ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ  কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মুর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৩

সংখ্যা: ১৭০তম সংখ্যা | বিভাগ:

প্রকাশিত ফতওয়াসমূহ

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীনের জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। আল্লাহ্ পাক-এর অশেষ রহ্মতে “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব-এর অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীল ভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা)  ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যায়) এবং  ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা) ২৭.  এবং ১৬১তম সংখ্যা থেকে ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া পেশ করার পাশাপাশি ১৬৮তম সংখ্যা থেকে-

২৮তম ফতওয়া হিসেবে

“কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মুর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্ট প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করে আসতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবারে বেশুমার শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মুর্তি তৈরী করা, করানো ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ

 সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরিকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায়  বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” এমন সব লেখাই পত্রস্থ  হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ ও হিফাযতকরণে বিশেষ সহায়ক।  বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো- ‘ওহাবী সম্প্রদায়’। ইহুদীদের এজেন্ট ওহাবী মতাবলম্বী উলামায়ে ‘ছূ’রা হারাম টিভি চ্যানেল, পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদি ও বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে একের পর এক হারামকে হালাল, হালালকে হারাম, জায়িযকে নাজায়িয, নাজায়িযকে জায়িয বলে প্রচার করছে।  স্মরনীয় যে, ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী দাজ্জালে কায্যাব তথা উলামায়ে ‘ছূ’রা প্রচার করছে “ছবি তোলার ব্যাপারে ধর্মীয় কোন নিষেধাজ্ঞা নেই” (নাউযুবিল্লাহ)। সম্প্রতি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, “নির্বাচন কমিশনার বলেছে, ছবি তোলার বিরুদ্ধে বললে জেল-জরিমানা হবে, নির্বাচন কমিশনার ভোটার আই. ডি কার্ডের জন্য ছবিকে বাধ্যতামূলক করেছে এবং ছবির পক্ষে মসজিদে মসজিদে প্রচারণা চালাবে বলেও মন্তব্য করেছে।  আর উলামায়ে ‘ছূ’রা তার এ বক্তব্যকে সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছে যে, “রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে পুরুষ-মহিলা সকলের জন্যই ছবি তোলা জায়িয।” (নাউযুবিল্লাহ) শুধু তাই নয় তারা নিজেরাও অহরহ ছবি তুলে বা তোলায়। অথচ তাদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, চরম বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক। তাদের এ বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তেক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আ’মালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুক্ষীণ হচ্ছে। কারণ, তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যারা এ আক্বীদা পোষণ করবে যে, “রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে ছবি তোলা জায়িয” তারা ঈমান হারা হয়ে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে। কারণ শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম বা নাজায়িযকে হালাল বা জায়িয বলা কুফরী। কেননা কিতাবে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে,

استحلال المعصية كفر.

 অর্থাৎ, “গুণাহের কাজ বা হারামকে হালাল মনে করা কুফরী।” (শরহে আক্বাঈদে নাসাফী)       অতএব বলার আর অপেক্ষাই রাখেনা যে, উলামায়ে “ছূ”দের উক্ত বক্তব্য সাধারণ মুসলমানদের আক্বীদা বা ঈমানের জন্য বিশেষভাবে হুমকিস্বরূপ।  অনরূপ “ছবি তোলার ব্যাপারে ধর্মীয় কোন নিষেধ নেই বা রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে সকলের জন্য ছবি তোলা জায়িয” উলামায়ে “ছূ”দর এ কুফরীমূলক বক্তব্য সাধারণ মুসলমানদের আমলের ক্ষেত্রেও বিশেষ ক্ষতির কারণ। কেননা যারা তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে ছবি তুলবে (যদিও হারাম জেনেই তুলুক না কেন) তারা আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব কর্তৃক নিষিদ্ধকৃত কাজে তথা হারাম কাজে মশগুল হবে যা শক্ত আযাব বা কঠিন গুণাহের কারণ। কেননা হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

قال حدثنا الاعمش عن مسلم قال كنا مع مسروق فى دار يسار بن نمير فراى فى صفته تماثيل فقال سمعت عبد الله قال سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول ان اشد الناس عذابا عند الله المصورون.

