প্রকাশিত ফতওয়াসমূহ:
[সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীনের জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। আল্লাহ্ পাক-এর অশেষ রহ্মতে “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব-এর অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীল ভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা) ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যায়) এবং ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা) পেশ করার পর-
২৭তম ফতওয়া হিসেবে
“ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় আল্লাহ পাক-এর দরবারে বেশুমার শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
উল্লেখ্য, হিজরী পঞ্চদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ও ইমাম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর প্রতিষ্ঠিত ও পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশিত যামানার তাজদীদী মুখপত্র ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত। এ পত্রিকায় এ যাবৎ যত লিখা বা ফতওয়া প্রকাশ বা পত্রস্থ করা হয়েছে, হচ্ছে ও হবে তার একমাত্র উদ্দেশ্য মানুষের ঈমান-আক্বীদা ও আমল পরিশুদ্ধ করা। এ জন্যেই মূলতঃ যুগে যুগে প্রেরিত হয়েছেন এক লক্ষ চব্বিশ হাজার মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম। এবং সর্বশেষ নবী-রসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অতঃপর প্রত্যেক শতাব্দীর মাঝে প্রেরিত হয়ে আসছেন তাঁর খাছ নায়িব বা ওয়ারিছ তথা যামানার মুজাদ্দিদগণ।
কাজেই, বান্দা ও উম্মত যদি দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দীদার ও সন্তুষ্টি লাভ করতে চায়, রহমত ও নাজাত পেতে চায়, হাক্বীক্বী বান্দা ও হাক্বীক্বী উম্মত হতে চায়, প্রকৃত মু’মিন, মুসলমান ও মুত্তাক্বী হতে চায় তাহলে তার জন্য যামানার মুজাদ্দিদের অনুসারী হওয়া ব্যতীত বিকল্প কোন পথ নেই। সেটা কাছে থেকে হোক কিংবা দূরে থেকে হোক। কারণ আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,
واتبع سبيل من اناب الى.
অর্থঃ- “ঐ ব্যক্তির পথ অনুসরণ করে চলো যিনি আমার দিকে রুজু রয়েছেন।” (সূরা লুক্বমান-১৫)
স্মরণীয় যে, আজকে মুসলমানরা তাদের আদর্শ-ঐতিহ্য ভুলে গিয়ে বিধর্মী-বিজাতীয়দের তর্জ-তরীক্বা, আচার-আচরণ গ্রহণে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাদের এই নাজুক অবস্থা কাটিয়ে ইসলামী আদর্শে আদর্শবান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আহবান করছেন যামানার মহান মুজাদ্দিদ মুদ্দা জিল্লুহুল আলী। সুতরাং তাঁর মুবারক আহবানে সাড়া দেয়ার সময় এখনই। এ লক্ষ্যে ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ পত্রিকার পাঠক, গ্রাহক, শুভাকাঙ্খী ও শুভানুধ্যায়ীগণ ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এর আকর্ষণীয় ও উল্লেখযোগ্য বিভাগ “সুওয়াল-জাওয়াব” ও “ফতওয়া” বিভাগে ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে শরীয়তের সঠিক ফায়ছালা জানার জন্য অসংখ্য সুওয়াল প্রেরণ করেন। যেহেতু আল্লাহ পাক রাব্বুল আ’লামীন কালামে পাকে ইরশাদ করেন,
فسئلوا اه الذكر ان كنتم لا تعلمون.
অর্থঃ- “যদি তোমরা না জান, তবে আহ্লে যিকির বা আল্লাহওয়ালাগণকে জিজ্ঞেস করে জেনে নাও।” (সূরা নহল-৪৩ ও সূরা আম্বিয়া-৭)
তাই প্রেরিত সুওয়ালসমূহের প্রেক্ষিতে “ইসলামের নামে গণতন্ত্র, নির্বাচন, ভোট ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” ইসলামের দলীল- কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে পেশ করা হলো।
প্রকৃত বন্ধুর পরিচয়
মূলতঃ আমাদের সাথে কারো যেরূপ বন্ধুত্ব নেই, তদ্রুপ নেই বিদ্বেষ। অর্থাৎ যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তসম্মত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বিদ্বেষ নেই। আর যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তের খিলাফ বা বিপরীত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বন্ধুত্ব নেই। কারণ মুসলমানের বন্ধুত্ব বা বিদ্বেষ একমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর জন্যেই হতে হবে।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে,
عن ابى هريرة رضى اله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من احب ليه وابغض لله واعطى لله واعطى لله ومنع لله فقد استكمل الايمان.
অর্থঃ- “হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক-এর (সন্তুষ্টি লাভের) জন্যে মহব্বত বা বন্ধুত্ব করে, বিদ্বেষ পোষণ করে, আদেশ করে, নিষেধ করে, তার ঈমান পরিপূর্ণ।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী)
বস্তুতঃ মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার প্রতিটি লিখা, বক্তব্য, সুওয়াল-জাওয়াব, ফতওয়া, প্রতিবাদ, প্রতিবেদন, মতামত ইত্যাদি উপরোক্ত হাদীছ শরীফের মূলনীতির ভিত্তিতেই প্রকাশিত হয়ে থাকে।
কাজেই “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় “ইসলামের নামে গণতন্ত্র, নির্বাচন, ভোট ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” দেয়ার মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হলো সত্যান্বেষী বা হক্ব তালাশী মুসলমানগণের নিকট সঠিক বা হক্ব বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা। যার মাধ্যমে প্রত্যেকেই তাদের ঈমান-আক্বীদা ও আমল হিফাযতের মাধ্যমে ইহ্লৌকিক ও পারলৌকিক ইত্মিনান ও নাযাত লাভ করতে পারে।
মূলতঃ মানুষ মাত্রই ভুল হওয়া স্বাভাবিক, তাই এক মু’মিন অপর মু’মিনের ভুল ধরিয়ে বা শুধরিয়ে দেয়া ঈমানী দায়িত্ব। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে,
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم المؤمن مرأة المؤمن اذا رأى فيه عيبا اصلحه.
