বিশেষ সুওয়াল-জাওয়াব

সংখ্যা: ১৭২তম সংখ্যা | বিভাগ:

সাইয়্যিদ মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন, ঢাকা

মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন, মুহম্মদপুর, ঢাকা

মুহম্মদ ছিদ্দীকুল আলম, চান্দিনা, কুমিল্লা

মুহম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, শালিখা, মাগুরা

মুহম্মদ আফতাবুদ্দীন, কোনাবাড়ী, গাজিপুর

মুহম্মদ মুহসিনুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

মুহম্মদ হারুনূর রশীদ, মাহিগঞ্জ, রংপুর

শাফিয়ী আহমদ, রাজারহাট, কুড়িগ্রাম

মুহম্মদ সদরুল আমীন গোলাপগঞ্জ, সিলেট

মুহম্মদ আশাদুজ্জামান, পলাশবাড়ী, গাইবান্ধা

মুহম্মদ আশফাকুর রহমান, সিংড়া, নাটোর

মুহম্মদ ইছহাকুর রহমান, কসবা, বি.বাড়িয়া

মুহম্মদ শফিকুছ্ ছালেহীন, মতলব, চাঁদপুর

মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান, প্রভাকরদী, এন.গঞ্জ

মুহম্মদ হারিছুর রহমান, রাজপাড়া, রাজশাহী

মুহম্মদ কাওছার হুসাইন, বানারীপাড়া, বরিশাল

মুহম্মদ  হাদীউল ইসলাম, পাহাড়তলী,  চট্টগ্রাম

মুহম্মদ কামরুজ্জামান, কুটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ

মুহম্মদ আবুল কাশেম, আক্কেলপুর, জয়পুরহাট

মুহম্মদ হাবীবুল্লাহ, কালীহাতি, টাঙ্গাইল

সুওয়াল: বর্তমান সময় যে সমস্ত “সংসদ নির্বাচন” অনুষ্ঠিত হয়। তাতে অন্যান্য দলগুলোর মতো নামধারী ইসলামী দলগুলোও সক্রিয়ভাবে উক্ত নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে তথা প্রার্থী দেয়। ইসলামের নামে যারা নির্বাচনে অংশ নেয় তারা সাধারণতঃ প্রচার করে থাকে যে, গণতন্ত্র আর ইসলাম একই বিষয় এবং তারা যে গণতন্ত্র করছে, সেটা হচ্ছে ইসলামী গণতন্ত্র। তারা গণতন্ত্রের ভিত্তি ভোটকে আমানত, শুপারিশ, উকিল নিয়োগ, স্বাক্ষ্য ইত্যাদি বলে প্রচার করে থাকে।

কেউ কেউ আবার ইসলামী দলকে ভোট দেয়া ফরয-ওয়াজিব বলে থাকে। আরো বলে থাকে যে, ইসলামী দলের  প্রার্থীকে ভোট দিলে জান্নাতের টিকেট পাওয়া যাবে। যেমন জামাত নেতারা কিছুদিন পূর্বে একটি দৈনিক পত্রিকার সাক্ষাতকারে বলেছে, ইসলাম ও গণতন্ত্র একই বিষয়।

বায়তুল মুকাররমের খতীব ওবায়দুল হক বলেছে, “ভোট দেয়া আল্লাহ পাক-এর নির্দেশ অর্থাৎ ফরয। আল্লাহ পাক বলেন, ভোট একটি আমানত। আল্লাহ পাক-এর হাবীব বলেছেন, সৎ লোককে ভোট দিতে হবে।” (দৈনিক সংগ্রাম ১লা জুলাই-২০০৬)

মাহিউদ্দিন খান তার মাসিক মদীনা ডিসেম্বর/৯৯ সংখ্যায় নির্বাচন ভিত্তিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোট দান সম্পর্কিত একটি  প্রশ্নের উত্তরে লিখেছে, (ক) ছহীহ্ অর্থে মুসলমানদের প্রকৃত শাসক হচ্ছে পবিত্র কুরআন এবং রসূলের সুন্নাহ্। (খ) প্রচলিত যে কোন শাসন ব্যবস্থায় যদি কুরআন-সুন্নাহ্র প্রাধান্য মেনে নেয়া হয় তবে তা মুসলিম জনগণ বিনা দ্বিধায় মেনে নিতে পারেন। (গ) ভোটের মাধ্যমে নেতা বা শাসক নির্বাচনের বর্তমান যে পদ্ধতি এটা অংকুরিত হয়েছে, ইসলামী শুরা পদ্ধতির মধ্য থেকে। সুতরাং এই পদ্ধতিতে ভোটের রাজনীতি ইসলামে বৈধ নয় এ কথা বলা যাবে না। (ঘ) এ যুগের ভোট প্রদান বাইয়াতের বিকল্প বিবেচিত হতে পারে।

অনুরূপ হাটহাজারী খারেজী মাদ্রাসার মুখপত্র মাসিক মুহীনুল ইসলামের সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর’ ০৬ সংখ্যায়ও ভোট-নির্বাচন সম্পর্কে আলোচনা করতে  গিয়ে লিখেছে, (ক) গণতন্ত্র বা নির্বাচন দুই প্রকার। (১) পাশ্চত্য গণতন্ত্র বা নির্বাচন। (২) ইসলামী গণতন্ত্র বা নির্বাচন। (খ) খুলাফায়ে রাশেদীন ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছিলেন (গ) পদপ্রার্থী হওয়া জায়িয। (ঘ) কুরআন সুন্নাহয় ভোটকে স্বাক্ষী, আমানত, সুপারিশ ও প্রতিনিধি নিয়োগ বলে উল্লেখ করা হয়েছে ইত্যাদি অনেক ভুল তথ্য তারা উল্লেখ্য করেছে। পটিয়া খারেজী মাদ্রাসার মুখপত্র “আত্ তাওহীদ” ডিসেম্বর/৯৬, জানুয়ারী/৯৭, জুলাই-আগস্ট/৯৭

সংখ্যায় ভোট-নির্বাচন এমনকি ভোট বেচা-কেনা করাকেও জায়িয ফতওয়া দিয়েছে।

আর উল্লিখিত বিষয়ে তাদের নিকট দলীল তলব করলে তারা সাধারণতঃ মুফতী শফীর মা’য়ারিফুল কুরআন ও ভোটের ইসলামী শরয়ী বিধান এবং শামসুল হক ফরীদপুরী ছাহেবের বক্তব্য তুলে ধরে বলে থাকে যে, তারা ভোটকে জায়িয বলেছেন। এখন আমাদের জানার বিষয় হলোঃ

১৬।  যদি ইসলামের দৃষ্টিতে গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন নাজায়িয হয় তবে রাষ্ট্র পরিচালিত হবে কিভাবে? এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠিত হবে কিভাবে? রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠা করা কি ফরযে আইন? আর এজন্য কি সশস্ত্র বিপ্লব বা বোমাবাজি, জিহাদ বা জঙ্গী কার্যকলাপের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা যাবে?

১৭। যে সকল কথিত মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিছ, শাইখুল হাদীছ, খতীব, পীর, আমীর ইসলামের নামে গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন করছে, ভোটকে আমানত, স্বাক্ষ্য ফরয-ওয়াজিব বলছে এবং ক্ষমতার লোভে বাতিলের সাথে আতাত করছে তারা হক্কানী  আলিম কিনা? তাদের পিছনে নামায পড়া জায়িয কিনা? তাদের ব্যাপারে শরীয়তের ফায়ছালা কি?

উপরোক্ত প্রতিটি বিষয় দলীলভিত্তিক বিস্তারিত জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান-আক্বীদা ও আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদি।

জাওয়াবঃ

ইসলামের নামে বা ইসলামের দোহাই দিয়ে গণতন্ত্র, ভোট, নিবার্চন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া, নিজ দলকে ভোট দেয়া ওয়াজিব ও জান্নাতের টিকেট লাভের কারণ বলা এবং ভোটকে আমানত, সুপারিশ, স্বাক্ষ্য ইত্যাদি বলা সম্পূর্ণ হারাম ও কুফরী। এটাই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস তথা শরীয়তের চুড়ান্ত, ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া।

অতএব, বলার অপেক্ষা রাখে না যে, গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন ও পদপ্রার্থী হওয়া সম্পর্কিত তথাকথিত খতীব উবায়দুল হক, নিজামী, আহমদ শফী, মাহিউদ্দীন, আমিনী ও আযীযূল হক- ওহাবী, দেওবন্দী ও জামাতীগংদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের খিলাফ বিধায় তা ভুল, অশুদ্ধ, জিহালতপূর্ণ দলীলবিহীন ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

 নিম্নে পর্যায়ক্রমে সুওয়ালে উল্লেখিত তাদের প্রতিটি বক্তব্যের খণ্ডনমূলক জাওয়াব প্রদান করা হলো।

(১৬)

যদি ইসলামের নামে গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন নাজায়িয হয় তবে রাষ্ট্র পরিচালিত হবে কিভাবে? এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠিত হবে কিভাবে? রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠা করা কি ফরযে আইন? আর এজন্য কি সশস্ত্র বিপ্লব বা বোমাবাজী, বা জঙ্গী কার্যকলাপের মাধ্যমে ইসলাম

 প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা যাবে?

এর জবাবে  বলতে হয় যে, ইসলামের নামে গণতন্ত্রভিত্তিক আন্দোলনকাীরা যে বলে, রাষ্ট্রিয় পর্যায়ে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠা করা ফরযে আইন। তাদের একথা মোটেও শুদ্ধ নয়। বরং সম্পূর্ণই মনগড়া, দলীলবিহীন ও অজ্ঞতাপ্রসূত। কারণ প্রথমতঃ ইসলাম কোন রাষ্ট্রই স্বীকার করে না। কেননা রাষ্ট্র হচ্ছে একটি সুনির্দিষ্ট ভূ-খণ্ডের নাম। অথচ ইসলাম বা খিলাফত সুনির্দিষ্ট কোন ভূখণ্ডের জন্যে নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের জন্য। কাজেই, ইসলাম বা খিলাফত প্রতিষ্ঠার কোশেশ করতে হবে সমগ্র বিশ্বব্যাপী, নির্দিষ্ট কোন ভূখণ্ডের জন্যে নয়।

দ্বিতীয়তঃ “ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠা করা ফরজে আইন” ইসলামের নামে গণতন্ত্রভিত্তিক আন্দোলনকারীদের একথাও ডাহা মিথ্যা, ভুল ও কুরআন সুন্নাহর খিলাফ।

ছহীহ, গ্রহণযোগ্য ও কুরআন-সুন্নাহসম্মত ফতওয়া হলো, যমীনে খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্যে কোশেশ করা ফরজে কিফায়া। অর্থাৎ খিলাফতের জন্যে কোশেশ বা চেষ্টা করা হচ্ছে ফরজ তাও আবার ফরজে আইন নয় ফরজে কিফায়া। কিছু লোককে অবশ্যই খিলাফতের জন্য কোশেশ করতে হবে, তাতে খিলাফত আসলে আলহামদুলিল্লাহ আর যদি না আসে তাতে কাউকে জবাবদিহী করতে হবে না। অর্থাৎ যমীনে খিলাফত কায়িম করতেই হবে এরূপ সীলমোহর কারো পীঠে মেরে দেয়া হয় নাই।

উল্লেখ্য যে, তাদের কথা মতে যদি ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠা করা ফরজে আইন হয় তবে যে দেশে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠা হবে না সেদেশে এবং যারা ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না তারা সকলেই ফরজ তরক করার গুনাহে গুনাহগার হবে। সে মতে আজকে যারা ইসলামের নামে গণতন্ত্র ভিত্তিক আন্দোলন করছে তাদের যে সকল মুরুব্বী ইসলামী খিলাফত কায়িম না করে মারা গেছে যেমন মওদুদী, হাফেজ্জী প্রমুখ তারা ফরজ তরক করে মারা গেছে এবং বর্তমানে যারা রয়েছে তাদের কেউ যদি ইসলাম কায়িম না করে মারা যায় তারা ফরজ তরক করে মারা যাবে। তারা এটা মেনে নিবে কি?

আসলে তারা জনগণকে ধোঁকা দিয়ে রাজনৈতিক ও দুনিয়াবী ফায়দা হাছিলের জন্যই একথা বলে থাকে যে, ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠা করা ফরজে আইন।

শরীয়তের উছূল হলো- ইসলামে সমষ্টিগত কোন কাজই ফরজে আইন নয় বরং ফরজে কিফায়া। আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাবুকের জিহাদে সমস্ত ছাহাবীদের নিয়ে রওয়ানা হবেন ঠিক এমতাবস্থায় আল্লাহ পাক নাযিল করেন,

ما كان المؤ منون لينفروا كا فة.

অর্থাৎ, “মু’মিনদের জন্য উচিৎ হবে না কোন কাজে দলবদ্ধভাবে বের হওয়া।” (সূরা তওবা-১২২)

এ আয়াত শরীফের উপর  ভিত্তি করেই ফতওয়া দেয়া হয়েছে যে, ইসলামের সমষ্টিগত কোন কাজই ফরজে আইন নয় বরং ফরজে কিফায়া যেমন নামাযে জানাযা, তাবলীগে আম, জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ এবং আল্লাহ পাক-এর যমীনে আল্লাহ পাক-এর দ্বীন বা খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্যে কোশেশ করা। এগুলো সবই হচ্ছে ফরজে কিফায়া।

মুলকথা হলো, কিছু লোককে অবশ্যই খিলাফতের জন্য কোশেশ করতে হবে এবং তা অবশ্যই শরীয়ত সম্মত পদ্ধতিতে ও শরীয়তের গন্ডির মধ্যে থেকেই। খিলাফত প্রতিষ্ঠা হওয়া বা না হওয়া সেটা আল্লাহ পাক-এর ইখতিয়ার। কেননা হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

السعى منا والا تمام من الله

অর্থাৎ চেষ্টা বান্দার তরফ থেকে আর তা পুরা করার মালিক হচ্ছেন আল্লাহ পাক।

কাজেই বান্দার পক্ষে কখনোই খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। বান্দা কোশেশ করতে পারে। কোশেশ করার পরও যদি না হয় এজন্যে কোন জবাবদিহী করতে হবে না। বনী ইস্রাঈলের এরূপ অনেক নবী অতীত হয়েছিলেন যাঁদের একজন উম্মতও ছিলনা অর্থাৎ ওনারা কোশেশ করেছেন, কিন্তু উম্মত তা গ্রহন করে নাই। তাই বলে উনারা কি পাকড়াও হবেন? কস্মিনকালেও না।

তৃতীয়তঃ “ইসলামের দৃষ্টিতে গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন, নাজায়িয হলে রাষ্ট্র পরিচালিত হবে কিভাবে এবং ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠা হবে কিভাবে?” তাদের এ প্রশ্নটাই মূলতঃ জিহালতপূর্ণ ও কুফরীমূলক। কেননা ইসলাম বাদ দিয়ে মানবরচিত বেদ্বীনী বদ্বদ্বীনী নিয়ম-নীতি তর্জ-তরীকায় দেশ পরিচালনা করা ও ইসলাম প্রতিষ্ঠার কোশেশ করা কুফরী বৈ কিছুই নয়। তাহলে কি তারা বলতে চায় যে, ইসলামে তথা কুরআন-সুন্নাহয় দেশ পরিচালনার বা ইসলামী আইনের জন্য কোশেশ করার কোন বিধান বর্ণিত নেই? তাদের মতে কি ইসলাম অপূর্ণ?

 অথচ মহান আল্লাহ পাক ‘সূরা মায়িদার’ ৩নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,

اليوم اكملت لكم دينكم واتممت عليكم نعمتى ورضيث لكم الا سلام دينا.

অর্থঃ- “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন ইসলামকে পরিপূর্ণ করে দিলাম। তোমাদের উপর আমার নিয়ামত পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকেই তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।”

          উক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, “দ্বীন ইসলাম” পরিপূর্ণ অর্থাৎ দ্বীনী ও দুনিয়াবী সকল বিষয়ের ফায়ছালা বা সব সমস্যার সমাধান দ্বীন ইসলামে রয়েছে। আর তাই আল্লাহ্ পাক বলেন,

كل فى كتب مبين.

অর্থঃ “সুস্পষ্ট কিতাবে (অর্থাৎ কুরআন শরীফে) সব কিছুই রয়েছে।” (সূরা হুদ-৬)

 অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে,

مافر طنا فى الكتب من شىء.

অর্থঃ- “আমি এ কিতাবে কোন কিছুই বর্ণনা করতে ছেড়ে দেইনি।” (সূরা আনয়াম-৩৮)      আল্লাহ্ পাক এ প্রসঙ্গে আরো বলেন,

ولا رطب ولا يا بس الا فى كتب مبين.

অর্থঃ “শুকনা এবং ভিজা এমন কিছুই নেই, যা এ স্পষ্ট কিতাবে উল্লেখ করা হয় নাই।” (সূরা আন্য়াম-৫৯)

উল্লেখ্য যে, যখন গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন ছিল না তখন দেশ চলেছে কিভাবে? খুলাফায়ে রাশিদ্বীন খিলাফত পরিচালনা করেছেন কিভাবে? উনারা কি গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচনের মাধ্যমে তা করেছিলেন? কস্মিনকালেও না।  কাজেই তাদের উক্ত প্রশ্ন যে অবান্তর ও অজ্ঞতা প্রসূত তা আর বলার অপেক্ষাই রাখে না।

স্মর্তব্য যে, যমীনে খিলাফত কিভাবে আসবে বা আল্লাহর আইন কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে সে প্রশ্নের জবাব আল্লাহ পাক নিজেই পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে দিয়েছেন, মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

وعد الله الذ ين امنوا منكم وعملوا الصلحت ليستخلفنهم فى الا رض كما استخلف الذين من قلهم وليمكنن لهم دينهم الذى ار تضى لهم وليبد لنهم من بعد خو فهم امنا يعبد و ننى لا يشر كون بى شيئا ومن كفر بعد ذلك فاو لئك هم الفسقون. واقيموا الصلوة وا بوا الز كوة واطيعوا الر سول لعلكم تر حمون. لا تحسبن الذ ين كفروا معجزين فى الارض وماوهم النار ولبئس المصير.

অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক ওয়াদা দিয়েছেন যে, তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছেন এবং আমলে ছলেহ করেছেন, তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে খিলাফত (শাসন কর্তৃত্ব) দান করবেন। যেমন তিনি তাদের পূর্ববর্তীদেরকে খিলাফত দিয়েছিলেন এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের জন্য তাদের দ্বীনকে, যে দ্বীন তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং নিশ্চয়ই তিনি তাদের ভয়ভীতির পরিবর্তে আমান (নিরাপত্তা) দান করবেন এ শর্তে যে, তারা আমার ইবাদত বন্দেগী করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না। আর এর পর যারা অস্বীকার করবে, তারাই ফাসিক। তোমরা নামাজ কায়েম কর এবং যাকাত আদায় কর এবং রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আনুগত্য কর। আশা করা যায়, তোমরা (পূর্ণ) রহ্মত প্রাপ্ত হবে। তোমরা কাফিরদের সম্পর্কে এটা ধারণা করোনা যে, তারা জমিনে পরাক্রমশীল, তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম, আর নিশ্চয়ই তাদের প্রত্যাবর্তন স্থল অত্যন্ত নিকৃষ্ট।” (সূরা নূর/-৫৫, ৫৬, ৫৭)

উপরোক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, খিলাফত তখনই আসতে পারে যখন সকলেই খালিছ ঈমানদার, নেককার ও পরহিযগার হবে। কাজেই যদি তাই হয়ে থাকে তবে ইসলামের নামে গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন, বেপর্দা হওয়া, ছবি তোলা, হরতাল, লংমার্চসহ অসংখ্য হারাম কাজ করে খিলাফতের স্বপ্ন দেখা  কি করে গ্রহনযোগ্য হতে পারে?

মূলকথা হলো, আল্লাহর যমীনে খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হোক এটা যদি কেউ চায় তবে তাকে অবশ্যই খালিছ ঈমানদার তথা প্রতিটি ক্ষেত্রে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী হতে হবে। নেককার পরহিযগার তথা প্রতিক্ষেত্রে শরীয়তের পাবন্দ হতে হবে এবং শরীয়তের দৃষ্টিতে শরয়ী পদ্ধতিতে শরীয়তের গন্ডির ভিতরে থেকেই খিলাফতের জন্য কোশেশ করতে হবে। কোন অবস্থাতেই বেদ্বনী-বদদ্বীনী, হারাম, নাজায়িয পন্থায় কোশেশ করা যাবে না।

“ইসলামে বোমাবাজি ও জঙ্গী তৎপরতা চালানো হারাম। বোমাবাজি, সন্ত্রাসী ও বেদ্বীনী পন্থায় কখনো ইসলাম আসেনি এবং আসবেনা।”

কারণ গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন, হরতাল, লংমার্চ, বোমাবাজী, সন্ত্রাসী এ সকল বেদ্বীনী ও শরীয়ত বিরোধী পন্থায় কখনো ইসলাম আসে নাই। এবং আসবেও না। বরং এগুলো সবই ইসলামের ক্ষতির কারণ। আল্লাহ পাক বলেন,

ولا تطع الكفرين والمنفقين.

অর্থঃ “তোমরা কাফির ও মুনাফিক তথা বেদ্বীন-বদদ্বীনদেরকে অনুসরণ করোনা।” (সূরা আহযাব-৪৮)

আল্লাহ পাক আরো বলেন,

لاتفسد وا فى الارض

অর্থঃ “তোমরা (হরতাল, লংমার্চ, বোমাবাজী, সন্ত্রাসীর) মাধ্যমে যমীনে ফিৎনা সৃষ্টি করো না।”ঞ্জ (সূরা বাক্বারা-১১)

হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

ا يذ اء المسلم كفر.

অর্থাৎ, মুসলামনকে কষ্ট দেয়া কুফরী।”

কাজেই গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন, হরতাল, লংমার্চ, বোমাবাজী, সন্ত্রাসী এগুলো সবই ফিৎনার মূল এবং মুসলমানদেরকে কষ্ট দেয়ার কারণ বিধায় তা হারাম এবং এগুলোর মাধ্যমে খিলাফত কায়িমের কোশেশ করাও হারাম।

এখন কেউ প্রশ্ন করতে পারেন যে, তাহলে খিলাফতের জন্য কোশেশ করার শরীয়ত সম্মত পন্থা  কোনটা?

এ প্রশ্নের জবাবে আমরা সংক্ষেপে বলতে চাই যে, বর্তমানে কেউ যদি ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তবে তাকে “খিলাফত আলা মিন্ হাজিন্ নুবুওওয়াহ” অর্থাৎ নুবুওওয়াতের দৃষ্টিতে খিলাফতের জন্য কোশেশ করতে হবে। আর খিলাফত কায়েমের জন্য মজলিসে শুরা করতে হবে। মজলিসে শুরার প্রধান তিনিই হবেন, যিনি সবচেয়ে বেশী তাক্ওয়াধারী হবেন। আল্লাহ্ পাক বলেন,

ان اكرمكم عند الله اتقكم

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক-এর নিকট ঐ ব্যক্তি সব চাইতে সম্মানিত, যিনি তোমাদের মধ্যে তাক্ওয়াধারী বা পরহেযগার।” (সূরা হুজুরাত-১৩)

          আর যিনি ইল্ম, আমল, ইখলাছ অর্থাৎ প্রতিটি বিষয়ে তাক্মীলে (পূর্ণতায়) পৌঁছেছেন, তিনিই হাক্বীক্বী তাক্ওয়াধারী।

অর্থাৎ খলীফা হতে হলে- (১) মুসলমান হওয়া, (২) আক্বেল হওয়া, (৩) বালেগ হওয়া, (৪) পুরুষ হওয়া, (৫)স্বাধীন হওয়া, (৬) বাকশক্তি সম্পন্ন হওয়া, (৭) শ্রবণ শক্তি সম্পন্ন হওয়া, (৮) দৃষ্টি শক্তি সম্পন্ন হওয়া, (৯) সাহসী ও শক্তি সম্পন্ন হওয়া, (১০) আদেল বা পরহেযগার হওয়া, (১১) মুজতাহিদ হওয়া, (১২) কুরাঈশ হওয়া ইত্যাদি শর্ত পুরা হওয়া আবশ্যক। কেননা হাদীছ শরীফ ইরশাদ  হয়েছে,

الائمة من قر يش.

অর্থাৎ খলীফা হবেন কুরাঈশ বংশীয়। (মিশকাত)

সুতরাং যিনি উপরে বর্ণিত খলীফা হওয়ার সমস্ত শর্তের অধিকারী হবেন। তিনিই মূলত আওয়ামুন্নাছ বা জনসাধারণকে খিলাফতের বিপরীতে যতসব মত-পথ, নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীকা চালু রয়েছে তা থেকে সরিয়ে খিলাফতের কার্যক্রমের দিকে ধাবিত ও চালিত করবেন।

          স্মরণীয় যে, খিলাফতের প্রাথমিক কার্যসমূহ হচ্ছে সাধারণ মানুষের আক্বীদা বিশুদ্ধ করা। তাদেরকে আমলের দ্বারা সূসজ্জিত করা এবং ইখলাছের দ্বারা সৌন্দর্য মন্ডিত করা।

          এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেন,

وعد الله الذ ين امنوا منكم وعملوا الصلحت ليستخلفنهم فى الا رض كما استخلف الذ ين من قبلهم وليمكنن لهم د ينهم الذى ارتضى لهم وليبد لنهم من بعد خو فهم امنا يعبد و ننى لا يشر كون  بى شيئا ومن كفر بعد ذلك فاو لئك هم  الفسقون. واقيموا الصلوة واتوا الز كوة وا طيعوا الر سول لعلكم تر حمون. لا تحسن الذ ين كفروا معجزين فى الارض وما وهم النار ولبئس المصير.

অর্থঃ “আল্লাহ্ পাক ওয়াদা দিয়েছেন যে, তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছেন এবং আমলে ছলেহ করেছেন, তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে খিলাফত (শাসন কর্তৃত্ব) দান করবেন। যেমন তিনি তাদের পূর্ববর্তীদেরকে খিলাফত দিয়েছিলেন এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের জন্য তাদের দ্বীনকে, যে দ্বীন তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং নিশ্চয়ই তিনি তাদের ভয়ভীতির পরিবর্তে আসান (নিরাপত্তা) দান করবেন এ শর্তে যে, তারা আমার ইবাদত বন্দেগী করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না। আর এর পর যারা অস্বীকার করবে, তারাই ফাসেক। তোমরা নামাজ কায়েম কর এবং যাকাত আদায় কর এবং রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আনুগত্যতা প্রকাশ কর। আশা করা যায়, তোমরা (পূর্ণ) রহ্মত প্রাপ্ত হবে। তোমরা কাফিরদের সম্পর্কে এটা ধারণা করোনা যে, তারা জমিনে পরাক্রমশীল, তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম, আর নিশ্চয়ই তাদের প্রত্যাবর্তন স্থল অত্যন্ত নিকৃষ্ট।” (সূরা নূর/-৫৫, ৫৭)

          উপরোক্ত আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক ওয়াদা দিয়েছেন যারা খালেছভাবে ঈমান আনবে এবং খালেছ আমলে ছলেহ্ করবে, তাদেরকে খিলাফত দান করবেন। যেমন পূর্ববর্তীগণকে দান করেছেন। আর শুধু তাই নয়, সাথে সাথে দ্বীনী মজবুতী দান করবেন, ভয়ভীতি দূর করে নিরাপত্তা দান করবেন। আর এ খিলাফত কায়েম থাকবে আল্লাহ্ পাক-এর ইবাদত-বন্দেগীতে দায়েম-কায়েম থাকলে এবং কোন বিষয়ে আল্লাহ্ পাক-এর সাথে কাউকে শরীক করা যাবে না। আর বিশেষ করে শাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে আল্লাহ্ পাক-এর প্রদত্ত আইনের সাথে অন্য কারো প্রণীত আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি (গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র, মাওবাদ, লেনিনবাদ, মার্কসবাদ ইত্যাদি), মিশ্রিত করে শরীক করা যাবে না। আর যে এর খেলাফ (বিপরীত) করবে, সে গোমরাহ্ হয়ে যাবে।

          কাজেই প্রত্যেক ব্যক্তির উচিৎ নামাজ কায়েম, যাকাত আদায় এবং আল্লাহ্ পাক-এর রাসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণের ইত্তেবার দ্বারা খিলাফত কায়েমের কোশেশের মাধ্যমে রহ্মত হাছিল করা।

          আর এটা যেন কোন মুসলমানই কখনো ঘুর্নাক্ষরেও চিন্তা না করে যে, কাফির, ফাসেক, জালেমরা পৃথিবীতে প্রতাপশালী, ক্ষমতাশালী, আধিপত্য বিস্তারকারী হয়ে গেছে, তাই তাদের নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীকা ব্যতীত খিলাফত কায়েম করা সম্ভব নয়-  অবশ্যই সম্ভব। কারণ তারা আল্লাহ্ পাক-এর নিকট মনোনীত, পছন্দনীয়, প্রিয় নয়, তাই তাদের অবস্থানস্থল করা হয়েছে জাহান্নাম।

          অতএব যদি কেউ বিশ্বাস করে বা মনে করে যে, কাফির, মুশরিক, বেদ্বীনদের তর্জ-তরীকা, নিয়ম-নীতি অনুযায়ী কোশেশ করেই খিলাফত কায়েম করতে হবে অন্যথায় কায়েম করা সম্ভব নয়। তাহলে সে কাট্টা কাফির হবে।

মুল কথা হলো উপরোক্ত বিস্তারিত ও দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, ইসলামের নামে যেহেতু গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন, হারাম তাই এগুলোর মাধ্যমে খিলাফত কায়িমের কোশেশ করাও হারাম। খিলাফত ক্বায়িমের জন্য ‘খিলাফত আলা মিন হাজিন নুবুওওয়াহ’ অর্থাৎ নুবুওওয়াতের দৃষ্টিতে খিলাফতের জন্য কোশেশ করতে হবে। যা ফরযে আইন নয়, বরং ফরযে কিফায়া। বোমাবাজী সন্ত্রাসী ও বেদ্বীনী পন্থায় কখনো ইসলাম আসেনি এবং আসবেওনা। তাই বোমাবাজি ও সন্ত্রাসীর মাধ্যমে ইসলাম ক্বায়িম এর কোশেশ করাও হারাম ও কুফরী।

অসমাপ্ত

পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