মুলঃ হযরত শায়খ আবউদল হক মুহাদ্দিসে দেহ্লভী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ভাষান্তরঃ মুহম্মদ শামসূল আলম
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
হযরত শায়খ আলাউদ্দীন উসূলী বাদায়ূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি ‘খাইরুল মাজালিসে’ বর্ণিত রয়েছে, তিনি কখনো কারো কাছ থেকে হাদিয়া-নজরানা কবুল করতেন না। অবশ্য অত্যন্ত জরুরী বা কঠিন মুছীবতের সময়গুলো ব্যতীত। এ সম্পর্কে একটি ঘটনা রয়েছে। একদা তিনি ক্ষুধার তাড়নায় খৈল চিবাচ্ছিলেন। (খৈল এক প্রকার পশুর খাদ্য) আর ঠিক ঐ সময়টিতে একজন নাপিত তাঁর নিকট আসলো। তখন তিনি মনে মনে ভাবলেন, আমার এই অসহায়ত্ব বা ভুখা থাকার ব্যাপারটি যাতে অন্য লোক জানতে না পারে তাই তিনি নাপিতের নিকট থেকে খৈলগুলো লুকিয়ে স্বীয় ইমামা শরীফ বা পাগড়ী মুবারকের নিচে রাখলেন। এরপর তিনি নাপিতের নিকট তাঁর জরুরী কাজ সেরে নিলেন। অতঃপর তিনি যখন মাথার চুল ছাঁটবেন তখন মাথা থেকে পাগড়ী মুবারক উঠাতেই লুকিয়ে রাখা খৈলগুলো যমীনে পড়ে গেলো। আর নাপিত এগুলো দেখলো। এই ঘটনার কিছুদিন পর নাপিত কোন এক ধনী ব্যক্তির নিকট হযরত মাওলানা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দারিদ্রতার কথা বর্ণনা করলেন। উক্ত ধনী ব্যক্তি হযরত শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর এই অবস্থা শ্রবণ করে কয়েক মন শষ্য, কিছু গাঢ় ঘি এবং এক হাজার জিতল (টাকা) তাঁর নিকট হাদিয়া পেশ করলো। কিন্তু তিনি সেটা কবুল করলেন না। উপরন্তু তিনি নাপিতের উপর গোস্সা করলেন এবং নারাজ হলেন। বললেন, ‘তুমি ভবিষ্যতে আমার নিকট আর আসবে না।’
হযরত শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর এই অসন্তুষ্টি দেখে নাপিত শায়খের বিশ্বস্ত মুরীদের দ্বারা তাঁর খিদমত আন্জাম দেয়ার ব্যাপারে সুপারিশ জানালেন। অবশেষে তিনি এই শর্তে নাপিতকে তাঁর নিকট আসতে অনুমতি দিলেন যাতে সে আগামীতে শায়খের এই ধরনের অবস্থার কথা আর কারো নিকট ফাঁস করে না দেয়। হযরত শামসুল মুলূক রহমতুল্লাহি আলাইহি , হযরত শামসুল মুলূক রহমতুল্লাহি আলাইহি বড় আলিম বরং আলিমদের আলিম। স্বীয় যামানায় ইল্ম-কালামের দিক দিয়ে মশহুর হয়ে আছেন। তিনি মাহবুবে ইলাহী হযরত নিজামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ওস্তাদগণের মধ্যে গণ্য ছিলেন। হযরত নিজামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি ‘মাক্বামাতে হারিরী’ কিতাবটি তাঁর কাছে পড়েছেন। শহরের অধিকাংশ এবং অনেক আলিম-উলামা তাঁর ছাত্র ও শিষ্যদের মধ্যে গণ্য। হযরত নিজামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যখন আমি কোন ওজরের কারণে তাঁর কাছে যেতে পারতাম না এবং দ্বিতীয় দিন তাঁর কাছে উপস্থিত হতাম তখন আমাকে দেখে তিনি বলতেন, “কখনো কখনো আমার এখানে এসে আমার হালের উপর নজর করো।” ঐ সময়ের মশহুর কবি তাজ যমরদ তাঁর শানে বর্ণনা করেছেন, “হে আঁকা! এখন আপনি বন্ধুদের মুহব্বতের পাত্র। অর্থাৎ আপনি হিন্দুস্থান বাসীদের মাথার মধ্যমণি সাব্যস্ত হয়েছেন।” কাযী হযরত জামাল বাদায়ূনী মুলতানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত কাযী জামাল বাদায়ূনী মুলতানী রহমতুল্লাহি আলাইহি অত্যন্ত উচুঁ দরজার ওলী ছিলেন। হযরত নিজামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, একবার তিনি স্বপ্নযোগে হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখেন যে, তিনি বাদায়ূনের কোন এক জায়গায় বসে ওজু করছিলেন। হযরত কাযী জামাল রহমতুল্লাহি আলাইহি জাগ্রত হবার পর সাথে সাথেই সেই (বরকতময়) জায়গায় উপস্থিত হলেন। তিনি দেখলেন, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে জায়গাটিতে বসে ওজু করেছিলেন সে জায়গায় এখনও পানির তাছির বা চিহ্ন রয়েছে এবং জায়গাটি ভিজে মাটিযুক্ত হয়ে আছে। তিনি জায়গাটি দেখে তাঁর মুরীদদের বললেন, আমি ইন্তিকাল করলে আমাকে এই জায়গায় দাফন করবে। অতএব, তাঁর বেসালের পর তাঁর অনুসারী, ভক্তরা তাঁকে তাঁর ওসীয়ত অনুযায়ী ঐ চিহ্নিত জায়গাটিতে দাফন করলেন।
বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার-৯১
বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার-৯৪