কুমন্ত্রকদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, কূটতর্ক করা। কুমন্ত্রক কায্যাব উদ্দীনের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তার পূর্বসূরী কাফেররাও তাই করেছিল। মুসলমানরা বিসমিল্লাহ বলে যবেহ করে গোশত হালাল রূপে খেতেন আর মৃত পশুকে হারাম বলে বর্জন করতেন। এ বিষয়ে কুমন্ত্রকরা এক জোড়ালো কূটতর্কের অবতারণা করেছিল। তারা বলেছিল, যাকে তোমরা নিজ হাতে যবেহ করে খাও তা হালাল আর আল্লাহ পাক যাকে মারেন তা হবে হারাম। এ ব্যবস্থা কোন জ্ঞানী বা বিবেকমান মানুষ গ্রহণ করতে পারেনা। তাদের প্রচারণা এতই তুঙ্গে উঠেছিল যে খোদ কুরআন শরীফে এ বিষয়ে আয়াত শরীফ নাযিল হয়। মহান আল্লাহ পাক বলেন, “যার উপর আমার নাম উচ্চারিত হয়নি (অর্থাৎ মৃত জীবজন্তু) তা তোমরা খেয়োনা। নিশ্চয়ই তা খাওয়া অপরাধ। তোমাদের সাথে কুটতর্ক করার জন্য শয়তানরা তাদের বন্ধুদের (কাফির, মুশরিক, মুনাফিক, কুমন্ত্রকদের) মনের মধ্যে এরূপ ওয়াস্ওয়াসা তৈরী করে থাকে। যদি তোমরা তাদের অনুসরণ কর তাহলে নিশ্চয়ই তোমরাও মুশরিক বলে পরিগণিত হবে।” মূলতঃ উল্লিখিত আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার পর বিষয়টি এখন পরিস্কার। অন্যথায় কুমন্ত্রকদের কূটতর্ক কত কঠিন তা ভাবার বিষয়। “আল্লাহ পাক যাকে মারেন তা হারাম আর তোমরা যা নিজ হাতে যবেহ কর তা হালাল।” স্বভাবতই সাধারণ মানুষ এ যুক্তিতে ভড়কে যাবে। যদিও তাতে বোঝার ও বলার বিষয় আছে যে, মহান আল্লাহ পাক যাকে মারেন সেটা মহান আল্লাহ পাক-এর বিধান অনুযায়ী হারাম। আর মহান আল্লাহ পাক-এর নামে অর্থাৎ বিসমিল্লাহ বলে মানুষ যাকে যবেহ করেন তা মহান আল্লাহ পাক-এর হুকুমের প্রেক্ষিতেই হালাল। যা উপরোক্ত আয়াত শরীফে বিবৃত হয়েছে। পাশাপাশি ইরশাদ হয়েছে, “তোমাদের সাথে কুটতর্ক করার জন্য শয়তানেরা তাদের বন্ধুদের মনের মধ্যে এরূপ চিন্তা উদ্রেক করে থাকে।” প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, আল বাইয়্যিনাত সম্পর্কে কুটতর্ক করার জন্যও শয়তান, কুমন্ত্রক কায্যাব উদ্দীনের মনে জঘন্য কুটতর্ক তৈরী করেছে। সে বলেছে, আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায় উলামায়ে কিরাম সম্পর্কে এমন সব গালিগালাজ লেখা হয় যা কোন ভদ্রতা ও শালীনতার আওতায় পড়েনা। মূলতঃ ভদ্রতা ও শালীনতার কথা কুমন্ত্রক কায্যাব উদ্দীনের মুখে উচ্চারণ করা একটা স্পষ্ট মুনাফিকী মাত্র। যদিও কুমন্ত্রক কায্যাব উদ্দীন বলেছে যে, আমলী মুনাফিকীর ভিত্তিতে কাউকে মুনাফিক আখ্যায়িত করা জায়িয নয়। কিন্তু এটি স্পষ্ট হাদীছ শরীফ বিরোধী কথা। কারণ হাদীছ শরীফে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্পষ্টভাবে বলেছেন মুনাফিকের আলামত চারটি। যথা- (১) যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, (২) যখন ওয়াদা করে ভঙ্গ করে, (৩) যখন ঝগড়া করে তখন গালিগালাজ করে, (৪) আমানত খিয়ানত করে। এখন কুমন্ত্রক কায্যাব উদ্দীনের ক্ষেত্রে বা তার সমগোত্রীয়দের ক্ষেত্রে যখন উল্লিখিত আলামতগুলো হুবহু মিলে যায় তখন তাকে হাদীছ শরীফের আলোকে মুনাফিক না বললে তা হবে বোবা শয়তানের পরিচয়। বলাবাহুল্য, কুমন্ত্রক কায্যাব উদ্দীনের খোলশ উন্মোচনে এ যাবত দেখা গিয়েছে যে, সে রাজারবাগ শরীফ সম্পর্কে অকল্পনীয় মিথ্যাচার করেছে, তার কৃত ওয়াদার খিলাফ করেছে এবং রাজারবাগ শরীফ সম্পর্কে বেমেসাল গালিগালাজ ও অপবাদ প্রয়োগ করেছে। কাজেই হাদীছ শরীফের পরিভাষায় সে স্পষ্ট মুনাফিক। সে আল বাইয়্যিনাত-এর ভদ্রতা, শালীনতা ও মহাত্ম্য সম্পর্কে কি বুঝবে। প্রবাদ রয়েছে, “মানুষ অন্যকে তার নিজের মতই মনে করে।” কাজেই অভদ্র, অশালীন, মুনাফিক কায্যাব উদ্দীন যে আল বাইয়্যিনাত সম্পর্কে অভদ্রতা, অশালীনতার অপবাদ দিবে সেটাই তার জন্য স্বাভাবিক বৈ কি। কুমন্ত্রক কায্যাব উদ্দীন তার কুটতর্কের কথনে বলেছে, “কুরআনে কারীম আমাদের বিরোধী প্রতিপক্ষের সমালোচনার ক্ষেত্রেও শালীনতার শিক্ষা দিয়েছে। অশালীন ভাষায় প্রতিপক্ষের সমালোচনা করা কুরআনের আদর্শ বিরোধী। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, অর্থাৎ যারা আল্লাহ পাককে ছেড়ে অন্য কিছুর পূজা করে তাদেরকে তোমরা গালি দিওনা তাহলে তারাও অজ্ঞতাবশতঃ আল্লাহকে গালি দিবে। উল্লেখ্য, যবেহ করা এবং মৃত জন্তু সম্পর্কে কুমন্ত্রক কায্যাব উদ্দীনের পূর্বসূরীরা যেরূপ কুটতর্ক করেছিল এক্ষেত্রে কায্যাব উদ্দীনও সেরূপই করছে। কারণ, কুরআন শরীফের কেবল একটা আয়াত শরীফের উপর ভিত্তি করে ফতওয়া দিলে সে ফতওয়া গ্রহণযোগ্য হবেনা ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ পর্যন্ত সেই ফতওয়া সমষ্টিগত কুরআন-সুন্নাহ্র আলোকে গ্রহণযোগ্য না হবে। যেমন, আল্লাহ্ পাক কালামুল্লাহ্ শরীফে নাযিল করেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা নেশাগ্রস্থ থাকাবস্থায় নামাযের নিকটবর্তী হয়োনা। যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা না বুঝ যে, তোমরা মুখে কি বলছো।” (সূরা নিসা/৪৩)
রবর্তীতে নাযিল করেন, “হে ঈমানদারগণ! নিশ্চয়ই শরাব, জুয়া, বলি দেয়ার বেদি এবং ভাগ্য নির্ধারক তীর নাপাক, যা শয়তানের আমলের অন্তর্ভূক্ত। এগুলো থেকে তোমরা বিরত থাক। তাহলে অবশ্যই কামিয়াবী লাভ করবে।” (সূরা মায়িদা/৯০)
সুতরাং কেউ যদি “সূরা নিসার” ৪৩ নং আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বলে, “শুধু নামাযের সময় নেশা করা যাবেনা, অন্য সময় করা যাবে তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে।” কারণ, পরবর্তীতে আল্লাহ্ পাক “সূরা মায়েদার” ৯০ নং আয়াত শরীফ নাযিল করে শরাব সব অবস্থায়ই পান করা হারাম ঘোষণা করেন। তা নামাযের পূর্বে হোক আর পরেই হোক। এখন গীবত কাকে বলে? এবং কোনটা করলে গীবত হয়? কোনটা করলে গীবত হয় না? এর ব্যাখ্যায় হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “কিমিয়ায়ে সায়াদাত, ইহইয়াউ উলুমিদ্দীন” ইত্যাদি কিতাবে উল্লেখ করেছেন, “কয়েক প্রকার লোক রয়েছে যাদের দোষত্রুটি বর্ণনা করলে গীবত হয়না। এছাড়া অন্যান্য লোকের দোষত্রুটি বর্ণনা করলে গীবত হবে।” তন্মধ্যে অন্যতম সেটা হলো “যারা উলামায়ে “ছূ” বা “দুনিয়াদার আলিম।” যারা দ্বীনকে বিক্রি করে দুনিয়া অর্জন করে, তাদের দোষত্রুটি বর্ণনা করলে, সেটা গীবত হবেনা।” সুতরাং যারা উলামায়ে “ছূ” বা “দুনিয়াদার আলিম” তাদের দোষত্রুটি বর্ণনা করলে ও তাদেরকে মন্দ নামে সম্বোধন করলে গীবত ও গুনাহ্ কোনটাই হবেনা। বরং ছওয়াব হবে। এ প্রসঙ্গে হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, “এক যামানা বদনামে উলামায়ে ‘ছূ’ বেহতেরাজ শস্ত সালে তোয়াত বেরিয়া” অর্থঃ- “কিছু সময় উলামায়ে “ছূ” বা দুনিয়াদার আলিমদের দোষত্রুটি বর্ণনা করা, ষাট বৎসর কবুল ইবাদত থেকে উত্তম।” তার কারণ উলামায়ে “ছূ” বা গোমরাহ্ লোকের কাছে গিয়ে মানুষ গোমরাহ্ হয়ে যায়। যদি কেউ তার দোষত্রুটি বর্ণনা করে দেয় বা তার হাক্বীক্বত প্রকাশ করে দেয় তাহলে হাজার হাজার লোকের ঈমান হিফাযত হয়ে যাবে। তাই বলতে হয় যে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এ যেসব নামধারী আলিমদের তথা উলামায়ে ‘ছূ’দের সমালোচনা করা হয় তা মুনাফেকীও নয় গালিগালাজও নয়। বরং তা আল্লাহ্ পাক-এর সুন্নত। স্বয়ং রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময়ও তাঁর মত পবিত্র এবং মহান পুরুষের জন্যও বিরোধীতাকারী এবং অপপ্রচারকারী ছিল। এ ধরণের এক বিশেষ বিরোধীতাকারী ও অপপ্রচারকারী ছিল মুগীরা। তার ক্রমবর্ধমান অপপ্রচার ও বিরোধীতার কারণে অবশেষে আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফে তার হাক্বীক্বত তুলে ধরেন। আল্লাহ্ পাক বলেন, “হে রাসূল! আপনি তার কথায় কান দিবেননা। সে মিথ্যা শপথকারী, ঘৃণিত, অপমানিত, নিন্দাকারী, চোগলখোর, সৎকাজে নিষেধকারী, সীমালঙ্ঘনকারী, পাপিষ্ঠ, বদ চরিত্র এবং অধিকন্ত অবৈধ সন্তান। (কলম-১০-১২) উল্লেখ্য পাপাত্মা কুলাঙ্গার, মুগীরা দশটি বদ্গুণ সম্পর্কে যখন আয়াত শরীফ নাযিল হল তখন সে নয়টিই তার নিজের মধ্যে রয়েছে বলে স্পষ্টভাবে বুঝতে পারল। কিন্তু অবশিষ্টটি অর্থাৎ সে সত্যিই জারজ সন্তান কিনা সেটা জানার জন্য সে সরাসরি তার মাকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো। তার মা তার স্বামীর অক্ষমতা হেতু অন্য পুরুষের সাথে তার একান্তবাসের কথা এবং তার দ্বারা মুগীরার জন্মের কথা স্বীকার করল। অর্থাৎ কুরআনে কারীমায় আল্লাহ পাক-এর রসূলের বিরোধিতাকারীর ১০টি বদগুণের কথা বলা হয়েছে তার সবই সত্যই প্রমাণিত হলো। কাজেই দেখা যাচ্ছে যে, কুমন্ত্রক কায্যাব উদ্দীন আল বাইয়্যিনাত-এর সমালোচনায় যে আয়াত শরীফ উল্লেখ করেছে তা আল বাইয়্যিনাত-এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় এবং তা নিছক কুটতর্ক ছাড়া অন্য কিছুই নয়। এক্ষেত্রে মাসিক আল বাইয়্যিনাতে মূলতঃ আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কায়িম-মক্বাম তথা তাঁর আওলাদ, যিনি বর্তমান যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আ’ইম্মা, কুতুবুল আলম, মুহ্ইস্ সুন্নাহ, রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শীদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তাঁর যারা বিরোধিতাকারী, শরীয়তের খিলাফকারী, দ্বীনের চোর, ধর্মব্যবসায়ী, নামধারী আলিম তথা উলামায়ে ‘ছূ’দের যে মুখোশ উন্মোচন করা হয় বা তাদের বদ আমলের ও বদগুণের কথা উল্লেখ্য করা হয় তা সূরা কলমের ১০ নং আয়াত শরীফের মেছদাক মাত্র। যা মহান আল্লাহ পাক-এর সুন্নতও বটে।
-খন্দকার মুহম্মদ সাখাওয়াত হুসাইন ইব্রাহীমপুর, ঢাকা।
প্রসঙ্গঃ কমনওয়েলথ ও সি.পি.এ সম্মেলন