ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র, মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া – (১৫)

সংখ্যা: ১২৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

প্রকাশিত ফতওয়াসমূহ [সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ রব্বুল আলামীনের জন্যে এবং অসংখ্য দরূদ ও সালাম আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, আখিরী রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। মহান আল্লাহ্ পাক-এর অশেষ রহ্মতে গবেষণা কেন্দ্র “মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে, বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব-এর অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীল ভিত্তিক মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১.তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫.আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা) এবং ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যায়) পেশ করার পর- ২২তম ফতওয়া হিসেবে  “হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করে আসতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।  হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরিকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লিখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” এমন সব লিখাই পত্রস্থ  হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক।  তদ্রুপ “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার মাকছূদ বা উদ্দেশ্যও ঠিক তাই। কেননা, প্রথমতঃ কিছু লোক “কিল্লতে ইল্ম ও কিল্লতে ফাহ্ম” অর্থাৎ কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে বক্তব্য ও লিখনীর মাধ্যমে পর্দা সম্পর্কে সমাজে নানাবিধ বিভ্রান্তি ছড়িয়ে থাকে। যেমন কিছুদিন পূর্বে একটি দৈনিক পত্রিকায় পর্দা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছে যে, “……. মহিলারা মুখ বা চেহারা, হাত ও পা খোলা রেখে বাহিরে বের হতে পারবে।” (নাঊযুবিল্লাহি মিন যালিক) পাশাপাশি কিছূ বাতিল ফিরকাভূক্ত অখ্যাত নামধারী ইসলামী মাসিকেও অনুরূপ মন্তব্য করা হয়। এছাড়া অনেক নামধারী ওয়ায়েযও  এরূপ বলে থাকে। অথচ তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ রূপেই কুরআন শরীফ, সুন্নাহ্ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের খিলাফ। তারা মূলতঃ কুরআন শরীফের একখানা আয়াত শরীফের সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা না বুঝার কারণেই এরূপ বিভ্রান্তিকর বক্তব্য পেশ করেছে।  খাছ শরয়ী হিজাব বা পর্দা মূলতঃ শরীয়তের দৃষ্টিতে মহিলাদের খাছ পর্দা হলো- ১. মহিলারা সর্বদাই ঘরে অবস্থান করবে। ২. ঘরে অবস্থানকালে হোক অথবা বাইরে হোক কোন অবস্থাতেই গায়রে মাহ্রামদের সাথে দেখা দিতে পারবেনা। ৩. প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে হলে বোরকা, হাত মোজা, পা মোজা পরিধান করতঃ চেহারা ও সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে বের হবে। ৪. বোরকা কালো রংয়ের হওয়াই আফযল ও অধিক পর্দার কারণ। ৫. সর্বদা দৃষ্টিকে নিম্নগামী রাখবে। ৬. বিনা প্রয়োজনে গায়রে মাহ্রাম পুরুষদের সাথে কথা বলবে না। ৭. প্রয়োজনে গায়রে মাহ্রাম পুরুষদের সাথে কথা বলতে হলে পর্দার আড়াল থেকে শক্ত স্বরে কথা বলবে, নরম সূরে কথা বলবে না। এটাই খাছ শরয়ী হিজাব বা পর্দা। আর এটাই শরীয়তের নির্দেশ।  অতএব, তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যে অনেকেই পর্দা তরক করে কবীরা গুনাহে গুনাহ্গার হবে তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, কতিপয় নামধারী পীর, আমীর, খতীব, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও মাওলানারা প্রকাশ্যে বেগানা মহিলাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করে, ইফতার করে, ঘরোয়া বৈঠক করে, মিটিং-মিছিল করে। আর এটাকে তারা ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থের দোহাই দিয়ে জায়িয বলে প্রচার করছে। (নাঊযুবিল্লাহ) মূলতঃ যুগে যুগে দুনিয়া লোভী উলামায়ে ‘ছূ’রা দুনিয়াবী ফায়দা লুটার উদ্দেশ্যে হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়ে আসছে। যেমন, ক্বাইয়্যূমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর যামানায় উলামায়ে ‘ছূ’ আবুল ফযল, ফৈজী ও মোল্লা মুবারক নাগোরী গংরা বাদশা আকবরকে সন্তুষ্ট করে দুনিয়াবী কিছু ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে কুরআন-সুন্নাহর মনগড়া অপব্যাখ্যা করে বহু হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়েছিল। বর্তমান যামানার উলামায়ে ‘ছূ’ তথাকথিত পীর, আমীর, খতীব, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও তার অনুসারী গংরা যেন আবুল ফযল গংদেরই পূর্ণ মিছদাক। দুনিয়াবী ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে এবং খানিকটা পদ লাভের প্রত্যাশায় তারা হারাম কাজগুলো নির্দ্বিধায় করে যাচ্ছে। সাথে সাথে হারাম কাজগুলোকে হালাল বলে ফতওয়া দিচ্ছে। বস্তুতঃ এরাই হচ্ছে হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালের চেলা। যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون يأتونكم من الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا اباؤيكم فاياكم واياهم لايضلونكم ولايفتنونكم.

অর্থঃ- “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী) স্মর্তব্য যে, ঐ সকল দাজ্জালের চেলা নামক তথাকথিত পীর, আমীর, খতীব, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও মৌলভীদের প্রকাশ্যে বেপর্দা হওয়ার কারণে আজ সাধারণ লোক বিভ্রান্তিতে পড়ছে। সাধারণ লোক মনে করছে পর্দার কোন প্রয়োজন নেই। যদি থাকতোই তবে নামধারী মৌলভীরা বেপর্দা হয় কি করে? অতএব, উল্লিখিত উলামায়ে ‘ছূ’দের বেপর্দা হওয়ার কারণে যে সাধারণ লোকেরা পর্দা সম্পর্কীয় বিষয়ে ঈমান-আমলের ক্ষেত্রে বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা। অতএব, সকলেই যেন পর্দা সম্পর্কে সঠিক আক্বীদা পোষণ করতে পারে বা হিজাব তথা পর্দার ছহীহ্ আহকাম অবগত হতে পারে এবং যারা অজ্ঞতাহেতু ও নফ্সের তাড়নায় পর্দা সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এবং বেপর্দা হচ্ছে তারাও যেন বিভ্রান্তি ও বেপর্দা হতে হিদায়েত ও পর্দার ভিতর আসতে পারে, তাই “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” “হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” দেয়া হলো।  আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে প্রদত্ত ফতওয়া মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রেযামন্দি হাছিল করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)

 কুরআন শরীফ, সুন্নাহ্ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের  দৃষ্টিতে পর্দা করা ফরযে আইন দ্বীন ইসলামের ভিত্তি বা প্রধানতম ফরয হচ্ছে পাঁচটি (১) ঈমান বা আক্বীদা, (২) নামায, (৩) যাকাত, (৪) হজ্জ (৫) রমযানের রোযা। অতঃপর পুরুষদের জন্যে হালাল কামাই করা ফরয। আর মহিলাদের জন্যে হিজাব বা পর্দা করা ফরয। অর্থাৎ ফরযে আইন।  কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের বহু স্থানেই হিজাব বা পর্দার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, পাশাপাশি বেপর্দা হওয়ার কারণে কঠিন আযাব ও অসন্তুষ্টির কথাও বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে হিজাব বা পর্দা সম্পর্কিত উল্লিখিত বিষয়ে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, তাফসীর, শরাহ, ফিক্বাহ, ফতওয়া, ইতিহাস ও লুগাতের কিতাবসমূহ থেকে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ্ পর্যায়ক্রমে উল্লেখ করা হলো-  (পূর্ব প্রকাশিতের পর) ফিক্বাহ ও ফতওয়ার আলোকে হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ পুর্ববর্তী সংখ্যাগুলোতে উল্লেখকৃত যে সমস্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফসমূহ দ্বারা ‘হিজাব বা পর্দা’ ফরয প্রমাণিত হয়েছে তা দ্বারা এটাই প্রামণিত হয়েছে যে, শুধু বোরকা বা পর্দা করে রাস্তায় বের হওয়ার নাম হিজাব বা পর্দা নয়। বরং তার সাথে সাথে আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফসমূহে উল্লিখিত এবং সংশ্লিষ্ট সকল হুকুম-আহকাম সমূহ মেনে চলার নামই হচ্ছে ‘শরয়ী হিজাব বা পর্দা।’ যেমন, কারো ঘরে প্রবেশ করার পূর্বে অনুমতি নেয়া, মাহরাম ব্যতীত অন্য কারো সাথে দেখা-সাক্ষাত না করা, মাহরামদের সামনেও শালীনতা বজায় রাখা, চলাচলের সময় পুরুষ মহিলা উভয়ের দৃষ্টিকে অবনত রাখা, নিজেদের লজ্জাস্থানকে হিফাযত করা, বিনা প্রয়োজনে গলার আওয়াজ বা কক্তস্বর পরপুরুষকে না শোনানো, প্রয়োজনে কথা বলতে হলে ও কিছু চাইতে হলে পর্দার আড়াল থেকে বলা ও চাওয়া এবং শক্ত ভাষায় কথা বলা, গাইরে মাহরামের সামনে মহিলাদের চেহারা হাত ও পা সহ সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা, ঘরে-বাইরে যে কোন খানে পরপুরুষ থেকে পূর্ণ সংরক্ষণে থাকা ইত্যাদী সবই হিজাব বা পর্দার অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ কুরআন শরীফের আলোকে যেরূপ উল্লিখিত বিষয়গুলো ফরযে আইন গ্রমাণিত হয়েছে। তদ্রুপ হাদীছ শরীফের আলোকেও তা ফরযে আইন প্রমাণিত হয়। শুধু তাই নয়, ফিক্বাহ বা ফতওয়ার কিতাবের বর্ণনা দ্বারাও হিজাব বা পর্দা এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সমূহ ফরযে আইন প্রমাণিত হয়।  হিজাব বা পর্দা সম্পর্কে বিশ্বখ্যাত ও  নির্ভরযোগ্য ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাব সমূহের বর্ণনা  বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাব সমূহ থেকে হিজাব বা পর্দা ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সমূহের বর্ণনা তুলে ধরলে ‘শরয়ী হিজাব বা পর্দার’ পরিচয় ও হুকুম-আহকাম আরো উজ্জলভাবে ফুটে উঠবে। তাই নিম্নে বিশ্বখ্যাত, নির্ভরযোগ্য, অকাট্য, প্রামাণ্য ও সর্বজনমান্য ফিক্বাহ ও  ফতওয়ার কিতাব থেকে হিজাব বা পর্দা ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।   ইমাম-মুজতাহিদ তথা ফক্বীহগণের মতে হিজাব বা পর্দার পরিচয় [১৬৮০]

