ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (১০৯)

সংখ্যা: ১৬০তম সংখ্যা | বিভাগ:

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম

 

৫২। “নিয়মিত শায়খ বা মুর্শিদ ক্বিবলার ছোহবত ইখতিয়ার করবে। আহলে যিকির তথা আওলিয়ায়ে কিরামগণের ছোহবত ইখতিয়ার করা ফরয।”

খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আশরাফুল আওলিয়া, হাকিমুল ইসলাম, সুলত্বানুল আরিফীন, শাইখুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ, সাইয়্যিদুল মুজতাহিদীন, গাউছুল আ’যম, হুজ্জাতুল ইসলাম, নূরে মুর্কারাম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা, ইমাম, রাজারবাগ শরীফের মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, “যারা নিকটে অবস্থান করে তারা প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে পাঁচবার ছোহবত ইখতিয়ার করবে। যারা একই মহল্লায় থাকে তারা প্রতিদিন কমপক্ষে একবার। যারা একই শহর বা গ্রামে থাকে তারা সপ্তাহে কমপক্ষে দু’বার। যারা সেই শহর বা গ্রামের বাইরে বসবাস করে তারা সপ্তাহে কমপক্ষে একবার। যারা পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে বসবাস করে তারা মাসে অন্ততপক্ষে একবার। যারা দুরবর্তী জেলাগুলোতে অবস্থান করে তারা কমপক্ষে তিন মাসে একবার। যারা নিকটবর্তী দেশে অবস্থান করে তারা কমপক্ষে ছয় মাসে একবার। আর যারা  দূরদেশে বসবাস করে তারা কমপক্ষে বৎসরে একবার শায়খের ছোহবত ইখতিয়ার করবে। তবে যে ব্যক্তি তার শায়খ বা মুর্শিদ ক্বিবলার যতবেশী ছোহবত ইখতিয়ার করবে তার মর্যাদা-মর্তবা ততবেশী হবে। ইছলাহ বা পরিশুদ্ধি, তায়াল্লুক, নিসবত এবং নৈকট্য ততবেশী হবে।”

খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, মুবাশ্শর ফিল জান্নাত, ছিদ্দীকে আকবর হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু ছিলেন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের পরে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। তিনি আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সবচেয়ে বেশী ছোহবত ইখতিয়ার করেছেন। তিনি তাঁকে ছায়ার মত অনুসরণ করতেন। আল্লাহ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমার অন্তরে যা ছিল সবই হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর অন্তরে ঢেলে দিয়েছি।” (রওজাতুল কাইউমিয়াহ)

যে যার ছোহবত ইখতিয়ার করে সে ব্যক্তি তাঁকে অনুসরণ-অনুকরণও করে। ফলে, সেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির গুণাবলীতে গুণান্বিত হয়ে উঠে।

আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

يايها الذين امنوا اتقوا الله وكونوا مع الصد قين.

অর্থঃ হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ পাককে ভয় কর এবং সত্যবাদীগণের ছোহবত ইখতিয়ার কর।  (সূরা তাওবা-১৯৯)

অর্থাৎ তোমরা সত্যবাদীগণের ছোহবত ইখতিয়ার করলে মুত্তাক্বী হতে পারবে। আর যে যত তাক্বওয়া হাছিল করতে পারবে, মুত্তাক্বী হবে তার মর্যাদা-মর্তবা, ততবেশী হবে।

আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন,

واصبر نفسك مع الذين يد عون ربهم بالغد وة والعشى يريد ون وجهه ولا تعد عينك عنهم تريد زينة الحيوة الدنيا.

অর্থঃ- তুমি ঐ ব্যক্তিদের ছোহবতকে নিজের জন্য লাযিম করে নাও যারা আল্লাহ পাক-এর সন্তুষ্টি-রেযামন্দির আশায় সকাল-সন্ধ্যা (সার্বক্ষণিক) তার রবের যিকিরে নিয়োজিত। দুনিয়ার মোহে মোহগ্রস্থ হয়ে তাঁদের থেকে কখনও দৃষ্টি ফিরাবে না। (সূরা কাহাফ-২৮)

অর্থাৎ তাঁদের ছোহবত ত্যাগ করবে না। বরং যাদের অন্তরে যিকির জারী নেই তাদের ছোহবত থেকে দূরে থাকবে। কেননা আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

ولا تطع من اغفلنا قلبه عن ذكر نا واتبع هوه وكان امره فرطا.

অর্থঃ আর ঐ ব্যক্তির অনুসরণ করবে না (গোমরাহীতে নিমজ্জিত থাকার কারণে) যার অন্তরকে আমার যিকির থেকে গাফিল রেখেছি। সে তার নফসের (প্রবৃত্তির) অনুসরণ করে আর তার আমলগুলো শরীয়তের খিলাফ। (সূরা কাহাফ-২৮)

 অর্থাৎ যারা ইলমে তাছাউফ হাছিল করে না, যাদের অন্তর পরিশুদ্ধ নয় এবং যাদের ক্বাল্বে যিকির জারী নেই, তাদের অনুসরণ করে আওলিয়ায়ে কিরামের ছোহবত পরিত্যাগ করবে না।

স্মর্তব্য,সমস্ত লোক আওলিয়ায়ে কিরামগণের নিকট থেকে ফায়দা হাছিল করবে।

কালামূল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

قال الله هذا ثوم ينفع الصد قين صد قهم لهم جنت تجرى من تحتها الا نهر خلدين فيها ابدا رضى الله عنهم ورضوا عنه ذلك الفوز العظيم.