অর্থঃ- “হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, এক মু’মিন অপর মু’মিনের জন্যে আয়না। যখন সে তার মধ্যে কোন দোষত্রুটি দেখবে তখন সে তাকে সংশোধন করে দিবে।” (বুখারী, আবূ দাউদ, মিশকাত)
উপরোক্ত হাদীছ শরীফের আলোকে অসংখ্য, অগণিত পাঠকগণের পূণঃপূণঃ অনুরোধের প্রেক্ষিতে মুসলমানদের আক্বীদা ও আমল হিফাযতের লক্ষ্যে ইসলামের নামে গণতন্ত্র, নির্বাচন, ভোট ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া প্রদান করা হলো। যাতে করে সত্যান্বেষী, মুসলমানগণ এ সম্পর্কে আপত্তিকর বক্তব্যসমূহের সঠিক শরয়ী ফায়সালা অবগত হন, যার ফলশ্রুতিতে সকলেই উক্ত আপত্তিকর আক্বীদা ও বক্তব্যসমূহ থেকে নিজেদের ঈমান ও আমলের হিফাযত করে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করতে পারেন।
সুওয়ালকারীদের নাম-ঠিকানা
সাইয়্যিদ মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন, ঢাকা
মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন, মুহম্মদপুর, ঢাকা
মুহম্মদ ছিদ্দীকুল আলম, চান্দিনা, কুমিল্লা
মুহম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, শালিখা, মাগুরা
মুহম্মদ আফতাবুদ্দীন, কোনাবাড়ী, গাজিপুর
মুহম্মদ মুহসিনুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
মুহম্মদ হারুনূর রশীদ, মাহিগঞ্জ, রংপুর
শাফিয়ী আহমদ, রাজারহাট, কুড়িগ্রাম
মুহম্মদ সদরুল আমীন গোলাপগঞ্জ, সিলেট
মুহম্মদ আশাদুজ্জামান, পলাশবাড়ী, গাইবান্ধা
মুহম্মদ আশফাকুর রহমান, সিংড়া, নাটোর
মুহম্মদ ইছহাকুর রহমান, কসবা, বি.বাড়িয়া
মুহম্মদ শফিকুছ্ ছালেহীন, মতলব, চাঁদপুর
মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান, প্রভাকরদী, এন.গঞ্জ
মুহম্মদ হারিছুর রহমান, রাজপাড়া, রাজশাহী
মুহম্মদ কাওছার হুসাইন, বানারীপাড়া, বরিশাল
মুহম্মদ হাদীউল ইসলাম, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম
মুহম্মদ কামরুজ্জামান, কুটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ
মুহম্মদ আবুল কাশেম, আক্কেলপুর, জয়পুরহাট
মুহম্মদ হাবীবুল্লাহ, কালীহাতি, টাঙ্গাইল
সুওয়াল:
বর্তমান সময় যে সমস্ত “সংসদ নির্বাচন” অনুষ্ঠিত হয়। তাতে অন্যান্য দলগুলোর মতো নামধারী ইসলামী দলগুলোও সক্রিয়ভাবে উক্ত নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে তথা প্রার্থী দেয়। ইসলামের নামে যারা নির্বাচনে অংশ নেয় তারা সাধারণতঃ প্রচার করে থাকে যে, গণতন্ত্র আর ইসলাম একই বিষয় এবং তারা যে গণতন্ত্র করছে, সেটা হচ্ছে ইসলামী গণতন্ত্র। তারা গণতন্ত্রের ভিত্তি ভোটকে আমানত, শুপারিশ, উকিল নিয়োগ, স্বাক্ষ্য ইত্যাদি বলে প্রচার করে থাকে।
কেউ কেউ আবার ইসলামী দলকে ভোট দেয়া ফরয-ওয়াজিব বলে থাকে। আরো বলে থাকে যে, ইসলামী দলের প্রার্থীকে ভোট দিলে জান্নাতের টিকেট পাওয়া যাবে। যেমন জামাত নেতারা কিছুদিন পূর্বে একটি দৈনিক পত্রিকার সাক্ষাতকারে বলেছে, ইসলাম ও গণতন্ত্র একই বিষয়।
বায়তুল মুকাররমের খতীব ওবায়দুল হক বলেছে, “ভোট দেয়া আল্লাহ পাক-এর নির্দেশ অর্থাৎ ফরয। আল্লাহ পাক বলেন, ভোট একটি আমানত। আল্লাহ পাক-এর হাবীব বলেছেন, সৎ লোককে ভোট দিতে হবে।” (দৈনিক সংগ্রাম ১লা জুলাই-২০০৬)
মাহিউদ্দিন খান তার মাসিক মদীনা ডিসেম্বর/৯৯ সংখ্যায় নির্বাচন ভিত্তিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোট দান সম্পর্কিত একটি প্রশ্নের উত্তরে লিখেছে, (ক) ছহীহ্ অর্থে মুসলমানদের প্রকৃত শাসক হচ্ছে পবিত্র কুরআন এবং রসূলের সুন্নাহ্। (খ) প্রচলিত যে কোন শাসন ব্যবস্থায় যদি কুরআন-সুন্নাহ্র প্রাধান্য মেনে নেয়া হয় তবে তা মুসলিম জনগণ বিনা দ্বিধায় মেনে নিতে পারেন। (গ) ভোটের মাধ্যমে নেতা বা শাসক নির্বাচনের বর্তমান যে পদ্ধতি এটা অংকুরিত হয়েছে, ইসলামী শুরা পদ্ধতির মধ্য থেকে। সুতরাং এই পদ্ধতিতে ভোটের রাজনীতি ইসলামে বৈধ নয় এ কথা বলা যাবে না। (ঘ) এ যুগের ভোট প্রদান বাইয়াতের বিকল্প বিবেচিত হতে পারে।
অনুরূপ হাটহাজারী খারেজী মাদ্রাসার মুখপত্র মাসিক মুহীনুল ইসলামের সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর’ ০৬ সংখ্যায়ও ভোট-নির্বাচন সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছে, (ক) গণতন্ত্র বা নির্বাচন দুই প্রকার। (১) পাশ্চত্য গণতন্ত্র বা নির্বাচন। (২) ইসলামী গণতন্ত্র বা নির্বাচন। (খ) খুলাফায়ে রাশেদীন ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছিলেন (গ) পদপ্রার্থী হওয়া জায়িয। (ঘ) কুরআন সুন্নাহয় ভোটকে স্বাক্ষী, আমানত, সুপারিশ ও প্রতিনিধি নিয়োগ বলে উল্লেখ করা হয়েছে ইত্যাদি অনেক ভুল তথ্য তারা উল্লেখ্য করেছে। পটিয়া খারেজী মাদ্রাসার মুখপত্র “আত্ তাওহীদ” ডিসেম্বর/৯৬, জানুয়ারী/৯৭, জুলাই-আগস্ট/৯৭
সংখ্যায় ভোট-নির্বাচন এমনকি ভোট বেচা-কেনা করাকেও জায়িয ফতওয়া দিয়েছে।
আর উল্লিখিত বিষয়ে তাদের নিকট দলীল তলব করলে তারা সাধারণতঃ মুফতী শফীর মা’য়ারিফুল কুরআন ও ভোটের ইসলামী শরয়ী বিধান এবং শামসুল হক ফরীদপুরী ছাহেবের বক্তব্য তুলে ধরে বলে থাকে যে, তারা ভোটকে জায়িয বলেছেন। এখন আমাদের জানার বিষয় হলোঃ
…..১৪। পটিয়া খারিজী মাদ্রাসার মুখপত্র আত তাওহীদ-এর ডিসেম্বর/৯৬, জানুয়ারী/৯৭ এবং জুলাই আগস্ট/৯৭ সংখ্যা সমূহে ভোট নির্বাচন সম্পর্কিত কয়েকটি প্রশ্নের জবাবে যা লিখেছে:
(ক) শরীয়তের দৃষ্টিতে ভোট হচ্ছে শাহাদাত বা সাক্ষ্য।
(খ) বর্তমান পদ্ধতিতে নির্বাচন করা ইসলামপন্থিদের জন্য একান্ত কর্তব্য।
(গ) ভোট নাগরিক অধিকার, এ অধিকার অর্জনে মা’জুর বশতঃ মহিলাদের জন্যও ছবি তোলা জায়িয রয়েছে।
(ঘ) দ্বীন ইসলাম রক্ষার্থে ভোট বেচা-কেনা করাও জায়িয রয়েছে।
পটিয়া-খারিজী মাদ্রাসার মৌলবী ছাহেবদের উপরোক্ত বক্তব্য কতটুকু দলীলভিত্তিক ও শরীয়ত সম্মত।
১৫। আজকাল নামধারী প্রতিটি ইসলামী দলকেই দেখা যায় বিভিন্ন দলের সাথে জোট বা চুক্তি করে থাকে। তাদেরকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তারা এটাকে হুদায়বিয়ার সন্ধির সাথে তুলনা করে থাকে। হুদায়বিয়ার সন্ধির সাথে তাদের উক্ত জোট বা চুক্তিকে তুলনা করা সঠিক ও শরীয়তসম্মত কিনা?
১৬। যে সকল কথিত মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিছ, শাইখুল হাদীছ, খতীব, পীর, আমীর ইসলামের নামে গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন করছে, ভোটকে আমানত, স্বাক্ষ্য ফরয-ওয়াজিব বলছে এবং ক্ষমতার লোভে বাতিলের সাথে আতাত করছে তারা হক্কানী আলিম কিনা? তাদের পিছনে নামায পড়া জায়িয কিনা? তাদের ব্যাপারে শরীয়তের ফায়ছালা কি?
১৭। যদি ইসলামের দৃষ্টিতে গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন নাজায়িয হয় তবে রাষ্ট্র পরিচালিত হবে কিভাবে? এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠিত হবে কিভাবে? রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠা করা কি ফরযে আইন? আর এজন্য কি সশস্ত্র বিপ্লব বা বোমাবাজি, জিহাদ বা জঙ্গী কার্যকলাপের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা যাবে?
উপরোক্ত প্রতিটি বিষয় দলীলভিত্তিক বিস্তারিত জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান-আক্বীদা ও আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদি।
জাওয়াবঃ
ইসলামের নামে বা ইসলামের দোহাই দিয়ে গণতন্ত্র, ভোট, নিবার্চন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া, নিজ দলকে ভোট দেয়া ওয়াজিব ও জান্নাতের টিকেট লাভের কারণ বলা এবং ভোটকে আমানত, সুপারিশ, স্বাক্ষ্য ইত্যাদি বলা সম্পূর্ণ হারাম ও কুফরী। এটাই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস তথা শরীয়তের চুড়ান্ত, ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া।
অতএব, বলার অপেক্ষা রাখে না যে, গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন ও পদপ্রার্থী হওয়া সম্পর্কিত তথাকথিত খতীব উবায়দুল হক, নিজামী, আহমদ শফী, মাহিউদ্দীন, আমিনী ও আযীযূল হক- ওহাবী, দেওবন্দী ও জামাতীগংদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের খিলাফ বিধায় তা ভুল, অশুদ্ধ, জিহালতপূর্ণ দলীলবিহীন ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
নিম্নে পর্যায়ক্রমে সুওয়ালে উল্লেখিত তাদের প্রতিটি বক্তব্যের খ-নমূলক জাওয়াব প্রদান করা হলো।
(১৪)
পটিয়া খারিজী মাদ্রাসার অখ্যাত মুখপত্র “মাসিক আত্ তাওহীদ” ডিসেম্বর-৯৬, জানুয়ারী, জুলাই ও আগষ্ট-৯৭ সংখ্যাসমূহে
ভোট-নির্বাচন সম্পর্কে প্রদত্ত বক্তব্যসমূহের খণ্ডনমূলক জবাব
পটিয়া খারিজী মাদ্রাসার অখ্যাত মূখপত্র “আত্তাওহীদ” ডিসেম্বর-৯৬, জুলাই, জানুয়ারী ও আগস্ট-৯৭ সংখ্যাসমূহে ভোট-নির্বাচন সম্পর্কে যা লিখেছে তা হলো-
ধারাবাহিক
(ঘ)
“দ্বীন ইসলাম রক্ষার্থে ভোট বেচা-কেনা করাও জায়িয রয়েছে” তাদের এ বক্তব্যও কুফরীর অন্তর্ভূক্ত
পটিয়া খারিজী মাদ্রাসার মৌলবী ছাহেবরা উপরাক্ত বক্তব্য দ্বারা প্রথমতঃ প্রমান করলো যে, “দ্বীন ইসলাম রক্ষা করতে হলে ইহুদী-নাছারা কর্তৃক উদ্ভাবিত নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীক্বা অনুসরণ বা পালন করতে হবে। আর দ্বীন ইসলাম রক্ষার মালিক আল্লাহ পাক নন। তাদের মতে ইহুদী-নাছারাদের কুফরী মতবাদ গণতন্ত্র ভোট-নির্বাচন হচ্ছে দ্বীন রক্ষাকারী।” (নাউযুবিল্লাহ)
অথচ ইহুদী-নাছারা বা বেদ্বীন-বদদ্বীনরা ও তাদের উদ্ভাবিত নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীক্বাই হচ্ছে ইসলাম ও মুসলমানদের ক্ষতি ও ধ্বংসের এবং মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আরাইহি ওয়া সাল্লাম-এর গযব বা অসন্তুষ্টির কারণ। যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক “সূরা আলে ইমরান”-এর ৮৫ নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,
ومن يبتغ غير ااسلام دينا فلن يقبل منه وهو فى الاخرة من الخيرين.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন (নিয়মনীতি, অন্য ধর্ম) তালাশ করে, তা কখনোই তার থেকে গ্রহণ করা হবেনা এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।”
এ বিষয়টি আল্লাহ পাক কুরআন শরীফ-এর শুরুতেই ‘সূরা ফাতিহা’ শরীফে আরো ষ্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন। যা আমরা প্রতিদিন কম পক্ষে ৩২ বার অর্থাৎ ১৭ রাকাত ফরজে ১৭ বার, ৩ বার বিতির নামাযে, ১২ বার সুন্নত নামাযে সর্বমোট ৩২ বার পড়ে থাকি, বলে থাকি ও দুয়া করে থাকি অর্থাৎ নামাযের প্রতি রাকায়াতেই বলে থাকি যে,
اهدنا الصراط المستقيم.
