প্রকাশিত ফতওয়াসমূহ
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীনের জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। আল্লাহ্ পাক-এর অশেষ রহ্মতে “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব-এর অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীল ভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা) ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যায়) এবং ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা) ২৭. এবং ১৬১তম সংখ্যা থেকে ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া পেশ করার পাশাপাশি ১৬৮তম সংখ্যা থেকে-
২৮তম ফতওয়া হিসেবে
“কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মুর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্ট প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করে আসতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবারে বেশুমার শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মুর্তি তৈরী করা, করানো ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ
সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরিকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” এমন সব লেখাই পত্রস্থ হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ ও হিফাযতকরণে বিশেষ সহায়ক। বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো- ‘ওহাবী সম্প্রদায়’। ইহুদীদের এজেন্ট ওহাবী মতাবলম্বী উলামায়ে ‘ছূ’রা হারাম টিভি চ্যানেল, পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদি ও বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে একের পর এক হারামকে হালাল, হালালকে হারাম, জায়িযকে নাজায়িয, নাজায়িযকে জায়িয বলে প্রচার করছে। স্মরনীয় যে, ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী দাজ্জালে কায্যাব তথা উলামায়ে ‘ছূ’রা প্রচার করছে “ছবি তোলার ব্যাপারে ধর্মীয় কোন নিষেধাজ্ঞা নেই” (নাউযুবিল্লাহ)। সম্প্রতি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, “নির্বাচন কমিশনার বলেছে, ছবি তোলার বিরুদ্ধে বললে জেল-জরিমানা হবে, নির্বাচন কমিশনার ভোটার আই. ডি কার্ডের জন্য ছবিকে বাধ্যতামূলক করেছে এবং ছবির পক্ষে মসজিদে মসজিদে প্রচারণা চালাবে বলেও মন্তব্য করেছে। আর উলামায়ে ‘ছূ’রা তার এ বক্তব্যকে সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছে যে, “রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে পুরুষ-মহিলা সকলের জন্যই ছবি তোলা জায়িয।” (নাউযুবিল্লাহ) শুধু তাই নয় তারা নিজেরাও অহরহ ছবি তুলে বা তোলায়।
অথচ তাদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, চরম বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক। তাদের এ বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তেক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আ’মালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুক্ষীণ হচ্ছে।
কারণ, তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যারা এ আক্বীদা পোষণ করবে যে, “রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে ছবি তোলা জায়িয” তারা ঈমান হারা হয়ে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে। কারণ শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম বা নাজায়িযকে হালাল বা জায়িয বলা কুফরী। কেননা কিতাবে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে,
استحلال المعصية كفر.
অর্থাৎ, “গুণাহের কাজ বা হারামকে হালাল মনে করা কুফরী।” (শরহে আক্বাঈদে নাসাফী)
অতএব বলার আর অপেক্ষাই রাখেনা যে, উলামায়ে “ছূ”দের উক্ত বক্তব্য সাধারণ মুসলমানদের আক্বীদা বা ঈমানের জন্য বিশেষভাবে হুমকিস্বরূপ।
অনরূপ “ছবি তোলার ব্যাপারে ধর্মীয় কোন নিষেধ নেই বা রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে সকলের জন্য ছবি তোলা জায়িয” উলামায়ে “ছূ”দর এ কুফরীমূলক বক্তব্য সাধারণ মুসলমানদের আমলের ক্ষেত্রেও বিশেষ ক্ষতির কারণ। কেননা যারা তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে ছবি তুলবে (যদিও হারাম জেনেই তুলুক না কেন) তারা আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব কর্তৃক নিষিদ্ধকৃত কাজে তথা হারাম কাজে মশগুল হবে যা শক্ত আযাব বা কঠিন গুণাহের কারণ। কেননা হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
قال حد ثنا الا عمش عن مسلم قال كنا مع مسر وق فى دار يسار بن نمير فراى فى صفته تماثيل فقال سمعت عبد الله قال سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول ان اشد الناس عذا با عند الله المصور ون.
অর্থঃ হযরত আ’মাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মুসলিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি মাসরুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর সঙ্গে ইয়াসার ইবনে নুমাইরের ঘরে ছিলাম, তিনি তাঁর ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি দেখতে পেলেন, অতঃপর বললেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ্র নিকট শুনেছি, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয় মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ্ পাক কঠিন শাস্তি দেবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ৮৮০)
উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় “উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারীতে” উল্লেখ আছে,
وفى التوضيح قال اصحا بنا وغيرهم صورة الحيوان حرام اشد التحر يم وهم من الكبائر.
