার উপর অন্যের কর্তৃত্ব দান করেছেন) অর্থাৎ মহিলাদের উপর পুরুষদের মর্যাদা দিয়েছেন ইলম আক্বল অভিভাবকত্ব এবং অন্যান্য বিষয়ে।” (তাফসীরুল জালালাইন)
ইবারতটি থেকে জানা যায় যে, সব সময়ের জন্য মহিলাদের উপর পুরষরাই কর্তৃত্ব করবেন। খলীফা হবেন পুরুষ, মুজাদ্দিদ হবেন পুরুষ, ইমাম হবেন পুরুষ, কাযী হবেন পুরুষ, গভর্ণর হবেন পুরুষ। তাই নারীদের পক্ষে পুরুষদের উপর কর্তৃত্ব করার কোন অধিকার নেই।
২. হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারী নেতৃত্বের ব্যাপারে কুফলতা বর্ণনা করেছেন। যেমন-
(২৩১২-২৩১৭)
حدثنا عثمان بن الهيثم حدثنا عوف عن احين عن ابى بكرة قال لقد نفعنى الله بكلمة ايام الجمل لما بلغ النبى صلى الله عليه وسلم ان فارسا ملكوا ابنة كسرى قال لن يفلح قوم ولوا امرهم امرأة (بخارى شريف كتاب الفن، فتح البارى، عمدة القارى، ارشاد السارى، شرح الكرمانى، تيسير البارى)
অর্থ:- “হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, হযরত উছমান বিন হাইছাম রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত আউফ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আবূ বাকরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে। তিনি বলেন, একটি কথা বা হাদীছ দ্বারা আল্লাহ পাক জঙ্গে জামাল বা উষ্ট্রের যুদ্ধের সময় আমাকে বড়ই উপকৃত করেছেন। ( সে হাদীছ শরীফটি হলো) হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট যখন এ সংবাদ পৌছালো যে, ফারিস বা পারস্যের লোকেরা কিসরার কন্যাকে তাদের শাসক নিযুক্ত করেছে। তখন তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রিশাদ করলেন, “সে জাতি কখনোই সফলকাম হবে না, যারা তাদের শাসনভার নারীর হাতে অর্পন করে।” (বুখারী শরীফ কিতাবুল ফিতান, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস সারী, শরহুল কিরমানী, তাইসীরুল বারী)
(২৩১৮-২৩২৩)
عن ابى بكرة قال عصمنى الله بشئ سمعته من رسول الله صلى اله عليه وسلم لما هلك كسرى قال من استخلفوا قالوا ابنته فقال النبى صلى الله عليه وسلم لن يفلح قوم ولوا امرهم امرأة قال فلما قدمت عائشة تعنى البصرة ذكرت قول رسول الله صلى اله عليه وسلم فعصمنى الله به. (ترمذى شريف ابواب الفتن، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشذى، نسائى شريف، ذخيرة العقبى)
অর্থ: “হযরত আবূ বাকরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছ থেকে শুনা একটি হাদীছ শরীফ দ্বারা আল্লাহ পাক আমাকে রক্ষা করেছেন। পারস্য স¤্রাট কিসরা নিহত হলে তিনি জিজ্ঞাসা করেন, তারা কাকে শাসক বানিয়েছে? হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম বললেন, তার কন্যাকে। তখন হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করলেন, সে জাতি কখনোই সফলকাম হবে না, যারা তাদের শাসনভার নারীর হাতে তুলে দেয়। রাবী বলেন, যখন হযরত আশিয়া ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম বসরায় উপস্থিত হলেন, তখন হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ঐ হাদীছ শরীফ স্মরণ হলো। অত:পর এর দ্বারাই আল্লাহ পাক আমাকে (হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ থেকে) রক্ষা করেন।” (তিরমিযী শরীফ আবওয়াবুল ফিতান অনুচ্ছেদ যে জাতি নারীকে নিজেদের শাসক নিয়োগ করে, তুহফাতুল আহওয়াবী, আরিদ্বাতুল আহওয়াযী, উরফুশ শাযী, নাসায়ী শরীফ, বখীরাতুল উক্ববা)
(২৩২৪-২৩২৭)
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كان امراؤكم خياركم واغنياؤكم سمحاءكم واموركم شورى بينكم فظهر الارض خيرلكم من بطنها واذا كان امراؤكم شراركم واغنياؤكم بخلائكم واموركم الى نسائكم فبطن الارض خيرلكم من طهرها. (ترمذى شريف ابواب الفتن، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشذى)
অর্থ:- “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মোবারক করেছেন, যখন তোমাদের মধ্যকার উত্তম লোক (পুরুষ) তোমাদের শাসক হবে, তোমাদের ধনবানরা দানশীল হবে এবং তোমাদের কাজ-কর্ম পরামর্শের ভিত্তিতে বা মজলিসে শুরা’র ভিত্তিতে সম্পন্ন হবে, তখন জমিনের পেটের তুলনায় জমিনের পিঠই তোমাদের জন্য উত্তম হবে। আর যখন তোমাদের মধ্যকার নিকৃষ্ট লোক তোমাদের শাসক হবে, তোমাদের ধনবানরা কৃপন হবে এবং তোমাদের কার্যাবলী তোমাদের নারীদের উপর ন্যস্ত হবে, তখন জমিনের পিঠের তুলনায় জমিনের পেটই তোমাদের জন্য উত্তম হবে। (অর্থাৎ জীবনের চেয়ে ইন্তিকাল উত্তম হবে) (তিরমিযী শরীফ আবওয়াবুল ফিতান, তুহফাতুল আহওয়াযী, ারিদ্বাতুল আহওয়াযী, উরফুশ শাযী)
উল্লিখিত হাদীছ শরীফগুলো থেকে প্রমাণিত হলো যে, নারীদেরকে যে জাতি শাসক হিসেবে নির্বাচন করবে সে জাতির ইহকাল ও পরকাল কোন কালেই মঙ্গল হবে না। আর নারী নেতৃত্ব ফিতনা-ফাসাদের কারণ হয়ে থাকে।
৩. মহিলারা হচ্ছে পর্দার অধীন। তারা ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করবে। বিশেষ জরুরত ছাড়া বাড়ীর বাইরে যাওয়া তাদের জন্য হারাম এবং তাদের জন্য শাসক হওয়া জায়িয নেই: কারণ, মহিলা শাসক দেশের প্রধান অথবা সমাজ নেত্রী হলে বেপর্দা হওয়অর কারণে অবশ্যই আল্লাহ পাক উনার লা’নতের অধিকারী হবে। তাই শরীয়তে নারী নেতৃত্ব হারাম বা নাজায়িয হিসেবে ফতওয়া দেয়া হয়েছে। যার অস্বীকারকারীরা কাফির তথা মুরতাদ। নি¤েœ মহিলাদের ক্ষেত্র যে ঘরের অভ্যন্তর, নেত্রী বা শাসক হওয়া যে তাদের ক্ষেত্র নয়।
এ সম্পর্কে দলীল-আদিল্লাহ সম্বলিত আলোচনা উপস্থাপন করা হলো-
(২৩২৮)
وقرن فى بيوتكن ولاتبرحن تبرج الجاهلية الاولى. (سورة الاحزاب ৩৩ اية)
অর্থ:- “তোমরা তোমাদের ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করো। জাহিলিয়াত যুগের মত সৌন্দর্যতা প্রদর্শন করে বাইরে বেড়িওনা।” (সূরাতুল আহযাব ৩৩নং আয়াত শরীফ) অত্র আয়াত শরীফ-এ বলা হয়েছে, মহিলারা ঘরে থাকবে।” তাদের জন্য বাইরে বের হওয়া জায়িয নেই। শাসক হলে তো বাইরে বের হওয়ার কারণে আল্লাহ পাক উনার বিধান লঙ্ঘন হওয়ায় গুনাহগার হতে হবে। বিশেষ জরুরতের কথা আলাদা। মহিলা শাসক হলে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় বেপর্দা হওয়ার কারণে নিজেও গুনাহগার হবে এবং যারা দেখবে তারাও গুনাহগার ও লা’নতগ্রস্থ হবে। তাই মহিলা নেতৃত্ব হারাম নাজায়িয।
(২৩২৯)