অর্থঃ- “(আল্লাহ্ পাক) আমাদের সরলপথ প্রদর্শন করুন।” (সূরা ফাতিহা-৫)
কোন সরল পথ? বলা হয়েছে-
صراط الذين انعمت عليهم.
অর্থঃ- “যাদেরকে নিয়ামত দেয়া হয়েছে তাঁদের পথ।” (সূরা ফাতিহা-৬)
কাদেরকে নিয়ামত দেয়া হয়েছে? এ প্রসঙ্গে অর্থাৎ এর ব্যাখ্যায় আল্লাহ্ পাক অন্যত্র বলেন,
انعم الله عيهم من النبين والصديقين واشهداء والصلحين وحسن اولئك رفيقا.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক নিয়ামত দিয়েছেন যাঁরা নবী, ছিদ্দীক, শহীদ ও ছালেহ্ তাঁদেরকে এবং তাঁরাই উত্তম বন্ধু বা সঙ্গী।” (সূরা নিসা-৬৯) অর্থাৎ বান্দারা যেন নবী, ছিদ্দীক, শহীদ ও ছালেহ্গণের মনোনীত পথ তলব করে কারণ তাঁরাই সকলের জন্য উত্তম সঙ্গী বা বন্ধু।
শুধু মনোনীত পথ তলব করলেই চলবে না। সাথে সাথে অসন্তুষ্টিজনক ও ক্ষতিকর পথ থেকেও পানাহ তলব করতে হবে। সে প্রসঙ্গে পরবর্তী আয়াত শরীফে আল্লাহ পাক বলেন, তোমরা আরো বলো-
غير امغضوب عيهم ولا الضالين.
অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক আমাদেরকে তাদের পথ দিবেন না, যারা গযবপ্রাপ্ত ও পথহারা।” (সূরা ফাতিহা-৭)
উক্ত আয়াত শরীফে আল্লাহ পাক প্রত্যেক মুসলমানকে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এবং মাথার তালু থেকে পায়ের তলা পর্যন্ত দায়িমীভাবে ও প্রতিক্ষেত্রে নবী, ছিদ্দীক, শহীদ, ছলেহ অর্থাৎ নবী-রসূল ও আওলিয়ায়ে কিরামগণের মত পথে ইস্তিক্বামাত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। আর এর মুখালিফ যারা রয়েছে অর্থাৎ গোমরাহ ও গযবপ্রাপ্ত বিশেষ করে ইহুদী-নাছারা, হিন্দু-বৌদ্ধ, মজুসী-মুশরিকদেরকে যে কোন ক্ষেত্রে এবং যেকোন অবস্থাতেই অনুসরণ-অনুকরণ করতে নিষেধ করেছেন। কারণ তাদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করার অর্থই হলো নিজে ধ্বংস হওয়া এবং ইসলাম ও মুসলমানদের ধ্বংস সাধনে সাহায্য করা । এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن جابر رضى الله تعالى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم حين اتاه عمر فقال انا نسمع احاديت من يهود تعجبنا افترى ان نكتب بعضها فقال امتهوكون انتم كما تهوكت اليهود والنصرى لقد جئتكم بها بيضاء نقية ولو كان موسى حياماوسعه الا اتباعى.
অর্থঃ- “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেন যে, একদিন হযরত ওমর ইবনে খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা ইহুদীদের থেকে তাদের কিছু ধর্মীয় কথা শুনে থাকি, যাতে আমরা আশ্চর্যবোধ করি, ওটার কিছু আমরা লিখে রাখবো কি? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরাও কি দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছো? যে রকম ইহুদী নাছারারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে? অর্থাৎ তোমরাও কি ইহুদী-নাছারাদের মত ধ্বংস হতে চাও? অবশ্যই আমি তোমাদের নিকট পরিপূর্ণ, উজ্জ্বল ও পরিষ্কার দ্বীন নিয়ে এসেছি। হযরত মুসা আলাইহিস্ সালামও যদি দুনিয়ায় থাকতেন, তাহলে তাঁকেও আমার অনুসরণ করতে হতো।” (মুসনাদে আহমদ, বায়হাক্বী, মিশকাত)
অর্থাৎ তোমরা যদি ইসলাম বাদ দিয়ে ইহুদী-নাছারা বা বেদ্বীন-বদদ্বীনদেরকে অনুসরণ কর তবে তোমরা অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যাবে। সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, বেদ্বীন-বদদ্বীনদের নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীক্বা ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য ক্ষতি ও ধ্বংসের কারণ। যদি তাই হয়ে থাকে তবে ভোট-নির্বাচন দ্বীন রক্ষা করবে কিভাবে? কাজেই, “ভোট নির্বাচনের মাধ্যমে দ্বীন রক্ষা হবে” একথা বলা বা এ আক্বীদা পোষণ করা কাট্টা কুফরী।
মুলকথা হলো- দ্বীন ইসলাম রক্ষার মালিক হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ পাক। যে প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ করেন,
انا نحن نزلنا الذكر وانا له لحفظون.
অর্থাৎ, আমিই কুরআন বা দ্বীন নাযিল করেছি এবং আমিই এর হিফাযত বা রক্ষাকারী। (সূরা হির্জ- ৯)
কাজেই এদিক থেকেও তাদের উক্ত বক্তব্য কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত প্রামাণিত হলো।
দ্বিতীয়তঃ তারা প্রমাণ করলো যে, “হারাম জিনিষ বা বস্তু বেচা-কেনা জায়িয।” (নাউযুবিল্লাহ) কারণ ইসলামের দৃষ্টিতে ভোট সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়িয। শরীয়তের ফায়ছালা হলো- ইসলামে যা হারাম তা বেচা-কেনা করাও হারাম। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى مسعود الانصارى رضى اله تعالى عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم نهى عن ثمن الكلب ومهر البغى وحلوان اكاهن.
