বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি  আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার-১০৩

সংখ্যা: ১৪৩তম সংখ্যা | বিভাগ:

মূলঃ হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহ্লভী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ভাষান্তরঃ মুহম্মদ শামসুল আলম

হযরত নাছিরুদ্দীন চেরাগে দেহলভী

রহমতুল্লাহি আলাইহি

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

তিনি বলেন, প্রত্যেক আমল ও  কাজ করার জন্য একটা নির্দিষ্ট পথে চলতে হয় এবং এটা জযবার উপর ভিত্তি করেই হয়ে থাকে। যে কাজ বা আমলের মধ্যে জযবা অনুভূত হয় না, সেটা কবুলিয়াতের মধ্যে আসে না। যখন কোন কাজ জযবা, হালের সহিত করা হয় তখন সেটা দ্রুত ও তড়িৎ গতীতে সম্পন্ন হয়ে যায়। এই জযবা, আকর্ষণের নির্দিষ্ট কোন ওয়াক্ত বা সময় নেই। এটা কখনো শৈশবে বা কম বয়সে, কখনো যৌবনে, কখনো বা বৃদ্ধ বয়সেও তৈরি হতে পারে। এতদভিন্ন এ জযবার কয়েক শ্রেণীর হতে পারে। প্রথমতঃ জযবায়ে আম বা সাধারণ জযবা। এই শ্রেণীর জযবার মাধ্যমে আমল করার তৌফিক পয়দা হয়। দ্বিতীয় শ্রেণীর জযবা হচ্ছে জযবায়ে খাছ। এই জযবা দ্বারা আত্মা খোদা তায়ালার তাবে বা অনুগামী হয়ে থাকে এবং গাইরুল্লাহর সহিত এর কোন সম্পর্ক থাকে না। মজলিসের সঙ্গীগণ প্রশ্ন করলো, হে শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি! রাতের প্রথম ওয়াক্ত বেশি বরকত ফযীলতপূর্ণ, না শেষ অংশ? জবাবে তিনি বললেন, হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে, একবার হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত জিব্রাইল  আমিন আলাইহিস্ সালামকে জিজ্ঞেস করলেন, রাতের কোন সময় বেশি গুরুত্ব, মর্যাদাপূর্ণ? হযরত জিব্রাইল আলাইহিস্ সালাম বললেন, এ সম্পর্কে আমার জানা নেই। মোটকথা হলো অর্ধরাত্রির পর ফেরেশতাগণের শরীরে কম্পন শুরু হয় এবং আরশে মুয়াল্লাহ দোলায়িত হয়। (এর অর্থ ঐ সময় হতে আল্লাহ পাক-এর খাছ রহমত বর্ষিত হয় যমীন ও আসমানবাসীদের উপর)। এছাড়াও মহান আল্লাহ পাক তাঁর বান্দাদের উপর প্রত্যেক সময়ই তাঁর দয়া ও ইহসান অনুকম্পার বারিধারা বর্ষণ করতে থাকেন। ভালভাবে বুঝে নাও (এ খাছ রহমত বর্ষণের সময় অর্থাৎ অর্ধ রাত্রির পর) তুমি আল্লাহ পাক-এর দরবারে (তোমার প্রার্থীত বিষয় সম্পর্কে) সিজদারত অবস্থায় যমীনে কপাল ঠেকিয়ে রাখো।  হাদীছ শরীফে আরো রয়েছে, আখেরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

رايت ربى ليلة المعراج فى احسن صورة.

অর্থঃ “মিরাজের রাত্রিতে আমি আমার রবকে উত্তম ছূরতে দেখেছি।” এই হাদীছ শরীফে فى احسن صورة শব্দটির অর্থ এই যে, স্বয়ং হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই উত্তম ছূরত বিশিষ্ট ছিলেন। অর্থাৎ ঐ সময় তিনি নিজেই সন্তুষ্ট, পূর্ণ ইতমিনান, উত্তম হালত, পরিতৃপ্ত, উল্লসীত, স্বতঃস্ফুর্ত কায় ছিলেন। এটা এমন যেমন নাকি বলা হয়ে থাকে, আমি বাঘকে সওয়ার হতে দেখেছি। অর্থাৎ সওয়ারের উপর স্বয়ং মুনিব বা মালিকই ছিলেন। শবে মি’রাজের রাত্রিতে আখিরী নবী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে খোশ মেজাজে ও উৎফুল্ল ছিলেন এই বলে যে, আল্লাহ পাক তাঁকে মি’রাজের মত একটি বড় নিয়ামত ও মাক্বাম দান করেছেন, সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণের সাথে সাক্ষাৎ, সুসংবাদ, অগণিত রহমত, বরকত, ফুয়ুজাত, নূরসমূহের মধ্য দিয়ে তিনি মহান আল্লাহ পাক-এর র্কোবে ইলাহীর চরম পরম নৈকট্য লাভে ধন্য হয়েছেন। আর এজন্যই তাঁর পবিত্র চেহারা মুবারক সুন্দর,  উজ্বল উৎফুল্ল দেখাচ্ছিল। আর رب শব্দ দ্বারা আক্বা, মাওলা, সাইয়্যিদ, সর্দার ইত্যাদি বুঝানো হয়। যেমন বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমি মি’রাজে ফেরেশ্তাগণের সর্দার হযরত জিব্বাইল আলাইহিস্ সালামকে বিশেষ ছূরতে দেখেছি। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত জিব্রাইল আলাইহিস্ সালামকে সর্দার, আঁকা বলার অর্থ এমনভাবে শুদ্ধ যেমন নাকি হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর ক্বওলঃ তিনি বলেন, আমি আমার মুনিবকে অর্থাৎ আঁকা, সর্দারকে মদীনা শরীফে এমনভাবে চলতে দেখেছি যে, তিনি খয়েরী রংয়ের জুব্বা ও সেন্ডেল পরিধান অবস্থায় ছিলেন। এ কথা শুনার পরই লোকগণ হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞেস করলো, হে আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! মুসলমান হওয়ার পরও আবার কুফরীমূলক কথা উচ্চারণ করছেন? তখন তিনি মুচকি হাসি হেসে বললেন, আমি আমার রব অর্থাৎ আমার সাইয়্যিদ হযরত হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে এমনভাবে দেখেছি যখন কথা-বার্তা এমন চলছিল তখন লোকজন বললো,

ان الله خلق ادم على صورته.

 “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে তাঁর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন।” صورته – এর মধ্যে “ه” (তাঁর) যমীর হযরত আদম আলাইহিস সালাম-এর দিকে ইঙ্গিত করে। (অসমাপ্ত)

 বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি  আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার- (৯৫)

বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি  আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার- (৯৬)

বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি  আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার- (৯৭)

বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি  আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ-আখবারুল আখইয়ার-(৯৮)

বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি  আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার- (৯৯)