ان اتقيتن فلاتخضعن باقو فيطمع الذى فى قلبه مرض وقلن قولا معروفا. (سورة الاحزاب ৩২ اية)
অর্থ:- “যদি আল্লাহ পাক উনার ভয় করেন, তবে পুরুষদের সাথে কোমল আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলবেন না। ফলে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে সে ব্যক্তি কু-বাসনা করবে। আপনারা শক্তভাবে কথা-বার্তা বলবেন।” (সূরাতুল আহযাব ৩২ নং আয়াত শরীফ)
অত্র আয়াত শরীফ-এর মধ্যে পুরুষদের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয়ভাবে কথা বলতে নিসেধ করা হয়েছে। কারণ এতে ফাসিক-ফুজজার এবং খারাপ লোকেরা কু-মতলব করে ধ্বংস ডেকে আনে। বিনা প্রয়োজনে পুরুষদের সাথে মহিলাদের কথা বলা জায়িয নেই। পক্ষান্তরে নেত্রী বা শাসক হলে তাকে বিভিন্ন স্বভাবের লোকের সাথে কথা বলতে হবে এবং দেখা করতে হবে। যা শরীয়তে সম্পূর্ণ নিষেধ তথা হারাম ও নাযায়িয। ার যদি আয়াত শরীফ-এর আমল করতে গিয়ে পর্দায় থেকে শক্তভাবে কথা বলে, তবে শাসকের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে দেশের অবনতি তরান্বিত হবে। কারণ কাফির, ফাসিক-ফুজ্জাররা তো কুরআন শরীফ-এর বিধান মানতে রাজী নয়। তাই প্রমাণিত হলো যে, নারীদের শাসক হওয়া বা নেত্রী হওয়া জায়িয নেই। এটাই দ্বীন ইসলামের ফতওয়া।
(২৩৩০-২৩৪১)
عن عبد الله رضى الله عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال ان المرأة عورة فاذا خرجت استشرفها الشيطان واقرب ماتكون بروحة ربها وهى فى قعر بيتها. (ترمذى شريف، تحفة الاحوذى عارضة الاحوذى، عرف الشذى، مشكوة شريف، شرح الطيبى، مرقاة، التعليق الصبيح، لمعات، اشعة اللمعات، مظاهر حق، مرأة المناجيح)
অর্থ:- “হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই মহিলা পর্দার অধিন। যখন সে ঘর থেকে বাইরে বের হয় তখন শয়তান (পাপ কাজ করানোর জন্য) তার দিকে উঁকি-ঝুঁকি মারে। সে তার রব আল্লাহ পাক উনার রহমতের নিকটবর্তী হয় তখনই, যখন ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করতে থাকে।” (তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল আহওয়াযী, ারিদ্বাতুল আহওয়াযী, উরফুশ শাযী, মিশকাত শরীফ, শরহুত ত্বীবী, মিরকাত, আত তা’লীকুছ ছবীহ, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল মানাজীহ)
অত্র হাদীছ শরীফ খানা এবং অন্যান্য হাদীছ শরীফ থেকে প্রমাণিত হয় যে, মহিলারা পর্দায় থাকবে, বাইরে বের হবে না, বের হলে শয়তান ওয়াসওয়াসা দিয়ে গুনাহের কাজ সংঘটিত করাবে। তাহলে মহিলাদের জন্য কিতাবে নেতৃত্ব দেয়া জায়িয হবে।
উল্লেখিত আলোচনার ভিত্তিতে যে সমস্ত কারণে নারী নেতৃত্ব হারাম তার একটি তালিকা দেয়া হলো:
১. আল্লাহ পাক উনার বাণী নারীদের উপর পুরুষদের অভিভাবকত্ব বা নেতৃত্ব চলবে।
২. আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারী নেতৃত্বের ব্যাপারে ইহকাল ও পরকালীন অকল্যাণ ও কুফলতার কথা ব্যক্ত করেছেন।
৩. নারী নেতৃত্ব দিলে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় বেপর্দা হতে হবেই। যা সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম।
৪. অকারণে বা অগ্রহণযোগ্য কারণে বাড়ীর বাইরে বের হতে হবে। এটাও আল্লাহ তায়ালার বিধানের খিলাফ কাজ।
৫. ইচ্ছায় অনিচ্ছায় বেগানা পুরুষদের সাথে কথা বলতে হবে বা তাদের ফরিয়াদ শুনতে হবে। অথচ কুরআন কারীমে মহিলাদের কন্ঠস্বরকেও পর্দার আওতাভুক্ত করা হয়েছে।
৬. মহিলাদের আক্বল পুরুষদের আক্বলের তুলনায় অর্ধেক।
৭. মহিলার স্বাক্ষী পুরুষদের সাক্ষীর অর্ধেক।
৮. মহিলার জন্য পুরুষের ইমামতি করা জায়িয নেই।
৯. বিবিধ উল্লেখযোগ্য কারণে মহিলাদের নেতৃত্ব জায়িয নেই। তন্মধ্যে বেপর্দা হওয়ার বিষয়টি অন্যতম।
ইছলাহে ক্বলব বা অন্তর শুদ্ধ হলেও বেগানা মহিলাদের সাথে সাক্ষাৎ করা জায়িয হবে না
ঈমান বা আক্বীদা শুদ্ধ হওয়ার পর একটা মানুষের জন্য যেমন- নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি ইবাদত ফরয হয়ে যায়। নামায, রোযা ইত্যাদি ইবাদত যেমন ওয়াক্ত অথবা সময় সাপেক্ষে ফরযে আইন। তেমনি পর্দাও প্রাপ্ত বয়স্ক বা বয়স্কা হওয়ার পর ইন্তিকাল পর্যন্ত ফরযে আইন। নামায, রোযা ইত্যাদি ইবাদতের কাযা রয়েছে কিন্তু পর্দার কোন কাযা নেই। তাই শরীয়তে পর্দার খিলাফ খুবই মারাত্মক অপরাধ ও গুনাহ।
ওলীআল্লাহ হোক, আলিম হোক, মাওলানা হোক, আবিদ হোক, আম-সাধারণ লোক হোক, ফাসিক হোক প্রত্যেকের জন্যই পর্দার বিধান সমান। বেগানা মহিলাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করা কথা বলা নির্জনে অবস্থান করা কারো জন্যই জায়িয নেই। সে যে শ্রেণীর ব্যক্তি হোক না কেন। তাই অন্তর শুদ্ধ বা ইছলাহে কা’লব হলেই তার জন্য পর্দা ও অনুরূপ ফরয, ওয়াজিব এবং সুন্নাতে মুয়াক্কাদা ইত্যাদি ইবাদতসমূহ ছেড়ে দেয়া জায়িয হবে না। কারণ এগুলো আল্লাহ পাক ুনার বিধান, যা ইন্তিকালের পূর্ব পর্যন্ত, পালন করে চলতেই হবে। যদি আল্লাহ পাক এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি অর্জন করতে হয়। কিন্তু আজকাল কিছু ভ- ফকীর এবং যাহিরী ফকীর বা উলামায়ে সূ’রা বলে থাকে যে, অন্তর ঠিক হলেই আর পর্দার দরকার নেই। (নাঊযুবিল্লাহ) তাই তারা মহিলাদের হাতে হাত ধরে বাইয়াত করে এবং সামনে নিয়ে বেপর্দার সাথে তা’লীম দেয়।
যারা বলে, ‘অন্তরের পর্দা বড় পর্দা, বাহ্যিক পর্দার কোন মুল্য নেই। তাদের এ রকম আক্বীদা বা বিশ্বাস গ্রহণযোগ্য নয় বরং কুফরীমূলক। এ আক্বীদা রাখা জায়িয হবে না। এর থেকে খালিছ তওবা করা ফরয-ওয়াজিব। তারা তাদের ভ্রান্ত আক্বীদার পক্ষে কুরআন শরীফ থেকে দলীল পেশ করে থাকে। অথচ তারা যে আয়াত শরীফ খানা দলীল হিসেবে পেশ করে থাকে তার ব্যাখ্যা এবং মর্মার্থ সম্পর্কে না বুঝার কারণে তারা তাদের আক্বীদাকে নষ্ট করেছে বা ভ্রান্ত করেছে।
আয়াত শরীফ খানা হলো-
(২৩৪২)
فسبح بحمد ربك وكن من السجدين، واعبد ربك حتى يأتيك اليقين. (سورة الحجر ৯৯، ৯৮ ايتان)
অর্থ:- “অতএব আপনি আপনার রব বা প্রতিপালকের তাছবীহ পাঠ করুন, প্রশংসার সাথে এবং সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান। এবং আপনার রব এর ইবাদত করুন, মউত আসা পর্যন্ত।” (সূরাতুল হিজর ৯৮, ৯৯নং আয়াত শরীফ)
ভ- ফকীররা এ আয়াতের ব্যাখ্যা করে এভাবে যে “আপনার রবের ইবাদত করুন, বিশ্বাস আসা পর্যন্ত।” নাঊযুবিল্লাহ!