অর্থঃ “তাওজীহ্” নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, হযরত উলামায়ে কিরাম বলেন, জীব জন্তুর ছবি বা প্রতিমূর্তি নির্মাণ করা নিষেধ, বরং কঠোর নিষিদ্ধ কাজ (অর্থাৎ হারাম) এটা কবীরাহ্ গুনাহ্।
অতএব, নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, উলমায়ে “ছূ”দের উক্ত বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ছবি তুলে প্রকাশ্য হারাম কাজে মশগুল হয়ে কঠিন আযাবের পাত্র হবে যা আমলের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ক্ষতিকর।
কাজেই যারা এ ধরণের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী তারা ও হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণ ঈমান ও আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে। অর্থাৎ মূর্তি বা ছবিসহ সকল বিষয়ে আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজাম, ইজমা ও ক্বিয়াস মোতাবেক আমল করে আল্লাহ্ পাক-এর রেজামন্দী হাছিল করতে পারে। সে জন্যই “কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মুর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম- নাজায়িয হওয়ার অকাট্ট প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়াটি” পুণরায় প্রকাশ করা হলো।
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
প্রাণীর ছবিকে হালাল বা জায়িয আখ্যাদানকারীরা মালউন ইবলীস ও কাট্টা কাফির কাদিয়ানীর ক্বায়িম-মক্বাম
মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ করেন,
وما اتكم الر سول فخذوه وما نهكم عنه فا نتهوا وا بقوا الله ان الله شد يد العقاب.
অর্থঃ “রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদেরকে যা (পালন করার আদেশ) দান করেন তা যথাযথ পালন কর এবং যা থেকে বিরত থাকার আদেশ দান করেন তা থেকে বিরত থাক। এ বিষয়ে আল্লাহ পাককে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তিদাতা।” (সূরা হাশর-৭)
এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয় যে, হাম্বলী মাযহাবের ইমাম, ইমামুল মুহাদ্দিছীন হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি একবার ফতওয়া দিলেন যে, “সমস্ত সুন্নত পালন করা ফরয।” তিনি যখন এ ফতওয়া দিলেন, তখন তাঁর সমসাময়িক উলামায়ে কিরাম তাঁর দরবার শরীফে আসলেন। এসে বললেন, হে হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি! আমরাতো আপনাকে বড় আলিম, ফক্বীহ ও মুহাদ্দিছ হিসেবেই জানি, কিন্তু আপনি এটা কেমন ফতওয়া দিলেন? আপনি যে বলেছেন, “সমস্ত সুন্নত পালন করা ফরয” আপনার এ ফতওয়ার পিছনে কোন দলীল আছে কি? হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, অবশ্যই আমার দলীল রয়েছে বরং কেৎয়ী বা অকাট্য দলীল রয়েছে। তখন তিনি তিলাওয়াত করলেন,
وما اتكم الر سول فخذوه وما نهكم عنه فا نتهوا واتقوا الله ان الله شد يد العقاب.
অর্থঃ “রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদেরকে যা (পালন করার আদেশ) দান করেন তা যথাযথ পালন কর এবং যা থেকে বিরত থাকার আদেশ দান করেন তা থেকে বিরত থাক। এ বিষয়ে আল্লাহ পাককে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তিদাতা।” (সূরা হাশর-৭ )
এ আয়াত শরীফ শুনে উপস্থিত সকল উলামায়ে কিরাম লা জাওয়াব হয়ে গেলেন এবং বললেন যে আমরা দলীল পেয়েছি। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক-এর প্রতিটি আদেশ নিষেধ মানা বা পালন করা যেরূপ বান্দার জন্য ফরয। তদ্রুপ নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতিটি আদশে নিষেধ মানা বা পালন করাও উম্মতের জন্য ফরয। শুধু যাহেরান মানলে চলবে না বরং জিসমানী, রূহানী বা জাহিরী-বাতিনী প্রত্যেক অবস্থাতে তা মেনে নিতে হবে। কোন একটি বিষয়েও যদি সামান্যতম চুচেরা, ক্বিল-ক্বাল অন্তরে থাকে তবে সে কস্মিনকালেও ঈমানদার থাকতে পারবে না। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ করেন,
وما كان لمؤ من ولامؤ منة اذا قضى الله ور سوله امرا ان يكون لهم الخيرة من امر هم ومن يعص الله ور سوله فقد ضل ضللا مبينا.
