মূল: হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছে দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ভাষান্তর: মাওলানা মুহম্মদ ফজলুল হক
হযরত মাওলানা হামীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি
৬৮৪-৭৫৭ হিজরী
পূর্ব প্রকাশিতের পর
এই ঘটনা শ্রবন করে হযরত শায়খ নাছিরুদ্দীন চেরাগে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, “আমি জানতাম না যে, আপনি হযরত নিযামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মুরীদ। আমার সাথে মুয়ানাকা করুন। তখন আমি সামনে অগ্রসর হলাম, তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে মুহব্বতের সাথে মুয়ানাকা করলেন। আলহামদুলিল্লাহ। হযরত খাজা নাছিরুদ্দীন চেরাগে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সাথে মুয়ানাকা করে আমি অনেক ফয়েজ-বরকত হাছিল করেছি।
নবম মজলিসে বর্ণনা করা হয়েছে, একদা আমি খাজা নাছিরুদ্দীন চেরাগে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর খিদমতে হাজির হলাম। তখন তিনি বললেন, আপনি কি লিখছেন? অতঃপর বললেন, আপনি কখন কিভাবে কলন্দর হয়েছেন তা সে কবিতার মাধ্যমে লিপিবদ্ধ করুন। তখন আমি বললাম, “কখনো ছূফী আবার কখনো কলন্দর হওয়া এটা কেমন কথা? তখন খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো বললেন, যখন তুমি কলন্দর (মজ্জুব শ্রেণীর বুযুর্গ) হও তখন তুমি সে অবস্থায় থাক। অতঃপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে পূনরায় বললেন- আপনি কি লিখতেছেন? এর কিছুক্ষণ পরে আবারো বললেন, আমার কাছে এমন সময় কোথায় যে তোমাকে নছীহত করব আর তোমারইবা এমন সময় কই যে তুমি কলন্দর হবে? জামালে ইলাহী ব্যতীতই আল্লাহ পাক-এর ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল হয়ে যাও, নির্জনবাস বা একাকিত্ব ইখতিয়ার কর। তোমরা যেই মহান ব্যক্তিত্বের অনুসরণ কর তিনি ঐ সকল লোকদেরই অন্তর্ভূক্ত ছিলেন যাঁর মহামূল্যবান দাড়ী কেটে তিনি বনজঙ্গলের উদ্দেশ্যে বের হয়ে গিয়েছিলেন।
এরপরে হযরত নাছিরুদ্দীন চেরাগে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি ক্বিবলা-এর দিকে মুতাওয়াজ্জুহ হয়ে আসমানের দিকে তাকিয়ে হয়রানি পেরেশানীর সাথে নিম্নোক্ত শে’র পাঠ করলেন-
যার অর্থঃ মুহব্বতের দাবী করা আবার ঘরে বসে থাকা এটা কেমন ব্যাপার? পাগল হয়ে পাহাড়ের দিকে বেড়িয়ে যাও এবং বেশি করে রোনাজারী কর।
এই শে’র আমার অন্তরে খুব বেশী ক্রিয়া করেছে। তৎক্ষনাত আমি আরয করলাম যে, আমি ঐ সকল লোকদের অন্তর্ভূক্ত নই। আমার পূর্ণ আকাঙ্খা এই যে, আমি মানুষের মধ্যেই অবস্থান করব, তাদের মতই পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করব এবং তাদের ন্যায়ই ইল্ম্ হাছিলের কোশেশ করব। একথা শ্রবণ করে হযরত নাছিরুদ্দীন চেরাগে দেহলভী রহমতুল্লাহি গভীর চিন্তায় মশগুল হলেন। অতঃপর তিনি মাথা মুবারক উত্তোলন করে আহ! শব্দ উচ্চারণ করলেন। তখন তাঁর চক্ষু মুবারক অশ্রুসিক্ত হয়ে গিয়েছিল এবং তিনি বলেছিলেন যদি আমার শায়খ কুতুবুল মাশায়িখ হযরত নিযামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি আমাকে অনুরূপ শহরের মধ্যে অবস্থান করে বীরত্ব প্রদর্শন করার বা মানুষের ঝৈ ঝামেলা বরদাশত করার অনুমতি না দিতেন তাহলে আমি শহর আবাদ করার পরিবর্তে বনজঙ্গল বেরিয়ে যেতাম। অতঃপর তিনি পূনরায় নিম্নোক্ত শে’র পাঠ করলেন-
উদূ লেখা ঢুকবে……………………………………………
গৃহে অবস্থান করে তুমি কিভাবে প্রকৃত মুহব্বতের আশা করতে পার? আল্লাহ পাক-এর পাগল হয়ে পাহাড় পর্বতে বেড়িয়ে যাও।
একথা শ্রবন করে আমার উপরে এক হাল জাহির হলো যার কারণে আমি বাহিরে চলে আসলাম। তখন আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পরলাম। আমি কি করব তা বুঝতে পাড়ছিলাম না। তৎক্ষনাত চিন্তা আসল যে, হযরত খাজা খিজির আলাইহিস্ সালাম-এর স্থানে গিয়ে যিকির আযকারে মশগুল হয়ে যাই। যা সমুদ্রের কিনারে এক বিশেষ স্থান যেখানে অধিকাংশ আওলিয়ায়ে কিরামগণ হযরত খিজির আলাইহিস্ সালাম-এর সাক্ষাত লাভ করে থাকেন। আবার আমার খেয়াল হলো যে, হযরত খিজির আলাইহিস্ সালাম-এর উক্ত স্থান থেকে জুমুয়ার নামাযে আসা সম্ভব নয়। কাজেই, খিজির আলাইহিস্ সালাম-এর উক্ত স্থান থেকে কিছু দূরে যমুনার তীরে চলে যাব যেখানে আমার সম্মানিত ও বৃদ্ধ পিতা হযরত মাওলানা তাজুদ্দীন ছাহেবও অবস্থান করেন। ঐ স্থানটি আমার জন্য এজন্যই খুব উপকারী যে, সেখান থেকে হযরত নাছিরুদ্দীন চেরাগে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর খিদমতে আসা যাওয়া খুব সহজ হবে। তখন আমার পূনরায় খেয়াল হলো যে, ঐ স্থানতো শহর ও জনবসতী। আমি হযরত শায়খ নাছিরুদ্দীন চেরাগে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মুবারক মালফুযাত ও ফাওয়ায়েদসমূহ লিখা শুরু করলাম কিন্তু আমি উহা উত্তমরূপে সাজাতে সক্ষম হইনি। নিজের সাধ্যানুযায়ী সাজাতে পেরেছি। তখন আমার অন্তরে খেয়াল হলো যে, আমার উক্ত লিখা মানুষের জন্য তেমন ফায়দা দিবে না। এভাবে চারদিন চিন্তা করার পর পূনরায় শায়খের দরবার শরীফে হাজির হলাম। তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করলেন এবং পূর্বের কিছু কথারও পূনরাবৃত্তি করলেন। আলহামদুলিল্লাহ। সমস্ত প্রশংসা সেই মহান আল্লাহ পাক-এর যিনি সমস্ত কায়িনাতের প্রতিপালক। (চলবে)