ভাষান্তর-মুহম্মদ শামসুল আলম
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
হযরত মাওলানা নূর তুর্ক রহমতুল্লাহি আলাইহি
জন্ম: ৬১৯ হিজরী, ওফাত: ৬৯২ হিজরী
একবারের ঘটনা, হযরত শায়খ নূর তুর্ক রহমতুল্লাহি আলাইহি মক্কা মুয়াজ্জামাতে অবস্থান করছিলেন। দিল্লীতে বসবাসকারী এক ব্যক্তিও সেখানে গিয়েছিল। তিনি উনাকে দু’সের চাউল নজরানা পেশ করলেন। হযরত শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি ঐ নজরানার চাউল গ্রহণ করলেন এবং উনাকে দোয়া করলেন। তখন ঐ বুযূর্গ ব্যক্তির দিলের মধ্যে এই খেয়াল পয়দা হলো, তিনি তো ঐ বুযূর্গ যিনি মূল্যবান স্বর্ণ ফিরিয়ে দিয়েছেন এবং এখন সামান্য চাউল গ্রহণ করছেন। উনার এই খেয়ালকে আল্লাহ পাক হযরত শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহিকে কাশফের মাধ্যমে জানিয়ে দিলেন এবং তিনি ঐ ব্যক্তিকে বললেন, খাজা! মক্কাতুল মুকাররামাকে দিল্লী মনে করবেন না। আমি ঐ সময় জোয়ান ছিলাম, তখন শক্তি সামর্থ ছিল এখন তো সেটা নেই। এখন আমি বুড়ো হয়ে গিয়েছি। এতদ্বভিন্ন মক্কা শরীফ-এ শয্যাদি কম পাওয়া যায়।
হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি বাবা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে শুনেছি, তিনি বলেছেন- আমি মাওলানা তুর্ক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ওয়াজের মজলিসে যোগদান করেছি। যখন আমি হাঁসীতে ছিলাম তখন একদা রঙ্গিন ও পুরানো কাপড় পরিধান করে উনার মাহফিলে যোগদান করি। এটাই ছিল উনার সাথে আমার প্রথম দর্শন, সাক্ষাৎ। এর আগে আমি কোন দিন উনার স্খাৎ পাইনি। তিনি মসজিদে ওয়াজ করতেছিলেন। আমি যেইমাত্র মসজিদের মধ্যে পা রেখেছি তখনই তিনি আমাকে দেখামাত্র বলে উঠলেন, মুসলমান! এখন দাওলাতমান্দের সম্পর্কে আলোচনা হবে। জওহরী এসে পড়েছে। এরপর তিনি আমার এত স্তুতি ও প্রশংসা বয়ান করলেন যা কিনা কোন সুলতান বা বাদশাহরও করা হয়নি।
হযরত মাওলানা মুখলেছুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি
জন্ম: ৫৬৯ হিজরী, ওফাত: ৬৩৯ হিজরী
হযরত মাওলানা মুখলেছুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে হযরত সাইয়্যিদ নাছিরুদ্দীন চেরাগ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তিনি বাদায়ুন জিলার ‘কাক’ মৌজার অধিবাসী ছিলেন। তিনি ওলীআল্লাহ-বুযূর্গ হওয়ার সাথে সাথে পবিত্র কুরআন শরীফ-এর হাফিযও ছিলেন।
হেকায়েত: একদিনের ঘটনা। একদা তিনি উনার মুরীদ মু’তাকিদদের নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। মুরীদরা রাস্তার পার্শ্বে আখের ক্ষেতে আখের গাছের মধ্যে ফুল দেখতে পেলেন এবং কেউ কেউ আখ থেকে ফুল ছিড়ে স্বীয় শায়খের সামনে নিয়ে আসলেন। তিনি জিজঞাসা করলেন, তোমাদের হাতের মধ্যে ওগুলো কি, খীরা নাকি? মুরীদগণ বললেন না, এগুলো আখের ফুল। তিনি পুনরায় বললেন, না না এগুলো খীরা। তারা বললেন, হযরত জনাবে আ’লা। আমরা নিজেদের হাত দিয়ে আখ ক্ষেত থেকে আখের ফুল ছিড়ে এনেছি আর সেটা এখন খীরা কিভাবে হতে পারে? এছাড়াও তখন খীরার মৌসুম ছিল না যে, ওগুলো খীরা হবে। অত:পর তিনি বললেন, আচ্ছা আমাকেও দাও। মুরীদগণ যতগুলো আখফুল নিয়ে এসেছিল সবগুলো হযরত শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহিকে দিয়ে দেয়া হলো। আর তিনি চাকু দিয়ে সেগুলোকে কেটে টুকরো টুকরো করলেন এবং মূরীদদেরকে দিলেন তারা খেয়ে বললেন, এ যে দেখছি সত্যি খীরা।
বর্ণিত আছে, লোকজন হযরত চেরাগে দেহলীভ রহমতুল্লাহি আলঅইহিকে জিজ্ঞাসা করলো, আচ্ছা হযরত! খাজা আযীয কারখী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত মাওলানা মুখলেছুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তারা কি একই সময়ের বুযূর্গ কিনা? তিনি বললেন, এটা তো বলতে পারবো না। তবে এতটুকু বলতে পারি, হযরত খাজা আযীয কারকী রহমতুল্লাহি আলাইহিও বড় ওলীআল্লাহ ছিলেন। এরপর তিনি বললেন, বাদায়ুনে অনেক এবং অধিক বুযূর্গ রয়েছে।
(অসমাপ্ত)
বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার-৮৮