অর্থঃ “কোন মু’মিন নর-নারীর জন্য জায়িয হবেনা, আল্লাহ্ পাক এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ফায়ছালা করেছেন, সেই ফায়ছালার মধ্যে চু-চেরা, ক্বিল ও ক্বাল করা বা নিজস্ব মত পেশ করা। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূলের নাফরমানী করবে সে প্রকাশ্য গুমরাহে গুমরাহ হবে।” (সূরা আহযাব-৩৬)
এ আয়াত শরীফের শানে নুযূল সম্পর্কে বলা হয়, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর এক ফুফাতো বোন ছিলেন, হযরত যয়নাব বিনতে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা । উনাকে বিয়ে দিতে হবে। উনার জন্য একটা ছেলে খুঁজতেছিলেন। এদিকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চিন্তা করলেন, হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বিয়ে করাতে হবে, আর হযরত যয়নাব বিনতে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে বিয়ে দিতে হবে। এখন একজন ছেলে দরকার, একজন মেয়ে দরকার। আর যদি এই ছেলে-মেয়েকে বিয়ে করায়ে দেয়া হয়, তাহলে তো আর ছেলে-মেয়ের দরকার হয়না। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মনে মনে চিন্তা করলেন, হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর কাছে হযরত যয়নাব বিনতে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে বিয়ে দিয়ে দেয়া হবে। উনি এটা চিন্তা করলেন। এ সংবাদ গিয়ে পৌঁছলো হযরত যয়নাব বিনতে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর কাছে এবং উনার ভাই হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর কাছে। উনাদের কাছে গিয়ে যখন সংবাদ পৌঁছলো, পৌঁছার পর উনারা মনে মনে চিন্তা করলেন, বিয়ে শাদীর মধ্যে কুফু একটা শর্ত আছে, অর্থাৎ ‘সমকক্ষতা’। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনি শুধু মনে মনে চিন্তা করলেন, আমরা কোরাইশ বংশীয়। আর হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তো কোরাইশ বংশীয় নন তাহলে কুফুর কি হবে। উনি এটা চিন্তা করলেন মাত্র, এই চিন্তা করার সাথে সাথেই আল্লাহ্ পাক আয়াত শরীফ নাযিল করে দিলেন,
وما كان لمؤ من ولا مؤمنة اذا قضى الله ورسوله امرا ان يكون لهم الخيرة من امرهم ومن يعص الله ورسوله فقد ضل ضللا مبينا.
অর্থঃ “কোন মু’মিন নর-নারীর জন্য জায়িয হবেনা, আল্লাহ্ পাক এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ফায়ছালা করেছেন, সেই ফায়ছালার মধ্যে চু-চেরা, ক্বিল ও ক্বাল করা বা নিজস্ব মত পেশ করা। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূলের নাফরমানী করবে সে প্রকাশ্য গুমরাহে গুমরাহ হবে।” (সূরা আহযাব-৩৬)
হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত যয়নাব বিনতে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাদের কাছে গিয়ে যখন আয়াত শরীফ পৌঁছলো, উনারা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা কখনো দ্বিমত পোষণ করি নাই। তবে চিন্তা করেছিলাম ‘কুফু’ হবে কিনা?
অতএব প্রমাণিত হলো যে, আল্লাহ পাক-এর রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ফায়ছালা করেছেন, তার মধ্যে যারা চু-চেরা, ক্বিল ও ক্বাল করবে তারা মু’মিন থাকতে পারবে না।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক অন্য আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,
فلا وربك لا يؤ منون حتى يحكموك فيما شجر بينهم ثم لا يجدوا فى انفسهم حر جا مما فضيت ويسلموا تسليما.
অর্থঃ “আল্লাহ পাক-এর কসম! তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের জাহেরী এবং বাতেনী প্রত্যেক বিষয়ে আল্লাহ্র রাসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ফায়ছালাকারী-কাজী হিসেবে মেনে না নিবে। এবং যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের অন্তরে সে বিষয়ে চু চেরা, ক্বীল ক্বাল থাকবে। বরং (বাহ্যিক-আভ্যান্তরীন) উভয় দিক থেকে তা আনুগত্যতার সাথে মেনে নিতে হবে।” (সূরা নিসা-৬৫)