অর্থঃ “হযরত আবূ মাসউদ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে। নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন কুকুর বিক্রয় করে মূল্য নিতে, ব্যভিচারের বিনিময় গ্রহণ করতে ও যাদু শিক্ষা দিয়ে বিনিময় গ্রহণ করতে। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, ফিক্বহুস্ সুনান ওয়াল আছার ২৯০ পৃষ্ঠা)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى حجيفة رضى اله تعالى عنه عن ابيه ان النبى صلى الله عليه وسلم نهى عن ثمن الدم وثمن الكلب وكسب البغى ولعن اكل الربى ومو كله واواشمة والمستوشمة والمصور.
অর্থঃ হযরত আবু হুজায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন, “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রক্তের দাম, ও কুকুরের দাম নিতে এবং যেনাকারিণীর উপার্জন নিষেধ করেছেন, এবং যে ঘুষ খায়, যে ঘুষ দেয়, যে অংগে উলকি আঁকে এবং যে আঁকায়, আর যে ছবি অংকন করে, এদের সবার উপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লা’নত দিয়েছেন।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ৮৮১)। অর্থাৎ উল্লিখিত বিষয়গুলি যেহেতু হারাম তাই তার বেচা-কেনা বা বিনিময় গ্রহণ করাও হারাম।
অতএব, ইসলামের দৃষ্টিতে যেহেতু ভোট হারাম তাই ভোট বেচা-কেনা করাও হারাম। হালাল বলা বা মনে করা কুফরী।
তৃতীয়তঃ তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই তাদের স্ববিরোধী। কারণ তাদের বক্তব্য হলো ভোট আমানত, শাহাদত বা স্বাক্ষ্য, সুপারিশ ও উকীল বা প্রতিনিধি নিয়োগ। যদিও তাদের এ বক্তব্য ভুল ও কুফরীমূলক। কারণ শরীয়তের কোথাও ভোটকে আমানত, স্বাক্ষ্য, সুপারিশ, উকীল নিয়োগ বলা হয়নি।
প্রশ্ন হলো- তারা একদিকে বলছে ভোট আমানত, স্বাক্ষ্য, সুপারিশ ইত্যাদি। আবার অপরদিকে বলছে আমানত, স্বাক্ষ্য, সুপারিশ ইত্যাদি বেচা-কেনা শরীয়তে জায়িয। তারা এটা জায়িয পেল কোথায়?
“তাদের মতে যদি ভোট আমানতই হয়, তবে তারা আমানত বেচা-কেনা কোথায় জায়িয পেয়েছে?”
পটিয়া খারিজী মৌলবীরা এক দিকে ফতওয়া দিচ্ছে ‘ভোট আমানত’ নাউযুবিল্লাহ। অপরদিকে ফতওয়া দিচ্ছে ভোট বেচা-কেনা জায়িয। অর্থাৎ তাদের মতে আমানত বেচা-কেনা করা জায়িয। নাউযুবিল্লাহ। আর ‘আমানত’ বেচা-কেনা করার অর্থ হলো আমানতের খেয়ানত করা। অথচ ‘আমানত’ সম্পর্কে আল্লাহ পাক “সূরা নিসা”-এর ৫৮নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,
ان الله يأمركم ان تؤدوا الامنت الى اهلها واذا حكمتم بين اناس ان تحكموا بالعدل ان الله نعما يعظكم به ان الله كان سميعا بصيرا.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক তোমাদেরকে আদেশ করেন যে, তোমরা আদায় করে দাও আমানতসমূহকে তার হকদারদেরকে এবং যখন তোমরা মানুষের মধ্যে ফায়সালা বা বিচার করবে, তখন ন্যায়ের সাথে বিচার করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তোমাদেরকে উত্তম উপদেশ দান করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।”
এ ছাড়াও কুরআন শরীফে “সূরা বাক্বারার” ২৮৩ নং আয়াত শরীফে লেন-দেন প্রসঙ্গে আমানতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। “সূরা আনফালের’’২৭নং আয়াত শরীফে জিহাদ প্রসঙ্গে, “সূরা আহযাবের” ৭২ নং আয়াত শরীফে কুরআন শরীফ ও ইসলাম সম্পর্কে, “সূরা মু’মিনুন” ৮নং আয়াত শরীফে, “সূরা মায়ারিজের” ৩২ নং আয়াত শরীফে, মু’মিনের চরিত্র প্রসঙ্গে আমানতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অতএব, প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে, সে যেন কোন অবস্থায়ই আমানতের খিয়ানত না করে।
আর এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن انس رضى الله تعالى عنه قال قلما خطبنا رسول اله صلى الله عليه وسم الا قال لاايمان لمن لا امانة ه ولادين لمن لاعهد له.
অর্থঃ- “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে এরূপ উপদেশ খুব কমই দিয়েছেন যাতে এ কথাগুলো বলেননি যে, যার আমানত নেই, তার ঈমানও নেই এবং যার ওয়াদা ঠিক নেই, তার দ্বীনও নেই।” (বাইহাক্বী, মিশকাত) অর্থাৎ যে আমানত খিয়ানত করবে, সে খালিছ ঈমানদার হতে পারবেনা। আর যে ওয়াদা খিলাফ করবে, সে খালিছ দ্বীনদার হতে পারবেনা।
আমানত সম্পর্কে হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول اله صلى الله عيه وسلم اية المنافق ثلث اذا حدث كذب واذا وعد اخلف واذا اؤتمن خان.
অর্থঃ “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মুনাফিক্বের আলামত তিনটি- ১. যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, ২. ওয়াদা করলে খিলাফ করে, ৩. আমানতের খিয়ানত করে। (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ) অর্থাৎ যারা আমানতের খিয়ানত করবে তারা মুনাফিক হিসেবে গণ্য হবে।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه عن انبى صلى الله عليه وسم قا اد الامانة الى من ائتمنك ولا تخن من خانك.