 الحجاب الشرعى هو حجب المرأة ما يحرم عليها اظهاره اى سترها ما يجب عليها ستره. (فتاوى المرأة المسلمة ج ১ ص ৩৯১)

 অর্থঃ-  শরয়ী হিজাব বা পর্দা হলো, মহিলার জন্য যা প্রকাশ করা হারাম তার পর্দা করা অর্থাৎ তা ঢেকে রাখা। যার আবরণ বা পর্দা তার জন্য ওয়াজিব বা ফরযে আইন। (ফাতাওয়াল মারয়াতিল মুসলিমা ১ম জিঃ ৩৯১ পৃষ্ঠা)

[১৬৮১]

الحجاب فى الاسلام بينه القران وهو: ان المرأة المسلمة ينبغى ان تكون عفيفة، وان تكون ذات مروءة وان تكون بعيدة عن مواطن الشبه بعيدة عن اختلاطها بالرجال الاجانب هذا هو معنى الحجاب بالاضافة الى ستر وجهها ويديها عن الرجال الاجانب، لان محاسنها وجمالها هو فى وجهها. والله سبحانه وتعالى يقول: (وليضربن بخمرهن على جيوبهن) النور: ৩১ ومعناه هوان الخمر جمع خمار وهو ما تجعله المرأة على رأسها، ثم تنزله حتى يصل الى جيبها، الجيب هو التحة التى تكون على الدر، هذا معنى وليضربن بخمرهن على جيوبهن) كالاية الاخرى: (يايها النبى قل لازواجك وبناتك ونساء المؤمنين يدنين عليهن من جلابيبهن) الا حزاب: ৫৯ الجلابيب جمع جلباب، والجلباب: هو ما تجعله المرأة على رأسها مرخية له على وجهها. (فتاوى المرأة المسلمة ج ১ ص ৩৯২)

অর্থঃ- ইসলামী হিজাব বা পর্দা হলো যা কুরআন শরীফে বর্ণিত আছে। তা হচ্ছে, নিশ্চয়ই মুসলিমা মহিলার জন্য উচিত সৎ চরিত্রবান হওয়া, মানসিকতা থাকা, অসামঞ্জস্যপূর্ণ কাজ থেকে দূরে থাকা এবং বেগানা পুরুষদের সাথে মিলামিশা থেকে দূরে থাকা। এটা হিজাব বা পর্দার মর্মার্থ। এর সাথে মুখম-ল এবং দু’হাত পরপুরুষ থেকে পর্দায় রাখতে হবে। কেননা, মহিলার সৌন্দর্য এবং রূপ-লাবন্যতা সবচেয়ে বেশী মুখম-লের মধ্যেই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ (তারা যেন তাদের মাথার ওড়না তাদের বক্ষদেশের উপর ঝুলিয়ে রাখে) সুরা নূর ৩১নং আয়াত শরীফ।  তার মানে হলোঃ নিশ্চয়ই خمر ‘খমরুন’ শব্দটির বহুবচন হলো خمار ‘খিমারুন’। যা মহিলারা তাদের মাথায় দিয়ে ঢেকে থাকে অতঃপর তার প্রান্ত তাদের বুকের উপর  ঝুলিয়ে রাখে। الجيب ‘আল জাইব’ শব্দটি যবর সহকারে পড়তে হয়। যা صدر বা বক্ষদেশ, অর্থাৎ বুককে বলা হয়ে থাকে। ইহাই (তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বুকের উপর ঝুলিয়ে রাখে) এ আয়াত শরীফের মর্মার্থ বা ব্যাখ্যা। অনুরূপ অন্য আয়াত শরীফে আল্লাহ পাক বলেছেনঃ (হে আমার নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার স্ত্রী তথা উন্মুক্ত মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্নাগণকে, আপনার কন্যা রদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্নাগণকে এবং মু’মিনগণের স্ত্রীগণকে বলুন,  তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ তাদের নিজেদের উপর টেনে নেয়) সূরা আহযাব ৫৯নং আয়াত শরীফ। جلابيب ‘জালাবীব’ শব্দটি جلباب ‘জিলবাব’ শব্দের বহুবচন। আর জিলবাব হলো এমন চাদর যা মহিলারা তাদের মাথায় পেঁচিয়ে থাকে এবং তার একপ্রান্ত মুখ মন্ডলের উপর দিয়ে ঝুলিয়ে রাখে। (ফাতাওয়াল্ মারয়াতিল্ মুসলিমাহ ১ম জিঃ ৩৯২ পৃষ্ঠা)

ইমাম-মুজতাহিদ বা ফক্বীহগণের মতেও গায়রে মাহরামদের সামনে হাত, পা ও চেহারাসহ সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে রাখা ফরযে আইন

[১৬৮২]

فالواحب على المراة ان تستر وحهها عن من ليسوا بمحارمها واما ن زعم ان الحجاب الشرعى هو ستر الرأس والعنق والنحر والقدم والساق والذراع واباح للمرأة ان تخرج وجهها وكفيها. فان هذا من اعجب ما يكون من الاقوال لانه من المعلوم ان الرغبة ومحل الفتنة هو الوجه وكيف يمكن ان يقال ان المشريعة تمنع كشف القدم من المرأة وتبيح لها ان تخرج الوجه، هذا لايمكن ان يكون واقعافى الشريعة العظيمة الحكيمة المطهرة من التناقض وكل انسان يعرف ان الفتنة فى كشف الوحه اعظم بكثير من الفتنة بكشف القدم، وكل انسان يعرف ان محل رغبة الرجل فى النساء انما هى الوجوه ………. فعلم بهذا ان الوحه اولى مايجب حجابه وهناك ادلة من كتاب الله وسنة نبيه صلى الله عليه وسلم واقوال الصحابة واقوال ائمة الاسام وعلماء الاسلام تدل على وجوب احتجاب المرأة فى حميع بدنها عن من ليسوابمحارمها وتدل على انه يجب على المرأة ان تستر وجهها عمن ليسوا بمحارمها (فتاوى المرأة المسلمة ج ১ ص ৩৯১، ৩৯২)

 অর্থঃ- মুখম-লের পর্দা  বা মুখম-ল ঢেকে রাখা ওয়াজিব বা ফরযে আইন। কেননা, মুখম-ল ফিতনার স্থান এবং লোভনীয়, আকর্ষণীয় স্থান। তাই প্রত্যেক মহিলার জন্য যারা মাহরাম নয় অর্থাৎ গায়রে মাহরাম তাদের থেকে মুখম-ল বা চেহারা ঢেকে রাখা ওয়াজিব বা ফরয। যারা ধারণা করে যে, শরয়ী হিজাব বা পর্দা হলো মাথা, ঘাড়, গলা, বুক, পায়ের পাতা, পায়ের গোছা এবং বাহু ঢেকে রাখার নাম। তারা মহিলাদের মুখম-ল এবং হাতদ্বয়কে খুলে রাখাকে জায়িয বলে। নিশ্চয়ই তাদের এ ধরনের বক্তব্য আশ্চর্যজনক। কেননা আকর্ষণ এবং ফিতনার স্থান তো হলো মুখম-লই। তাই তারা কিভাবে বলে যে, শরীয়ত পাঁ কে খোলা রাখতে নিষেধ করেছে আর মুখম-লের প্রকাশ জায়িয বলেছে। এটা যে শরীয়তে, হিকমতে এবং বিবেকের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে। কাজেই প্রত্যেক মানুষ জানে যে, নিশ্চয়ই মুখম-ল উন্মুক্ত  রাখার ফিতনা পা উন্মুক্ত রাখার ফিতনার থেকে অনেক মারাত্মক। প্রত্যেক ব্যক্তি আরো জানে যে, পুরুষদের কর্তৃক নারীদের প্রতি আকর্ষণের স্থান হলো মুখম-ল বা চেহারা। … … … … এর থেকে জ্ঞাতব্য হলো যে, মুখম-লের পর্দা ওয়াজিব বা ফরয। এ হুকুম কিতাবুল্লাহ বা কুরআন শরীফ, সুন্নাতে নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা হাদীছ শরীফ, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণের ক্বওল এবং ইমাম মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ক্বওল বা উক্তি দ্বারা প্রমাণিত। হযরত উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ বলেন যে, মাহরামদের সামনে ছাড়া অন্য পুরুষের সামনে মহিলাদের আপদমস্তক-সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা বা পর্দা করা ওয়াজিব বা ফরয। তারা আরো বলেন যে, গাইরে মাহরামদের সামনে মহিলাদের মুখম-ল বা চেহারা ঢেকে রাখাও ওয়াজিব বা ফরযে আইন। (ফাতাওয়াল মারয়াতিল্ মুসলিমাহ্ ১ম জিঃ ৩৯১, ৩৯২ পৃষ্ঠা)  বোরকার বৈশিষ্ট্য- বোরকা পরিধান করা অবস্থায়ও চেহারাসহ সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে রাখতে হবে

[১৬৮৩]