এ আয়াত শরীফ-এর শানে নুযূল সম্পর্কে বলা হয়, এক ব্যক্তি ছিল, তার নাম ছিল বিশর। সে মুসলমান দাবী করতো, হাক্বীক্বত সে ছিল মুনাফিক। এই মুনাফিক বিশরের সাথে এক ইহুদীর সাথে গন্ডগোল হয়ে যায়। যখন গন্ডগোল হয়ে গেল, তখন মুনাফিক বিশরকে ইহুদী বললো, হে বিশর এটার বিচার বা ফায়ছালা করতে হবে। কে বিচার করবেন? ইহুদী বললো, তোমাদের যিনি নবী ও রসূল, যিনি আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিচার করবেন। মুনাফিক বিশর মনে মনে চিন্তা করলো, আল্লাহ্র রাসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি বিচার করেন, উনি তো হক্ব বিচার করবেন, যেহেতু ইহুদী হক্ব, ইহুদীর পক্ষে রায় চলে যাবে। তখন মুনাফিক বিশর বললো যে, না তুমি এক কাজ কর, তোমাদের যে বিচারক, কাব ইবনে আশরাফ অথবা আবু রফে ইহুদী রয়েছে তারা বিচার করবে। কিন্তু ইহুদী ব্যক্তি জানতো যে, কাব ইবনে আশরাফ অথবা আবু রফে যদি বিচার করে, তাহলে তারা মুনাফিকী করবে। হেরফের করবে, তারা ঘুষ খেয়ে পক্ষপাতিত্ব করবে। কারণ পূর্বেও তারা এমন অনেক করেছে যার নযীর রয়েছে। তখন সেই ইহুদী বললো না, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিচার করবেন। এই কথা বলে মুনাফিক বিশরকে বুঝিয়ে নিয়ে গেল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে। বিচার হয়ে গেল, আল্লাহ পাক-এর রাসূল বিচার করলেন। মুনাফিক বিশরের বিরুদ্ধে ইহুদীর পক্ষে রায় পড়লো, ইহুদী জিতে গেল। মুনাাফিক বিশর সেখানে তা বাহ্যিকভাবে মেনে নিলেও দরবার শরীফ থেকে বের হয়ে বললো, বিচারটা আমার মনপুতঃ হচ্ছে না। নাউজুবিল্লাহ। ইহুদী বললো, হে বিশর তুমি বল কি? তোমাদের যিনি রসূল, যিনি আল আমীন তাঁর বিচার তোমার মনপুতঃ হয়নি? তবে তুমি কার বিচার মানবে? সেই যামানায় হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বিচার করতেন। মুনাফিক বিশর সে মনে করলো যে, হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর খুব জালালী তবিয়ত। উনার প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেন,
اشداء على الكفار
অর্থাৎ “হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কাফেরদের প্রতি কঠোর।” (সূরা ফাত্হ-২৯)
তিনি হয়তো আমার পক্ষেই রায় দিবেন এবং ইহুদী কাফির তার বিপক্ষে রায় দিবেন। মুনাফিক বিশর সে ইহুদীকে নিয়ে গেল হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর কাছে বিচারের জন্য। ইহুদী খুব চালাক ছিল, সে বললো, হে উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! এই বিশর আমাকে নিয়ে এসেছে আপনার কাছে বিচারের জন্য, অথচ আমরা এই মাত্র আল্লাহ পাক-এর রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবারে নববী শরীফ থেকে আসলাম তিনি নিজে বিচার করে দিয়েছেন। রায় আমার পক্ষে দেয়া হয়েছে। কিন্তু বিশর সে বিচার মানতে নারাজ সেজন্য সে আমাকে আপনার কাছে নিয়ে এসেছে পুনরায় বিচার করার জন্য। হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু একথা শুনে বললেন, ঠিক আছে তোমরা বস, আমি তোমাদের বিচার করব। উনি ঘরে প্রবেশ করলেন, ঘরে প্রবেশ করে একটা তরবারী নিয়ে আসলেন। তরবারী এনে মুনাফিক বিশরকে এক কোপে দু’ভাগ করে দিলেন এবং বললেন, এটাই তোমার বিচার। কারণ, আল্লাহ পাক-এর রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে বিচার করেছেন, সেটা তুমি মান নাই। তোমার একমাত্র শাস্তি ও বিচার মৃত্যুদন্ড। যখন উনি তাকে হত্যা করে ফেললেন, তখন মুনাফিক বিশরের আত্মীয়-স্বজন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে গিয়ে বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্! হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে আপনি বিচারের দায়িত্ব দিয়েছেন। উনি আমাদের একজন আত্মীয়কে হত্যা করে ফেলেছেন। আল্লাহ পাক-এর রাসূল বললেন, দেখ এটা কি করে সম্ভব? হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনি তো খাছ লোক-
لوكان بعدى نبى لكان عمر بن الخطاب رضى الله تعالى عنه.
“আমার পরে যদি কেউ নবী হতো, তাহলে হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নবী হতেন।” কাজেই উনার পক্ষে এটা সম্ভব নয়, ঠিক আছে উনাকে ডাকা হোক। হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে আনা হলো। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “হে উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনি নাকি একজনকে হত্যা করেছেন?” হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মূলতঃ আমি তাকে হত্যা করার কারণ হচ্ছে- সে মুনাফিকী করেছে। আপনি যে বিচার করেছিলেন, সে বিচার সে মানেনি, সেজন্য আমি তাকে হত্যা করেছি। আল্লাহ পাক-এর রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “হে উমর ইবনুল খাত্তাব! আপনি যে তাকে হত্যা করেছেন, সে যে মুনাফিকী করেছে, তার প্রমাণ কি? কোথায় আপনার দলীল, আপনার সাক্ষী কোথায়?” যেহেতু ইসলামে সাক্ষী ছাড়া কোন কথা গ্রহণযোগ্য নয়। হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু চুপ করে রইলেন। সাথে সাথে আল্লাহ্ পাক স্বয়ং নিজে সাক্ষী হয়ে গেলেন। আল্লাহ্ পাক আয়াত শরীফ নাযিল করে দিলেন-
فلا وربك لايؤ منون حتى يحكمو ك فيما شجر بينهم ثم لا يجد وا فى انفسهم حر جا مما قضيت وسلموا تسليما.
