আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “এ কিতাবে আমি ভিজা এবং শুকনা কোনটাই বর্ণনা করতে ছাড়িনি।” তদ্রুপ আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুবারক হায়াতে তৈয়্যিবাতে আল্লাহ পাক কোনটাই দেখাতেও ছাড়েননি। ধর্মকে উপজীব্য করে ধর্মব্যবসা, ইসলামের খোলসে স্বার্থ আদায়ের প্রবণতার স্বরূপ রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবদ্দশায়ও দেখা গিয়েছিল। হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ছিলেন কাফিরদের প্রতি কাঠোর। তার মনোভাবকে স্বীয় স্বার্থসিদ্ধির জন্য কাজে লাগাতে চেয়েছিল মুসলমান নামধারী মুনাফিক বিশর। এক ইহুদী কাফেরের সাথে তার দ্বন্দ্ব হয়। উসওয়াতুন হাসানা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিচারে রায় যায় ইহুদী কাফেরের পক্ষে। এতে স্বার্থ হাসিল করতে না পেরে হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর কাছে ফের একই মামলা ঠুকল মুনাফিক বিশর। তার চিন্তা ছিল হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যেহেতু কাফেরদের প্রতি কঠোর, কাজেই সে কাফের একথা শুনেই তিনি মুসলমান নামধারী বিশরের পক্ষ নেবেন এবং উক্ত কাফেরের প্রতি কঠোর হবেন। কিন্তু হক্ব না-হক্ব ফারাককারী হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বুঝে ফেললেন যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিচার করার পরও যে তাঁর কাছে এসেছে সে নিশ্চয়ই দুরভিসন্ধিমূলকভাবে অসৎ উদ্দেশ্যে এসেছে। মুসলমান দাবী করেও ইসলাম নয় বরং ইসলামের নামে ফায়দা হাছিলের জন্যই সে এসেছে। অর্থাৎ ইসলামের নামে ফায়দা লোভীর দল সে যুগেও ছিল। এদের সম্পর্কে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “নিশ্চয়ই নামধারী তথা ধর্মব্যবসায়ীরা সৃষ্টির মধ্যে নিকৃষ্ট।” সবচেয়ে খারাপ। অর্থাৎ খারাপির যত দিক থাকতে পারে বা যত খারাপ হতে পারে, এরা তাই। মুনাফিকী এদের চিরন্তন বৈশিষ্ট্য। মিথ্যা এদের স্বভাবজাত আচার। অভিশপ্ত ইহুদীদের সাথে এদের ঘনিষ্ঠ মিল। প্রসঙ্গতঃ আজকের ধর্মব্যবসায়ী জামাতীদের ক্ষেত্রেও এ বিষয়টি পূর্ণরূপে প্রতিভাত। তাদের আমীর নিজামীর বক্তব্যের রেকর্ড ও রেফারেন্সে তাই প্রমাণিত। নিজামীর তুলনামূলক বক্তব্য নিজামী বলেছে, ১৯৭২ ও ১৯৯৬ সালে দু’বার ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ ইসলামের নাম নিশানা মুছে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামের নামে বোমাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য দেশের ইসলামি আন্দোলনের যে চরম সর্বনাশ হয়েছে, সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগ কিছু আলিম উলামাকে তাদের পক্ষে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। তাদের এই প্রচেষ্টায় কোনো আলিম যেন শরিক না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য খতিব ও ইমামদের সতর্ক থাকতে হবে। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যেন বর্তমান নাজুক পরিস্থিতির কোনো সুযোগ না নিতে পারে সে জন্যও খতীব-ইমামদের সহযোগিতা প্রয়োজন। (দৈনিক জনকণ্ঠ , ২৬.০৪.০৬) নিজামীর উদ্ধৃত বক্তব্যের অর্থ দাড়ায় ১৯৭২-’৭৫ ও ১৯৯৬-২০০০ সময়টুকু ছাড়া যারা ক্ষমতায় ছিল তারা ইসলামী ভাবাপন্ন। ১৯৯১-’৯৬ ছিল বিএনপি। কিন্তু এই বি.এন.পি সম্পর্কেই নিজামী-জামাতীর যে বক্তব্য ছিলো- ১. ‘বিএনপি সরকার ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধের তৎপরতা চালাচ্ছে।’ (মিল্লাত ২৫.০৯.৯৩) ২. ‘ইসলামি জনতা আর বিএনপিকে সমর্থন দিতে পারেনা।’ তিনি সরকারি দলের উপনেতা কর্তৃক আসন্ন নির্বাচনে জামাত বিএনপিকে শেষ পর্যন্ত সমর্থন দেবে এই মর্মে প্রচারণার জবাব দিয়ে বলেন, বি চৌধুরীর এই বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক। শুধু জামাতে ইসলামী নয়, এদেশের কৃষক-শ্রমিক ও ইসলামি জনতা আর বিএনপিকে সমর্থন দিতে পারে না।’ (ইত্তেফাক ২৪.০১.৯৪) ৩. ‘এ সরকারের (বিএনপি) অধীনে ইসলাম তথা দেশের স্বাধীনতা রক্ষা সম্ভব নয়, গত সাড়ে তিনবছরের শাসনই এ কথার প্রমাণ বহন করে। (সংগ্রাম ৭.৮.’৯৪) ৪. ‘অতীতে নমরূদ, ফেরাউন, আবূ লাহাব, আবূ জেহেলরা সন্ত্রাস, নির্যাতন হত্যা করে যেমন ইসলামী আন্দোলনের স্তব্ধ করতে পারেনি, তেমনি এ সন্ত্রাসী বিএনপি সরকারও ইসলামি আন্দোলনের নেতাকর্মীদের হত্যা করে এ দেশের ইসলামী আন্দোলনকে স্তব্ধ করতে পারবেনা। তিনি বলেন, ‘বিসমিল্লাহর দোহাই দিয়ে ইসলাম প্রিয় জনতার সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় গিয়ে এ সরকার ইসলামের সামান্যতম মর্যাদাও রক্ষা করতে পারেনি। তারা এ দেশ হতে ইসলামকে মুছে ফেলার ইহুদী ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে।’ (ইত্তেফাক ১৯.১২.১৯৯৫) তাফসীরে বর্ণিত আছে যে, ফিরআউনের পরিণতি সম্পর্কে ফিরআউনের মুখ দিয়েই আল্লাহ পাক বের করেছেন। আল্লাহ পাক-এর সে কুদরত জামাতীদের ক্ষেত্রেও জাহির হল। তাদের পূর্ব মন্তব্যানুযায়ী, যে বিএনপি বাংলাদেশে ইহুদী ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে রত, আজকে তারা সে বি.এন.পির লেজ ধরে চলতেই সদা মত্ত। অর্থাৎ আজ তারাই এদেশ হতে প্রকৃত ইসলাম মুছে ফেলে ইহুদীদের ষড়যন্ত্রের নীল নকশা অনুযায়ী মওদুদী ধর্ম বাস্তবায়নে ব্যস্ত। এজন্য স্বদেশী নারী নেতৃত্বই শুধু নয় মার্কিনী মহিলা রাষ্ট্রদূতের নেতৃত্ব ও আনুকূল্যও শেষ নয়, পার্শ্ববর্তী হিন্দু জাতের সাথে রাখি বন্ধনের পর ইহুদী গোষ্ঠীর আনুগত্যও তারা মেনে নিয়েছে। তাই বলতে গেলে, ভারতীয় দুতাবাসের কোন অনুষ্ঠান হয়না জামাতীদের অংশগ্রহণ ছাড়া। এদিকে জঙ্গীদের প্রতি মার্কিনীদের কড়া নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মার্কিন মহিলা রাষ্ট্রদূত প্রায়ই টুপি ছাড়া জামাতী আমির উজিরদের সাথে দেখা করেন। মূলতঃ তার সম্মানে নিজামী, মুজাহিদরা আগ থেকেই টুপী খুলে রেখে তাদের বহুরূপীর সাক্ষাত প্রমাণ দেয়। তাছাড়া এর দ্বারা জামাতীরা মার্কিনীদের সাথে তাদের সখ্যতার প্রমাণ এবং গর্বও জাহির করে বটে। তাই জামাতীদের প্রতি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কোনই নিদর্শন দেখা যায়না। অর্থাৎ জামাতীরা ভালরকমেই হিন্দু খ্রীস্টান-ইহুদী গোষ্ঠীর বান্ধব বনেছে। এটাই তাদের সহজাত প্রবৃত্তি বটে। কারণ ইহুদী-খ্রীস্টান-হিন্দু তথা কাফিররা জাহান্নামের যে স্থানে থাকবে তার নীচেই থাকবে ধর্মব্যবসায়ী মুনাফিকরা। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, নিশ্চয়ই মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বাপেক্ষা নিম্নস্তরে থাকবে। অর্থাৎ তাদের কাছাকাছি বন্ধু ঐ ইহুদী-খ্রীস্টান-হিন্দু তথা কাফিররাই। মুসলমান নয়। মুসলমান কখনও ইসলামের নামে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেনা। জামাতী, খারিজীদের ইসলামের নামে ভোট দিতে পারেনা।
-মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান, ঢাকা।
বিৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বিৃটিশ ভূমিকা-১৫