হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালিম
প্রসঙ্গঃ- অযু-গোসল, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি প্রাকৃতিক একান্ত প্রয়োজন ব্যতীত দরবার শরীফে অবস্থানের সবটুকু সময়ই স্বীয় পীর ছাহেব ক্বিবলা-এর ছোহবতে (সান্নিধ্যে) কাটাবে।
(ধারাবাহিক)
মাটি কিছুদিন আগুনের সংস্পর্শে থাকলে প্রায় আগুনের রূপ ধারণ করতে সক্ষম হয়। ফুলের সংস্পশে থেকে সুগন্ধি বের হয়ে অন্তরকে মোহিত করার ক্ষমতা অর্জন করে। সুলতানুশ্ শুয়ারা, শাইখুল মিল্লাত হযরত শায়খ সা’দী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
উদূ লেখা ঢুকবে……………………………………………..
অর্থঃ- “আমি একদিন গোসলখানায় গিয়েছিলাম গোসল করার জন্য। তখন আমার এক বন্ধু আমাকে একটা মাটির টুকরা দিল। যেটার মধ্যে সুঘ্রাণ ছিল। আমি সেই মাটিকে লক্ষ্য করে বললাম, তুমি মিশক? আম্বর? তুমি কি আবীর? কেননা তোমার সুঘ্রাণে আমি মাতওয়ারা হয়েছি। মাটি জাওয়াব দিলো, আমি নিকৃষ্ট মাটিই ছিলাম কিন্তু কিছু দিন গোলাপ গাছের ছোহবতে ছিলাম। আমার সেই সঙ্গী গোলাপ ফুলের পাপড়ীর তাছীর আমার মধ্যে পড়েছে। যার ফলে আমিও ফুলের মত সুঘ্রাণময় হয়েছি। নতুবা আমি একটা নিকৃষ্ট মাটিই ছিলাম।” (গুলেস্তায়ে সা’দী/৫) কাজেই আল্লাহওয়ালাগণের ছোহবতে (সংস্পর্শে) যেমন মানুষ আল্লাহওয়ালা হয় তেমনি দুনিয়াদার লোকের ছোহবতে দুনিয়াদার হয়ে যায়। শাইখুল মিল্লাত, হযরত শায়খ সা’দী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
উদূ লেখা ঢুকবে……………………………………………..
অর্থঃ- “হযরত নূহ আলাইহিস্ সালামের ছেলে ‘কেনান’ খারাপ লোকদের ছোহবতে থাকার কারণে নুবুওওয়াতের খান্দান হারিয়ে নিয়ামত হতে বঞ্চিত হয়েছে। আর আছহাবে কাহাফের কুকুর, নেক লোকদের ছোহবতের কারণে মানুষ হয়েছে। অর্থাৎ গোমরাহ্ দরবেশ বালআম বিন বাউর-এর ছুরতে (আকৃতি) সে জান্নাতে যাবে।” (গুলেস্তায়ে সা’দী/২৪) আর যে ব্যক্তি যার যত বেশি ছোহবত ইখতিয়ার করবে সে ব্যক্তি তার ততবেশী গুণের উত্তরাধিকারী হবে। মর্যাদা-মর্তবা সম্পন্ন হবে। খলিফাতু রসূলিল্লাহ, আফযালুন্ নাছ বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হচ্ছেন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের পরে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। তাঁর এই মর্যাদা-মর্তবায় উন্নিত হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে ছোহবত। তিনি আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সবচেয়ে বেশী ছোহবত ইখতিয়ার করেছেন। যার ফলশ্রুতিতে তিনি তাঁর এতবেশী গুণে গুণান্বিত হয়েছিলেন যে, তা অন্য কারো পক্ষে সম্ভব হয়নি। সুতরাং একথা অনস্বীকার্য, যে মুরীদ স্বীয় পীর ছাহেব ক্বিবলা-এর যত বেশী ছোহবত ইখতিয়ার করবে, সংস্পর্শে থাকবে সে মুরীদ পীর ছাহেব ক্বিবলার তত বেশী গুণে গুণাম্বিত হবে। তবে স্বীয় পীর ছাহের ক্বিবলার ছোহবতের তাছীর ব্যতীত অন্য কারো তাছীর (প্রভাব) যেন প্রভাবিত না করে তৎপ্রতি সজাগ থাকতে হবে। স্মর্তব্য যে, আল্লাহ পাক এবং তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মা’রিফত-মুহব্বত হাছিলের রোকন হচ্ছে দুটি। আলামুল হুদা, সুলতানুল মাশায়িখ, কাজী ছানাউল্লাহ পানি পাথী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
وهذه المرتبة اعنى ولا ية الله تعالى انما يستفاد بالا نعكاس من رسول الله صلى الله عليه وسلم اما بلا واسطة او بواسطة اوبوسائط ولا بد فيه من كثرة المجالسة مع المحبة والانقياد بالنبى صلى الله عليه وسلم او بمن بنوبه فانهما يثمران محبة الله تعالى وانصباغ قلبه وقالبه ونفسه بصبغ قلب رسول الله صلى الله عليه وسلم وقالبه ونفسه الذى هو صبغة الله ومن احسن من الله صبغة وكثرة الذكر على وجه مسنون يؤيد ذلك الانعكاس لكونه موجبا لصقالة القلب المستوجب الانعكاس.
অর্থঃ- “এই মর্যাদা-মর্তবা অর্থাৎ বেলায়েত বা আল্লাহ পাক-এর নৈকট্য লাভের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছেন আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তা কারো মধ্যস্থতা বা ছোহবত ব্যতীত হতে পারে কিংবা কোন একজন আউলিয়া-ই-কিরাম-এর মধ্যস্থতায় হাছিল হতে পারে। অথবা একাধিক আউলিয়া-ই-কিরামের মধ্যস্থতা বা ছোহবতের মাধ্যমে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ এবং নৈকট্য হাছিল হতে পারে। সুতরাং বেলায়েত তথা আল্লাহ পাক-এর নৈকট্য পাওয়ার জন্য প্রথমতঃ ছোহবত আবশ্যক এবং তা হতে হবে একান্ত মুহব্বত ও তা’যীম-তাকরীমের সাথে। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর নায়িব তথা আউলিয়া-ই-কিরামগণের ইতায়াত বা অনুসরণ-অনুকরণ। এই ছোহবত এবং ইতায়াত তথা অনুসরণ-অনুকরণের মাধ্যমে আল্লাহ পাক-এর মুহব্বত অর্জিত হয়। আর ক্বলব এবং নফস আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ক্বলব মুবারক এবং নফস মুবারকের রঙে রঞ্জিত বা গুণান্বিত হয় তথা হাক্বীক্বী পরিশুদ্ধি লাভ করে। পরিভাষায় যাকে সিবগাতুল্লাহ বলা হয়।
صبغة الله ومن احسن من الله صبغة.
অর্থাৎ- আল্লাহ পাক-এর রঙে রঞ্জিত হও। আর এমন কে আছে, যার রঞ্জন আল্লাহ পাক অপেক্ষা অধিক সুন্দর? দ্বিতীয়তঃ আর আউলিয়া-ই-কিরামগণের প্রবর্তিত তরীকা মুতাবিক দায়িমীভাবে যিকির-ফিকির করা। যা আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ বা নৈকট্য লাভের অত্যন্ত সহায়ক। কেননা আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ বা নৈকট্য লাভের জন্য অন্তরপরিশুদ্ধ হওয়া ফরয। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
لكل شىء صقالة وصقالة القلوب ذكر الله.
অর্থঃ- “প্রত্যেক জিনিস পরিস্কর করার উপায় বা মাধ্যম আছে আর অন্তর পরিস্কার করার মাধ্যম হচ্ছে আল্লাহ পাক-এর যিকির।” (বাইহাক্বী) তিনি আরো বলেন,
قال الله تعالى وجبت محبتى للمتحابين فى والمتجالسين فى والمتزاورين فى والمتباذلين فى.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক বলেন, আমার মুহব্বত ঐ সমস্ত লোকদের জন্য ওয়াজিব, যারা আমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য পরস্পর মুহব্বত করে, ছোহবত ইখতিয়ার (সংস্পর্শ) করে, দেখা-সাক্ষাৎ ও মুলাকাত করে এবং আমার সন্তুষ্টি লাভের নিমিত্তে একে অপরের জন্য অর্থ ব্যয় করে। (মুয়াত্তা ইমাম মালিক, মুসনাদু আহমদ; হাকিম, বাইহাক্বী) ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন,
جاء رجل الى النبى صلى اله عليه وسلم فقال يا رسول الله صلى الله عيه وسلم كيف تقول فى رجل احب قوما ولم يلحق بهم قال المرء مع من احب.
অর্থঃ- “এক ব্যক্তি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহ পাক এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সেই ব্যক্তি সম্পর্কে আপনার মহান অভিমত কি? যে ব্যক্তি কাউকে মুহব্বত করে কিন্তু তাঁর মত আমল করতে পারেনা? সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে যাকে মুহব্বত করে তার সাথেই তার অবস্থান।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, তাফসীরে মাযহারী ৫ম খ- ৪০ পৃষ্ঠা)। (অসমাপ্ত)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৭৩)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৭৪)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৭৫)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৭৭)