البرقع اذا كان يغطى الوجه كله وما بقى الا العين لاباس، اما اذا كان لايعطى الوجه كله، بل الفم والبقية مكشوف فهذا لا يجوز وخاصة بمحضر الرجال الاجانب لان الرجال الاجانب لايجوز لهم ان منظر واالى وجه المراة الا جنبية منهم، وهى لايجوز لها ان تتكشف عندهم، بل عليها ان تستر وجهها لان جمالها ومحا سنها كله فى وجهها، اما الرقع فان كان يغطى الوحه كله فلا مانع وحينئذ يكفى. واذا كان لايغطى الا البغض فلايكفى، فلابد من تغطية الوحه كله، انما تخرج العبن من اجل ان تبصر طريقها كما قاله ابن مسعود وعبيدة السلمانى وغيرهما. (فتاوى المرأة المسلمة ج ১ ص ৩৯৩، ৩৯৪)

 অর্থঃ- বোরকা হলো যা সমস্ত চেহারা বা মুখম-ল ঢেকে রাখে। তবে একটি চোখ খোলা থাকলে অসুবিধা নেই। (যা ব্যাখ্যা সাপেক্ষ এবং তা দেয়া  হয়েছে) সমস্ত মুখম-ল না ঢেকে, বরং মুখ ও অন্যান্য অঙ্গ খোলা থাকলে, তা জায়িয হবে না। এ হুকুম বেগানা পুরুষের সামনে প্রযোজ্য। কেননা, বেগানা পুরুষের জন্য বেগানা মহিলার চেহারার দিকে দৃষ্টি দেয়া জায়িয নেই। আর মহিলাদের জন্য পুরুষদের সামনে বের হওয়া জায়িয নেই। বরং মহিলারা যেন তাদের সমস্ত চেহারা আবৃত করে রাখে। কেননা, মহিলার সমস্ত চেহারা বা মুখম-ল সৌন্দর্য ও রূপময় স্থল। যদি বুরকা সমস্ত মুখম-ল ঢেকে রাখে, তাতে কোন নিষেধ নেই। আর এটিই পর্দার জন্য যথেষ্ট। আর যদি সমস্ত মুখম-ল না ঢাকে বরং আংশিক ঢাকে তবে সে বোরকা যথেষ্ট হবে না। সমস্ত মুখম-ল ঢাকা ছাড়া গত্যন্তর নেই। চোখ খোলা রাখতে হয় রাস্তা দেখার জন্য। যেমনি বর্ণনা করেছেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা, হযরত উবাইদা সালমানী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এবং অন্যান্যগণ। (ফাতাওয়াল মারয়াতিল মুসলিমাহ ১ম জিঃ ৩৯৩,৩৯৪ পৃষ্ঠা)  বোরকা পরিহিত অবস্থায় চোখ খোলা রাখা সম্পর্কিত বর্ণনার সঠিক ব্যাখ্যা  হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ, হযরত উবাইদা সালমানী ও অন্যান্য ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফে ও উপরোক্ত ইবারতে একটি বা দু’টি চোখ খোলা রাখার যে কথা উল্লেখ আছে তা ব্যাখ্যা স্বাপেক্ষ। মুলতঃ মহিলাদের সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে রাখাই শরীয়তের নির্দেশ। যেমন, এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক ‘সূরা নূরের’ ৩১নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,

وليضربن بخمرهن على جيوبهن.

অর্থাৎ “মহিলারা যেন তাদের মাথার ওড়না তাদের বুকের উপর ঝুলিয়ে রাখে।” অর্থাৎ মাথার ঘুমটাকে চেহারার সামনে দিয়ে বুক পর্যন্ত ঝুলিয়ে  দিবে। স্মর্তব্য যে, পূর্ববর্তী যামানায় বর্তমান যামানার ন্যায় বোরকার প্রচলন ছিলনা, সে যুগে মহিলারা পর্দার জন্যে বড় চাদর বা ওড়না ব্যবহার করতো। তারা চাদর বা ওড়নাকে সমস্ত শরীর, মাথা ও চেহারায় এরূপভাবে প্যাঁচাতো শুধু রাস্তা দেখার জন্যে একটি বা দু’টি চোখ খোলা রাখতো। তবে মাথার ঘুমটা এরূপভাবে সামনের দিকে বুক পর্যন্ত ঝুলিয়ে দিতো, যাতে শুধুমাত্র তারা রাস্তা দেখতে পেতো কিন্তু তাদের চেহারা বা চোখ কেউ দেখতে পেতোনা। কাজেই হাদীছ শরীফে ও ফিক্বাহের কিতাবে রাস্তা দেখার জন্যে একটি বা দু’টি চোখ খোলা রাখার যে কথা বলা হয়েছে তা এরূপভাবে খোলা রাখার কথাই বলা হয়েছে। আর বর্তমান যামানায় যেহেতু বোরকার ব্যবস্থা রয়েছে তাই চোখ খোলা রাখার প্রশ্নেই আসেনা। বরং চেহারার উপর বোরকার নেকাব ফেলে রাখবে যাতে চেহারার কোন অংশই পরপুরুষ না দেখে। কাজেই বোরকা দ্বারা হোক বা চাদর বা ওড়না দ্বারা হোক যেভাবেই পর্দা করুক না কেন কোন অবস্থাতেই একটি চোখও পরপুরুষকে দেখানো জায়িয হবেনা। যদি পথ দেখার জন্যে একটি বা দু’টি চোখ খোলাও রাখে তবে অবশ্যই তার উপরে চাদর বা ওড়নার ঘুমটা ও বোরকার নেকাব ফেলে রাখতে হবে। যাতে সে রাস্তা দেখতে পায় কিন্তু তার চেহারার কোন অংশই কেউ দেখতে না পায়। এটাই খাছ হিজাব বা পর্দার ব্যাপারে শরীয়তের নির্দেশ। আর উক্ত হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহের কিতাবের বর্ণনার এটাই সঠিক ও গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা।

[১৬৮৪]

لاتكشف المرأة وجهها امام الرجال الاجانب بل هو حرام ولا يتم التحجب الا بستر الوجه فانه مجمع الزينة والدليل قوله تعالى: (وليضربن بخمرهن على جيوبهن) النور: ২১. امرها ان ترخى الخمار من الرأس الى الجيب الذى هو الفتحة على الصدر واذا تدلى من الراس الى الجيب الذى هو الفتحة على الصدر واذا تدلى من الرأس ستر الوجه والجيب وقال تعالى: (ولايبدين زينتهن الا لبعولتهن) الاية النور: ৩১ فحرم عليها الكشف للزينة لغير البعل والمحارم. (فتاوى المرأة المسلمة ج১ ص ৩৯৬)

অর্থঃ- মহিলা পরপুরুষের সামনে তার মুখম-ল উন্মুক্ত করবেনা। বরং উহা হারাম ও নাজায়িয। মুখম-লের আবরণ ছাড়া পরিপূর্ন পর্দা হবে না। কেননা, মুখম-ল সমস্ত সৌন্দর্য, আকর্ষণের মূল। দলীল হলো আল্লাহ তায়ালার বাণীঃ (তারা মহিলারা যেন তাদের মাথার ওড়না তাদের বুকের উপর ঝুলিয়ে রাখে) সুরা নূরঃ ৩১নং আয়াত শরীফ। আয়াত শরীফে মহিলাদেরকে তাদের ওড়না মাথা থেকে বক্ষদেশ পর্যন্ত ঝুলিয়ে রাখার জন্য নিদের্শ দেয়া হয়েছে। আর যখনই ওড়নাকে মাথা থেকে ঝুলানো হবে তখনই মুখম-ল ও বুক আবৃত হয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেনঃ (তারা মহিলারা তাদের সৌন্দর্য তাদের স্বামী ছাড়া অন্য কারো কাছে  প্রকাশ করবে না।) সূরা নূরঃ ৩১ নং আয়াত শরীফ। এ আয়াত শরীফ দ্বারা স্বামী এবং মাহরাম পুরুষদের সামনে ছাড়া অন্যান্যদের সামনে সৌন্দর্য প্রকাশ করাকে হারাম করা হয়েছে। (ফাতাওয়াল মারয়াতিল্ মুসলিমাহ্ ১ম জিঃ ৩৯৬ পৃষ্ঠা)

[১৬৮৫]

الصحيح الذى تدل عليه الادلة ان وجه المرأة من العورة التى يجب سترها، بل هو اشد المواضع الفاتنة فى جسمها، لان الابصار اكثر ماتوحه الى الوجه، لانه مركز الجمال، ومحل مدح الشعراء اكثره فى محاسن الوجه، فالوحه اعظم عورة فى المرأة، مع ورود الادلة الشرعية على وجوب ستر الوجه. من ذلك قوله تعالى: (وقل للمؤمنت يغضضن من ابصارهن ويحفظن فروجهن ولايبدين زينتهن الا ما ظهر منها وليضرين بخعرهن على جيوبهن) النور: ا৩ فضرب الخمار على الجيوب يلزم منه تغطية الوجه.

ولما سئل ابن عباس رضى الله عنهما عن قوله تعالى: (يدتين عليهن من جلابيبهن) الاحزاب: ৫৯ غطى وجهه وابدى عينا واحدة فهذ يدل على ان المراد بالاية تغطية الوجه وهذا هو تفسير ابن عباس رضى الله عنما لهذه الاية كما رواه عنه عبيدة السلمانى لما سأله عن ذلك.

ومن السنة احاديث كثيرة منها: (ان النبى صلى الله عليه وسلم نهى المحرمة ان تنتقب وان تلبس البرقع) فدل على انها قبل الاحرام كانت تغطى وجهها. (فتاوى المرأة المسلمة ج ১ ص ৩৯৬، ৩৯৭)

অর্থঃ- দলীল-আদীল্লাহর ভিত্তিতে এটাই ছহীহ বা বিশুদ্ধ মত যে, নিশ্চয়ই মহিলার আবরণীয় অঙ্গের মধ্যে চেহারা বা মুখম-ল গণ্য, যার পর্দা ওয়াজিব বা ফরযে আইন। বরং মহিলার শরীরের মধ্যে চেহারাই সবচেয়ে বেশী ফিতনাময় স্থান। কেননা, মানুষের চোখ চেহারার দিকেই বেশী পড়ে থাকে, যেহেতু তা রূপ-সৌন্দর্যের কেন্দ্রস্থল, আর মানুষ চেহারার রূপের বর্ণনা বেশী পরিমানে দিয়ে থাকে। তাই, মহিলাদের সবচেয়ে বেশী আবরণীয় অঙ্গ হলো মুখম-ল বা চেহারা। শরয়ী দলীলের দাবী অনুযায়ী চেহারা বা মুখম-ল ঢেকে রাখা ওয়াজিব বা ফরযে আইন। আল্লাহ তায়ালার বাণীঃ (হে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের চক্ষুকে নিম্নগামী করে, ইজ্জত-আবরুকে হিফাযত করে, তারা যেন তাদের সৌন্দর্যকে প্রকাশ না করে তবে চলাচলের কারণে অনিচ্ছা সত্ত্বে যা প্রকাশ হয় তা ব্যতীত এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়নাকে তাদের বুকের উপর ঝুলিয়ে রাখে) সূরা নূর ৩১নং আয়াত শরীফ। মাথার ওড়না বুকের উপর ঝুলিয়ে রাখা মুখম-ল আবৃত করাকে লাযিম বা ওয়াজিব করে। যখন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমাকে আল্লাহ তায়ালার বানীঃ (তারা মহিলারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ তাদের উপর টেনে নেয়।) এ আয়াতাংশের ব্যাখ্যা জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল তখন তিনি চাদর নিয়ে তার মুখম-ল ঢাকলেন, শুধু একটি চোখ খোলা রাখলেন। এ বর্ণনাটি প্রমাণ করে যে, আয়াতে কারীমার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, মুখম-ল বা চেহারা আবৃত করা, ঢেকে রাখা। এটি এ আয়াতের বিষয়ে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা-এর তাফসীর। অনুরূপভাবে বর্ণনা রয়েছে হযরত উবাইদা সালমানী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু সম্পর্কে। তাঁকেও অনুরূপ জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। অসংখ্য হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে, “নিশ্চয়ই হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুহরিমাদেরকে হজ্জের সময় মুখম-লের নেকাব পড়তে নিষেধ করেছেন।” এ হাদীছ শরীফের দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ইহরাম বাঁধার পূর্বে সর্বাবস্থায় মুখম-ল ঢেকে রাখতে হবে। (ফাতাওয়াল্ মারয়াতিল মুসলিমাহ ১ম জিঃ ৩৯৬, ৩৯৭ পৃষ্ঠা)  হজ্জের সময় ইহরাম অবস্থায় মহিলাদের চেহারার উপর নেকাব ঝুলানোর ব্যাপারে  শরীয়তের বিধান আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহিলাদেরকে ইহরাম অবস্থায় মুখম-ল বা চেহারার উপর নেকাব ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। এর অর্থ এই নয় যে, মহিলারা তাদের চেহারা গায়রে মাহরামদের সামনে সর্বদা উন্মুক্ত রাখবে। মুলতঃ ইহ্রাম অবস্থায়ও মহিলাদের চেহারার কোন অংশই পরপুরুষকে দেখানো জায়িয হবেনা। তাই মহিলারা ইহরাম অবস্থায়ও নেকাব ব্যবহার করবে। তবে এরূপভাবে ব্যবহার করবে যেন নেকাব মুখম-ল বা চেহারা স্পর্শ না করে এবং তার চেহারাও ঢেকে থাকে। অনেকে মনে করে থাকে যে হজ্জের  সময় বা ইহরাম অবস্থায় মুখম-ল বা চেহারা খোলা রাখা যাবে তাতে কোন গুনাহ হবে না।  মুলতঃ তাদের এ ধারণা সম্পূর্ণই ভুল ও কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী। কেননা হাদীছ শরীফে এসেছে,

[১৬৮৬]

عائشة رضى الله عنها قالت كنا مع النبى صلى الله عليه وسلم محرمات فكنا اذا مر بناالرجال سدلت احدانا خمارها من على راسها على وجهها فاذا جاوزنا كشفناه:

অর্থাৎ, হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা মুহরিমাতগণ একদা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। এমন সময় আমাদের নিকট দিয়ে কিছু বেগানা পুরুষ যাচ্ছিল। আমি আমাদের মধ্যে একজনের মাথার ওড়না তার মাথা থেকে মুখম-ল বা চেহারার উপর ঝুলিয়ে দিলাম যখন তারা চলে গেল তখন আমরা তার চেহারা খুলে দিলাম।” উক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারা স্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ইহরাম অবস্থায়ও পরপুরুষকে চেহারা দেখানো জায়িয নেই। কাজেই ইহরাম অবস্থায় নেকাব পড়া যাবেনা। এ কথার অর্থ হলো, নেকাব চোহারা স্পর্ষ করতে পারবেনা। বরং এরূপভাবে নেকাব ব্যবহার করবে যাতে নেকাব চেহারা স্পর্শ না করে এবং চেহারাও সম্পূর্ণ ঢেকে থাকে।

[১৬৮৭]

يجب على المرأة ان تغطى وجهها فى اصح قولى العلماء لان الوجه اعظم زينة فى المرأة، واليه تتوجه الانظار، وبه كان يتغزل الشعرأء، والادلة على وجوب ستره كثيرة من الكتاب والسنة منها: قوله تعالى: (وليضربن بخمرهن على جيوبهن) النور: ৩১ امر الله النساء ان يسدان الخمر وهى اغطية الرؤوس على فتحات الجيوب ليسترن بذلك ما يظهر من نحورهن، ويلزم من ذلك ستر الوجه لان الخمار اذا اسدل من على الرأس ليستر النحر، لزم ان يمر بالوجه ويضفى عليه. وقال تعالى: (واذا سألتموهن متاعا فاسئلوهن من وراء حجاب ذلكم اطهر لقلوبكم وقلوبهن) الاجراب ৫৩، وقال تعالى: (يايها النبى قل لازواجك وبنتك ونساء المؤمنين  يدنين عليهن من جلابيبهن) الاحزاب ৫৯ والجلباب هو الكساء اما الادلة من السنة: فحنها حديث عئشة رضى الله عنها قالت: كنامع النبى صلى الله عليه وسلم محرماب، فكنا اذا مربنا الرجال، سدلت احدنا خمارها من على رأسها على وجهها، فاذا جاوزنا كشفناه. (فتاوى المرأة المسلمة ج ১ ص ৩৯৭، ৩৯৮)

অর্থঃ- হযরত উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের বিশুদ্ধ মতে মহিলাদের জন্য তাদের মুখম-ল ঢেকে রাখা ওয়াজিব বা ফরযে আইন। কেননা মহিলার শরীরে বেশী সৌন্দর্য হলো মুখম-লের মধ্যে। সে দিকেই চোখের দৃষ্টি ধাবিত হয়। এর দ্বারাই প্রেমাসক্ত হয়। মুখম-ল ঢেকে রাখা ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে কিতাবুল্লাহ এবং সুন্নাহ শরীফের অসংখ্য দলীল আদিল্লাহ বিদ্যমান আছে। সেগুলো হলোঃ আল্লাহ তায়ালার বানীঃ (তারা মহিলারা যেন তাদের মাথার ওড়নাকে তাদের বুকের উপর ঝুলিয়ে রাখে) সূরা নূরঃ ৩১নং আয়াত শরীফ। আল্লাহ পাক মহিলাদেরকে তাদের মাথার ওড়না সামনের দিকে ঝুলানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তা মাথাকে ঢেকে বুক, গলা ইত্যাদিকেও ঢেকে নিবে। এতে মুখম-লের আবরণ লাযিম বা ওয়াজিব হয়ে যায়। কেননা যখনই বুক ঢাকার জন্য মাথা থেকে ওড়নাকে সামনে ঝুলানো হবে, তখনই মুখম-লের উপর দিয়ে অতিক্রম লাযিম বা আবশ্যক হবে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ (যখনই তোমরা তাঁদের কাছে কিছু সামগ্রী চাবে, তখন তা পর্দার আড়াল থেকে চেয়ো। এতে তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাদের অন্তরের জন্য পবিত্রতা বিদ্যমান রয়েছে) সূরা আহযাবঃ ৫৩নং আয়াত শরীফ। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ (হে আমার নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার স্ত্রী অর্থাৎ উন্মুক্ত মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্নাগণকে, আপনার কন্যা রদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্নাগণকে এবং মু’মিনগণের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ তাদের উপর টেনে নেয়) সূরা আহযাবঃ ৫৯নং আয়াত শরীফ। আয়াত শরীফে جلباب জিলবাব দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, বড় চাদর বা বোরকা। সুন্নাহ তথা হাদীছ শরীফের দলীল হলোঃ হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আমরা একদা মু’হরিমাতগণ হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। এমন সময় আমাদের পার্শ্ব দিয়ে কিছু বেগানা পুরুষ অতিক্রম করলো। আমি আমাদের মধ্যে একজনের মাথার ওড়না তার মাথা থেকে মুখম-লের উপর ঝুলিয়ে দিলাম। যখন তারা চলে গেল তখন, আমরা তার চেহারা উন্মুক্ত করলাম। (ফাতাওয়াল্ মারয়াতিল্ মুসলিমাহ্ ১ম জিঃ ৩৯৭, ৩৯৮ পৃষ্ঠা) [১৬৮৮]

يجب على المرأة ان تستر وجهها وكفيها وسائر بدنها عن الرجال الذين همخ ليسوا محارم لها فاذا خرجت الى السوق …….. لان الله تعالى يقول: (يايها النبى قل لازواجك وينتك ونساء المؤمنين يدنين عليهن من جلابيبهن ذلك ادنى ان يعرفن فلايؤذين) الاحزاب: ৫৯. ولقوله سيحانه وتعالى (وقل للمؤمنت يغضضن من ابصارهن ويحفظن فروجهن ولايبدين زينتهن الا ماظهر منها وليضربن بخمرهن على جيوبهن) الاية النور: ৩১. وقال الله تعالى: (واذا سالتموهن ماعا فاسئلوهن من وراء حجاب) الاحزاب: ৫৩ والحجاب يراد به الساتر الذى يسترهامن ثوب او جدار اوباب او غير ذلك مما يستر المرأة عن الرجل الذى ليس من محارمها وامرت بان تستر جميع بدنها. (فتاوى المرأة المسلمة ج ১ ص ৪০০)

