ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর জীবদ্দশার একটি ঘটনা দিয়েই এ লিখার অবতারণা। কিতাবে উল্লেখ আছে যে, আওলাদে রসূল, হযরত ইমাম বাকের রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি একবার একই বৎসর হজ্জে যান। হজ্জ উপলক্ষে হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি যখন তাওয়াফ করছিলেন, তখন কোন এক ব্যক্তি আওলাদে রসূল, হযরত ইমাম বাকের রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট হযরত ইমাম আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহিকে ইঙ্গিত বা ইশারা দিয়ে দেখিয়ে বললো যে, “হে আওলাদে রসূল, হযরত ইমাম বাকের রহমতুল্লাহি আলাইহি! এই সেই ইমাম আ’যম কুফী যিনি আপনার নানার (হাদীছের) বিরুদ্ধে ফতওয়া দেন। আল্লাহ্ পাক প্রদত্ত খোদায়ী ইল্ম ও সূক্ষ্ম সমঝের কারণে হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বিষয়টি বুঝতে বাকী রইল না। তাই হজ্জের কাজ সমাধা করে হযরত ইমাম আয’ম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি আওলাদে রসূল, হযরত ইমাম বাকের রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট আসলেন এবং তাঁকে সালাম দিলেন, কিন্তু আওলাদে রসূল, হযরত ইমাম বাকের রহমতুল্লাহি আলাইহি সালামের জবাব দিলেন না বরং চেহারা মুবারক ফিরায়ে নিলেন। সে প্রসঙ্গে খুব বিনীতভাবে, ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি জিজ্ঞাসা করলেন। জবাবে আওলাদে রসূল, হযরত ইমাম বাকের রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, “আপনিই কি সেই ইমাম আবু হানীফা কুফী রহমতুল্লাহি আলাইহি, যে আমার নানাজানের (হাদীছের) বিরুদ্ধে ফতওয়া দেয়। জবাবে ইমাম আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “আমি যদি সত্যিই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীছ শরীফের বিরুদ্ধে ফতওয়া দিতাম, তবে হাদীছ শরীফে রয়েছে, মেয়েদের অসুস্থতার সময়ের নামাজ কাযা করতে হয়না কিন্তু রোযার কাযা করতে হয়। অথচ নামাজের গুরুত্ব রোযা থেকে অনেক বেশী। যদি আমি হাদীছ শরীফের বিরোধিতা করতাম, তবে ফতওয়া দিতাম নামায কাযা করতে হবে, রোযা কাযা করতে হবেনা কিন্তু আমি তা বলিনা। আবার সম্পত্তির ব্যাপারে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের ফতওয়া হলো- মেয়েরা সম্পত্তির একভাগ পাবে। আর ছেলেরা দু’ভাগ পাবে। যদি আমি কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের বিরুদ্ধেই ফতওয়া দিতাম, তবে ফতওয়া দিতাম- মেয়েরা সম্পত্তির দু’ভাগ পাবে, আর ছেলেরা পাবে একভাগ। কারণ মেয়েরা দুর্বলা ও অবলা। কিন্তু আমি তা বলি না। আর লটারীকে আমি নাজায়িয ফতওয়া দেই, যা শরীয়তেরই ফতওয়া অথচ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফরে যাওয়ার সময় উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণ থেকে একজনকে নিয়ে যেতেন, তা ফায়সালা করতেন লটারীর মাধ্যমে আমি সে লটারীকে জায়িয ফতওয়া দেই। যদি তাই হয়ে থাকে, তবে আমি হাদীছ শরীফের বিরুদ্ধে ফতওয়া দিলাম কোথায়?”
একথা শুনে আওলাদে রসূল হযরত ইমাম বাকের রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর কপাল মুবারকে চুমু খেলেন এবং বললেন, “হে ইমাম আ’যম! আপনার গভীর ইল্ম ও সূক্ষ্ম সমঝ আপনাকে সকলের নিকট শত্রু বানিয়েছে।” পাঠক! উপরোক্ত ঘটনায় হযরত ইমামে আ’যমের প্রজ্ঞা ও সূক্ষ্ম সমঝের পাশাপাশি আরেকটি বিষয় প্রতিভাত হয় আর তা হলো কোন কিছুর মূল ও প্রকৃতিগত ধরন বা দিলের বৈশিষ্ট্যকে মূল্যায়ন করা। হযরত ইমামে আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ইলমের কারণে মশহুর হয়েছিলেন, ইমামে আ’যম লক্বব ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু ইমামে আ’যম বলতে এক অর্থে বুঝায় ইমামদের মধ্যে যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ তাঁকে।
উল্লেখ্য আল্লাহ্ পাক-এর রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও ইমামতি করেছেন সে হিসেবে ইমামে আ’যম বা সর্বশ্রেষ্ঠ ইমাম বলতে তিনিই অভিহিত হন। তাহলে কি ইমামে আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজেকে আল্লাহ্ পাক-এর রসূলের সমকক্ষতা দাবী করেছেন? (নাঊযুবিল্লাহ) কিন্তু ইমামে আ’যমের দিলের ধরন বা বৈশিষ্ট্য কি বলে? এ লেখার শুরুতে বর্ণিত ঘটনার দ্বারাও তা আঁচ করা গিয়েছে। এছাড়া নিম্নে বর্ণিত দু’টি ঘটনা দ্বারা তা আরো পরিষ্কার হয়ে উঠে। (এক) এক সময় ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি জানতে পারলেন যে ওযুর সময় কনিষ্ঠ আঙ্গুল দিয়ে পায়ের আঙ্গুল সমূহের নিচ দিক দিয়ে খিলাল করা সুন্নত। তা জানার পর তিনি বিশ বছরের নামায দোহরায়ে পড়েন। (দুই) একবার এক মজলিসে তা’লীম দেয়ার সময় ইমামে আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বার বার বসছিলেন এবং উঠে দাঁড়াচ্ছিলেন। মজলিস শেষে একজন বিনীতভাবে তার কারণ জানতে চাইলে তিনি বললেন, দেখ একজন সম্মানিত শিশু যিনি ছিলেন মূলতঃ আওলাদে রসুল তিনি যখন আমার কাছে আসছিলেন তখন আমি দাঁড়িয়েছিলাম আবার তিনি যখন দূরে যাচ্ছিলেন তখন বসে পড়ছিলাম।
পাঠক! বর্ণিত ঘটনায় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর কি বেমেছাল আনুগত্যতা, এমনকি তাঁর শিশু আওলাদের প্রতি কি বেমেছাল শ্রদ্ধাবনতা প্রদর্শিত হয়েছে? তারপরেও কি বলা যাবে যে ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজেকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সমকক্ষতা দাবী করেছেন? যেটা এ লিখার উপজীব্য বিষয় যে কোন ব্যক্তিকে মূল্যায়ণ করার আগে তার দিলকে, প্রকৃতিকে, ধরনকে বুঝতে হবে, অনুধাবন করতে হবে। এজন্যই হাদীছে কুদসীতে ইরশাদ হয়েছে, “আমার ওলীগণ আমার কুদরতী জুব্বার মাঝে। আমি এবং আমার অন্য ওলীগণ ব্যতীত তাঁদেরকে কেউ চিনেনা।”
মূলতঃ এরূপ ওলীআল্লাহ্ না হওয়ার কারণেই কাট্টা মিথ্যাবাদী, কট্টর মুনাফিক ও চরম ফাসিক হওয়ার কারণেই এবং কুমন্ত্রক কাযযাব উদ্দিন ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর অনুরূপ মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আইম্মা, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল, রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলাকেও মূল্যায়ণ করতে পারেনি। তাঁর লক্বব সমূহ অনুধাবন করতে পারেনি। যেমন সে মন্তব্য করেছে, “ ……. তদুপরি তার ব্যবহৃত এসব খেতাবের মধ্যে আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা বহির্ভূত অনেক দাবীও এসে গেছে। যেমন ইমামুস্ ছিদ্দীক বা ছিদ্দীকগণের ইমাম। এই ছিদ্দীকগণের মধ্যে রয়েছেন হযরত আবু বকর ছিদ্দীক (রাহঃ)। যার মর্যাদা উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে উর্দ্ধে। এ ব্যাপারে আহলুস্ সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মধ্যে কারও কোন বিরোধ নেই। অথচ তিনি দ্ব্যার্থহীন ভাবে দাবী করলেন তিনি ‘ইমামুস্ ছিদ্দীক্বীন’ বা ছিদ্দীকগণের ইমাম।” পাঠক! এবার কুমন্ত্রক কাযযাব উদ্দীনের কাছে আমাদের প্রশ্ন তিনি কি মনে করেন যে বর্তমান যামানায় কোন মুসলমান নেই? সবাই কাফির (নাঊযুবিল্লাহ)। আর যদি গোটা বিশ্বে কোটি কোটি মুসলমান থাকে তবে দুনিয়ার মানুষের কাছে পরিচিত না হলেও আল্লাহ্র দরবারে বর্তমান মুসলমানদের একজন ইমাম রয়েছেন তো? আর স্বভাবতই তাহলে তাঁকে ইমামুল মুসলিমীন বলতে হবে তো। যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে আবারো বলতে হয়, হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর অপর লক্বব হচ্ছে ইমামুল মুসলিমীন। কারণ তিনিই প্রথম মুসলমান হয়েছিলেন এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবদ্দশায়ই তিনি মুসলমানদের ইমামতি করেন। হাদীছ শরীফ অনুযায়ী কোন মুসলমান নেক কাজ করলে আগে তাঁর আমল নামায় লেখা হয়। সুতরাং বর্তমান যামানায় যদি ইমামুল মুসলিমীন থাকতে পারেন তবে ইমামুস ছিদ্দীকীন থাকতে পারবেন না কেন? বর্তমান যামানায় ইমামুছ্ ছিদ্দীক্বীন থাকতে পারবেন না, সে কথা বললে তা হবে স্পষ্ট কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কথা। কারণ কুরআন-সুন্নাহয় নুবুওয়াতের দরজা কেয়ামত পর্যন্ত বন্ধ, তা বলা হয়েছে। কিন্তু বিলায়াতের বা ছিদ্দীকীয়তের দরজা বন্ধ হয়েছে তা তো কোথাও বলা হয়নি। বর্তমান যামানায় মুসলমান কেমন রয়েছে তার মধ্যে কোয়াটার ঈমানদার, হাফ ঈমানদার, পাক্কা ঈমানদার, মু’মিন, দরবেশ, কুতুব, আবদাল, উঁচু স্তরের ওলীআল্লাহ তথা ছিদ্দীকও রয়েছে।
মূলতঃ এ কথা পবিত্র কুরআন শরীফেই ইরশাদ হয়েছে, “হে ঈমানদারগণ তোমরা ছিদ্দীকগণের সঙ্গ লাভ কর।” এর দ্বারা প্রতিভাত হয় প্রত্যেক যামানায়ই ছিদ্দীক থাকবে। সুতরাং ইমামে আ’যম, ইমামুল আইম্মা, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর নামের আগে ব্যবহৃত ইমামুছ্ ছিদ্দীক্বীন লক্বব মূলতঃ বর্তমান সমসাময়িক ছিদ্দীকগণ উপলক্ষ করেই। পাঠক! মুলতঃ কুমন্ত্রক, কট্টর, মুনাফিক, কাট্টা মিথ্যাবাদী কায্যাব উদ্দীন সবাইকে নিজের মতই মনে করে। চরম ফাসিক কায্যাব উদ্দীন মনে করে দুনিয়ায় সবাই তার মত বা তার সমগোত্রীয় তথাকথিত শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মাওলানা, মুহাদ্দিছ, খতীব ইত্যাদির মত নামধারী আলিম। কিন্তু বর্তমান যামানায়ও যে গাউছ, কুতুব, আবদাল, বড় অলী আল্লাহ্ তথা ছিদ্দীকগণ রয়েছে, সে সম্পর্কে তার কোন ধারণাই নেই। অর্থাৎ কুমন্ত্রক কায্যাব কেবল কায্যাবই নয় বরং জাহিলও বটে। আর তার মত জাহিলই যদি তথাকথিত ক্বওমী মাদ্রাসার নাজীম হয় তাহলে তাদের গোটা কওমী গোষ্ঠীর ইলমী দৈন্যতা যে, কত প্রকট তা বলাই বাহুল্য।
আরো উল্লেখ্য, কায্যাব উদ্দীন লিখেছে, আবু বকর ছিদ্দীক (রাহঃ)। উল্লেখ, তাঁর সমগোত্রীয়রা সবাই এভাবেই লিখে থাকে। কিন্তু, মুজাদ্দিদে আ’যম ইমামুল আইম্মা, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা-এর লিখনীতে প্রকাশ করা হয় “আফযালুন নাছ, বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু রূপে।” তদুপরি তাঁর মুবারক জবানে আফযালুন নাছ, বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর যেরূপ ছানা-ছিফত করা হয় তা অপূর্ব, বেমেছাল, এই যুগে যা অকল্পনীয় যার দ্বারা আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর প্রতি তাঁর বেমেছাল মুহব্বত ও শ্রদ্ধা প্রকাশ পায় এবং এ ধরনের মুহব্বত এবং শ্রদ্ধা বর্তমান যামানায় আর কেউ প্রকাশ করতে পারবেনা। সে প্রসঙ্গে কুমন্ত্রক কায্যাব গং এর প্রতি এ লিখকের প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ রইল। কিন্তু লিখকের দৃঢ় বিশ্বাস যে বাইয়্যিনাত-এর শেষ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার মত এক্ষেত্রেও তারা সম্পূর্ণ নীরব থেকে যাবে। আর মুনাফিকী ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে অপবাদ রটনা করবে যে তিনি ছিদ্দীকে আকবর, আফযালুন্ নাস হযরত আবূ বরক ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এরও ইমাম দাবী করেছেন। (নাঊযুবিল্লাহ) মূলতঃ এ ধরনের কায্যাব গং এর প্রতি মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ লা’নত।
-মুহম্মদ সাখাওয়াত হুসাইন ইবরাহীমপুর, ঢাকা।
প্রসঙ্গঃ কমনওয়েলথ ও সি.পি.এ সম্মেলন