মূলঃ হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহ্লভী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ভাষান্তরঃ মুহম্মদ শামসুল আলম
হযরত মাওলানা আহমদ হাফিয রহমতুল্লাহি আলাইহি জন্ম- ৬২১ হিজরী, ওফাত- ৭০৬ হযরত মাওলানা আহমদ হাফিয রহমতুল্লাহি আলাইহি একজন দানিশমান্দ (জ্ঞানী) ব্যক্তি এবং আল্লাহ পাক পর্যন্ত পৌঁছানো মর্দানে খোদার মধ্যে গণ্য। তাঁর সম্পর্কে হযরত নিযামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি একদা হযরত বাবা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর জিয়ারতের জন্য যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে ‘সারসী’-এর কসবা নামক এলাকায় মাওলানা আহমদ হাফিয রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সাথে আমার সাক্ষাত হলো। কথায় কথায় তিনি আমাকে বললেন, যখন আপনি হযরত শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মাযার মুক্বাদ্দাসে পৌঁছবেন তখন প্রথমেই আমার সালাম পৌঁছাবেন তারপর বলবেন, এখন আমি দুনিয়া অন্বেষণকারী নই। আমি ব্যতীত বহু দুনিয়া তলবকারী রয়েছে। এবং পরকাল সম্পর্কেও আমার এই রায়। আমার তো শুধু এটাই বাসনা যে,
توفنى مسلما والحقنى بالصلحين.
“আমাকে মুসলমান হিসেবে ইন্তিকাল দান করুন এবং নেক্কার-ছালিহীনদের সাথে মিলিত করুন।” (সূরা ইউসুফ/১০১) আল্লাহ পাক আপনার প্রতি রহমত বর্ষিত করুন। হযরত নাসিরুদ্দীন চেরাগে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি ওফাত- ৫৭৫ হিজরী হযরত নাসিরুদ্দীন চেরাগে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত নিযামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মশহুর এবং জলীলুল ক্বদর খলীফাদের মধ্যে শামীল। হযরত সুলতানুল মাশায়িখ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ইন্তিকালের পর দিল্লীর বেলায়েতের মসনদ তাঁর উপর সমর্পিত হয়েছিলো। তিনি নিজ শায়খের উপর পূর্ণ পাবন্দি ছিলেন। দরিদ্রতা, উপবাস, ছবর ও দৃঢ়তা, তাসলীম ও রেযা ছিলো তাঁর চারিত্রিক গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য। বর্ণিত রয়েছে, একদা হযরত চেরাগে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত নিযামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর খাছ পরামর্শদাতা ও তাঁর গুপ্তভেদ জাননেওয়ালা হযরত খাজা আমীর খুসরু রহমতুল্লাহি আলাইহিকে বললেন, আপনি দয়া করে হযরত মুর্শিদ ক্বিবলাজানকে আমার এই আরজু, আবেদন (আদবের সাথে) পেশ করবেন যে, আমি যে ‘আদ্বো’ শহরে বাস করি সেখানে মানুষের জনাকীর্ণতা, অত্যধিক সমাগমতার কারণে আমার ইবাদতে ইলাহীর ও যিকির-ফিকিরে বিঘœতা ঘটে। যদি শায়খের নির্দেশ, ইশারা পাই তবে আদ্বো শহর ত্যাগ করে জঙ্গলে গিয়ে একাগ্রচিত্তে (মনের ইচ্ছা অনুযায়ী) আল্লাহ পাক-এর ইবাদত-বন্দিগীতে মশগুল হই। হযরত আমীর খুসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর এই অভ্যাস ছিল যে, তিনি প্রতিদিন ইশার নামাযের পর দিনের সমস্ত হালত হযরত শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর গোচরীভূত করতেন। অতএব, প্রতিদিনের অভ্যাস অনুযায়ী রাতে বা’দ ইশা তিনি (স্বীয় কামিল পীর ভাই) হযরত নাসিরুদ্দীন চেরাগে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর আরজু শায়খের নিকট পেশ করলেন। জবাবে স্বীয় মুর্শিদ বললেন, তাঁকে মানুষের সমাগমের মধ্যেই থাকতে হবে এবং তাদের দেয়া কষ্ট, মুছীবত বরদাশ্ত করে তাদের ক্ষমা ও মেহেরবানীর দৃষ্টিতে দুনিয়ায় দিন গুজরান করতে হবে। তাঁর সম্পর্কে এ ধরনের একটি বর্ণনাও রয়েছে, একদা মাহবুবে ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁকে কোন এক নিরিবিলি জায়গায় ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার মনের আকাঙ্খা কি? কিসের জন্য জঙ্গলে যেতে চাও? তোমার পিতা কি কাজ করতেন?’ জবাবে হযরত চেরাগে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, জঙ্গলে যাবার আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে, আজীবন আপনার দোয়ার প্রার্থী হওয়া এবং দরবেশদের বাঁকা জুতা সিদা করে দেয়া। আমার পিতা তাঁর গোলামদের দ্বারা তুলা ধুনার ব্যবসা করতেন।’ এটা শ্রবণ করে মাহবুবে ইলাহী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, তুমি আমার কথা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করো। আমি যখন আমার পীর ছাহেবের দরবার শরীফে দিবারাত্রি (মুজাহাদার মধ্যে) অতিবাহিত করতেছিলাম তখন ঐ সময় আমার এক সহপাঠি বন্ধু আমাকে পুরনো ছেড়া জামা পরিধান অবস্থায় দেখতে পেয়ে আমাকে সম্বোধন করে বললেন, ‘নিযামুদ্দীন! একি তোমার দ্বীনহীন অবস্থা? তুমি যদি এ শহরেই (জাহিরী) ইলমে দরস্-তাদরীসের সিলসিলা চালু রাখতে তাহলে তোমার আর এ অবস্থা হতো না এবং তুমি জীবিকার উপার্জন থেকেও নিশ্চিত থাকতে। তাঁর কথাবার্তা শুনে আমি চুপ হয়ে গেলাম এবং তাঁর কথার কোন উত্তর দিলাম না। (অসমাপ্ত)