অর্থঃ “আল্লাহ পাক-এর কসম! তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের জাহেরী এবং বাতেনী প্রত্যেক বিষয়ে আল্লাহ্র রাসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ফায়ছালাকারী-কাজী হিসেবে মেনে না নিবে। এবং যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের অন্তরে সে বিষয়ে চু চেরা, ক্বীল ক্বাল থাকবে। বরং (বাহ্যিক-আভ্যান্তরীন) উভয় দিক থেকে তা আনুগত্যতার সাথে মেনে নিতে হবে।” (সূরা নিসা-৬৫)
আল্লাহ্ পাক উক্ত আয়াত শরীফ নাযিল করে জানিয়ে দিলেন- “(ইয়া রাসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্, আমিই সাক্ষী) আল্লাহ্ পাক-এর কসম, কোন ব্যক্তি মু’মিনে কামিল হতে পারবে না ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ পর্যন্ত সে ব্যক্তি আপনাকে সীরতান-ছূরতান, জাহিরী-বাতিনী, বাহ্যিক-আভ্যন্তরীণ প্রত্যেক দিক দিয়ে কাজী বা ফায়ছালাকারী হিসেবে মেনে না নিবে। আপনার হুকুম-আহ্কাম না মেনে নিবে।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রামণিত হলো যে, মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ফায়ছালা দিয়েছেন তার প্রত্যেকটিই বিনা চু-চেরা ও ক্বিল-ক্বালে মেনে নিতে হবে। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা হালাল করেছেন তা হালাল জানতে ও মানতে হবে। আর যা হারাম করেছেন তা হারাম জানতে ও মানতে হবে বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীন উভয় দিক দিয়ে। এর খিলাফ যে করবে সে কস্মিনকালেও মুসলমান থাকতে পারবে না।
তাই যারা শরীয়তের সুস্পষ্ট হারামগুলোকে হারাম বলে স্বীকার করেনা বরং হালাল বা জায়িয বলে ফতওয়া দেয় তাদের ব্যাপারে ফায়ছালা দিয়ে আল্লাহ পাক বলেন,
قا تلوا الذ ين لايؤ منون بالله ولا باليوم الاخر ولا يحرمون ما حرم الله ورسوله ولايد ينون دين الحق
অর্থঃ “তোমরা জিহাদ কর ঐ সমস্ত লোকদের সাথে যারা আল্লাহ পাক এবং পরকালের প্রতি ঈমান রাখেনা, আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল যা হারাম করেছেন তা হারাম মানেনা এবং দ্বীন ইসলামকে হক্ব, পরিপূর্ণ, মনোনীত দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করে না।” (সূরা তওবা-২৯)
অর্থাৎ যারা শরীয়ত নির্বারিত হারাম সমূহকে হারাম স্বীকার করেনা এবং হালাল সমূহকে হালাল মানেনা বরং হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দেয় শরীয়তের দৃষ্টিতে তারা কাট্টা কাফির। ইসলামী খিলাফত থাকলে তাদেরকে তওবার জন্য তিন দিন সময় দেয়া হতো তিন দিনের মধ্যে তওবা না করলে তাদের একমাত্র শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড।
শুধু তাই নয়, যারা সুস্পষ্ট দলীল দ্বারা প্রমাণিত হারামগুলোকে হারাম স্বীকার করবে না এবং হালালগুলোকেও হালাল স্বীকার করবে না বরং মনগড়া মত পেশ করবে বা কুফরীর মধ্যে দৃঢ় থাকবে কস্মিনকালেও তারা হিদায়েতের উপর থাকতে পারবে না। বরং তারা গোমরাহ ও বিভ্রান্ত হয়ে যাবে এবং তাদের উপর অনন্তকাল ধরে লা’নত বর্ষিত হতে থাকবে।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক বলেন,
كيف يهدى الله قوما كفروا بعد ايما نهم وشهد وا ان الر سول حق وجا ئهم البينت والله لا يهدى القوم الظلمين. اولئك جزاؤهم ان عليهم لعنة الله والملئكة والناس اجمعين. خلد ين فيها لايخفف عنهم العذاب ولاهم ينظرون.