অর্থাৎ তাদের মতে ঈমান আক্বীদা শুদ্ধ হলে এবং আত্মশুদ্ধি হলে আর কোন ইবাদত করা লাগবেনা। নাঊযুবিল্লাহ!
তাদের এ ব্যাখ্যা কুরাআন শরীফ, হাদীছ শরীফ-এর সস্পূর্ণ খিলাফ, অপব্যাখ্যামূলক, মনগড়া, মিথ্যা, সুবিধাবাদী এবং ধোকা প্রসূত। যা বিশ্ববিখ্যাত, সর্বজনমান্য সমস্ত তাফসীরের খিলাফ।
যেমন, তাফসীরের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে যে,
(২৩৪৩-২৩৫৯)
(واعبد ربك حتى يأتيك اليقين) الموت. (تفسير الجلالين، حاشية الصاوى على الجلالين، حاشية الجمل على اجلالين، تفسير المظهرى.)
অর্থ:- “(আপনার রব-এর ইবাদত করুন ইয়াক্বীন আসা পর্যন্ত) অর্থাৎ মৃত-ইন্তিকাল পর্যন্ত। (তাফসীরুল জালালাইন, হাশিয়াতুছ ছাবী আলাল জালঅলাইন, হাশিয়াতুল জামাল আলাল জালালাইন, তাফসীরুল মাযহারী)
এছাড়াও তাফসীরে আহকামুল কুরআন লিল জাছছাছ, আহকামুল কুরআন লি ইবনিল আরাবী, তাসীরুল কুরতুবী, তাফসীরুল বাগবী, তাফসীরুল খাযিন, তাফসীরে ইবনে কাছীর, তাফসীরে ত্ববারী, তাফসীরে দূরবে মানছুর, তাফসীর ত্ববারানী, তাফসীরে বাইযাবী, তাফসীরে রূহুল বয়ান, তাফসীরে রূহুল মায়ানী, সাফওয়াতুত তাফাসীর ইত্যাদি তাফসীর এবং এছাড়াও অসংখ্য তাফসীরের কিতাবে আয়াত শরীফ-এর يقين ‘ইয়াক্বীন’ শব্দের ব্যাখ্যা করা হয়েছে, موت ‘মউত বা ইন্তিকাল’ হিসেবে।
তাই আয়াত শরীফ-এর অপব্যাখ্যা করে পর্দার বিধানকে মানুষের থেকে হালকা করার কোনই পথ নেই। অন্যান্য ইবাদতের মত পর্দাও ফরযে আইন। তাই ‘অন্তর ঠিক হলে মহিলাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করা জায়িয হবে। এমন বক্তব্য কুফরীমূলক। যে বা যারা এমন আক্বীদা রাখবে এবং বক্তব্য পেশ করবে সে বা তারা কাফির হবে।
যে সকল নামধারী পীর, মাওলানা, আলিম, ইমাম, খতীব বেগানা মহিলাদের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের পিছনে নামায পড়ার শরয়ী হুকুম বা বিধান
মহিলাদের সাথে সাক্ষাৎ করা বা বেপর্দা হওয়া হারাম ও নাজায়িয। আর যারা অহরহ হারাম কাজ করে থাকে তারা হলো ফাসিক। ফাসিকের পিছনে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। তবে জামায়াতের খাতিরে জায়িয। যেমন ফিক্বাহের কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে,
(২৩৬০-২৩৬২)
هجوز امامة الاعرابى والاعمى والعبد ورلد الزنا والفاسق كذا فى الخلاصة الاانها تكره هكذا فى المتون. (الفتاوى العالكيرية ج ১ ص ৮৫، خلاصة، متون)
অর্থ:- “অসদাচারী লোক, অন্ধলোক, গোলাম বা দাস, ব্যভিচারের সন্তান এবং ফাসিক ব্যক্তির ইমামতী জায়িয। যেমনটি ‘খুলাছা’য় আছে। তবে নিশ্চয়ই বিশুদ্ধ মতে তা মাকরূহ তাহরীমী। অনুরূপ ‘মাত’ন’ নামক কিতাবে আছে।” (আল ফাতাওয়াল আলমগীরিয়া ১ম জি: ৮৫ পৃষ্ঠা, খুলাছা, মাতূন)
আর যারা বেগানা মহিলাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করাকে জায়িয মনে করে থাকে, তারা কাফির কারণ শরীয়তের বিধানে যারা হারামকে হালাল বলে বা জানে এবং হালালকে হারাম বলে বা জােিন তারা কাফির। আর কাফিরের পিছনে নামায পড়া জায়িয নেই। যারা বাতিল ফিরকার অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু নিজেদেরকে হকব বলে দাবী করে, তাদের পিছনেও নামায পড়া জায়িয হবে না। তেমনিভাবে যারা হিজাব বা পর্দঅর মত ফরযে আইন বিধানকে অমান্য করে বেপর্দা হয় বা নারীর সাথে গোপনে, প্রকাশ্যে, মিছিল, মিটিং তথা অহরহ দেখা সাক্ষাৎ করে এবং বলে তাকে এ যুগে এত পর্দা লাগেনা, এক রকম পর্দা করলেই চলে তাদের পিছনে নামায পড়া জায়িয নেই।
অনুরূপভাবে খারিজী, রাফিয়ী, ওহাবী, ‘কাদিয়ানী, শিয়া, কদরীয়া, জাবরিয়া, জাহমীয়া, মুশাব্বিহা এবং যারা কুরআন শরীফকে ‘মুখলুক’ বলে তাদের সকলের পিছনে নামায পড়া নাজায়িয-হারাম। যদি কেউ এমন ব্যক্তির পিছনে নামায পড়ে তাহলে তাকে নামায দোহরানো ফরয-ওয়াজিব। নামায না দোহরালে নামায তরকের গুনাহে গুনাহগার হবে।
ফিক্বাহের কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে,
(২৩৬৩)
ولا تجوز خلف الرفضى وجهمى وقدرى والمشبهة ومن يقول بخلق القران. (الفتاوى العالمكيرية ج ১ ص ৮৪)
অর্থ:- “রাফিযী, জাহমী, কাদরী, মুশাব্বিহা এবং যারা কুরআন শরীফকে মাখলুক বলে, এমন ব্যক্তিদের পিছনে নামায পড়া জায়িয নেই।” (আল ফাতাওয়াল আলমগীরিয়া ১ম জি: ৮৪ পৃষ্ঠা)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, সকল মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিছ, মুফাসসির, শাইখুল হাদীছ, শাইখুত তাফসীর, খতীব, ছুফী, দরবেশ, পীর, ওয়ায়িয ও আমীন নামধারী ব্যক্তিরা হিজাব বা পর্দাকে ফরয বলে জানে কিন্তু নিজে পর্দা করেনা; বরং বেপর্দা হয়, বেগানা মহিলাদের সাথে দেখা করে, মিটিং করে, বেগানা মহিলাদের সাথে বসে ইফতার করে তারা চরম স্তরের ফাসিক। তাদের পিছনে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। আর যারা বলে বর্তমানে পর্দার প্রয়োজন নেই, এত পর্দা লাগেনা, ইসলামী আইন কায়িমের জন্য বেপর্দা হওয়ার প্রয়োজন আছে, অর্থাৎ পর্দাকে অস্বীকার করে তারা কাট্টা কাফির। তাদের পিছনে নামায পড়া সম্পূর্ণই হারাম ও কুফরী। যেমনিভাবে কাদিয়ানী, বাহাই, শিয়া, খারিজী ইত্যাদি ইত্যাদি ফিরক্বার লোকদের পিছনে নামায পড়া হারাম ও কুফরী।
আমরাদ বা দাড়ি-মোচ বিহিন সুদর্শন বালকের প্রতি শাহওয়াতের সাথে তাকানো হারাম, নাজায়িয
(২৩৬৪)
وقد قال كثير من السلف: انهم كانوا ينهون ان يحد الرجل نظره الى الامرد، وقدشدد كثير من ائمة الصوفية فى ذلك، وحرمة طائفة من اهل العم لما فيه من الافتتان، وشدد اخرون فى ذلك كثيرا جدا. (تفسير ابن كثير ج ৩ ص ৪৫০، ৪৫১، ৪৫২)
অর্থ:- অধিকাংশ সলফে ছালিহীন ইমাম মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ বলেছেন, নিশ্চয়ই তারা পুরুষদেরকে ‘আমরাদ তথা দাঁড়ি-মোচ বিহীন সুন্দর বালকদের প্রতি তাকাতে নিষেদ করেছেন অর্থাৎ শাহওয়াতের সাথে তাদের দিকে দৃষ্টি দেয়া হারাম। ছুফিয়ানে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ এ ব্যাপারে অনেক কঠোরতার সাথে নিষেধ করেছেন। আহলে ইলম তথা ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের একটা বিরাট দল আমরাদ তথা দাঁড়ি-মোচ বিহীন সুন্দর বালকদের প্রতি তাকানোকে ফিৎনার আশংকায় হারাম ফতওয়া দিয়েছেন। আর অপর কেউ কেউ এটাকে কবীরা গুণাহ বলেছেন।” (তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩য় জি: ৪৫০, ৪৫১, ৪৫২ পৃষ্ঠা)
(২৩৬৫)
ولايجوز انظر اليه بشهوة كوجه امرد. (تنوير الابصار)
অর্থ:- “আমরাদ’ তথা দাড়ি-মোচ বিহীন সুদর্শন বালকের চেহারা বা মুখম-লের প্রতি শাহওয়াত বা খারাপ মনোভাবের সাথে দৃষ্টি দেয়া জায়িয নেই। (তানবীরুল আবছার)
(২৩৬৬)
فانه يحرم النظر الى وجهما ووجه الامرد اذا شك فى الشهوة. (الدر المختار)
অর্থ:- “বেগানা মহিলার মুখম-ল বা চেহারার দিকে দৃষ্টি দেয়া হারাম। অনুরূপভাবে ‘আমরাদ’ তথা দাড়ি-মোচ বিহিন সুদর্শন বালকের মুখম-লের দিকে শাহওয়াতের সাথে তাকানোও হারাম।” (আদদুরুরল মুখতার)
(২৩৬৭-২৩৬৮)
قال السيد الامام ابو القاسم: يعنى لايحل النظر اليه عن شهوة واما الخلو والنظر اليه لا عن شهوة لاباس به، ولهذا لم يؤمر بالنقاب. (ردالمختار، شامى ج ২ ص ৮০)