অর্থঃ- মহিলার জন্য যারা মাহরাম পুরুষ নয় তাদের কাছে মুখম-ল, হাত এবং সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা ওয়াজিব বা ফরযে আইন। যখন (প্রয়োজনে) বাজারের উদ্দেশ্যে অর্থাৎ বাইরে বের হবে। … … …। কেননা আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেনঃ (হে আমার নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার স্ত্রী অর্থাৎ উন্মুক্ত্ মু’মিনগণকে, কন্যা রদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্নাগণকে এবং মু’মিনগণের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চিনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না।) সূরা আহযাব ৫৯ নং আয়াত শরীফ। এজন্য আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার বানীঃ (হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি ঈমানদার নারীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের ইজ্জত-আবরু হিফাযত করে। তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে, তবে চলাচলের কারণে অনিচ্ছা সত্ত্বে যা প্রকাশ পায় তা ব্যতীত এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বুকের উপর ফেলে রাখে।) সূরা নূরঃ ৩১নং আয়াত শরীফ। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেনঃ (যখন তোমরা তাদের কাছে কিছু চাবে তখন তা পর্দার আড়াল থেকে চেয়ো) সূরা আহযাবঃ ৫৩ নং আয়াত শরীফ। হিজাব দ্বারা আয়াত শরীফে পর্দা, আবরন ও আড়ালকে বুঝানো হয়। যেমন পর্দা  করা হয় কাপড় দিয়ে অথবা দেয়াল দিয়ে নতুবা দরজা দিয়ে অথবা অন্যান্য জিনিস দিয়ে। এগুলোর দ্বারা গাইরে মাহরাম পুরুষদের থেকে মহিলারা আড়ালে বা পর্দায় থাকে। আয়াত শরীফে আপদমস্তক সমস্ত শরীরের পর্দার বিষয়ে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। (ফাতাওয়াল মারয়াতিল মুসলিমাহ্ ১ম জিঃ ৪০০ পৃষ্ঠা)

[১৬৮৯]

 اما اذا خرجت الى السوق الى الرجال الاجانب فانه يجب عليك ان تغطى راسك ووجهك وغير ذلك من بدنك. (فتاوى المرأة المسلمة ج ১ ص ৪০৬)

 অর্থঃ- মহিলা যখন বিশেষ প্রয়োজনে বাজারের উদ্দেশ্যে, পর পুরুষের নিকট বের হবে। তখন তার জন্য ওয়াজিব হবে তার মাথা, মুখম-ল এবং সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা। (ফাতাওয়াল্ মারয়াতিল্ মুসলিমাহ ১ম জিঃ ৪০৬ পৃষ্ঠা)

[১৬৯০-১৬৯১]

قول امافى زماننا فمنع من الشابة اى فمنع نظر الوجه من الشابة ولو من غير شهوة. (حاشية الطحطاوى ص ১৭৫)  অর্থঃ- “আমাদের যামানায় যুবতী মহিলাদের দিকে দৃষ্টি দেয়া নিষেধ অর্থাৎ যুবতী মহিলাদের চেহারা বা মুখম-লের দিকে দৃষ্টি দেয়া হারাম। যদিও কামভাব বা শাহওয়াতের আশংকা থাক বা না থাক।” (হাশিয়াতুত্ ত্বহতাবী ১৮৫ পৃষ্ঠা, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৫৫ পৃষ্ঠা)

[১৬৯২-১৬৯৩]

فحل النظر مقيد بعدم الشهوة والا فحرام وهذا فى زمانهم واما فى زماننا فمنع من الشابة (الدر المختار بيان كراهية النظر ومس ج ৫ ص ২২৪)   অর্থঃ- “পূর্ববর্তী যামানায় স্ত্রীলোকের মুখম-লের দিকে শাহওয়াত ছাড়া দৃষ্টি দেয়া জায়িয ছিল, কিন্তু শাহওয়াতের সাথে হারাম ছিল। আর আমাদের বর্তমান যামানায় যুবতী মহিলার দিকে শাহওয়াত সহ ও শাহওয়াত ছাড়া উভয় অবস্থায় দৃষ্টি দেয়া হারাম বা নাজায়িয।” (আদ্ দুররুল্ মুখতার বয়ানু কারাহিয়াতিন্ নযর ওয়া মাস্ ৫ম জিঃ ২২৪ পৃষ্ঠা, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৫৫ পৃষ্ঠা)

[১৬৯৪-১৬৯৫]

اما فى زماننا فمنع من الشابة لا لانه عورة بل لخوف الفتنة. (فتارى شامى)

অর্থঃ- “আমাদের বর্তমান যামানায় যুবতী মহিলার চেহারার দিকে দৃষ্টি দেয়া হারাম, কেননা তা পর্দার স্থান। বরং ফিতনার আশংকায় হারাম। কেননা তা ফিতনা থেকে খালি নয়। (ফতওয়ায়ে শামী, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৫৫, ৫৬ পৃষ্ঠা) ওজরবশতঃ বেগানা মহিলার কোন অঙ্গ পরপুরুষকে দেখানোর বিধান

[১৬৯৬-১৬৯৭]

لاينظر من اشتهى الى وجهها الا الحاكم والشاهد وينظر الطبيب الى موضع مرضها. (البحر الرائق)

অর্থঃ- “বেগানা মহিলার মুখম-ল বা চেহারা দেখা বা দেখানো জায়িয নেই। কিন্তু বিশেষ ওজরে হাকিম বা বিচারপতি ও সাক্ষীদাতার অন্য বেগানা মহিলার মুখম-ল দেখা মুবাহ বা বৈধ। ডাক্তার বা চিকিৎসক স্ত্রীলোকের শুধু অসুস্থ্য স্থান দেখতে পারবে।” (আল্ বাহরুর রাইক, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৫৬ পৃষ্ঠা)

[১৬৯৮-১৭০১]

الطبيب انما يجوز له اذا لم يوجد امرأة طبيبة فلو وجدت فلايجوزله ان ينظر لان نظر الجنس اخف وينبغى للطبيب ان يعلم امرأة ان امكن وان لم يمكن ستر كل عضو منها سوى موضع الوجع ثم ينظر ويغض ببصره عن غير ذلك الموضع هكذا فى درر الحكام وجامع الرموز. (البحر الرائق، درر الحكام، جامع الرموز)

অর্থঃ- “যখন কোথাও মহিলা ডাক্তার পাওয়া যাবে না তখন পুরুষ ডাক্তার কর্তৃক মহিলা রোগীকে দেখা জায়িয হবে। মহিলা ডাক্তার পাওয়া গেলে পুরুষ ডাক্তারের দেখা জায়িয হবে না। সমজাতীয়ের দেখা সহজ হয়। সম্ভব হলে ডাক্তারের দায়িত্ব হলো কোন মহিলাকে ডাক্তারী শিখায়ে নিবে, নতুবা মহিলার রোগাক্রান্ত স্থান ছাড়া সমস্ত অঙ্গ ঢেকে নিবে। ডাক্তার শুধু রোগাক্রান্ত স্থানই দেখবে এবং চক্ষু সংযত রাখবে। সামান্য একটু বেশী অঙ্গ এবং একটু বেশী সময় দেখা জায়িয নেই। অনুরূপ দুররুল হিকাম এবং জামির্উ রমূয কিতাবে আছে। (আল বাহরুর রাইক, দুরারুল হিকাম, জামির্উ রমূয, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৫৬ পৃষ্ঠা)

[১৭০২-১৭০৩]

ينظر لمداوى الى موضع المرض بقدر الضرورة بان يستر سائر المواضع ويغض بصره او نحو ذلك ينبغى ان يعلم الامراة تدويها لان نظرها بعد من الفتنة هكذا فى الهداية. (جامع الرموز، هداية)

অর্থঃ- “চিকিৎসক বা ডাক্তার মহিলা রোগীর রোগাক্রান্ত স্থানটি প্রয়োজন পরিমাণ দেখতে পারবে। এমতাবস্থায় অন্য সমূদয় স্থান ঢেকে নিবে এবং চোখের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে। কোন মহিলাকে ঔষধ প্রয়োগ শিক্ষা দেয়া উচিৎ কেননা মহিলা কর্তৃক মহিলাকে দেখা ফিতনার ক্ষেত্রে অনেক নিরাপদ। অনুরূপ ‘হিদায়াহ’  নামক কিতাবে আছে।” (জামিউর রুমূয, হিদায়াহ)

[১৭০৪-১৭০৫]

ولو اردا ان يتزوج امرأة فلا باس ان ينظر اليها وان خاف ان يشتهيا. (فتاوى شامى ج ه ص ২৪৪)

অর্থঃ- “বিবাহ করার নিয়তে বেগানা স্ত্রীলোকের চেহারা বা মুখম-ল দেখা জায়িয। যদিও শাহওয়াতের সাথে হোক না কেন।” (ফতওয়ায়ে শামী ৫ম জিঃ ২৪৪ পৃষ্ঠা, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৫৭ পৃষ্ঠা)  মহিলাদের কণ্ঠস্বরও হিজাব  বা পর্দার অন্তর্ভুক্ত

[১৭০৬-১৭০৭]

 هل صوت المرأة عورة؟ فاجاب: مهك، المرأة مأمورة بتجنب الفتنة، فاذا كان يترتب على سماع صوتها افتتان الرجال بها. فانها تخفيه: ولذلك فانها لاترفق صوتها بالتلبية، وانما تلبى سرا. (فتاوى المرأة المسلمة ج ১ ص ৪৩১، المنتقى من فتاوى فضلية الشيخ صالح بن فوزان ج ৩ ص ১৯৩، ১৯৪)

  অর্থঃ- মহিলাদের কক্তস্বর কি পর্দার অন্তর্ভুক্ত? জাওয়াবঃ হ্যাঁ, মহিলাদের কণ্ঠস্বর পর্দার অন্তর্ভুক্ত। মহিলারা ফিতনা-ফাসাদ থেকে বাঁচার ব্যাপারে নির্দেশিত বা আদিষ্টিত। যদি মহিলাদের গলার আওয়াজ শুনে তাতে পুরুষদের মধ্যে ফিতনা-ফাসাদের ভয় থাকে, তবে মহিলারা আস্তে চুপে চুপে কথা বলবে। এজন্যই মহিলারা হজ্জের সময় ‘তালবিয়া’ পাঠে আওয়াজ উচ্চ করবে না। বরং চুপে চুপে ‘তালবিয়া’ পাঠ করবে। (ফাতাওয়াল্ মারয়াতিল্ মুসলিমাহ্ ১ম জিঃ ৪৩১ পৃষ্ঠা, আল  মুনতাক্বা মিন ফাতাওয়া ফাযীলাতিশ শাইখ ছালিহ বিন ফাওযান ৩য় জিঃ ১৯৩, ১৯৪ পৃষ্ঠা)

[১৭০৮]

المرأة لايموز لها مخاطبة الرجال الذين ليسوا محارم لها الا عند الحاجة. ……….. اما الخضوع فى القول المنهى عنه فهو ترخيم الصوت وتحسينه بحيث يثير الفتنة فلا يجوز للمرأة ان تكلم الرجل الاجنبى بصوت رخيم ولا ان تكلمه بمثل ما تكامبه زوجها. (فتاوى المرأة المسلمة ج ১ ص ৪৩২)

অর্থঃ- যারা মাহরাম নয় এমন পুরুষদের সাথে মহিলাদের জন্য কথা-বার্তা বলা জায়িয নেই। তবে বিশেষ প্রয়োজনের সময় আলাদা কথা। ……. সূললিত ভাষায় কথা বলা নিষেধ। তা হচ্ছে ভাঙ্গা আওয়াজ এবং সুন্দর, মধুর কথা যা ফিতনার সৃষ্টি করে। মহিলাদের জন্য পরপুরুষদের সাথে আকর্ষণীয় মধুর কণ্ঠে আলাপ-আলোচনা করা জায়িয নেই। আর স্বামীর সাথে যেভাবে আকর্ষণীয় কথা বলে সেভাবে কথা বলাও জায়িয নেই। (ফাতাওয়াল্ মারয়াতিল মুসলিমাহ ১ম জিঃ ৪৩২ পৃষ্ঠা)

[১৭০৯]

 صوت المرأة عورة عند الرحال الاجانب على الصحيح ولذلك لا تمبح فى الصلاة. (فتاوى المرأة المسلمة ج ১ ص ৪৩৪)

অর্থঃ ছহীহ বা বিশুদ্ধ মতে পরপুরুষের কাছে মহিলাদের গলার আওয়াজ পর্দার আওতাভুক্ত। এজন্য মহিলারা নামাযে জোড়ে তাসবীহ পড়বেনা। (ফাতাওয়াল্ মারয়াতিল্ মুসলিমাহ্ ১ম জিঃ ৪৩৪ পৃষ্ঠা)  নিজ ঘরে প্রবেশের সময়  সালাম দেয়া মুস্তাহাব

[১৭১০-১৭১১]

من يدخل بيته يستحب له ان يسلم على اهله لانهم احق بالسلام من يرهم (مجالس الابرار بيان السلام.

অর্থঃ- “যখন কেউ নিজ ঘরে প্রবেশ করবে তখন তার জন্য তাঁর পরিবারবর্গকে সালাম দেয়া মুস্তাহাব। কেননা নিজ পরিবারবর্গ অন্যদের চেয়ে সালাম পাওয়ার অধিক হক্বদার।” (মাজালিসুল্ আবরার বয়ানুস্ সালাম, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৩৫, ৩৬ পৃষ্ঠা)

[১৭১২-১৭১৩]

 وقد روى عن انس رضى الله عنه انه عليه الصلوة والسلام قال يانبى اذا دخلت على اهلك فسلم عليهم يكون بر كة عليك وعلى اهل بيك. (مجالس الابرار)

অর্থঃ- “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে। নিশ্চয়ই ছাহেবে ইল্মে গাইব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, হে বৎস! যখন তুমি তোমার পরিবারবর্গের কাছে যাও, তখন তাদের  উদ্দেশ্যে সালাম দিবে। এতে তোমার উপর এবং তোমার পরিবারবর্গের উপর রহমত, বরকত অবতীর্ণ হবে।” (মাজালিসুল্ আবরার, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৩৬ পৃষ্ঠা)

[১৭১৪-১৭১৫]

جاء رجل الى النبى صلى الله عليه وسلم شكا اليه الفقر قال اذا دخلت بيتك فسلم وان كان فيه وان لم يكن فيه احد فسلم على نفسك واقرأ “قل هو الله اح مرة واحدة ففعل الرجل ذلك فازد الله عليه رزقا حتى افاض على خير انه. (تفسير روح البيان سورة اخلاص)

অর্থঃ- “এক ব্যক্তি হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে অভাব-অনটনের কথা উল্লেখ করলো। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যখন তুমি তোমার নিজ ঘরে প্রবেশ করো, তখন পরিবারবর্গকে সালাম দিও, যদি তারা সেখানে উপস্থিত থাকে। আর যদি ঘরে কেউ না থাকে, তবুও তুমি নিজের উপর সালাম দিও এবং সূরা ইখলাছ একবার পাঠ করিও। অতঃপর লোকটি অনুরূপ করলো। তাই আল্লাহ পাক তার  রিযিক বৃদ্ধি করে দিলেন। এমনকি লোকটি তার পাড়া প্রতিবেশীগণকেও সাহায্য-সহযোগিতা করতে সক্ষম হলো।” (তাফসীরে রূহুল বয়ান সূরা ইখলাছ, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৩৬ পৃষ্ঠা) [১৭১৬-১৭১৮]

فان لم يكن فيه احد يسلم على نفسه بان يقول السلام علينا وعلى عباد الله الصلالحين لانه تعالى قال فاذا دخلتم بيوتا فسلموا على انفسكم. (مجالس الابرار بيان السلام، تفسير القرطبى)

অর্থঃ- “যদি ঘরে কেউ না থাকে তবে নিজের উপর সালাম দিবে এভাবে বলে যে, ‘আস্ সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিছ ছালিহীন’ অর্থাৎ আমি আমার উপর এবং আল্লাহ পাক-এর নেক বান্দাগণের উপর সালাম দিলাম। কেননা আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘যখন তোমরা ঘর সমূহে প্রবেশ করবে তখন তোমাদের নিজেদের উপর সালাম দিও।”(মাজালিসুল্ আবরার বয়ানুস্ সালাম, তাফসীরুল কুরতুবী, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৩৬ পৃষ্ঠা)  অপরের ঘরে প্রবেশের জন্য  সালাম দেয়া ওয়াজিব

[১৭১৯-১৭২১]

وذكر فى قاضى خان ان من اتى دار انسان يجب عليه ان يستاذن قبل السلام ثم دخل يسلم اولاثم يتكلم. (مجالس الابرار، فتاوى قاضى خان)

অর্থঃ- “ফতওয়ায়ে কাযীখান’ কিতাবে উল্লেখ আছে, যদি কারো অপর কোন ব্যক্তির ঘরে যাওয়ার দরকার হয়, তখন তার  প্রতি ওয়াজিব যে সালামের পূর্বে ঘরওয়ালার  অনুমিত নিবে। অতঃপর প্রবেশ করবে এবং প্রথমে সালাম দিবে তৎপর প্রয়োজনীয় আলাপ-আলোচনা করবে।” (মাজালিসুল্ আবরার, ফতওয়ায়ে কাযীখান, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৩৭ পৃষ্ঠা) মূলতঃ সালাম দেয়ার ব্যাপারে দু’টি  নিয়ম উল্লেখ করা হয়, প্রথমতঃ যদি কোন লোক মারফত প্রবেশের অনুমতি নেয় তবে প্রবেশের পর সালাম দিবে। দ্বিতীয়তঃ যদি অনুমতি নেয়ার জন্য কাউকে না পাওয়া  যায়, তবে সালামের মাধ্যমে প্রবেশের অনুমতি তলব করবে।  মহিলাদের পরষ্পরে সালাম দেয়া সুন্নত, আর জাওয়াব দেওয়া ওয়াজিব

[১৭২২-১৭২৩]

والنساء بعضهن مع بعض فى حكم السلام كالرجال. (مجالس الابرار)

  অর্থঃ- “মেয়ে লোকের পরস্পরে সালাম আদান-প্রদানের হুকুম পুরুষের সহিত পুরুষের সালাম ও জাওয়াব দেয়ার হুকুমের মতই। অর্থাৎ মহিলাদের পরস্পরে সালাম দেয়া সুন্নত এবং জবাব দেয়াও ওয়াজিব।” (মাজালিসুল্ আবরার, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৩৯, ৪০ পৃষ্ঠা)  মাহরাম ও মাহরামাদের মধ্যে সালাম  ও জাওয়াব দেয়া জায়িয

[১৭২৪-১৭২৫]

واما الرجل اذا سلم على امرأة فان كانت زوجته او جاريته او كانت من ملحللارمه فعليها الرد وان كانت اجنبية سابة لا يجوز للها الرد ويكون الرجل مفرطا فى السلام عليها. (مجالس الابرار بيان السلام)

অর্থঃ- “যখন কোন পুরুষ এমন মহিলাকে সালাম দিবে যে তার স্ত্রী, দাসী অথবা মাহরামা মহিলা’ তখন মহিলার জন্য তার সালামের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব। যদি মহিলা বেগানা যুবতী হয়, তবে তার জন্য বেগানা পুরুষের সালামের জাওয়াব দেয়া জায়িয নেই। বেগানা যুবতীকে সালাম দেয়াও জায়িয নেই। পুরুষের এরূপ সালাম বৃথা যাবে।” (মাজালিসুল্ আবরার বায়ানুস্ সালাম, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৪০ পৃষ্ঠা)

[১৭২৬-১৭২৭]

المرأة لن سلمت على رجل فاذا كانت زوجته او جاريته او كانت من محارمه او كانت عجوزا لايخاف منها الفتنة فعليه الرد وان كانت شابة تميل اليها النفس يكره له الرد وتكون المرأة مفرطة فى السلام عليه. (مجالس الابرار بيان السلام)

অর্থঃ- “স্বীয় স্ত্রী, দাসী, মাহরামা মহিলা এবং অতিবৃদ্ধা স্ত্রীলোক যার থেকে কোন ফিতনার আশংকা নাই এ রকম স্ত্রীলোক যদি কোন মাহরাম পুরুষকে সালাম দেয় তবে তার সালামের জাওয়াব দেয়া পুরুষের জন্য ওয়াজিব। যদি গাইরে মাহরামা যুবতী হয় তবে অন্তরের ফিতনার আশংকায় তার সালামের জাওয়াব দেয়া মাকরূহ তাহরীমীর গুনাহ হবে।” (মাজালিসুল্  আবরার বায়ানুস্ সালাম, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া)  নেককার স্ত্রীলোকের জন্য বদকার  স্ত্রীলোকের সহিত দেখা করার বিধান

[১৭২৮-১৭৩০]

لاينبغى للمرأة الفاجرة لانها تصفها عند الرجال فلا تضع جلبا بها وخمارها عندها هكذا الشامى. (الفتاوى العالمكيرية بيان النظر ومس ج ه فتاوى شامى)

অর্থঃ- “নেক্কার মহিলার জন্য বদকার মহিলার সহিত দেখা করা উচিৎ নয়। কেননা বদকার স্ত্রীলোক অন্য পুরুষের কাছে নেককার মহিলার গঠন-আকৃতি বর্ণনা করতে পারে। এজন্য নেককার মহিলা তার বোরকা, চাদর এবং ওড়না পর্যন্ত বদকার মহিলার সামনে খুলবে না। অনুরূপ শামী কিতাবে উল্লেখ আছে।” (আল্ ফাতাওয়াল আলমগীরিয়াহ্ বয়ানুন্ নাযর ওয়াল মাস ৫ম জিঃ, ফতওয়ায়ে শামী, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৫৯ পৃষ্ঠা)

[১৭৩১-১৭৩৩]

ولا يحل ايضا لامراة مؤمنة ان تكشف عورتها عند مشركة او كنتابية الاتكون امة لها هكذا فى الشامى. (الفتاوى العالمكرية بيان النظر ومس ج ৫)

অর্থঃ- “মুশরিকা দাসীর সম্মুখে বোরকা এবং চাদর খোলা জায়িয নেই। তবে বেদ্বীন দাসী যদি নিজ খাছ বান্দী হয় তাহলে জায়িয আছে। অনুরূপ শামী কিতাবেও আছে।” (আল ফাতাওয়াল আলমগীরিয়াহ বয়ানুন্ নাযর ওয়া মাস্ ৫ম খ-, ফতওয়ায়ে শামী, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৫৯ পৃষ্ঠা)  বোরকার  উপর উচ্ছাকৃত  দৃষ্টি  দেয়া হারাম।

[১৭৩৪-১৭৩৫]

وان كان على المرأة بيان فلا بأس بان بتأمل جسدها وهذا اذا لم تكن ثيابها ملتز مة بها بحيث تصف ما تحتها ولم يكن دقيقها بحيث تصف ما تحته فان كانت بخلاف ذلك فينبغى له ان يغض بصره. (فتارى شامى بيان النظر ومس ج ১৪১৫)

অর্থঃ- “যে মহিলার শরীরে মোটা কাপড় এরূপ ঢিলা থাকে যে, তার শরীরের বাধন দেখা যায় না। তার প্রতি অনিচ্ছাকৃত দৃষ্টি জায়িয় আছে। (বোরকার উপর ইচ্ছাকৃত দৃষ্টি দেয়াও জায়িয নেই বরং হারাম ও কবীরা গুনাহ) কিন্তু যদি কাপড় মোটা না হয় বরং পাতলা হয় যাতে ভিতরের শরীর প্রকাশ পায় অথবা কাপড় যদি পাতলা না হয় বরং কাপড় মোটা কিন্তু কাপড় এমন আটো-সাটো বা চিপানো যে যাতে শরীরের গঠন প্রকাশ পায়, এমতাবস্থায় চক্ষুর দৃষ্টিকে নিম্নগামী করা বা ফিরায়ে নেয়া ওয়াজিব। অর্থাৎ এমন কাপড়ের উপর দিয়ে দৃষ্টি দেয়া জায়িয নাই, বরং হারাম ও নাজায়িয।” (ফতওয়ায়ে শামী বয়ানুন্ নযর ওয়া মাস্ ৫ম জিঃ ২৪১ পৃষ্ঠা, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৫৭ পৃষ্ঠা)

[১৭৩৬-১৭৩৭]

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من تأمل خلف امرأة وراء ثيابها حتى تبين له حجم عظا مها لم يرح رائحة الجنة. (فتاوى شامى بيان النظر ومس ج৫)

 অর্থঃ- “হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি মহিলার প্রতি দৃষ্টি করতঃ তার কাপড়ের উপর দিয়ে শরীরের গঠন অনুভব করল। সে জান্নাতের সুবাস পর্যন্ত পাবেনা। (ফতওয়ায়ে শামী বয়ানুন্ নযর ওয়া মাস্ ৫ম জিঃ, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৫৮ পৃষ্ঠা)

[১৭৩৮-১৭৩৯]

اقول مفاده ان روية الشوب بحيث يصف حجم العضو لممنوء ولو كشفعا لاتر وابشرة منه. (شامى ج ৫) অর্থঃ- “পূর্ব উল্লেখিত হাদীছ শরীফ অবলম্বনে ফতওয়ায়ে শামীর মুছান্নিফ লিখেছেন যে, মোটা কাপড়ের উপর দিয়ে যদি স্ত্রী লোকের শরীরের গঠন ও রূপ-সৌন্দর্য্য প্রকাশ পায়, তাহলে তার উপর দৃষ্টি দেয়া জায়িয নেই। বরং হারাম ও নাজায়িয।” (ফতওয়ায়ে শামী বয়ানুন্ নযর ওয়া মাস্ ৫ম জিঃ, ফওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৫৮ পৃষ্ঠা)  পুরুষ এবং মহিলার আওরাত বা ছতর

[১৭৪০-১৭৪২]

 يحل الرجل ان ينظر من الرجل سوى ما تحت سرة الى ان يجاوز الركبته ونظر المرأة كنظر الرحل الى الرحل. والركبة عندنا عورة والسرة ليست بعورة هكذا فى العالمكيرى ايضا فيه مادون السرة الى ممنبت الشعر عورة. (فتاوى قاضى خان بيان النظر ومسى، فتاوى عالكيرى)

অর্থঃ- “একজন পুরুষ কর্তৃক অপর পুরুষের নাভির নিচ হতে হাটুর নিচ পর্যন্ত স্থান ব্যতীত অন্যান্য অঙ্গ দেখা হালাল বা জায়িয। একজন মহিলা কর্তৃক অপর মহিলার নাভির নিচ থেকে হাটুর নিচ পর্যন্ত স্থান ব্যতীত অন্যান্য অঙ্গ দেখা জায়িয। যেমনটি পুরুষের কাছে পুরুষের দৃষ্টির হুকুম। আমাদের হানাফী মাযহাব মতে হাটু ছতরের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু নাভি ছতরের অন্তর্ভুক্ত নয়। এরূপভাবে আলমগীরীতে আছে। সেখানে আরো আছে যে, নাভি সংলগ্ন স্থান এবং চুল ছতর বা ইজ্জত-আবরুর মধ্যে গণ্য।” (ফতওয়ায়ে কাযীখান বয়ানুন্ নযর ওয়া মাস্, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৫৮, ৫৯ পৃষ্ঠা)  মৃত স্ত্রীকে স্বামী গোসল দিতে পারবেনা, কিন্তু মৃত স্বামীকে স্ত্রী  গোসল দিতে পারবে

[১৭৪৩-১৭৪৪]

يمنع زوجها من غسلها وسها لا من النظر اليها على الاصح. (الدر المختار كتاب الجنازة)

 অর্থঃ- “স্বামী কর্তৃক তার মৃত স্ত্রীকে গোসল করানো ও স্পর্শ করা ছহীহ কওল মতে জায়িয নাই। তবে দেখা জায়িয আছে।” (আদ্ দুররুল মুখতার কিতাবুল্ জানাযা, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৫৯ পৃষ্ঠা)

[১৭৪৫-১৭৪৭]

لايغسل ززجنخ تغسل زوجها الا اذا ارتفع الزوجية بوجه هكذا فى البحر الرائق. (جامع الرموز كتاب الجنازة ص ১২৩، البحر الرائق)

 অর্থঃ- “স্বামী তার মৃত স্ত্রীকে গোসল করানো জায়িয নাই। কিন্তু স্ত্রী কর্তৃক তার মৃত স্বামীকে গোসল করানো জায়িয। যদি কোন কারণে ঐ স্ত্রীর সাথে বিবাহ ছিন্ন হয়ে থাকে তবে জায়িয নাই। অনুরূপ ‘আল বাহরুর রাইক’ নামক কিতাবে আছে।” (জামিউর রুমূয কিতাবুল জানাযা ১২৩ পৃষ্ঠা, আল বাহরুর রাইক, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৬০ পৃষ্ঠা)

[১৭৪৮-১৭৪৯]

