মুলঃ হযরত শায়খ আবউদল হক মুহাদ্দিসে দেহ্লভী রহমতুল্লাহি আলাইহি,
ভাষান্তরঃ মুহম্মদ শামসূল আলম
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
হযরত শায়খ আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি জন্মঃ ৭৯৮ হিজরী, ওফাতঃ ৮৬১ হিজরী
তাঁর তিন ছাহেবজাদা ছিল। হযরত শায়খ ওয়াহীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত শায়খ ফরীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত শায়খ নজীব রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি তাঁর প্রত্যেক সন্তান সম্পর্কে ভবিষ্যৎ বাণী করে গিয়েছিলেন। হযরত শায়খ ওয়াহীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে বলেছিলেন, সে আমার মতই নিঃসঙ্গ, নিরিবিলি জীবন যাপন করবেন এবং তিনি ঠিক তদ্রুপই হয়েছিলেন। জীবনে বিয়ে-শাদী করেননি এবং স্বাধীন অবস্থাতেই পরকালের জগতে চলে গিয়েছেন। হযরত শায়খ ফরীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে বলেছিলেন, সে আমার সাজ্জাদানশীন হবে। আর শায়খ নজীব সম্পর্কে বলেছিলেন, সে ছাহেবে দিওয়ান। সুতরাং তাঁরা পরবর্তীতে ঐ রকমই হয়েছিলেন যেমন তাঁদের বুযূর্গ পিতা ভবিষ্যত বাণী করেছিলেন। হযরত শায়খ আলী কুরদ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি জন্মঃ ৬০১ হিজরী, ওফাতঃ ৬৬৬ হিজরী ‘সিয়ারুল আউলিয়া’ কিতাবে লিখিত রয়েছে, হযরত খাজা নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি যখন হাঁসি গিয়েছিলাম তখন বাবা ফরিদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শোকর রহমতুল্লাহি আলাইহি ঐ সময় ‘ছাওমে দাউদী’ আলাইহিস্ সালাম-এর রোযা রাখতে ছিলেন। ইফতারের সময় তিনি (এক সময়) হযরত শায়খ আলী কুরদ্ রহমতুল্লাহি আলাইহিকে দাওয়াত দিলেন। তিনি তাঁর দাওয়াতনামা কবুল করলেন। উভয় বুযূর্গ খেতে বসলেন। হযরত শায়খ আলী কুরদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দিলের মধ্যে খেয়াল আসলো (আহ!) শায়খ যদি ছাহিমুদ্দার্হ (লাগাতার রোযাদার) হতেন তাহলে খুবই ভাল হতো। হযরত শায়খের এই খেয়াল হযরত বাবা ফরিদুদ্দীন গঞ্জে শোকর রহমতুল্লাহি আলাইহি বাতিনী নূরের দ্বারা উপলব্ধি করতে পারলেন এবং সাথে সাথেই খাদ্য থেকে হাত গুটিয়ে নিলেন। হযরত শায়খ আলী কুরদ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দেশ (উত্তর প্রদেশ) মিরাট সিটির মধ্যে এবং সেখানেই তাঁর মাযার অবস্থিত। হযরত মাওলানা নূর তুর্ক রহমতুল্লাহি আলাইহি জন্মঃ ৬১৯ হিজরী, ওফাতঃ ৬৯২ হিজরী (উপমহাদেশে অত্যন্ত মশহুর) হযরত কাজী মিনহাজ যুরকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর কিতাব ‘তবাকাতে নাছিরী’ তে তিনি হযরত মাওলানা নূর মুহম্মদ তুর্ক রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর জীবনী লিখেছেন এভাবে, যা কিনা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তাঁর স্বভাব ও হালের বিপরীত। কিন্তু ‘ফাওয়ায়িদুল ফুয়াদ’-এর মধ্যে মীর হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত খাজা নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর এই ক্বওল নকল করেছেন। তিনি বলেন, কিছু কিছু আলিম হযরত মাওলানা নূর তুর্ক রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে ইখতিলাফ করে থাকেন। হাক্বীক্বত হচ্ছে, তিনি বৃষ্টির পানির থেকেও অধিক পবিত্র। (সুবহানাল্লাহ) শহরের আলিম সমাজ তাঁর প্রতি এই জন্য খারাপ ধারণা পোষণ করতেন। কারণ তিনি এ সমস্ত আলিমদেরকে দুনিয়াদারীতে গ্রেফতার দেখে তাদের দোষ-ত্রুটি (জনসম্মুখে) বর্ণনা করতেন। তিনি কারো নিকট কখনো বাইয়াত গ্রহণ করেননি। তাঁর প্রতিটি কথাই তিনি ইলম্ আর মুজাহাদায় অর্থাৎ ইলমে লাদুন্নীর শক্তিতে বলতেন। তাঁর একটি গোলাম ছিল যার পেশা ছিল তুলা ধুনা। সে প্রতি সন্ধ্যায় এসে হযরত শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহিকে একটি দিরহাম হাদিয়া দিত যার দ্বারা তিনি দুনিয়াবী জরুরত সারতেন। একদা (হযরত শামসুদ্দীন আলতামাস রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর কন্যা) সুলতানা রাজিয়া তাঁর খিদমতে কিছু স্বর্ণ মুদ্রা হাদিয়া দিলেন আর ঐ সময় তাঁর হাতে একটি লাকড়ী ছিল। লাকড়ীটি দিয়ে তিনি ঐ স্বর্ণ মুদ্রাগুলোকে বেত্রাঘাত করতে লাগলেন। যে ব্যক্তি ঐ স্বর্ণ মুদ্রা এনেছিল তিনি তাঁকে বললেন, আমার দৃষ্টিতে এর কোন কদর ও মূল্যই নেই। এগুলোকে আমার সামনে থেকে সরিয়ে নিয়ে যাও। (অসমাপ্ত)