মূলঃ হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ভাষান্তরঃ মাওলানা মুহম্মদ ফজলুল হক
হযরত আলী শাহ জানদার রহমতুল্লাহি আলাইহি
(৬৫৬ হিজরী-৭১১ হিজরী)
হযরত আলী শাহ জানদার রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত খাজা নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মুরীদ ছিলেন। তিনি স্বীয় কিতাব ‘খুলাছাতুল লাতায়িফ’-এর মধ্যে লিখেছেন, “আমি স্বীয় শায়খ হযরত খাজা নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহিকে মুরাকাবা হালতে দেখতে পেলাম। আমি কোন এক সময় ঐ অবস্থায় তাঁর মজলিসে প্রবেশের ইচ্ছা করলাম। একবার আমি তাঁর মজলিসে প্রবেশ করে দেখতে পেলাম, তিনি চুপ করে বসে আছেন। মজলিস খুব সুন্দর সাজানো গুছানো ছিলো। হযরত খাজা নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি কোন নড়াচড়া না করে বসে রইলেন। আমি ঢুকলাম। শায়খ জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কে? এ অবস্থা দেখে আমি ফিরে আসতে চাইলাম, লক্ষ্য করলাম, শায়খ এদিক-সেদিক তাকাচ্ছেন, মনে হচ্ছে তিনি খুব চিন্তিত। তিনি বলছেন, আল্লাহওয়ালাগণের উচিত যে, স্বীয় অন্তরে খুশু-খুযূর সাথে মহান আল্লাহ পাককে হাজির নাজির জেনে আল্লাহ পাক-এর সামনে মুরাকাবায় বসা। আমাকে আরো বললেন, ঐ স্থানে গিয়ে স্বীয় পীর ভাইদের সাথে বস, এখন আমার অবসর নেই।
হযরত শায়খ আলাউদ্দীন
রহমতুল্লাহি আলাইহি
(৬৫৯-৭১০ হিজরী)
হযরত শায়খ আলাউদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত শায়খ বদরুদ্দীন সুলাইমান রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বংশধর ছিলেন। তিনি ইমামুল আইম্মাহ হযরত শায়খ ফরীদুদ্দীন গঞ্জে শোকর রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সাজ্জাদানশীন ছিলেন। তিনি মাত্র ১৬ বছর বয়স মুবারকে এ মহান দায়িত্বে সমাসীন হন এবং ৫৪ বছর বয়স মুবারক পর্যন্ত সমস্ত দায়িত্ব যথাযথ ও সুন্দরভাবে সু-সম্পন্ন করেন। তিনি স্বীয় জীবনে বড়ত্ব মহত্ত কারামত ও বুযূর্গীতে অত্যাধিক সুখাতি অর্জন করেছিলেন। শুধুমাত্র জামে মসজিদে জুমুয়ার নামায আদায় ব্যতীত অন্য কোথাও বের হতেন না। রাজা-বাদশাহ ও দুনিয়াদার লোকদের সর্বদা পরহেজ করতেন। জীবনের অধিকাংশ সময় রোযা রাখতেন। রাতের বেশীর ভাগ সময় অতিবাহিত হলেই সামান্য কিছু আহার করতেন। অত্যন্ত অল্প আহারী ছিলেন তিনি।
দয়াদ্রর্তা, দানশীলতা ও পুতঃপবিত্রতায় তিনি নজীরবিহীন ছিলেন। হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর শানে নিম্নোক্ত প্রসংশাসূচক কাছীদা লিখেন যার অর্থ হচ্ছেঃ “হে দ্বীন দুনিয়ার সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী সুমহান ব্যক্তি! আপনি বর্তমান জামানায় অন্যতম শ্রেষ্ঠ শায়খের সুমহান পুত্র। আপনি শায়খ ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শোকর রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ক্বায়িম-মক্বাম।
যখন আপনার চেহারা মুবারক থেকে নূরের তাজাল্লী ও সুঘ্রাণযুক্ত ঘাম মুবারক বের হয় তখন আপনার পেশানী মুবারকের নূর হাজারো সূর্যকেও (হার মানায়) লজ্জিত করে।
যদি আপনার সুমহান ফযীলত, মর্তবা, সুরাইয়া তারকা জানতো বা দেখতো তবে আসমানও ক্বিয়ামত পর্যন্ত খুশী ও আনন্দিত হয়ে যেত।
এই সুপুরুষ থেকে খুরশীদ (সূর্যও) সূরা বা আলো চায়। কারণ তাঁর হাক্বীক্বী রৌশনী (নূর) দেখলে (সমস্ত কায়িনাতই) তাঁর তাবেদারী করবে। দুনিয়ায় অবস্থানকারী সকল মানুষ যামানার বারংবার বিবর্তনের কারণে ঐ ব্যক্তির মত নির্ভয় হয়ে গিয়েছে, যে আপনার ছোহবতে ধন্য হয়ে আপনার মুবারক দামান ধরে নিরাপদে বসে আছে।
আপনার ছানা-ছিফত করার জন্য অন্যান্য লোকদের সাথে আমিও সারা রাত এভাবে সজাগ থাকি যেমন ওলীআল্লাহগণ শবে ক্বদর ও ঈদের রাত্রি ইবাদত-বন্দিগীতে অতিবাহিত করেন।
আপনার হায়াত মুবারক দুনিয়াকে নতুন যিন্দিগী দান করেছে। সুতরাং আপনার মুবারক ছানা-ছিফতের জন্য আমীর খসরুর সারাজীবন খুবই কম সময়। (সারা জীবন আপনার প্রশংসা করে শেষ করা সম্ভব নয়)।”
তাঁর মাযার শরীফ হযরত শায়খ ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শোকর রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মাযার শরীফের নিকটে অবস্থিত। তাঁর মাযার শরীফের উপরে স্বীয় মুরীদ সুলত্বান মুহম্মদ তুঘলক এক আলীশান গম্বুজ তৈরি করেছেন। আল্লাহ পাক তাঁর উপর স্বীয় রহমত বর্ষণ করুন। (আমীন)
বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার-১০