মূল: হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছে দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ভাষান্তর: মাওলানা মুহম্মদ ফজলুল হক
হযরত খাজা সামসুদ্দীন দাহারী রহমতুল্লাহি আলাইহি
(৬৪১ হিজরী- ৭৩২ হিজরী)
হযরত খাজা সামসুদ্দীন দাহারী রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রথম জীবনে চাকরী করতেন। পরবর্তীতে তিনি ইহা তরক করে কুতুবুল মাশায়িখ হযরত শায়খ নিযামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মুবারক দরবার শরীফে অবস্থান করতে শুরু করলেন। তিনি শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মালফুযাত মুবারক একত্রিত করে একটি কিতাব প্রণয়ন করেন। একদা তিনি শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট তাঁর দরবার শরীফে আগত লোকদের জন্য একটি হুজরা শরীফ তৈরী করার অনুমতি প্রার্থনা করলেন। তখন শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, তুমি যে কাজ তরক করে এসেছ ইহা তার চেয়ে মোটেও কম নয়। জাফরাবাদ এলাকায় তাঁর মাযার শরীফ রয়েছে।
হযরত খাজা আহমদ বাদায়ুনী রহমতুল্লাহি আলাইহি
৬৬১ হিজরী-৭২৯ হিজরী
হযরত খাজা আহমদ বাদায়ুনী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নির্জনতা জীবনযাপন খুব পছন্দনীয় ছিল। তিনি আবদাল শ্রেণীর ওলীআল্লাহ ছিলেন। বিশেষ করে তিনি সামা-এর মাহফিল শ্রবনে বেক্বারার হয়ে পড়তেন। ছিয়ারুল আওলিয়া কিতাবের লিখক বলেছেন, একদা আমি হযরত খাজা আহমদ বাদায়ুনী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে জিজ্ঞাসা করলাম, “আপনি কেমন আছেন?” তিনি উত্তরে বললেন, “আমার খুশীর বিষয় ইহাই যে, আমি দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামায়াতের সাথে আদায় করে থাকি।
হযরত মাওলানা হামীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি
৬৮৪ হিজরী-৭৫৭ হিজরী
হযরত মাওলানা হামীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি কলন্দরের বিখ্যাত কবি, খইরুল মাজালিশ-এর জামে’ এবং কুতুবুল মাশায়িখ হযরত খাজা নিযামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর শীর্ষস্থানীয় মুরীদ ছিলেন। প্রথম জীবনে তিনি স্বীয় পিতার সাথেই কুতুবুল মাশায়িখ হযরত খাজা নিযামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি-এর মুবারক ছোহবতে আসতেন। হযরত শায়খ নিযামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর শীর্ষস্থানীয় খলীফাগণের কাছ থেকেও তিনি ফায়দা হাছিল করেছেন। যদিও উল্লেখ্য যোগ্য অনেক বেশি পরিমাণ কবিতা তিনি লিখেননি তার পরেও মানুষের মাঝে তিনি কবি হিসাবেই মাশহুর ছিলেন। এছাড়া হামীদ কলন্দর নামেও তিনি প্রসিদ্ধ ছিলেন। প্রাথমিক পর্যায় তিনি হযরত মাওলানা শায়খ বুরহানুদ্দীন গরীব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ছোহবতে এসে তাঁর মালফুযাতসমূহ একত্রিত করেন। অতঃপর তিনি হযরত শায়খ নাছীরুদ্দীন চেরাগে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর খিদমতে হাজির হয়ে তাঁর মুবারক মালফুযাতসমূহ একত্রিত করে “খইরুল মাজালিস’ নামে একটি কিতাব প্রণয়ন করেন। উক্ত কিতাবকে তিনি ৭৫৫ হিজরীতে লিখা শুরু করে ৭৫৬ হিজরীতে সমাপ্ত করেন। উক্ত “খইরুল মাজালিস” কিতাবের মধ্যে তিনি একস্থানে লিখেছেন- যে একদা হযরত শায়খ নাছীরুদ্দীন চেরাগে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, আপনাকে কি কলন্দর (মজ্জুব শ্রেণীর বুযুর্গ) বলে ডাকবো না ছূফী বলে ডাকবো? এখন আপনাকে এজন্য কলন্দর বলা হচ্ছে না যেহেতু এখন পর্যন্ত আপনি একজন ছালেক বা ছাত্র। তখন আমি বললাম যে, একবার কুতুবুল মাশায়িখ হযরত খাজা নিযামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সামনে ইফতারের জন্য দস্তরখানায় খাদ্যরেখে তিনি ইফতার করতেছিলেন। তখন তাঁর দস্তরখানা মুবারকের একটি রুটিকে দু’ভাগ করে একভাগ তাঁর সামনে রেখে অন্যভাগ আমাকে দিয়ে দিলেন। আমি উহা আমার জামার আস্তিনের মধ্যে রেখে দিলাম। যখন আমি তথা হতে বাইরে আসলাম তখন কলন্দরগণ (মজ্জুব শ্রেণীর বুযুর্গগণ) আমাকে ঘিরে ধরে বললেন, হে শায়খজাদা! আমাদেরকে কিছু দান করুন। আমি বললাম আপনাদেরকে কি দিব? তাঁরা কাশফের মাধ্যমে জেনে বললেন, উক্ত অর্ধেক রুটি যা আপনাকে দেয়া হয়েছে তা থেকে আমাদেরকে কিছু দান করুন। তখন আমি অল্প বয়স্ক থাকার কারণে আশ্চর্য হলাম যে উনারা কিভাবে উক্ত রুটির সংবাদ পেলেন, অথচ তাঁরা কেউই তথায় উপস্থিত ছিলেন না। তাঁদের বারংবার অনুরোধের প্রেক্ষিতে শেষ পর্যন্ত আমি আমার আস্তিন থেকে উক্ত অর্ধাংশ রুটি বের করে তাদেরকে দিয়ে দিলাম। তাঁরা সকলেই উহা পেয়ে একটি মসজিদে বসে উক্ত রুটিকে টুকরো টুকরো করে নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে সকলে খেয়ে ফেললেন। ইতোমধ্যে আমার পিতা কুতুবুল মাশায়িখ হযরত শায়খ নিযামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর হুজরা শরীফ থেকে বের হয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, সেই মুবারক রুটি কোথায়? উত্তরে আমি বললাম উহা কলন্দরগণকে দিয়ে দিয়েছি। ইহা শুনে আমার পিতা কড়া নজরে আমার প্রতি দৃষ্টি দিয়ে বললেন, তুমি সর্বনাশ করেছ। তুমি কেন তাদেরকে উহা দিয়েছ? উহাতো তোমার জন্য এক মহা নিয়ামত স্বরুপ ছিল। আমার পিতা আবার আমাকে তাঁর সাথে করে শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর হুজরা শরীফে নিয়ে গেলেন। শায়খ নিযামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি কাশফ-এর মাধ্যমে উহা জানতে পেরে আমার পিতাকে বললেন, চিন্তা করনা তোমার ছেলেও কলন্দর (মজ্জুব শ্রেণীর বুযুর্গ) হবেন। তখন আমার পিতা নিশ্চুপ হয়ে গেলেন। অর্থাৎ কুতুবুল মাশায়িখ হযরত শায়খ নিযামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি আমাকে কলন্দর বললেন। তখন থেকে আমার পিতাও আমাকে উহা বলতেন। কাজেই আপনি আমাকে কলন্দর বলুন। (চলবে)