মূলঃ হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলবী
রহমতুল্লাহি আলাইহি,
ভাষান্তরঃ –মুহম্মদ শামসুল আলম
হযরত শায়খ শরফুদ্দীন কিরমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি জন্মঃ ৬৫৯ হিজরী, ওফাতঃ ৭২৫ হিজরী হযরত শায়খ শরফুদ্দীন কিরমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ‘সারসী, কসবা’ এর অধিবাসী ছিলেন। হযরত খাজা নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, ক্বাছীদা পাঠক জুনাইদ নামধারী এক ব্যক্তির যবান থেকে আমি শুনেছি যে, হযরত শায়খ কিরমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি নাকি একদিন সামার মজলিসে একটি শে’র শ্রবণ করে এমন এক ‘আহ’ শব্দ উচ্চারণ করলেন এবং সাথে সাথে তিনি তাঁর মাশুকে মাওলার নিকট নিজের জান সোপর্দ করে দিলেন। হযরত সাইয়্যিদী মাওলাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি জন্মঃ ৫৭১ হিজরী, ওফাতঃ ৬৪০ হিজরী হযরত সাইয়্যিদী মাওলাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি সুলতান গিয়াসুদ্দীন বলবন-এর হুকুমতের সময় দিল্লীতে অবস্থান করতে ছিলেন। তাঁর অসংখ্য মুরীদ, মু’তাকিদ, মুহব্বতকারী ও অনুসারীদের ছিল। তিনি মানুষকে খাদ্য খাওয়াতেন এবং কারামত দর্শন করাতেন। তাঁর সম্পর্কে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মত রয়েছে, কেউ মনে করেন, তিনি স্বর্ণ প্রস্তুতকারক ছিলেন, আবার কেউ কেউ তাঁর কারামতের প্রতি অধিক বিশ্বাসী ছিলেন। আবার অনেকের ধারণা, তিনি যাদুকর, ভানুমতি, ভেল্কীবাজ ছিলেন। (নাঊযুবিল্লাহ মিন যালিক) সুলতান জালালুদ্দীন খলজী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সময় (মশহুর) কলন্দরীয়া তরীক্বার বুযুর্গ হযরত শায়খ আবূ বকর তুসী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর অনুসারী কলন্দরীগণ তাঁকে শহীদ করে ফেলেন। যে দিবস তাকে শহীদ করা হয় সেদিন আসমান মেঘাচ্ছন্ন ছিল এবং এত অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেল যে, মনে হলো এই বুঝি কিয়ামত শুরু হয়ে গেল। এই ঘটনার পূর্বে সুলতান জালালুদ্দীন খলজী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করতেন। কিন্তু তাঁর বেসাল, শহীদ হওয়া দিবসের হালত দেখে তাঁর খাছ ভক্ত হয়ে গেলেন। আল্লাহ পাকই অধিক জ্ঞাত। হযরত শায়খ আবূ বকর তুসী হায়দরী রহমতুল্লাহি আলাইহি জন্মঃ ৫৬৮ হিজরী, ওফাতঃ ৬৩৯ হিজরী হযরত শায়খ আবূ বকর তুসী হায়দরী রহমতুল্লাহি আলাইহি কলন্দরী ছিফতের বুযুর্গ-ওলী ছিলেন এবং হযরত জামালুদ্দীন হাঁসুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সাথে তাঁর অত্যাধিক মুহব্বত, দোস্তী ছিল। হযরত হাঁসুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি যখন হাঁসী থেকে হযরত কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর যিয়ারত লাভ ও দীদারের জন্য আসতেন তখন তিনি যমুনা নদীর তীরবর্তী হযরত শায়খ আবু বকর তুসী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর খানকায় অবস্থান করতেন। সেখানে তাঁর ছোহবত গ্রহণের উদ্দেশ্যে ছূফীয়ায়ে কিরামগণ উপস্থিত হতেন এবং সেখানে সামার মজলিস হতো। মাহবুবে ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহিও তাঁর খানকায় আসতেন এবং তাঁর মজলিসে শরীক হতেন। বর্ণিত আছে, একদা হযরত শায়খ জালালুদ্দীন হাঁসুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দিল্লী আগমনের সংবাদ শ্রবণ করে তাঁর মুরীদ দিল্লীর প্রধান খতীব এবং কাজীউল কুজাত হযরত মাওলানা হিসামুদ্দীন আন্দরপাতি স্বীয় মুর্শিদের ইস্তেকবালের জন্য অগ্রসর হলেন। তিনি যখন আপন পীর ও মুর্শিদের সাদর সম্বর্ধনার জন্য ব্যতিব্যস্ত তখন হযরত শায়খ আবূ বকর তুসী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত মাওলানা হিসামুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহিকে বললেন যে, আপনি হযরত শায়খ জামালুদ্দীন হাঁসুবী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে বলবেন যে, আমি হজ্জে যাচ্ছি। যখন শায়খ জামালদ্দীন হাঁসুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি এলেন তখন সাথে সাথে হযরত মাওলানা হিসামুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহিকে বললেন, আমার শ্বেত হস্তী অর্থাৎ শায়খ হযরত আবূ বকর তুসী রহমতুল্লাহি আলাইহি কোথায়? কি হালের মধ্যে রয়েছেন। জবাবে মাওলানা ছাহেব বললেন, তিনি তো হজ্জের জন্য রওয়ানা হচ্ছেন। (অসমাপ্ত)
বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার-৮৮