হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে, “হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, হুযূরে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তিকে ইল্ম ব্যতীত ফতওয়া দেয়া হয়েছে, অতঃপর সে তদানুযায়ী আমল করেছে, তার গুনাহ্ যে তাকে ফতওয়া দিয়েছে, তার উপরই পড়বে।” (আবু দাউদ শরীফ)
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি, যিনি মালিকী মাযহাবের ইমাম। উনার সীরতগ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে, হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রথম যেদিন ফতওয়ার মসনদে বসলেন মুফতী হিসেবে, ফতওয়া দেয়ার জন্য সেদিনই তাঁর কাছে ৪০টি মাসয়ালা বা সুওয়াল আসলো। তিনি ১৮টার জাওয়াব দিয়েছেন এবং বাকী ২২টির জাওয়াবে বলেছেন, ‘লা-আদরী’ অর্থাৎ ‘আমি জানি না’ যখন জাওয়াব শেষ হয়ে গেলো এবং সুওয়ালকারীগণ চলে গেলো, তখন উনার নিকটবর্তী যে সকল বড় বড় আলিমগণ বসেছিলেন তাঁরা বললেন, “হে হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি আপনি কি সত্যই ঐ ২২টি মাসয়ালার জাওয়াব জানেন না? তখন হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, “হ্যাঁ, আমার জানা আছে, তবে ১৮টি মাসয়ালায় আমার পূর্ণ তাহ্কীক আছে, তাই জাওয়াব দিয়েছি, আর বাকী ২২টি মাসয়ালায় পূর্ণ তাহ্কীক নেই, হতে পারে বর্তমানে ২২টি মাসয়ালা সম্বন্ধে আমার যে ফয়সালা আছে পূর্ণ তাহ্কীকের পরে তার ব্যতিক্রমও হতে পারে। এই লোকগুলি অনেক দূর থেকে প্রায় ৬ মাসের রাস্তা অতিক্রম করে আমার কাছে এসেছে মাসয়ালা জানার জন্য। এখন যদি আমি বিনা তাহ্কীকে তার জাওয়াব দিয়ে দেই যা পূর্ণ তাহ্কীক সমৃদ্ধ নয়, তবে তার ভিত্তিতে তারা আমল শুরু করবে, আর পরে যখন আমার পূর্ণ তাহ্কীক হবে এবং তা যদি বর্তমান ফয়সালার ব্যতিক্রম ফয়সালা হয়, তাহলে তাদেরকে কে এই ফয়সালার পূর্ণ তাহ্কীক সম্বলিত মতটি জানাবে? যেহেতু আমি তাদের বিস্তারিত পরিচয় বা ঠিকানা জানি না। আর এজন্য হয়ত আমাকে আল্লাহ্ পাক-এর কাছে জাওয়াবদিহি ও পাকড়াও হতে হবে।
প্রসঙ্গতঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষটির কাছ থেকে উপরে দেয়া উদাহরণের মত তাক্বওয়া আমরা আশা না করলেও তারা যে ন্যূনতম সচেতনতা ও শালীনতাবোধ এবং দায়বদ্ধতার উপলব্ধিও হারিয়েছে এবারও ফিতরা সম্পর্কিত তাদের ভুল ফতওয়া তাই প্রমাণ করল। উল্লেখ্য মুসলমানদের জন্য ফিতরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তোমাদের রোযার যাকাত অর্থাৎ ছদক্বাতুল ফিতর আদায় না কর নিশ্চয়ই তেমাদের রোযাগুলো আসমান এবং যমিনের মাঝে ঝুলন্ত থাকে। (কবুল হয় না)
অথচ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নামধারী প্রতিষ্ঠানটি ফিতরার বিষয়ে বারবার একই ভুল করে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য ফিতরার পরিমাণ যে এক সের সারে বারো ছটাক সে ব্যাপারে তাদের কোন ভিন্নমত নেই। কিন্তু কথা হল শরীয়তে নির্দেশিত এই মাপটিকেই আধুনিক মাপে পরিণত করতে গানিতিক হিসাবে তৃতীয় শ্রেণীর খারাপ ছাত্রের চেয়েও মারাত্মক ভুল বার বার করে যাচ্ছেন তারা। উল্লেখ্য, আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত-এর পক্ষ থেকে এর আগেও পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে তাদের জানিয়ে দেয়া হয়েছিল যে মেট্রিক পদ্ধতিতে শরীয়তের নির্দেশিত একসের সারে বার ছটাক এর মাপ পরিবর্তিত করলে সঠিক মাপটি হবে ১৬৫৭ গ্রাম।
কিন্তু তারা বার বার একই ভুলের পূনরাবৃত্তি করে বলছে ১৬৫০ গ্রাম। ফলতঃ শরীয়তের ফিতরার সঠিক যে মূল্য আসে তাদের হিসাবে তা আসছে না। অর্থাৎ তাদের হিসাবে ভুল হচ্ছে।
অথচ সে ফিতরার নির্ধারণী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন খোদ ডিজি থেকে তথাকথিত খতীব পর্যন্ত। অতএব প্রশ্ন দাঁড়ায় এদের কাজ কি তাহলে শুধু বসে বসেই ইসলামের নামে বেতন খাওয়া আর ইসলামের নামেই মানুষের ইসলামী আমল নষ্ট করা?
মূলতঃ ইসলাম ছাড়াও মুসলমানদের প্রতিও এদের দরদ বোধ নেই এতটুকু। উল্লেখ্য এদেশের ৬-৭ কোটি লোক দরিদ্রসীমার নিচে বাস করে। অর্থাৎ যাদের সারাদিনের আয় ৬০ টাকারও নিচে। সেক্ষেত্রে তাদের জন্য ফিতরা একটা বিরাট পাওয়া।
আর শরীয়তের উছুল হল যে, যেভাবে ধরলে গরীবের উপকার বেশী হয় সেদিক থেকেই হিসাব করা। যেমন যাকাতের ক্ষেত্রে এখন সাড়ে সাত ভরি সোনার চেয়ে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার পরিমাণকে নিছাব ধরা হয়। তদ্রুপ বাজারের যে আটা ধনী ব্যক্তিরা খায় সে আটার মূল্যই ফিতরার ক্ষেত্রে ধরতে হবে। সে হিসাবেই আল বাইয়্যিনাত-এর পক্ষ থেকে আটার দাম ধরা হয়েছে ২২ টাকা। কিন্তু ইসলামী ফাউন্ডেশন দাম ধরেছে ২০ টাকা।
প্রশ্ন হল খয়রাতী সাহায্যে ৪ টাকা মূল্যের চাল বা আটাও পাওয়া যায়। যাতে পোকা কিলবিল করতে থাকে। কিন্তু ডিজি-খতীবরা কি নিজেরা সেই চাল বা আটা খান? হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “ঐ ব্যক্তি মু’মিন নয় যে নিজের জন্য যেটা ভাল মনে না করে সেটা অপরের জন্য ভাল মনে করে।”
বাজারে ২০ টাকায়ও আটা পাওয়া যায়। কিন্তু কথা হল পোকাযুক্ত সেই আটা কি ডিজি-খতীবরা নিজেরা খাবেন? অথচ এর আগেও তাদেরকে এ ব্যাপারে নছীহত করা হয়েছিল। কিন্তু এবারও তারা শুনলেন না। হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, “মু’মিন এক গর্তে দু’বার পড়ে না।”
কিন্তু তথাকথিত ডিজি-খতীব গং এক গর্তেই দু’বার পড়লেন। এবারও একই ভুলের পূনরাবৃত্তি ঘটালেন। তাহলে তারা কি?
-মুহম্মদ মারুফুর রহমান, ঢাকা।
বিৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বিৃটিশ ভূমিকা-১৫