অর্থঃ হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে তোমার নিকট আমানত রেখেছে তার নিকট আমানত আদায় বা অর্পণ করবে এবং তোমার খিয়ানত করেছে এমন ব্যক্তিরও আমানত আদায় করার ব্যাপারে খিয়ানত করবে না। (তিরমিযী, আবূ দাউদ, দারিমী, মিশকাত)।
কাজেই, আমানত বেচা-কেনার অর্থ হলো আমানত খিয়ানত করা। আর আমানত খিয়ানত করা শক্ত কবীরা গুণাহ এবং আমানতের খিয়ানতকারী মুনাফিক হিসেবে গণ্য।
এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি কখনো আমানত রাখতেন না বরং কর্জে হাসানাহ হিসেবে রাখতেন। কারণ আমানত যেভাবে রাখবে ঠিক হুবহু অনুরূপভাবেই ফেরত দিতে হবে। নচেৎ আমানতের খিয়ানত হবে। তিনি তাক্বওয়ার জন্য আমানত রাখতেন না। সুতরাং বুঝা গেল যে, আমনত এদিক-সেদিক করার কোন সুযোগ নেই।
অতএব, আমানত বেচা-কেনা করাকে জায়িয বলা সম্পূর্ণরূপে কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। যারা কুফরী করে শরীয়তের দৃষ্টিতে তারা কাফির ও মুরতাদের অন্তর্ভূক্ত।
পটিয়া খারিজী মৌলবী ছাহেবদের মতে যদি ভোট শাহাদত বা স্বাক্ষ্যই হয়,তবে ভোট বেচা-কেনার অর্থ স্বাক্ষ্য বেচা-কেনা নয় কি? স্বাক্ষ্য বেচা-কেনা করা শরীয়তে জায়িয রয়েছে কি?
স্বাক্ষ্য সম্পর্কে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
يايها الذين امنوا كونوا قومين بالقسط شهداء لله ولو على انفسكم او الوالدين والاقربين ان يكن غنيا او فقيرا فالله اولى بهما فلا تتبعوا الهوى ان تعدلوا وان تلوا او تعرضوا فان الله كان بما تعملون خبيرا.
অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইনছাফের উপর কায়িম থাক, আল্লাহ্ পাক-এর জন্য স্বাক্ষ্য দেয়ার ব্যাপারে। যদি তা তোমাদের নিজেদের, পিতা-মাতার ও নিকট আত্মীয়দের বিরুদ্ধেও হয়। চাই সে ধনী হোক বা দরিদ্র হোক। অতঃপর আল্লাহ্ পাকই তাদের প্রতি অধিক কল্যাণকামী। তোমরা ইনছাফ করতে গিয়ে নফ্সের অনুসরণ করোনা। আর যদি তোমরা বর্ণনায় বক্রতা অবলম্বন কর অথবা সঠিক স্বাক্ষ্য দেয়া হতে বিরত থাক, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তায়ালা তোমাদের কাজ সম্পর্কে সমধিক জ্ঞাত।” (সূরা নিসা-১৩৫)
আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন,
يايها الذين امنوا كونوا قومين لله شهداء بالقسط ولا يجر منكم شنان قوم عى اا تعدلوا اعدلوا هوا اقرب لتقوى واتقوا الله ان اله خبير بما تعملون.
অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ পাক-এর জন্য সঠিক স্বাক্ষ্য দেয়ার ব্যাপারে ইন্ছাফের উপর কায়িম থাক এবং কোন সম্প্রদায়ের শত্রুতা যেন তোমাদেরকে ন্যায় বিচার করা হতে বিরত না রাখে, তোমরা ন্যায় বিচার কর। এটি তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতির অধিক নিকটবর্তী এবং তোমরা আল্লাহ্ পাককে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক তোমাদের কাজ সম্পর্কে সমধিক অবহিত।” (সূরা মায়িদা-৮)
আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন,
واستشهدوا شهيدين من رجاكم فان لم يكونا رحلين فرجل وامراتن
অর্থঃ- “তোমাদের পুরুষদের মধ্য হতে দু’জন সাক্ষী দাঁড় করাও। যদি দু’জন পুরুষ না পাওয়া যায় তাহলে একজন পুরুষ ও দু’জন মহিলার স্বাক্ষ্য গ্রহণ কর।” (সূরা বাক্বারা-২৮২)
আর স্বাক্ষ্য সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن خريم بن فاتكى رضى الله تعالى عنه قال صلى رسول الله صلى اله عليه وسلم صلوة الصبح فلما انصرف قام قائما فقال عدلت شهادة الزور بالاشراكى بالله ثلث مرات.
অর্থঃ হযরত খুরাইম ইবনে ফাতিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, একদা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের নামায পড়ালেন, নামায শেষ করার পর তিনি দাঁড়ালেন এবং তিনবার বললেন, মিথ্যা স্বাক্ষ্য দানকে আল্লাহ তায়ালার সাথে শিরকের সমতুল্য করা হয়েছে। (আবূ দাউদ, মিশকাত)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن عمروبن شعيب عن ابيه عن جده عن انبى صلى الله عليه وسلم قال تجوز شهادة خائن ولا خائنة ولا زان ولا زانية ورد شهلاة القانع لاهل البيت.
অর্থঃ হযরত আমর ইবনে শুয়াইব তাঁর পিতার মাধ্যমে, তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, খিয়ানতকারী পুরুষ ও খিয়ানতকারিণী নারীর স্বাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়। ব্যভিচারী পুরুষ ও ব্যভিচারিণী নারীর স্বাক্ষ্যও গ্রহণযোগ্য নয়। আর এমন ব্যক্তির স্বাক্ষ্যও গ্রহণযোগ্য নয়, যে ব্যক্তি কোন পরিবারের উপর নির্ভরশীল। (আবূ দাউদ, মিশকাত)
মিথ্যা স্বাক্ষ্য সম্পর্কে হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
قال النبى صلى الله عليه وسلم الا انبئكم باكبر الكبائر قلنا بلى يا رسول الله قال الاشراك باله وعقوق الوالدين وقول الزور وشهادة ازور.
অর্থঃ “আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি কি তোমাদেরকে কবীরা গুণাহ সম্পর্কে জানাবো? আমরা বললাম হ্যাঁ! তিনি বললেন, আল্লাহ পাক-এর সাথে শরীক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, মিথ্যা কথা বলা ও মিথ্যা স্বাক্ষ্য দেয়া।” (বুখারী শরীফ) অর্থাৎ, মিথ্যা স্বাক্ষ্য দেয়া হচ্ছে কবীরা গুণাহ।
কাজেই, যেখানে মিথ্যা স্বাক্ষ্য, অসৎ ব্যক্তির স্বাক্ষ্যই শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়। সেখানে স্বাক্ষ্য বেচা-কেনা জায়িয হয় কি করে? প্রকৃতপক্ষে স্বাক্ষ্য বেচা-কেনার অর্থ হলো মিথ্যা স্বাক্ষ্য প্রদান করা। সুতরাং এটাকে জায়িয বলাটা কুফরীর শামিল। আর যারা কুফরী করে শরীয়তের দৃষ্টিতে তারা কাফির ও মুরতাদের অন্তর্ভূক্ত।
তাদের মতে যদি ভোট সুপারিশই হয়, তবে তারা সুপারিশ বেচা-কেনা কোথায় জায়িয পেয়েছে?
