মূলঃ হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ভাষান্তরঃ মুহম্মদ শামসুল আলম
হযরত নাছিরুদ্দীন চেরাগে
দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
তিনি আরো বলেন, যদি কোন দরবেশ ক্ষুধার্ত অবস্থায় (রাত্রির) প্রথম ওয়াক্তেই শুয়ে পড়ে এবং রাত্রির তৃতীয় বা শেষ প্রহরে জেগে এমন ভাবে আল্লাহ পাক-এর ইবাদত বন্দিগীতে লিপ্ত হয় যে, তার বাতেনী অবস্থা আল্লাহ পাক ব্যতীত আর কোন দিকেই রুজু থাকে না। তবে এই দরবেশ (অবশ্যই) তাঁর আত্মায়, রূহে, খোদা তায়ালার নূরের তাজাল্লী মুশাহাদায় দর্শন করবে। চাই ঐ যামানার এই শ্রেণীর দরবেশ যে কোন খানেই অবস্থান করুক না কেন, দুনিয়াদার থেকে পৃথক হোক, রিয়াজত মুজাহাদার মধ্যে লেগে থাকুক অথবা নাই থাকুক। প্রকৃতপক্ষে তিনি বিনা সন্দেহে ঐ নিয়ামত ও দৌলতের অধিকারী এবং তাঁকে ঐ শ্রেণীরই মনে হবে। তারপর শায়খ এই শে’র আবৃত্তি করলেন-
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ “আমার চক্ষুই দর্শনের যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে। অন্যথায় আমার বন্ধু মাশুক আমার নিকটেই, তিনি গোপন নন।”
শায়খ বলেন, আসলে এই রাস্তায় মূল জিনিষ হচ্ছে, নফসের হিফাজত বা তার শোধরানো, সংশোধন হওয়াটা। সালিককে মুরাকাবায় অবশ্যই তাঁর নফস প্রবৃত্তির উপর কড়া নজর, দৃষ্টি রাখতে হবে। এটা এই জন্য যে, যাতে তাঁর আত্মা একাগ্রতা, একসুই হাছিল করতে পারে। যখন সালিক নফস থেকে গাফিল, অসতর্ক হয়ে গেলো তখন তার আত্মা হয়রানী ও পেরেশানীর মধ্যে থাকবে।
তিনি আরো ইরশাদ করেন, ছূফী তো তাকেই বলা হয়, যে তাঁর প্রতিটি শ্বাসকে গণনা করে এবং এর হিফাজত করে।
মুনতাহী হওয়ার এটাও একটা অর্থ হয় যে, ছূফীদের রিয়াজত, মুজাহাদায় যা হাসিল হয় তার আকস্, প্রতিবিম্ব হিসেবে (অনেক সময়) হিন্দু যোগী, সন্যাসী, সংসার ত্যাগী, বৈরাগীদেরও হাছিল হয়। যাদেরকে সিদ্দাহ বলা হয়। (অর্থাৎ তার তরক্কীর রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা, বাধা রয়েছে। সেও নফসকে বশীভূত করার জন্য কোশেশে লিপ্ত রয়েছে। কিন্তু ঈমানের দৌলত থেকে মাহরূম থাকার করণে তার উচ্চতর মর্যাদা হাছিল হয় না।) এরপর বলেন, (কে জানে) আমি এবং তুমি কোন কাতারের মধ্যে শামিল আছি। অথবা ঐ ক্ষুধার্ত ভিক্ষুকের মতই কি! যে নাকি নানভাই-এর দোকানে সুস্বাদু হরেক রকমের পাকানো খাদ্য দেখে তাঁর নাসিকায় ঘ্রান নেয় এবং কিছুক্ষণের জন্য হলেও সেখানে দাঁড়িয়ে গিয়ে নানভাইকে বলে, তোমার নিকট যা কিছু রয়েছে সেগুলো আমাকে খাওয়াও। জবাবে নানভাই বলে আমার ফুরসত নেই। আর এখন কথা বলারও সময় নেই। সমস্ত দিন গ্রাহক খরিদদারদের সাথে সময় দিয়েছি। সামান্য সময়ও আরাম করতে পারিনি। বহু চেষ্টা করেছি যে, সামান্য সময় হলেও বিশ্রাম নিবো, শুয়ে পড়বো। কিন্তু কোন না কোন মুহুর্তে খরিদদার এসেই পড়েছে। এখন তুমি এখান থেকে চলে যাও। আমি বিশ্রাম নিবো। অন্য এক দিন সময় করে আসবে। তারপর শায়খ বলেন, রাতের বেলায় যে কাজ আনজাম বা যে জিনিষ করা যেতে পারে দিনের বেলায় সেটা করার শক্তি, কুওওয়াত একদম থাকে না। কিন্তু তার পরও আমি নিরাশ নই। এই বাক্যটি তিনি থেমে থেমে বললেন। তারপর এই শে’রটি পড়েন-
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
এই খালি বালতি আমি যা (কুয়ায়) নিক্ষেপ করলাম, আমি নিরাশ নই, আশা করি কোন না কোন সময় এটা ভর্তি হয়ে আসবে। তিনি বলেন, আত্মার দিকে রুজু হয়ে আত্মাকে (সর্বদিক থেকে) আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দিকে মুতাওয়াজ্জুহ করা এবং যিকরুল্লা হতে মশগুল থেকে তামাম গাইরুল্লাহ দূর করে দেয়া জরুরী। ফকীর, দরবেশদের হাত, আস্তিন ছোট করার অর্থ ছূফী যখন সুলুকের রাস্তায় ক্বদম রাখে তখন সে মনে মনে খেয়াল করে গাইরুল্লাহ বা অপরের নিকট সুওয়াল করার জন্য তার যে হাত জোড়াটি রয়েছে তা কর্তন করে দিতে। যদি ছূফী সুওয়াল করা থেকে বিরত থাকার জন্য তাঁর হাত কেটে ফেলে তাহলে সে ওযু, গোসল এবং স্বীয় মুসলমান ভাইদের সাথে মুছাফাহা করার যে খায়ের বরকত রয়েছে তার থেকে সে মাহরূম থেকে যাবে। এবং ঐ অবস্থায় সে কিছুই করতে পারবে না। এই অবস্থায় সে তার হাত কাটার পরিকল্পনা ত্যাগ করে স্বীয় আস্তিন গুটিয়ে অর্থাৎ অপরের নিকট সুওয়াল করার বাসনা অভিপ্রায় অন্তরের মধ্যে কর্তন করে ফেলুক এবং (পুরোপুরি) ইয়াদে ইলাহীতে লেগে পড়ুক। (অসমাপ্ত)