 অর্থঃ হযরত আ’মাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মুসলিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি মাসরুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর সঙ্গে ইয়াসার ইবনে নুমাইরের ঘরে ছিলাম, তিনি তাঁর ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি দেখতে পেলেন, অতঃপর বললেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ্র নিকট শুনেছি, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয় মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ্ পাক কঠিন শাস্তি দেবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ৮৮০)  উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় “উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারীতে” উল্লেখ আছে,

وان كاهن ورد فى حق عاص فيكون اشد عذابا من غيره من العصاة ويكون ذلك ذالا على المعصية المذكورة. وفى التوضيح قال اصحابنا وغيرهم صورة الحيوان حرام اشد التجريم وهم من الكبائر.

অর্থঃ “তাওজীহ্” নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, হযরত উলামায়ে কিরাম বলেন, জীব জন্তুর ছবি বা প্রতিমূর্তি নির্মাণ করা নিষেধ, বরং কঠোর নিষিদ্ধ কাজ (অর্থাৎ হারাম) এটা কবীরাহ্ গুনাহ্। অতএব, নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, উলমায়ে “ছূ”দের উক্ত বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ছবি তুলে প্রকাশ্য হারাম কাজে মশগুল হয়ে কঠিন আযাবের পাত্র হবে যা আমলের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ক্ষতিকর। কাজেই যারা এ ধরণের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী তারা ও হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণ ঈমান ও আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে। অর্থাৎ মূর্তি বা ছবিসহ সকল বিষয়ে আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজাম, ইজমা ও ক্বিয়াস মোতাবেক আমল করে আল্লাহ্ পাক-এর রেজামন্দী হাছিল করতে পারে। সে জন্যই “কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মুর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম- নাজায়িয হওয়ার অকাট্ট প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়াটি” পুণরায় প্রকাশ করা হলো।

ইহুদী-নাছারা তথা বেদ্বীন-বদদ্বীনদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা ও অনুসরণ-অনুকরণ করা হরাম

পূর্বোক্ত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, ইহুদী-নাছারাসহ সকল বেদ্বীন -বদদ্বীনরাই মুসলমানের চীর শত্রু। আর এই শত্রুতার কারণেই তারা সর্বদা কোশেশ করে যাচ্ছে মুসলমানদের ঈমান-আমল নষ্ট করে তাদেরকে বেঈমান ও জাহান্নামী করার। যার কিছু প্রমাণ আপনারা গত সংখ্যার আলোচনায় পেয়েছেন।

উল্লেখ্য, ইহুদী-নাছারাদের অনুরূপই আরেকটি ষড়যন্ত্র হলো মুসলমানদের মধ্যে ইহুদী-নাছারাদের নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীক্বা প্রবেশ করিয়ে দেয়া। কারণ তারা ভাল করেই জানে যে, মুসলমানদের মধ্যে যদি তাদের অর্থাৎ ইহুদী-নাছারাদের নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীকা প্রবেশ করিয়ে দেয়া যায় তবে তারা আপসে আপ্ মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে ইহুদী-নাছারার দলভূক্ত হয়ে যাবে। তাই তারা এ ব্যাপারে আপ্রান চেষ্টা করছে এবং সফল না হওয়া পর্যন্ত তারা চেষ্টা করেই যাবে। এ বিষয়টা মহান আল্লাহ পাক কালামুল্লাহ শরীফে স্পষ্টভাবেই বলে দিয়েছেন।

মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

ولن تر ضى عنك اليهود ولاالنصرى حتى تتبع ماتهم قل ان هدى الله هو الهدى ولئن اتبعت اهؤاءهم بعد الذى جا ئك من العلم ما لك من الله من ولى ولا نصير.

