মূল: হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ভাষান্তর: মাওলানা মুহম্মদ ফযলুল হক
হযরত শায়খ শরফুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি
(৬৫২-৭২৪ হিজরী)
পুর্ব প্রকাশিতের পর
হে ভাই! স্বয়ং আল্লাহ পাক তিনি উনার মা’শুক (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনাকে উনার পছন্দনীয় ছূরতেই পয়দা করেছেন এবং উনার মা’শুক (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনাকে মানুষের মাঝে এজন্যই প্রেরণ করেছেন যাতে তিনি মানুূষকে সঠিক হিদায়েতের পথ দেখিয়ে দেন।
হে ভাই! মহান আল্লাহ পাক জান্নাত জাহান্নামকে তৈরি করে উভয়কে বলেছেন তোমাদের উভয়কেই পূর্ণ করবো। মহান আল্লাহ পাক উনার যিনি মা’শুক উনাদেরকে উনার সঙ্গী-সাথীসহ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর শয়তানকে তার সঙ্গী-সাথীসহ জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।
হে ভাই! আশিক ব্যক্তি তার ভাল ইশ্ক ও খারাপ ইশ্ক এর কারণেই জান্নাত জাহান্নামে প্রবেশ করবে। বেহেশত হচ্ছে বন্ধুর সাথে মিলনের স্থান। আর দোযখ দুশমনদের থেকে পৃথক হওয়ার স্থান। তবে এই পৃথক হওয়াটা শুধু মাত্র কাফির ও মুনাফিকদের জন্য প্রযোজ্য। আর নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যারা আশিক তাদের জন্য জান্নাত মা’শুকের সাথে মহা মিলনের স্থান। হে ভাই! দূরদৃষ্টি ও গভীরভাবে ভেবে দেখুন যে, আশিক ব্যক্তি স্বীয় ইশ্ক-এর মাধ্যমে কি কি জিনিস হাসিল করে। দুনিয়াকে তিনি কিভাবে তামাশার বস্তুতে পরিণত করেন? কিভাবে তিনি নিজের উত্তম পোশাক (আচরণ) দ্বারা সমস্ত কিছুকে (বৃক্ষকে) আচ্ছাদিত করান এবং এর ফলশ্রম্নতিতে তিনি বিভিন্ন গাছের বিভিন্ন ফল ভোগ করে থাকেন। প্রত্যেক ফলে তিনি আলাদা আলাদা স্বাদও পেয়ে থাকেন। যদিও ওই গাছ তার নিজের, তার ফল ও ফুলের সঠিক বিষয়ে খবর জানা নেই। অনুরূপভাবে এই গাছ তার ফুলের পানিকে মধুতে পরিণত করে অথচ বৃক্ষ স্বয়ং নিজে ওই মিষ্টতা সম্পর্কে মোটেও ওয়াকিফহাল নয়। একইভাবে হরিণের নাভির মধ্যে মিশ্ক রয়েছে হরিণ নিজে সে বিষয় আদৌ অভিজ্ঞ নয়। সামুুদ্রিক প্রাণী (মাছের) মধ্যে আম্বর পয়দা হয় অথচ উহার এ বিষয়ে কোন খবর নেই। আর মিশ্ক থেকে মানুষের জন্য মাখন তৈরি করা হয় কিন্তু সে উহা আদৌ জানে না। এক প্রকার গাছ দ্বারা কাফুর (কপূর্র) তৈরি হয় কিন্তু কর্পূর তা জানে না। চন্দন কাঠ মানুষের জন্য তৈরি হয় কিন্তু মানুষ সে বিষয় অভিজ্ঞ নয়।
হে ভাই! আশিক হোন। দুনিয়াকে মা’শুক এর শান মান প্রকাশকারী হিসেবে জান। অনুরূপভাবে নিজের সত্তাকেও খোদ মা’শুক এর জন্য উনার শান মান প্রকাশকারী হিসেবে প্রস্তুত কর।
আশিক (মহান আল্লাহ পাক) তিনি স্বীয় ইশ্ক-এর কারণেই তোমাকে তৈরি করেছেন। সে কারনেই নিজের আয়নায় নিজেকে তুমি উত্তম ও সুন্দর দেখে থাক। তিনি তোমাকে (মানুষকে) স্বীয় গুপ্তভেদ প্রকাশকারী হিসেবে তৈরি করেছেন (মানুষ আমার গুপ্তভেদ জাহিরকারী) এটাই তোমার শান। আশিক হয়ে সর্বদা উনার সৌন্দর্য দেখতে থাক। দুনিয়া ও আখিরাতকে এভাবেই বিশ্বাস কর। পরকালে মূলতঃ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রাজত্ব। যদিও দুনিয়াতে (কোন কোন ক্ষেত্রে শয়তানের প্রাধান্য)। তুমি দুনিয়া ও আখিরাত এ দুটির ব্যাপারেই চিন্তা কর যে উহাকে কেন তৈরি করা হয়েছে উহার উদ্দেশ্য কি? হে ভাই! নিজেকে নিজে খুব ভালভাবে চিনে নাও। যখন তুমি নিজেকে নিজে চিনতে পারবে তখন আপসে আপ দুনিয়ার হাক্বীক্বত তোমার সামনে প্রকাশিত হবে। অনুরূপভাবে স্বীয় রূহকে ও চিনে নাও। কারণ রূহ-এর মা’রিফত আখিরাতের মা’রিফতের উপরে নির্ভরশীল।
হে ভাই! এই জগতে দুনিয়াবী শান শওকত দেয়া হয়েছে আশিক ব্যক্তিগণ তা বুঝে থাকেন। সুতরাং যে ব্যক্তি দুনিয়ার আশিক তার মা’শুক হচ্ছে কুফরীর সৌন্দর্য বা দুনিয়াবী শান শওকত।
হে ভাই! কুফরী কার্যকলাপ দুনিয়াদারদের উপরে কিভাবে তাছির করে (তা ভেবে দেখুন।) দুনিয়াদারদেরকে তার আশিক বানিয়ে রাখে।
হে ভাই! তুমি মারিফত হাসিল কর ও নিজেকে নিজে চিনো। যখন তমি নিজেকে নিজে হাক্বীক্বীভাবে চিনতে পারবে তখনই তুমি ইশ্ক-এর মাহাত্ম্য বুঝতে সক্ষম হবে। যখন ইশ্ককে হাক্বীক্বীভাবে নিজের মধ্যে হাসিল করতে পারবে তখন প্রত্যেকের যবানে আপনার আলোচনা শুনতে পারবেন। মূল কথা হচ্ছে আশিক হন এবং মা’শুককে নিজের সঙ্গী করে নেন। তাহলে সর্বপ্রকার কল্যাণ নিজের দিলের আয়নায় দেখতে পাবেন।
শে’র
ان شاہد معنی کہ ہمہ طالب اویند
ہم اوست کہ ازچادر تو ساختہ سرپوش
دربادیہ ہجر چر ابند بمانیم
در عین وصالیم نگاراست در اغوش
অর্থ: তিনিই মা’শুক যাকে সকলে চায়। তিনি সেই মহান সত্তা যিনি তোমার চাদর দ্বারা নিজের মাথা ঢেকে নেন। আমি মা’শুকের বিরহ বিচ্ছেদের চিন্তায় জঙ্গলের মধ্যে কেন যাব? মা’শুক তো আমার নিকটেই রয়েছেন। (চলবে)