মূল: হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছে দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ভাষান্তর: মাওলানা মুহম্মদ ফজলুল হক
হযরত খাজা জিয়া নাখশবী
রহমতুল্লাহি আলাইহি
(৬৫৬ হিজরী-৭৫১ হিজরী)
পূর্ব প্রকাশিতের পর
একজন বিশিষ্ট শায়খে তরীক্বত বলেন, একাধারা দশ বছর পর্যন্ত আমি কেঁদে কেঁদে অশ্রু প্রবাহিত করেছি অতঃপর দশ বছর রক্তের অশ্রু প্রবাহিত করেছি এবং পরবর্তী দশ বছর আমি খুশী ও আনন্দে অতিবাহিত করেছি।
আল্লাহ পাক-এর খালিছ এবং লক্ষ্যস্থল ওলী হাফিজুল হাদীছ হযরত আবু বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বিছাল শরীফ-এর পরে এক ব্যক্তি তাঁকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, মুনকার-নাকীর আলাইহিস সালাম-এর সুওয়াল-জাওয়াব থেকে আপনি কিভাবে মুক্তি পেলেন? আল্লাহ পাক-এর ওলী উত্তরে বললেন, যদি তুমি সেখানে থাকতে তবে দেখতে পারতে যে, তাঁরা কিভাবে আমার সামনে এসেছেন। তাঁরা আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, বলুন, আপনার প্রতিপালক কে? উত্তরে আমি বললাম, আমার রব ঐ আল্লাহ পাক যিনি আপনাদের সমস্ত ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, আমার পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সিজদা করতে। তখন আমি আমার পিতার পিঠ মুবারকে অবস্থান করে আপনাদের সকল ভাইদেরকে দেখেছিলাম। ফেরেশতাদ্বয় তৎক্ষণাত বললেন, আমাদের উনার সম্মুখ থেকে চলে যাওয়া আবশ্যক। কেননা তাঁকে যে প্রশ্ন করা হয়েছে সমস্ত আদম সন্তানদের পক্ষ থেকে তিনি তার উত্তর প্রদান করেছেন।
আল্লাহ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “মহান আল্লাহ পাক-এর সাথে আমার এমন সম্পর্ক, নৈকট্য বা দীদার সংঘটিত হয় যেখানে কোন নৈকট্যশীল ফেরেশতারাও যেতে পারেন না।” একথা শ্রবণান্তে হযরত জিব্রীল আলাইহিস সালাম খুব চিন্তিত হয়ে পড়েন তখন আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, আফসুস করার কোন কারণ নেই, কেননা তখন কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণও সেখানে গমন করতে পারেন না। শুন শুন! আল্লাহ পাক-এর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘যিনি ক্বাবা ক্বাওছাইন আও আদনা’-এর অধিকারী তিনি যখন মি’রাজ শরীফ থেকে ফিরে আসেন মশগুল হন তখন হযরত জিব্রীল আলাইহিস সালাম জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি যে জগত থেকে ফিরে এসেছেন সেখানে কি দেখেছেন?
উত্তরে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হে হযরত র্জিরীল আলাইহিস সালাম এটা কেমন বিষয় যে, হযরত জিব্রীল আলাইহিস সালাম মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম-এর কাছে প্রশ্ন করছেন? এতেই প্রশ্নকৃত বিষয় যাদের জানার ও বুঝার তারা তা জেনে ও বুঝে নিয়েছেন।
হযরত খাজা আলী ছিয়াহ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, আমার শুধুমাত্র এটাই আকাঙ্খা যে, আমি সত্য কথা বলি আর কেউ তা শ্রবণ করুক অথবা কেউ সত্য কথা বলুক আমি তা শ্রবণ করি। একবার এক নাস্তিক ইমামুশ্ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত হযরত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে জিজ্ঞাসা করল, “আমার ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কি? ” উত্তরে তিনি বললেন, তুমি আল্লাহ পাক-এর দুশমন। সেই নাস্তিক পূনরায় জিজ্ঞাসা করলো, আপনার নিজের ব্যাপারে আপনার কি বক্তব্য?
জবাবে তিনি বললেন, “আমি আল্লাহ পাক-এর বন্ধু।” তখন সেই নাস্তিক বলল কেবলমাত্র এই নামেই অহংকার করলো না। তিনি বললেন, একবার আমার একটি ছেলে হলো, আমি তার নাম রাখলাম খালিদ। যার অর্থ হলো চিরস্থায়ী বা সর্বদা স্থায়ী। তিনি প্রথম দিন থেকেই সম্পদশালী বা ধনী ছিলেন। সম্পদ বা ধনাঢ্যতার মধ্যে চারটি জিনিস সম্পৃক্ত হয়ে থাকে- (১) শারীরিক কষ্ট (২) ব্যতিব্যস্ত অন্তর (৩) দীনের ক্ষতি সাধন (৪) ক্বিয়ামতের হিসাবের কাঠিন্যতা। আর আল্লাহওয়ালাগণের দারিদ্রতার মধ্যে চারটি জিনিস হাছিল হয়- (১) শারীরিক শান্তি (২) অবসর সময় (৩) প্রশান্ত অন্তর (৪) ক্বিয়ামতের হিসাব থেকে নাজাত।
ওহে ফক্বীর! শুধুমাত্র একদিন তুমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিজের নফসের সাথে জিহাদ কর তবেই তোমার উক্ত চারটি জিনিস হাছিল হবে। আর হাক্বীক্বী মানুষ ঐ ব্যক্তিই যিনি নিজের নফসের সাথে জিহাদ করায় অভ্যস্ত। কেননা ঐ জিহাদ এমন যে, এর জন্য (দারিদ্রতা ছাড়া) অন্য কোন ভাল পথ নেই।
হে প্রিয়! যে ব্যক্তি নিজের নফসের প্রতি সর্বদা সতর্ক দৃষ্টি রাখে সে সর্বপ্রকার অভ্যাসও তরক করতে পারে। আর অন্য সমস্ত কিছু থেকেও সে বেনিয়াজ হয়ে যায়। (চলবে)