অর্থঃ “আল্লাহ পাক কি করে ঐ সম্প্রদায়কে হিদায়েত দান করবেন যারা ঈমান আনার পর কুফরী করে এবং তারা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্য এবং তাদের নিকট কুরআন-সুন্নাহর দলীল আসার পর। আল্লাহ পাক যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়েত দান করেন না। ঐ সমস্ত লোকদের শাস্তি হলো, তাদের প্রতি আল্লাহ পাক-এর, ফেরেশতাগণের এবং সমস্ত মানুষের লা’নত। অনন্তকাল ধরে সেই লা’নতের মধ্যে তারা থাকবে। তাদের উপর শাস্তি লাঘব করা হবেনা এবং তাদেরকে অবসরও দেয়া হবেনা।” (সূরা আলে ইমরান-৮৬, ৮৭, ৮৮)
উপরোক্ত আয়াত শরীফে আল্লাহ পাক নিজেই বলেন, যারা ঈমান আনার পর এবং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবী-রসূল হিসেবে স্বাক্ষ্য দেয়ার পর আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রদত্ত বিধান কুরআন-সুন্নাহ পাওয়ার পরও যারা ইসলামের বিপরীত নিজের মনগড়া, নিয়মনীতি বা আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে থাকে তাদেরকে আল্লাহ পাক জালিম ও মালউন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। যেমন, ইবলিস ও কাফিরদেরকে আল্লাহ পাক মালউন ও জালিম হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন।
এক্ষেত্রে প্রথমতঃ মালউন ইবলীসের উদাহরণ পেশ করা যায়।
ইবলীস এমন এক ব্যক্তি যে ছয় লক্ষ বৎসর আল্লাহ পাক-এর ইবাদত-বন্দেগী করেছিল। এমনকি সে শেষ পর্যন্ত “মুয়াল্লিমুল মালাকুত” বা ফেরেশ্তাদের উস্তাদ হয়ে তাঁদেরকে তা’লীম-তালক্বীন দেয়। এত কিছুরপরও ইবলীস মালউন, কাফির ও চির জাহান্নামী হয়ে গেল, তার আকৃতি-বিকৃতি ঘটলো কি কারণে?
এ প্রসঙ্গে বলা হয়, মহান আল্লাহপাক যখন হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে সৃষ্টি করেন, সৃষ্টি করার পর আল্লাহ পাক ইবলীসসহ সকল ফেরেশ্তাদেরকে আদেশ করলেন যে,
واذ قلنا للملئكة اسجد وا لادم.
অর্থাৎ, “মহান আল্লাহ পাক বলেন, ইবলীসসহ সকল ফেরেশ্তারা আমার নবী হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে সিজদা কর।” (সূরা বাক্বারা-৩৪)
فسجد وا الا ابليس
অর্থাৎ, তখন সকল ফেরেশ্তাগণই সিজদা করলেন। কিন্তু ইবলীস সিজাদ করলো না। (সূরা বাক্বারা-৩৪)
তখন আল্লাহ পাক ইবলীসকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে ইবলীস
ما منعك الا تسجد اذ امر تك
অর্থাৎ, আমি আদেশ করার পরও কোন জিনিষ তোকে সিজদা করার থেকে বিরত রাখলো? (সূরা আ’রাফ-১২)
ইবলীস তখন মনগড়া যুক্তি দাড় করালো। সে বললো,
ا نا خير منه خلقتنى من نار وخلقته من طين
অর্থাৎ, আমি হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম থেকে শ্রেষ্ঠ। কারণ তাকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। আর আমাকে আগুণ দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে।” (সূরা ছোয়াদ-৭৬)
তাই আমি তাঁকে সিজদা করিনি।
আল্লাহ পাক বলেন,
ا بى واستكبر وكان من الكا فر ين.
অর্থাৎ, ইবলীস সিজদা করতে অস্বীকার করলো বা আল্লাহ পাক-এর আদেশ অমান্য করলো এবং তাকাব্বুরী বা অহংকার করলো। ফলে সে কাফিরদের অন্তর্ভূক্ত হলো। (সূরা বাক্বারা-৩৪)
অন্য আয়াত শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক বলেন,
فا خرج منها فا نك رجيم
“হে ইবলীস! তুই জান্নাত থেকে বের হয়ে যা। কারণ তুই বিতারিত।” (সূরা ছোয়াদ-৭৭)
অন্যত্র আরো ইরশাদ করেন,
ان عليك لعنتى الى يوم الد ين
“অনন্তকাল ধরে তোর প্রতি আমার লা’নত বর্ষিত হতেই থাকবে।” (সূরা ছোয়াদ-৭৮)
এখানে ফিকিরের বিষয় হলো- ইবলীস ছয়লক্ষ বৎসর আল্লাহ পাক-এর ইবাদত করার পরও, ফেরেশ্তাদের লক্ষ লক্ষ বৎসর তা’লীম দেয়ার পরও আল্লাহ পাক-এর একটি মাত্র আদেশ অমান্য বা অস্বীকার করার কারণে সে কাট্টা কাফির হয়ে গেল। তার ছয় লক্ষ বৎসরের ইবাদত বিফলে গেল। সে জান্নাত থেকে বিতাড়িত হলো, চীর জাহান্নামী হলো এবং অনন্তকাল তার উপর মহান আল্লাহ পাক-এর লা’নত বর্ষিত হতেই থাকবে।
তাহলে যারা মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অসংখ্য আদেশ-নিষেধ অমান্য বা অস্বীকার করে। যেমন পর্দাকে ফরয করেছেন, ছবি তোলাকে হারাম করেছেন ইত্যাদি। এগুলোকে যারা অমান্য ও অস্বীকার করবে তাদের কি ফায়ছালা হবে? মূলতঃ তারাও ইবলীসেরই কায়িম-মক্বাম হবে। অর্থাৎ তাদের অবস্থা ইবলীসের মতই হবে।
দ্বিতীয়তঃ কাট্টা কাফির কাদিয়ানীর উদাহরণ পেশ কারা যায়-
আমাদের আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের সকলের ঐক্যমতে মির্জা গোলাম কাদিয়ানী ও তার অনুসারীরা কাট্টা কাফির। তবে প্রশ্ন হলো তারা কেন কাফির? তারা কি আল্লাহ পাককে মানতোনা? রসূলকে মানতো না? নামায পড়তো না? রোযা রাখতোনা?
