(৩)
চীন, রাশিয়া, সউদী আরব, ভারতসহ পৃথিবীর অন্তঃত ২৭টিরও বেশি দেশে জিএম ফুড (Genetically modified Food) নিষিদ্ধ। এর পিছনে বৈজ্ঞানিক, অর্থনৈতিক, পরিবেশগত ও রাজনৈতিক যুক্তি রয়েছে। বাংলাদেশে জিএম ফুড প্রচলন হলে তা আমাদের জন্য বহুমাত্রিক ক্ষতির কারণ হবে। আমরা ইতোমধ্যে লক্ষ্য করেছি একজন আমেরিকান এদেশে এসে জিএম ফুড প্রচলনের পক্ষে এডভোকেসি করে গেলো। বিষয়টি জনসাধারণকে উদ্বিগ্ন করেছে। মানবস্বাস্থ্য, ভূমিজ পরিবেশ, উদ্ভিদ বৈচিত্র ও জীববৈচিত্রের জন্য ক্ষতিকর জিএম ফুড থেকে আমাদের কৃষি ও অর্থনীতি রক্ষায় সতর্ক থাকতে হবে।
অতি সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি সংবাদের দ্বারা জানা যায়, একজন মার্কিন বাংলাদেশে এসে জিএম ফসল চাষের পক্ষে মত ব্যক্ত করেছে। রাজধানীর আমেরিকান সেন্টারে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে সে জিএম ফুড সম্পর্কে তার মতামত তুলে ধরে। সে জানায় “জিএম ফসলে কোন ক্ষতিকর উপাদান নেই বিধায় বিশ্বের ২৮টি দেশে এই ফসলের চাষ হচ্ছে।” সে আরও বলে “বাংলাদেশের কৃষি গবেষণার ক্ষেত্রে জিন প্রযুক্তির উজ্জ্বল ভবিষ্যত রয়েছে।” চান্না এস প্রকাশের প্রদত্ত বক্তব্য এবং তথ্যে বাংলাদেশের মানুষের বিভ্রান্ত হওয়ার প্রচুর সম্ভাবনা থাকায় সঠিক তথ্যাদি দেশবাসীর জানা আশু প্রয়োজন।
বস্তুত জিএম ফুড প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত হয়না। জিন প্রযুক্তি ব্যবহার করে জিএম ফসল উৎপাদিত হয়ে থাকে। জিএম ফসল এখনো মানবদেহের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ বলে কখনোই প্রমাণিত হয় নাই। এই ফসল চারপাশের একই জাতের ফসলের উপর প্রবল বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে এবং অন্য ফসলকে প্রভাবিত করে। ফলে উদ্ভিদ বৈচিত্র্য ও জীববৈচিত্র্য নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয়। একে বলা হয় Out Crossing. জিএম ফসলের ‘মেধাস্বত্ত্ব’ ‘মনসানটো’র মতো বহুজাতিক কোম্পানির নামে প্যাটেন্টকৃত। জিএম ফসলে কোন বীজ হয় না। এবং প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক মালিক কোম্পানি সরবরাহ করে। এর সরল অর্থ দাঁড়ায় জিএম ফসলের চাষের মধ্য দিয়ে একটি দেশের কৃষি ব্যবস্থা বহুজাতিক কোম্পানির হাতে জিম্মি হয়ে যায়। জিএম ফসল চাষের মধ্য দিয়ে ভূমিজ পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এই চাষের মধ্য দিয়ে চাষের জমিতে রুট ওয়ার্ম (Root Warm) নামক এক ধরণের ভূমিগুণ বিনষ্টকারী জীবাণুর জন্ম হয়। উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্রের উপর ক্ষতিকর প্রভাব এবং ভূমিজ পরিবেশের ক্ষতি- এর সাধারণ অর্থ হচ্ছে আমাদের প্রতিবেশ ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ভারসাম্যহীনতা তৈরি হওয়া। চান্না বলেছে পৃথিবীর ২৮ টি দেশে জিএম ফসলের চাষ হচ্ছে। কিন্তু সে বলেনি চীন, রাশিয়া, ব্রাজিল সহ পৃথিবীর ২৭ টি দেশে আইন করে জিএম ফসল চাষ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অধিকাংশ ইউরোপিয়ান দেশ জিএম ফসলের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে। যেসব দেশে জিএম ফসলের চাষ হয় সেখানকার সচেতন মানুষ এই ফসলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলছে।
ভারতে জিএম ফসলের চাষ শুরু হয় ২০০২ সালে এবং আইন করে এই চাষ নিষিদ্ধ করা হয় ২০১০ সালে। কিন্তু এই সময়কালে ভারতে আড়াই লাখেরও বেশি চাষী আত্মহত্যা করে। এই নিষেধাজ্ঞা প্রথম এসেছিল আদালতের পক্ষ থেকে। এই সময়কালে জীববৈচিত্র ধ্বংস, Out Crossing, প্রায় ২০০০ ফসলের প্রজাতিকে হুমকিতে ফেলা, ভূমিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহার ও বহুজাতিক কোম্পানির কাছে কৃষির জিম্মি দশা এসব কারনে ভারতের আদালত জি এম ফসলের চাষ নিষিদ্ধ করে। আদালত বহুজাতিক কোম্পানি মনসানটো ও তার ভারতীয় প্রতিনিধি মাহিকো কে শুধু গবেষনার অনুমতি প্রদান করে । অন্যদিকে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি নিয়োগ করেছে জি এম ফসলের ব্যাপারে মতামত প্রদানের জন্য। তারা মনসানটোর সকল জিএম ফসলের উপর আরো দশ বছর নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ করেছে এবং সকল ধরনের মাঠপর্যায়ের গবেষনা বন্ধ করতে বলেছে। এসব বিষয়কে দালালেরা বলে “রাজনীতি”। ভারতের পরিবেশবাদীরা ইউরোপের কতোগুলো দেশের টাকা নিয়ে আন্দোলন করছে- এরকম হাস্যকর বক্তব্য চান্নার মতো অ্যাকাডেমিশিয়ান কিভাবে প্রকাশ করে সেটা রীতিমত বিষ্ময় জাগানিয়া। বস্তুত আমরা মূল ঘটনাটা জানি। যেহেতু ভারত এই দেশের কৃষির ধ্বংস চায় কাজেই তারা আমাদের দেশে জি.এম.ও ফুড এর প্রচলন ঘটাতে বদ্ধ পরিকর।
যেহেতু ইউরোপের চাষের জমিতে আমেরিকার ইহুদি কোম্পানি মনসানটো প্রভৃতির মুনাফা শিকারের চারণ ভূমি হতে দেয়নি। এই কারণে ইহুদির দালালেরা ইউরোপের উপরেও ক্ষিপ্ত।
-মুহম্মদ আব্দুল জাব্বারিউল আউওয়াল।
প্রসঙ্গঃ আমেরিকায় ইহুদী প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ- ২
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩৪
চাঁদ দেখা এবং নতুন চন্দ্রতারিখ শুরু নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা- ১