পটিয়া খারিজী মৌলবীরা এক দিকে ফতওয়া দিচ্ছে ‘ভোট সুপারিশ’ (নাউযুবিল্লাহ)। অপরদিকে ফতওয়া দিচ্ছে ভোট বেচা-কেনা জায়িয। অর্থাৎ তাদের মতে সুপারিশ বেচা-কেনা করা জায়িয। নাউযুবিল্লাহ। অথচ সুপারিশ’ সম্পর্কে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
من يشفع شفاعة حسنة يكن ه نصيب منها ومن يشفع شفاعة شيئة يكن له كفل منها وكان الله على كل شىء مقيتا.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি সুপারিশ করবে কোন নেক কাজের জন্য, সে এর দরুন (ছওয়াবের) একটা অংশ পাবে। আর যে ব্যক্তি সুপারিশ করবে কোন পাপ কাজের জন্য, সে এর দরুন (গুণাহ্র) একটা অংশ পাবে এবং আল্লাহ্ তায়ালা সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল।” (সূরা নিসা-৮৫)
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن عبد اله بن عمر رضى الله تعالى عنه قال سمعت رسول الله صلى اله عليه وسلم يقول من حالت شفاعته دون حدمن حدود الله فقد ضاد الله ومن خاصم فى باطل وهو يعلمه لم يزل فى سخط الله تعالى حتى ينزع.
অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি শুনেছি, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার দ-বিধিসমূহ হতে কোন একটি দ-ের ব্যাপারে সুপারিশ করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সে যেন আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে মোকাবেলায় লিপ্ত হলো। আর যে ব্যক্তি জেনে শুনে বাতিল বা অন্যায় সমর্থনে ঝগড়ায় লিপ্ত হলো সে উহা বর্জন না করা পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালার ক্রোধ ও অসন্তুষ্টির মধ্যে নিপতিত হলো। (আহমদ, আবূ দাউদ)
কাজেই, যে ব্যক্তি জেনে শুনে বাতিল ও অন্যায় কাজের জন্য সুপারিশ করবে সে উক্ত বাতিল ও অন্যায়ের ভাগীদার তো হবেই সাথে সাথে উক্ত বাতিল ও অন্যায়কে সমর্থন করার কারণে সে আল্লাহ তায়ালার ক্রোধ ও অসন্তুষ্টির মধ্যে পতিত হবে।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে আরো উল্লেখ আছে যে,
عن عائشة رضى الله تعاى عنها ان قريشا اهمهم شان المرأة المخزوميه التى سرقت فقالوا من يكلم فيها رسول اله صلى الله عليه وسلم فقالوا ومن يجترئ عليه اا اسامة بن زيد حب رسول الله صلى الله عليه وسلم فكمه اسامة فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم اتشفع فى حدمن حدود الله ثم قام فاختطب تم قال انما اهلك الذين قبلكم انهم كانوا اذا سرق فيهم الشريف تركوه واذا سرق فيهم اضعيف اقاموا عليه الحد وايم اله لو ان فاطمة بنت محمد صلى الله عليه وسلم سرقت لقطعت بدها.
অর্থঃ হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত, মাখযুম গোত্রীয় এক মহিলা চুরি করেছিল। যাতে কুরাইশগণ অত্যন্ত ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। তারা (পরস্পরের মধ্যে) বলল, কে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এ ব্যাপারে সুপারিশ করবে? আবার তারাই বলল; উসামা বিন যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ব্যতীত আর কে এ ব্যাপারে সাহস করবে? কারণ, তিনি হলেন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অত্যন্ত প্রিয়। অতঃপর তিনি (তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এ ব্যাপারে সুপারিশ করলেন। তাঁর কথা শুনে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (খুব কষ্ট পেয়ে) বললেন, তুমি কি আল্লাহ পাক-এর দ-বিধিসমূহ হতে একটির ব্যাপারে সুপারিশ করছো? অতঃপর তিনি দাঁড়ালেন এবং খুতবা দিলেন ও বললেন, জেনে রাখ, প্রকৃতপক্ষে তোমাদের পূর্বেকার লোকগণ এ আচরণের কারণেই ধ্বংস হয়েছে যে, যখন তাদের মধ্যে কোন ভদ্র-সম্ভ্রান্ত লোক চুরি করত, তখন তারা তাকে ছেড়ে দিত। আর যখন তাদের মধ্যে কোন অসহায় দুর্বল লোক চুরি করত, তখন তার উপর দ- প্রয়োগ করত।
(নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ পাক-এর বিধানের প্রতি দৃঢ়তা এবং বিচারের ক্ষেত্রে ধনী-গরবী, ছোট-বড় ও শক্তিশালী-দূর্বল আপন-পর সকলেই যে সমান তা প্রকাশ করার জন্যই নিম্নোক্ত কথা বলেন। নচেৎ তা কল্পনাও করা যায় না)
আল্লাহ পাক-এর কসম! যদি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর কন্যা হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা চুরি করতেন, তবুও আমি অবশ্যই তার হাত কেটে দিতাম। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
কাজেই প্রমাণিত হলো যে, সুপারিশ বেচা-কেনার অর্থ হলো সত্যকে হেরফের করে অন্যায় ও অসত্যকে সমর্থন দেয়া বা অন্যায় কাজে সুপারিশ করা। এটাও কাট্টা কুফরী। যারা কুফরী করে শরীয়তের দৃষ্টিতে তারা কাফির ও মুরতাদের অন্তর্ভূক্ত।
তাদের মতে যদি ভোট উকিল নিয়োগই হয়, তবে তারা উকিল বেচা-কেনা জায়িয পেল কোথায়?
পটিয়া খারিজী মৌলবীরা এক দিকে ফতওয়া দিচ্ছে ‘ভোট উকিল নিয়োগ’ নাউযুবিল্লাহ। অপরদিকে ফতওয়া দিচ্ছে ভোট বেচা-কেনা জায়িয। অর্থাৎ তাদের মতে উকিল বেচা-কেনা করা জায়িয। নাউযুবিল্লাহ। অথচ ‘উকিল বা প্রতিনিধি নিয়োগ সম্পর্কে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
ارئيت من اتخذ الهه هوه افانت تكون عليه وكيلا.
