বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি  আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার-১০

সংখ্যা: ১৪২তম সংখ্যা | বিভাগ:

মূলঃ হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহ্লভী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ভাষান্তরঃ মুহম্মদ শামসুল আলম

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

হযরত নাছিরুদ্দীন চেরাগে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি

মাথা মুণ্ডানোর অর্থ হচ্ছে (মাথা মুন্ডানো সুন্নত নয় হজ্ব ও উমরাহ ব্যতীত) সালিক তরীক্বত ও তাছাউফের রাস্তায় আসার পর (প্রথম) তার মাথা মু-িয়ে ফেলে। কারণ এ রাস্তায় প্রথম মঞ্জিল হচ্ছে স্বীয় মস্তক খোদা তায়ালার রাস্তায় উৎসর্গ, কুরবানী করা। যদিও সালিক তার জিসম্ থেকে মস্তক পৃথক করে দেয় তবে আর কিছুই করতে পারবে না। (বরং তাঁর অস্তিত্ব, অজুদই আর এ দুনিয়ায় থাকবে না)। এবং মাথা মুণ্ডানোর অর্থ যদি (শুধু) এভাবে ধরে নেয়া হয় যে, নিজের মাথার চুলগুলোকে (বারবার) কামিয়ে ফেলা, তবে এটা টাক মাথাওয়ালা ব্যক্তির মত।

এই শ্রেণীর লোকদেরকে মাথা মুণ্ডানো বা মাথা কর্তনকারী বলে থাকে। এ ব্যক্তিও কোন কাজে আসবে না। সম্ভবত মাথা থেকে চুলগুলোকে আলাদা করে দেয়ার পর মাথার মধ্যে যে ব্যথা শুরু হবে সেই ব্যথার জন্য কোন কাজ করা যাবে না। এ সমস্ত ঘটনা, হালাত, অবস্থাসমূহের দিকে দৃষ্টি দিয়ে মাথা মুণ্ডানোর অর্থ এই হয় যে, কোন শরীয়তের খিলাফ কাজ যাতে তার দ্বারা ভুলক্রমে সংঘঠিত না হয়।

মজলিসের মধ্য থেকে কেউ বলে উঠলো, جاهدوا فينا. এর মর্ম কি? জবাবে বললেন, সহজভাবে এর জবাব দিতে পারবো না। মোটকথা, সহজ, সরল তরীক্বার মাধ্যমে আমি তোমাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি।  جاهدوا فينا -এর মতলক্ব (সাধারণ) অর্থ হচ্ছে, আমাদের জন্য কোশেশ করা এবং جاهدوا فى الله এর অর্থ হলো “আল্লাহ পাক-এর জন্য কোশেশ করা فى (ফী) লফ্য বা শব্দের অধিক মিলন, নৈকট্য এর বেলায় এসে থাকে। যা কিনা “ل” (লাম) লফ্য বা শব্দের বেলায় হয় না। এ ছাড়াও فى (ফী) লফ্য বা শব্দ হচ্ছে ظرفية এবং ظرف তার مظروف অনুযায়ী হয়ে থাকে। যেমন আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন,

انما الصدقت للفقراء والمسكين والعملين عليها والمؤلفة قلوبهم وفى الرقاب

অর্থঃ যাকাত ফক্বীর, মিসকীন, যাকাত আদায়কারী কর্মচারী, যাদের মন রক্ষা করা প্রয়োজন, যাদের মওজুদ অর্থের তুলনায় ঋণ অধিক তাদের জন্য এবং গোলাম আযাদ করার জন্য।” (সূরা তওবা-৬০)

ফকীর, মিসকীন তো শুধু ছদকা পেটের ক্ষুধা নিবারণের জন্য নিয়ে থাকে। আর رقاب দ্বারা গোলাম আজাদ করা বুঝায়। কেননা যার গর্দান, মস্তক ছিন্ন হয়ে গেছে সে মুর্দা বা মৃত সদৃশ। আর যে না কি গোলাম আজাদ করলো সে মুর্দাকে জিন্দা করলো। এখানে অধিক প্রয়োজনীয়তাকে “فى‘” (ফী) হরফ দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছে, যা কিনা “ل” (লাম) হরফ দ্বারা সম্ভবপর নয়। এবং কানুনের খিলাফও বটে। এছাড়াও গর্দান আযাদ করা যে রকমভাবে শান শওকতের সহিত হুকুম দেয়া হয়, তেমনিভাবে অন্য কিছুর বেলায় তা হয় না। এই তাহক্বীক্ব ইলমে নাহুর সাথেও তায়াল্লুক রেখে চলে।

হযরত মাশায়িখে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ বলেছেন, তরীক্বতের রাস্তায় যে সমস্ত সালিক রিয়াজত মুজাহাদা করেন তারা তিন শ্রেণীর হাল থেকে খালি নয়। প্রথমতঃ মুজাহাদা অনেকেই করে (নিছক) দোযখের ভয়ে বা দোযখ থেকে নাজাত পাবার জন্য।

দ্বিতীয়তঃ অনেকে বেহেশ্ত লাভ করার জন্যও মুজাহাদা করে থাকে।

তৃতীয়তঃ আল্লাহ পাক-এর জাতের (পরিচয়) এবং তাঁর রেজামন্দী ও খোশনদী তলবের জন্যও অনেকে পরিশ্রম করে থাকে। যে সালিক শুধুমাত্র আল্লাহ পাক-এর জাতের জন্য মুজাহাদা করে থাকে তাঁর এই লিল্লাহিয়াত বা ফিল্লাহিয়াত আল্লাহ পাক-এর জন্যই হবে। এই শ্রেণীর মুজাহাদার এত ক্বদর ও এত মুল্য এই জন্য যে, এটা শুধুমাত্র তাঁর জাতের জন্যই করা হয়। যেমন পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

وجاهدوا فى الله حق جهاده.

অর্থঃ “তোমরা আল্লাহ পাক-এর রাস্তায় যথাযথভাবে কোশেশ কর।” (সূরা হজ্জ-৭৮)

সাধারণ মানুষ বা আম জনতার নিকট ইঞ্ঝিত বস্তু বা কাঙ্খিত জিনিসের যেমন ক্বদর নেই তেমনি তারা এ বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন বা সজাগও নয়। এই জন্য তারা প্রকৃত বা হাক্বীক্বী হক্ব তালাশের নিমিত্তে তেমন (কষ্ট স্বীকার) চেষ্টা, কোশেশও করে না। (অসমাপ্ত)

 বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি  আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার- (৯৫)

বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি  আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার- (৯৬)

বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি  আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার- (৯৭)

বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি  আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ-আখবারুল আখইয়ার-(৯৮)

বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি  আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার- (৯৯)