মূলঃ হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি
ভাষান্তরঃ মাওলানা মুহম্মদ ফযলুল হক
হযরত শায়খ শরফুদ্দীন আহমদ
রহমতুল্লাহি আলাইহি ৬৮৫-৭৫৬হি:
পূর্ব প্রকাশিতের পর
হযরত শায়খ নজীবুদ্দীন কুবরা ফেরদাউসী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত আলাউদ্দীন ফেরদাউসী রহমতুল্লাহি আলাইহি রিয়াজত মুশাক্কাত ও কামালিয়তের পূর্ণতা-এর দিক থেকে সমপর্যায়ের ছিলেন। ঐ দুই বুযুর্গই রোযা রাখতেন এবং এক সপ্তাহ পর পর ইফতার করতেন। ঘরের রুটি এবং জঙ্গলের শাক সব্জিই হতো উনাদের খাদ্য। একবার ঐ দুই বুযুর্গ একত্রিত হয়ে হযরত শায়খ জিয়াউদ্দীন আবু নজীব সোহরাওয়ার্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকটে তাশরিফ নিলেন এবং বললেন- “জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু অদ্যাবধি কোন কাজই করতে পারলাম না। যদিও অনেক রিয়াজত-মুশাক্কাত করা হয়েছে, কিন্তু আজ পর্যন্ত মঞ্জিলে মকসূদে পৌছতে পারিনি।” ইহা শুনে হযরত জিয়াউদ্দীন আবু নজীব রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, ভাই আমিও ঐ একই রোগের রোগী। এর জন্য সর্বোত্তম ওষুধ হচ্ছে কোন হক্কানী-রব্বানী ওলী আল্লাহ’র হাতে বাইয়াত হয়ে যাওয়া। তখন ঐ তিন বুযূর্গ ব্যক্তি একত্রিত হয়ে হযরত শায়খ ওয়াজীহুদ্দীন আবু হাফস ইবনে উমর ইবনে উমাইয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট চলে গেলেন। হযরত শায়খ ওয়াজীহুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত শায়খ জিয়াউদ্দীন ও হযরত শায়খ আলাউদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহিকে কিছুদিন পরেই খিলাফত দিয়ে রওয়ানা হয়ে গেলেন। আর হযরত শায়খ নজীবুদ্দীন কুবরা রহমতুল্লাহি আলাইহিকে হযরত শায়খ নজীব ফেরদাউসী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট সোপর্দ করে বললেন, উনাকে আপনার কাছে রেখে দেন। মাত্র সাত মাস পরে তিনি হযরত শায়খ নজীবুদ্দীন কুবরা রহমতুল্লাহি আলাইহিকে খিলাফত দিয়ে দিলেন। আর তাকে বললেন, আপনি ফিরদাউসী মাশায়িখগণেরই অন্তর্ভুক্ত। সেদিন থেকেই তিনি ফেরদাউসী খান্দানে চলে গেলেন। হযরত শায়খ শরফুদ্দীন আহমদ খাইরী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর প্রসিদ্ধ মালফুযাত ব্যতীত অন্যান্য সকল লিখনী, যা হযরত শায়খ মুজাফফর বলখী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাহরীর করেছিলেন যিনি হযরত শায়খ নজমুদ্দীন কুবরা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মুরীদ ও খলীফা ছিলেন। উহাতে বর্ণিত আছে যে, পঁচিশ বছর যাবত হযরত শায়খ মুজাফফর রহমতুল্লাহি আলাইহি সুলূকের অবস্থায় যত হাল, মুয়ামিলাত ইত্যাদির সম্মুখীন হয়েছেন সবই তিনি স্বীয় শায়খকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন এবং শায়খও উহার প্রত্যেকটির জাওয়াব দিয়েছেন। হযরত শায়খ শরফুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি কোন কোন চিঠির নীচে ইহা লিখে দিতেন, হে ভাই! আপনার সমস্ত মুশকিলাত ও হালত-এর সঠিক সমাধান আমি দিয়ে দিলাম। তবে ইহা কাউকে দেখাবেন না। কারণ ইহা মহান আল্লাহ পাক-এর রুবুবিয়াতের গুপ্ত রহস্য প্রকাশের মাধ্যম। যখন হযরত শায়খ মুজাফফর রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর কোন মুরীদ ঐ সকল চিঠির উত্তরের উপকারিতা প্রকাশ করার দরখাস্ত করলেন তখন তিনি স্বীয় শায়খ-এর মুবারক অসীয়ত পালনার্থে এবং মহান আল্লাহ পাক-এর গুপ্ত রহস্য যাতে প্রকাশিত না হয় সে ভয়ে উক্ত জবাব সম্বলিত মুবারক চিঠি মোহরাঙ্কিত করে নিজ হিফাযতে রেখে দিলেন। এই ঘটনার বর্ণনাকারীর বক্তব্য হচ্ছে এই সকল মোহরাঙ্কিত চিঠির সংখ্যা দু’ শ এরও অধিক। এমনকি হযরত শায়খ মুজাফফর রহমতুল্লাহি আলাইহি বিছাল শরীফের পূর্বে ওসীয়ত করলেন যে ঐ সকল চিঠি মুবারক যেন তাঁর কাফনের কাপড়ের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। অসীয়ত অনুযায়ী তাই করা হলো। যার ফলে শায়খ মুজাফফর রহমতুল্লাহি আলাইহি এর শান-মান, বুযুর্গী তেমনটি যাহির হয়নি। একটি পাত্রে ঐ সকল চিঠি থেকে এক বান্ডিল চিঠি বাকি রয়ে গেল। যার কতিপয় প্রকাশিত হয়েছে। তা থেকে যেগুলো পাঠক ও শ্রোতাদের সুলূক এর পথে ফায়দাদায়ক সেগুলো থেকে আমি দু’ তিনটি নিম্নে বর্ণনা করছি।
প্রথম মাকতুব: দায়েমীভাবে সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক-এর জন্যই-
ہر بلا ایں قوم راحق داده است
زیر آں گنج کرم بنہ ده است
অর্থঃ যতসব বালা-মুছীবত মহান আল্লাহ পাক এই সম্প্রদায়কে দান করেছেন, তবে তাঁর জিম্মাদারীতে দয়ার খাযীনাও গোপন রেখেছেন।
হে ভাই মুজাফফর! আপনার প্রতি ছালাম ও দোয়া। স্বীয় সকল কৃতকর্মে ব্যক্তিত্ব রক্ষা করবেন। কঠিন কঠিন কার্যাবলী সুলূকের পথে পরীক্ষা স্বরূপ এসে থাকে। কাজেই কোন অবস্থায় যেন ভুল না হয় খেয়াল রাখবেন।
প্রিয় ভাই! হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণের সুমহান শান-মান সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন-এর মুবারক কার্যাবলী রকমারী হয়ে থাকে। তাঁর কাজ সর্বদা একই পদ্ধতিতে জারি হয় না। (চলবে)