অর্থ:- “হযরত সাইয়্যিদ ইমাম আবুল ক্বাসিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ‘আমরাদ-এর দিকে শাহওয়াত বা কু-দৃষ্টিতে তাকানো হালাল নয় বা জায়িয নয়। নিড়িবিলি থাকা অবস্থায় তর দিকে শাওওয়াত বা কু-দুষ্টি ছাড়া তাকালে কোন গুনাহ হবে না। এজন্য আমবাদ বা দাড়ি-মোচ বিহীন সুদর্শন বালক নেকাব বা মুখম-ল ঢাকার ব্যাপারে আদিষ্টিত নয়।” (রদ্দুল মুহতার, শামী ২য় জি:, ৮০ পৃষ্ঠা)
(২৩৬৯-২৩৭০)
ويستفاد من تشبيه وجه المرأة بوحه الامرد ان حرمة النظر اليه بشهوة اعظم اثما لان خشية الفتنة به اعظم منها. (رد المحتار، شامى ج ২ ص ৮০)
অর্থ:- “আমরাদ’-এর চেহারা মহিলার চেহারার সাথে তাশবীহ বা সাদৃশ্যশীল। নিশ্চয়ই আমরাদের দিকে শাহওয়াতের সাথে দৃষ্টি দেয়ার মত হারাম কাজ বড় গুনাহের কারণ। কেননা, এতে বড় ধরনের ফিতনা-ফাসাদের ভয় রয়েছে।” (রদ্দুল মুহতার, শামী যয় জি: ৮০ পৃষ্ঠা)
‘ামরাদ এর পরিচয় এবং হুকুম সম্পর্কে ফতওয়ায়ে শামী’র ২য় খ-ের ৮০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত রয়েছে যে,
(২৩৭১-২৩৭৪)
قوله: (كوجه امرد) هو الشاب الذى طر شاربه ولم تبت لحيته، قاموس، قال فى الملتقط: الغلام اذا بلغ مبلغ الرجال ولم يكن صبيحا فحكمه حكم الرجال، وان كان صبيحا فحكمه حكم النساء، وهو عورة من فوقه الى قدمه. (ردالمحتار، شامى ح ২ ص ৮০، قاموس، ملتقط)
অর্থ:- “তানবীরুল আবছার মুছান্নিফের উক্তি (যেমন আমরাদের চোহারা) ‘আমরাদ’ বলা হয় এমন যুবককে, যার মোচ কেবল উঠা শুরু করেছে, কিন্তু দাঁড়ি গজায়নি। ‘কামূস’। ‘মুলতাকাত্ব’ এর মুছান্নিফ মুলতাকাত্বে লিখেছেন, বালক যখন প্রাপ্ত বয়সে পৌঁ,ে তার যদি কোন সৌন্দর্যতা না তাকে, তাহলে তার হুকুম হবে পুরুষের মত। আর যদি তার সৌন্দর্যতা থাকে, তাহেল (তাকে দেখার বিষয়ে) তর হুকুম হবে মহিলাদের দেখার মত। সে তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত সমস্ত অঙ্গই আবরণীয়। (রদ্দুল মুহতর, শামী ২য় জি: ৮০ পৃষ্ঠা, কামূছ, মুলতাকাত্ব)
উল্লিখিত অসংখ্য দলীল-আদিল্লা থেকে প্রমাণিত হলো যে, ‘আমরাদ’ তথা সুদর্শন বালকের দিকে শাহওয়াতের সাথে তাকানো হারাম ও নাজায়িয। কারণ আমরাদের চেহারা মহিলার চেহারার অনুরূপ। পর মহিলাদের দিকে তাকালে যেমন কবীরা গুণাহ হয়, তেমনিভাবে শাহওয়াতের সাথে আমরাদের দিকে তাকালেও কবীরা গুনাহ হয়। পার্থক্য হলো মহিলাদের দিকে তাকানো কবীরা গুণাহের কারণ হওয়ার ব্যাপারে শাহওয়াত শর্ত নয়। কিন্তু আমরাদের দিকে তাকালে কবীরা গুণাহ হওয়ার ব্যাপারে শাহওয়াত শর্ত।
আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার লজ্জাশীলতা এবং হিজাব বা পর্দার আমল
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার লজ্জাশীলতা এবং পর্দাশীলতা ছিল তুলনাবিহীন। যা চিন্তা ফিকিরের বাইরে। তিনিই তো সমস্ত মানুষকে পর্দা এবং লজ্জাশীলতা শিক্ষা দিয়েছেন। বেপর্দা হওয়া হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে খুবই কষ্টদায়ক ছিল। তাই আল্লাহ পাক মু’মিন ও মুসলমানগণকে লক্ষ্য করে বলেছেন যে, যাতে তারা তাদের নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ঘরে বেপর্দার সাথে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ না করে।
যেমন, আল্লাহ পাক কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেছেন,
(২৩৭৫)
يايها الذين امنوا لا تدخلوا بيوت النبى الا ان يؤذن لكم. (سورة الاحزاب ৫২)
অর্থ:- “হে মু’মিনগণ! তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া না হলে তোমরা তোমাদের নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ঘরে প্রবেশ করো না। (সূরাতুল আহযাব-৫৩ নং আয়াত শরীফ)
হাদীছ শরীফেও সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার লজ্জাশীলতা এবং বেপর্দা না হওয়ার প্রতি গুরুতেবর বিষয়গুলো বর্ণিত আছে।
যেমন হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত হয়েছে,
(২৩৭৬-২৪০০)
عن انس رضى الله عنه قال بنى على النبى صلى الله عليه وسلم بزينب ابنة جحش بخبز ولحم فارسلت على الطعام داعيا فيجئ قوم فيأكلون وخرجون ثم يجئ قوم فياكون يخرءجون فدعوت حتى مااجد احدا ادعو فقلت يأنبى الله ما اجد احدا اد عوه، قال ارفعوا طعامكم، وبقى ثلاثة رهط يتحدثون فى البيت فخرج النبى صلى اله عليه وسلم فانطلق الى حجرة عائشة، فقال السلام عليكم اهل البيت ورحمة الله فقالت وعليك السلام ورحمخة الله كيف وجدت اهلك بارك اله لك فتفرى حجر نسائه، كلهن يقول لهن كما يقول عائشة، ويقلن له كما قالت عائشة ثم رجع النبى صلى الله فاذا ثلاثة من رهط فى اليت يتحدثون وكان النبى صلى الله عليه وسلم شديد الحياء فخرج منطلقا نحوحجرة عائشة فما ادرى اخبرته اواخبر ان القوم خرجوا فرجع حتى اذا وضع رجله فى اسكفة الباب داخلة واخرى خارجة ارخى الستر بينى وبينه، وانزلت اية احجاب. (بخارى شريف كتاب التفسير سورة الاحزاب، فتح البارى، عمدة القارى، ارشاد السارى، شرح الكرمانى، تيسير البارى، مسلم شريف، شرح النووى، فتح الملهم، المفهم، تفسير القرطبى، تفسير الطبرى، تفسيز المظهرى، تفسير الخازن، تفسير البغوى، تفسير احكام القران للجصاص، احكام القران لابن العربى، تفسير ابن كثير، تفسير شيخ زاده، حاشية الشهاب، تفسير السمرقندى، تفسير ورح اليان، تفسير روح المعانى، تفسير الماوردى، تفسير كمالين)
অর্থ:- “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত যয়নব বিনতে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু আনহা উনার ওলীমা উপলক্ষে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছু রুটি গোশতের ব্যবস্থা করলেন। তারপর আমাকে লোকদেরকে খাবার খাওয়ানোর জন্য ডেকে আনতে পাঠালেন। একদল লোক এসে খেয়ে বেল হয়ে গেল। এরপর আবার আমি ডাকতে গেলাম কিন্তু কাউকে আর ডেকে পেলাম না। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আর কাউকে ডেকে পাচ্ছি না। তিনি বললেন, খানা উঠিয়ে নাও। তখন তিন ব্যক্তি ঘরে রয়ে গেল; তারা কথাবার্তা বলছিল। তখন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বের হয়ে হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা উনার হুজরা শরীফ-এর দিকে গেলেন এবং বললেন, আস সালামু আলাইকুম আহলাল বাইত ওয়া রহমতুল্লাহ। হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা বললেন, ওয়া আলাইকাস সালাম ওয়া রহমতুল্লাহ। আল্লাহ পাক আপনাকে বরকত দিন, আপনার আহলকে কেমন পেলেন? এভাবে তিনি পর্যয়ক্রমে সব উম্মুল মু’মিনীনগণের হুজরায় গেলেন এবং হযরত আয়িশা ছিদদীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে যেমন বলেছেন তাদেরও অনুরূপ বললেন। আর তারা উনাকে সে জবাবই দিয়েছিলেন যেমন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম দিয়েছিলেন। তারপর নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফিরে এসে তিন ব্যক্তিকেই ঘরে আলাপে মশগুল দেখতে পেলেন। হযরত নরবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুব লাজুক ছিলেন। তাই তাদের দেখে লজ্জা পেয়ে আবার হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার হুজরা শরীফ-এর দিকে গেলেন। তখন ামি স্বরণ করতে পারছি না, অন্য কেউ না ামি তাকে লোকদের বের হয়ে যাওয়ার খবর দিলাম। তিনি ফিরে এসে দরজার চৌকাঠের ভিতরে এক পাক মুবারক ও বাইরে এক পা মুবারক রেখে আমার ও উনার মধ্যে পর্দা ঝুলিয়ে দিলেন এমনি সময় আল্লাহ পাক পর্দার ায়াত শরীফ নাযিল করেন।” (বুখারী শরীফ কিতাবুল তাফসীর সূরাতুল আহযাব, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস সারী, শরহুল কিরমানী, তাইসীরুল বারী, মুসলিম শরীফ, শরহুন নববী, ফতহুল মুলহিম, আল মুফহিম, তাফসীরুল কুরতুবী, তাফসীরুত তাবারী, তাফসীরুল মাযহারী, তাফসীরুল খাযিন, তাফসীরুল বাগবী, তাফসীরে আহকামুল কুরআন লিল জাছছাছ, আহকামুল কুরআন লি ইবনিল আরাবী, তাফসীরে ইবনে কাছীর, তাফসীরে শাইখ যাদাহ, হাশিয়াতুশ শিহাব, তাফসীরুস সমরকান্দী, তাফসীরে রূহুল বয়ান, তাফসীরে রূহুল মায়ানী, তাফসীরুল মাওয়ারাদী, তাফসীরে কামলাইন)
