মূলঃ হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছে দেহলবী রহমতুল্লাহি, ভাষান্তরঃ মাওলানা মুহম্মদ ফজলুল হক
হযরত খাজা জিয়া নাখশবী রহমতুল্লাহি আলাইহি
(৬৫৬ হিজরী – ৭৫১ হিজরী)
পূর্ব প্রকাশিতের পর
হে প্রিয়! ইহা একটি খাছ মাক্বাম, যে ব্যক্তি কোন ইবাদত বন্দিগী না করে সেও ঐ ব্যক্তির চেয়ে উত্তম যে নিজে ইবাদত বন্দিগী করে তা মানুষের মাঝে প্রকাশ করে।
ইসলামী বিধানুযায়ী ইসলামী রাজ্যে বাদীকে শাস্তি দেয়া হয় ও জেল হাজতে পাঠানো হয়। এ প্রসঙ্গে তিনি একটি শের উল্লেখ করেন যার অর্থ নিম্নরূপÑ
‘হে নখ্শবী যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি নিজেকে নিজে না চিনবে ততক্ষণ মুর্দার মত থাকবে এবং ঐ সকল কাজ (তাকাব্বুরী) করবে না এবং যে ব্যক্তি তাকাব্বুরী বা অহংকার করে তার সাথে মানুষের মিলামিশা করা উচিত নয়।।” ঐ শে’র এর একটি উদ্দেশ্য এমনও হয়, যে ব্যক্তি নিজেকে হিফাযত করে অর্থাৎ শরীয়ত অনুযায়ী চলে সে কখনোই কোন ক্ষতিগ্রস্তের অন্তর্ভূক্ত হয় না। ওহে আমার প্রিয়। প্রথমত মানুষকে অন্যানদের গুণাহ বা দোষ শুনানো থেকে বিরত রাখবে কিন্তু তোমার নিজের গুণাহসমূহকে নিজের কাছে কেন চুপিয়ে রাখ? একটা পুরাতন নিয়ম ছিল যে, গ্রীষ্মকালে মানুষ স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করে কিন্তু হযরত মারূপ কারখী রহমতুল্লাহি আলাইহি ঐ মৌসুমে খুব চিন্তিত ও পেরেশান হয়ে পরতেন এবং বলতেন যে গ্রীষ্মকাল এসে গেছে এবং মানুষ খেলতামাশায় মশগুল হয়ে গেছে। এরপরে তিনি বললেন এক হালওয়ালা ফকীর মসজিদে নামায আদায় করছিলেন এমন সময় হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হল। তখন ঐ ফকীরের মনে নামাযের মধ্যেই নিজের নিঃশ্বতার কথা স্মরণ হলো। এমন সময মসজিদের এক পাশ থেকে গায়েবী আওয়াজ এলো যে, ওহে দরবেশ তোমার এই নামায আমার কোন ইহ্্সান বা দয়ার কারণ নয়। তোমার আন্তরিক আকর্ষণ তোমার ঘরেই রয়েছে এবং বাহ্যিকভাবে শুধুমাত্র আমার উপস্থিতি তুমি মনে করছ।
এরপরে তিনি বললেন যে, আহকামে ত্বরীকতের প্রকৃত হাকিম ঐ ব্যক্তি যিনি সারা জীবনই ফরমাবরদার (অনুগত) হয়। তাঁর আরেকটি বক্তব্য হলো কোন বিড়ালের অনুগত হওয়া ঐ ব্যক্তির চেয়ে উত্তম যে নিজের নফসের ফরমাবরদার হয়।
এক দরবেশ প্রতি জুমুয়ার দিন তাঁর বৈঠকখানা থেকে বের হয়ে মানুষকে প্রশ্ন করতেন যে, মসজিদের রাস্তা কোন্টি? একদা এক ব্যক্তি উত্তর দিলেন যে, এতবছর যাবত মসজিদের নিকটে আসা যাওয়া করেন তারপরও মসজিদের রাস্তা চিনেন না? ইহা শুনে ঐ দরবেশ বললেন মসজিদের পথ আমি জানি কিন্তু যে পথে আমি চলছি উহাতেই চলা নিজের জানা পথে চলা, কিন্তু অন্যের কথানুযায়ী চলাকে উত্তম মনে করি। অর্থাৎ নিজেকে অন্যের অনুগত করাই বড় কাজ।
শুন শুন হযরত ওহাব ইবনে মুনাব্বাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন হযরত কা’ব ইবনে আহবার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মসজিদে নামায পড়ার সময় নিজে পিছনের কাতারে দাঁড়াতেন। মানুষ তাঁকে পিছনের কাতারে দাঁড়ানোর কারণ জিজ্ঞাসা করায় তিনি বললেন, আমি তাওরাত শরীফের মধ্যে পাঠ করেছি যে, উম্মতে মুহম্মদীর মধ্যে এমন কিছু লোক হবেন যাঁরা মহান আল্লাহ পাক-এর সামনে সিজদায় যাওয়ার পরে যতক্ষণে আল্লাহ পাক তাঁদেরকে পিছনের লোকদেরসহ ক্ষমা না করেন ততক্ষণে তাঁরা সিজদা হতে মাথা উত্তোলন করেন না। আমি এজন্যই পিছনের কাতারে দাঁড়াই, যাতে আমার সামনের কারো না কারো উছীলায় আমাকেও ক্ষমা করা হয়। এ সম্পর্কে একটি শের উল্লেখ করেন যার অর্থঃ “ হে নাখ্্শবী! মানুষের মাঝে নিজেকে দেখনা বরং নিজেকে ছোট/সামান্য মনে কর। সমস্ত দুনিয়া তখনই তোমার অনুগত হবে যখন তুমি কারো ফরমাবরদার হয়ে যাবে।”
শায়খুল মাশায়িখ হযরত আব্দুল্লাহ খফীফ রহমতুল্লাহি আলাইহি একবার অসুস্থ হয়ে পরলেন। একজন উনার কাছে এসে তাকে বললেন, হে শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি আপনার কি অসুস্থতা (রোগ) হয়েছে? উত্তরে তিনি বললেন, যখন শরীর শেষ হয়ে যাবে তখন রোগও দূর হয়ে যাবে। হযরত শায়খ মুহম্মদ ওয়াসী’য় রহমতুল্লাহি আলাইহি এমন একজন বুযুর্গ ছিলেন যে, উনার কাছে এই বিশাল পৃথিবী একটা সামান্য পিঁপড়ার চোখের চেয়েও ছোট। তাঁর থেকে বর্ণিত আছে যে, যদি কারো দ্বারা নাফরমানী বা গুনাহর যৎসামান্যও দুর্গন্ধ আসে তবে সে যেন আমার নিকটে না বসে। হযরত খাজা আবুল হাসান খারকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর একখানা মুবারক বাণী হলো, যে ব্যক্তি রহমতের পানির নিকটবর্তী হয়েছে সেই রহমতের মধ্যে গরক হয়ে গিয়েছে। আর আমার অবস্থা এরূপ যে, যে ব্যক্তি উহা (রহমত) থেকে দূরে সে সমস্ত কিছু থেকে দূর হয়ে এমন আগুনের নিকটবর্তী হয়েছে যে আগুন জ্বালিয়ে ছাই করা হয়েছে। (চলবে)