মূলতঃ তারা আল্লাহ পাক ও তাঁর রসুলকে মানতো, নামাযও পড়তো এবং রোযাও রাখতো। এর পরও তারা কাট্টা কাফির ও চীর জাহান্নামী হলো কেন?
শরীয়তের একটিমাত্র বিষয়কে অস্বীকার ও অমান্য করার কারণেই তারা কাট্টা কাফির ও চীর জাহান্নামী হয়েছে। মহান আল্লাহ পাক কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ করেন,
ما كان محمد ابا احد من رجا لكم ولكن رسول الله وخا تم النبين.
অর্থঃ “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদের মধ্যস্থিত কোন পুরুষের পিতা নন। বরং তিনি আল্লাহ পাক-এর রসূল এবং শেষ নবী।” (সূরা আহযাব-৪০)
আর হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
ا نا خاتم النبين لا نبى بعدى
অর্থাৎ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমিই শেষ নবী। আমার পর কোন নবী আগমণ করবেনা।”
মির্জা গোলাম কাদিয়ানী মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপরোক্ত ফায়ছালা অমান্য ও অস্বীকার করে, উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফের মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে নবী দাবী করার কারণে কাট্টা কাফির ও চীর জাহান্নামী হয়েছে।
যদি তাই হয়ে থাকে, তবে আজকে যারা ছবি ও পর্দাসহ মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীবের অসংখ্য ফায়ছালা বা আদেশ-নিষেধ অমান্য বা অস্বীকার করছে এবং মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে হালালকে হারাম ও হারামকে হালাল বলে ফতওয়া দিচ্ছে ও প্রচারনা চালাচ্ছে তাদের কি ফায়ছালা?
মূলতঃ নিঃসন্দেহে তারাও কাদিয়ানীর ন্যয় কাট্টা কাফির ও চীর জাহান্নামী হবে। অর্থাৎ তারা কাদিয়ানীরই কায়িম-মক্বাম। কাদিয়ানী হলো- স্বঘোষিত নবী। আর যারা হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম বলে তারা হচ্ছে অঘোষিত নবীর দাবিদার। কারণ ইসলামকে পরিপূর্ণ করে দেয়া হয়েছে। যা হালাল তা হালাল সাব্যস্ত হয়ে গেছে এবং যা হারাম তাও হারাম সাব্যস্ত হয়ে গেছে। ওহীর দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন করে আর ওহী নাযিল হবে না। এবং নতুন কোন বিধানও আর নাযিল হবে না। সুতরাং হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম বলার অর্থ হলো ওহী ও নতুন বিধান নাযিল হওয়ার দাবী করা যা মূলত নবী দাবী করারই নামান্তর।
এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত মুফাস্সির ও আলিমে হক্ব হযরত আবু সাঈদ মুল্লাজিউন রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর একটি ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
কিতাবে উল্লেখ আছে যে, বাদশা শাহ্জাহান একবার তার দরবারী আলেমদের নিকট ফতওয়া তলব করে বললেন- আমি অসুস্থ, অসুস্থতার কারণে আমার জন্যে রেশমী কাপড় পরিধান করা জায়েয হবে কি? দরবারী আলেমরা বাদশার মনতুষ্টির জন্যেই হোক বা দুনিয়াবী ফায়দা লাভের জন্যেই হোক, তারা ফতওয়া দিল, বাদশা নামদার যেহেতু আপনি অসুস্থ আর আপনি অসুস্থ হয়ে পড়লে রাজ্য অচল হয়ে পড়বে, কাজেই রাজ্য ও প্রজাদের বৃহত্তর স্বার্থে আপনার জন্যে এ অবস্থায় রেশমী কাপড় পরিধান করা জায়েয হবে। বাদশা তার দরবারী আলেমদের মৌখিক ফতওয়ায় আশ্বস্ত না হতে পেরে লিখিত