অর্থঃ- “আপনি কি লক্ষ্য করেননি? যে ব্যক্তি তার নফ্স বা প্রবৃত্তিকে ইলাহ্ (উপাস্য) হিসেবে গ্রহণ করে, এরপরও কি আপনি তার উকিল হবেন?” (সূরা ফুরক্বান-৪৩)
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن جابر رضى الله تعالى عنه قال اردت الخروج الى خيبر فاتيت النبى صلى الله عليه وسم فسلم عليه وقلت انى اردت الخروج الى خيبر فقال اذا اتيت وكيلى فخذ منه خمسة عشر وسقا.
অর্থঃ হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি খয়বর যেতে ইচ্ছা করলাম। অতঃপর আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট যেয়ে তাঁকে সালাম করে বললাম, হে আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি খয়বর যেতে ইচ্ছা করেছি। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সেখানে যখন আমার উকিলের নিকট পৌঁছবে, তাঁর নিকট হতে পনের ওসক খেজুর নিবে। (আবূ দাউদ, মিশকাত)
বুঝা গেল যে, শরীয়তে উকিল নিয়োগ বা মনোনীত করা জায়িয রয়েছে। তবে এর জন্য শর্ত-শারায়েতও রয়েছে। উকিলকে মু’মিন, মুত্তাক্বী, বালেগ, সৎ, আমানতদার হতে হবে। অর্থাৎ তাকে যে কাজে ‘উকিল’ নিয়োগ করা হবে, তাকে সে কাজ এর যোগ্য হতে হবে এবং তা যথাযথভাবে করতে হবে। তাকে টাকার বিনিময়ে বিক্রি হওয়া চলবে না। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى حميدن الساعدى قال استعمل النبى صلى الله عليه وسلم رجلامن الازد يقال له ابن اللتبية على الصدقة فلما قدم قال هذا لكم وهذا اهدى لى فخطب النبى صلى الله عليه وسلم فحمد الله واثنى عليه ثم قال اما بعد فانى استعمل رجالا منكم على امور مما ولانى الله فيأتى احدهم فيقول هذا لكم وهذه هدية اهديت لى فهلا جس فى بيت ابيه او بيت امه فينظر ايهدى له ام لا والذى نفسى بيده لايأخذ احد منه شيئا الاجاء به يوم القيمة يحمله على رقبته ان كان بعيرا له رغاء او بقرا له خوار او شاة تيعر ثم رفع يديه حتى رأينا عفرة ابطيه ثم قال اللهم هل بلغت اللهم هل بلغت.
অর্থঃ হযরত আবু হুমাইদ সায়িদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, একবার নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইবনে লুত্বিয়্যা নামক আয্দ গোত্রের এক ব্যক্তিকে যাকাত উসূলের জন্য উকিল বা কর্মচারী নিযুক্ত করলেন। যখন সে যাকাত নিয়ে (মদীনা শরীফে) ফিরল, তখন সে বলল, এই অংশ আপনাদের প্রাপ্য যাকাত, আর এ অংশ আমাকে হাদিয়া দেয়া হয়েছে। এটা শুনে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুৎবা দানের জন্য দাঁড়ালেন এবং প্রথমে আল্লাহ পাক-এর প্রশংসা করলেন, অতঃপর বললেন, ব্যাপার এই যে, আমি তোমাদের মধ্যে কোন কোন ব্যক্তিকে সে সকল কাজের কোন একটির উকিল বা কর্মচারী নিযুক্ত করি, যেসকল কাজের দায়িত্ব আল্লাহ পাক আমার প্রতি সোপর্দ করেছেন। অতঃপর তোমাদের সে ব্যক্তি এসে বলে যে, এটা আপনাদের প্রাপ্য যাকাত এবং এটা আমাদের হাদিয়া দেয়া হয়েছে। সে কেন তার পিতা-মাতার ঘরে বসে দেখলনা যে, তাকে হাদিয়া দেয়া হয় কিনা? আল্লাহ পাক-এর কসম, যে ব্যক্তি এর কোন কিছুর তস্ররুফ করবে, সে নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন ওটা আপন ঘাড়ে বহন করে হাজির হবে। যদি সেটা উট হয়, উটের ন্যায় চি চি আওয়াজ করবে। যদি গরু হয়, হাম্বা হাম্বা করবে, আর যদি ছাগল/ভেড়া হয়, এদের ন্যায় ম্যা ম্যা করবে। অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (খুব দীর্ঘ করে) আপন হাত মুবারকদ্বয় উঠালেন যাতে আমরা তাঁর উভয় বগল মুবারকের শুভ্রতা পর্যন্ত দেখলাম এবং বললেন, হে আল্লাহ পাক! আমি নিশ্চয়ই (আপনার নির্দেশ মুবারক) পৌঁছিয়ে দিলাম, হে আল্লাহ পাক! আমি নিশ্চয়ই পৌঁছিয়ে দিলাম। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن عدى بن عميرة رضى اه تعاى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من استعملناه منكم عى عمل فكتمنا مخيطا فما فوقه كان غلولا ياتى به يوم القيمة.
অর্থঃ হযরত আদী ইবনে আমীরাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের মধ্যে আমি যাকে কোন কর্মে উকীল বা কর্মচারী নিযুক্ত করি, আর সে আমাদের নিকট হতে একটি সুঁচ অথবা তদপেক্ষা ছোট কিছুও গোপন করে, এটা নিশ্চয়ই আমানতের খিয়ানত হবে, যা নিয়ে সে কিয়ামতের দিন হাজির হবে। (মুসলিম শরীফ)
কাজেই, উকিল বেঁচা-কেনা শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়। বরং হারাম। এটাকে জায়িয বলাও কুফরীর শামীল। যারা কুফরী করে তারা কাফির ও মুরতাদের অন্তর্ভূক্ত।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, পটিয়া খারিজী মৌলবী ছাবেরা যে বলেছে, “দ্বীন ইসলাম রক্ষার্থে ভোট বেচা-কেনা করাও জায়িয।” তাদের এ বক্তব্য সবদিক থেকেই কুফরীমূলক বলে সাব্যস্ত হলো। তাদেরকে এর থেকে খালিছ তওবা করতে হবে। মূলকথা হলো-ইসলামের দৃষ্টিতে ভোট চাওয়া, দেয়া, ভোট বেচা-কেনা করা সম্পূর্ণই হারাম। এটাকে হালাল বলা কাট্টা কুফরী। অসমাপ্ত
পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন