কোন মুহাদ্দিছ রহমতুল্লাহি আলাইহি কোন হাদীছ শরীফ উনার ব্যাপারে “ছহীহ নয়” শব্দটি ব্যবহার করলেই তা জাল হয় না
বর্তমানে ওহাবী-সালাফীরা মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য কিছু ইমাম মুহাদ্দিছ উনাদের বক্তব্য لا يصح (ছহীহ নয়) এমন বক্তব্য দিয়ে হাদীছ শরীফ জাল বলার অপচেষ্টা করে। কিন্তু ছহীহ নয় দ্বারাই কি জাল হয়ে যায়? ছহীহ’র পরের স্তর হাসান, তারপরের স্তর দ্বয়ীফ, তারপরে গিয়ে হচ্ছে মওদ্বু বা জাল। ছহীহ নয় বললে হাসান হওয়াতে নিষেধ কোথায়?
এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
قَوْلُ السَّخَاوِّىِّ لَا يَصِحُّ لَا يُنَافِـي الضَّعْفَ وَالْـحَسَنَ
অর্থ : “ইমাম হযরত সাখাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, পবিত্র হাদীছ শরীফখানা ‘ছহীহ নয়’ দ্বারা পবিত্র হাদীছ শরীফখানা হাসান ও দ্বয়ীফ হওয়া নিষেধ করে না।” (আসরারুল মারফুয়া ১/৩৪৯)
হাফিযে হাদীছ হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
لَا يَلْزِمُ مِنْ نَفِىِ الثُّبُوْتِ ثُبُوْتَ الضَّعْفِ لِاِحْتِمَالٍ اَنْ يُّرَادَ بِالثُّبُوْتِ الصِّحَةَ فَلَا يَنْتَفِى الْـحَسَنَ
অর্থ : “পবিত্র হাদীছ শরীফ সাবিত নয় বা দৃঢ় নয় দ্বারা দ্বয়ীফ হওয়া আবশ্যক নয়। হাদীছ শরীফখানা সাবিত নয় দ্বারা ছহীহ নয় বুঝানো হয়েছে। তাই বলে হাসান হওয়াকে নিষেধ করা হয়নি।” (তুহফাতুল আবরার ১/৪)
এছাড়া হযরত জালালুদ্দীন সূয়ুতি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘তা’কিবাত আলাল মওদ্বুয়াত’ কিতাবে, হযরত তাহের ফাত্তানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রচিত ‘তাযকিরাতুল মাওদ্বুয়াত’ কিতাবে, আব্দুল হাই লখনবী রচিত ‘আসরারুল মারফুয়া’ কিতাবে, আল্লামা আযলুনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রচিত ‘কাশফুল খফা’ সহ অসংখ্য কিতাবে ছহীহ নয় দ্বারা হাসান হাদীছ শরীফ বুঝানো হয়েছে কখনোই জাল বলা হয়নি।
তাই যারা বিভিন্ন কিতাব থেকে ‘ছহীহ নয়’ উদ্বৃতি দিয়ে হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলার অপচেষ্ট করে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে হাদীছ শরীফ অস্বীকার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।
দ্বয়ীফ সনদে বর্ণিত হাদীছ শরীফ সম্পর্কে
উছুলে হাদীছ শরীফ উনার হুকুম
বিশ্ববিখ্যাত ফক্বীহ্ ইমাম হযরত ইবনে হুমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেছেন, দ্বয়ীফ হাদীছ শরীফ দ্বারা মুস্তাহাব প্রমাণিত হয় এবং দ্বয়ীফ হাদীছ শরীফ ফযীলত অর্জন করার জন্য আমল করাও জায়িয।
এ সম্পর্কে হযরত ইমাম হযরত ইবনে হুমাম রহমতুল্লাহিহ আলাইহি তিনি বলেন-
اَلضَّعِيْفُ غَيْرُ الْـمَوْضُوْعِ يَعْمَلُ بِهٖ فِـىْ فَضَائِلِ الْاَعْمَالِ.
অর্থ : “দ্বয়ীফ হাদীছ শরীফ যা মওদ্বু নয়, তা ফযীলত অর্জনের জন্য আমল করা জায়িয।” (ফতহুল ক্বাদীর ১/৩৪৯)
বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিছ ও ফক্বীহ্ হযরত ইমাম হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
اَلضَّعِيْفُ يَعْمَلُ بِهٖ فِـىْ فَضَائِلِ الْاَعْمَالِ اِتِّفَاقًا
অর্থ : “সকলেই একমত যে, দ্বয়ীফ হাদীছ শরীফ ফযীলত হাছিল করার জন্য আমল করা জায়িয আছে।” (আল মওদ্বুয়াতুল কাবীর পৃষ্ঠা ১০৮)
শুধু তাই নয়, দ্বয়ীফ হাদীছ শরীফ যদি বিভিন্ন রেওয়ায়েতে বর্ণনা করা হয়, তাহলে তা হাসান লি গায়রিহির দরজায় পৌঁছে যায় এবং এটা তখন আহ্কাম ও আক্বাইদের দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে।
এ প্রসঙ্গে আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উল্লেখ করেন-
ويعمل با لضعيف ايضافى الاحكام اذا كان فيه احتياط.
অর্থ : “দ্বয়ীফ হাদীছ শরীফ আহকামের জন্য গ্রহণযোগ্য, যখন তাতে সাবধানতা অবলম্বন করা হবে অর্থাৎ যখন হাসান লি গায়রিহি হবে।” (তাদরীবুর রাবী ২৯৯ পৃষ্ঠা)
এমনকি যেক্ষেত্রে দ্বয়ীফ হাদীছ শরীফ পাওয়া যাবে, সেক্ষেত্রে কোন অবস্থাতেই ক্বিয়াস হালাল নয়। আর তাই ইমাম রহতুল্লাহি আলাইহিম উনারা প্রত্যেকেই ব্যক্তিগত রায়ের উপর দ্বয়ীফ হাদীছ শরীকে প্রাধান্য দিয়েছেন। যেমন হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
قَالَ أَبُوْ حَنِيْفَةَ الْـخَبْـرُ الضَّعِيْفُ عَنْ رَّسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَوْلٰـى مِنَ الْقِيَاسِ، وَلَا يَـحِلُّ الْقِيَاسُ مَعَ مَوْجُوْدِهٖ.
অর্থ : “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ, যদিও তা রাবীদের কারণে দ্বয়ীফ হয়, তা ক্বিয়াস হতে উত্তম। যেক্ষেত্রে দ্বয়ীফ হাদীছ শরীফ পাওয়া যাবে, সেক্ষেত্রে কোন অবস্থাতেই ক্বিয়াস হালাল নয়।” (মুকাদ্দিমায়ে ইলাউস সুনান, পৃষ্ঠা ৫৯)
ইমাম হযরত সাখাভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
وَكَذَا اِذَا تَلَقَّتِ الْأُمَّةُ الضَّعِيْفَ بِالْقُبُوْلِ يَعْمَلُ بِهٖ عَلَى الصَّحِيْحِ حَتّٰـى أَنَّه يَنْزِلُ مَنْزِلَهُ الْـمُتَوَاتِرَ فـِيْ أَنَّه يَنْسَخُ الْـمَقْطُوْعَ بِهٖ
অর্থ : “অনুরূপ, উম্মত যখন কোন হাদীছ শরীফকে কবুল করে নেয় তখন, ছহীহ কথা হলো, সেই দ্বয়ীফ হাদীছ অনুযায়ী আমল করা যায়। এমনকি হাদীছ শরীফখানা মুতাওয়াতির পর্যায়ে পৌঁছে যায় এবং তা দ্বারা অকাট্য বিষয়ও রহিত হয়ে যায়।” (ফাতহুল মুগিছ ১/২৮৮)
এছাড়া ফতওয়ায়ে শামী, মিযানুল আখবার, উমদাতুল ক্বারী, মিরকাত শরীফ সহ অনেক কিতাবে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
এখানেই শেষ নয়, দ্বয়ীফ হাদীছ শরীফ একাধিক সনদে বর্ণিত হলে তা “হাসান” স্তরে উন্নিত হয়। বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
وَتَعَدَّدُ الطُّرُقُ وَلَوْ ضَعُفَتْ يَرْقِي الْـحَدِيْثُ اِلٰى الْـحَسَنِ
অর্থ : “একাধিক সনদে যদি দ্বয়ীফ হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয় তাহলে পবিত্র হাদীছ শরীফখানা হাসান হাদীছ শরীফ হিসাবে সাব্যস্ত হবে।” (আসরারুল মারফুয়া ১/৪৮১)
এ ব্যাপারে পৃথিবীর সব মুহাদ্দিছ ও হাদীছ শরীফ বিশারদ উনারা একমত এবং এ বিষয়টি স্ব স্ব কিতাবে দলীলসহ আলোচনাও করেছেন। সুতরাং দ্বয়ীফ সনদ দেখিয়েই মানুষকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ নেই।
দ্বয়ীফ বর্ণনাসমূহের গ্রহণীয় স্থান
যে সমস্ত স্থানে দ্বয়ীফ বর্ণনাসমূহ গ্রহণীয় তা নিম্নরূপ-
১. মুস্তাহাব পর্যায়ের বিধানাবলী
২. কোন প্রমাণিত আমলের ফযীলতের বর্ণনা
৩. তারগীব তথা কোন আমলের প্রতি উৎসাহ প্রদান
৪. তারহীব তথা কোন কাজে ভীতি প্রদর্শনের ক্ষেত্রে
৫. সাওয়াব কোন আমলের নেকী সম্পর্কে
৬. যুহদ দুনিয়া বিমূখতা সম্পর্কে
৭. মাকরূহে তানযীহী সংক্রান্ত বিষয়ে
৮. কিসাস পূর্বের নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের ঘটনাবলী প্রসঙ্গে
৯. ইকাব বা কোন কাজের শাস্তি সম্পর্কে
১০. রাকায়েক বা যে সব কারণে অন্তর নরম হয় সে সম্পর্কে
১১. সীরাত তথা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা অন্য কারো জীবনী মুবারক সম্পর্কে,
১২. মানাকিব বা কোন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, তাবেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি বা অন্য কারো বৈশিষ্ট সম্পর্কে
১৩. মালাহিম বা যুদ্ধ-বিগ্রহ সম্পর্কে,
১৪. মাগাযী বা বিজয়ীদের কর্মকান্ড ও গুণাবলী সম্পর্কে,
১৫. তারীখ বা ইতিহাস সম্পর্কে,
১৬. তাফসীর বা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ইত্যাদি বিষয়ে।
এক কথায় আক্বায়িদ ও আহকামের মধ্যে হালাল-হারাম, মাক্রূহে তাহরীমী, ফরজ, ওয়াজিব ছাড়া সমস্ত বিষয়ে দ্বয়ীফ হাদীছ শরীফ গ্রহণযোগ্য ও আমলযোগ্য।
কোন হাদীছ শরীফ ছহীহ দ্বয়ীফ নির্ণয়
করা সবার জন্য বৈধ নয়
হাফিযে হাদীছ হযরত ইবনুস সালাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পরবর্তী যুগের মানুষদের জন্য ছহীহ, দ্বয়ীফ নির্ণয় করা সঠিক মনে করতেন না।
তিনি বর্ণনা করেন-
فَقَدْ تَعَذَّرَ فِي هٰذِهِ الْاَعْصَارِ الْاِسْتِقْلَالُ بِاَدْرَاكِ الصَّحِيْحِ بِـمُجَرَّدِ اِعْتِبَارِ الْاَسَانِيْدِ
অর্থ : “শুধু সনদের উপর নির্ভর করে এই যুগে ছহীহ হাদীছ শরীফ আখ্যা দেয়া অনেক কঠিন কাজ।” (মুকাদ্দিমায়ে ইবনুস সালাহ ফি উলুমিল হাদীছ ১/১৭, শরহুল তাবছিরাহ ওয়া তাযকিরাহ ১/৪৩)
হাফিযে হাদীছ ইমাম হযরত শামসুদ্দীন সাখাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত ইবনুস সালাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মান নির্ণয়ের দরজা মুতাআখ্খিরীন (পরবর্তী আগত) উনাদের জন্য এ কারণে বন্ধ করতে চান, যাতে এ রকম স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অযোগ্য শ্রেণীর লোকেরা ঢুকে না পড়ে। যারা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সনদ, ইলাল খুব ভালোভাবে জানে না, যারা অধ্যায়ন ও গবেষণার উপর শতভাগ সচেতন নয়। (ফতহুল মুগিছ ১৬২ পৃষ্ঠা)
এই বিষয়গুলো অনেক জটিল ও স্পর্শকাতর। সবাই যদি এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে তবে নিজের ফিরক্বার মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য নফসানিয়াতের শিকার হবে। আর অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে বাতিল বলে ঘোষণা করবে। কারণ ক্ষেত্র বিশেষে শুধু সনদ দেখেও রায় দেয়া যায় না। এ বিষয়ে উছূলে হাদীছ শরীফ ও উম্মতের আমলসহ অনেক বিষয় দেখতে হয়। সবাই যদি নিজেদের মত ঊছূল বর্ণনা করতে যায় তাহলে যে ঘটনা ঘটবে সেটা প্রমাণসহ উল্লেখ করা হলো।
ওহাবী-সালাফীদের নফসানিয়াত রক্ষায়
চুরি করার উজ্জল দৃষ্টান্ত
ওহাবী সালাফীরা চুরি ও প্রতারণা করতে করতে এতই নিচে নেমেছে যেটা বলার ভাষা নেই। তারাবীহর নামাযকে তারা কোনভাবেই ২০ রাকায়াত মানতে পারে না। কিন্তু তারা না চাইলে কি হবে ২০ রাকায়াততো ছহীহ সনদে প্রমাণিত। সালাফীদের যেহেতু একটা মুখস্ত অভ্যাস শিখিয়ে দেয়া হয়েছে, তাদের মতের খিলাফ হলেই সেটা জাল এবং সেই সনদের সবাই মিথ্যাবাদী হয়ে যায়। নাঊযুবিল্লাহ।
তারাবীহর নামাযকে অস্বীকার করতে গিয়ে এমনই একটা ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে সালাফীরা। কিন্তু ভুল জায়গায় হাত পড়ে গেছে, স্বয়ং বুখারী শরীফ উনার প্রথম হাদীছ শরীফ উনার মধ্যেই হস্তক্ষেপ।
মুছান্নাফে ইবনে আবি শায়বা উনার একটি হাদীছ শরীফ যেখানে ২০ রাকায়াত তারাবীহর পক্ষে মুরসাল সনদ বর্ণিত আছে।
এই হাদীছ শরীফ উনার একজন রাবী হচ্ছেন-
يَـحْيَى بْنُ سَعِيْدٍ الْاَنْصَارِيُّ
‘হযরত ইয়াহিয়া ইবনে সাঈদ আল আনছারী রহমতুল্লাহি আলাইহি’।
যাকে সালাফীদের তাওহীদ পাবলিকেশন্স হতে প্রকাশিত বুখারী শরীফ উনার টীকায়- এক সালাফী মতবাদের টীকাকারক ‘মিথ্যাবাদী’ বলেছে এবং বলেছে উনার বর্ণনা প্রত্যাখ্যাত, অর্থাৎ উনার কোন বর্ণনা গ্রহণ করা যাবে না। (ছহীহ বুখারী, প্রকাশনী: তাওহীদ পাবলিকেশন্স, ৯০ হাজী আব্দুল্লাহ লেন বংশাল, ঢাকা। নবম প্রকাশ: সেপ্টেঃ, ২০১২; ২য় খণ্ড ৩৪৩ পৃষ্ঠা)
কিন্তু বাংলায় প্রবাদ আছে চোরের দশ দিন আর গৃহস্থের একদিন। সুতরাং চোর ধরা পড়ে গেলো। সেই তাওহীদ প্রকাশনীর সম্পাদনায় বুখারী শরীফ উনার ১ম খ- ২য় পৃষ্ঠা ১ নং হাদীছ শরীফ উনার সনদটি নিম্নরূপ (দাগ দেয়া অংশে রাবী উনার নাম)-
حَدَّثَنَا الْـحُمَيْدِيُّ عَبْدُ اللهِ بْنُ الزُّبَيْرِ، قَالَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، قَالَ حَدَّثَنَا يَـحْيَى بْنُ سَعِيْدٍ الْاَنْصَارِيُّ، قَالَ أَخْبَرَنِـيْ مُـحَمَّدُ بْنُ اِبْرَاهِيْمَ التَّيْمِيُّ، اَنَّهُ سَـمِعَ عَلْقَمَةَ بْنَ وَقَّاصٍ اللَّيْثِيَّ، يَقُولُ سَـمِعْتُ عُمَرَ بْنَ الْـخَطَّابِ
বুখারী শরীফ উনার ১ম হাদীছ শরীফ “ইন্নামা আ’মালু বিন্নিয়াত” এই মশহুর হাদীছ শরীফ উনার রাবী হচ্ছেন- হযরত ইয়াহিয়া ইবনে সাঈদ আল আনছারী রহমতুল্লাহি আলাইহি। সালাফীরা তারাবীহকে অস্বীকার করতে নফসের দ্বারা প্রতারিত হয়ে হযরত ইয়াহিয়া ইবনে সাঈদ আল আনছারী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে মিথ্যাবাদী বলতেও কুন্ঠাবোধ করেনি। অথচ বুখারী শরীফ উনার ১ নং হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে হযরত ইয়াহিয়া ইবনে সাঈদ আল আনছারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সালাফীদের কাছে চরম সত্যবাদীই আছেন। যেই তিনি অন্য কিতাবে তারাবীহর নামায ২০ রাকায়াত বলে ফেললেন, সাথে সাথে মিথ্যাবাদী হয়ে গেলেন। নাঊযুবিল্লাহ!
এর জবাব ওহাবী সালাফীরা কি দিবে? তারা কি তাদের মনগড়া ওহাবী- সালাফী মতবাদ টিকাতে উক্ত রাবীকে জারাহ করে ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জাল হাদীছ বর্ণনাকারী বানিয়ে দিবে?
ভয়ানক বিষয় হচ্ছে- এই অপবাদ দিতে গিয়ে তাওহীদ পাবলিকেশন্সের সালাফীরা হযরত ইবনে হাতীম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রতিও মিথ্যারোপ করেছে। কারণ হযরত ইবনে হাতীম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার কিতাব ‘জারাহ ওয়াত তা’দীল’ কিতাবে হযরত ইয়াহিয়া ইবনে সাঈদ আল আনছারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রেফারেন্স টেনে এনে বলেন, তিনি নাকি উক্ত রাবীকে মিথ্যাবাদী বলেছেন।
আসমাউর রিজাল (৬৭ পৃষ্ঠার পর)
অথচ কিতাব অনুসন্ধান করে দেখা যায় মিথ্যাবাদীতো বলেননি, বরং ছিক্বাহ ও হাদীছ শরীফ উনার চরম সত্যাবাদী শায়েখ বলেছেন। হযরত ইবনে হাতীম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
اَبَا زُّرْعَةَ يَقُوْلُ: يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ الْاَنْصَارِيِّ مِنَ الثِّقَاتِ
অর্থ : “হযরত ইমাম আবু যুরআ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত ইয়াহিয়া ইবনে সাঈদ আল আনছারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছিক্বাহ বা নির্ভরযোগ্য।” (জারাহ ওয়াত তা’দীল ৯/১৪৯)
সুতরাং উছূলে হাদীছ শরীফ উনার ইল্ম ছাড়া যারা আজ বাড়াবাড়ি শুরু করেছে, হাজার বছর ধরে চলে আসা মশহুর আমলকৃত হাদীছ শরীফ উনাকে মওদ্বু বলে উড়িয়ে দিচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য মূলতঃ মুসলমান উনাদের বিভ্রান্ত করে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া। সেই সাথে, যাতে মুসলমান উনারা আমল করে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নৈকট্য হাছিল করতে না পারে সেই চেষ্টা করা। নাঊযুবিল্লাহ।
বর্তমান যামানার ওহাবীদের ফিতনা দাজ্জালের ফিতনার চেয়েও অনেক বড় কঠিন আকার ধারণ করেছে। তারা কথায় কথায় ওমুক হাদীছ শরীফ জাল, মওদ্বু ইত্যাদি বলে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
এদের সম্পর্কে হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে হাদীছ শরীফ উল্লেখ করেছেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اَنَا مِنْ غَيْرِ الدَّجَّالِ اَخْوَفُ عَلَيْكُمْ مّـِنَ الدَّجَّالِ فَقِيْلَ وَمَا هُوَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ عُلَمَاءُ السُّوْءِ.
অর্থ : “আমি আপনাদের ব্যাপারে এক সম্প্রদায়কে দাজ্জালের চেয়েও অধিক বেশি ভয়ঙ্কর মনে করি এবং এই ব্যাপারে অধিক চিন্তিত রয়েছি (যাদের ফিতনা হবে দাজ্জালের ফিতনার চেয়ে অনেক বড় কঠিন ও ভয়ঙ্কর)। তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের থেকে একজন জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সেটা কোন সম্প্রদায়? জবাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, উলামায়ে সূ’।” (বিদায়াতুল হিদায়া ১ম খ- ১২৬-১২৭ পৃষ্ঠা)
অর্থাৎ উলামায়ে সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী মালানাদের ফিতনা দাজ্জালের ফিতনার চেয়ে অনেক বড় কঠিন ও ভয়ঙ্কর। বর্তমান যামানা হচ্ছে এমনই এক ভয়াবহ ফিতনার যামানা। এখন ঈমান রক্ষা করা অনেক কঠিন। এই ফিতনা বেষ্টিত যামানায় সবার উচিত নিজের ঈমান-আমল হিফাযত করতে মহান মুজাদ্দিদে আযম, ইমামে আ’যম, গ¦উছুল আ’যম, সুলত্বনুন নাছীর, হাকীমুল হাদীছ, জামিউল আলক্বাব, জামিউল ইল্ম ওয়াল হিকাম, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত ত্বরীকত, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার পাক ক্বদম মুবারকে আসা। সেই সাথে মুবারক ছোহবত ইখতিয়ার করে কুল কায়িনাতের সবার উচিত ইল্ম, আমল, ইখলাছ ও অফুরন্ত নিয়ামত হাছিল করা। একমাত্র পৃথিবীর বুকে তিনিই পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সঠিক বিষয়টা প্রকাশ করছেন, যাতে করে মানুষ হিদায়েত লাভ করে আল্লাহওয়ালা হতে পারে।
-মুহম্মদ নূরুদ্দীন (পলাশ)
পবিত্র ১৯ শে রমাদ্বান শরীফ বাংলা ভাষার আজাদী দিবস পালন করা কেন জরুরী