অর্থঃ “ইহুদী-নাছারারা আপনার প্রতি কখনোই সন্তুষ্ট হবে না যতক্ষন পর্যন্ত আপনি তাদের নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীক্বা অনুসরণ না করবেন। আপনি বলুন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক-এর হিদায়েতই প্রকৃত হিদায়েত। ইল্ম আসার পরে কেউ যদি তাদেরকে (ইহুদী-নাছারাদেরকে) অনুসরণ করে তবে সে আল্লাহ পাককে অভিভাবক ও সাহায্যকারী হিসেবে পাবে না।” (সূরা বাক্বারা-১২০)

উপরোক্ত আয়াত শরীফে আল্লাহ পাক সুস্পষ্টভাবেই জানিয়ে দিয়েছেন যে, ইহুদী-নাছারারা চায় বা চেষ্টা করে, মুসলমানরা ইহুদী-নাছরাদেরকে অনুসরণ অনুকরণ করুক। কারণ ইসলাম বাদ দিয়ে যারা ইহুদী-নাছরাদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করবে তারা আল্লাহ পাককে সাহায্যকারী ও অভিভাবক হিসেবে পাবে না ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্থের অন্তর্ভূক্ত হবে।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

من يبتغ غير الاسلام دينا فلن يقبل منه وهو فى الا خرة من الخسر ين.

অর্থঃ- “যে  ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্মের নিয়ম-নীতি তালাশ করে তার থেকে সেটা কবুল করা হবেনা এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (সূরা আলে ইমরান-৮৫)

তাই মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফের অসংখ্য স্থানে এবং আখিরী রসূল নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসংখ্য হাদীছ শরীফে ইহুদী-নাছারাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে এবং অনুসরণ-অনুকরণ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন,

يا يها الذ ين امنوا لا تتخذوا عدوى وعدوكم اولياء.

অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আমার শত্রু এবং তোমাদের শত্রু (ইহুদী-নাছারাদের)কে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না।” (সূরা মুমতাহিনা-১)

অর্থাৎ যারা আল্লাহ পাক-এর শত্রু ও ঈমানদারদের শত্রু তাদেরকে যেন কোন ঈমানদার কখনই ভক্তি, শ্রদ্ধা ও সম্মানের পাত্র বা বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করে। তা আল্লাহ পাক স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলেন।

আর কেউ যদি কাফির, মুশরিক, ইহুদী, নাছারা অর্থাৎ আল্লাহ পাক-এর অপছন্দনীয় ও অসন্তুষ্টিপ্রাপ্তদেরকে মুহব্বত, ভক্তি, শ্রদ্ধা ও সম্মান করে এবং বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে তাদের পরিণতি প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

يا يها الذين امنوا لا تتخذ وا اليهود والنصرى اولياء بعضهم اولياء بعض ومن يتو لهم منكم فا نه منهم.

অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে।” (সূরা মায়িদা-৫১)

আর এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن جا بر رضى الله تعا لى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم حين اقاه عمر رضى الله تعالى عفه فقال انا نسمع احا ديث من يهود تعجبنا افترى ان تكتب بعضها فقال امتهو كون انتم كما تهوكت اليهود والنصا رى لقد جئتكم بها بيضاء نقية ولو كان موسى حيا ماو سعه الا اتبا عى.

অর্থঃ- “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেন যে, একদিন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদি¦য়াল্লাহু তায়ালা আনহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আমরা ইহুদীদের থেকে তাদের কিছু ধর্মীয় কথা শুনে থাকি, যাতে আমরা আশ্চর্যবোধ করি, এর কিছু আমরা লিখে রাখবো কি? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরাও কি দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছ? যে রকম ইহুদী-নাছারারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে? অবশ্যই আমি তোমাদের নিকট পরিপূর্ণ, উজ্জ্বল ও পরিষ্কার দ্বীন নিয়ে এসেছি। হযরত মুসা আলাইহিস্ সালামও যদি দুনিয়ায় থাকতেন, তাহলে তাঁকেও আমার অনুসরণ করতে হতো।” (মুসনাদে আহ্মদ, বাইহাক্বী, মিশকাত, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ্ ইত্যাদি)

হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

عن جا بر رضى الله تعا لى عنه ان عمر ين الخطاب رضى الله تعا لى عنه اتى رسول الله صلى الله عليه وسلم بنسخة من التورة فقال يا رسول الله صلى الله عليه وسلم هذه نسخة من اتورة فسكت فجعل يقرأ ووجه رسول الله صلى الله عليه وسلم يتغير فقال ابو بكر ثكلتك الثواكل ما ترى ما بو جه رسول الله صلى الله عليه وسلم فنظر عمر الى وجه ر سول الله صلى الله عليه وسلم فقال اعوذ با لله من غضب الله وغضب رسو له ر ضينا با لله ربا وبالا سلام دينا وبمحمد نبيا فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم والذى نفس محمد صلى الله عليه وسلم بيده لو بدا لكسم مو سى عليه السلام فا تبعتموه وتر كتمو نى اضللتم عن سواء السبيل و لو كا ن حيا وادر ك نبو تى لا تبعنى.

