মূল: হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছে দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ভাষান্তর: মাওলানা মুহম্মদ ফজলুল হক
হযরত খাজা জিয়া নাখশবী
রহমতুল্লাহি আলাইহি
(৬৫৬ হিজরী-৭৫১ হিজরী)
পূর্ব প্রকাশিতের পর
হযরত বিশর হাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি যাঁর মাথা ও পা মুবারক খালী রাখা হত। তিনি বলেছেন, “আমাকে সবচেয়ে বেশী শাস্তি ও বেত্রাঘাত করেছেন ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত ত্বরীকত হযরত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মেয়ে। উহার বর্ণনা তিনি এভাবে পেশ করেছেন যে, আমি একদা হযরত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর গৃহে গেলাম। তাঁর ঘরে পৌঁছে দরওয়াজায় কড়া নাড়লাম। তখন তাঁর মেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন কে? উত্তরে আমি বললাম বিশর হাফী (খালি পায়ে হাটনেওয়ালা)। তখন সেই মেয়ে বললেন, এখান থেকে সোজা চলে যান এবং বাজারে গিয়ে জুতা ক্রয় করে তা পরিধান করুন। এরপরে আর কখনো নিজেকে বিশর হাফী (খালি পায়ে হাটনেওয়ালা) বলবেন না। যদি আপনার কোন চাহিদা থাকে তবে তা জান্নাতের মধ্যে
وجوه يومئذ ناضرة الى ربها نا ظرة.
ইহা হবে প্রকৃত আশিকদের মোশাহিদা। এই মোশাহিদার পরে আশিকদেরকে শোয়ায়ে দেয়া হবে অথবা সে নিজে শুয়ে পরবে। এর প্রথম অবস্থা হলো- লজ্জিত হওয়ার প্রতি প্রত্যাবর্তন করা। আর দ্বিতীয় অবস্থা হলো সে কি আল্লাহ পাক এর তাজাল্লিয়তের মোশাহিদা করে বা করে না। এর উত্তর এই যে, প্রকৃত আশিকদের শোয়ানো হয় না বা সে নিজেও শুয়ে যায় না বরং সে সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহ পাক এর সৌন্দর্যের মধ্যে গরক থাকে এবং সে সর্বত্রই মহান আল্লাহ পাক-এর জালালিয়ত অবলোকন করে।
শুন শুন! হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে আট বেহেশ্ত দান করা হয়েছিল। একদা তিনি (আল্লাহ পাক-এর হিকমত হেতু) উহা থেকে জমিনে আগমণ করেণ। কিন্তু তাঁর মধ্যে মুহব্বতের যে অংশ দান করা হয়েছিল উহার সাথে তিনি সংযুক্ত হয়ে গিয়েছিলেন। তবে হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম মহান আল্লাহ পাক-এর ধ্যানে অধিক পরিমাণ গরক থাকার কারণে (তাঁর অনিচ্ছা সত্বেও আল্লাহ পাক-এর হিকমত হেতু) তাঁর দ্বারা হুকুমের খিলাফ কাজ সংঘটিত হয়েছে। (যা তিনি নিজে বা নিজ ইচ্ছায় করেননি)। আর শয়তান মহান আল্লাহ পাক-এর নাফরমানী করেছে তার নিজ ইচ্ছায় ও তার নফসানিয়তের কারণেই।
শে’রের অর্থঃ হযরত নাখ্শবী রহমতুল্লাহি আলাইহি অবসর থেকে পৃথক হয়েছেন। অন্তরের নূর ব্যতীত দিলের চিন্তা দূরীভূত হয় না। অবসর দিলের জন্য দলীল হচ্ছে বেকারত্ব। প্রকৃত আশিকদের অন্তর কখনো অবসর (বেকারত্ব) গ্রহন করে না।
হযরত রাবেয়া বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহাকে লোকজন একবার প্রশ্ন করলো, আপনি কি ইবলিসকে দুশমন মনে করেন? উত্তরে তিনি বললেন, না। লোকেরা (আশ্চর্য হয়ে) জিজ্ঞাসা করলো, কেন? উত্তরে তিনি বললেন, আমি আমার প্রকৃত বন্ধুর মুহব্বতে এতটুকু গরক যে, আমার অন্তরে দুশমনের কোন খবরই নেই।
কোন এক বুযুর্গ ব্যক্তিকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, দুনিয়া কোন জিনিসের মত? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, দুনিয়া এমন তুচ্ছ ও লাঞ্ছিত বিষয় যার সাথে অন্য কোন জিনিসের তুলনাই দেয়া যায় না।
এক ব্যক্তি কোন একজন ফকীর বা দরবেশ এর নিকট গিয়ে বললো, আমি কিছু সময় আপনার ছোহবতে কাটাতে চাই। তখন সেই বুযুর্গ ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, যখন তুমি মৃত্যু বরণ করবে তখন কার ছোহবতে থাকবে? সে ব্যক্তি উত্তরে বলল, আল্লাহ পাক-এর সাথে থাকবো। তখন সেই বুযুর্গ ব্যক্তি বললেন, ইহা ভালভাবেই উপলব্ধি করে নাও যে, আমি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাব। সুতরাং এখন থেকেই তুমি আল্লাহ পাক-এর সঙ্গী হয়ে যাও।
একদা কোন একজন দুনিয়াদার ব্যক্তি কোন একজন বুযুর্গ ব্যক্তির ঘর থেকে কিছু পানি তলব করল। ঐ বুযুর্গ ব্যক্তি তাকে কিছু খারাপ স্বাদযুক্ত গরম পানি দিলেন। দুনিয়াদার ব্যক্তি বলল, ইহাতো খারাপ ও গরম পানি। তখন সেই বুযুর্গ ব্যক্তি বললেন, হে খাজা আমি একজন বন্দী ব্যক্তি। আর বন্দী ব্যক্তি কখনো ভাল পানি পায় না।
কোন এক ব্যক্তি হযরত ইয়াহইয়া মুয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহিকে তার বিছাল শরীফ-এর পরে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, যে বালা মুছীবতের স্থানে (কবরে) আপনার সাথে কিরূপ আচরণ করা হয়েছে? উত্তরে তিনি বললেন, যখন আমাকে মহান আল্লাহ পাক-এর মুবারক দরবারে পেশ করা হয়েছে, তখন তিনি আমাকে প্রশ্ন করলেন, তুমি দুনিয়া থেকে কি নিয়ে এসেছ? উত্তরে আমি বললাম, আমি জেলখানা থেকে এসেছি। সেখান থেকে কিছুই আনার নেই। যদি আমার কাছে কিছু থাকতোই তবে ৭০ বছর যাবত জেলখানায় বন্দি থাকতাম না।
একজন শায়খকে তাঁর মুরীদগণ প্রশ্ন করলেন, যে আমরা কোন পথ অবলম্বন করব। আল্লাহ পাক-এর নৈকট্য, না বিছাল শরীফ? উত্তরে তিনি বললেন, কোন রাস্তা দিয়ে তুমি এসেছ যে, তুমি রাস্তাই চিননাই। একথার উদ্দেশ্য হচ্ছে, তুমি এখন কোন পথে আছ তোমার সেপথেরই কোন খবর নেই। পূর্ববর্তীদের পথের কি খবর তুমি নিবে? (অসমাপ্ত)