মূল হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছে দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ভাষান্তরঃ মাওলানা মুহম্মদ ফজলুল হক
হযরত খাজা জিয়া নাখশবী
রহমতুল্লাহি আলাইহি
(৫৬ হিজরী- ৭৫১ হিজরী)
হযরত খাজা জিয়া নাখশবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বাদায়ূনের এক প্রান্তের স্বীয় কর্ম ব্যস্ততায় মশগুল ছিলেন। তার লিখিত অনেকগুলো কিতাব রয়েছে। যেমন ১. ছালেকুস সুলুক, ২. আশারায়ে মুবাশশারা, ৩. কুল্লিয়াত ও জুযয়িয়াত, ৪. তূতীনামা ইত্যাদি। তাঁর সমস্ত লিখনী সমূহ অনেক উচু মর্যাদার ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্বলিত হওয়ার কারণে একটি অন্যটির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। ছালেকুস সুলূক তাঁর এমন একখানা কিতাব যাতে তাঁর সার্বিক হালসমূহ, লতীফাসমূহের তাছিরসহ সকল বর্ণনা এবং আওলিয়ায়ে কিরামগণের নছীহতে পরিপূর্ণ। তাঁর অধিকাংশ কিতাবে একই তর্জতরীক্বার বর্ণনা সন্নিবেশিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে একটি শে’র প্রনিধানযোগ্যঃ
“হে নাখশবী! ছাড়াও এবং যামানার সাথে থাক। অন্যথায় নিজেকে মানুষের জন্য নিশানা বানাও। সর্বযুগের জ্ঞানীদের বক্তব্য এটাই যে, সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে দুনিয়াবী মনুষের জ্ঞানেরও পরিবর্তন হয়ে থাকে। তাঁর যে হাল জাহির হয়েছিল তা হলো, তিনি মানুষেল মুয়ামিলাত, মুয়াশিরাত থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতেন এবং কারো অনুগত হওয়া না হওয়ার প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপ করতেন না।
বলা হয়েছে যে, সুলত্বানুল মাশায়িখ হযরত শায়খ নিজামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর যামানায় জিয়া নামের তিন ব্যক্তি ছিলেন। একজন হলো জিয়া সানাঈ। সে হযরত নিজামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি ‘সামা’ শুনতেন উহাকে জায়িয বলতেন। আর সেই জিয়া সানাঈ সামা পাঠ ও শ্রবণকে বিদয়াত ও শরীয়তের খিলাফ মনে করতেন।
আর দ্বিতীয় জন হচ্ছেন, হযরত খাজা জিয়াউদ্দীন বারুনী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর অনুসারী ও মুরীদ ছিলেন। তৃতীয় জন হচ্ছেন হযরত খাজা জিয়া নাখশবী রহমতুল্লাহি আলাইহি। যিনি হযরত শায়খ নিজামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি -এর বিরোধীও ছিলেন না আবার অনুগত বা মুরীদও ছিলেন না। বরং তিনি হযরত শায়খ ফরীদুদ্দীন মাসঊদ গঞ্জে শকর রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর খলীফা ও পূতি ছিলেন। (আল্লাহ পাক অধিক অবগত।) ৭৭৫১ হিজরীতে তাঁর বিছাল শরীফ হয়।
‘ছালেকুস সুলূক’ কিতাবে বর্ণিত আছে, একদা হযরত শায় হামীদুদ্দীন নাগরী রহমতুল্লাহি আলাইহি একটি বাদী খরিদ করলেন। যখন গভীর রাত্রে হলো তখন তিনি তাকে বললেন, আমার বিছানাটা ঠিক করে দাও আমি শুয়ে যাব। সে তাঁকে বললো, হে আমার মুনীব! আপনার কি কোন মাওলা বা আঁকা আছে? শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি উত্তরে বললেন, হ্যাঁ। বাদী আবার প্রশ্ন করল আপনার মুনীব কি ঘুমান? উত্তরে তিনি বললেন না। তখন সে বললো তাহলে আপনার কি লজ্জা আসে না? কারণ আ পনার মুনীব ঘুমান না তাহলে আপনি কিভাবে ঘুমাবেন? তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন- কোন প্রাণী সর্বাধিক নাফরমান? সে উত্তরে বললো মানুষ, যার সামনে মৃত্যু দরবেশী এবং দোযখ বিদ্যমান। কেননা মহান আল্লাহ পাক রিদ্বওয়ান (ফেরেশতা) কে সুসংবাদ দিয়েছেন যে, সমস্ত নবী রসূল আলাইহিমুস সালামগণ মানুষদেরকে মহান আল্লাহ পাক্-রে নির্দেশানুযায়ী সঠিকভাবে দাওয়াত পৌছে দিয়েছেন এবং আল্লাহ পাক-এর কিতাব দ্বারা মানুষদেরকে তাঁর দিকে আহবান করেছেন তারপরেও মানুষ অহংকার ও অলসতার মধ্যে নিমজ্জিত রয়েছে।
অতঃপর হযরত শায়খ হামদুদ্দীন নাগরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, শোন শোন, একবার মহান আল্লাহ পাক জলীলুল ক্বদর নবী ও রসূল হযরত মুসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালামকে নির্দেশ দিলেন, যে, আপনার উম্মতদের মধ্যে নেককারদেরকে বদকার থেকে আলাদা করুন। হযরত মুসা আলাইহিস সালাম সমস্ত লোকদেরকে তাদের ঘরে থেকে বাহিরে আসার নির্দেশ দিলেন। যখন অধিকাংশ লোক বাহিরে আসলো তখন তিনি ৭০ হাজার লোককে আদাল দাঁড়ানোর নির্দেশ দিলেন। তখন মহান আল্লাহ পাক ঐ ৭০ জন থেকে ৭ জন নেক বান্দাকে, অতঃপর ৭ জন থেকে ৩ জন নেক বান্দাকে আদালা করার নির্দেশ দিলেন। (তিনি তাই করলে) তখন আল্লাহ পাক বললেন, হে হযরত মুসা আলাইহিস সালাম! ঐ তিনজন লোক যারা নিজেদেরকে সকলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে করে তারা আমার (্আল্লাহ পাক-এর) কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট বান্দা। কেননা যখন ঐ তিনজন শুনলো যে আপনি সকলের মধ্যে তিন জন নেককারকে আহবান করতেছেন তখন তারা উহা শ্রবণ করে নিজেরাই সামনে এগিয়ে এসেছিল, (মুলতঃ ইহাও এক প্রকার তাকাব্বুরী ও রিয়া, যার কারণে তারা সকলের চেয়ে নিকৃষ্ট)।
হে ভাই! ইহা একটি খাছ মাক্বাম। যে ব্যক্তি অনেক বেশী ইবাদত বন্দেগী না করে সেও তার চেয়ে উত্তম যে অনেক বেশী ইবাদত বন্দেগী করার পরে মানুষের উপরে ফখর (অহংকার) করে, বরত্ব প্রকাশ করে। (চলবে)