অর্থঃ- “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, একদিন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট তাওরাত শরীফের একটি কপি এনে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এটি তাওরাত শরীফের একটি কপি। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চুপ রইলেন। হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তা পড়তে আরম্ভ করলেন। আর এদিকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চেহারা মুবারক লাল হতে লাগলো। অর্থাৎ অসন্তুষ্টির ভাব ফুটে উঠলো। এটা দেখে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, হে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনার জন্য আফসুস! আপনি কি দেখছেন না যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চেহারা মুবারক কি রূপ ধারণ করছে। তখন হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চেহারা মুবারকের দিকে তাকালেন এবং অসন্তুষ্টির ভাব লক্ষ্য করে বললেন, আমি আল্লাহ পাক-এর অসন্তুষ্টি থেকে এবং তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অসন্তুষ্টি থেকে আল্লাহ পাক-এর নিকট পানাহ চাচ্ছি। এবং আমরা আল্লাহ পাককে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে ও আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবী হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছি। তখন রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সেই আল্লাহ পাক-এর কসম! যার অধিকারে আমার প্রাণ মুবারক রয়েছে, এ সময় যদি তোমাদের নিকট হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম (যার উপর তাওরাত কিতাব নাযিল হয়েছে) যাহির বা প্রকাশ হতেন আর তোমরা আমাকে ছেড়ে তাঁর অনুসরণ করতে তবুও তোমরা সরল পথ থেকে অবশ্যই বিচ্যুত অর্থাৎ গোমরাহ হয়ে যেতে। এমনকি তিনি যদি এখন হায়াতে থাকতেন আর আমাকে পেতেন তাহলে তিনিও নিশ্চয়ই আমার অনুসরণ করতেন।” (দারিমী, মিশকাত, মিরকাত)

স্মর্তব্য যে, মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে, শুধু ইহুদী-নাছারা তথা বেদ্বীন-বদদ্বীনদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে ও অনুসরণ-অনুকরণ করতে নিষেধ করেছেন তাই নয়। বরং তাদের সাথে কান ক্ষেত্রে কোন বিষয়ে বা কোন দিক দিয়ে ‘তাশাব্বুহ’ বা সাদৃশ্য রাখতেও কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।

যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن عبد الله بن عمر ر ضى الله تعا لى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من تشبه بقوم فهو مئهم.

          অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের দলভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।” (মুসনদে আহমদ, সুনানে আবূ দাউদ)

عن عمرو بن شعيب عن ا بيه عن جده ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ليس منا من تشبه بغير فا.

অর্থঃ- “হযরত আমর বিন শুয়াইব তাঁর পিতা থেকে এবং তিনি তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ঐ ব্যক্তি আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়, যে বিজাতীয়দের সাথে সাদৃশ্য রাখে।” (মিশকাত শরীফ)

এ প্রসঙ্গে হিন্দুস্থানের একটি ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। হিন্দুস্থানে একজন জবরদস্ত আল্লাহ পাক-এর ওলী ছিলেন। যিনি ইন্তিকালের পর অন্য একজন বুযুর্গ ব্যক্তি তাঁকে স্বপে¦ দেখে জিজ্ঞেস করেন, “হে আল্লাহ পাক-এর ওলী, আপনি কেমন আছেন?”

