মূলঃ হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহ্লভী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ভাষান্তরঃ মুহম্মদ শামসুল আলম
হযরত নাছিরুদ্দীন চেরাগে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ধারাবাহিক) এরপর মুর্শিদের দরবার শরীফের আমি যখন গেলাম তিনি আমাকে বললেন, হে নিযামুদ্দীন! তোমার কোন সাথী যদি তোমাকে এ ধরণের প্রশ্নের সম্মুখীনে ফেলে .. একি তোমার গরীবী হাল! যদি ইল্ম বিতরণের সিলসিলা তুমি জারী রাখতে তাহলে রিযিক উপার্জন থেকে স্বাধীন ও শক্ত থাকতে তাহলে তুমি তাঁকে কি জবাব দেবে? আমি বল্লাম, আপনার নির্দেশানুযায়ী আমি তাঁর জবাব দিবো। হযরত বাবা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তখন বললেন, তুমি বলবে, হে ব্যক্তি তুমি আমার পথের পথিক নও। তুমি নিজের রাস্তায় নিজে চলো। তুমি হলে নেক্কার সৌভাগ্যবান। আর আমি হচ্ছি অক্ষম, জয়ীফ। এরপর হযরত শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি পাত্রভর্তি একটি খাঞ্চা আমার সামনে রাখলেন এবং বললেন, হে নিযামুদ্দীন! এটা নিয়ে যাও এবং তোমার সহপাঠি যেখানে অবস্থান করছে তাকে সেটা দিয়ে দাও। সুতরাং তিনি স্বীয় পীর ছাহেবের আদেশ মোতাবেকই কাজ করলেন। এরপর মাহবুবে ইলাহী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমার সহপাঠি আমার এই কাজ খুবই পছন্দ করলেন এবং বললেন, আপনার ছোহবত, আপনার হাল মুবারক বরকতপূর্ণ হোক। হযরত নাছিরুদ্দীন চেরাগে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এই সমস্ত ঘটনা, অবস্থা ব্যতিরেকেও পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি আমাকে রিয়াজত-মুজাহিদার জন্য হুকুম দিলেন। ঐ সময় আমার উপর দিয়ে এমন সময়ও অতিবাহিত হয়েছে যে, দশদিন পেরিয়ে গেছে অথচ আমার সামান্য খাদ্যও জুটেনি। অধিকাংশ সময় এমন হতো, যখন আমার খায়েশ আমার উপর চড়াও হতো তখন আমি গাছের ছাল-বাকল চিবতাম। বলা হয়ে থাকে যে, সুলতান মুহম্মদ তুগলক তাঁর সালতানাতের জামানায়, দিল্লীর মশহুর খাছ ওলী হযরত নাছিরুদ্দীন মাহমুদ চেরাগে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে তাঁর বিরোধিতার একমাত্র লক্ষ্যস্থল সাব্যস্ত করে রেখেছিলেন। সুলতান তাঁকে নিজের খানসামা নিযুক্ত করলেন (নাউযুবিল্লাহ) এবং সুলতানের সাথে সফরের সময় হযরত শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহিকে (কষ্ট দেয়ার জন্য) পায়ে হেঁটে বা সাওয়ারী বিহীন চলার জন্য নির্দেশ দিতেন। আর চেরাগে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি এই সমস্ত কষ্ট-তাকলীফ বরদাশ্ত করতেন স্বীয় পীর ছাহেবের ওছীয়তের কারণেই। এমনকি শায়খের নির্দেশের দরুন উফ্ শব্দ পর্যন্ত উচ্চারণ করতেন না। হযরত নাছিরুদ্দীন চেরাগে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি ৭৫৭ হিজরীর ১৮ই রমযান শরীফে দিল্লীতে ওফাতপ্রাপ্ত হন। একদা সুলতানুল মুহম্মদ তুগলক বাদশাহ হযরত নাছিরুদ্দীন চেরাগে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি (পরীক্ষার) জন্য সোনা-রূপার পাত্রে খাদ্য পাঠালেন। তার উদ্দেশ্য ছিলো শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি যদি খানা না খান আর যদি খাদ্য গ্রহণ করেন তখন তাঁকে শরীয়তের বিরোধিতা এবং নিষিদ্ধ জিনিসকে গ্রহণ করার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাদ করা হবে। যখন তার সামনে খাদ্য রাখা হলো তখন তিনি স্বীয় যবান মুবারকে কিছুই বললেন না। (অবস্থা বুঝতে পেরে) তিনি সোনার একটি পাত্র থেকে সামান্য পরিমাণ খাদ্য তুলে নিয়ে হাতের তালুতে রাখলেন এবং চেকে দেখলেন। (সম্ভবত শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি সুলতানের দূরভিসন্ধী বুঝতে পেরে এরূপ করেছেন এবং পরে তা থুথুর সাথে ফেলে দেন) এতে বদ্ খেয়াল ও অসৎ লোকদের কুট চাল কার্যকরী হলো না। ‘খাইরুল মাজালিসে’ বর্ণিত আছে যে, একদা এক সালেক তাঁকে বললেন, ‘মালফুজাতে খাজা উছমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি’তে বর্ণিত রয়েছে, যে ব্যক্তি দু’টো গাভী যবেহ্ করবে তার গর্দানে একটি আঘাত হানা হবে। এবং যে চারটি গাভী যবেহ করবে তার গর্দানের উপর দু’টো আঘাত এবং যে দশটি ভেড়া যবেহ করবে তার গর্দান কেটে দেয়া হবে। এটা শুনে হযরত নাছিরুদ্দীন চেরাগে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, প্রথম কথা হলো- হারুনী বক্তব্য শুদ্ধ নয়। বরং আসল কথা হারূন শব্দটি নিয়ে। এটা এজন্য যে, ‘হারূন’ একটি গ্রামের নাম। যেখানে হযরত ওছমান হারূনী রহমতুল্লাহি বসবাস করতেন। এরপর তিনি বললেন, এটা তাঁর ইবারত নয়। তাঁর মালফুজাতের কয়েকটি নুখসা আমার নিকটও মজুদ আছে। যেখানে অধিকাংশ কথাই এরূপ অথচ এগুলো তাঁর বাণী নয়। এছাড়া তিনি আরো বলেন, হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, আমি কোন কিতাব লিখিনী (এজন্য যে, শাইখুল ইসলাম হযরত বাবা ফরিদুদ্দীন গনজে শোকর রহমতুল্লাহি আলাইহি খাজা কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার ক্বাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং খাজা গানে চিশ্তি রহমতুল্লাহি আলাইহিগণের মত ওলীগণ কোন কিতাব লিখেননি। (অসমাপ্ত)