বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার-১০৯

সংখ্যা: ১৪৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

পূর্ব প্রকাশিতের পর

হযরত শায়খ হুস্সামুদ্দীন  মুলতানী

রহমতুল্লাহি আলাইহি

 হযরত শায়খ নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর এ নছীহত চলাকালে মাওলানা শায়খ হুস্সামুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং তাঁর আরেকজন সাথী এ অপেক্ষায় ছিলেন যে, এ আলোচনা শেষ করলেই অন্য প্রসঙ্গ তুলবেন। কিন্তু তিনি আলোচনা এত দীর্ঘায়িত করলেন যে তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা করলে ছয় মাসেও শেষ হবেনা। একদা এই তিনজন বন্ধু শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দরবার শরীফে হাজির হয়ে জরুরী আলোচনা করতে ছিলেন। এমন সময় সুলতান আলাউদ্দীনের খাছ মুরীদ মুহম্মদ কাতেব হঠাৎ করে পর্দা উঠিয়ে সেখানে ঢুকে বসে পড়লো। শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি তখন বললেন, তুমি কোথায় ছিলে? তিনি আরয করলেন, শাহী দরবারে ছিলাম। বাদশাহ আপনার জন্য পঁচিশ হাজার টাকা হাদিয়া স্বরূপ প্রেরণ করেছেন, তা নিয়ে এসেছি।

অতঃপর শায়খ নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি মাওলানা হুস্সামুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর প্রতি মুতাওয়াজ্জুহ হয়ে বললেন, শাহী হাদিয়া গ্রহণ করা উত্তম নাকি ইফায়ে আহদ (ওয়াদা) পূরণ করা উত্তম? মজলিশের সকলেই উত্তর করলেন, ওয়াদা পূরণ করাই উত্তম।  শায়খ নিজামুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, সুফী সম্প্রদায়ের লোকদের কর্মব্যস্ততা ছয়টি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। (ছয়টি বিষয় অর্জন করা আবশ্যক)।

এক. একাকিত্ব ইখতিয়ার করা এবং খাহেশাতে নফসানিয়তের অুনসরণ করে আল্লাহ পাক-এর গজবে পতিত না হওয়া। দুই. সর্বদা ওযুর সহিত থাকা এবং যখনই বেশি ঘুম আসবে তখনই ঘুমিয়ে পড়া ও সজাগ হলেই ওযু করে নেয়া। তিন. সর্বদা রোযা রাখা। (নিষিদ্ধ দিন বাদে) চার. মিথ্যা, ভুল ও অশ্লীল কথা না বলা। পাঁচ. সর্বদা স্বীয় মুর্শিদ ক্বিবলার প্রতি ক্বলব মুতাওয়াজ্জুহ রাখা এবং মুর্শিদ ক্বিবলার দায়িমী তায়াল্লুকের জন্য সর্বদা আল্লাহ পাক-এর যিকিরে মশগুল থাকা। ছয়. স্বীয় অন্তর থেকে গায়রুল্লাহকে বের করে দেয়া।

বর্নিত আছে যে, যখন হযরত মাওলানা শায়খ হুস্সামুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহিকে খিলাফত দেয়া হয় তখন তিনি স্বীয় শায়খের কাছে কিছু নছীহত পেশ করার জন্য আরয করেন।

হযরত খাজা নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বীয় হাত মুবারক নাড়াচাড়া করে ও শাহাদাত অঙ্গূলী ইশারা করে মাওলানা শায়খ হুস্সামুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহিকে বললেন, তরকে দুনিয়া, তরকে দুনিয়া, তরকে দুনিয়া (অর্থাৎ দুনিয়া তরক কর)

অতঃপর তিনি বললেন, মুরীদের আধিক্যতার চিন্তা কশ্মিনকালেও করবেনা। মাওলানা শায়খ হুস্সামুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি আরয করলেন, যদি অনুমতি হয় তবে সমূদ্রের কিনারে অথবা জঙ্গলে গিয়ে নির্জনতা অবলম্বন করতাম। শহরের কুপের পানি দ্বারা অজু করায় (শহরে অবস্থানে) ইতমিনান পাইনা। হযরত শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি তখন বললেন, শহরেই অবস্থান কর এবং অন্যান্যদের মত তুমিও একইভাবে অবস্থান কর। যদি তুমি শহর ছেড়ে সমূদ্রের কিনারে নির্জনতা অবলম্বন কর তবেও মানুষ তোমার ঘরে গিয়ে তোমাকে না পেয়ে বলবে যে অমুক দরবেশ জঙ্গলে চলে গেছে এবং সেখানে গিয়েও তারা তোমার ইবাদতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।

কুয়ার পানিতে উলামায়ে কিরামগণের ইখতিলাফ থাকলেও শরীয়তের দৃষ্টিতে এর অনেক ব্যাপকতা রয়েছে। এরপরে মাওলানা শায়খ হুস্সামুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি আরয করলেন, প্রথমতঃ মানুষ যা কিছু হাদিয়া দিবে তা থেকে কিছু অংশ পরিবার পরিজনের জন্য, আর কিছু অংশ যারা দরবারে আসা যাওয়া করে তাদের জন্য খরচ করবো। এখন কিছুদিন এই ধারাবাহিকতা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় ঋন করে চলবো। এ কথা শ্রবণ করে হযরত খাজা নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, যদি তুমি তোষামোদ বা তদবিরের মোহতাজ হও তবে দরবেশী করবে কিভাবে? হাক্বীক্বী দরবেশী তো এটাই যে, তার কাছে যা কিছুই হোক উহাকে খরচ করে ফেলবে এবং যদি কিছু না থাকে তবে ধৈর্য ও শুকরিয়া আদায় করবে। পরমুখাপেক্ষীতাকে কশ্মিনকালেও স্থান দিবেনা। তদবীর (তোষামদি) করা থেকে নিজেকে আলাদা রাখ। (অসমাপ্ত)

বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি  আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার- (৯৯)

বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি  আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার-১০১

বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি  আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার-১০

বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি  আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার-১০৩

বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার-১০৪