অর্থঃ আল্লাহ পাক বলেন, আজকের এই দিনে সত্যবাদীগণ তাঁদের সততার দ্বারা ফায়দা লাভ করবেন। তাঁদের জন্য এমন জান্নাত রয়েছে, যার তলদেশ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত। সেখানে তারা অনন্তকাল থাকবেন। আল্লাহ পাক তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট, তাঁরাও আল্লাহ পাক-এর প্রতি সন্তুষ্ট রয়েছেন। আর ইহাই হচ্ছে মহা সফলতা। (সূরা মায়িদা-১১৯)

কজেই যারা সত্যবাদীগণের ছোহবত ইখতিয়ার করবে, মুহব্বত করবে, তায়াল্লুক নিছবত রাখবে তারাও সেই মহান নিয়ামত লাভে ধন্য হবে।

উল্লেখ্য যে, আওলিয়ায়ে কিরামের ছোহবত (সংস্পর্শ) সর্বশ্রেষ্ঠ আমল। আর তাঁদের ছোহবত ইখতিয়ার করলে দুনিয়া ও আখিরাতের শ্রেষ্ঠতম নিয়ামত লাভ হয়। হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে,

عن ابى رزين انه قال له رسول الله صللى الله عليه وسلم الا ادلك على ملاك هذا الامر الذى تصيب هخير الد نيا والاخرة عليك بمجالس اهل الذكر واذا خلوت فحرك لسا نك ما استطعت بذكر الله تعالى واحب فى الله وابغض فى الله.

অর্থঃ- “হযরত আবূ রজীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। একবার সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “হে আবূ রজীন! আমি কি তোমাকে এমন একটি আমলের সুসংবাদ দিব, যার মাধ্যমে তুমি দুনিয়া ও আখিরাতের শ্রেষ্ঠতম নিয়ামত লাভ করতে পারবে? আর তা হচ্ছে, আহলে যিকির তথা আওলিয়ায়ে কিরামগণের ছোহবতকে ওয়াজিব তথা অপরিহার্য করে নিবে। আর যখন একাকী থাকবে (ছোহবত পাবেনা) তখন আল্লাহ পাক-এর যিকির দ্বারা সাধ্যমত তোমার জিহবাকে তরুতাজা রাখবে। আল্লাহ পাক-এর জন্যই মুহব্বত করবে এবং আল্লাহ পাক-এর জন্যই শত্রুতা পোষণ করবে।” (বাইহাক্বী, তাফসীরে মাযহারী ৫/ ৪০)

আল্লাহ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন,

ان من عباد الله لانا سا ماهم با نبياء ولاشهداء يغبطهم الانبياء والشهداء يوم القيامة بمكا نهم من الله تعالى قالوا يا رسول الله صلى الله عليه وسلم تخبرنا من  هم قال هم قوم تحابوا بروح الله على غير ارحام بينهم ولا اموال يتعا طو نها فو الله ان وجوههم لنور وانهم لعلى نور لايخا فون اذا خاف الناس ولايحز نون اذا حزن الناس.

অর্থঃ- “আল্লাহ পাক-এর বান্দাগণের মধ্যে এমন কতিপয় খাছ লোক (আউলিয়ায়ে কিরাম) আছেন যাঁরা নবীও নন এবং শহীদও নন; কিন্তু ক্বিয়ামতের দিন তাঁদের মর্যাদা-মর্তবা, নৈকট্যপ্রাপ্তি দেখে স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর নবী আলাইহিমুস্ সালাম এবং শহীদগণ পর্যন্ত আশ্চর্যান্বিত হবেন।” হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ আরয করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাদেরকে তাঁদের পরিচয় দান করুন। তিনি বলেন, “তাঁরা এমন এক সম্প্রদায় যারা শুধুমাত্র আল্লাহ পাক-এর সন্তুষ্টির জন্য একে অপরকে মুহব্বত করেন। অথচ তাঁদের মধ্যে কোন প্রকারের আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই এবং তাঁদের মাঝে ধন-সম্পদের লেনদেনও নেই। অর্থাৎ পার্থিব কোন উদ্দেশ্য নেই। আল্লাহ পাক-এর কসম! তাঁদের চেহারা হবে নূরে নূরান্বিত এবং তাঁরা উপবিষ্ট হবেন নূরের উপর। তাঁরা তখনও কোন প্রকার ভীত-সন্ত্রস্ত হবেননা যখন সকল মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত হবে। আর তাঁরা দুশ্চিন্তাগ্রস্থও হবেননা যখন সকল মানুষ দুশ্চিন্তায় নিমগ্ন থাকবে।

অতঃপর তিনি এই আয়াত শরীফ পাঠ করলেন যে,

الا ان اولياء الله لاخوف عليهم ولاهم يحزنون.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ পাক-এর ওলী তাঁদের কোন ভয় নেই এবং তাঁরা দুশ্চিন্তাগ্রস্থও হবেন না।” (মিশকাত/৪২৬)

(চলবে)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৮৭)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৮৯)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৯০)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৯১)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৯২)