সাইয়্যিদ মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন, ঢাকা
মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন, মুহম্মদপুর, ঢাকা
মুহম্মদ ছিদ্দীকুল আলম, চান্দিনা, কুমিল্লা
মুহম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, শালিখা, মাগুরা
মুহম্মদ আফতাবুদ্দীন, কোনাবাড়ী, গাজিপুর
মুহম্মদ মুহসিনুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
মুহম্মদ হারুনূর রশীদ, মাহিগঞ্জ, রংপুর
শাফিয়ী আহমদ, রাজারহাট, কুড়িগ্রাম
মুহম্মদ সদরুল আমীন গোলাপগঞ্জ, সিলেট
মুহম্মদ আশাদুজ্জামান, পলাশবাড়ী, গাইবান্ধা
মুহম্মদ আশফাকুর রহমান, সিংড়া, নাটোর
মুহম্মদ ইছহাকুর রহমান, কসবা, বি.বাড়িয়া
মুহম্মদ শফিকুছ্ ছালেহীন, মতলব, চাঁদপুর
মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান, প্রভাকরদী, এন.গঞ্জ
মুহম্মদ হারিছুর রহমান, রাজপাড়া, রাজশাহী
মুহম্মদ কাওছার হুসাইন, বানারীপাড়া, বরিশাল
মুহম্মদ হাদীউল ইসলাম, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম
মুহম্মদ কামরুজ্জামান, কুটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ
মুহম্মদ আবুল কাশেম, আক্কেলপুর, জয়পুরহাট
মুহম্মদ হাবীবুল্লাহ, কালীহাতি, টাঙ্গাইল
সুওয়াল:
বর্তমান সময় যে সমস্ত “সংসদ নির্বাচন” অনুষ্ঠিত হয়। তাতে অন্যান্য দলগুলোর মতো নামধারী ইসলামী দলগুলোও সক্রিয়ভাবে উক্ত নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে তথা প্রার্থী দেয়। ইসলামের নামে যারা নির্বাচনে অংশ নেয় তারা সাধারণতঃ প্রচার করে থাকে যে, গণতন্ত্র আর ইসলাম একই বিষয় এবং তারা যে গণতন্ত্র করছে, সেটা হচ্ছে ইসলামী গণতন্ত্র। তারা গণতন্ত্রের ভিত্তি ভোটকে আমানত, শুপারিশ, উকিল নিয়োগ, স্বাক্ষ্য ইত্যাদি বলে প্রচার করে থাকে।
কেউ কেউ আবার ইসলামী দলকে ভোট দেয়া ফরয-ওয়াজিব বলে থাকে। আরো বলে থাকে যে, ইসলামী দলের প্রার্থীকে ভোট দিলে জান্নাতের টিকেট পাওয়া যাবে। যেমন জামাত নেতারা কিছুদিন পূর্বে একটি দৈনিক পত্রিকার সাক্ষাতকারে বলেছে, ইসলাম ও গণতন্ত্র একই বিষয়।
বায়তুল মুকাররমের খতীব ওবায়দুল হক বলেছে, “ভোট দেয়া আল্লাহ পাক-এর নির্দেশ অর্থাৎ ফরয। আল্লাহ পাক বলেন, ভোট একটি আমানত। আল্লাহ পাক-এর হাবীব বলেছেন, সৎ লোককে ভোট দিতে হবে।” (দৈনিক সংগ্রাম ১লা জুলাই-২০০৬)
মাহিউদ্দিন খান তার মাসিক মদীনা ডিসেম্বর/৯৯ সংখ্যায় নির্বাচন ভিত্তিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোট দান সম্পর্কিত একটি প্রশ্নের উত্তরে লিখেছে, (ক) ছহীহ্ অর্থে মুসলমানদের প্রকৃত শাসক হচ্ছে পবিত্র কুরআন এবং রসূলের সুন্নাহ্। (খ) প্রচলিত যে কোন শাসন ব্যবস্থায় যদি কুরআন-সুন্নাহ্র প্রাধান্য মেনে নেয়া হয় তবে তা মুসলিম জনগণ বিনা দ্বিধায় মেনে নিতে পারেন। (গ) ভোটের মাধ্যমে নেতা বা শাসক নির্বাচনের বর্তমান যে পদ্ধতি এটা অংকুরিত হয়েছে, ইসলামী শুরা পদ্ধতির মধ্য থেকে। সুতরাং এই পদ্ধতিতে ভোটের রাজনীতি ইসলামে বৈধ নয় এ কথা বলা যাবে না। (ঘ) এ যুগের ভোট প্রদান বাইয়াতের বিকল্প বিবেচিত হতে পারে।
অনুরূপ হাটহাজারী খারেজী মাদ্রাসার মুখপত্র মাসিক মুহীনুল ইসলামের সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর’ ০৬ সংখ্যায়ও ভোট-নির্বাচন সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছে, (ক) গণতন্ত্র বা নির্বাচন দুই প্রকার। (১) পাশ্চত্য গণতন্ত্র বা নির্বাচন। (২) ইসলামী গণতন্ত্র বা নির্বাচন। (খ) খুলাফায়ে রাশেদীন ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছিলেন (গ) পদপ্রার্থী হওয়া জায়িয। (ঘ) কুরআন সুন্নাহয় ভোটকে স্বাক্ষী, আমানত, সুপারিশ ও প্রতিনিধি নিয়োগ বলে উল্লেখ করা হয়েছে ইত্যাদি অনেক ভুল তথ্য তারা উল্লেখ্য করেছে। পটিয়া খারেজী মাদ্রাসার মুখপত্র “আত্ তাওহীদ” ডিসেম্বর/৯৬, জানুয়ারী/৯৭, জুলাই-আগস্ট/৯৭
