ফিক্বহুস্ সুনান- মুসাফিরের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়ার বয়ান

সংখ্যা: ১২৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শোয়াইব আহমদ

মহান আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,

سيروا فى الارض.

অর্থঃ- “তোমরা যমীনে সফর (ভ্রমন) কর।” (সূরা আনয়াম/১১)

সফর করা খাছ সুন্নত। স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফর করেছেন। যিনি সফর করেন তাঁকে মুসাফির বলা হয়। মুসাফির দু’ শ্রেণীর। (১) শরয়ী মুসাফির, যিনি পায়ে হেঁটে অথবা যানবাহনে আরোহন করে ৪৮ মাইল আর কিলোমিটার হিসেবে প্রায় ৭৮ কিলোমিটার বা তার বেশী পথ অতিক্রম করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গমন করেন। (২) উরফী মুসাফির, যিনি পায়ে হেঁটে অথবা যানবাহনে আরোহন করে ৪৮ মাইলের কম পথ অতিক্রম করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গমন করেন।

মূলতঃ প্রত্যেকেই কম-বেশী সফর করেন তথা প্রত্যেকেই উল্লিখিত দু’শ্রেণীর এক শ্রেণীর মুসাফির। সুতরাং মুসাফিরের জন্য শরীয়তের হুকুম-আহকাম কি, সে সম্পর্কে জরুরত আন্দাজ ইলম্ অর্জন করা প্রত্যেক মুসাফিরের জন্যেই ফরয। অন্যথায় তার পক্ষে নামায, রোযা ইত্যাদি ইবাদত-বন্দিগী সঠিকভাবে আদায় করা সম্ভব হবে না।

নিম্নে শরয়ী মুসাফিরের কতিপয়

মাসয়ালা বর্ণনা করা হলো-

শরীয়তে পুরুষ, স্বাধীন, মুকিম ও সুস্থ ব্যক্তির জন্য মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায আদায় করার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। মহিলা, গোলাম, মুসাফির, জিহাদে অংশগ্রহণকারী ও অসুস্থ ব্যক্তির জন্য মসজিদে নামায আদায় করার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়নি। তাই আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবনী মুবারকে দেখা যায় যে, তিনি সফরে থাকাকালীন মরুভূমিতে নামায আদায় করেছেন, তবে তা জামায়াতের সাথে। কাজেই মুসাফিরের জন্য মসজিদে গিয়ে নামায আদায় করা শর্ত নয়। বরং মুসাফির একাধিক হলে তাদের জন্য জামায়াতে নামায আদায় করা শর্ত। আর মুসাফির একজন হলে তার জন্য জামায়াতও শর্ত নয়। তাই মুসাফিরের জন্য জুমুয়া শর্ত করা হয়নি। কেননা জুমুয়ার জন্য ইমাম ব্যতীত তিনজন মুছল্লী থাকা শর্ত। সুতরাং তারা জুমুয়ার পরিবর্তে যোহরের (কছর) নামায আদায় করবে। তবে যদি মুসাফির ইমামসহ চারজন হয় তাহলে তারা ইচ্ছা করলে জুমুয়া আদায় করতে পারবে। আমাদের হানাফী মাযহাবে জুমুয়ার নামায পড়ার জন্য মসজিদ শর্ত করা হয়নি। হাটে, ঘাটে, মাঠে, ময়দানে যে কোন স্থানে আদায় করলে আদায় হয়ে যাবে।

        উল্লেখ্য, মুসাফিরগণ পায়ে হেঁটে অথবা যানবাহনে আরোহন করে দীর্ঘপথ (৪৮ মাইল ও তার উর্ধ্বে) অতিক্রম করতঃ এক স্থান হতে অন্য স্থানে গমন করে থাকেন বিভিন্ন উদ্দেশ্যে। সে কারণে তাদের থাকা-খাওয়া, চলা-ফেরা, ওযূ-ইস্তিঞ্জা ইত্যাদি কোন কিছুই নির্দিষ্ট থাকে না। সবকিছু কষ্ট সাধ্য হয়ে থাকে। যার কারণে আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

السفر قطعة من النار.

অর্থঃ- “সফর হচ্ছে আগুনের একটি টুকরা বিশেষ।” (দারিমী, ইবনে মাজাহ)

সুতরাং সফরকারীদের কষ্টের কারণে স্বয়ং আল্লাহ পাক তাদের প্রতি ইহ্সান হিসেবে রোযা ভঙ্গ করার ইখতিয়ার দিয়েছেন।  এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

من كان منكم مريضا اوعلى سفر فعدة من ايام اخر.

অর্থঃ- “যে ব্যক্তি অসুস্থ অথবা মুসাফির হয় সে অন্য সময় রোযা রাখতে পারে। অর্থাৎ মুসাফিরের জন্য রোযা ক্বাযা করা জায়িয রয়েছে।” (সূরা বাক্বারা/১৮৫)

আর নামাযের ক্ষেত্রে চার রাকায়াত বিশিষ্ট ফরয নামাযকে কছর করে দু’রাকায়াত করে দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

واذا ضربتم فى الارض فليس عليكم جناح ان تقصروا من الصلوة.

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (১২৩)

ফিকহুস সুনানে ওয়াল আছার