(২৪০১-২৪১০)
عن ام سلمة انها كانت عند رسول الله صلى الله عليه وسلم وميمونة رضى الله عنهما اذ اقب ابن ام مكتوم فد خل عيله (وذلك بعد ما امرنا بالحجاب) فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم احتجبا منه فقت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم اليس هو اعمى لايبصرنا فقا رسول الله صلى الله عليه وسلم افعمياوان انتما الستما تبصرانه. (مسند احمد بن حنبل، الفتح الربانى، ابوداؤد شريف، بذل المجهود، عون المعبود، ترمذى شري، تحفة ااحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشذى، التفسير المظهرى ج ৬ ص ৪৯২)
অর্থ: “হযরত উম্মু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। একদা তিনি এবং হযরত মাইমুনা রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে বসা ছিলেন। এমনি সময় সেখানে উপস্থিত হলেন অন্ধ ছাহাবী হযরত উবনু উম্মে মাকতুম রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এবং উনার কাছে প্রবেশ করলেন। (এ ঘটনা আমাদের কাছে পর্দার বিধান নাযিলের পর) হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তোমরা দু’জন উনার থেকে পর্দা কর। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তিনি কি অন্ধ নন? তিনি তো আমাদেরকে দেখতে পাচ্ছেন না। উত্তরে হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরাও কি অন্ধ? তোমরাও কি উনাকে দেখতে পাচ্ছো না?” (মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল, আল ফতহুর রব্বানী, আবু দাউদ শরীফ, বযলুল মাজহুদ, আউনুল মা’বুদ, তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল আহওয়াযী, উরফুশ শাযী, আত তাফসীরুল মাযহারী ৬ষ্ঠ জি: ৪৯২ পৃষ্ঠা)
(২৪১১-২৪২১)
عن ابن عباس قال جائت امرأة من خثعم عام حجة الوداع قات يا رسو اله ان فريضة الله على عباده فى الحج ادركت ابى شيخا كبيرا لا يستطيع ان يستوى عى الراحلة فهل يقضى عنه ان احج عنه قال نعم قال ابن عباس كان الفضل ينظر اليها وتنظر اليه فجعل النبى صى الله عليه وسلم يصرف وجه الفضل الى الشق الاخر. (بخارى شريف، البارى، عمدة القارى، ارساد السارى، شرح الكرمانى، تيسير ابارى، ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشذى، التفسير المظهرى ج ৬ ص ৪৯২)
অর্থ:- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বিদায় হজ্জের বছর খাছয়াম গোত্রের একজন মহিলা ছাহাবী এসে হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উনার বান্দাগণের উপর যে হজ্জ ফরয করেছেন, তা আমার পিতার উপরেও ফরয হয়েছে। কিন্তু তিনি অত্যন্ত বৃদ্ধ হয়েছেন। কোন বাহনে আরোহী হওয়ার সামর্থ ও শক্তি তার নেই। এখন ামি যদি উনার পক্ষ থেকে হজ্জ সম্পন্ন করি। তাহলে তা কি আদায় হবে? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন হ্যাঁ, হবে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বা রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, সে সময় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে আরোহী হযরত ফযল রদ্বিয়াল্লাহু আনহু মহিলাটির দিকে দেখছিলেন, আর মহিলাটিও উনার দিকে দেখছিলেন। হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ফযল রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার মুখম-ল বা চেহারা অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিলেন। (বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস সারী, তাইসীরুল বারী, শরহুল কিরমানী, তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল আহওয়াযী, আরিদবাতুল আহওয়াযী, উরফুশ শাযী, আত তাফসীরুল মাযহারী ৬ষ্ঠ জি: ৪৯২ পৃষ্ঠা)
(২৪২২-২৪২৩)
عن بهز ابن حكيم عن ابيه عن جده معاوية بن حيدة القشيرى قال قلت يارسول الله صلى اله عيه وسم عوراتنا ما ناتى منها وما نذر؟ قال احفظ عورتك الا من زوجك او ما ملكت يمينك فقا ارحل يكون مع الرحل؟ قال ان استطعت الايراها احد فافعل قت فالرجل يكون خاليا؟ قال الله احق ان يستحيا منه. وقد ذكرت عائشة رسو الله صلى الله عليه وسلم وحالها معه فقالت ما رايت ذلك منه ولا رأى ذلك منى. (احكام القران لابن العربى ج ৩ ص ১৩৬৫، احكام الران للقرطبى ج ৬ ص ২২৪)
মা অর্থ:- “হযরত বাহয ইবনে হাক্বীম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি উনার পিতা থেকে, তিনি উনার দাদা হযরত মুয়াবিয়া বিন হাইদা আল কুশাইরী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি আরজ করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাদের কাছে আমাদের কিছু মহিলা আসেন। আমরা কি সর্ত থাকবো? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম জবাবে বললেন, তুমি তোমার স্ত্রী ও অধিকারভুক্ত দাসী ছাড়া অন্যান্যদের থেকে ইজ্জত ও আবরুকে হিফাযত করো। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এক পুরুষের সাথে অন্য পুরুষের হুকুম কি? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ালাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, চেষ্টা করবে যাতে কেউ সতর না দেখে। অতএব, এটাই করবে। আমি আরজ করলাম যদি কোন পুরুষ একাকীত্বে অবস্থান করে তাহলে তার হুকুম কি? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আল্লাহ পাক অধিক হক্বদার, যেন মানুষেরা তাকে লজ্জা করে চলে।
হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে যখন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম একান্তবাস করতেন উনার বর্ণনা দিয়ে তিনি নিজেই বলেন, আমি হুযূর পাক ছল্লাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সতরের দিকে কোন দিন দৃষ্টি দেইনি এবং তিনিও আমার সতরের দিকে কোন দিন দৃষ্টি দেননি। (আহকামুল কুরআন লি ইবনিল আরাবী ৩য় জি: ১৩৬৫ পৃষ্ঠা, আহকামুল কুরান লিল কুরতুবী ৬ষ্ঠ জি: ২২৪ পৃষ্ঠা)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, স্বয়ং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পরিপূর্ণরূপেই হিজাব বা পর্দা করেছেন। অর্থাৎ তিনি পরিপূর্ণ শরয়ী হিজাব বা পর্দা পালন করে উম্মতদেরকে শরয়ী হিজাব বা পর্দার বিধান শিক্ষা দিয়েছেন। তাই আমাদের উচিত হিজাব বা পর্দার ক্ষেত্রে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পরিপূর্ণ অনুসরণ করা।
হযরত উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্নাগণের হিজা বা পর্দা
আল্লাহ পাক হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম উনার জন্য এমন পবিত্র করে সৃষ্টি করেছেন যে, হিজাব বা পর্দঅর বিধান নাযিলের পূর্ব থেকেই উনারা লজ্জাশীলতার সাথে শালিনতা বজায় রেখে চলতেন যখন আল্লাহ পাক বিশুদ্ধ মতে পঞ্চম হিজরী সনের যিলক্বদ মাসে, মহিলাদের জন্য হিজাব বা পর্দায় থাকাকে ফরয, ওয়াজিব বা আবশ্যিক করে দিলেন, তখন থেকে হযরত উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্নাগণ যে তুলনাহীনভাবে পর্দা পালন করেছিলেন তা ভাষায় ব্যক্ত করে শেষ করার মত নয়। কুরআন শরীফ-এ আল্লাহ পাক উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্নাগণকে লক্ষ্য করে ইরশাদ করেছেন,