সংখ্যায় ভোট-নির্বাচন এমনকি ভোট বেচা-কেনা করাকেও জায়িয ফতওয়া দিয়েছে।
আর উল্লিখিত বিষয়ে তাদের নিকট দলীল তলব করলে তারা সাধারণতঃ মুফতী শফীর মা’য়ারিফুল কুরআন ও ভোটের ইসলামী শরয়ী বিধান এবং শামসুল হক ফরীদপুরী ছাহেবের বক্তব্য তুলে ধরে বলে থাকে যে, তারা ভোটকে জায়িয বলেছেন। এখন আমাদের জানার বিষয় হলোঃ
১৭। যে সকল কথিত মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিছ, মুফাচ্ছির, শাইখুল হাদীছ, খতীব, পীর, আমীর ইসলামের নামে গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন করছে, ভোটকে আমানত, স্বাক্ষ্য ফরয-ওয়াজিব বলছে এবং ক্ষমতার লোভে বাতিলের সাথে আতাত করছে তারা হক্কানী আলিম কিনা? তাদের পিছনে নামায পড়া জায়িয কিনা? তাদের ব্যাপারে শরীয়তের ফায়ছালা কি?
উপরোক্ত প্রতিটি বিষয় দলীলভিত্তিক বিস্তারিত জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান-আক্বীদা ও আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদি।
জাওয়াবঃ
ইসলামের নামে বা ইসলামের দোহাই দিয়ে গণতন্ত্র, ভোট, নিবার্চন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া, নিজ দলকে ভোট দেয়া ওয়াজিব ও জান্নাতের টিকেট লাভের কারণ বলা এবং ভোটকে আমানত, সুপারিশ, স্বাক্ষ্য ইত্যাদি বলা সম্পূর্ণ হারাম ও কুফরী। এটাই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস তথা শরীয়তের চুড়ান্ত, ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া।
অতএব, বলার অপেক্ষা রাখে না যে, গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন ও পদপ্রার্থী হওয়া সম্পর্কিত তথাকথিত খতীব উবায়দুল হক, নিজামী, আহমদ শফী, মাহিউদ্দীন, আমিনী ও আযীযূল হক- ওহাবী, দেওবন্দী ও জামাতীগংদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের খিলাফ বিধায় তা ভুল, অশুদ্ধ, জিহালতপূর্ণ দলীলবিহীন ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
নিম্নে পর্যায়ক্রমে সুওয়ালে উল্লেখিত তাদের প্রতিটি বক্তব্যের খ-নমূলক জাওয়াব প্রদান করা হলো।
(১৭)
যে সকল মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিছ, মুফাচ্ছির, শাইখুল হাদীছ, খতীব, পীর, আমীর ইসলামের নামে গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন করছে, ভোটকে আমানত, স্বাক্ষ্য ফরয-ওয়াজিব বলছে তাদের ব্যাপারে শরীয়তের ফায়ছালা কি?
এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, যেহেতু কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের অকাট্য ও অসংখ্য নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে প্রমাণিত হয়েছে যে, ইসলামের নামে গণতন্ত্র, ভোট-নির্বাচন করা ও ভোটকে আমানত, স্বাক্ষ্য, ওয়াজিব বলা হারাম ও কুফরী। তাই যে সকল মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিছ, মুফাচ্ছির, শাইখুল হাদীছ, খতীব, পীর, আমীর ইসলামের নামে গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন করছে, ভোটকে আমানত, স্বাক্ষ্য ফরয-ওয়াজিব বলছে তারা কস্মিনকালেও হক্কানী আলিম নয় বরং উলামায়ে ‘ছূ’ বা দুনিয়াদার আলিম।
কারণ, আলিম হওয়ার জন্য প্রথমত: শর্ত হলো ঈমান দ্বিতীয়ত: শর্ত হলো তাক্বওয়া। তৃতীয়ত: শর্ত হলো অর্জিত ইলম্ অনুযায়ী আমল।
যেমন এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
الا ان اولياء الله لاخوف عليهم ولا هم يحزنون. الذين امنوا وكانوا يتقون.
অর্থঃ সাবধান! তোমরা জেনে রাখ, “নিশ্চয়ই ওলীআল্লাহ তথা আলিমগণের কোন ভয় নেই এবং তাঁদের কোন চিন্তাও নেই। তাঁদের পরিচয় হচ্ছে যারা ঈমান এনেছেন এবং তাক্বওয়া অবলম্বন করেছেন।” (সূরা ইউনুস-৬২, ৬৩)
অর্থাৎ এখানে ওলীআল্লাহ বা আলিম হওয়ার জন্য ঈমান আনাকে প্রথম শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
দ্বিতীয়ত: আলিম ঐ ব্যক্তিই যার অন্তরে তাক্বওয়া বা খোদাভীতি রয়েছে। অর্থাৎ যিনি আল্লাহ পাক-এর ভয়ে হারাম, নাজায়িয কাজ থেকে বিরত থাকেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন,
انما يخشى الله من عباده العلماء.
অর্থঃ “নিশ্চয় আল্লাহ পাক-এর বান্দাদের মধ্য হতে শুধুমাত্র আলিমগণই আল্লাহ পাককে ভয় করেন।” (সূরা ফাতির-২৮)
তৃতীয়তঃ ঐ ব্যক্তিই হাক্বীক্বী আলিম যিনি অর্জিত ইলম্ অনুযায়ী পরিপূর্ণ আমল করেন। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن سفيان ان عمر بن الخطاب رضى الله تعالى عنه قال لكعب من ارباب العلم قال الذين يعملون بما يعلمون قال فما اخرج العلم من قلوب العلماء قال الطمع.
অর্থঃ “হযরত সুফইয়ান ছওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত কা’ব ইবনুল আহ্বার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞাসা করলেন, আলিম কে? তিনি উত্তরে বললেন, যাঁরা ইল্ম অনুযায়ী আমল করেন। হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পুণরায় জিজ্ঞাসা করলেন, কোন্ জিনিস আলিমদের অন্তর থেকে ইল্ম্কে বের করে দেয়? তিনি উত্তরে বললেন, লোভ অর্থাৎ দুনিয়ার সম্পদ, সম্মান ইত্যাদি হাছিলের আকাঙ্খা।” (দারিমী, মিশকাত)
বিশিষ্ট তাবিয়ী, ইমামুশ্ শরীয়ত ওয়াত্ তরীক্বত ইমাম হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে জিজ্ঞাসা করা হলো- আলিম কে? তিনি জবাবে বলেন,
انما الفقيه الزاهد فى الدنيا والراغب الى الاخرة والبصير بذنبه والمداوم على عبادة ربه والورع والكاف عن اعراض المسلمين والعفيف عن اموالهم والناصح لجماعتهم.
অর্থঃ “ফক্বীহ্ বা আলিম হলো ঐ ব্যক্তি, যে দুনিয়া হতে বিরাগ, পরকালের প্রতি ঝুঁকে আছেন, গুণাহের প্রতি সতর্ক, সর্বদা মহান আল্লাহ্ পাক-এর ইবাদতে মশগুল, পরহিযগার বা সুন্নতের পাবন্দ, মুসলমানের মান-সম্মান নষ্ট করেন না, তাদের সম্পদের প্রতি লোভ করেন না এবং তাঁর অধীনস্থদেরকে নছীহত করেন।” (হিল্ইয়াতুল আওলিয়া)
উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝা গেলো, আলিম হওয়ার জন্য প্রথমত: শর্ত হলো ঈমান আনা অর্থাৎ আক্বীদা শুদ্ধ রাখা। দ্বিতীয়ত: শর্ত হলো তাক্বওয়া অবলম্বন করা। অর্থাৎ সুন্নতের অনুসরণ করা। তৃতীয়ত: শর্ত হলো অর্জিত ইলম্ অনুযায়ী আমল করা।
অথচ উল্লিখিত মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিছ, শাইখূল হাদীছ, খতীব, পীর, আমীর যারা ইসলামের নামে গণতন্ত্র, ভোট-নির্বাচন করে তাদের কারো ঈমান বা আক্বীদা শুদ্ধ নয়, সুন্নতের আমল বা তাক্বওয়াও তাদের মধ্যে নেই এবং তারা অর্জিত ইলম অনুযায়ী আমলও করে না। বরং যা বলে তার বিপরীত কাজ করে।
যেমন- আজকে যারা ইসলামের নামে গণতন্ত্র, ভোট-নির্বাচন করছে, ছবি তুলছে, নারী নেতৃত্ব মানছে তারাই পূর্বে তাদের কিতাব ও পত্র-পত্রিকায় এগুলোকে হারাম বলে ফতওয়া দিয়েছে। নিম্নে এর কিছু প্রমাণ পেশ করা হলো-
গণতন্ত্র সম্পর্কে উলামায়ে “ছূ”দের পূর্বের ফতওয়া
“পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মুহম্মদ আলী জিন্নাহ। রাজনৈতিক জীবনের প্রথম পর্বে সে ছিলো ভারতীয় জাতীর কংগ্রেস নেতা নওরোজীর শিষ্য। কংগ্রেসের স্বার্থের প্রহরী। জিন্নাহ তখন মুসলমানদের জন্যে স্বতন্ত্র নির্বাচন ব্যবস্থা সমর্থন করতো না। মুসলিমলীগের গোড়ার দিকে সে তার সাথে সম্পৃক্ত ছিলোনা। নিজে গঠন করেছিলেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট পার্টি। লন্ডনে পাকিস্তানের প্রবক্তা রহমত আলী তাকে এক ডিনারে দাওয়াত দিয়ে পাকিস্তানের উদ্যোক্তা হতে বলে। জিন্নাহ তখন বলেছিলো, ওটা একটা অবাস্তব স্বপ্ন।”
এদিকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট পার্টি সুবিধা করার পরিবর্তে মুসলিমলীগই মুসলিম স্বার্থের প্রচারণা চালিয়ে আলোড়ন তৈরীতে সক্ষম হয়। ওদিকে কংগ্রেসে বাঘা বাঘা নেতৃত্বে ঠাসা থাকায় তাতে স্বকীয় গৌরব অর্জনে বাধাগ্রস্ত হন জিন্নাহ। ফলতঃ সে যে শুধু মুসলীম লীগেই যোগ দেয় তা নয়। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্তরে কংগ্রেসকে একক সরকার গঠনে কংগ্রেসের আধিপত্য দেখে অবশেষে সে পাকিস্তানের উদ্যোক্তা হওয়ার ‘না’ অবস্থান থেকে সরে আসে। অর্থাৎ ধর্ম, মুসলমান বা ইসলাম নয় নিছক নেতৃত্ব আর রাজনৈতিক স্বার্থেই জিন্নাহ পাকিস্তানের প্রচারণা চালিয়েছে।
উল্লেখ্য, পাশ্চাত্য বিলাসী জিন্নাহ তার পাশ্চাত্য তর্জ-তরীক্বা ও লাল পানি গ্রহণের অভ্যাস বজায় রেখেই মুসলিম নেতৃত্বের পদ দখল করেছিলো।
পাশাপাশি এরূপ ক্ষমতালোভী ছিলেন আরেকজন। পাশ্চাত্য ঢংয়ে আর চান্স পাওয়া যাবেনা ভেবে সে অবশ্য পাশ্চাত্য আচ্ছাদন ছেড়ে ইসলামী খোলস ধরেছিলো। (তার স্যুট-প্যান্ট-কোর্ট পরিহিত ছবিগুলি সেই প্রমাণই বহন করে।) নামের আগে মাওলানা প্রচার করেছিলো। কিন্তু স্বার্থগত প্রবণতার দ্বারা পারিচালিত হওয়ায় জিন্নাহ্র মতই বারবার নিজ অবস্থান থেকে সরে আসছিলো।
জামাত নেতা মওদুদীর মতে গণতন্ত্র
মওদুদী তার দল প্রতিষ্ঠা করে ১৯৪১ সালে মুসলিমলীগ ও কংগ্রেসের বিরোধিতা করে। সে পাকিস্তান নামের একটি রাষ্ট্র হলে তা হবে অনৈসলামিক এবং কুফরী বলে ফতওয়া দেয়। মওদুদী তখন আরো ফতওয়া দিয়েছিলো, “গণতান্ত্রিক নির্বাচন করা, গণতান্ত্রিক পার্লামেন্টে নির্বাচন করা হারাম।” এ প্রসঙ্গে তার “রাসায়েল ও মাসায়েল” -এর ১ম খণ্ডের ২৬২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
“প্রশ্নঃ মোটামুটিভাবে যদিও একথা জানি, মানুষের সার্বভৌমত্বের মতবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত পার্লামেন্ট এবং তার সদস্য পদ দু’টোও শরীয়তের দৃষ্টিতে অবৈধ। কিন্তু এ ব্যাপারে যতোক্ষণ না যুক্তিসংগত কারণ দেখাতে পারছি, ততোক্ষণ ভোট দানের দাবী থেকে রেহাই পাওয়া কঠিন। মোটামুটিভাবে এ ব্যাপারেও নাজায়েযের পক্ষেই আমার মত। কিন্তু আমার সামনে সুস্পষ্ট দলীল প্রমাণ নেই।
জবাবঃ নীতিগতভাবে একথা স্পষ্টই জেনে নিন যে, বর্তমানকালে যতগুলো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে (যেগুলোর একটি শাখা বর্তমান ভারতীয় পার্লামেন্ট), সেগুলো এ বৈশিষ্ট্যের উপরই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, নাগরিকরা তাদের নিজেদের যাবতীয় পার্থিব বিষয় সম্পর্কে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নৈতিক যাবতীয় নীতিমালা এবং সেগুলোর উপর বিস্তারিত আইন প্রণয়নের অধিকার নিজেদেরই মুষ্ঠিবদ্ধে রাখে।
এ ব্যবস্থার আইন প্রণয়নের জন্যে জনমতের চাইতে উচ্চতর কোনো সনদের প্রয়োজন হয়না। এ মতবাদ ইসলামী মতাদর্শের সম্পূর্ণ বিপরীত।
ইসলামে তাওহীদী আক্বীদার এক অবিচ্ছেদ্য অংগ হচ্ছে, সকল মানুষ এবং গোটা দুনিয়ার মালিক হচ্ছেন আল্লাহ পাক। হুকুম ও বিধানকর্তা একমাত্র আল্লাহ পাক। হেদায়েত এবং হুকুম দান শুধুমাত্র তাঁরই কাজ। আর মানুষের কাজ হলো, তারা তাঁরই হেদায়েত এবং ফরমান থেকে নিজেদের জন্যে আইন-কানুন গ্রহণ করবে।
স্বাধীনতা কেবল সেটুকুই অবলম্বন করবে, যেটুকু স্বয়ং আল্লাহ পাকই তাদের প্রদান করেছেন। এই মতাদর্শের দৃষ্টিতে যাবতীয় আইন ও বিধানের উৎস এবং যিন্দিগীর সকল বিষয়ের নির্দেশিকা হলো আল্লাহ পাক-এর কিতাব এবং তাঁর রসূলের সুন্নাহ।
এই মতাদর্শ থেকে দূরে সরে প্রথমোক্ত গণতান্ত্রিক মতবাদ গ্রহণ করা যেনো তাওহীদী আক্বীদা থেকে বিচ্যুত হওয়া। এ জন্যে আমি বলছি, যেসব আইন সভা বা পার্লামেন্ট বর্তমানকালের গণতান্ত্রিক আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত, সেগুলোর সদস্যপদ হারাম এবং এর সদস্য পদের জন্যে ভোট দেয়াও হারাম। কেননা, ভোট দেয়ার অর্থই হচ্ছে, আমরা আমাদের রায় দ্বারা এমন এক ব্যক্তিকে নির্বাচিত করছি, যার কাজ হবে বর্তমান প্রশাসন ও বিধানের অধীনে আইন প্রণয়ন ও আইন জারি করা, যা নাকি আক্বীদাগতভাবে সরাসরি তাওহীদের বিপরীত। যদি কোনো আলিম এটাকে বৈধ মনে করেন তবে তাঁর নিকট থেকেই এর স্বপক্ষে দলীল প্রমাণ দাবী করুন। আপনি এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে আমার লেখা ‘সিয়াসী কাশমাকাশ” ৩য় খ- এবং “ইসলামের রাজনৈতিক মতবাদ” গ্রন্থদ্বয় পাঠ করুন। এ ধরনের ব্যাপারে এটা কোনো দলীলই নয়, যেহেতু এ ব্যবস্থা আমাদের উপর চেপে রয়েছে এবং যেহেতু জীবনের সকল বিষয় এর সাথে সম্পর্কিত, সে জন্যে আমরা যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করি এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশ গ্রহণের চেষ্টা না করি তবে আমাদের অমুক অমুক ক্ষতি হয়ে যাবে।
যা মূলত হারাম, এ রকম দলীল প্রমাণ দ্বারা তা কোনো অবস্থাতেই বৈধ করা যেতে পারেনা। তাহলে তো শরীয়তের এমন কোন হারামই আর বাকী থাকবেনা সুবিধা ও প্রয়োজনের কারণে যাকে হালাল বানিয়ে নেয়া যাবেনা। বাধ্য হয়ে হারাম জিনিস ব্যবহারের অনুমতি শরীয়তে রয়েছে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, আপনি নিজে গাফলতি করে নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে বাধ্য হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করবেন। অতঃপর এটাকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে সমস্ত হারামকে নিজের জন্যে হালাল বানিয়ে নিতে থাকবেন এবং সেই ‘বাধ্য হওয়ার’ পরিবেশকে খতম করার জন্যে কোনো প্রচেষ্টা চালাবেন না, পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন না। এখন মুসলমানদের উপর যে রাষ্ট্রব্যবস্থা চেপে বসে আছে এবং যার চেপে বসাকে তারা নিজেদের জন্য ‘বাধ্য হবার’ দলীল বানাচ্ছে, তা তো তাদের নিজেদেরই গাফলতির পরিমাণ ফল! এখন সেখানে তাদের সবটুকু সময় যোগ্যতা ও শক্তি সামর্থের পুঁজিকে এ ব্যবস্থার পরিবর্তন সাধন এবং খালিছ ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিয়োজিত করা উচিত, সেখানে তারা এর পরিবর্তে বাধ্য হওয়াকে দলীল বানিয়ে এ বাতিল রাষ্ট্র ব্যবস্থার মধ্যে অংশীদার হবার এবং তাকে আরো মজবুত এবং স্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।” (মওদুদী লিখিত রাসায়েল ও মাসায়েল ১ম খ-, ২৬২ পৃষ্ঠা)
উল্লেখ্য, মওদুদীর উপরোক্ত জবাবের মূল কথা অনুযায়ী ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে যতগুলো নির্বাচন অথবা পার্লামেন্টারী নির্বাচন হয়েছে তার সবগুলোই হারাম হয়েছে এবং আগামীতেও যতগুলো পার্লামেন্টারী নির্বাচন হবে সবই হারাম হবে।
এতদ্বপ্রেক্ষিতে বলতে হয়, জামাত অতীতের তো বটেই এমনকি সাম্প্রতিক ১৯৯৬, ২০০১ এ যে নির্বাচন করেছে এবং আগামী ২০০৭ এ যে সংসদীয় নির্বাচন করবে তা শক্ত হারাম ও কুফরী হবে।
অর্থাৎ জামাত প্রতিষ্ঠাতা মওদুদীর ফতওয়া অনুযায়ী জামাত পূর্ববর্তীতেও হারাম সংসদীয় নির্বাচন করেছে, হারাম সাংসদ হয়েছে এবং আগামীতেও তারা তাই করতে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে তারা মওদুদী বিবৃত আল্লাহ পাক-এর তাওহীদকে অস্বীকার করছে এবং ‘সংসদীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে ক্ষতি হয়ে যাবে’- একথা যে সম্পূর্ণই অমূলক ও গোমরাহী, মওদুদী নির্দেশিত সে কথাকে থোড়াই কেয়ার করছে। মওদুদীকে ঘোরতর উপেক্ষা করছে, অবমাননা করছে।
উল্লেখ্য, শুধু মওদুদীই নয়, আজকের সাঈদী ওরফে বাংলার ইহুদী খ্যাত অনেক জামাত নেতারই লিখনী ও ওয়াজে রয়েগেছে গণতন্ত্র হারাম-এ ফতওয়া। কিন্তু তারপরেও তারাই আজ গণতন্ত্রী সেজে গণতন্ত্রের জয়গান ঘোষণা করছে।
মূলতঃ এটা হলো, মুনাফিকীর জ্বাজ্বল্য এবং নিকৃষ্ট উদাহরণ। অবশ্য জামাত প্রতিষ্ঠাতা মওদুদী স্বয়ং এই মুনাফিকীর পিতা। কারণ, নির্বাচন হারাম, গণতন্ত্র হারাম বলে প্রকাশ্যে বহুবার ফতওয়া দিলেও তিনি স্বার্থগত কারণে পরে যে শুধু গণতন্ত্র আর নির্বাচন হালাল করেছেন তাই নয়।
এমনকি নারী নেতৃত্বও হালাল করেছেন এবং তার পক্ষে সাফাই গেয়েছেন, জোরদার তৎপরতা চালিয়েছেন।
দেওবন্দীদের মতে গণতন্ত্র
রসূন কোয়া কোয়া। কিন্তু সব রসূনের গোড়া যেমন এক তেমনি দেওবন্দিরা কেউ পীর ছাহেব, কেউ তাবলীগি, কেউ মুফতী, কেউ শাইখুল হাদীছ ইত্যাদি নামে থাকলেও আসলে সবার গোড়া তথা মতাদর্শ একই।
একথা তারাও স্বীকার করে থাকে। শুধুমাত্র রাজনৈতিক তৎপরতায় কিছু ভিন্নতা আছে বলে তারা প্রচারও করে থাকে। তবে রাজনৈতিক তৎপরতার ক্ষেত্রেও একটি বিষয়ে, জোট সরকারের অংশীদার হওয়ার পূর্বেও তাদের ঐক্যমত্য ছিলো। তাহলো- ‘ইসলামের দৃষ্টিতে গণতন্ত্র হারাম।’
তথাকথিত শাইখুল হাদীছ থেকে তথাকথিত মুফতী আমিনী সবাই একথা বলেছেন। এমনকি এখনও অনেক ক্ষেত্রে বলছেন। যদিও জোট সরকার প্রধানের কাছে গিয়ে তারা সেকথা বেমালুম চেপে যাচ্ছেন। কিন্তু তাদের লিখনী, পত্রিকা এমনকি কিতাবে এখনও সেকথা জ্বলজ্বল।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ করা যায়, তথাকথিত শাইখুল হাদীছ আজিজুল হক্বের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশিত পত্রিকা রহমানি পয়গাম। উক্ত রহমানী পয়গাম পত্রিকায় গণতন্ত্রকে ইসলামের দৃষ্টিতে একটি হারাম, কুফরী ও শিরেকী মতবাদ আখ্যা দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, তখন তথাকথিত শাইখুল হাদীছের শাইখী রুমালের মধ্যে আজকের কমিনী, মাহিউদ্দীন, ইজহার গং সবাই ছিলো। অর্থাৎ তার ফতওয়া তখন সবারই ফতওয়া। যা আজকে ফতওয়া কিতাবাকারে ‘ফাতাওয়ায়ে রাহমানীয়া’ নামক কিতাবে ছাপা হয়েছে। এখানে তা উল্লেখ করা গেলোঃ
“…. প্রচলিত গণতন্ত্র সম্পর্কে ইসলামের বিধান
জিজ্ঞাসা: গণতন্ত্র একটি কুফুরীতন্ত্র, একথা সর্বস্বীকৃত। সে মতে বর্তমানে আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলি যাদের গণতন্ত্রের উপর পূর্ণ আস্থা রয়েছে। এই ভিত্তিতে তাদেরকে কাফির বলা যাবে কিনা? এবং সে সমস্ত দলগুলিকে ভোট দেয়া জায়িয হবে কিনা? যদি ভোট দেয় তাহলে গণতন্ত্রের সমর্থন করার কারণে তাদেরকে কাফির বলা যাবে কিনা? গণতন্ত্র যে কুফরী ঐ বিষয়ে কুরআন-হাদীছের আলোকে প্রমাণ জানতে ইচ্ছুক।
জবাব: গণতন্ত্রের দু’টি দিক রয়েছে। (এক) গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা, (দুই) গণতান্ত্রিক কর্মসূচী।
(এক) গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা: গণতান্ত্রিক চিন্তাধারায় জনগণকে ক্ষমতার মূল উৎস মনে করা হয়। সংখ্যাধিক্যের ভিত্তিতে জনতার যে কোন সিদ্ধান্ত এ তন্ত্র মতে চূড়ান্ত ও অপরিহার্য। এক কথায় সংখ্যাগরিষ্ঠের মতকে (নাউযুবিল্লাহ) খোদায়ী ফয়সালার উপর স্থান দেয়া হয়, যার কোন সিদ্ধান্তই অগ্রাহ্য করা যাবেনা।
শরীয়তের দৃষ্টিতে এসব চিন্তাধারা সবই হলো কুফরী চিন্তাধারা। যে ব্যক্তি বুঝে শুনে এসবের প্রতি আস্থাশীল হয় তার ঈমান চলে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। অবশ্য কেউ যদি গণতন্ত্রের এসব মূল মন্ত্র না জেনে অপরের দেখাদেখি গণতন্ত্রকে সমর্থন করে তাহলে সে কুফরী তন্ত্রের সমর্থনকারী হিসাবে মারাত্মক গুণাহ্গার হবে।
পাশ্চাত্য গণতন্ত্রের মূল মন্ত্রগুলো কুফরী হওয়ার প্রমাণ হলো যে, এগুলো কুরআন-হাদীছের স্পষ্ট বর্ণনার সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। নিম্নে কয়েকটি আয়াত শরীফ উল্লেখ করা হলো।
আল্লাহ পাক কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেন,
ان القوة لله جميعا.
“নিশ্চয়ই সকল ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তায়ালারই।” (সূরা বাক্বারা-১৬৫) অন্যত্র ইরশাদ ফরমান, ان الحكم الا لله.
“আল্লাহ তায়ালাই বিধানদাতা।” (সূরা ইউছূফ-৪০)
অপর আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন, “নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালার নিকট ধর্ম একমাত্র ইসলাম।” (সূরা আল ইমরান)
আরো ইরশাদ হচ্ছে, ومنيبتع الخ
“যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্ম তালাশ করে (গ্রহণ করে) কস্মিনকালেও তা মেনে নেয়া হবে না এবং আখিরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত।” (সূরা আলে ইমরান-৮৫)
অন্য আয়াত শরীফে ঘোষিত হচ্ছে,
وما كان لمؤمن ولا مؤمنة الخ
“আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন বিষয় নির্ধারণ করলে, কোন ঈমানদার নর-নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন মত অবলম্বনের অধিকার নেই। যে আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্যে পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়।” (সূরা আহযাব-৩৬)
(দুই) গণতান্ত্রিক কর্মসূচী:
(ক) গণতান্ত্রিক রাজনীতির কর্মসূচীর মধ্যে অন্যতম হলো ভোটের মাধ্যমে সংখ্যাধিক্যের ভিত্তিতে দেশের উচ্চ দায়িত্বশীল পদের নির্বাচন।
শরীয়তের দৃষ্টিতে গণভোটের এ পদ্ধতি সম্পূর্ণ অসাঢ় ও অযৌক্তিক। সুতরাং তা নাজায়িয। কুরআন শরীফের বহু আয়াত শরীফে এ পদ্ধতির অসাঢ়তা প্রমাণ করতঃ বিরোধিতা করা হয়েছে। যার কয়েকটি উল্লেখ করা হলোঃ
আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
وان تطع اكثر الخ
“আপনি যদি পৃথিবীর অধিকাংশের কথা মেনে নেন, তাহলে তারা আপনাকে আল্লাহ পাক-এর পথ থেকে বিপথগামী দকরে দিবে। তারা কেবল অলিক কল্পনার অনুসরণ করে এবং সম্পূর্ণ অনুমানভিত্তিক কথা বলে।” (সূরা আল আনআম-১১৬)
অন্য আয়াত শরীফে বর্ণিত হয়েছে,
وما يتبع اكثر هم الخ
তোমাদের অধিকাংশই শুধু অনুমানের উপর চলে, অথচ অনুমান সত্যের মোকাবেলায় কোন কাজেই আসে না।” (সূরা ইউনুছ-৩৬)
অপর আয়াত শরীফে বলেন, “আপনি বলে দিন, অপবিত্র ও পবিত্র সমান নয়, যদিও অপবিত্রের আধিক্য তোমাকে বিস্মিত করে।” (সূরা আল মায়িদা- ১০০)
উক্ত আয়াত শরীফসমূহের দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, জনগণের অধিকাংশ হবে মূর্খ, বোকা ও দায়িত্বহীন। আর প্রচলিত গণতন্ত্রে এদের অধিকাংশের রায়ের উপর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, সুতরাং তা নিশ্চিতভাবে ভুলই হবে। সুতরাং বাছ-বিচার ছাড়া সংখ্যাধিক্যকে মাপকাঠি বানালে তা সুনিশ্চিতভাবে ভ্রষ্ট হবে, বর্তমানে তাই হচ্ছে।
(খ) গণতন্ত্রের অন্যান্য কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে মিছিল, মিটিং, সভা, সেমিনার, প্রচার, বিজ্ঞাপন, বিবৃতি, হরতাল, বয়কট, অনশন, ধর্মঘট, অবরোধ ইত্যাদি।
এ সবের মধ্য হতে প্রচলিত হরতাল ও মিথ্যাবিবৃতি এবং আমরণ অনশন শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়িয নেই। এছাড়া অন্য সব কর্মসূচী মূলত বৈধ। তবে যদি নিছক দলীয় ও নেতৃত্বের লোভে করা হয় তাহলে তা জায়িয হবেনা। তেমনিভাবে কাউকে বা জনসাধারণকে অহেতুক কষ্ট দিয়ে কোন কর্মসূচী পালন করা হলে তাও জায়িয হবেনা। বরং তাতে গুণাহ্ হবে। (ফাতাওয়ায়ে রাহমানিয়া, ১ম খ-, ১৫৫-১৫৭ পৃষ্ঠা) …”
উল্লেখ্য, আজকের জোট সরকারের শরীকদার তথাকথিত শাইখুল হাদীছ, মুফতী আমিনী, নিজামী, সাঈদীগং সরকারকে এই বলে উত্তেজিত করতে চায় যে, আল বাইয়্যিনাতে গণতন্ত্র হারাম ফতওয়া দেয়া হয়েছে।
কিন্তু তারা বুঝেনা যে, পরের জন্য কুয়া খুঁড়লে নিজেকেই সে কুয়ায় পড়তে হয়। আল বাইয়্যিনাতের প্রতি অভিযোগ উত্থাপন করলে সে অভিযোগ তাদের দিকেই নিবদ্ধ হয়।
অসমাপ্ত
পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন