মূল: হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছে দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ভাষান্তর: মাওলানা মুহম্মদ ফজলুল হক
হযরত খাজা জিয়া নাখশবী
রহমতুল্লাহি আলাইহি
(৬৫৬ হিজরী-৭৫১ হিজরী)
পূর্ব প্রকাশিতের পর
বর্ণিত আছে যে, একদা এক ব্যক্তি যোবায়দার দরজায় এসে বলল যে, আমি যোবায়দার আশিক। যোবায়দা এ সংবাদ শুনে লোকটাকে ভিতরের ডাকলেন এবং বললেন, সাবধান! তুমি ভবিষ্যতে আর কখনো এরূপ কথা বলবে না। তখন সেই ব্যক্তি বলল, আমি কস্মিনকালেও ঐ কথা থেকে বিরত থাকতে পারবো না। তখন যোবায়দা বললেন, আচ্ছা তুমি দুই হাজার দিরহাম নিয়ে যাও এবং এর বিনিময় স্বরূপ আমাকে ভালবাসার কথাটা ছেড়ে দাও। সে তাতেও রাজী হলো না। তখন যোবায়দা দিরহামের পরিমাণ বাড়াতে বাড়াতে যখন দশ হাজার দিরহাম দেয়ার ওয়াদা করল, তখন সে মুহববত প্রকাশ করার কথা ছেড়ে দেয়ার কথা স্বীকার করল। যোবায়দা যখন ঐ ব্যক্তির এরূপ অবস্থা দেখলেন, তখন তিনি তার খাদিমদেরকে বললেন তার গর্দান উড়িয়ে দাও। কারণ সে উপরে উপরে আমার মুহব্বতের কথা প্রকাশ করেছে। প্রকৃতপক্ষে আমার প্রতি তার কোন মুহব্বত নেই।
শোন! শোন! একজন বুযুর্গ ব্যক্তি ছিলেন, যিনি কস্মিনকালেও ডানে বামে চেহারা যুরিয়ে কোন কিছু দেখতেন না। একদা তিনি কা’বা শরীফ তাওয়াফ করতে ছিলেন। মেন সময় কোন একজন বুযুর্গ ব্যক্তি তাকে ডাকলেন। তিনি চেহারা ঘুরিয়ে তাকাতে চাইলেন, কে ডেকেছেন তা দেখার জন্য। তৎক্ষণাৎ গায়েব থেকে আওয়াজ আসল, যে ব্যক্তি আমাকে ছাড়া অন্য কারো দিকে মুতাওয়াজ্জুহ হয় সেতো আমার নয়।
হে প্রিয়! যদি হাজার বছরও তুমি এই সমস্ত পথে চল এবং তোমার অন্তরে এই খিয়াল হয় যে, তোমার দোয়া কবুল হচ্ছে তবুও তুমি জেনে রাখ যে, তুমি সঠিক পথের সন্ধানী নও।
যে ব্যক্তি (সাধারণ মানুষ) স্বীয় মায়ের স্বাভাবিক স্থান দিয়ে যমীনে এসেছে তাকে আর কতটুকু শান শওকত দেয়া হবে? তাকে তো কেবলমাত্র নুতফা যৎসামান্য মাটি দ্বারা তৈরী করা হয়েছে। সালিকুস সুলুক কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, আমার মত দূর্বল, অযোগ্য, নিঃস্ব এবং বেকার লোককে বীর পালোয়ানদের ময়দানে দাড় করানো হয়েছে। একদিকে মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ-নিষেধ, অপরদিকে ুনার হুকুম আহকাম। হে ভাই! যদি ঐ রাস্তায় তুমি মনজিলে মাকসুদে পৌঁছতে চাও তবে নিজের অস্তিত্বকে বিলীন করে দাও। যে ব্যক্তি নিজেকে মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত বন্দেগীতে তাওয়াংগারী বা ধনী মনে করে সে যেন তার জাতকে সর্বদা নিঃস্ব ও মুখাপেক্ষী মনে করে এবং যে ব্যক্তি সর্বদা নিঃস্ব ও মুখাপেক্ষী মনে করে না সে নিজেকে তাওয়াংগারী বা ধনী বলার হক্বদার নয়।
ওহে সত্যান্বেষী! যদি তুমি প্রকৃতপক্ষেই হক্ব তালাশী হয়ে থাক তবে তুমি ঐসকল লোকদের তরীক্বা অবলম্বন কর যাঁদেরকে আছহাবে ছুফফা নাম দেয়া হয়েছে। কারণ তাঁরাই প্রকৃত হক্ব তালাশী ছিলেন। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে যখন অগ্নিকু-ে নিক্ষেপের জন্য যখন কাপড় মুবারক খোলা হচ্ছিল তখন উনার প্রতি গায়েবী নেদা আসল েেহ হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম! ঈমান কিন্তু শরীরের ভিতরের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং ঈমান সর্বদাই বস্ত্রহীন হয়ে থাকে। (কাজেই আপনার দুঃশ্চিন্তার কোন কারণ নেই।)
শোন শোন! আল্লাহ পাক উনার খলীল হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যখন ঐ আগুনের নিকটবর্তী হলেন তখন তিনি এমন নির্ভয় ও নিরাপদ হলেন যে, উল্টা আগুনের প্রতি তিনি দয়া করলেন। এ জন্যই ছাহিবে “লাওলাকা লামা খলাক্বতুল আফলাক্ব” হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কারো সত্য পথে মুছীবতের ছামানা যোগাড় করা অনুচিত। যদিও নবী হিসাবে আমার অনেক মুছীবত এসেছে। হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম উনার আগুনে নিক্ষেপ হওয়া, হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম উনার টুকরা টুকরা হওয়া ইহা তেমন মুছীবত নয় যতটুকু আমার প্রতি হয়েছে। আমাকে যমীন ও আসমানের সকলের উপর অগ্রবর্তী করা হয়েছে। ( শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে), আদম সন্তানদের গুনাহসমূহ আমার সুপারিশেই ক্ষমা করা হবে। বিপথগামীদের আমার পথে চলা আবশ্যক, গুনাহগার ও অপারগ বান্দাদের আমারই কাছে ওজরখাহী করা দরকার পূর্ণতাপ্রাপ্ত ও সুস্থ লোকদের আমার মত কাজ করা (আমার অনুসরণ করা) প্রয়োজন। আমার পরওয়ারদেগার আমাকে কখনো “ক্বাবা ক্বওসাইন” বলে আসন দান করেছেন, আবার কখনো আবু জাহিলের মত জালিমের নিকটে প্রেরণ করেছেন। আবার তিনি আমাকে শাহিদ ও মুবাশ্বির লক্ববে ভ’ষিত করেছেন, আবার কোন কোন সময় আমাকে পাগল, যাদুকর বলা হয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ! কোন সময় আমাকে অনুমতি ব্যতীত মক্কায় প্রবেশ করতে দেয়নি, আবার কোন সময় রাজ্যের সকল খাজীনা আমার হুযরা শরীফ-এ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আবার কোন সময় যালিমদের হাতে আমার দান্দান মুবারক শহীদ করা হয়েছে। এই বিশেষ অবস্থা এজন্যই করা হয়েছে যাতে দুনিয়াবাসী দৃঢ়তার সাথে বুঝে যে, আমার এই রাস্তা খুব কঠিন। এ পথে চলতে পা মাথার উপর রেখে চলতে হয়। যদি কেউ ইহা না পারে তবে সে যেন ঐ পথে চলার নামও না নেয়। এই পথে সাধারণ পথের মত অতিক্রম করা যায় না। (চলবে)