(২৪২৪)
واذا سالمموهن متاعا فسألوهن من رأء حجاب ذلكم اطهر لقلوبكم وقلوبهن. (سورة الاحزاب ৫৩)
অর্থ:- “(হে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ) আপনারা উনাদের (অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীনগণ আলাইহাস সালাম) কাছ থেকে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাবেন। এটা আপনাদের অন্তরের জন্য এবং উনাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। (সূরাতুল আহযাব ৫৩ নং আয়াত শরীফ)
(২৪২৪)
لاجناح عليهن فى ابائهن ولا ابنائهن ولا اخوانهن ولا ابناء اخوانهن ولا ابناء اخوانهن ولا ابناء اخواتهن ولا نسائهن ولا ما ملكت ايمانهن واتقين الله ان الله كان على كل شيئ شهيدا. (سورة الاحزاب. ৫৫-৫৪)
অর্থ:- “ উম্মুল মু’মিনীন (রদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্না)গণের জন্যে উনাদের পিতা, পুত্র, ভাই, ভাতিজা, ভাগিনা, সহধর্মিনী নারী এবং অধিকারভুকত দাসীগণের সামনে যাওয়ার ব্যাপারে গুণাহ নেই। আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক সর্ব বিষয় প্রত্যক্ষ করেন।” (সূরা আহযাব/৪৫, ৫৫)
(২৪২৬)
يااها النبى قل لازواجك وبنتك ونساء المؤمنين يدنين عليهن من جلابيبهن ذلك ادنى ان يعرفن فلايؤذين وكان اه غفورا رحيما. (سورة الاحزاب ৫৯)
অর্থ:- “হে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার স্ত্রী অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীনগণকে ও কন্যাগণকে এবং মু’মিনগণের স্ত্রীগণকে বলুন, উনারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের উপর টেনে নেন। এতে তাদেরকে চিনা সহজ হবে। ফলে উনাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ পাক ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা আহযাব/৫৯)
(২৪২৭)
ينساء انبى لستن كاحد من النساء ان اتقيتن فلاتخضعن بالقول فيطمع الذى فى قلبه مرض وقلن قولا معروفا. وقرن فى بيوتكن ولا تبرحن تبرج الحاهية الاوى واقمن اصلوة واتين الزكوة واطعن الله ورسولة انما يريد الله يذهب عنكم الرجس اهل البيت ويطهر كم تطهيرا. (سورة الاحزاب ৩২-৩৩)
অর্থ:- “হে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্ত্রী অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীনগণ! আপনারা অন্য নারীদের মত নন। যদি আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করেন, তবে পুরুষদের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলবেন না, ফলে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে সে ব্যক্তি কুবাসনা করবে, আপনারা শক্ত করে কথা-বার্তা বলবেন। আপনারা ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করবেন। জাহিলিয়াত যুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করবেন না। নামায কায়িম করবেন, যাকাত প্রদান করবেন এবং আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুগত্য করবেন হে আহলে বাইতগণ! আল্লাহ পাক চান আপনাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং আপনাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে।” (সূরা আহযাব ৩২, ৩৩)
উল্লিখিত আয়াত শরীফগুলো নাযিলের পর উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্নাগণ এবং মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্নাগণ আর কখনো বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হননি। খুবই সতর্কতার সাথে পর্দার মধ্যে থাকতেন। যার প্রমাণ হাদীছ শরীফ-এর মধ্যে পাওয়া যায়। যেমন, হাদীছ শরীফ-এর কিতাবসমূহে বর্ণিত হয়েছে,
(২৪২৮-২৪৩৩)
وقال عمروبن على حدثنا ابو عاصم قال ابن حريج اخبرنا قال اخبرنى عطاء اذ منع ابن هشام النساء الطواف مع الرجال قال كيف يمنعهن وقد طاف نساء النبى صلى الله عليه وسلم مع الرجال قلت ابعد الحجاب او قبل قال اى لعمرى لقد ادركته بعد الحجاب قلت كيف يخالطن الرجال قال لم يكن يخالطن كانت عانشة رضى الله عنها تطوف حجرة من الرجال لاتخالطهم فقالت امرأة انطلقى نستلم ياام المؤمنين قالت عنك وابت يخرجن متنكراب بالليل فيطفن مع الرجال ولكنهن كن اذا دخلن البيت قمن حتى يدخلن واخرج الرجال وكنت اتى عائشة انا وعبيد بن عمير وهى مجاورة فى جوف ثبير قلت وما حجابها قال هى فى قبة تركية لها غشاء وما بيننا وبينها غير ذلك. (بخارى شريف كتاب الحج باب طواف النساء مع الرجال، فتح البارى، عمدة القارى، ارشاد السارى، شرح الكرمانى، تيسير البارى)
অর্থ:- “(হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন) হযরত আমর ইবনে আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেন, হযরত আবূ আছিম রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে খবর পৌঁছান হযরত ইবন জুরাইজ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমার কাছে খবর দেন হযরত আত্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি। (হযরত আত্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন) যখন হযরত ইবনু হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি মহিলাদেরকে পুরুষের সাথে তাওয়াফ করতে নিষেধ করেন, তখন হযরত আত্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আপনি কি করে নিষেধ করছেন? অথচ হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সহধর্মীনীগণ পুরুষগণের সাথে তাওয়াফ করেছেন। আমি (ইবনু হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি) উনাকে (হযরত আত্বা রহমতুল্লাহি আলাইহিকে) প্রশ্ন করলাম, তা কি পর্দার আয়াত নাযিল হওয়ার পরে, না পূর্বে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমার জীবনের কসম, আমি পর্দার আয়াত নাযিল বা অবতীর্ণ হওয়ার পরের কথাই বলছি। আমি জানতে চাইলাম, পুরুষগণ মহিলাগণের সাথে মিশে কিভাবে তাওয়াফ করতেন? (উত্তরে বললেন) বরং হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম পুরুষগেণর পাশ কাটিয়ে তাওয়াফ করতেন, তাদের মাঝে মিশে যেতেন না। একদা জনৈকা মহিলা হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে বললেন, চলুন, উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম তাওয়াফ করে আসি। তিনি জবাব দিলেন, “তোমার মন চাইলে তুমি যাও” তিনি নিজে যেতে অস্বীকার করলেন। উনারা রাতের বেলা পর্দার সাথে বের হয়ে (সম্পূর্ণ না মিশে পুরুষগণের পাশাপাশি থেকে তাওয়াফ করতেন। উম্মুল মু’মিনীনগণ বাইতুল্লাহ শরীফ-এর অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে চাইলে সকল পুরুষ বের করে না দেয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতেন।
হযরত আত্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হযরত উবাইদ ইবনে উমাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং আমি হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা উনার কাছে গেলাম। তিনি তখন ‘ছবীর’ পর্বতে অবস্থান করছিলেন। (হযরত ইবনু জুরাইজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন) আমি প্রশ্ন করলাম, তখন তিনি কি দিয়ে পর্দা করেছিলেন? হযরত আত্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তখন তিনি পর্দা ঝুলান তুর্কী তাঁবুতে চিলেন, এাড়া উনার ও আমাদের মাঝে অন্য কোন পর্দা ছিলোনা।” (বুখারী শরীফ কিতাবুল হজ্জ বাবু তাওয়াফিন নিসা মায়ার রিজাল, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস সারী, শরহুল কিরমানী, তাইসীরুল বারী।)