ফতওয়ার নির্দেশ দিলেন। দরবারী আলেমরা বাদশাহ্কে এ ব্যাপারে লিখিত ফতওয়া দিল। বাদশা তাতেও নিশ্চিন্ত হতে পারলেন না, তাই তিনি বললেন, এ ফতওয়াতে অন্যান্য আরো আলেমের দস্তখত লাগবে। দরবারী আলেমরা তখন তাদের সমগোত্রীয় তিনশত আলেমের দস্তখত সংগ্রহ করে ফতওয়াটি বাদশাহ্র নিকট পেশ করলো। বাদশাহ্ ফতওয়াটি আদ্যপান্ত ভালরূপে পাঠ করে দেখলেন এবং বললেন যে, সেখানে তার শাহী মসজিদের যিনি খতীব, নূরুল আনোয়ার ও তাফসীরে আহ্মদীর ন্যায় বিশ্ববিখ্যাত কিতাবের মুছান্নিফ, তৎকালীন যামানার শ্রেষ্ঠতম আলেম, হযরতুল আল্লামা, মোল্লা যিয়ূন রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দস্তখত ব্যতীত এ ফতওয়া গ্রহণযোগ্য হবেনা। তখন দরবারী আলেমরা উক্ত ফতওয়াটি হযরত মোল্লা যিয়ূন রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দরবারে নিয়ে যায় দস্তখত নেয়ার জন্য। হযরত মোল্লা যিয়ূন রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, আমি আজ এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করবোনা, বরং বাদশা আমার মসজিদে জুময়ার নামাজ পড়তে আসেন, তাই আমি বাদশা ও মুছল্লীগণের সম্মুখে এ ব্যাপারে ফতওয়া দিব। অতঃপর জুময়ার দিন বাদশা তাঁর উজীর-নাজীরসহ জুময়ার নামাজ পড়ার জন্যে মসজিদে গেলেন। অনেক মুছল্লীও উপস্থিত হলেন এবং দরবারী আলেমরাও উপস্থিত। সকলেই অপেক্ষা করছে হযরত মোল্লা যিয়ূন রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ফতওয়া শোনার জন্যে। ইতিমধ্যে হযরত মোল্লা যিয়ূন রহমতুল্লাহি আলাইহি মিম্বরে উঠে বসলেন এবং বললেন, মুছল্লী ভাইয়েরা আমার নিকট তিনশত আলেমের দস্তখত সম্বলিত একটি ফতওয়া এসেছে। যাতে বলা হয়েছে যে, বৃহত্তর স্বার্থে, বাদশাহ্র অসুস্থতার কারণে, বাদশার জন্যে রেশমী কাপড় পরিধান করা জায়েয। এ ব্যাপারে আমার ফতওয়া হলো-
مفتی اور مستفتی ھردو کا فراند.
অর্থঃ “যারা এ ফতওয়া দিয়েছে এবং যে চেয়েছে উভয়েই কাফের হয়ে গেছে।”
কারণ, ওহীর দরজা বন্ধ হয়ে গেছে,হারাম হারাম হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে গেছে এবং হালাল হালাল হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে গেছে। তাই শরীয়তের দৃষ্টিতে হারামকে হালাল আর হালালকে হারাম বলা কাট্টা কুফরী। যারা বলবে তারা কাট্টা কাফির হবে।
মূলকথা হলো “প্রাণীর ছবি তোলা, আঁকা, রাখা, দেখা হারাম।” এটা যেহেতু মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ থেকে ওহী দ্বারা সাব্যস্ত হয়ে গেছে। সেহেতু যারা এটাকে মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে হালাল বা জায়িয বলবে তারা আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল-এর ফায়ছালা অস্বীকার ও অমান্য করার এবং নতুন ওহী ও বিধান নাযিলের দাবী করার কারণে মালউন ইবলীস ও কাট্টা কাফির কাদিয়ানীর ক্বায়িম-মক্বাম হিসেবে সাব্যস্ত হবে। অর্থাৎ তারা কাট্টা কাফির ও মুরতাদ হবে। তাদের সমস্ত আমল বরবাদ হবে, তারা জান্নাত থেকে মাহরূম হবে, তাদের আকৃতি বিকৃতি হবে এবং অনন্তকাল আল্লাহ পাক-এর লা’নত তাদের প্রতি বর্ষিত হতেই থাকবে। যেরূপ ইবলীস ও কাদিয়ানীদের উপর হচ্ছে।
অসমাপ্ত
পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন।