মূল: হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছে দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ভাষান্তর: মাওলানা মুহম্মদ ফজলুল হক
হযরত মাওলানা জালালুদ্দীন আওদাহী রহমতুল্লাহি আলাইহি
(৬৫৯-৭৩৮হিজরী)
হযরত মাওলানা জালালুদ্দীন আওদাহী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাক্বওয়া, খোদাভীতি, সুন্নতের ইত্তিবা, দুনিয়া বিরাগী ইত্যাদি প্রশংসণীয় গুণাবলীতে প্রসিদ্ধ ছিলেন। তৎকালীন সমস্ত মানুষের কাছে তিনি সর্বাধিক সম্মানিত ছিলেন। একবার কুতুবুল মাশায়িখ হযরত নিযামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর একজন সঙ্গী যিনি কিতাবাদী লিখা ও বাহাছ করে সময় কাটাতেন। তাঁর আগ্রহ হলো যে, তিনি হযরত মাওলানা জালালুদ্দীন আওদাহী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট থেকে কিছু ইল্ম্ হাছিল করবেন। তারা হযরত মাওলানা জালালুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহিকে এ বিষয় শায়খ হযরত নিযামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর কাছে ইজাযত তলব করতে অনুরোধ করলেন। তখন হযরত মাওলানা শায়খ জালালুদ্দীন আওদাহী রহমতুল্লাহি আলাইহি শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট উক্ত বিষয় ইজাযত তলব করলেন। তখন শায়খ নিযামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি বুঝলেন যে, ইহা ঐ সকল লোকদের (তাঁর সঙ্গীদের কেউ কেউ এর) আগ্রহ। তখন কুতুবুল মাশায়িখ শায়খ নিযামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি মাওলানা জালালুদ্দীন আওদাহী রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে বললেন, তাঁর দ্বারা আমি অন্য খিদমত নিতে চাচ্ছি। তিনি পিয়াঁজের আবরণের মধ্যকার আবরণের মত।
হযরত খাজা মুয়ায়্যিদুদ্দীন কারয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি
৬৬৮ হিজরী-৭২৬ হিজরী
হযরত খাজা মুয়ায়্যিদুদ্দীন কারয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর প্রথম জিন্দিগী মুবারকে দুনিয়াবী কার্যকলাপে সময় অতিবাহিত করেছেন। স্বয়ং বাদশা ও শাহজাদা এর সাথে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল। যখন সুলত্বান আলাউদ্দীন খিলজি জাগিরদার এবং আমীর হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন তখন তিনি তাঁর কার্যনির্বাহী ছিলেন। শেষ জীবনে তিনি কুতুবুল মাশায়িখ হযরত নিযামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মুবারক হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন এবং স্বেচ্ছায়ই দুনিয়াদারী কার্যকলাপ ছেড়ে দেন।
যখন সুলত্বান আলাউদ্দিন খিলজি রাজ আসনে সমাসীন হন তখন তিনি হযরত খাজা মুয়ায়্যিদুদ্দীন কারয়ী রহমতুল্লাহি আলাহি-এর কথা স্মরণ করলেন। যখন তিনি জানতে পারলেন যে, হযরত খাজা মুয়ায়্যিদুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি কুতুবুল মাশায়িখ হযরত নিযামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট বাইয়াত গ্রহণ করেছেন। তখন তিনি খাজা নিযামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর খিদমতে আরযী পেশ করে বললেন যে, তিনি যেন খাজা মুয়ায়্যিদুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহিকে সুলত্বানের ব্যক্তিগত সহকারী হিসাবে কাজ করার ইজাযত দেন। উত্তরে হযরত খাজা নিযামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন যে, খাজা মুয়ায়্যিদুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সামনে এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ হাজির আছে। এই উত্তর সংবাদ বাহকদের মনোপুত হলো না। যার কারণে সুলত্বান বললেন, হযরত খাজা নিযামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি সকল মানুষের দ্বারা ঐ সকল কাজ করান যা তিনি নিজেই করেন। তখন শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি জবাব দিলেন যে, নিজের মত কাজ করানোর চেয়েও অধিক উত্তম কাজ (তাঁর দ্বারা) করাবো। তখন সুলত্বান আলাউদ্দিন খিলজী এই জবাব শ্রবণ করে হযরত খাজা মুয়ায়্যিদুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ব্যাপারে নিরাশ হয়ে গেলেন এবং তাঁর দ্বারা স্বীয় জরুরী কাজের আঞ্জাম নেয়ার আশা ছেড়ে দিলেন।
হযরত খাজা মুয়ায়্যিদুদ্দীন কারয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মাযার শরীফ হযরত খাজা নিযামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর পা মুবারকের নিকটে রয়েছে। আল্লাহ পাক উনাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন। (আমীন)
হযরত শায়খ নিযামুদ্দীন সিরাজী রহমতুল্লাহি আলাইহি
(৬৪০ হিজরী-৭২১ হিজরী)
হযরত শায়খ নিযামুদ্দীন সিরাজী রহমতুল্লাহি আলাইহি বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ দিক থেকে উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। ইলমে তাছাউফের উরূজ-নুযূলের ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ মর্যাদায় সমাসীন হয়েছিলেন। সামা এর মাহফিল শ্রবণে তিনি খুব প্রিয় ও অভ্যস্ত ছিলেন। ইসলামী জ্ঞান ছাড়াও দুনিয়াবী অন্যান্য জ্ঞানে তিনি পূর্ণ পারদর্শী ছিলেন। বহুবার পবিত্র মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ যিয়ারতের সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন। কুতুবুল মাশায়িখ হযরত শায়খ নিযামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সঙ্গী সাথীদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ও সীমাহীন গ্রহণযোগ্য ছিলেন। শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দৃষ্টিতে তিনি ছিলেন মহান আল্লাহ পাক-এর পক্ষ থেকে খাছ ও সংরক্ষিত ব্যক্তি। মহান আল্লাহ পাক তাঁর প্রতি রহমত বর্ষণ করুন। (চলবে)