الزوجة تغسل زوجها دخل بها او لابشرط بقاء الزوجية عند غسل حتى لو كانت مبانة بالطلاق وهى فى العدة او محرومة ضاع او مصاهرة لم تغسله. (جامع الرموز كتاب الجنازة ص ১৭৪)

 অর্থঃ- “যদি উক্ত স্ত্রী নির্জনে নিকটবর্তী হয়ে থাকে অথবা না হয়ে থাকে তবুও স্ত্রী স্বামীকে গোসল করাতে পারবে। কিন্তু গোসলের পূর্বে তালাকে বাইন, হুরমতে মুছাহিরা, দুধ সম্পর্ক ও কাফির হওয়ার দরুন যদি বিবাহ ছিন্ন হয়ে থাকে, তবে গোসল করাতে পারবে না।” (জামিউর রুমূয কিতাবুল জানাযা ১৭৪ পৃষ্ঠা, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৬০ পৃষ্ঠা)

[১৭৫০-১৭৫১]

ان ابا بكر رضى الله تعالى عنه لما مات غسلته اسماء زوجته. (حاشية تبيين الحقائق كتاب الجنازة)

অর্থঃ- “হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন ইন্তিকাল করেছিলেন, তখন তাঁর স্ত্রী হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা তাঁকে গোসল করিয়েছিলেন।” (হাশিয়ায়ে তাবয়ীনুল্ হাক্বাইক্ব কিতাবুল্ জানাযা, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৬০ পৃষ্ঠা) উল্লিখিত ইবারত থেকে প্রমাণিত হলো যে, স্ত্রী মৃত স্বামীকে স্পর্শ করতে, গোসল করাতে এবং কাফন পড়াতে পারবে। কিন্তু স্বামী মৃত স্ত্রীকে শুধু দেখতে পারবে।

[১৭৫২-১৭৫৫]

كل عضو لايجوز النظر اليه قبل الانفصال لايجوز بعده ولو بعده ولو بعد الموت كشعر عاتة وشعر راسها وعظم ذراع جرة وساقها وقلامة ظفر رجلها …… هكذا فى العالمكيرى. (الدر المختار، فتاوى عالمكيرى، ملتق الابحر)

অর্থঃ- “শরীরের যে যে অঙ্গ দেখা জায়িয নাই, মৃত্যুর পরও সেই সেই অঙ্গের কিয়াদাংশ শরীর হতে আলাদা হলে তা দেখাও জায়িয হবে না। যথা গুপ্তস্থানের লোম, স্ত্রীলোকের মাথার চুল, স্বাধীনা মহিলার বাহু, পায়ের সাক বা নলার হাড়, পর্যন্ত দেখা জায়িয নাই। স্ত্রীলোকের পায়ের নখ দেখা জায়িয নাই। … … … অনুরূপ আলমগীরী কিতাবে আছে। (আদ্ দুরুল্ মুখতার, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, মুলতাকাল আবহুর,  ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৬১ পৃষ্ঠা)  নির্জনে দুধ বোন ও শাশুরীর সহিত সাক্ষাত নিষেধ

[১৭৫৬-১৭৫৭]

الا الاخت رضاع والصرة الشابة (مجمع الانهر ج ২ ص ৫৪০) অর্থঃ- “নির্জনে দুধ বোন এবং যুবতী শাশুরীর সাথে দেখা সাক্ষাৎ করাও নিষেধ।” (মাজমাউল আনহুর ২য় জিঃ ৫৪০ পৃষ্ঠা, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৬১ পৃষ্ঠা)  নিকাহে মুতয়া এবং নিকাহে  মুওয়াক্কাত বা সাময়িক বিবাহ বাতিল, মানসূখ, হারাম ও নাজায়িয

[১৭৫৮-১৭৫৯]

(ونكاح المتعة باطل) وهو ان يقول لامرأة اتمتع بك كذا مدة بكذا من المال وقال مالك هو جائز لانه كان سباحا فيبقى الى ان يظهر ناسخة. قلنا ثبت النسخ باجماع الصحابة رضى اله عنهم وابن عباس رضى الله عنهما صح رجوعه الى قولهم قتقرر الاجماع (والنكاح المؤقت باطل) مثل ان يتزوج امرأة بشهاداة شاهدين الى عشرة ايام. (الهداية مع الدراية ج ২ ص ৩১২، ৩১৩، فتح القدير ج ৩ ص ১৪৯، ১৫০)

অর্থঃ- (মুতয়া বিবাহ বাতিল) মুতয়া বিবাহ হচ্ছে, পুরুষ কোন স্ত্রীলোককে এভাবে বলা যে, আমি তোমাকে এত দিনের জন্য এ পরিমাণ মালের বিনিময়ে ভোগ করবো। হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লহি আলাইহি বলেন, এটা জায়িয রয়েছে। কেননা মুলতঃ এটা মুবাহ বা বৈধ ছিল। তাই নাসিখ বা রহিতকারী সাব্যস্ত হওয়া পর্যন্ত বৈধতা অব্যাহত থাকবে। আমরা হানাফীগণ বলি যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণের ইজমা-এর মাধ্যমে মুতয়া বিবাহের বৈধতা  মানছূখ বা রহিত হওয়া সাব্যস্ত হয়েছে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা নিজের মতকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণের মতের দিকে প্রত্যাবর্তন করেছেন। সুতরাং মুতয়া বিবাহ বাতিল, মানছূখ ও নাজায়িয-হারাম হিসেবে ইজমা প্রতিষ্ঠিত হলো। (নিকাহে মুওয়াক্কাত বা সাময়িক বিবাহ বাতিল) যেমন কেউ দু’জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে দশদিনের জন্য কোন মহিলাকে বিবাহ করলো। (আল হিদায়াহ্ মায়াদ দিরায়াহ্ ২য় জিঃ ৩১২, ৩১৩ পৃষ্ঠা, ফতহুল্ ক্বদীর ৩য় জিঃ ১৪৯, ১৫০ পৃষ্ঠা)

[১৭৬০-১৭৭৫]

)قوله ونكاح المتعة با طل وهو ان يقول لامراة) ….. (اتمتع بك كذا مدة) عشرة ايام مثلا اويقول اياما او متعينى نفسك ايام اوعشرة ايام او لم يذكر اياما (بكذا من المال) قال الشيخ الاسلام فى الفرق بينه وبين النكاح الموقت ان يذكر الموق بلفظ النكاحوالتزويج وفى المتعة اتمتع او استمتع. يعنى ما اشتمل على مادة متعة والذى يظهر مع ذلك عدم اشتراط الشهود فى المتعة وتعيين المدة وفى الموقت الشهود وتعيينها …… (قلنا قد ثبت النسخ باجماع الصحابة رضى الله عنهم) (فتح القدير ج ৩ ص ১৪৯، ১৫০، كفية ج ৩ ص ১৫০، ১৫১، شرح العناية ج ৩ ص ১৫০، حاشية سعدى …. ج ৩ ص ১৫০، بخارى شريف، فتح البارى، عمدة القارى، ارشاد السارى، شرح الكرمانى، تيسير البارى، مسلم شريف، شرح النووى، شرح الابى والسنوسى، المفهم، فتح الملهم للتقى عثمانى، وشبير احمد عثمانى)

অর্থঃ- (মুছান্নিফের উক্তিঃ মুতয়া বিবাহ বাতিল। মুতয়া বিবাহ হলোঃ কোন মহিলাকে এভাবে বলা যে,) … … … (আমি তোমাকে এত দিনের জন্য ভোগ করবো) যেমন দশ দিন অথবা বলবে অনির্দিষ্ট দিন অথবা তুমি স্বয়ং আমার ভোগ্যের মধ্যে অনির্দিষ্ট দিনে, অথবা দশদিন নতুবা কোন দিনের কথা উল্লেখ করবে না। (এ পরিমান মালের বিনিময়ে) হযরত শাইখুল্ ইসলাম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, নিকাহে মুতয়া এবং নিকাহে মুওয়াক্কাত এর মধ্যে পার্থক্য আছে। নিকাহে মুওয়াক্কাতে نكاح নিকাহ ও تزويج‘তাযবীজ’ শব্দ উল্লেখ করতে হয়। আর নিকাহে মুতয়া বা মুতয়া বিবাহে اتمتعআতামাত্তাউ’ অথবা استمتع ‘আস্তাম্তিউ’ শব্দ উল্লেখ করতে হয়। অর্থাৎ নিকাহে মুতয়া’য় দু’জন স্বাক্ষী এবং দিন শর্ত নয়, কিন্তু নিকাহে মুত্তয়াক্কাতে স্বাক্ষী এবং দিনের নিদিষ্টতা শর্ত। ………….. (আমরা হানাফীগণ বলি যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণের ইজমা-এর মাধ্যমে মুতয়া বিবাহের বৈধতা মানছুখ বা রহিত হওয়া সাব্যস্ত হয়েছে।) … … … (ফতহুল্ ক্বদীর ৩য় জিঃ ১৪৯, ১৫০ পৃষ্ঠা, হাশিয়ায়ে সা’দী চল্পী ৩য় জিঃ ১৫০ পৃষ্ঠা, বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহুল কিরমানী, তাইসীরুল বারী, মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী, শরহুল উবাই ওয়াস্ সিনূসী, আল মুফহিম, ফতহুল মুলহিম লিত্ তক্বী উছমানী, ওয়া শিব্বীর আহমদ উছমানী)

(অসমাপ্ত) পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন

ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র, মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া – (১২)

ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র, মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া – (১৩) 

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মানহানীকারীদের একমাত্র শরঈ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এবং তৎসংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে আখাছ্ছুল খাছ সম্মানিত বিশেষ ফতওয়া মুবারক (৩৪তম পর্ব)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত ও দিন মুবারক উনাদের সম্মানিত আমল মুবারকসমূহ উনাদের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬১তম পর্ব)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে- মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক যারা ভাঙবে, ভাঙ্গার কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করবে বা সমর্থন করবে তাদের প্রত্যেকের শরঈ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও তৎসংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া- (পর্ব-৩৬)