ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৮৩)

সংখ্যা: ১৩৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

দরবার শরীফে অবস্থানের আদব প্রসঙ্গঃ অন্তরে সর্বদা একথাই বদ্ধমূল রাখবে যে, “এ দরবার শরীফ এমন আজিমুশ্ শান এবং মহান মর্যাদাপূর্ণ যে, এখানে সামান্য বেয়াদবীর কারণে জীবনের সমস্ত নেক আমল বরবাদ হয়ে যাবে।”

(ধারাবাহিক)

আল্লাহ পাক-এর ওলীগণ হচ্ছেন মুস্তাজাবুদ দাওয়াত। তাঁদের প্রত্যেক দোয়াই আল্লাহ পাক কবুল করে থাকেন। হযরত আমর ইবনে উছমান মাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ব্যথিত হৃদয়ের প্রার্থনা আল্লাহ পাক কবুল করলেন। আর তারই ফলশ্রুতিতে পরবর্তীকালে হযরত মানছূর হাল্লাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর হাত-পা কর্তিত হয়েছিলো। উল্লেখ্য যে, হযরত মানছূর হাল্লাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মাধ্যমে এমনি আরো কিছু ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল যার কারণে হযরত আমর ইবনে উছমান মাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর প্রতি ক্রমেই বিরক্ত এবং অসন্তুষ্ট হয়ে উঠেছিলেন। এমনকি একদিন তিনি হযরত মানছূর হাল্লাজ রহমতুল্লাহি আলাইহিকে নিজের সোহবতে না রেখে বিদায় করে দিলেন। আর একথা চিরন্তন সত্য যে, যখন পীর ছাহেব ক্বিবলা কোন কারণে কারো প্রতি অসন্তুষ্ট হন তখন সে দরবার শরীফে অবস্থানের সৌভাগ্য হারিয়ে ফেলে। সে কোন ভাবে দরবার শরীফে অবস্থান করতে পারেনা। সুতরাং যদি কেউ খালিছ তওবা করে ফিরে আসার কোশেশ না করে তবে তার ঈমানহারা অবস্থায় মৃত্যু বরণ ছাড়া উপায় থাকেনা। হযরত মানছূর হাল্লাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বীয় পীর ছাহেব ক্বিবলা হযরত আমর ইবনে উছমান মাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দরবার শরীফ হতে বিদায় হয়ে বাগদাদ শরীফের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। বাগদাদ শরীফে উপস্থিত হয়ে তথাকার সুবিখ্যাত ওলীআল্লাহ, সাইয়্যিদুত্ ত্বায়িফা, লিসানুল ক্বওম, সুলতানুল মুহাক্কিকীন হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট পৌঁছে তাঁর ছোহবত ইখতিয়ার করার বাসনা প্রকাশ করলেন। সুলতানুল মুহাক্কিকীন, সাইয়্যিদুত ত্বয়িফা হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাকে ছোহবতে থাকার অনুমতি দিলেন বটে; কিন্তু বললেন, তুমি তোমার পীর ছাহেব ক্বিবলা হযরত আমর ইবনে উছমান মাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট গিয়ে স্বীয় অপরাধ স্বীকার করতঃ তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তোমার শ্বশুর হযরত আবু ইয়াকুব আখতার রহমতুল্লাহি আলাইহিকেও বলো, তিনি যেন হযরত আমর ইবনে উছমান মাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করত: মনোমালিন্য মিটিয়ে ফেলেন। অবশ্য পরে তিনি তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন কিন্তু হযরত আমর ইবনে উছমান মাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত মানছূর হাল্লাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং তাঁর শ্বশুর হযরত আবু ইয়াকুব আখতার রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ব্যবহারে এতো অধিক কষ্ট পেয়েছিলেন যে, ক্ষমা করা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া আউলিয়ায়ে কিরামগণ তো আল্লাহ পাক-এর ইচ্ছার খেলাফ কোন কাজ করতে পারেন না। কিন্তু তিনি ক্ষমা পেতে ব্যর্থ হলেন। ফলশ্রুতিতে তিনি সাইয়্যিদুত্ ত্বায়িফা, সুলতানুল মুহাক্কিকীন, হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি এর ছোহবতের বরকত হাছিল করতে পারলেন না। একদিন মানছূর হাল্লাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি একটা বিতর্কমূলক প্রশ্নের অবতারণা করলেন। সাইয়্যিদুত্ ত্বয়িফা হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তার সেই প্রশ্নের কোন জাওয়াব না দিয়ে বললেন, আমি দেখতে পাচ্ছি, তুমি অতি সত্ত্বর শূলদণ্ডে আরোহণ করবে। অতঃপর উক্ত প্রশ্ন নিয়ে আরো অনেক তর্ক-বিতর্ক হলো এবং ক্রমেই তিক্ততায় পর্যবসিত হলো। শেষ পর্যন্ত উভয়ের মধ্যে বিরাট মনোমালিন্যের সৃষ্টি হলো। হযরত মানছূর হাল্লাজ রহমতুল্লাহি আলাইহিকে সাইয়্যিদুত্ ত্বয়িফা সুলতানুল মুহাক্কিকীন হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মত মহান ব্যক্তিত্বের ছোহবত হতে বঞ্চিত হতে হলো। তিনি তাঁর অনুমতির অপেক্ষা না করে সেখান হতে চলে গেলেন। সাইয়্যিদুল আউলিয়া, মাহবুবে সুবহানী, গাউসুল আ’যম হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি পরবর্তীতে বলেছেন যে, হযরত মানছূর হাল্লাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি বিরাট সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন। তিনি যদি সেই সময় হযরত শায়খ আমর ইবনে উছমান মাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবুল হাসান নূরী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং সাইয়্যিদুত্ ত্বয়িফা সুলতানুল মুহাক্কিকীন হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মত ব্যক্তিত্বের ছোহবতে থাকতেন তবে খলীফা মুকতাদির বিল্লাহ এবং তার উজির হামিদ ইবনে আব্বাসের সাধ্য ছিলনা যে, হযরত মানছূর হাল্লাজ রহমতুল্লাহি আলাইহিকে এরূপ নিষ্ঠুরভাবে শহীদ করে। অর্থাৎ হযরত মানছুর হাল্লাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি আল্লাহ পাক-এর আ’যমতের পর্দার সাথে আষ্টে পৃষ্টে জড়িয়ে থাকার কারণে আনাল হক; মিনার রহমানির রহীম ইলা…. ইত্যাদি বাক্য বলেছিলেন। যদি শায়খ আমর ইবনে উছমান মাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আবুল হাসান নূরী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং সাইয়্যিদুত ত্বয়িফা হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মত মহান ব্যক্তিত্বের ফয়েজ ও তাওয়াজ্জুহ লাভ করতে পারতেন তাহলে উক্ত মাকাম অতিক্রম করতে পারতেন। আর উক্ত মাকাম অতিক্রম করতে পারলে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতেন। উক্ত বক্তব্য থেকে অব্যহতি পেতেন। মূলত: তাদের ছোহবত হতে বিতাড়িত হওয়ার কারণে তাঁদের ফয়েজ তাওয়াজ্জুহ হতে বঞ্চিত হয়েছেন যার ফলশ্রুতিতে তাঁর এই নির্মম পরিণতি হয়েছে। কাজেই বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, মুরীদকে স্বীয় পীর ছাহেব ক্বিবলার দরবার শরীফে অবস্থানকালীন সময়ে সর্বদা ভীত-সন্ত্রস্ত থাকতে হবে। সমস্ত কাজ-কর্ম, আচার-আচরণে সাবধানতা ও সতর্কতা অবলম্বন করা অপরিহার্য। শরীয়তের পরিভাষায় যাকে তাক্বওয়া বলা হয়। উল্লেখ্য যে, দরবার শরীফে অবস্থান করার সময় অনেক প্রকার বেয়াদবীর সম্ভাবনা থাকে। তবে যারা তাক্বওয়া বা খোদা ভীতি অবলম্বন করবে তাদের পক্ষে সর্বপ্রকার ক্ষতিকারক বিষয় হতে বেঁচে থাকা সম্ভব হবে। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বক্ষেত্রে তাক্বওয়া অবলম্বন করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন,

اوصيكم بتقوى الله فانه راس الامر كله.

অর্থঃ- “আমি তোমাদেরকে তাক্বওয়া বা খোদা ভীতি অবলম্বনের ওছীয়ত করছি। কারণ এটা সমস্ত আমলের মূল।” মনে রাখবে, তাক্বওয়া অবলম্বন তথা যদি তুমি ভীত সন্ত্রস্ত হতে না পার তাহলে আল্লাহ পাক-এর পবিত্র দরবার শরীফে গিয়েও মারিফাত পাবে না। আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবার শরীফে গিয়েও মুহব্বত হাছিল করতে পারবেনা। কারণ সেখানে গিয়েও তুমি সেই দরবার শরীফের আদব রক্ষা করতে পারবেনা। ফলে সেখান থেকে বিতাড়িত হবে। নামায পড়তে পড়তে কপাল এবং হাঁটুর সমস্ত চামড়া যদি তুলে ফেল, রিয়াজত-মুশাক্কাত করতে করতে যদি কাঠ হয়ে যাও সমস্ত সম্পদ বিলিয়ে দিয়ে যদি নিঃশেষ হয়ে যাও তবুও আল্লাহ পাক এবং তাঁর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মারিফাত-মুহব্বত পাবেনা যতক্ষণ তুমি তোমার বেয়াদবী স্বভাব পরিত্যাগ না করবে। কেননা, ইবলিস ছয় লক্ষ বছর আল্লাহ পাক-এর ইবাদত-বন্দিগী করেছিলো। আসমান-যমীনের এমন কোন স্থান নেই যেখানে সে সিজদা করেনি। এমনকি বিভিন্ন আসমানে তাকে বিভিন্ন লক্বব দ্বারা সম্বোধন করা হতো। ‘মুয়াল্লিমুল মালাইকা’ সমস্ত ফেরেশ্তার শিক্ষক লক্ববে ভূষিত ছিলো ইবলিস। তারপরও সে মালউন বা অভিশপ্ত হয়েছে। তার পিছনে মূল কারণ ছিলো যে, সে তার ইবাদতকেই বড় মনে করে দেখেছিলো। কোন ভয়ভীতি তার অন্তরে ছিলনা। যা তার অন্তরে অহংকার তৈরী করেছিলো। সে কারণেই তার পতন হয়।

হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২৫৮)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৭৮)

   ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৭৮) 

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৮০)

  ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৭৬)