বুশ পরিবারের এই গৃহভৃত্য ধরা পড়েও ধরা পড়েনা আমেরিকারই স্বার্থে নির্বাচনে জনগণকে ধোকা দেয়া। জনগণকে আকর্ষিত করার জন্য মিথ্যা ও ভনিতার আশ্রয় নেয়া। এসব চাতুরীপূর্ণ রীতি যে কেবলমাত্র তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতেই বহুমাত্রায় চর্চা হয়, তাই নয়। পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণে দেখা যায় আমেরিকা, ইউরোপেও তা হয় বরং আরো সূক্ষ্ম কৌশলে ও গুরুতররূপে।
তবে আমেরিকা যেহেতু বিশ্ব রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে সেহেতু মিথ্যা ধোকা ও ভনিতার আশ্রয় সে আরো জঘন্যরূপে গ্রহণ করে। ইরাক ইরান যুদ্ধ বাধানো, ইরাক কুয়েত যুদ্ধ বাধানো, আফগানিস্তানের পর ইরাক আক্রমণ সাম্প্রতিক কালের আমেরিকার এসব দস্যুপনার নেপথ্যে কাজ করেছে তার শঠতা ও ভানিতার রীতি।
ইরাকে রাসায়নিক অস্ত্র রয়েছে, ওসামা বিন লাদেন আফগাস্তিানে লুকিয়ে রয়েছে এই ছিল আক্রমণের পেছনে আমেরিকার খোড়া যুক্তি। কিন্তু যুদ্ধের বছর পার হওয়ার পরও ইরাকে রাসায়নিক অস্ত্র পাওয়া যায়নি। ওসামা বিন লাদেনকেও আফগানিস্তানে পাওয়া যায়নি।
কিন্তু ততদিনে আফগানিস্তান ও ইরাক দুটোই আমেরিকার করতলগত হয়েছে। বিন লাদেন আফগানিস্তানের নাগরিকও নয়, শাসনকর্তাও নয়। কিন্তু তারপরেও আফগানিস্তান আক্রমণের পেছনে ওসামাই ছিল আমেরিকার ইস্যু। গোটা আফগানিস্তান তছনছ করা হয়েছে তারপরেও স্যাটেলাইট প্রযুক্তির শীর্ষে আরোহনকারী আমেরিকা ওসামার টিকিও খুজে পায়নি। বরং ওসামা বার বার শিরোনাম হয়েছে যে আমেরিকান বাহিনী পৌছার কয়েক মিনিট পূর্বে বিন লাদেন সে স্থান ত্যাগ করেছে। এ ধরনের উদাহরণ একবার নয় বহুবার। সর্বশেষ এই কিছু দিন আগে এ ধরনের আরেকটি খবর সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। “আল কায়দা নেটওয়ার্কের কর্ণধার ওসামা বিন লাদেন এখন পাকিস্তানে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারী তিনি পাকিস্তানি উপজাতিয় লোকদের ছদ্মবেশে আল কায়দা ও তালেবান যোদ্ধা পরিবেষ্টিত হয়ে আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানে প্রবেশ করেন বলে মার্কিন পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। মার্কিন পত্রপত্রিকার রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওসামা বিন লাদেন আফগানিস্তানের দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের প্রত্যন্ত উপজাতি এলাকায় আত্মগোপন করে আছেন।
উল্লেখ্য এ প্রসঙ্গে তেহরান রেডিওর খবরে বলা হয়েছে, ওসামা এখন পাকিস্তানের হাতে বন্দি অবস্থায় আছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘনিয়ে আসার মুহূর্তে তাকে ওয়াশিংটনের হাতে তুলে দেয়া হবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এবং পাকিস্তান উভয় দেশই এ খবর প্রকাশ না করলেও যখন বিন লাদেনকে ওয়াজিরিস্তানে দেখা গেছে, তাকে ধরার জন্য পাকিস্তান চেষ্টা চালাচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্র সেখানে এজন্য সৈন্য পাঠাবে মর্মে সংবাদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় তখন পেন্টাগনের মুখপাত্র শুধু বলে, খবরটি তারা দেখেছেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে পালিয়ে থাকার সময় কয়েকবার মার্কিন সৈন্যরা তাকে ধরার প্রায় কাছাকাছি পৌছেছিল। তার লুকিয়ে থাকার স্থানও শনাক্ত হয়ে গিয়েছিল।” পাঠক! বিবৃত খবরে সে পুরানো কৌশলই নতুন করে প্রতিফলিত হয়েছে। ওসামাকে তারা ধরার প্রায় কাছাকাছি পৌছেছিলেন। কিন্তু বিন লাদেন পূর্বের মত এবারও তাদের ফাঁকি দিয়ে শরনার্থীর বেশে কৌশল করে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। আবার এরপর খবর এসেছে, “পকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যকার পাহাড়ি সীমান্ত এলাকায় যেসব মার্কিন সৈন্য আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে আটক করার জন্য তল্লাশি চালাচ্ছে তারা এখন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করবে যার ফলে ওই এলাকায় রোজ ২৪ ঘণ্টা সপ্তাহে ৭ দিনই পরিস্থিতির উপর নজর রাখা যাবে। যেসব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে তার মধ্যে আছে অত্যাধুনিক ইউ-২ গোয়েন্দা বিমান যা ৭০ হাজার ফুট উঁচু দিয়ে উড়তে পারে, ছবি তুলতে পারে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিঘœ ঘটাতে পারে। বিন লাদেনকে যেভাবেই হোক খুজে বের করার লক্ষ্যে যে নতুন ‘ট্যাস্ক ফোর্স ১২১ নামানো হচ্ছে, প্রথমতঃ এরা উন্নততর গোয়েন্দা বাহিনীর সাহায্য পাচ্ছে। সাদ্দামকে ধরার সময় প্রত্যক্ষ ভূমিকা নিয়েছিলেন যারা, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) সেই কর্মকর্তাদের নিয়ে আসা হচ্ছে আরও একটি গুরুদায়িত্ব দিয়ে। তালেবান নেতা মোল্লা ওমরও থাকছে এই লিস্টে’। এই নতুন পরিকল্পনায় ১১ হাজার মার্কিন সেনা নিয়মমাফিক তল্লাশি চালিয়ে দিনের শেষে ঘাঁটিতে ফিরে আসার রুটিন থেকে বেরিয়ে এসে ছোট ছোট গোষ্ঠীতে ভাগ হয়ে যাবে। এরা বিভিন্ন প্রত্যন্ত গ্রামে টানা বেশ কিছুদিনের জন্য আস্তানা গাড়বে। সেখান থেকে নজরদারি চালালে বিন লাদেনকে আগলে রেখেছে আল কায়দার যে গোপন বাহিনী তাদের কৌশল জানা যাবে।”
বলাবাহুল্য এ রকম আরো অনেক ব্যবস্থা তারা পূর্বেই নিয়েছিলেন কিন্তু বিন লাদেন ধরা পড়েনি। এবং বলা চলে ওসামা ততক্ষণ পর্যন্ত ধরা পড়বেনা যতক্ষণ পর্যন্ত না আমেরিকার দুরভিসন্ধিমূলক খেলা শেষ না হবে। যেমন ইরানের নকল সাদ্দাম ধরার সময় তারা মন্তব্য করেছিল ‘খেলা খতম’।
মূলতঃ বিন লাদেনকে নিয়ে তাদের আরো বহু খেলার ইভেন্ট রয়েছে। ওসামাকে দিয়ে পাকিস্তান আক্রমণ তথা পাকিস্তানের পারমানবিক বোমা ধ্বংস করার জন্য ইস্যু তৈরী করা আমেরিকার জন্য বিচিত্র কিছুই নয়। কিন্তু তারপরও বেখবর বেঁহুস মুসলমান। এখনও বিন লাদেনকে তারা সি,আই,এ-এর এজেন্ট হিসেবে চিনতে অপ্রস্তুত। বিশেষ করে মুসলমানদের ধর্মীয় অভিভাবক দাবীকারী তথাকথিত মুসলিম সমাজ তথা ধর্মব্যবসায়ী শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মাওলানা, খতীব, মুফাস্সিরে কুরআন যখন ওসামা বিন লাদেনকে বিশ্ব মুসলিম নেতা হিসেবে স্বাগত জানান তখন তাদের জেহালতকে ঘৃণা করার ভাষা খুজে পাওয়া যায়না। যেক্ষেত্রে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “ফাসিকের প্রশংসা করলে আল্লাহ পাক-এর আরশ কাঁপে।” আর সেখানে গোটা মুসলিম বিশ্বের শত্রু মুনাফিক ওসামার প্রশংসা করলো আল্লাহ পাক কত রোষ ফুঁসে উঠবে তা ভেবে দেখার বিষয়।
আফসোস! এইসব নামধারী আলিমদের জন্য। তারা ওসামার ছূরতান পাগড়ী আর রাইফেলের ছবিকেই মুসলমানদের কাছে আকর্ষণীয় করে প্রকাশ করেছে। কিন্তু তারা কি আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সেই হাদীছ শরীফ অবগত নয়! হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি দ্বীনের ক্ষতির ব্যাপারে মুনাফিকদের সবচেয়ে বেশী ভয় করি।
যার কারণ হচ্ছে বিধর্মীকে চেনা যায় কিন্তু মুনাফিক মুসলমানের বেশে মুসলমানের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করে। জীবনের শুরুতেই যে বুশ পরিবারের সাথে ছিল ওসামার পারিবারিক সম্পর্ক; জীবনের উত্থানের পেছনেও যেখানে ছিল সি,আই,এ-এর অবদান, বার বার অসত্য বলে বিশ্ব মিথ্যাবাদী বলে গণ্য যে ওসামা; যার প্রতিটি কর্মসূচীই অনৈসলামিক; সে প্রতারক কি করে ইসলামের বীর সেনানী হতে পারে? বরং গোটা মুসলিম বিশ্বের জন্য চরম মুনাফিক আর বুশের ঐতিহ্যগত বন্ধু বলেই সে বিবেচিত হতে পারে।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য ফেব্রুয়ারী মাসের শেষের দিকে ধরা পড়ার পরও তাকে ছেড়ে দেয়া হলো বুশেরই নির্বাচনী প্রচারণায় চমক সৃষ্টির কাজে। অভিজ্ঞমহল মনে করেন নকল সাদ্দামের মত হয়তবা তাকেও এই সেপ্টেম্বর-নভেম্বরে ধরা হবে। তবে তার পেছনেও থাকবে বুশের নির্বাচনী স্বার্থ তথা আমেরিকার বিশ্ব মোড়লীপনার স্বার্থ। মূলতঃ বিশ্ব মুনাফিক, সি,আই,এ-এর এজেন্ট সম্পর্কে সচেতন হওয়ার সময় পার হয়েছে অনেক আগেই। এখনও গাফলতি করা কেবলই আফসোসযোগ্য।
-মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান, ঢাকা।
প্রসঙ্গঃ কমনওয়েলথ ও সি.পি.এ সম্মেলন