মূলঃ হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি,
ভাষান্তরঃ মুহম্মদ শামসুল আলম
হযরত মাওলানা কামালুদ্দীন যাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি জন্মঃ ৬৫৯ হিজরী, ওফাতঃ ৭৫৬ হিজরী হযরত কামালুদ্দীন যাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বুযূর্গী, পরহেযগারী এবং আমানতদারীর দিক দিয়ে মশহুর হয়ে আছেন। মাহবুবে ইলাহী, সুলতানুল মাশায়িখ রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর থেকেই (হাদীছ শরীফের বিখ্যাত, মাশহুর কিতাব) ‘মাশারিকুল আনোয়ার’ কিতাবের দরস্ নিয়েছেন। এবং হযরত মাওলানা বুরহানুদ্দীন বলখী রহমতুল্লাহি আলাইহিও তাঁর থেকে ফায়দা হাছিল করেছেন। এবং স্বয়ং কিতাবের লিখক আমি শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ফয়েয লাভ করেছি। হযরত কামালুদ্দীন যাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি ‘মাশারিক’ কিতাবটির সনদ ও ইজাযতনামা স্বীয় হাতে হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহিকে দিয়েছেন। যা কিনা (চীশ্তিয়া খানদানের বিখ্যাত কিতাব) ‘সিয়ারুল আউলিয়া’ কিতাবে বর্ণিত আছে যে, সুলতান গিয়াসুদ্দীন বলবনের একটা এই ধরণের আরজু ছিল যে, তিনি হযরত কামালুদ্দীন যাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ইমামতিতে তাঁর পিছনে নামায আদায় করবেন। এই সিদ্ধান্ত মুতাবিক তিনি তাঁকে তাঁর দরবারে তাশরীফ আনার জন্য বিনীত অনুরোধ জানান। সুলতান হযরত কামালুদ্দীন যাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিকে লক্ষ্য করে বললেন, “আপনার কামালত, ইলম্, বুযূর্গী, আমানতদারী সম্পর্কে আমার দৃঢ় আক্বীদা বা বিশ্বাস রয়েছে। কাজেই যদি আপনি দয়া করে ইমামতির দায়িত্ব কবুল করেন, তাহলে আমি আপনার কাছে ঋণী থাকব এবং আমার নিজের নামায কবুল হওয়ার ব্যাপারে পুরো ইয়াক্বীন হবে। জবাবে হযরত কামালুদ্দীন যাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, আমার তো প্রথম দিনের নামাযই বাকী রয়ে গেল। এটা ব্যতীত আমার কাছে আর কিছুই নেই। অতএব, আপনার আরজি যে কবুল করার মত সামর্থ আমার মধ্যে (একদম) নেই সেটা আপনি বুঝে নিলেন। তিনি এমন জালালী ও রো’বের সহিত এর জবাব দিলেন যার কারণে সুলতান খামোশ হয়ে গেলেন এবং সম্মান ও ইজ্জতের সহিত তাঁকে বিদায় জানালেন। হযরত শায়খ নুরুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত শায়খ নুরুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি মুল্কে ‘ইয়ার পর’ এর মশহুর কামিল দরজার ওলী ছিলেন। তাঁর আসল মাতৃভূমি হচ্ছে লার। পরবর্তীতে তিনি স্বীয় মুর্শিদের ইজাযতক্রমে দিল্লীতে তাশরীফ আনেন। তিনিও সুলতান গিয়াসুদ্দীন বলবনের যামানার শায়খ ছিলেন। হযরত খাজা নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি কখনো কখনো তাঁর মাযার শরীফে হাযির হতেন যিয়ারতের উদ্দেশ্যে। অনুমান করা হয় যে, এই দুই বুযূর্গের মধ্যে একে অপরের সাথে সাক্ষাত হতে পারে। কিন্তু এর উপর কোন নির্ভরযোগ্য দলীল মওজুদ নেই। ‘সিয়ারুল আউলিয়া’ কিতাবে হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত রয়েছে, তিনি বলেন, একদা আমি ‘কাইলু কাহর’ জামে মসজিদে জুমুয়ার নামায পড়ার জন্য যাচ্ছিলাম এবং সেদিন আমি রোযাদার ছিলাম। সেই সময় গরমের মৌসুম ছিল। গরমের তাছীর-প্রভাব আমার মধ্যে এতটা ক্রিয়া করেছিল যে, আমি মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছিলাম এবং একটা দোকানের মধ্যে বিশ্রামের জন্য বসে পড়লাম, ঐ সময় আমার অন্তরের মধ্যে উদয় হলো, আজ যদি আমার নিকট কোন সাওয়ারী থাকতো তবে তাতে সাওয়ার হতাম এবং হযরত শায়খ সা’দী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর এই শের আমার মনে পড়লো, আমি বন্ধুর তালাশে সফর করলাম যে কদমের সাহায্যে সে কদম যুগল আমাকে মনজীলে মাকছূদে পৌঁছাতে পারলো না। অতঃপর আমি আমার দিলের সুওয়াল ও ইরাদা থেকে ইস্তিগ্ফার করলাম। এই ঘটনার তিন দিন পরই মূল্কে ‘ইয়ার পর’ এর শায়খ-এর এক খলীফা একটি ঘোটকী নিয়ে আসলো এবং আমাকে বললো, এটাকে কবুল করুন। আমি তাকে বললাম, আপনি তো নিজেই ফকীর, আপনার অবস্থা তো আমারই মতো, কাজেই আপনার অবস্থার দিকে তাকিয়ে আমি এটা কিভাবে কবুল করতে পারি? পরিশেষে এই হাদীয়া আমি কবুল করতে অস্বীকার করলাম। (অসমাপ্ত)
বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার-৮৮