তখন সেই আল্লাহ্ পাক-এর ওলী জাওয়াবে বলেন, “আপাততঃ আমি ভালই আছি, কিন্তু আমার উপর দিয়ে এক কঠিন সময় অতিবাহিত হয়েছে যা বলার অপেক্ষা রাখে না।

তখন স্বপ¦দ্রষ্টা ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি আমাকে আপনার সেই কঠিন অবস্থা সম্পর্কে বলবেন? আল্লাহ্ পাক-এর ওলী জবাব দিলেন অবশ্যই বলবো। কারণ তাতে যমীনবাসীদের জন্য শক্ত ইবরত বা নছীহত রয়েছে। এরপর বলা শুরু করলেন, আমার ইন্তেকালের পর আমাকে ফেরেশ্তারা সরাসরি আল্লাহ্ পাক-এর সম্মুখে পেশ করেন। আল্লাহ্ পাক ফেরেশ্তাদের বললেন, “হে ফেরেশ্তাগণ তোমরা কেন তাকে এখানে নিয়ে এসেছ”? ফেরেশ্তাগণ বললেন, হে আল্লাহ্ পাক! আমরা তাকে খাছ বান্দা হিসেবে আপনার সাথে সাক্ষাত করার জন্য নিয়ে এসেছি।

একথা শুনে আল্লাহ্ পাক বললেন, “তাকে এখান থেকে নিয়ে যাও, তার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে। কেননা সে পূঁজা করেছে। সেকথা শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম এবং আমার সমস্ত শরীর ভয়ে থর থর করে কাঁপতে লাগল।  তখন আমি আল্লাহ্ পাক-এর নিকট আরজু করলাম, “আয় আল্লাহ পাক! আমার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে কেন? আমি তো সব সময়ই আপনার এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ফরমাবরদার ছিলাম। কখনও ইচ্ছাকৃত নাফরমানি করিনি আর পূজা করার তো প্রশ্নই উঠেনা।’ আয় আল্লাহ পাক! পূজা তো দূরের কথা আমি কখনো মন্দিরের আশ-পাশ দিয়েও হাঁটিনি।  তখন আল্লাহ পাক বললেন, “তুমি সেদিনের কথা স্মরণ কর, যেদিন হিন্দুস্থানে হোলি পূঁজা হচ্ছিল। তুমি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলে। তোমার সামনে-পিছনে, ডানে-বামে, উপরে-নীচে আশে-পাশে সমস্ত গাছ-পালা, তরুলতা, পশু-পাখী, কীট-পতঙ্গ, বাড়ী-ঘর, সব কিছুতেই রং দেয়া হয়েছিল। এমতাবস্থায় তোমার সামনে দিয়ে একটি গর্দভ (গাধা) হেঁটে যাচ্ছিল যাকে রং দেয়া হয়নি। তখন তুমি পান চিবাচ্ছিলে, তুমি সেই গর্দভের গায়ে এক চিপটি পিক বা পানের রঙ্গীন রস নিক্ষেপ করে বলেছিলে- হে গর্দভ! তোমাকে তো এই হোলি পুজার দিনে কেউ রং দেয়নি তাই আমি তোমাকে রং দিয়ে দিলাম। এতে কি তোমার পুজা করা হয়নি? তুমি কি জান না, যে আমার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

من تشبه بقوم فهو منهم.

অর্থঃ “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথে হবে।” সুতরাং তোমার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে।

যখন আল্লাহ পাক এই কথা বললেন, তখন আমি লা জাওয়াব হয়ে গেলাম এবং ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বললাম, “আয় আল্লাহ পাক! আমি তো বুঝতে পারিনি, আর আমাকে তো কেউ বুঝিয়েও দেয়নি। আমার অন্তরও সাড়া দেয়নি। হে আল্লাহ্ পাক! আমাকে আপনি দয়া করে ক্ষমা করুন।”

কিছুক্ষণ পর আল্লাহ্ পাক বললেন, “হ্যাঁ যেহেতু তুমি বুঝতে পারনি এবং তোমাকে কেউ বুঝিয়েও দেয়নি সেহেতু এবং তোমাকে তোমার অন্যান্য আমলের কারণে আজকে ক্ষমা করা হলো।” অন্যথায় তোমার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথেই হতো।

তাই স্বয়ং আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই উম্মতকে শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে প্রতি ক্ষেত্রে ইহুদী-নাছারা, মজুসী-মুশরিকদের খিলাফ করতেন। যেমন ইহুদীরা টুপি ছাড়া পাগড়ী পরিধান করতোঃ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম টুপিসহ পাগড়ী পরিধান করতেন। ইহুদীরা আশুরার দিন একটি রোযা রাখতো, তিনি দু’টি রোযা রাখতেন। মুশরিকরা গোঁফ লম্বা রাখতো, দাড়ী ছোট রাখতো, তিনি এক্ষেত্রেও তার বিপরীত করতেন এবং উম্মতকেও তা পালন করার নির্দেশ দিতেন। যেমন- আশুরার রোযা ও দাড়ী-গোঁফ সম্পর্কে হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে,

صوموا يوم عاشورأ وخالفوا فيه اليهود وصوموا قبله يوما وبعده يوما.

অর্থঃ “তোমরা আশুরার দিন রোযা রাখ এবং তার পূর্বে একদিন বা পরে একদিন রোযা রেখে ইহুদীদের খিলাফ কর।”

          এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

عن ابن عمر رضى الله تعالى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال خالفوا المشركين وفروا اللحى واحفوا الضوارب.

অর্থঃ “হযরত ইব্নে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা (মুসলমানরা) মুশরিকদের বিপরীত করো, অর্থাৎ দাড়ী লম্বা কর ও গোঁফ ছোট কর।” (বুখারী শরীফ)

অথচ- আজকাল মুসলমান এমনকি মুফতী, মুহাদ্দিছ, মুফাস্সির, আমীর, খতীব, ইমাম, মাওলানা, পীর, মাশায়িখ ইত্যাদি দাবী করার পরও তারা ইসলামের নামে ইহুদী-নাছারাদের নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীক্বা, যেমন গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন, হরতাল, লংমার্চ, কুশপুত্তলিকা দাহ, ব্লাসফেমী আইন তলব, হাঙ্গার স্ট্রাইক ইত্যাদি অসংখ্য বেদ্বীন-বদদ্বীনী নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীক্বা অনুসরণ-অনুকরণ করে তাদের দলভূক্ত হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ ইহুদী-নাছারা তথা বেদ্বীন-বদদ্বীনরা সুকৌশলে তাদের ইহকাল ও পরকাল ধ্বংস করে দিচ্ছে। তাদের হাশর-নশর যে ইহুদী-নাছারা তথা বেদ্বীন-বদদ্বীনদের সাথে হবে তা আল্লাহ পাক কালামুল্লাহ শরীফেও ইরশাদ করেছেন।

আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

يوم ندعوا كل اناس م بامامهم.

অর্থাৎ, “হাশর ময়দানে প্রত্যেককেই তার ইমাম বা অনুসরণীয় ব্যক্তিসহ ডাকা হবে।” (সূরা বণী ইস্রাইল-৭১)  অর্থাৎ, যারা ইসলামের নামে গণতন্ত্র করবে তারা ইহুদী-নাছারাদের সাথে, যারা লংমার্চ করবে তারা মাওসেতুং-এর সাথে, যারা হরতাল করবে তারা গান্ধীর সাথে উত্থিত হবে বা উল্লেখিত ব্যক্তিদের সাথেই তাদের হাশর-নশর হবে। মূলতঃ এটা ইহুদী-নাছারা বেদ্বীন-বদদ্বীনদের একটি সুক্ষ্ম ষড়যন্ত্র। তারা দুনিয়ার মোহে পড়ে ইহুদী-নাছারা তথা বেদ্বীন-বদদ্বীনদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করে জাহান্নামী হচ্ছে।

মূলকথা হলো, মুসলমানদের জন্য কোন অবস্থাতেই ইহুদী-নাছারা তথা বেদ্বী-বদদ্বীনদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা বা অনুসরণ-অনুকরণ করা জায়িয নেই বরং হারাম ও ক্ষেত্র বিশেষে তাদেরকে অনুসরণ করা কুফরী। সুতরাং, ছবিসহ প্রতি ক্ষেত্রে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসকেই অনুসরণ করতে হবে। নচেৎ জাহান্নাম ব্যতীত কোনই গতি থাকবে না।

অসমাপ্ত

পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন।।

ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা লুঙ্গি চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৭

ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৮

ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া— (১)

ফতওয়া বিভাগ-গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া- (২)

ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-(৩)