হযরত শায়খ সিরাজুদ্দীন উসমান গৌঢ়ী বহমতুল্লাহি আলাইহি
(ধারাবাহিক)
হযরত মাহবুবে ইলাহী তার জীবদ্দশাতেই তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন, তিনি হচ্ছেন হিন্দুস্থানের আয়না। বর্ণিত রয়েছে হযরত শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট থেকে যা কিছু তার্বারুক পেয়েছিলেন সবই যমীনের মধ্যে দাফন করে দিয়ে সেটি একটি কবর বানিয়েছেন। তিনি ইন্তিকালের বহু আগে তাঁর সঙ্গীদেরকে ওছীয়ত করেছিলেন যাতে তাঁকে ঐ কবরে রাখা হয়। যে কবরে তাঁর বরকত তার্বারুকগুলো রয়েছে। অতএব, তাঁর ওছীয়ত অনুযায়ী ইন্তেকালের পর তাঁকে সেখানেই সমাহীত করা হলো। গৌঢ় শহর তাঁর খলীফাদের নিকট অত্যন্ত মশহুর। তাঁদের মধ্যে হযরত শায়খ আলাউদ্দীন হক পান্তুয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি অধিক পরিচিতি লাভ করেছেন। তাঁর মাযার মুবারক গৌঢ়ের পা-ুয়া শহরে অবস্থিত।) যা কিনা এখনও সমাদর হয়ে আছে। তাঁর ‘কিয়ামগা’ও এই শহরেই ছিল। হযরত শায়খ হুস্সামুদ্দীন মানিকপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ‘মালফুজাত’-এর মধ্যে রয়েছে, হযরত শায়খ উসমান রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট এক সোহ্রাওয়ার্দী দরবেশ মেহমান হয়েছিলেন। তিনি অর্থাৎ শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি ইশার নামাযের পর নিদ্রা যাওয়ার কাপড় পরিধান করে শুয়ে পড়লেন। আর সোহ্রাওয়ার্দী দরবেশ রাত ভর ইবাদত-বন্দিগীতে মশগুল ছিলেন। সুবহে সাদিকের সময় তিনি বিছানা ত্যাগ করে রাতের ইশার ওযু দিয়ে ফজরের নামায আদায় করলেন। এই দৃশ্য দেখে দরবেশ ছাহেব বলে উঠলেন, আশ্চর্য্য একেতো আপনি সারা রাত ঘুমালেন তারপর আবার ওযুবিহীন অবস্থায় ফজরের ছলাত আদায় করলেন। হযরত শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, আপনি হচ্ছেন বুযুর্গ। সারারাত ইবাদত-বন্দিগীর মধ্যে কাটিয়ে দিলেন। আর আমি সামান পাহারা দেয়ার কাজে লিপ্ত আছি। কেননা তাকের উপর চোর রয়েছে। এই জন্য আমি তার হিফাজতে থাকি। শায়খ বললেন, যদিও হাক্বীক্বী আশেক কোন ওজরবশত মসজিদে আসতে পারেনা। কিন্তু তার দিল হামেশা নামাযে মশগুল থাকে। হযরত শায়খ কুতুবুদ্দীন মুনাওওয়ার রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত শায়খ কুতুবুদ্দীন মুনাওওয়ার, হযরত শায়খ জামালুদ্দীন হাসুবী রহমতুল্লাহি-এর ফরজন্দ এবং হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নৈকট্যশীল কারামত প্রকাশপ্রাপ্ত কামিল খলীফাদের মধ্যে গন্য ছিলেন। তিনি মানুষের সমাগম থেকে দূরে অবস্থান করতেন। সারা জীবন তিনি কাজের প্রতি অটল ছিলেন। জরুরত ব্যতীত তিনি কখনো নিজ হুজরা শরীফ থেকে বাইরে আসতেন না এবং আমীর-বাদশাহদের দরবারেও যেতেন না। তাঁর (পবিত্র) হায়াতে যিন্দীগীর পুরোটাই তিনি ছবর, তাওয়াক্কুল, কানায়াতের উপর দিন গুজরান করেছেন। একবার সুলতান মুহম্মদ তুগলক বাদশাহ কাজী কামালুদ্দীন ছদর জাঁহাকে হযরত শায়খ মুনাওওয়ার রহমতুল্লাইহি আলাইহি-এর নিকট পাঠালেন এবং কাজী ছদর জাঁহার সাথে এক শাহী সৈন্যসামন্ত দিলেন। তাদের প্রতি শাহী ফরমান ছিল তারা যাতে হযরত শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহিকে (এই মর্মে খোশ খবরী দেন যে) বাদশাহ স্বয়ং আপনাকে ওমুক ওমুক গ্রাম জায়গীর হাদিয়া দিয়েছেন। এটা দ্বারা বাদশাহর উদ্দেশ্য ছিল হযরত শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহিকে দুনিয়ার ফেরেবে গ্রেফতার করা। এরপর তার স্বভাব আদত মুতাবিক যেমন নাকি সে অন্যান্য দরবেশ বুযুর্গদেরও কষ্ট দিয়ে থাকে। তেমনি হযরত শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি এর উপরও সে ঐ ধরনের আচরণ করতে যাচ্ছিলেন। ছদর জাঁহা যখন হযরত শায়খ মুনাওওয়ার রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট এসে বাদশাহ জায়গীর দানের কথা বললেন, তখন শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, সুলতান নাছিরুদ্দীন বিন ছামসুদ্দীন যখন মূলতানের উঁচ শহরের যাচ্ছিলেন তখন তাঁর আমিরুল আমরা গিয়াসুদ্দীনকেও (হুবহু) বাবা ফরিদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শকর রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর খিদমতে বাদশাহী ফরমান হিসেবে বাবা ছাহেবকে জায়গীর দানের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু বাবা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, আমাদের মাশায়িখগণ এই ধরনের জায়গীর কবুল করতেন না। জায়গীর গ্রহণ করার মত আরো অনেক লোক রয়েছে তাদের দিয়ে দেয়া হোক। আপনার জানা রয়েছে আমিও তাঁর সিলসিলার মধ্যে মুরীদ হয়েছি। কাজেই আমাকে এমন কাজ করা দরকার যা তিনি করেছেন।
বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার-১০