পূর্ব প্রকাশিতের পর
হযরত শায়খ কুতুবুদ্দীন মুনাওওয়ার
রহমতুল্লাহি আলাইহি
বলা হয়ে থাকে যে, হযরত শায়খ মুনাওওয়ার এবং সুলতান মুহম্মদ তুগলক এর মধ্যে ঐ সময় সাক্ষাৎ হয়েছিল যখন সে হাঁসী যাচ্ছিলেন। হাঁসী থেকে আট মাইল পূর্বে মবনী জায়গায় বাদশাহর কিয়ামগাহ ছিল। বাদশাহ নিযাম যারবার মুখলিছুল মুলুককে যে নাকি অত্যন্ত যালিম ছিল তাঁকে হাঁিসর কেল্লা দর্শনের জন্য পাঠালো এই জন্য যে, সে যাতে পুরো কিল্লার অবস্থাটা বাদশাহকে ভালভাবে বলতে পারে। নিযাম যখন কিল্লার নীচে একটি ঘরের নিকটবর্তী হলো তখন লোকদের জিজ্ঞেস করলো, এই ঘর কার? লোকেরা বললো, এটি হচ্ছে হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর খলীফা হযরত শায়খ মুনাওওয়ার রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ঘর। তখন সে বললো, আশ্চর্য্যরে বিষয়। বাদশাহ এখানে এসেছেন অথচ তিনি (ইস্তেকবালের জন্য) তাঁর সাক্ষাতে গেলেন না। অতঃপর নিযাম পূনরায় বাদশাহকে (শায়খের বিরুদ্ধে) বললো, এখানে হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর একজন খলীফা রয়েছেন যিনি আপনার এখানে আসেননি। বাদশাহ্র হুকুমতের বা ক্ষমতার প্রত্যাশা তার মধ্যে ছিলো। এতদ্শ্রবণে বাদশাহ একজন সম্মানিত ও ক্ষমতাসম্পন্ন লোক হাসান সরবরহেনাকে হুকুম দিয়ে বললেন, যাও এক্ষনি শায়খ কুতুবুদ্দীন মুনাওওয়ার রহমতুল্লাহি আলাইহিকে পাকড়াও করে এখানে নিয়ে আস। যখন হাসান সরবরহেনা শায়খ মুনাওওয়ার রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মজলিসে এসে বসলো তখন শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর একজন সন্তান হযরত শায়খ নূরুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি বাইরে তাশরীফ এনে তাকে বললেন, আমাদের আঁকা আমাদের সর্দার আপনাকে ভিতরে ডেকেছেন। হাসান শায়খ মুনাওওয়ার রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর খিদমতে হাজির হয়ে মুসাফাহা করে তাঁর মজলিসে বসলেন ও আরজ করলেন যে, বাদশাহ্ আপনাকে ডেকেছেন। শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি জানতে চাইলেন যে, বাদশাহ্র দরবারে যাওয়া না যাওয়া আমার ইচ্ছাধীন কিনা? হাসান সরবরহেনা বললেন, শাহী নির্দেশ হচ্ছে আপনাকে যেন আমি সাথে করে নিয়ে যাই। এটা শ্রবন করে হযরত শায়খ মুনাওওয়ার রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, আলহামদুলিল্লাহ! তাহলে আমার নিজ ইচ্ছায় (রাজ দরবারে) যেতে হচ্ছে না (বরং জোরপূর্বক আমাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে)। এটা বলে তিনি স্বীয় ঘরে প্রবেশ করে ঘরের লোকদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহ পাক-এর উপর সোপর্দ করলাম। অত:পর তিনি তাঁর জায়নামায মুবারক কাঁধে নিয়ে ও লাঠি মুবারক হাতে নিয়ে পায়ে হেঁটেই রওয়ানা হলেন। হাসান তাঁর চেহারা মুবারকের বুযূর্গীয়ত লক্ষ্য করে আরজ করলো, আপনি কেন পায়ে হেঁটে রওয়ানা হয়েছেন? শক্তিশালী ঘোড়া সঙ্গে আছে। যে কোন একটির উপরে আপনি সওয়ার হোন। শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি জাওয়াব দিলেন, আমার ঘোড়ার উপরে সওয়ার হওয়ার প্রয়োজন নেই। এখন পর্যন্ত আমার এতটুকু শক্তি রয়েছে যা দ্বারা আমি পায়ে হেঁটেই চলতে পারি। হযরত শায়খ মুনাওওয়ার রহমতুল্লাহি আলাইহি যখন স্বীয় পূর্ব-পুরুষগণের কবরস্থানের কাছে পৌঁছলেন তখন সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করে দোয়া করার জন্য অনুমতি চাইলেন। হাসান অনুমতি দিলো। তিনি কবরস্থানে গিয়ে বললেন, আমাকে আপনাদের আদর্শ (মতবাদ/আমল-আক্বীদা) থেকে ইখতিয়ারহীনভাবে দুনিয়াদারদের নিকটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমি স্বেচ্ছায় স্বীয় ঘর থেকে বের হইনি। বরং আমাকে জোরপূর্বক নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং কতিপয় আল্লাহওয়ালা লোকদেরকে নিঃস্ব অবস্থায় ঘরে রেখে এসেছি। অত:পর তিনি কবরস্থান থেকে বের হয়ে এসেই দেখতে পেলেন এক ব্যক্তি পঁচিশ টাকা নিয়ে হযরত শায়খ মুনাওওয়ার রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকটে হাজির হয়েছে। তিনি সেই আগুন্তককে বললেন, টাকা আমার ঘরে দিয়ে আস। কারণ তাঁদের কাছে কিছুই নেই। হযরত শায়খ মুনাওওয়ার রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর এ সকল অবস্থা হাসান বাদশাহ্র কাছে বর্ণনা করলো। কিন্তু এ সকল কথা বাদশাহ্কে কোন তাছির করলো না। বাদশাহ্ হযরত শায়খ মুনাওওয়ার রহমতুল্লাহি আলাইহিকে তার কাছে ডাকলেন। (অসমাপ্ত)
বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার-১০