(২৪৩৪-২৪৩৫)
عن بهز ابن حكيم عن ابيه عن جده…………ز ذكرت عائشة رسول الله صلى الله عليه وسلم وحالها معه فقالت ما رايت ذلك منه ولا رأى ذلك منى. (احكام القران لابن العربى ج ৩ ص ১৩৬৫، احكام القران للقرطبى ج ৬ ص ২২৪)
ক অর্থ:- হযরত বাহয ইবনে হাক্বীম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। ……. হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাললাম উনার সঙ্গে যখন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াললঅহু আনহা একান্তবাস করতেন উনার বর্ণনা দিয়ে তিনি নিজেই বলেন, আমি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সতরের দিকে কোন দিন দৃষ্টি দেইনি বেং তিনিও আমার সতরের দিকে কোন দিন দৃষ্টি দেননি। (আহকামুল কুরআন লি ইবনিল আরাবী ৩য় জি: ১৩৬৫ পৃষ্ঠা) আহকামুল কুরআন লিল কুরতুবী ৬ষ্ঠ জি: ২২৪ পৃষ্ঠা)
(২৪৩৬-২৪৪০)
حدثنا احمدبن شبيب حدثنا ابى عن يونس عن ابن شهاب عن عروة عن عائشة رضى الله عنها قالت يرحم الله نساء المهاجرات الاول لما انزل الله وليضربن بخمرهن على جيوبهن شققن مروطهن فاختمرن بها. (بخارى شريف، فتح البارى، عمدة القارى، ارشاد السارى، شرح اكرمانى)
অর্থ:- “ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, আল্লাহ পাক সেই মহিলাগণের উপর রহম করেছেন যারা প্রথম প্রথম হিজরত করেছিলেন। যখন আল্লাহ পাক “তারা যেন তাদের মাথার ওড়না তাদের বুকের উপর ফেলে রাখে” আয়াত শরীফ নাযিল করলেন, তখন উনারা তাদের চাদর ফেড়ে তা দ্বারা ওড়না বানিয়েছিলেন। (বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহুল কিরমানী)
(২৪৪১)
(وقرن فى بيوتكن) …… لان سودة رضى الله عنها قيل لها لما لاتخرجين فقالت امرنا الله بان نقر فى بيتنا، ةكانت عائشة اذا قرات هذه الاية تبكى على خروجها ايام الجمل. (التسهيل لعلوم اتنزيل ج ২ ص ১৮৮)
অর্থ:- “আপনারা ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করুন) ….. হযরত সাওদা রদ্বিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল- আপনারা কেন ঘর থেকে বের হননা। তিনি বলেছিলেন, আল্লাহ পাক আমাদেরকে ঘরের কোণে- প্রকোষ্ঠে অবস্থান করতে নির্দেশ দিয়েছেন এ জন্যই। হযরত আশিয়া ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি যখন ে আয়াত শরীফ পাঠ করতেন, তখন জঙ্গে জামাল তথা উষ্ট্রের যুদ্ধে বের হওয়ার কথা স্রণ করে কাঁদতেন।” (আত তাসহীল লিউলুমিত তানযীল ২য় জি: ১৮৮ পৃষ্ঠা)
(২৪৪২-২৪৪৩)
رواه الطبرى. وغيره عن عدى بن ثابت ان امرأة من الانصار قالت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم انى اكون فى بيتى على حال لا احب ان يرانى عليها احد، لا الد ولا ولد فياتى الاب فيدخل على وانه لا يزال يدخل على رحل من اهلى وانا على تلك الحال فكيف اصنع؟ فنزلت الاية. (التفسير الطبرى، تفسيرالقرطبى)
অর্থ:- “হযরত মিাম ত্ববারী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং অন্যান্যগণ আদী ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণনা করেছেন। নিশ্চয়ই একজন আনছারী মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহা এসে হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে আরজ করলেন যে, আমি আমার বাড়ীতে কখনো এমতাবস্থায় থাকি যে, আমি পছন্দ করিনা সে অবস্থায় কেু আমাকে দেখুক। না আমার পিতা-মাতা, আর না সন্তান সন্তুতি। কিন্তু আমার বাড়ীর কেউ না কেু বিনা বাধায় এ অবস্থায় আমার ঘরে প্রবেশ করে এবং আমাকে দেখে ফেলে। এ পরিসিথতিতে ামি কি করবো। এমন আরজের উত্তরে ( হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের ঘর ছাড়া অন্য ঘরে প্রবেশ করো না, যে পর্যন্ত অনুমতি না নাও এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম না করো। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা স্মরণ রাখ।) আয়াত শরীফ নাযিল হয়। (আত তাফসীরুত ত্ববারী, তাফসীরুল কুরতুবী)
উপরোক্ত আলোচনা দবারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম আনহুন্নাগণ সকলেই খাছ শরয়ী হিজাব বা পর্দা করেছেন। তাই মহিলাদের উচিৎ হিজাব বা পর্দার ক্ষেক্ষে উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম আনহুন্নাগণদের পরিপূর্ণ অনুসরণ করা।
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের হিজাব বা পর্দা
হিজাব বা পর্দার আমলের ব্যাপারে খুলাফায়ে রাশিদীন এবং অন্যান্য সমস্ত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ গুরুত্ব দিয়েছেন। যেহেতু আল্লাহ পাক পর্দার ব্যাপারে অসংখ্য আয়াত শরীফ-এ জোর তাগিদ করেছেন। যেমন, আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
(২৪৪৪)
قل للمؤمنين يغضوا من ابصارهم ويحفظوا فروجه ذلك ازكى لهم ان الله خبير بما يصنعون. (سورة النور- ৩০)
অর্থ:- “( হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) মু’মিনগণকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের উজ্জত ও আবরু হিফাযত করে। এতে তাদের জন্য অনেক পবিত্রতা আছে। নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ পাক তা অবহিত রয়েছেন।” (সূরা নূর/৩০)
(২৪৪৫)
يايها الذين امنوا لا تدخلوا بيوت النبى الا ان يؤذن لكم الى طعام غير نظرين انه ولكن اذا دعيم عادخوا فاذا طعمتم فانتشروا ولا مستانسين لحديث ان ذلكم كان يؤذى النبى فيستحى منكم والله لايستحى من الحق واذا سالتموهن متاعا فسألوهن من وراء حجاب ذلكم اطهر لقلوبكم وقلوبهن وما كان لكم ان تؤذوا رسول اله ولا ان تنكحوا ازواحه من بعده ابدا ان ذلكم كان عند الله عظيما. (سورة الاحزاب ৫৩)
অর্থ:- “হে মু’মিনগণ! তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া না হলে তোমরা খাওয়ার জন্য খাবার প্রস্তুতের অপেক্ষা না করে হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গৃহে প্রবেশ করো না। তবে তোমরা আহুত হলে প্রবেশ করো, অত:পর খাওয়া শেষ করে আপনা আপনি চলে যেয়ো, কথা-বার্তায় মশগুল হয়ে যেয়ো না। নিশ্চয়ই এটা নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের কাছে (কিছু বলতে) সংকোচ বোধ করেন। কিন্তু আল্লাহ পাক সত্য কথা বলতে সংকোচবোধ করেন না। তোমরা তোমাদের অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্নাগণের কাছে কিছু চাইলে পদৃঅর আড়াল থেকে চাবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং উনাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দেয়া এবং উনার ওফাতের পর উনার আহলিয়া (অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন) আলাইহাস সালামগণকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য জায়িয নয়। আল্লাহ পাক উনার কাছে এটা গুরুতর অপরাধ।” (সূরা আহযাব/৫৩)
অত্র আয়াত শরীফসমূহ নাযিল হওয়ার পর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মত পূর্ণ পর্দা রক্ষা করে চলা শুরু করলেন, যদিও উনারা পূর্ব থেকেি শালিনতা বজায় রেখে চলতেন। হযরত ুমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু পর্দার আয়াত শরীফ নাযিলের পূর্ব থেকেই মহিলাদেরকে পর্দায় থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণের পর্দা রক্ষার বিষয়ে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
(২৪৪৬-২৪৫১)
عن عائشة رضى الله عنها ان ازواج النبى صلى الله عليه وسلم كن يخرحن بالليل اذا تبرزن الى المناصع وهو صعيد افيح فكان عمر يقول للنبى صلى الله عيله وسلم احجب نسائك فم يكن رسول الله صلى الله عليه وسلم يفعل فخرجت سودة بنت زمعة زوج النبى صلى الله عليه وسلم ليلة من اليالى عشاء وكانت امرأة طويلة فناداها عمر الا قد عرفناك ياسودة حرصا على ان ينزل الحجاب فانزل الله اية الحجاب. (بخارى سريف كتاب اوضوء باب خروج النساء الى البراز، فتح البارى، عمدة القارى، ارشاد السارى، شرح الكرمانى، تسير البارى)
অর্থ:- “হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়াগণ রাতের বেলায় হাজত পূরণেল জন্য বাহিরে যেতেন। আর হযরত উমর আলাইহিস সালাম তিনি (প্রায়ই) নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতেন, “আপনার আহলিয়াগণকে পর্দায় রাখা দরকার।” কিন্তু হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তা করেননি। হেহেতু তিনি ওহীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত)। একরাতে ইশার সময় নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্ত্রী হযরত সাওদা বিনতে যাময়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহা হাজত পূরণে বের হলেন। তিনি ছিলেন লম্বা আকৃতির। হযরত উমর আলাইহিস সালাম উনাকে ডেকে বললেন, হে হযরত সাওদা আলাইহাস সালাম! আমি কিন্তু আপনাকে চিনে ফেলেছি।’ এটা এ আশায় বলেছিলেন, যাতে পর্দার হুকুম নাযিল হয়। অতপর আল্লাহ পাক পর্দঅর আয়াত শরীফ নাযিল করেন।” (বুখারী শরীফ কিতাবুল উযু বাবু খুরুজিন নিসা ইলাল বারায, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, রিশাদুস সারী, শরহুল কিরমানী, তাইসীরুল বারী।)
অত্র হাদীছ শরীফ-এ হযরত উমর আলাইহিস সালাম উনার পর্দাশীলতায় বিষয়টি ফুটে উঠেছে। কারণ, তিনি হযরত উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্নাগণকে পর্দার ভিতর থাকার বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছিলেন। আর সেই পরামর্শের সমর্থনে আল্লাহ পাক পর্দার আয়াত শরীফ নাযিল করেছেন। মূলত: হযরত উমর আলাইহিস সালাম উনার প্রস্তাবিত বিষয়ে ২২টি আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছিল।
হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে,
(২৪৫২-২৪৫৩)
اخرج ابن مردوية عن على بن ابى طالب رضى اله عنه قال: مر رجل على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم فى طريق من طرقات المدنة، فنظر الى امراة ونظرت اليه، فوسوس لهما الشيطان انه لم ينظر احدهما الى الاخر الا اعجابابه، فبينما الرحل يمشى الى جانب حائط ينظر اليها اذ استقبله الحائط (صدم به) فشق انفه، فقال والله لا اغسل الدم حتى اتى رسول الله صلى الله عليه وسلم فأعلمه امرى؟ فاتاه فقص عليه قصته، فقال النبى صلى الله عليه وسلم. (هذا عقوبة ذنبك) وانزل الله: قل للمؤمنين يغضوا من ابصارهم……… الاية. (تفسير ايات الاحكام لصابونى ج ص ১৪৮. الدر المنثور للسيوطى ج ه ص ৪০)
হে অর্থ:- “হযরত ইবনু মারদুবিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আলী ইবনে আবী ত্বালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানায় এক ব্যক্তি মদীনা শরীফ-এর পথ সমূহের কোন এক পথে চলছিল। সে এক মহিলার দিকে দৃষ্টি দিল এবং মহিলাও তার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। সুতরাং শয়তান তাদের দু’জনকে ওয়াসওয়াসা দিল যার ফলে তারা আশ্চর্যান্বিত হলো এই ভেবে যে, তাদের দু’জনের কেউ অন্য কোন লোককে দেখছেনা। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি দেয়ালের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাকে (মহিলাকে) দেখলো, যখন দেয়ালকে সম্মুখে রাখলো। (এতে সে কষ্ট, লজ্জা পেল) তাই তার নাক সে ফেঁড়ে দিল অত:পর সে ব্যক্তি বলল: আল্লাহ পাক উনার শপথ! আমি রক্ত ধৌত করব না যতক্ষণ পর্যন্ত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম না আসবেন, এমনকি উনাকে আমার ব্যাপারটি জানাবো। অত:পর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আসলেন। লোকটি উনাকে ঘটনাটি জানালো। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন: (এটা তোমার গুণাহের শাস্তি)। এ পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ পাক অত্র আয়াত শরীফ নাযিল করেন, “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম) মু’মিন পুরুষগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চক্ষুকে অবনত রাখে….।”
(তাফসীরে আয়াতুল আহকাম লিছ ছাবূনী ২য় জি: ১৪৮ পৃষ্ঠা, আদ দুররুল মানছুর লিস সুয়ূত্বী ৫ম জি: ৪০ পৃষ্ঠা)
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ পুর্ণাঙ্গভাবে পর্দা করতেন এবং পর্দার বিষয়ে কঠোর ছিলেন। এ সম্পর্কে হযরত উমর আলাইহিস সালাম উনার একটি ঘটনা উলেলখ করলে আরো স্পষ্টভাবে ফুটে উঠবে যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ হিজাব বা পর্দা রক্ষার বিষয়ে কত কঠোর ছিলেন। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ করা হয়েছে,
(২৪৫৪)
হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম, একদিন উনার মেয়ে উম্মুল মু’মিনীন হযরত হাফছা আলাইহাস সালাম উনার সাথে বসা ছিলেন। এমন সময় উনার একটি হাদীছ শরীফ মনে পড়ে যায় এবং সাথে সাথে তিনি দৌড় দেন এবং দরজা দিয়ে বের হওয়ার সময় যেহেতু তিনি সাধারণ লোকের চেয়ে কিছু লম্বা ছিলেন, সেহেতু দরজার চৌকাঠে উনার মাথা লেগে মাথা ফেটে যায়, তিনি এ অবস্থায় আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবারে আসলেন যে, উনার কপাল মুবারক থেকে ঝর ঝর করে রক্ত পড়তেছিলো। আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “হে উমর আলাইহিস সালাম! কে তোমার মাথায় আঘাত করলো? তখন হযরত উমর আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আরবের বুকে এমন কোন সন্তান জন্মগ্রহণ করেনি, যে উমর আলাইহিস সালাম উনার মাথায় আঘাত করতে পারে। তবে আপনার একটি হাদীছ শরীফ আমার মাথায় আঘাত করেছে।”
তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “হে উমর আলাইহিস সালাম, কোন সেই হাদীছ শরীফ? যে হাদীছ শরীফ তোমার মাথায় আঘাত করেছে।” তখন হযরত উমর আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আপনি বলেছেন,
لايخلون رجل بامراة الا كان ثالثهما الشيطان.
অর্থ:- “কোন বেগানা পুরুষ মেন কোন বেগানা মহিলাদের সাথে নিরিবিলিতে একত্রিত না হয়, কেননা তখন তাদের তৃতীয় বন্ধু হয় শয়তান।” যেহেতু আমি আমার মেয়ে হযরত হাফসা আলাইহাস সালাম উনার সাথে বসা ছিলাম। এ হাদীছ শরীফ স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে দৌড় দিয়ে দরজা দিয়ে বের হওয়ার সময় চৌকাঠে মাথা লেগে মাথা ফেটে যায়।”
এবার চিন্তা ফিকির করেন, ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ পর্দার কতটুকু গুরুত্ব দিতেন।
(অসমাপ্ত)
পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন